অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৯
লিজা মনি
রক্তাক্ত হাতের উপর এসিড ঢেলে দেওয়া মাত্র দেহ থেকে মাংশ খসে পড়তে থেক। না আছে রক্ত আর না আছে অন্যকিছু মুহূর্তের মধ্যেই নিশ্বেস হয়ে যাচ্ছে। হাতের চামরা আর মাংশ গলে গলে পড়তে থাকে। আরেকটা এসিড পড়লেই হাড্ডিগুলোও ধ্বসে যাবে। লোকগুলো নরক যন্ত্রনা উপভোগ করে এক সময় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
লোকগুলোর মৃত লাশ দেখে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,,
” এই জানোয়ারগুলোকে সালফিউরিক এসিডে ডুবিয়ে রাখ। এমনি উধাও হয়ে যাবে সাথে কুত্তার বাচ্চা গুলোর অস্তিত্বগুলো ও।”
হুডি পড়া লোকটা কপালের ঘাম মুছে দাড়াতেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,,,
“” অগ্নি তুই টর্চার সেলে আর আমরা সব জায়গায় তকে খুজে চলছি ”
হুডি পড়া লোকটি বাকা হাসি দিয়ে নিজের মুখের মাক্স খুলে সম্মোধন করা ব্যক্তিটির দিকে তাকায়।
হ্যা হুডি পরা লোকটি আর কেউ নয় সয়ং অগ্নি চৌধুরি। গোল্ডেন অফ মাফিয়া গ্রুপের লিডার অগ্নি চৌধুরি। যার আধিপত্য রয়েছে শহড় জুড়ে। যার আতঙ্কে থাকে প্রত্যেক অশুভ শক্তিধর নরপিশাচ। যার একটা হুংকারে তাদের প্যান্ট ভিজে যায়। একবার যে এই টর্চার সেলে এসেছে তার নরকময় যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে মরেছে। লোকগুলোর গগন কাঁপানো চিৎকারে ও অগ্নি চৌধুরির হৃদয় ছুঁতে পারে না।
সম্মোধন করা ব্যক্তিটি অগ্নির কাছে এসে চার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” মেরে দিয়েছিস? ”
অগ্নি নাক মুখ কুচকেক বলে,,,,,,,
” বোকার মত প্রশ্ন করছিস কেনো রায়ান? অগ্নি চৌধরির টর্চার সেলে নিশ্চয় কেউ জামাই আপ্যায়ন খেতে আসে না।
অগ্নির কথা শুনে রায়ান চারদিকে তাকায়। চারদিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুজে বলে ,,,,,,
” লাশগুলো কোথায়?”
রায়ানের কথা শুনে অগ্নি বাকা হাসি দিয়ে পুনরায় নিজের মাথার হুডি পড়ে নেয়।
অগ্নির ভাবভঙ্গি দেখে রায়ানের আর বুঝতে বাকি নাই কি হয়েছে। রায়ান এসিডের জায়গায় উকি দিয়ে বলে,,,,
” ডুবিয়ে দিয়েছিস? ভালো হয়েছে কষ্ট করে আর লাশ গায়েব করতে হবে না।”
মনে মনে অগ্নিকে একশটা গালি দেয়। “” শালা জানে একটু ও মায়া নেই। সাইকো! আল্লাহ জানে ইয়ানা ওর সম্পর্কে জানলে কি হবে? বেচারি জানে তার হাজবেন্ড একটু রাগী বাট ভালো মানুষ। কিন্তু ওনার হাজবেন্ড যে রাগীর চেয়ে সাইকো উন্মাদ সেটা তো আর জানে না।
ইয়ানা রুমের ভিতরে পায়চারী করছে। এখন রাত আটটার কাছাকাছি। কাল ভার্সিটি যাবে এইটা নিয়ে সে প্রচুর চিন্তিত। অপরিচিত একটা জায়গায় তার উপর এত বড় ভার্সিটি। কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে সে? এইসব ভাবতে ভাবতে রুমের এই পাশ থেকে অপর পাশে যাচ্ছে। আর আঙ্গুলের নখ কামড়াচ্ছে। ইয়ানা যখন অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে তখন নখ কামড়াতে থাকে। এইটা তার ছোট থেকে অভ্যাস। সেলিনা হোসেনের হাজার বকা খেয়ে ও ভদঅভ্যাস যায় নি।
ইয়ানা যখন পাইচারী করছিলো তখন আকস্মিক শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে। কিন্তু পড়ার আগেই একটা শক্তপোক্ত হাত ধরে ফেলে। ইয়ানা যেই চিৎকার দিতে যাবেই তার আগেই কারোর ধমকে চুপসে যায়। ইয়ানা হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টো বলে,,,,,
“” এইভাবে ধমক দিতে হয় ? গলা নয় যেনো ফাডা বাঁশ?
অগ্নি — হুয়াট বাঁশ?
ইয়ানা বিরবির করে বলে — ইংলিশ ম্যান বাংলা বুঝে না।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে বলে,,,,,,
” কি বিরবির করে কি বলছো? আর এইভাবে রুমের মাঝে পাগলের মত ছুটাছুটি করছো কেনো?
ইয়ানা নোখে কামড় দিয়ে বলে,,,,
“” নার্ভাস হয়ে আছি। কাল ভার্সিটি যাব এই নিয়ে একটু চিন্তিত।
অগ্নি — নার্ভাস হবে কেনো? নাচার জন্য নিশ্চয় তোমাকে পাঠাচ্ছি না। পড়াশুনার জন্য পাঠাচ্ছি।
ইয়ানার চিন্তিত মাখা মুখটি দেখে অগ্নি ইয়ানার কাছে যায় এরপর দুই গালে হাত রেখে বলে,,,,,,
” আমি নিয়ে দিয়ে আসব আবার পুনরায় নিয়ে ও আসব। তাই চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই।
ইয়ানার অগ্নির হাতের শীতল স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে। জীবনের প্রথম কোনো পুরুষ তার এতটা কাছে। মনে হচ্ছে দেহের রক্তগুলো জমে যাচ্ছে। ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,,
” ঠ.. ঠিক আছে। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
অগ্নি ইয়ানার অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,
“” তুমি কি আমাকে জান বললে সুইটহার্ট? অফফ একদম হৃদয়ে গিয়ে লাগলো?
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে,,,,
“” বেশরম পুরুষ বলে কি এইটা? এই যান তো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। রাতে নিশ্চয় কিছু খান নি?
অগ্নি — তুমি আমাকে বার বার জান বলছো আর আমি সেটা বললেই বেশরম হয়ে গেছি। বেশরমের দেখলেটা কি সুইটহার্ট? কিছুই তো করলাম না । ছুয়ে দেখি নি ভালো করে তার আগেই বেশরম? যেদিন সব কিছুর উর্ধে যাব ওইদিন কোন বাক্য উচ্চারন করবে ভেবে রাখো। তোমাকে ছাড় দিয়েছি ছেড়ে দেই নি।
ইয়ানা কটমট চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। নির্লজ্জ লোক মুখে কিছু আটকায় না।
অগ্নি ইয়ানার আড়ালে মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। এরপর কিছু সময় ব্যবধানে ওয়াশরুম থেকে ফিরে আসে। পড়নে শুধু একটা টাওয়াল পেচানো। উন্মুক্ত লোমযুক্ত ফর্সা শরীর। ঘাড় পর্যন্ত চুল গুলো লেপ্টে আছে কপালে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকাতেই চোখ যায় ওর পিঠে আর গলায়। পিঠে রয়েছে ড্রাগনের ট্যাটু আর হাতে আগুনের শিখা এমন টাইপের ট্যাটু মনে হচ্ছে। বিয়ের পর এই প্রথম ইয়ানা অগ্নির উন্মুক্ত শরীর দেখেছে। এতদিন খেয়াল করেনি ওর শরীরে এমন ভয়ংকর ট্যাটু খোদায় করা। ইয়ানা নিজের লজ্জা চেপে রেখে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,,,
” শরীরে এ কেমন জঙ্গল বানিয়ে রেখেছেন? আপনি না একজন ভার্সিটির প্রফেস্যার ছিলেন। জানেন না এইসব ট্যাটু খোদায় করা ঠিক না?
অগ্মি এতক্ষন ইয়ানার ভাবভঙ্গি ওই পর্যবেক্ষন করছিলো। ইয়ানার কথা শুনে গায়ে টি- শার্ট পড়তে পড়তে বলে,,,,,,
” আমি তো ভার্সিটির প্রফেস্যার ছিলাম না সুইটহার্ট। মাত্র কয়েকদিনের অথিতি ছিলাম। আর যদি বলো এই ট্যাটুর কথা এইসব অনেক আগে করেছি।
ইয়ানা — রিমুভ করবেন এইসব? কেমন ভয়ংকর দেখা যাচ্ছে।
অগ্নি — আদেশ করছো?
ইয়ানা — হ্যা।
অগ্নি — এত অধিকার আমার প্রতি তোমার?
ইয়ানা — সন্দেহ আছে?
অগ্নি — ওহুম একদম না। আমার বউ যে রাগী ঝগড়ুটে সেটা আমি জানি সেখানে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসে না।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা তেঁতে উঠে।
ইয়ানা — আপনি আমাকে ঝগড়ুটে বললেন?
অগ্নি —- কেনো অন্যকিছু শুনেছো?
ইয়ানা — দিলেন তো মুড টা নষ্ট করে। ভেবেছিলাম আজ রাতে আপনাকে নিয়ে ঘুরতে বের হব। ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস পাশে আপনি কত সুন্দর একটা মোমেন্ট। আর এইদিকে আপনি আমার নিন্দে করছেন?
অগ্নি ইয়ানার কথা শুনে কেশে উঠে। আজকাল ও মেয়েদের সাথে ঘুরতে ও যাবে।
অগ্নি — তুমি ঘুরতে চাও সেটা আগেই বললেই পারতে। দশ মিনিট অপেক্ষা করো আমি তৈরি হয়ে আসছি। বাট লং ড্রাইভে যাবে নাকি রেস্টুরেন্টে?
ইয়ানা — আগে রেস্টুরেন্টে যাব। আমার প্রান প্রিয় পাস্তা অনেকদিন ধরে খায় না।
অগ্নি নাখোঁজ করে বলে,,,,,
” এইসব তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার দরকার নেই”
ইয়ানা — আমার থেকে খাওয়ার অধিকার কেরে নিচ্ছেন আপনি? শুনোন জীবন চলে যাবে তবুও আমি তৈলাক্ত খাবার খাওয়া ছাড়তে পারব না। সব ছাড়তে পারব প্রয়োজন হলে আপনা…..
অগ্নি শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলে,,,,,
“” হ্যা বলো কি বলছিলে? আমাকে কি?
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আজকাল আপনি ভুল শুনছেন মি. চৌধুরি। বলতে চেয়েছি আপনাকে আমি এইসব খাইয়ে ছাড়ব। অন্যকিছু বলতে চাই নি। ”
মুহূর্তেই অগ্নি মুখ গম্ভির হয়ে যায়। মুখের গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে,,,,,
“অন্য কিছু বলার কথা কোনো দিন চিন্তা ও করো না।”
এইভাবে খুনশুটি করতে করতে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে।
কানাডার এক রেস্টুরেন্টে বসে আছে অগ্নি আর ইয়ানা। ইয়ানা খুব খুশি কানাডার আবহাওয়া আর চারপাশ তার ভাবনার থেকেও সুন্দর। তারা যেখানে বসেছে আশেপাশে আর কোনো লোকজন নেই।পুরো রুম অগ্নি বুক করে ফেলেছে।
ইয়ানা চারপাশে তাকিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি মোবাইল স্ক্রল করছে। চোখে কালো চশমা আর মুখে মাক্স। ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,,,,
“” এখন তো এইসব খুলোন। এইভাবে মুখে মাক্স লাগিয়ে রেখেছেন কেনো?খাবেন কিভাবে?
অগ্নি — আমি এইসব খাই না তুমি এসেছো তুমি খাও।
ইয়ানা ভেংচি কেটে বলে,,,,,,,,
“” পাস্তা খাব না চাউমিন খাব। ”
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়। মুহূর্তেই গম্ভির হয়ে বলে,,,,,,
“” তুমি তো বলেছিলে পাস্তা খাবে। কানাডায় বাংলাদেশী খাবার খুব একটা পাওয়া যায় না তাই তো তোমাকে এখানে নিয়ে আসলাম। তাহলে খাবারের মেনু চেইঞ্জ হলো কেনো ইয়ানা?
অগ্নি — পাস্তা খেতে ইচ্ছে করছে না । মুড চেইঞ্জ হয়ে গেছে।
অগ্নি অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে ঘাড় ঘেসে চার পাশে তাকিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায় এরপর বলে,,,,,
“” এত তাড়াতাড়ি তোমার পছন্দের খাবার বদলে গেলো? বাসা থেকে যেটা বলতে বলতে আসলে সেটা আকস্মিক বদলে গেলো? কিন্তু তোমাকে তো পাস্তা ওই খেতে হবে ইয়ানা?
অগ্নির এইভাবে রেগে যাওয়াটা বোধগাম্য হলো না। তবুও নিজের জেদ ধরে বলে,,,,,,,
“” আমি পাস্তা খাব না। ”
অগ্নি — তোমাকে এইটাই খেতে হবে।
ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,
“” খাব না আমি কিছুই বাড়ি চলুন। ”
ইয়ানা কথা শেষ হবার সাথে সাথে অগ্নি টেবিলের কাচের বোতলগুলো ফেলে দেয়। রাগে শরীর কাঁপছে ওর। হারানোর ভয়, অজানা আতঙ্ক সব মিলিয়ে যা একপ্রকার
রাগে পরিনিত হয়েছে। টেবিলে সাজানো কাচের বোতল গুলো এখন ফ্লোড়ে টুকরোটুকরো হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ইয়ানা তব্দা লেগে আছে। কি বলবে? কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে?
ইয়ানা অশ্রুসিক্ত নয়নে অগ্নির দিকে তাকায়।
অগ্নি দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,
“” যাস্ট পনেরো মিনিট লেগেছে আমার এখানে আসতেই আর এর মধ্যে তোমার পছন্দের জিনিস পরিবর্তন হয়ে গেলো তাহলে আমাকে পরির্তন দেখি তুমি যেকোনো সময় করে ফেলবে। তোমার টেস্ট এত তাড়াতাড়ি বদলে যায়?
ইয়ানা অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকে। কিসের সাথে কিসের তুলনা। এই লোক কি সাইকো নাকি?
ইয়ানা — আর ইউ মেড কিসব বলছেন? খাবারের সাথে আপনি আপনার তুলনা করছেন?
অগ্নি — দুইটাই তোমার পছন্দের জিনিস। তোমার পছন্দের জিনিস এত তাড়াতাড়ি বদলে যাবে তা তো আমি মানব না।
ইয়ানার ইচ্ছে করছে এখন নিজের মাথা নিজে ফাটাতে। কেনো আসতে চেয়েছিলো এই পাগলের সাথে। নাহ পাগল না পুরো সাইকো? পজেসিভের একটা লিমিট থাকে কিন্তু ওনি তো?
অগ্নি নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে ঠান্ডা গলায় বলে,,,,,
— বসো আর এইগুলো শেষ করো।
ইয়ানা — খাব না আমি।
অগ্নি দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” খেতে বলেছি আমি তোমায় ইয়ানা। জেদ করলে থাপরিয়ে অজ্ঞান করব বিয়াদপ মেয়ে।
ইয়ানা রাগে – দুঃখে দুই হাতে দুইটা চামচ নেই। কিন্তু এই খাবার কি তার গলা দিয়ে নামবে। তবুও অগ্নির ভয়ে খেতে হচ্ছে। ইয়ানা ভেবে পায় না এখানে এত বড় একটা ঘূর্নিঝড় হলো আর কেউ আসলো না।
ইয়ানা কিছু খেয়ে বলে,,,,
“” আর খাব না বাড়ি চলুন। ”
অগ্নি — তোমার খাওয়া সম্পর্কে আমার ধারনা আছে। আর সেই ধারনা নিয়েই তোমার জন্য অর্ডার করেছি। সবটা শেষ করো।
ইয়ানা আর কিছু বলে না। খেতে থাকে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি।
ইয়ানার কান্না দেখে অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“” কান্না থামাও । আশ্চর্য আমি তোমাকে কিছু করেছি? আর এক ফোটা চোখের পানি ও যাতে না পরে।
অগ্নির মুখে লেগে আছে বিশ্বজয়ের হাসি। সে তার অনুভবের সেহিজাদীকে কখনো হাত ছাড়া করতে পারবে না। প্রয়োজন হলে বেঁধে রাখবে। এই মেয়ের মধ্যে তার নিশ্বাস আটকে আছে।
ইয়ানা মাথা ব্যাথার অযুহাত দিয়ে আর লং ড্রাইভে যাই নি। কার সাথে যাবে ও? অগ্নি চৌধুরির সাথে? এই জীবনে তো আর কোনোদিন না।
ইয়ানার মাথা ব্যাথা ভেবে অগ্নিও ডেম্পারেট হয়ে পড়ে। তাই সে ও ড্রাইভে যাওয়া নাখোঁজ করে।
ইয়ানা পুরো গাড়ি নিশ্চুপ ছিলো। অগ্নি ইয়ানার মাথা ব্যথা ভেবে আর কিছু বলে নি।
ইয়ানা রুমে ডুকে চোখ মুখে পানি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
প্রচুর কান্না পাচ্ছে। ভালোবেসে ফেলেছে ও এই লোককে। একটু ধমক কলিজায় গিয়ে লাগে। ভালো না বেসে কোথায় যাবে? স্বামী হয় ওর এক পবিত্র বন্ধন।
ইয়ানাকে বিছানায় শুয়ে পড়তে দেখে অগ্নি অধৈর্য গলায় বলে,,,,,
“” কমেছে আগের থেকে একটু?
ইয়ানা — হু।
অগ্নি — তাহলে উঠে বসো আর খেয়ে নাও।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা কপাল কুচকে নেয়। একটু আগেইতো ড্রামা করে আসলো এখন আবার কি খাওয়াবে?
ইয়ানাকে একি ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে অগ্নি ইয়ানার হাতে ধরে হেচকা টানে তুলে ধরে। ইয়ানা চোখ মুখ শক্ত করে বলে,,,,,,
” কি হয়েছে? এখন আবার এমন করছেন কেনো? ”
অগ্নি হাতে একটা বক্স নিয়ে খুলে এরপর ইয়ানার মুখের সামনে ধরে বলে,,,,
“” এই নাও তোমার চাউমিন “”
ইয়ানার ইচ্ছে করছিলো অগ্নির মাথা ফাটাতে। শালা সাইকো একটু আগের ঘটনা ভুলে গেলি। এখন আসছে ন্যাকামো করতে।
ইয়ানাকে খেতে না দেখে অগ্নি নিজের হাতে ইয়ানার মুখে তুলে দিতে নিবে আকস্মিক ইয়ানা হাত ধরে ফেলে।
ইয়ানা — নিয়ে যান এইসব খাবার। দেখলেই অসহ্য লাগছে। জীবনে আমাকে ধন্য করেছেন ঘুরতে নিয়ে গিয়ে। আমি বেঁচে থাকতে আমার জন্য আপনার আর মহৎ কাজ করতে হবে না। ধন্য করেছেন আমায় এইবার এইগুলো নিয়ে যান।
ইয়ানা আর কিছু বলতে যাবে তখন ওই অগ্নি ইয়ানার দুই গাল চেপে ধরে চাউমিন ডুকিয়ে দেয়।
ইয়ানা মুখ থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য উদ্ধত হতেই অগ্নি সতর্ক করে বলে,,,,,,
“” খবরদার যদি একটু ও ফেলেছো? এইগুলো তুলে এনে আবার তোমার মুখে দিব।
একি ভাবে অগ্নি ইয়ানাকে জোড় করে অর্ধেক খাওয়ানো শেষ করে। বুঝতে পেরেছে খাবার পরিমান ওর জন্য বেশি হয়ে যাচ্ছে তাই আর না খাইয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে আনে।
ইয়ানার যেনো জান বেরিয়ে যাছিলো এতক্ষন।
ইয়ানা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নি এক অনাকাঙ্কিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। এমন এক ঘটনা যা দুইজনের সত্তাকেই নাড়িয়ে তুলে। নিজের ঠোঁট ধারা ইয়ানার ঠোঁট চেপে ধরে।
ইয়ানা বরফের মত জমে যায়। জীবনের প্রথম কোনো পুরুষের আলিঙ্গন তাকে ভিতর থেকে কাঁপিয়ে তুলছে। শরীরটা নাড়ানোর ও শক্তি নেই।
ধীরে ধীরে চুমুর পরিমান দৃঢ় হতে থাকে। ইয়ানা অগ্নিকে সরাতে চাইলে অগ্নি ইয়ানার হাত দুটি বিছানার সাথে চেপে ধরে। এমনিতে ও ইয়ানার শরীরে শক্তি নেই পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে। প্রায় পনেরো মিনিট পর অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে।
ইয়ানা ছাড়া পেতেই বড় বড় শ্বাস টানে। ঠোঁট থেকে সামান্য রক্ত ঝরছে। অগ্নি ইয়ানার ঠোঁটের রক্তটা বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে ফিসফিসিয়ে বলে,,,,,,,
“” জীবনের প্রথম চুমু খেলাম সুইটহার্ট তাও আবার নিজের বউকে। তারিখটা লিখে রাখো সেলিব্রেট করব।
ইয়ানা মিহি সুরে অগ্নিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,,,
“” অসভ্য উঠুন বলছি। ”
কিন্তু ইয়ানার ধাক্কায় অগ্নিকে এক চুল ও নাড়াতে পারে নি। অগ্নি আর ও ইয়ানার উপর ঝুকে যায়। এরপর ইয়ানার কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,,,,,,,,
“” ঠিক যতবার তুমি আমার উপর রাগ করবে, কথা বলা বন্ধ করার মত দুঃস্বাহস দেখাবে ঠিক ততবার তোমার উপর এমন ডোজ পরবে। আজকের চুমুতে শুধু রক্ত বের করেছি। এরপর থেকে এড়িয়ে চললে এই ঠোঁটটাই খেয়ে ফেলব। বলেছি ছাড় দিয়েছি ছেড়ে দেই নি আই রিপিট ছেড়ে দেয় নি।
সকাল এখন প্রায় আট টার মত বাজে। অগ্নির একটা জরুরি কাজ আসার কারনে সে সকাল সাতটাই অফিসের উদ্দ্যশ্যে বের হয়ে যায়। বলেছে দেড় ঘন্টা পর এসে নিয়ে যাবে।
ইয়ানা ব্রেকফাস্ট করে রুমে না বসে চলে যায় পুরো বাড়ি ঘুরে দেখার জন্য। এই বাড়িতে সে অনেক দিন হয়ে গেছে এসেছে কিন্তু এখন ও পুরো বাড়ি দেখা হয় নি।
ইয়ানা যখন তৃতীয় তালার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিবে তখন কাজের মহিলাটি বলে উঠে,,,,,,,
“” ম্যাডাম উপরে যাইয়েন না। ”
ইয়ানা — কেনো আন্টি?
মহিলাটি আমতা আমতা করে বলে,,,,,,
“” না এমনি বলছিলাম। তবে ওইখানে গেলে একটা তালাবদ্ধ রুম আছে এর কাছে যাইয়েন না। শুনেছি ওইখানে এক অতৃপ্ত আত্না থাকে। এই রুমের দরজা কখনো খোলা হয় না।
মহিলাটির কথা শুনে ইয়ানা ফিক করে হেসে উঠে। এরপর মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
“” এইসব বলতে কিছু হয় না আন্টি। সব কিছু আপনাদের মনের ভুল। চিন্তা করবেন না আমি ওই রুমের পাশে যাব না যাস্ট বাড়িটা ঘুরে দেখে আসি।
এরপর ইয়ানা চলে যায়। মহিলাটি ইয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢুক গিলে।
ইয়ানা ধীর পায়ে এগিয়ে যায় আর গুনগুন করে গান গাইতে থাকে। হঠাৎ কিছুর শব্দ পেয়ে পা জোড়া থমকে যায়। পিছনে তাকাতেই কপাল কুচকে আসে।
এই রুম থেকে এমন শব্দ আসছে কেনো? তাহলে কি আন্টি এই রুমের কথা বলেছিলো? কিন্তু এইসব আত্না, প্রেতাত্না বলতে তো কিছুই হয় না। মনে হচ্ছে কারোর গোঙ্গানির শব্দ। কিন্তু এত বড় একটা বাড়িতে এমন রুম এই সম্পর্কে কি অগ্নি জানে না।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৮
ইয়ানা ধীরে ধীরে দরজার কাছে যায়। দরজার কাছে যেতেই শব্দগুলো তীব্র হয়। ইয়ানার সামান্য ভয় লাগলে ও উদ্দ্যত হয় তালা ভাঙ্গার জন্য। লোকে বলে নিষিদ্ধ জিনিসে কৌতূহল থাকে বেশি। আজ আমি ও দেখব এর ভিতরে কি আছে।
ইয়ানা একটা শক্তপোক্ত বস্তু ধারা বারি দিতে যাবে এমন সময় কেউ তার হাত ধরে ফেলে। হঠাৎ এমন হওয়াতে ইয়ানা ভয় পেয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকায়।