অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ শেষ পর্ব 

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ শেষ পর্ব 
সাদিয়া শওকত বাবলি

রবির কথা শুনে তৃপ্তি এবার চিন্তায় পড়ে গেল। এভাবে তো সে কখনো চিন্তা করে দেখেনি। তৃপ্তি মাথা চুলকাল। অবুঝের ন্যায় বলল,
“এভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি।”
“তাহলে ভাবো।”
তৃপ্তি অবাক নয়নের তাকাল রবির দিকে। হৃদয়ে কিছু সন্দেহরা হানা দিল তার। তবে কি লোকটা তাকে প্রেমিক হিসেবে ভাবার কথা বলছে? তৃপ্তির চোখ মুখ বিস্ময়ে ছেয়ে গেল। রবির সাথে তার পরিচয় একদমও কম দিনের না। এর মধ্যে লোকটার কোনো আচার আচরণে তো এমন কিছু মনে হয়নি। উলটো সময় সময় শত্রুর ন্যায়ই ব্যবহার করেছে। তৃপ্তির হৃদয়ে বেশ কিছু প্রশ্নেরা ডানা মেললো। আর মেয়েটা বরাবরই ছটফটে, চঞ্চল ধাঁচের। তার হৃদয়ে কোনো কিছু নিয়ে কৌতুহল জাগলে কিংবা কোনো প্রশ্নেরা উঁকি দিলে তা আর সে চেপে রাখতে পারে না। তৃপ্তি পলক ঝাপটাল। কণ্ঠে কৌতুহল নিয়ে শুধাল,

“আপনি ঠিক কোন প্রকারে ভাবতে বলছেন আমাকে? ভাই নাকি প্রেমিক?”
আলভী অপ্রস্তুত হলো। মাথা চুলকে বলল,
“ভাই হিসেবে হতে যাবে কেন? তোমারও ভাই আছে আর আমারও বোন আছে। সুতরাং এই ধরণের কোনো সম্পর্কের প্রয়োজন নেই আমাদের।”
“তাহলে বাকি রইল প্রেমিক। আপনি কি আমার প্রেমিক হতে চাইছেন রবি ভাই?”
রবির ভিতরকার অপ্রস্তুতভাব বাড়লো। এই প্রশ্নগুলো কি এভাবে করা উচিত? মেয়েটা অবুঝ বেশ। বোঝেনা কিছু। তবে রবি তার এই প্রশ্নের উত্তর থেকে পিছু হটল না। বরং এক কদম এগিয়ে জবাব দিল,
“ভাবলে ভাবতেও পারো। আমি মাইন্ড করব না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তৃপ্তির আর বুঝতে বাকি রইল না কিছু। যদিও এই পুরুষকে নিয়ে এসব কথা সে কল্পনাতেও ভাবেনি তবে লোকটা একেবারে খারাপ নয়। তৃপ্তি রবির পা থেকে মাথা অব্দি নজর বুলাল একবার। লোকটা সুদর্শন আছে, চরিত্রও যতদূর ঠেকলো ভালো, আচার আচরণেও সুপুরুষতা। নাহ, একে নিয়ে একটু সময় নিয়ে ভাবাই যায়। এখন যদিও তার প্রতি তৃপ্তির হৃদয়ে ভালোবাসা নেই। তবে ভাবতে ভাবতে ভালোবাসা এসেও যেতে পারে। ভালো যেহেতু লেগেছে ভালোবাসতে কতক্ষণ? তৃপ্তি মাথা নুইয়ে নিল। লাজুক স্বরে বলল,
“দেখি ভেবে কি করা যায়।”

সূর্যটা ডুবে গেছে বেশ অনেকটা সময় গড়িয়েছে। নীল আকাশটা আঁধারে ঢেকে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে। তিন তলা বিশিষ্ট ঢাকা-বরিশালের একটি লঞ্চের ছাদে বসে আছে শীর্ষ এবং ত্রয়ী। এই লঞ্চেরই একটি কেবিন ভাড়া করেছে শীর্ষ। দুপুরে বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই তারা সবাই বেরিয়ে পড়েছে বরিশালের উদ্দেশ্যে। তামিমরা সবাই গাড়িতে গেলেও ত্রয়ীকে নিয়ে শীর্ষ এসেছে লঞ্চে। কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সে লঞ্চে তেমন ওঠেনি। এটা অবশ্য মিথ্যা নয়। সড়ক পথে গাড়ি নিয়ে এখানে ওখানে ছোটাছুটি করলেও নদীপথে তেমন কোনো ভ্রমণই করেনি।
রাতের আঁধারকে গায়ে মেখে লঞ্চের ছাদের এক কোনে পাশাপাশি বসে আছে শীর্ষ এবং ত্রয়ী। আঁধারের তান্ডবে চারদিকে দেখা যাচ্ছে না তেমন কিছুই। শুধু পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ভেসে আসছে কানে। ত্রয়ী আলতোভাবে মাথা রাখলো শীর্ষের কাঁধে। মৃদু স্বরে বলল,
“অবশেষে আমার ভাগ্যেও বুঝি একটু সুখ ধরা দিল।”
শীর্ষ হাত বাড়িয়ে পিছন থেকে ধরল ত্রয়ীর কোমড়। ভরসা দিয়ে বলল,
“আশা রাখছি আর কখনো দুঃখ তোকে ছুঁতে পারবে না।”

সময় প্রবাহমান সে থেমে থাকে না কারো জন্য। এরই মধ্যে কেটে গেছে কয়েকটা মাস। এই কয় মাস লুকিয়ে ছাপিয়ে আলভী এবং মেহেরের প্রেম ভালোই কাটছিল। তবে এবার মেহেরের মনে হচ্ছে বিষয়টি গোপন রেখে আর এগনো উচিত নয়। সরোয়ার চৌধুরী আলভীকে পছন্দ করেন না। আগের বার তাদের আলাদা করার জন্য কম চেষ্টা তিনি করেননি এবারেও যদি তেমন কিছু করেন? তাদের লুকিয়ে ছাপিয়ে যোগাযোগ করার বিষয়টা নিশ্চিত হয়ে গোপনে যদি তিনি কোনো ফাঁদ পাতেন তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর। না, না মেহের তা মেনে নিতে পারবে না। আলভীকে আবার সে হারাতে পারবে না। সরোয়ার চৌধুরী নিজে থেকে জেনে কিছু করার পূর্বেই মেহের তাকে বিষয়টা জানাবে, বোঝাবে। তারপর দেখা যাক কি হয়। মেহের আর সময় ব্যয় করল না। পা চালিয়ে এলো বাবার কক্ষের অভিমুখে। সরোয়ার চৌধুরী এখন বাড়িতেই আছেন। একটু আগে ফিরেছেন অফিস থেকে। মেহের হাত উঁচিয়ে টোকা দিল বন্ধ দরজায়। নম্র কণ্ঠে বলল,

“বাবা আসবো?”
“এসো।”
মেহের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। সরোয়ার চৌধুরী বিছানায় বসে ছিলেন। মেহেরকে দেখেই শুধালেন,
“হঠাৎ আমার কক্ষে! বলবে কিছু?”
মেহের মাথা নুইয়ে নিল। মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
“হুম।”
“বলো।”

কিভাবে যে কথাটা বলবে আর তার বাবাও ঠিক কি প্রতিক্রিয়া দিবে ভেবে উঠতে পারছে না মেহের। আলভীর কথা শুনে যদি খ্যাপে যায় সরোয়ার চৌধুরী? অবশ্য খ্যাপে যাওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। তবুও কথাটা বলতে হবে তাকে। এ ছাড়া আর উপায় নেই। আলভীকে পেতে হলে এই টুকু তাকে করতেই হবে। আর বাবার রাগকে ভয় পাওয়া যাবে না। মেহের জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল। এরপর একটু সময় নিয়ে বলল,
“আমি আলভীকে ভালোবাসি বাবা। ওকে বিয়ে করতে চাই।”
সরোয়ার চৌধুরী চমকালেন। আলভী বলতে তো সেই শীর্ষের বন্ধুটা। এর সাথে না মেহেরের সকল সম্পর্ক ভেঙে গেল অনেক আগেই। তাহলে মেয়েটা এখন আবার সেই ছেলের কথা বলছে কেন? সরোয়ার চৌধুরী দৃষ্টি দিলেন মেয়ের দিকে। থমথমে কণ্ঠে বললেন,

“আলভীর সাথে না তোমার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। তাহলে আবার ওর সাথে বিয়ের কথা আসছে কেন?”
“ভেঙেছিল। পরবর্তীতে আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পেরে সবটা আবার ঠিক করে নিয়েছি।”
ভুল! কি বলতে চাইছে মেয়েটা? তবে কি মেহের জেনে গেছে সব? বুঝে গেছে তার দুর্নী’তি, প্র’তার’ণার বিষয়। না, না এ হতে পারে না‌। বহু কষ্টে সে নিজের সন্তানদের অভিমুখে একটা ভালো ভাবমুর্তি তৈরি করেছেন। এত সহজে তিনি তানা ভেঙে যেতে দিতে পারেন না। সরোয়ার চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলে,
“ও তোমার বাবার সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিল। তোমাকর বাবাকে অপমান করল‌। তারপরেও তুমি আবার ওর সাথে সব ঠিক করে নিয়েছো?”

বাবার সামনে তারই কুকর্ম গুলো বলতে কেমন ইতস্তত লাগলো মেহেরের। সাথে খারাপও লাগলো ভীষণ। তার বাবাকে সে কতটা ভালো জানতো। সব সময় নিজের আদর্শ বলে মানতো। অথচ শেষ পর্যন্ত যে তার বাবা একজন ঠ’ক, দু’র্নীতি’গ্রস্ত মানুষ বের হবে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু বাবা বলে তার সকল কুকর্ম গুলো ঢেকে রাখাও ঠিক হবে না। এটা কোনো সৎ মানুষের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তারা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টিকর্তা তাদের অন্যান্য জীবের তুলনায় উন্নত বুদ্ধি দান করেছেন, ন্যায় অন্যায় বোঝার মতো ক্ষমতা দিয়েছেন। সেই ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে সে কখনোই অন্যায়কে ধামাচাপা দিতে পারে না। হোক সে তার জন্মদাতা পিতা। মেহের নিজের ভিতরে সাহস সঞ্চয় করল। এরপর বলেই ফেললো,

“আলভী তোমার উপরে কোনো মিথ্যা অপবাদ দেয়নি বাবা। ও যা বলেছিল সবটা সত্যি ছিল। আমি তো আরও এটা ভেবে অবাক হয়েছিলাম ও কিভাবে তোমার সম্পর্কে সবটা জেনে তোমার মেয়েরই প্রেমে পড়তে পারল।”
সরোয়ার চৌধুরী প্রথমে একটু ভীত হলেন। মেয়ের সবকিছু জেনে যাওয়ায় আড়ষ্ট হয়ে পড়লেন কিছুটা। তবে পরক্ষণেই আবার মেহেরের কথাগুলো শুনে তীব্র ক্রোধে গর্জে উঠলেন। তার বিড়াল তাকেই বলে মিও? এই মেয়েকে তিনি জন্ম দিয়েছেন, খাইয়ে পড়িয়ে এত বড়ো করেছেন, পড়াশোনা করিয়েছেন। অথচ আজ সেই কিনা তাকে অপমান করছে। মানছে সে দুর্নীতি করেছে, প্রতা’রণা করেছে। কিন্তু কাদের জন্য করেছেন? এই ছেলে মেয়েদের জন্যই তো করেছেন, তাধের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে করেছেন। তিনি বুড়ো হয়েছেন, চুল দাঁড়িতে পাক ধরেছে। কয়দিন পর যাবেন ম’রে। কিন্তু তার প্রভাব প্রতিপত্তি সবই রেখে যাবেন এই সন্তানদের জন্য। সরোয়ার চৌধুরী দাঁতে দাঁত পিষলেন। রুক্ষ কণ্ঠে বললেন,

“মুখ সামলে কথা বলো মেহের। কি বলতে চাইছো কি তুমি।”
“বলতে চাইছি এটাই যে আমি জেনে গেছি তুমি দু’র্নী’তি’গ্রস্থ, ঠক‌। মানুষকে ঠকিয়ে তোমার এই সম্রাজ্য তৈরি করেছ।”
এই টুকু বলে থামল মেহের। দম ফেলে ফের বলল,
“ভেবো না, তোমার দুর্নীতির কথা আলভী আমাকে বুঝিয়েছে বা আমি তার কথা বিশ্বাস করে তোমার বিরোধীতা করছি। আলভীর আমাকে অনেকবার এসব কথা বললেও আমি কখনো তার কথাকে মূল্য দেইনি। সবসময় তোমাকে বিশ্বাস করেছি। কিন্তু পরে খুঁজে দেখলাম আমার বিশ্বাসের স্থানটাই ভুল ছিল।”
“আমি অন্যায় করলেও তা কাদের জন্য করেছি? তোমাদের জন্যই করেছি। তোমাদের সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার জন্য, তোমাদের ভবিষ্যতের জন্যই করেছি।”
“কিন্তু আমরা তোমাকে কখনো এসব করতে বলিনি। তুমি কম উপার্জন করতে, আমরা কম খেতাম। তবুও কেন তুমি এমনটা করলে বাবা?”
সরোয়ার চৌধুরী কটমট করলেন। দাঁতে দাঁত পিষে জবাব দিলেন,
“তোমাকে এত কইফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই। আমি তোমাকে আলভীর সাথে বিয়ে দেব না। ব্যস এটাই শেষ কথা।”

মেহের জেদ ধরল। কণ্ঠে জোর দিয়ে বলল,
“আর আমি আলভীকেই বিয়ে করব।”
“তাহলে তোমাকে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। আমি কখনো আমার শত্রুকে নিজের মেয়ে জামাই হিসেবে মানতে পারব না।”
“আলভীকে বিয়ে করার জন্য যদি আমাকে এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয় তবে তাই যাব। এমনিও তোমার এই পাপে পড়া সাম্রাজ্যে থাকার আমার ইচ্ছা নেই। এতদিন থেকেছি এই বেশি।”
মেহেরের কণ্ঠে কাঠিন্যতা। ফুঁসে উঠলেন সরোয়ার চৌধুরী। তেজি কণ্ঠে বললেন,
“ঠিক আছে বেরিয়ে যাও তুমি, এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। এতদিন কোনো অভাব দেখোনি তো, যখন যা চেয়েছ সামনে এনে দিয়েছি তাই অর্থের মূল্য বুঝতে পারছো না। একবার এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখো জীবন কি ঠিক টের পেয়ে যাবে।”

মেহেরও রাগ লাগলো খুব। ক্রোধে দিশেহারা হয়ে সে বলল,
“ঠিক আছে বেরিয়ে যাচ্ছি আমি। তোমার এই মানুষ ঠ’কি’য়ে খাওয়া অর্থের তুলনায় রাস্তায় থাকা ভালো।”
কথাটা বলে মেহের বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। তার মা বহু চেষ্টা করে, বুঝিয়েও আটকে রাখতে পারল না। ক্রোধের সময় কি আর বুঝের কথা মাথায় ঢোকে? মেহের বাড়ি থেকে বেরিয়েই কল লাগালো আলভীর নাম্বারে।
সন্ধ্যার সময়। আলভী এবং তার বাবা আফজাল হোসেন কেবলই অফিস থেকে বেরিয়েছিল বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ পকেটে মোবাইলটা বেজে উঠতেই থমকে দাঁড়াল সে। মোবাইলটা বের করে মেহেরের নাম দেখেই ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো তার। মেহের এখন এই সময়ে কল করেছে কেন? গভীর রাত ব্যতীত তো তাকে পাওয়াই যায় না। আলভী কলটা রিসিভ করে মোবাইলটা কানের কাছে ধরল। নরম কণ্ঠেই বলল,

“হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম।”
আলভীর কণ্ঠ পেয়ে মেহেরের হৃদয়ে এতক্ষণ জমে থাকা ক্রোধগুলো যেন কান্না হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইল। ঝরঝর করে কেঁদে উঠল সে। আলভী অস্থির হলো। ব্যস্ত হয়ে বলল,
“একি মেহের, কাঁদছ কেন? কি হয়েছে তোমার?”
মেহের একটু সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। ভেজা গলায় বলল,
“বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে আমার। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি, আলভী। এখন কোথায় যাব, কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছি না। আপনি আমাকে একটু আশ্রয় দিবেন?”
কি নিয়ে, কেন ঝগড়া হয়েছে আলভী সেসব কিছুই জিজ্ঞেস করল না। সে সরাসরি শুধাল,

“তুমি কোথায়?”
“আমাদের বাড়ির সামনে।”
“ওখানেই থাকো। আসছি আমি।”
কথাটা বলেই কল কেটে দিল আলভী। হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসলো বাইকে। আফজাল হোসেন অবাক হলেন। অবাক কণ্ঠেই শুধালেন,
“এখন আবার কোথায় যাচ্ছ?”
আলভী বাইকে স্টার্ট দিল। সামনের দিকে যেতে যেতে গলা উঁচিয়ে বলল,
“তোমার বউমাকে আনতে।”

সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত দিন। চারদিকটা ঝলমল করছে সোনালী রোদে। ত্রয়ী থমথমে মুখশ্রী নিয়ে বসে রয়েছে বিছানায়। মস্তিষ্কটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এই মুহূর্তে তার ঠিক কি প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত বুঝতে পারছে না। আর শীর্ষ একটি প্রেগন্যান্সির কিট নিয়ে ঘুরঘুর করছে তার চারপাশে।
ত্রয়ী এবং শীর্ষের বিয়ে হয়েছে এখনো চার মাসও গড়ায়নি। এর মধ্যেই ত্রয়ীর শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন পরিবর্তন পরিলক্ষিত। প্রথমে মেয়েটা এমনি গ্যাস্ট্রিক বা পেটে সমস্যা ভেবে তেমন পাত্তা না দিলেও শেষ মাসের পিরিয়ড মিস যেতেই চক্ষু চড়কগাছ। তারপর প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করবে করবে করে আজ করল। এবং তার ফলাফলও মিললো। শীর্ষ যখন থেকে ত্রয়ীর অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার খবর জানতে পেরেছে তখন থেকে নাচানাচি শুরু করেছে। মেয়েটা বিরস চোখ মুখে তাকাল শীর্ষের দিকে। শীর্ষ হাতের প্রেগন্যান্সির কিটটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,

“বলেছিলাম না সাত বছরে সাতটা। ইতোমধ্যে একটা চলে আসার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ইটস কলড পাওয়ার বেব‌।”
ত্রয়ী বলার মতো খুঁজে পেল না কিছুই। শুধু কটমট করে চেয়ে রইল শীর্ষের দিকে। শীর্ষের তো আজ যেন আনন্দ ধরে না। প্রথমবার বাবার হওয়ার আনন্দ। এ আনন্দের সামনে আর কিছু আছে নাকি? এরপর সে আবার বাবা হবে, তারপর আবার বাবা। চারদিকে শুধু বাচ্চা ঘুরঘুর করবে।
পরিশিষ্ট.

জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। সে বয়ে চলে বাঁধাহীন নদীর স্রোতের ন্যায়। ত্রয়ী এবং শীর্ষ সুখে শান্তিতে সংসার করছে। জীবনের অনেকটা বছর দুঃখের সাগরে ভেসে এবার ত্রয়ী একটু সুখের মুখ দেখেছে। আলভী সেদিন মেহেরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে একটু ঝামেলা হলেও পরবর্তীতে সবাই সবটা মেনে নিয়েছে। তৃপ্তিও রবির প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছে। নতুন নতুন প্রেম শুরু হয়েছে দুজনের। সাহেদ বিয়ে করেছে। রিমা তার অতীতকে ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। বাকি রইল কায়সার এবং আরফা! কায়সার প্রতিনিয়ত ত্রয়ীকে হৃদয় থেকে মুছে ফেলার প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে। হয়তো ভুলেও যাবে একদিন। আবারও নতুন করে ভালোবাসবে কাউকে। আর আরফা, তার বাড়িতে বিয়ের কথা চলছে। তবে সে এখনো মনের কোনে এক টুকরো আশা নিয়ে বসে আছে কায়সারের।

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২২

আসলে মানব জীবনের সব গল্পে পূর্ণতা থাকে না। সব মানুষ তার ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার মতো ভাগ্য নিয়ে জন্মায় না। হাজারও পূর্ণতার ভীরে এই পৃথিবীর অলিতে গতিতে থেকে যায় কিছু অপূর্ণতার গল্প, আফসোসের গল্প। আমরা সর্বদা পূর্ণতা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে আমাদের চারপাশের অপূর্ণতার হাহাকার গুলোকে আর খুঁজে দেখি না।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here