অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৮

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৮
সাদিয়া শওকত বাবলি

এই টুকু বলে থামল সাহেদ। একটু সময় নিয়ে ফের বলল,
“আমাকে নিয়ে সন্দেহ করতে করতে তুমি ঐ অসহায় এতিম মেয়েটাকে বাড়ি থেকেই বের করে দিলে। কিন্তু ঐ মেয়েটা তোমার নামে আমাকে কখনো খারাপ কিছু বলেনি। তুমি ওর সাথে আমার জন্য হাজারটা খারাপ ব্যবহার করেছো। ও তার একটা কথাও আমাকে বলেনি। উলটো তুমি যাকে সবথেকে কাছের মনে করতে, নিজের সর্বোচ্চ ভালো বান্ধবী মনে করতে সেই শিলাই আমাকে এ কথা গুলো বলে গেছে। সে চায়নি তুমি আমাকে পাও।”

রিমা কান্না ভুলে তাকিয়ে রইল সাহেদ দিকে। ভিতরটা অপরাধবোধে জর্জরিত হয়ে পড়ল তার। ত্রয়ী মেয়েটাকে সে এতটা ভুল বুঝলো? অথচ যাকে আপন ভেবে এতগুলো অন্যায় সে করল সেই তার পিঠ পিছে ছু’রি’টা মা’র’ল? না, ত্রয়ীর কাছে মাফ চাইতে হবে তাকে। আজ সকালেই তো ফাহমিদা বেগম, আব্দুর রহমান খান এবং শীর্ষ ত্রয়ীকে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে গিয়েছে। মেয়েটা ফিরে এলেই রিমা তার অভিমুখে সব দোষ স্বীকার করে নিবে‌। হাত জোড় করে মাফ চাইবে। রিমার ভাবনার মধ্যেই সাহেদ ফের মুখ খুললো। স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“একটা সময় আমি তোমাকে পছন্দ করলেও এখন আর করি না। দিনের পর দিন সহপাঠীদের প্রতি তোমার দুর্ব্যবহার, অ’হং’কা’র আমার ভিতর থেকে তোমার প্রতি ভালো মনোভাব গুলো সরিয়ে খারাপ মনোভাব তৈরি করেছে। তোমার প্রতি ভালোবাসা তো দূরে থাক, কোনো অনুভূতিই আর অবশিষ্ট নেই আমার ভিতরে। সেখানে আমি তোমার ভালোবাসা মেনে নিয়ে তোমাকে মেনে নেব কিভাবে? তাছাড়া আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। দেখে শুনে গ্রামের এক সহজ সরল মেয়েকে আমি নিজে পছন্দ করেছি। বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে এসে বিয়েটা ভাঙা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যায় করলে তুমি করেছ। অ’হং’কা’রে অন্ধ হয়ে তুমি মানুষকে মানুষ বলে গন্য করোনি। তার ভুক্তভোগী আমি এবং আমার বিয়ের জন্য ঠিক করা ঐ মেয়েটা হতে যাব কেন? ঐ মেয়েটার তো এখানে কোনো দোষ নেই। সে এ ব্যাপারে কিছু জানেও না।”

কথাগুলো বলে সাহেদ উঠে দাঁড়াল। ছোট একটা শ্বাস ফেলে ফের বলল,
“আমি জানি তুমি এখন তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো। তবে তোমার এই ভুলটা বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ঐ যে কথায় আছে না ‘সময় গেলে সাধন হবে না।’ এখন তুমি যতই কান্নাকাটি করো বা চেষ্টা করো আমার পক্ষে আর তোমাকে ভালোবাসে আপন করে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই বলি কি, আমাকে ভুলে যাও। নতুনভাবে নিজের জীবন শুরু করো। আশা রাখছি তোমার জীবনে আবার কেউ আসবে। যে তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবে। তবে হ্যাঁ, সর্বদা মনে রাখবে অ’হং’কার, ঔদ্ধত্য কখনো কারো জীবনে ভালো কিছু বয়ে আনে না। মানুষকে মানুষ বলে গন্য করতে শেখো। তোমার আজকের ভুলগুলো থেকে যদি একটুও শিক্ষা নিয়ে থাকো তবে ভবিষ্যতে ভালো হয়ে চলো।”

কথাগুলো বলতে বলতে সাহেদ নিজের হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো। সময় দেখতে দেখতে বলল,
“আমার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। আসছি আমি।”
সাহেদ চলে গেল। তবে কক্ষে ফেলে গেল হৃদয় ভাঙা, দহনের আগুনে পুড়তে থাকা এক মানবীকে। রিমা এতক্ষণ চুপচাপ শুধু শুনছিল সাহেদের সব কথা। কিছু বলার কোনো শক্তি পাচ্ছিল না। বললেও বা কি বলবে? সাহেদ তো একটা কথাও ভুল বলেনি। যা বলেছে সবটাই সত্যি। আজ তার সাথে যা হয়েছে বা হচ্ছে সবটাই তার নিজের জন্য হচ্ছে। সে অন্যায় করেছে। সেই শাস্তিই পাচ্ছে। মেয়েটা হঠাৎ বসে পড়ল নিচে মেঝেতে। হৃদয়ের হওয়া যন্ত্রণাকে আর সহ্য করে না পেরে ফুঁপিয়ে উঠল। গাল দুটো সিক্ত হলো নোনা জলে।

আঁধারের চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে প্রকৃতি। দিনের উজ্জ্বল সূর্যটা ডুবে গিয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। শীর্ষ আব্দুর রহমান খান এবং ফাহমিদা বেগমকে নিয়ে কেবলই এসে পৌঁছেছে বরিশালে তামিমদের বাড়িতে। এই মুহূর্তে তারা বসে আছে তাদেরই বসার কক্ষে। সোহরাব হোসেন, সুমন হোসেন এবং তামিম বসে আছে শীর্ষদের সাথে। আর আলেয়া বেগম, লুৎফা বেগম এবং তৃপ্তি দৌড়ে ঝাঁপিয়ে তাদের চা নাস্তা দিচ্ছে। শুধু নেই ত্রয়ী। সে দরজার আড়াল থেকে উঁকি ঝুঁকি মে’রে দেখছে সবাইকে। এতদিনে এত কাহিনীর পর হুট করে এই লোক গুলোর অভিমুখে যেতে কেমন সংকোচ হচ্ছে তার। লজ্জা লাগছে ভীষণ। কেউ তাকে একটু ডাকছেও না। ডাকলে না হয়ে লজ্জা, সংকোচ ফেলে হলেও যেতো। শীর্ষ হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,

“আমি একটু আসছি।”
কেউ দ্বিরুক্তি করল না। হয়তো ওয়াশরুম টুমে যাবে। শীর্ষ সকলের দিকে এক পলক তাকিয়ে হাঁটা দিল ভিতরের দিকে। ত্রয়ী তাকে এদিকে আসতে দেখেই দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। নিজেকে যথাসম্ভব চেপে চুপে রাখল যাতে কেউ তাকে না দেখে। কিন্তু হায়! শীর্ষ সোজা এসে দাঁড়াল ত্রয়ীর মুখোমুখি। এক ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
“এখানে চো’রে’র মতো কি করছিস?”
ত্রয়ী অপ্রস্তুত হলো। আমতা আমতা করে বলল,
“কিছু করছি না তো। এমনিই এদিকে এসেছিলাম। বসার কক্ষে আপনাদের দেখে এখানে দাঁড়িয়ে পড়েছি আর কি।”
“শুধু দাঁড়িয়ে পড়েছিলি নাকি উঁকি ঝুঁকিও মা’র’ছি’লি?”
ত্রয়ী বিব্রত হলো। এই লোক সব দেখে নিয়েছে? এখন আবার এই নিয়ে তাকে লজ্জা দিতে শুরু করবে। ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেলল। একটু সময় নিয়ে বলল,

“আমি ‌রুমে যাচ্ছি।”
কথাটা বলে মেয়েটা আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না ঐ স্থানে। হাঁটা ধরল নিজ কক্ষের দিকে। শীর্ষ তৎক্ষণাৎ পিছু ডাকল তার,
“দাঁড়া বালির বস্তা।”
ত্রয়ী দাঁড়াবে না দাঁড়াবে না করেও দাঁড়িয়ে পড়ল। কিছুটা ভারী কণ্ঠে শুধাল,
“কিছু বলবেন?”
শীর্ষ পিছন ঘুরে ছাদের সিঁড়ির দিকে বাড়াল। হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“আমার সাথে আয়।”
“কোথায়?”
“আর একটু আড়ালে।”
ত্রয়ী ভ্রু কোঁচকাল। সন্দিহান কণ্ঠে শুধাল,
“কেন?”
শীর্ষ চোখ টিপলো। ওষ্ঠে এক টুকরো দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলল,
“তোকে ক’ষে একটা চু’মু খাবো তাই।”

ত্রয়ী ভরকাল। সাথে লাজে গাল দুটোতেও রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল। লোকটা দিন দিন একদম লজ্জাহীন হয়ে উঠছে। ত্রয়ী আর শীর্ষের পিছু গেল না। মাথা নুইয়ে চলে এলো নিজ কক্ষের দিকে।
শীর্ষ কিছুটা দূরে গিয়ে পিছন ঘুরলো, দেখলো ত্রয়ী নেই। অবাক হলো সে। ছুটে আবার ফিরে এলো পূর্বের স্থানে। দেখতে পেল ত্রয়ী নিজ কক্ষের দিকে যাচ্ছে। শীর্ষের মেজাজ বিগড়াল। চোয়াল জোড়া শক্ত হয়ে এলো সাথে সাথে। ইদানীং মেয়েটার সাহস বেড়েছে খুব। প্রতিটি কথায় কথায় তার অবাধ্য হচ্ছে। নাহ, এবার একে একটা শিক্ষা না দিলেই হচ্ছে না। শীর্ষ লম্বা লম্বা পা ফেলে এলো ত্রয়ীর কক্ষের দিকে। মেয়েটা কক্ষে ঢুকে‌ দ্বার বন্ধ করার পূর্বেই ঢুকে পড়ল সে। চোখ মুখে লাজুক ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,

“তুই তো দেখছি আমার থেকেও রোমান্টিক বালির বস্তা। আমি তোকে একটা চু’মু খাব বলে আড়ালে ডাকলাম। আর তুই আমাকে তোর রুমে ডেকে আনলি?”
এই টুকু বলে শীর্ষ থামল। চোখে মুখে দুষ্টুমির আভা ফুটিয়ে তুলে বলল,
“চু’মু’র থেকে বেশি কিছু চাই তাই না? দাঁড়া দরজাটা বন্ধ করে নেই। তারপর চু’মু’র থেকে বেশি কিছু কি সব দেব।”
কথাটা বলেই শীর্ষ দরজা আটকাতে উদ্যত হলো। ত্রয়ীর বুক কেঁপে উঠল। ব্যস্ত হয়ে সে বলল,
“একি আপনি দরজা আটকাচ্ছেন কেন?”
শীর্ষ দরজাটা আটকে পিছন ঘুরলো। ত্রয়ীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“দরজা না আটকে কি বাসর করা যায়? তাই দরজাটা আটকে দিয়েছি। এখন জম্পেশ একটা বসার সাড়বো। তারপর তোকে বাবা মায়ের সামনে নিয়ে যাব কথা বলতে।”

“আপনি কিন্তু….”
বাকিটুকু বলার পূর্বেই শীর্ষ হুট করে কোলে তুলে নিল ত্রয়ীকে। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে উঠল ত্রয়ী। শিউড়ে উঠল তার শরীর খানা। তাড়াহুড়ো করে বলল,
“কি করছেন কি? আমাকে কোলে তুলে নিয়েছেন কেন? নিচে নামান।”
শীর্ষ নিচে নামাল না মেয়েটিকে। তবে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“আগে তোর শরীরটা ছিল জোঁ’কে’র মতো ঢ্যাব ঢ্যাবে নরম। এখনো যদিও নরম তেমনটাই আছে। তবে ওজন বেড়েছে। আগে তোর শরীরে ছিল একটা বালির বস্তার ওজন। এখন হয়েছে দুটো বালির বস্তার ওজন।”
ত্রয়ী মুখ বাঁকাল। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“একদম বাজে কথা বলবেন না। আমার শরীরে মোটেই বেশি ওজন নেই। যা আছে ঠিকঠাক।”
“হ্যা এই ঠিকঠাক ওজন তুলতেই কোমড় আমার বেঁকে যাচ্ছে। এর বেশি ওজন হলে তো কোমড় আর খুঁজেই পাওয়া যেতো না।”

ত্রয়ী অপমানিত বোধ করল। লোকটা সেই কখন থেকে তার ওজন নিয়ে কথা শোনাচ্ছে। ওজন বাড়লে তার বেড়েছে তাতে কার কি? সে এই কয় মাসে শীর্ষেরটা খেয়েছে নাকি পড়েছে? ত্রয়ী দাঁতে দাঁত পিষলো। রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
“আপনাকে আমাকে কোলে নিতে কে বলেছে? ফালতু কথা না বলে নিচে নামিয়ে দিন।”
শীর্ষ ত্রয়ীকে একদম নিচে নামাল না। আস্তে ধীরে শোয়ালো বিছানায়। অতঃপর নিজেও উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল মেয়েটার উপরে। মিহি কণ্ঠে বলল,
“নে দিয়েছি নিচে। এখন কি করবি কর।”
ত্রয়ী নাক মুখ কোঁচকাল। মৃদু স্বরে চ্যাঁচিয়ে উঠে বলল,
“আল্লাহ কি ভারী শরীর আপনার! এটা মানুষের শরীর নাকি কোনো হাতির শরীর। মনে হচ্ছে যেন এখনই চ্যাপ্টা হয়ে যাব।”

“চুপ কর বালির বস্তা। আমার এত সুন্দর শরীরে নজর লাগাস না। বহু কষ্টে অর্জিত শরীর আমার।”
“শরীর না যেন হামানদিস্তা।”
“তুই বালির বস্তা, আমি হামানদিস্তা একদম পার্ফেক্ট ম্যাচ। আয় এখন এই খুশিতে তোকে একটা চু’মু খাই।”
ত্রয়ী বিরক্ত হলো। কটমট করে বলল,
“আমার উপর থেকে সরুন নির্লজ্জ পুরুষ।”
“সরবো না। কি করবি তুই?”
“আপনি….”

ত্রয়ী বাকি কথাটুকু বলার আর সুযোগ পেল না। তার পূর্বেই তার ওষ্ঠ জোড়া আয়ত্তে নিল শীর্ষ। মেয়েটা চমকে উঠল। শিউরে উঠল তার ছোটখাটো দেহ খানা। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল শীতল এক রক্তস্রোত। ত্রয়ী দুই হাত উঁচিয়ে শীর্ষকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু শীর্ষ তৎক্ষণাৎ সরলো না। সে কিছুটা সময় নিয়ে নিজের কাজ সেরে তবেই একটু দূরে গেল। ডান হাতটা তুলে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ওষ্ঠজোড়া মুছতে মুছতে বলল,
“আমাকে হামানদিস্তা বলায় প্রচুর খুশি হয়ে এই চুমুটা তোকে উপহার হিসেবে দিলাম।”
ত্রয়ী লাজে রাঙা হলো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে কিছু বলবে তার পূর্বেই দরজায় টোকা পড়লো। সেই সাথে ভেসে এলো তৃপ্তির কণ্ঠস্বর,

“আপু তুই রুমে আছিস? বসার কক্ষে সবাই ডাকছে তোকে।”
শীর্ষ বিরক্ত হলো। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“কেবল একটা চু’মু খেয়েছি। এর মধ্যেই ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে?”
ত্রয়ী মুখ বাঁকাল। ভেংচি কেটে জবাব দিল,
“ডাকলে আপনার বাবা মা-ই ডেকেছেন। এখন সরুন তো আমার উপর দেখে। বসার কক্ষে যেতে হবে‌।”
শীর্ষ মুখ ভার করে উঠে দাঁড়াল। ত্রয়ীও উঠে দাঁড়াল সাথে সাথে। মাথায় ওড়না চাপাতে চাপাতে গলা উঁচিয়ে বলল,
“তুমি যাও। আসছি আমি।”

তৃপ্তি চলে গেল। ত্রয়ী শীর্ষের দিকে তাকিয়ে একটি ভেংচি কেটে হাঁটা ধরল বসার কক্ষের দিকে। শীর্ষ তৎক্ষণাৎ ত্রয়ীর পিছু গেল না। দুজনকে একসাথে দেখলে সবাই আবার সন্দেহ করবে, আড় চোখে তাকাবে। তখন শ্বশুর বাড়ির লোকদের সামনে তার মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি লাগবে। তার থেকে একটু সময় নিয়ে পরে যাওয়াই ভালো।
ত্রয়ী বসার দরজার নিকটে এসে দাঁড়াল একটু। বড়ো বড়ো কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। এরপর ঢুকল ভিতরে। মিনমিনে গলায় বলল,
“আসসালামুয়ালাইকুম।”

ত্রয়ীকে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন ফাহমিদা বেগম। চোখ দুটো তার অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠেছে। এই নরম, অসহায় মেয়েটাকে তিনি কিভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন ভাবলেই অনুতাপের অনলে বুকটা পুড়ে ওঠে। ভদ্রমহিলা এসে দাঁড়ালেন ত্রয়ীর অভিমুখে। ধরা গলায় শুধালেন,
“কেমন আছিস, মা?”
ত্রয়ী একবার তাকাল ফাহমিদা বেগমের দিকে। এরপর দৃষ্টি নুইয়ে জবাব দিল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?”
“এই আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।”
এই টুকু বলে থামলেন ফাহমিদা বেগম। একটু সময় নিয়ে অপরাধীর ন্যায় বললেন,

“আমি জানি আমি তোর সাথে যে অন্যায় করেছি তার ক্ষমা হয় না। নিজের হুশ খেয়াল হারিয়ে, বিবেক বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে আমি কাজটা করে ফেলেছি। আমাকে মাফ করে দে মা। তুই মাফ না করলে যে আমি ম’রে’ও শান্তি পাব না।”
যতই রাগ অভিমান কিংবা তিক্ততা থাকুক না কেন ফাহমিদা বেগমের ন্যায় একজন বায়োজ্যেষ্ঠ মানুষ এত দূর থেকে এসে মাফ চাওয়ার পর তো আর কিছু থাকে না। আর এতকিছুর পরেও যদি ত্রয়ী তাদের মাফ না করে তবে তা মোটেই তার আত্মসম্মান রক্ষার মধ্যে পড়ে না, বরং বেয়াদবির মধ্যে পড়ে। ত্রয়ী একটু ইতস্তত করল। আমতা আমতা করে বলল,

“এভাবে বলবেন না, আন্টি। আমি আপনাদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছি।”
ফাহমিদা বেগম নাক টানলেন।‌ আঁচলে চোখ মুছে বললেন,
“তাহলে আমাদের সাথে ফিরে চল। সেদিনের পর শীর্ষও আর বাড়ি ফেরে না। তুই বীনা, শীর্ষ হীনা বাড়িটা আমার ফাঁকা হয়ে গেছে।”
ফাহমিদা বেগমের কথার মধ্যে শীর্ষ এসে বসলো সোফায়। আব্দুর রহমান খান তাকালেন সোহরাব হোসেনের দিকে। স্বাভাবিকভাবেই বললেন,
“আর তো কোনো রাগ অভিমান রইল না। এখন তাহলে ত্রয়ীকে আমরা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা দয়া করে আর বারণ করবেন না।”
সোহরাব হোসেন হাসলেন। ত্রয়ীর দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৭

“ত্রয়ী যেমন আমাদের মেয়ে তেমনি আপনাদের বাড়ির বউ। ওকে আটকে রাখার সাধ্য আমাদের নেই। তবে এভাবে রাতের আঁধারে সাদামাটাভাবে আমি ওকে আপনাদের হাতে তুলে দিতে চাইছি না। যতদূর শুনেছি ওদের বিয়েটাও কোনো আনুষ্ঠানিকতা মেনে হয়নি। তাই আমি চাইছি ওদের আবার বিয়ে দিতে। দুই চার জন আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে ছোট খাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ত্রয়ীকে আপনাদের বাড়িতে পাঠাতে।”

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৯