অনুরাগে তুই গল্পের লিংক || সাদিয়া শওকত বাবলি

অনুরাগে তুই পর্ব ১
সাদিয়া শওকত বাবলি

“মাইয়াডারে দেখার মতো যে আর কেউ রইল না। বাপ তো সেই ছোটকালেই ম’রি’ছে। মা আরেক বেডারে বিয়া কইরা মাইয়াটারে ফালাইয়া রাইখা গেছে। চাচারাও দেখে না। দাদির কাছে থাকতো তাও দাদি আজকে ম’র’ল। এখন এই মাইয়াডারে কে দেখবো?”

মামী মুনমুন বেগমের মৃ’ত্যু’তে দীর্ঘদিন পর নানাবাড়িতে এসেছিলেন আব্দুর রহমান খান। শেষ এ বাড়িতে তিনি এসেছিলেন সেই যুবক বয়সে। আর এখন মধ্যবয়স্ক বলাই চলে। তবে এখানে এসে চারদিকের পরিস্থিতি অবলোকনে হৃদয় ব্যথিত হলো তার। মামাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ছোট বেলায় কি মধুর সম্পর্কই না ছিল আব্দুর রহমান খানের। অথচ সেই আব্দুর রাজ্জাক নাকি আর নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় মা’রা গিয়েছেন সেই চৌদ্দ পনেরো বছর পূর্বে। তার বউও নাকি অন্যত্র বিয়ে করেছে। আর মেয়েটা এতদিন দাদি অর্থাৎ মুনমুন বেগমের নিকট বড়ো হলেও এখন তার মৃ’ত্যু’তে একা হয়ে পড়েছে। অথচ এর কিছুই জানতেন না রহমান খান। অবশ্য জানবেন কিভাবে? দীর্ঘদিন ধরে এ বাড়ির সাথে তাদের যোগাযোগ ছিল না কোনো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার বাবার সাথে জায়গা জমি নিয়ে পারিবারিক কোন্দলে এ বাড়ির সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল বহু বছর পূর্বে। তবে এত বছর পর হঠাৎ মামীর মৃ’ত্যু’র সংবাদটা শুনে আর বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি তিনি। ছুটে এসেছেন এখানে। এই মামীই একদিন কত আদর যত্ন করেছেন তাদের। ছোট বেলায় এ বাড়িতে এলে ভালো মন্দ খাইয়েছেন। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললেন আব্দুর রহমান খান। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন আব্দুর রাজ্জাক অর্থাৎ তার মামাতো ভাইয়ের মেয়েটার দিকে। অল্প বয়সী এক তরুনী সে। বয়স আর কতই বা হবে। এই উনিশ কিংবা বিশ বা তার অল্প কিছু বেশি। মেয়েটা কেমন নিথর হয়ে বসে রয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ মুখ ফুলে গেছে। ফরসা মুখশ্রী ইতমধ্যে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। নরম কোমল গাল দুটো বেয়ে এখনো গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা। তবে কোনো কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। আব্দুর রহমান খানের মায়া লাগলো মেয়েটিকে দেখে। তারও তো এমন তিনটা সন্তান রয়েছে। আজ এই মেয়েটির স্থানে যদি তার সন্তানেরা থাকতো? তাছাড়া মেয়েটি প্রাপ্ত বয়স্কা। গ্রামে একা ফেলে রেখে গেলে যদি বিপদ আপদ কিছু ঘটে। এমনিই বর্তমান দুনিয়া ভালো নয়। মেয়ে মানুষ দেখলে লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করা পুরুষদের অভাব নেই সেখানে যদি আরও হয় অল্প বয়সী একা একটা মেয়ে মানুষ। তার তো কম নেই। যথেষ্ট অর্থ সম্পদ রয়েছে। তা দ্বারা এমন বাড়তি দুই একজন চালানো কোনো ব্যাপার না। আর তিনি এখানে এসে যতদূর জেনেছেন তার অন্যান্য মামাতো ভাইয়েরা এই মেয়েটির প্রতি তেমন যত্নশীল নয়। ঐ ভাইয়ের মেয়ে হিসেবে কর্তব্য পালনে মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠায় এই যা। অর্থাৎ তারা কেউ এই মেয়েটিকে নিজেদের কাছে নিতে ইচ্ছুক নন। আর নিলেও হয়তো ভালো রাখবে না। আব্দুর রহমান খান সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়েটিকে তিনি নিজের সাথে নিয়ে যাবেন। তার বাড়িতে রাখবেন। তার তিন‌ সন্তানকে যেমন মানুষ করছেন তেমনি এই মেয়েটিকেও তিনি নিজ সন্তানের মতো মানুষ করবেন। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন আব্দুর রহমান খান। এগিয়ে গেলেন মেয়েটির দিকে। তার মাথায় হাত রেখে শুধালেন,

“তোমার নাম কি মা?”
মেয়েটি অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া তুলে তাকাল আব্দুর রহমান খানের দিকে। ভেজা ফ্যাসফ্যাসে গলায় জবাব দিলো,
“ত্রয়ী, তাসফিয়া ত্রয়ী।”
আব্দুর রহমান খান আর জিজ্ঞেস করলেন না কিছু। এই অবস্থায় মেয়েটিকে আর কিছু জিজ্ঞেস করা বোধ হয় ঠিক হবে না। পরম যত্নে তিনি হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলেন মেয়েটির মাথায়।

সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত দিন। অম্বরে স্থান করে নিয়েছে ঝলমলে সোনালী সূর্যটা। ত্রয়ী দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি সুবিশাল বাড়ির সম্মুখে। এটা নাকি আব্দুর রহমান খানের বাড়ি। ইট, সিমেন্ট দ্বারা তৈরি সুসজ্জিত ভবন। সুন্দর কারুকার্য খচিত বাড়ির দেওয়াল গুলো। সামনে আবার একটি সুন্দর ফুলের বাগানও রয়েছে। নানান ধরণের ফুলের গাছ লাগানো সেখানে। কিছু কিছু গাছে রঙ বেরঙের ফুলও দেখা যাচ্ছে। ত্রয়ী চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল চারদিকে। এত বড়ো বিল্ডিং, এমন সুসজ্জিত বাড়ি আগে কখনো দেখেনি সে। অবশ্য দেখবে কিভাবে? সেই ছোট বেলা থেকে তো সে দাদির সাথে গ্রামে থাকতো। কখনো গ্রামের গন্ডি পেড়িয়ে বের হওয়া হয়নি, দেখা হয়নি শহরের বড়ো বড়ো ভবন-ইমারত, চলা হয়নি কোলাহল পূর্ণ এই শহরের বুকে। আজও আসার ইচ্ছে ছিল না এই শহরে। কিন্তু ভাগ্য নিয়ে এলো। ত্রয়ীর দাদি মারা গিয়েছে আজ চারদিন। গ্রামের বাড়িতে ছোটো করে তার নামে একটি মিলাদ অনুষ্ঠানের পরপরই রহমান খান সাথে করে তাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। ত্রয়ীর এই প্রায় অপরিচিত লোকটার সাথে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল না কোনো। সে খুব করে চেয়েছিল তাকে তার কোনো চাচা সাথে করে নিয়ে যাক। কিন্তু তার কোনো চাচাই একটা বারের জন্যও তাকে সাথে করে নেওয়ার কথা বলেননি। মুনমুন বেগমের আত্মার শান্তির জন্য মিলাদ পড়িয়ে যে যার মতো করে চলে গেছে। একটা বারের জন্য তার খোঁজও নেননি। দুই দুইটা চাচা ত্রয়ীর। হয়তো তারা আগেও কখনো তার তেমন খোঁজ খবর নেয়নি কিন্তু অল্প হলেও পরিচিত তো। মাঝে মাঝে মুনমুন বেগমের সাথে দেখা করতে গ্রামে আসতো। তখন ত্রয়ীর সাথেও দেখা হতো। আর রহমান খান তো প্রায় অপরিচিত। এমন অপরিচিত একজন লোককে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল মেয়েটার। মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না তার সাথে আসার। কিন্তু না এসেও যে আর কোনো উপায় নেই। তার যে আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। শেষ পর্যন্ত জীবনটা ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিয়ে আব্দুর রহমান খানের সাথে এখানে চলেই এলো সে। তার জীবনে ছোট বেলা থেকে যা ঘটছে সবই তো খারাপ। এরপর না হয় আর একটু খারাপ কিছু ঘটবে। মাঝে মাঝে ত্রয়ীর নিজের ভাগ্যের উপর ভীষণ রাগ লাগে। তার ভাগ্যটা এমন কেন এমন হলো? তার ভাগ্যটা যদি আর পাঁচটা মানুষের মতো সুন্দর স্বাভাবিক হতো, তারও যদি বাবা মা ভাই বোন থাকতো, সুন্দর একটা পরিবার থাকতো তবে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? ত্রয়ীর ভাবনার মধ্যেই রহমান খান হাত উঁচালেন। চাপলেন বাড়ির কলিং বেলটা। প্রায় সাথে সাথেই দরজাটা খুলে গেল। চোখের সম্মুখে দৃশ্যমান হলো এক কিশোরী। চৌদ্দ কিংবা পনেরো বছর বয়স হবে হয়তো তার। আব্দুর রহমান খানকে দেখেই ওষ্ঠ প্রসারিত করল কিশোরী। উৎফুল্ল হয়ে বলল,

“বাবা তুমি এসেছো? আমি আর আপু…”
এই টুকু বলতে বলতে থেমে গেল সে। ত্রয়ীকে দেখে বোধ হয় অবাক হলো। কপাল কুঁচকে শুধাল,
“উনি কে বাবা?”
আব্দুর রহমান খান একবার তাকালেন ত্রয়ীর দিকে। অতঃপর গৃহের ভিতরে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন,
“বাড়ির সবাইকে ডাকো পন্না। তারপর বলছি।”
পন্না নামক মেয়েটা ছুটে গেল ভিতরে। গলা উঁচিয়ে ডাকল,
“মা, মা, আপু কোথাও তোমরা? বাবা এসেছেন। ডাকছেন তোমাদের। তাড়াতাড়ি এসো।”
ত্রয়ী ততক্ষণে ভিতরে চলে এসেছে। আব্দুর রহমান খান বসলেন বসার কক্ষের সোফায়। একটু বাদেই সেখানে এসে উপস্থিত হলেন আব্দুর রহমান খানের বড়ো মেয়ে রিমা এবং তার স্ত্রী ফাহমিদা বেগম। সবার দৃষ্টি ত্রয়ীর দিকে। তবে কেউ কোনো প্রশ্ন করার পূর্বেই আব্দুর রহমান খান নিজে থেকেই বললেন,
“ও ত্রয়ী। আমার মামাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। ও আজ থেকে আমাদের সাথেই থাকবে।”
ফাহমিদা বেগম ভ্রু কুঁচকালেন। কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন,

“কেন ওর বাবা মা?”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আব্দুর রহমান খান। একটু সময় নিয়ে বললেন,
“কেউ নেই ওর। ওর বাবা ছোট বেলাতেই সড়ক দুর্ঘটনায় মা’রা গিয়েছে। মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছে। দাদির কাছে থাকতো। সেও তো সেদিন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরকালে পাড়ি জমালেন। এখন আর ওর যাওয়ার মতো আর কোনো স্থান নেই। তাই আমার সাথে নিয়ে এসেছি।”
সব কথা শুনে ত্রয়ীর প্রতি মায়া লাগলো ফাহমিদা বেগমের। স্বামীর পানে তাকিয়ে তিনি বললেন,
“তা বেশ করেছো। ও আজ থেকে আমাদের সাথেই থাকবে।”
পরপর গলা উঁচালেন তিনি। কণ্ঠ বাড়িয়ে বললেন,
“লতিফ, লতিফ। পন্নার পাশের ঘরটা পরিষ্কার করে দে তো। ত্রয়ী আজ থেকে ওখানেই থাকবে।”
ফাহমিদা বেগম এগিয়ে এলেন ত্রয়ীর দিকে।‌ আলতোভাবে মেয়েটার গালে হাত রেখে বললেন,
“কে বলেছে তোমার বাবা মা নেই? আমরা আছি তো। আজ থেকে আমাদেরই তুমি তোমার বাবা মা ভাববে। ঠিক আছে?”

ত্রয়ী চোখ তুলে তাকাল ফাহমিদা বেগমের দিকে। ছলছল করে উঠল তার চোখ জোড়া। এভাবে তাকে কেউ কখনো বলেনি। যাক জীবনে এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো সে ভালোই করেছে। পাতানো হোক তবুও বাবা মা তো পেয়েছে। ফাহমিদা বেগম ওষ্ঠ প্রসারিত করে মিষ্টি হাসলেন। মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“তোমার সাথে পরে অনেক গল্প করব। আপাতত চুলোয় রান্না বসিয়ে এসেছি তো। তাছাড়া তুমিও অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নাও এখন।”
এই টুকু বলে ফাহমিদা বেগম পাশ ফিরে তাকালেন পন্নার দিকে। আদেশ দিয়ে বললেন,
“ওর রুম তো এখনও পরিষ্কার করা হয়নি। ওকে তুই তোর রুমে নিয়ে যা। সেখানেই ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিক।”
পন্না খুশি হলো। উৎফুল্ল ভঙ্গিতে সে এগিয়ে এসে ধরল ত্রয়ীর এক হাত। টেনে তার কক্ষের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
“ভালোই হলো তুমি আমার পাশের রুমে থাকবে। আমরা সারাদিন অনেক গল্প করব ঠিক আছে?”
ত্রয়ী বলল না কিছুই শুধু উপর নিচ মাথা নাড়ল হালকাভাবে। তবে তার এই আগমনকে সবাই ভালোভাবে নিলেও ভালোভাবে নিতে পারল না রিমা। বিরক্ত হলো সে। চোখ মুখ কুঁচকে বিরবিরিয়ে বলল,
“যতসব উটকো ঝামেলা। আর বাবা মায়েরও তাদের নিয়ে আদিখ্যেতার শেষ নেই।”

আকাশের সূর্যটা তার তেজ কমিয়ে দিয়েছে। এক দিকে ঢলে পড়ে জানান দিচ্ছে বিকালের। ত্রয়ী চুপচাপ বসে রয়েছে পন্নার কক্ষে। তার কক্ষ পরিষ্কার করা হলেও পন্না তাকে যেতে দেয়নি এখনো। চঞ্চল, প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বল এক কিশোরী পন্না। সারাদিন যার এদিক ওদিক ছোটাছুটি লেগেই থাকে। আর ত্রয়ী ভদ্র, স্বল্পভাষী, ভীত এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের একটি মেয়ে। বাবা মা না থাকা এবং অন্যের কাছে বড়ো হওয়া ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে কখনো দেখা যায় বখে যেতে আবার কখনো দেখা যায় একটু বোকাসোকা ভীত হয়ে গড়ে উঠতে। ত্রয়ী হয়েছে সেই পরেরটা, বোকাসোকা ভীত। সারাজীবন দাদির আঁচলের নিচে থাকতে থাকতে বাহিরের দুনিয়াটা একটু কমই চিনেছে সে। আর মুনমুন বেগমও সবসময় মেয়েটাকে আগলে রেখেছেন। বাবা-মা হীন মেয়েটার একটু বেশিই যত্ন নিয়েছেন তিনি। ত্রয়ীর বসে থাকার মধ্যেই তার দিকে ছুটে এলো পন্না। চঞ্চল কণ্ঠে বলল,

“চলো না আমরা ছাদে যাই। আমাদের ছাদটা তোমাকে ঘুরিয়ে দেখাই।”
“ছাদে এখন…”
ত্রয়ী কথাটা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই তার হাত ধরে হাঁটা ধরল পন্না। ত্রয়ীও আর বারণ করল। পা চালাল মেয়েটার পিছু পিছু।
স্বল্প সময়ের মধ্যেই ছাদে পৌঁছালো তারা দুজন। কিন্তু ছাদের দরজা দিয়ে ঢুকতেই পন্না দাঁড়িয়ে পড়ল। ব্যস্ত স্বরে বলল,
“দাঁড়াও মায়ের মোবাইলটা নিয়ে আসি। ছাদে ঘুরতে ঘুরতে ছবি তুলবো আমরা।”
“তার আর…”

পন্না শুনলো না ত্রয়ীর কথা। পিছন ঘুরে ছুট লাগল নিচের দিকে। ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল ত্রয়ী। ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ বুলাতে শুরু করল আশেপাশে। চারদিকে কত বড়ো বড়ো বিল্ডিং। ত্রয়ী এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ছাদের এক পাশে। নিচে ঝুঁকে দেখতে শুরু করল ব্যস্ত শহরটা। কত মানুষ চারদিকে, কত শত গাড়ি। গাড়িগুলো কেমন সাঁই সাঁই করে ছুটছে এদিক থেকে ওদিক। ত্রয়ী নিচের দিকে দেখতে দেখতে আরেকটু ঝুঁকে গেল। ঠিক তখনই টান পড়ল তার এক হাতে। হকচকিয়ে উঠল মেয়েটা। তড়িৎ গতিতে তাকাল পিছন ঘুরে। তবে আকস্মিক টানে নিজের শরীরের ভারসাম্য হারালো সে। ফলস্বরূপ মুখ থুবড়ে পড়ল সম্মুখে থাকা ব্যক্তিটির গায়ের উপর।

আর তারপর দুজন মিলে ছাদের মেঝেতে। মেঝেতে পড়তেই ত্রয়ীর মাথাটা গিয়ে আঘাত করল ব্যক্তিটির থুতনিতে। সাথে সাথে মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল মেয়েটার। চারপাশটা কেমন ঘুরে উঠল। এ থুতনি নাকি আরো কিছু? ত্রয়ীর মনে হলো থুতনি নয় বরং লোহার আতুর দ্বারা কেউ তার মাথায় আঘাত করেছে। মেয়েটা নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। সামলে ওঠার চেষ্টা করল নিজেকে। কিন্তু পুরোপুরি সামলে ওঠার পূর্বেই ভেসে এলো শক্তপোক্ত পুরুষালী এক কণ্ঠস্বর। গম্ভীর কণ্ঠে সে বলল,
“আমার শরীরটা নরম কোমল মাখনের মতো লাগছে? সারা জীবন এখানে এভাবে পড়ে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে নাকি?”

অনুরাগে তুই পর্ব ২