অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৫
সাদিয়া শওকত বাবলি
“আমার মা বোন তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেও তুই অত সহজে আমাকে ছেড়ে আসতে পারতি না। অপেক্ষা করতি আমার তোর কাছে ছুটে আসার।”
প্রত্যুত্তরে ত্রয়ী চুপ রইল। মাথা এলিয়ে দিল শীর্ষের কাঁধে। স্বামীর আকস্মিক এত গাঢ় স্পর্শে হৃদয়ের অবস্থা বড়োই নাজুক তার। শীর্ষ নাক ঘষলো মেয়েটার ঘাড়ে। এরপর হুট করেই একটা কা’ম’ড় বসালো। আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে উঠল ত্রয়ী। লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। ঘাড়ে ব্যথাও লেগেছে বেশ। শীর্ষ বেশ জোরেশোরেই বসিয়েছে কামড়টা। ত্রয়ী নাক মুখ কোঁচকাল। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“আপনি আমাকে কা’ম’ড় দিলেন কেন?”
শীর্ষ সাথে সাথে দাঁত কেলিয়ে দিল। আঙ্গুল তুলে দাঁতে টোকা দিতে দিতে বলল,
“দাঁতের ধার দেখালাম। একদিন বলেছিলি না আমার দাঁত ভোঁতা। তার প্রমাণ দিলাম। এখন বল আমার দাঁত ভোঁতা নাকি ধারালো?”
ত্রয়ী ভেংচি কাটলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ধারালো নাকি ভোঁতা সে কথা পরে হবে। আগে এটা বলুন তো আপনি দাঁত ব্রাশ করেন না কতদিন ধরে? ইসসস, মুখে কি গন্ধ! গা গুলিয়ে উঠছে আমার।”
এত বড়ো অপমান! শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমি প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করি।”
“মনে তো হয় না।”
“বালির বস্তা।”
“ধলা মুলা।”
শীর্ষ হতবাক হয়ে পড়ল। এই মেয়েটা এখনই তাকে কি বলল? ধলা মুলা! শীর্ষ উঠে দাঁড়াল। ত্রয়ীর দিকে তেড়ে এসে বলল,
“বালির বস্তার বাচ্চা, কি বললি তুই আমাকে?”
ত্রয়ী সাথে সাথে দুই কদম পিছিয়ে গেল। শীর্ষের ক্রোধের কোনো তোয়াক্কা না করেই আবার বলে উঠল,
“ধলা মুলা।”
শীর্ষ তৎক্ষণাৎ ঝড়ের গতিতে এসে খপ করে ধরল ত্রয়ীর কোমড়। টেনে নিকটে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে। ক্রোধ নিয়ে বলল,
“তোর সাহস ইদানীং বেড়ে গেছে।”
“তো!”
শীর্ষ বাঁকা হাসলো। ফের ত্রয়ীর গলায় আবার কামড় বসালো। মৃদু স্বরে চ্যাচিয়ে উঠল ত্রয়ী। শীর্ষ টোকা দিল মেয়েটার কপালে। ওষ্ঠ বাঁকিয়ে বলল,
“দাঁতের দেখাবো।”
ত্রয়ী নাক মুখ কোঁচকাল। শীর্ষকে নিজের থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বলল,
“অসভ্য লোক একটা। বের হন আমার রুম থেকে।”
শীর্ষ হাসলো। চোখ ঘুরিয়ে তাকাল এদিক ওদিক। হঠাৎ তার নজর পড়ল বিছানার দিকে। খাটটা বেশ বড়োসড়। নির্দ্বিধায় দুজন মানুষ ঘুমানো যাবে। বিছানায় বালিসও দুটো। আবার একটা কোলবালিশও আছে। শীর্ষ ভ্রু কোঁচকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“বিয়ে করেও এত বড়ো একটা খাটে একা ঘুমাস। জামাইকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর বয়সে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাস। লজ্জা করে না তোর বালির বস্তা?”
ত্রয়ীর মেজাজ গরম হলো। বদমাইশ লোক একটা। একটা চু’মু খেয়ে তাকে গলিয়ে দিয়ে দুটো কা’ম’ড় দিয়েছে। গলাটা জ্বলে যাচ্ছে এখনো। আবার বলছে দাঁতের ধার দেখাচ্ছি! ত্রয়ী রেগেমেগে ধরলো শীর্ষের এক হাত। টেনে তাকে নিয়ে গেল দরজার কাছে। ধাক্কা দিয়ে ফেললো বাইরে। কটমট করে বলল,
“না লজ্জা করে না। জামাই ছাড়াই ভালো আছি আমি।”
শীর্ষ হতবাক হয়ে পড়লো। এইভাবে মেয়েটা তাকে কক্ষের বাইরে বের করে দিল? নাহ, এখনই ঢুকতে হবে কক্ষে। বাকি কথা তারপরে হবে। শীর্ষ ব্যস্ত হলো। তড়িঘড়ি করে ঢোকার চেষ্টা করল কক্ষের ভিতরে। ত্রয়ী ধরে ফেললো শীর্ষের পরিকল্পনা। সে ঠাস করে বন্ধ করে দিল দরজাটা। শীর্ষের হতবাকতা বাড়লো আরও। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল সে বন্ধ দরজার পানে। মেয়েটা এইভাবে তার মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিল? শীর্ষ একবার দরজায় ধাক্কা দিতে গিয়েও থেমে গেল। এত রাতে দরজায় ধাক্কা দেওয়া বোধ হয় ঠিক হবে না। কারো কানে গেলে ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। যদিও শীর্ষ চায় সবাইকে অতি দ্রুত সবটা জানাতে তবে এভাবে নয়। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো সে। এই রাতে আর দরজা ধাক্কা ধাক্কি না করে চলে গেল।
বাহিরে ঘন আঁধার। চারদিকে বিরাজ করছে গাঢ় নীরবতা। মেহের হাঁটু মুড়ে বসে রয়েছে বিছানায়। চোখে মুখে তার বিষন্নতা, হাতে মোবাইল। আজ ভীষণ ইচ্ছা করছে আলভীকে একটি কল করতে। সেদিন বসার কক্ষে সরোয়ার চৌধুরীর কথাগুলো শুনে বাবার প্রতি সন্দেহ জন্ম নেয় তার হৃদয়ে। এরপর সে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে সরোয়ার চৌধুরীর সম্পর্কে এবং জানতে পারে আলভীর কথাগুলোই সত্যি ছিল। সত্যিই তার বাবা ভালো মানুষ নন। একজন দু’র্নী’তি’গ্র’স্ত খারাপ মানুষ। অথচ এই বাবার জন্যই সে সেদিন আলভীকে অপমান করেছিল, ইতি ঘটিয়েছিল সুন্দর একটি সম্পর্কের।
আচ্ছা আলভী কি এখনো তার জন্য অপেক্ষা করছে? সে ফিরে যেতে চাইলে ফিরিয়ে নিবে? নাকি ছুঁড়ে ফেলে দিবে? মেহেরের ভীষণ ভয় হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে। আজ তার ভুলের জন্যই এত সংশয়ে পড়েছে। আবার আলভীকে কল দিতেও সংকোচ হচ্ছে। কল দিয়েও বা সে কি বলবে? বলবে যে সে তার বাবার সব কুকীর্তি সম্পর্কে জেনে গেছে। নিজ বাবার সম্পর্কে এমন কথা বলতেও তো তার খারাপ লাগবে। হাজার হলেও সরোয়ার চৌধুরী তার বাবা, তাকে জন্ম দিয়েছে। মেহের আরও কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভাবলো। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিল সে কল করবে আলভীকে। তারপর যা হয় হোক। অন্যায় থাকলে তার বাবার রয়েছে আলভীর তো নেই। তাহলে সে কেন শুধু শুধু আলভীকে কষ্ট দিবে?
শীর্ষ কক্ষে নেই। আলভী একা একা শুয়ে আছে বিছানায়। দৃষ্টি ছাদের দিকে। জীবনের বহু হিসাব নিকাশ মেলাতে ব্যস্ত সে এই মুহূর্তে। আলভীর ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ তার বালিশের পাশে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠল কর্কশ ধ্বনিতে। ধ্যান ভাঙলো তার। ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো সাথে সাথে। এত রাতে আবার কে কল করেছে? আলভী বালিশের পাশ হাতরে মোবাইলটা হাতে তুলে নিল। মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল সে। মেহের কল করেছে। মেহেরের সাথে আলভীর বিচ্ছেদ ঘটেছে প্রায় সাত মাস। এর মধ্যে মেয়েটা কখনো তাকে কল করেনি বা কথা বলেনি। আলভী মাঝে মাঝে তাকে কল করতো, তার কলেজের অভিমুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু মেয়েটা কখনোই তার কল রিসিভ করেনি। কলেজের সামনে তাকে দেখেও এড়িয়ে গিয়েছে। তাহলে আজ হঠাৎ কল করল কেন? আলভী সময় ব্যয় করল না। দ্রুত কলটা ধরল। মোবাইলটা কানের কাছে নিয়ে বলল,
“হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম।”
ওপাশ থেকে ধীর কণ্ঠে ভেসে এলো,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
এরপরে চুপ। শুধু শোনা যাচ্ছে কিছু উত্তপ্ত ঘনঘন নিঃশ্বাসের আওয়াজ। আলভীও কিছু বলল না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল মেহেরের নিজে থেকে কিছু বলার। কিন্তু মেয়েটা সেই যে চুপ করেছে আর মুখ খুলছে না, আবার কলও কাটছে না। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো আলভী। অতঃপর বলল,
“কেমন আছেন?”
মেহের আরও একটু সময় নিল। এরপর হঠাৎ করেই কেঁদে উঠল ঝরঝর করে। আলভী ব্যস্ত হলো। অস্থির গলায় বলল,
“একি আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?”
মেহের কান্না বিজরিত কণ্ঠের বলল,
“আমি ভুল করেছি আলভী। আপনাকে বিশ্বাস না করে আমি ভুল করেছি। আমার বাবার কুৎসিত রূপটা আমি আগে জানতাম না। আমি ভাবতাম আমার বাবা সৎ এবং আদর্শবান একজন মানুষ। তিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমাদের এটাই দেখিয়েছন, বুঝিয়েছেন। আমরাও তাকেই বিশ্বাস করেছি। তাই সেদিন আপনার কথাগুলো আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়েছিল। আমি আপনাকে অবিশ্বাস করেছি, ফিরিয়ে দিয়েছি। আমাকে মাফ করে দিন আলভী।”
আলভীর হৃদয় শীতল হলো। যাক মেয়েটা অবশেষে সব সত্যি জানতে পেরেছে। আলভী ঠিক জানতো মেহের একদিন সব জানতে পারবে কারণ সত্যি কখনো চাপা থাকে না। ছেলেটা ওষ্ঠ প্রসারিত করে বলল,
“আপনি সত্যিটা জেনেছেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন এই অনেক। আর কান্নাকাটি করতে হবে না।”
“করব না। আগে বলুন আপনি আমাকে মাফ করেছেন।”
“মাফ করতে পারি একটা শর্তে।”
“কি শর্তে?”
আলভী ওষ্ঠ কামড়ে হাসলো। মৃদু স্বরে বলল,
“ভালোবাসি বলুন।”
মেহের লজ্জা পেল। লাজুক স্বরে বলল,
“ভালোবাসি আলভী।”
“আমিও আপনাকে ভালোবাসি, মেহের।”
সুদীর্ঘ এক রাত কেটে ভোরের দেখা মিলেছে। চারদিকটা আলোয় আলোয় ভরে উঠেছে। শীর্ষ, রবি, আলভী, ত্রয়ী এবং তৃপ্তি সকলে আজ একসাথেই সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে টেবিলে বসেছে। তামিম এবং তার বাবা চাচারা আগেভাগেই সকলের নাস্তা সেড়ে অফিসে চলে গেছে। তামিম এখন অনেকটাই সুস্থ। আজ থেকেই অফিস শুরু করেছে। তৃপ্তি খেতে খেতে হঠাৎ তার নজর গেল ত্রয়ীর দিকে। ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“তোর গলায় ওগুলো কিসের দাগ আপু?”
ত্রয়ী অপ্রস্তুত হলো। গতকাল রাতে যে শীর্ষ তার গলায় কা’ম’ড় দিয়ে দাগ বসিয়ে ফেলেছিল তা তো এক প্রকার সে ভুলেই বসেছিল। ত্রয়ী দ্রুত ওড়না দ্বারা গলাটা ঢেকে নিল। আমতা আমতা করে বলল,
“কককই কিসের দাগ? কোনো দাগ নেই তো।”
“আমি স্পষ্ট দেখলাম। মনে হলো যেন কোনো মানুষের দাঁতের দাগ।”
তৃপ্তি কণ্ঠে জোর দিয়ে বলল কথাগুলো। রবি, আলভী এবং নয়নের খাওয়া থেমে গেল তৎক্ষণাৎ। তিনজনই এক যোগে ঘুরে তাকাল শীর্ষের দিকে। শীর্ষ অপ্রস্তুত হলো কিঞ্চিৎ। নিজের বউকে ভালোবেসে দুই একটা কা’ম’ড় দিয়েও বা বাইট দিয়েও শান্তি নেই। ভাগ্যিস এখানে বড়োরা কেউ নেই। নয়তো আজ মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি লেগে যেতো। শীর্ষ একটু কেশে গলা পরিষ্কার করল। অতঃপর থমথমে কণ্ঠে বলল,
“কি সমস্যা? তোরা আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
“দাঁতের সাইজ, ধার, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ বোঝার চেষ্টা করছি আর কি।”
রবির কথাটা শেষ হতে না হতেই শীর্ষ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল তাদের দিকে। সাথে সাথে চুপসে গেল তিনজনই। আর বলল না কিছুই।
সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত দিন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যস্ততা। ত্রয়ী কলেজের জন্য বেরিয়েছে। আর প্রতিদিনের ন্যায় শীর্ষও তার পিছু নিয়েছে। এ যেন এখন তার নিত্য কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কলেজের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ ত্রয়ীর নাম ধরে ডাক পড়ল। ত্রয়ী পিছন ঘুরল। দেখতে পেল এক তরুণ তার দিকেই দৌড়ে আসছে। ত্রয়ী ওষ্ঠ প্রসারিত করল। হাত উঁচিয়ে বলল,
“আরে তাশিন, কেমন আছো?”
তাশিন নামক ছেলেটা দৌড়ে এসে দাঁড়াল ত্রয়ীর মুখোমুখি। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আপু। তুমি কেবল এলে….”
পরপর তাশিন তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ ঘেটে একটা খাতা বের করল। সেটা ত্রয়ীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তারিন আপু একটু অসুস্থ। তাই আজ আসতে পারেনি। আমাকে বলল এটা তোমাকে দিয়ে দিতে।”
তারিন ত্রয়ীর বান্ধবী। গতকাল রাতে মুঠোফোন যোগে তার কাছে একটি নোট চেয়েছিল ত্রয়ী। নোটটা বেশ জরুরিই ছিল। তাই তারিন অসুস্থতার কারণে কলেজে না আসতে পারলেও ভাইকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও তাশিন তাদের থেকে ছোট তবে দেখতে বড়ো মনে হয়। ত্রয়ী এক টুকরো হাসি উপহার দিল তাশিনকে। হাতের নোটটা উলটে পালটে দেখে বলল,
“ধন্যবাদ তোমাকে।”
তাশিন হালকা হাসলো। এরপর বলল,
“আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসছি। ওদিকে আবার আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা।”
তাশিন চলে গেল। শীর্ষ ছিল তাদের থেকে একটু দূরে। ফলস্বরূপ দুজনের কথাপকথন না শুনলেও এই টুকু দেখলো যে ত্রয়ী একটি ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। অন্তর জ্বলে উঠল তার। এমনিই ত্রয়ীকে নিয়ে তার হৃদয়ে হিং’সা’ত্মক মনোভাব সর্বদাই একটু বেশি। শীর্ষ এগিয়ে দাঁড়াল মেয়েটার পাশে। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,
“ছেলেটা কে?”
ত্রয়ী মুখ বাঁকিয়ে জবাব দিল,
“তা দিয়ে আপনার দরকার কি?”
শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে জবাব দিল,
“আমার নয়তো কার কি?”
“কারোরই কিছু না।”
কথাটা বলে ত্রয়ী আর সময় দিল না। লম্বা লম্বা পা ফেলে ঢুকে গেল কলেজের ভিতরে। শীর্ষ কটমট করে চেয়ে রইল মেয়েটার গমনপথের দিকে। নাহ এখন আর তাকে বসে থাকলে চলবে না। কবে ত্রয়ীর রাগ ভাঙাবে তারপর তার সাথে করে নিয়ে যাবে। এতদিনে না পাখি আবার অন্য ডালে উড়াল দেয়। এমনিই ত্রয়ী এখন আর শীর্ষের কোনো কথা শোনে না, তাকে পাত্তা দেয় না। এই মুহূর্তে আরও সময় নেওয়াটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা’রা’র মতো হয়ে দাঁড়াবে।
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৪
রাতের আঁধারে ছেয়ে গেছে প্রকৃতি। চারিদিকটা নিস্তব্ধ হয়ে যেতে শুরু করেছে একটু একটু করে। সোহরাব হোসেন থেকে শুরু করে বাড়ির সকলে বসে রয়েছে বসার কক্ষ জুড়ে। মূলত শীর্ষই তাদের সবাইকে এখানে ডেকেছে আজ। সোহরাব হোসেন তাকালেন শীর্ষের দিকে। সন্দিহান কণ্ঠে শুধালেন,
“আমাদের সবাইকে এখানে ডেকেছ কেন বাবা? কিছু বলবে কি?”
শীর্ষ এক পলক তাকাল ত্রয়ীর দিকে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“জ্বি আঙ্কেল। আপনাদের সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।”