অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৬
সাদিয়া শওকত বাবলি
মিনমিনে কণ্ঠে জবাব দিল,
“আমি ত্রয়ী।”
লিমন আহমেদ আলতো হাসলেন। ত্রয়ীর মাথায় হাত রেখে স্নেহভরে বললেন,
“তুমি ত্রয়ী? আমি লিমন আহমেদ। সম্পর্কে তোমার মামা হই। তোমার কথা অনেক শুনেছি আলেয়া ভাবীর মুখে। দেখতেও তুমি একদম তার মতো।”
এই টুকু বলে থামলেন তিনি। দম নিয়ে ফের বললেন,
“তোমার বাবা, ভাই আর চাচা ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছেন। আপাতত তুমি আমার সাথে চলো, আমার বাসায় থাকবে। তারপর ওরা এলে ওরা তোমাকে তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে।”
ত্রয়ী আশেপাশে তাকাল। সেই লোকগুলো এখনো তার চারিধারেই একটু দূরত্ব নিয়ে ঘুরঘুর করছে। হয়তো স্টেশন পুরোপুরি ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষা করছে। ত্রয়ী আর দ্বিরুক্তি করল না। লিমন আহমেদের সাথে চলে এলো তার বাড়িতে।
লিমন আহমেদের বাড়ি স্টেশনের কাছাকাছিই। দুইটি কক্ষ, একটি ওয়াশরুম, এবং একটি রান্নাঘর বিশিষ্ট তার বাসা। ত্রয়ী যাওয়ার পরে লিমন আহমেদের স্ত্রী মুক্তা বেশ হাসিমুখেই গ্রহণ করল তাকে। মুক্তার বয়স খুব একটা বেশি নয়। ত্রয়ীর থেকে কিছুটা বড়ো হবে হয়তো। কেবল ছোট ছোট দুটো বাচ্চা। একটির বয়স সাড়ে তিন বছর এবং অন্যটির দেড়। লিমন আহমেদের বাড়িতে যেতেই মুক্তা ত্রয়ীকে ফ্রেশ হতে বলল। তারপর বেশ আদর যত্ন করে খাইয়ে একটি কক্ষ গুছিয়ে ঘুমাতে দিল তাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত্রি গভীর। চারপাশটা নীরব নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে। ত্রয়ী বিছানায় শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। ঘুম নেই তার দুই চোখে। লিমন আহমেদ এখনো তার অচেনাই বটে। এই অচেনা লোকটার হাত ধরে তখন ওভাবে চলে আসাটা কি উচিত হয়েছে ত্রয়ীর, বুঝে উঠতে পারছে না সে। এই লোকটা যদি ঠক, প্রতারক হয়ে থাকে? আজকাল এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় বিশ্বাস করতে আছে কে? লোকটা হয়তো তাকে একা দেখেছে, সে যখন মায়ের সাথে কথা বলছিল তখন শুনে নিয়ে পরে সেই অনুরূপ অভিনয় করে এখানে নিয়ে এসেছে। আর ত্রয়ীও তা বিশ্বাস করে নিয়েছে। যদি তেমনই কিছু হয় তবে ত্রয়ী এখন কি করবে? কোথায় যাবে? এক বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে না পেতেই সে আবার অন্য বিপদে পড়ল না তো? ত্রয়ীর বুক কেঁপে উঠল। গলা শুকিয়ে এলো। এখন তার পরিস্থিতিটাই এমন যে না চাইতেও হাজারও অতিরিক্ত চিন্তা মাথায় এসে যায়, কাউকে বিশ্বাস হয় না। মনে হয় সব স্থানেই তার জন্য বিপদ, অ’বহে’লা, লাঞ্ছ’না, ক’ষ্ট ওত পেতে রয়েছে। ত্রয়ীর এসব আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনার মধ্যেই তার দরজায় টোকা পড়ল। ওপাশ থেকে মৃদু স্বরে ভেসে এলো,
“ত্রয়ী, ত্রয়ী।”
ত্রয়ী চমকে উঠল। মুক্তার কণ্ঠ মনে হচ্ছে। কিন্তু সে এত রাতে ডাকছে কেন? কি উদ্দেশ্য তাদের? এত রাতে ডেকে নিয়ে আবার তার সাথে খারাপ কিছু করবে না তো? ত্রয়ীর কি এই মুহূর্তে দরজা খোলাটা ঠিক হবে? না খুললেও তো ভালো দেখায় না। ত্রয়ী যেমনটা ভাবছে তেমন যদি না হয়? মুক্তা কোনো ভালো উদ্দেশ্য নিয়েও তো তার নিকট আসতে পারে। তবুও সাবধান হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। মেয়েটা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে তাকাল আশেপাশে। ভারী কিছু একটা খুঁজল সে। দরজা খুলে যদি নেতিবাচক কিছু দেখা যায় তাহলে সেটা দিয়ে অন্তত নিজের আত্মরক্ষার একটু চেষ্টা করা যাবে। কিন্তু ত্রয়ী হতাশ হলো। কক্ষের মধ্যে তেমন ভারী কিছুই চোখে পড়ল না তার। শেষে আর উপায় না পেয়ে বিছানার পাশেই টেবিলের উপরে রাখা পানি পূর্ণ জগটা হাতে তুলে নিল সে। এটা একটু হলেও ভারী আছে। জগটা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে দরজার নিকট এগিয়ে এলো ত্রয়ী। কাঁপা হাতে খুললো দরজাটা। অমনি চোখের সম্মুখে ভেসে উঠল মুক্তার হাসি মাখা মুখটা। বেশ হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠেই সে বলল,
“তোমার বাবা, ভাই আর চাচা এসেছেন। ডাকছেন তোমাকে। আমি এত করে বললাম মেয়েটা ঘুমাচ্ছে, ওকে এই মুহূর্তে বিরক্ত করার দরকার নেই। তারাও যেন হাত মুখ ধুয়ে একটু বিশ্রাম নেয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা।”
এই টুকু বলে থামল সে। দম নিয়ে ফের বলল,
“এসো তুমি। তাদের সাথে দেখা করো। তারাও একটু শান্তি পাক।”
ত্রয়ী হাতের জগটা কক্ষে রেখে মুক্তার পিছু পিছুই বেরিয়ে এলো। দেখা পেল দুজন ব্যক্তির। একজন মধ্যবয়স্ক। চুল দাঁড়িতে পাক ধরেছে তার। পড়নে সাদা পাঞ্জাবি। তবে বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী লোকটা। আর অন্যজন তরুণ। ঐ মধ্য বয়স্ক লোকটার চেহারার সাথে বেশ মিল রয়েছে তার। ত্রয়ীকে দেখেই মধ্যবয়স্ক লোকটা এগিয়ে এলেন তার দিকে। মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বললেন,
“কত বড়ো হয়ে গেছো। তোমাকে বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য আগে কখনো হয়নি আমার তবে ছবিতে দেখেছিলাম, আলেয়া দেখিয়েছিল। সেখানে এই এইটুকু ছিলে তুমি।”
লোকটা হাত দিয়ে নিজের হাঁটু অব্দি ইশারা করলেন। এরপর আবার বললেন,
“আমি হয়তো তোমার জন্মদাতা পিতা নই। তবে সম্পর্কে আমি তোমার পিতাই হই। আজ থেকে তুমি আমাকে বাবা বলেই ডাকবে। সব সময় বাবার মতোই মনে করবে। আমি মনে মনে তোমাকে নিজের মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম সেই আলেয়ার সাথে যেদিন বিয়ে হলো সেদিনই। তবে অধিকার না থাকায় নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারিনি।”
তার কথা শেষ হতে না হতেই তরুণ ছেলেটা এগিয়ে এলো। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“আমি তামিম। সম্পর্কে তোমার ভাই হই। মায়ের সাথে বাবার বিয়ে হওয়ার পর মা বলেছিল আমার একটা পুতুলের মতো দেখতে বোন আছে। সত্যিই তুমি পুতুলের মতো দেখতে।”
এই টুকু বলে থামল তামিম। দম নিয়ে ফের বলল,
“তুমি আমার ছোটই হবে। আজ প্রথম দেখা বলে তুমি করে বললাম। এরপর থেকে কিন্তু তুমি, আপনি, আজ্ঞে করতে পারব না। আমি তোমাকে তুই করেই বলব। যেমন আমাদের ছোটটাকে বলি। আমাদের ছোট কিন্তু আরও একটা বোন আছে। ওর নাম তৃপ্তি।”
বিনিময়ে ত্রয়ী শুধু মাথা নাড়লো, বলল না কিছুই। সবকিছু কেমন যেন তার নিকট স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে তার অভিমুখে যা ঘটছে এসব কি সত্যি? নাকি সে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে? ত্রয়ীর কেন যেন মনে হচ্ছে এ সবটাই তার স্বপ্ন, ভ্রম। একটু পর স্বপ্নও ভেঙে যাবে আর এই সুখকর মুহূর্তগুলোও তার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। আবার সে পতিত হবে সেই কষ্টকর, অব’হেলিত, নিঃসঙ্গ জীবনে। যেখানে তাকে ভালোবাসার মতো কেউ থাকবে না, তার আপন বলতে কেউ থাকবে না। আবার সে একা হয়ে যাবে, ভীষণ একা।
দুপুর গড়িয়ে বেলা প্রায় বিকালের পথে। আকাশের সূর্যটা ইতোমধ্যে ঢলে পড়েছে এক দিকে। ত্রয়ীরা কেবলই বরিশাল এসে পৌঁছাল। সোহরাব হোসেন এবং তামিম রাতে তখনই ত্রয়ীকে নিয়ে বরিশাল ফিরতে চেয়েছিলেন। তবে তাদের এ সিদ্ধান্তে বাঁধ সাধেন লিমন হোসেন এবং মুক্তা। তারা সকালে তাদের না খাইয়ে দাইয়ে ছাড়বেন না বলে একদম জেদ ধরে বসেন। কি আর করার! তাদের জেদের কাছে হার মেনে রাতের বাকি অংশ তো থাকতেই হয়েছে তারপর সকালে খেয়ে দেয়ে তবেই মুক্তি মিলেছে সবার। আর তারপর বরিশাল তাদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে যতটা সময় লেগেছে আর কি।
ত্রয়ীকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই তার উপর এক প্রকার হামলে পড়লেন আলেয়া বেগম। বাড়ির কাছাকাছি এসেছে শুনেই তিনি বসার কক্ষে এসে বসেছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন মেয়ের আগমনের। এত বছর পর মেয়েকে কাছে পেয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। ডুকরে কেঁদে উঠলেন ত্রয়ীকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে। ভেজা কণ্ঠে বললেন,
“কত বছর পর তোকে দেখলাম, মা। আমার নাড়ি ছেঁড়া ধন তুই, আমার অংশ। অথচ তোকে একটাবার দেখারও অধিকার ছিল না আমার।”
এত বছর পর মাকে কাছে পেয়ে, মায়ের মুখ দর্শনে ত্রয়ীও নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ঝরঝর করে কেঁদে উঠল। কতদিন পর সে মায়ের গায়ের গন্ধ পেল। কেমন মমতাময়ী সে গন্ধ। মায়েদের গা থেকে বুঝি এমনই গন্ধ আসে জানা ছিল না ত্রয়ীর। অবশ্য মায়ের মুখটাই তো সে ভুলে গিয়েছিল। আজ কত বছর পর মাকে আবারও দেখলো সে। মা মেয়ের এমন আবেগঘন মুহূর্তে কেউই বিরক্ত করল না তাদের। তারা নিজেরা নিজেরাই কেঁদেকেটে এক সময় শান্ত হলো। আলেয়া বেগম নাক টানলেন। মেয়ের হাত ধরে বললেন,
“জানিস তো মা এই পৃথিবীটা বড্ড কঠিন। বিধ’বা বা ডিভো’র্সি নারীদের জন্য আরো কঠিন। তোর বাবা মা’রা যাওয়ার পর আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম আর বিয়ে টিয়ে করব না। তোকে নিয়েই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব। কিন্তু তোর দাদা বাড়িতে আমাদের দেখার মতো কেউ ছিল না। ভাই মা’রা যাওয়ার পর তোর চাচারা আমাদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর ঠাঁই নিলাম বাবার বাড়িতে। কিছুদিন পরে অনুভব করলাম সেখানেও আমরা বোঝা হয়ে উঠেছি। এরপর আপনজনদের জোরাজুরি, প্ররোচনা এবং নিজেকে বাঁচাতে দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম।”
এই টুকু বলে থামলেন তিনি। ধরা গলায় ফের বললেন,
“বিয়ের পর তোকে কতবার আমার কাছে আনতে চেয়েছি, তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছি। কিন্তু তোকে নিজের কাছে আনা তো দূরে থাক তোর দাদী আমাকে তোর সাথে দেখাই করতে দেননি। এখানে অবশ্য তারও দোষ না। তিনি ভেবেছিলেন তোকে আমার কাছে আনলে তুই খারাপ থাকবি। যেখানে তোর রক্ত, তোর চাচারাই তোর দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন সেখানে অন্য পুরুষ, তোর মায়ের দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী দায়িত্ব নিবেন কিভাবে। আর দায়িত্ব নিলেও হয়তো তোকে ভালো রাখতে পারবে না। আজকাল আপনজনরাই আপনজনদের ভালো রাখে না সেখানে সে তো পর। সবাই তোকে ফেলে দিলেও তোর দাদী তোকে ফেলে দিতে পারেননি। তিনি তার ছেলের রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতি অর্থাৎ তোকে সর্বদা নিজের কাছে আগলে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান সৃষ্টিকর্তা তাকেও নিজের কাছে ডেকে নিলেন।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আলেয়া বেগম। ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললেন,
“যাক বাদ দে সেসব পুরোনো কথা। আজ থেকে তুই আমার কাছে থাকবি। এ বাড়ির মেয়ে হয়ে থাকবি।”
ত্রয়ীর আঁখিদ্বয় অশ্রু কণায় টলমল করে উঠল। এ অশ্রু দুঃখের নয় বরং সুখের। এত সুখও বুঝি তার কপালে ছিল! লোকমুখে প্রচলিত, দুঃখের পরেই নাকি সুখ মিলে। তবে কি বিস্তর দুঃখের পর ত্রয়ীর কপালে অবশেষে সুখের দেখা মিলল? নাকি এ কেবলই ক্ষণিকের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ত্রয়ীর। অতীতের গহ্বর থেকে বেরিয়ে এলো সে বর্তমানের প্রাঙ্গণে। উপলব্ধি করল এই সুখ ক্ষণিকের নয়। যদি ক্ষণিকের হতো, তবে এতদিনে এ সুখের রেশ কেটে যেতো।
মাস ছয়েক পূর্বে ত্রয়ী যখন এ বাড়িতে পা রেখেছিল তখন এ বাড়ির লোকগুলো তাকে কোনো প্রশ্ন করেনি। সে কোথা থেকে এসেছে, কোথায় ছিল, অত রাতে স্টেশনে কিভাবে গেল কিচ্ছু না। শুধু ত্রয়ী নিজে থেকে মুখ ফুটে বলেছিল সে হারিয়ে গিয়েছিল ব্যস ঐ টুকুই। তারপর আর তার অতীত নিয়ে কখনো এ বাড়ির মানুষগুলো কোনো ধরণের কোনো কথা তোলেনি। এ বাড়িতে এসে ত্রয়ী মা, বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি সব পেয়েছে। এই বাড়ির মানুষ গুলো তাকে এমন ভাবে আপন করে নিয়েছে যেন তাদের মধ্যে কত বছরের সম্পর্ক, তারা একে অপরের কত চেনা। সোহরাব হোসেন ত্রয়ীর জন্মদাতা পিতা না হয়েও একজন পিতার মতো তাকে আগলে রেখেছেন। আর তামিম, সামাজিক নিয়মে সৎ ভাই হলেও রক্তের দিক বিবেচনা করলে তাদের মধ্যকার সম্পর্কে বিস্তর দূরত্ব। তবে সেই দূরত্ব সে রাখেনি। ত্রয়ীকে নিজের আপন বোনের মতোই দেখেছে সে। তৃপ্তিকে সে যেভাবে স্নেহ করে, ভালোবাসে ত্রয়ীর বেলায়ও ঠিক তেমনই। ত্রয়ীর মাঝে মাঝে ভীষণ অবাক লাগে। সারাজীবন যেখানে সে এর ওর ঠেলা খেয়ে বেঁচে ছিল সেখানে আজ সে এ বাড়িতে শুধু আশ্রয়ই নয়, সাথে একটি সুন্দর পরিবারও পেয়েছে। ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে।
ভোরের আলো ফুটেছে। নিশিথের আঁধার কেটে শহরটা ভরে উঠতে শুরু করেছে সূর্যের উজ্জ্বল আলোয়। শীর্ষ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে পড়েছে রবি, আলভী এবং নয়নকে নিয়ে। ত্রয়ীকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু খুঁজবে কোথায়? শীর্ষ বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ভাবলো। হঠাৎ তার মস্তিষ্কে হানা দিল কলেজের কথা। যাই হয়ে যাক না কেন ত্রয়ী পড়াশোনা বন্ধ করবে না। মেয়েটার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যে চড়ম আগ্রহ। অন্তত নিজের ভাগ্য ফেরানোর জন্য হলেও ত্রয়ী পড়াশোনা বন্ধ করবে না। আর পড়াশোনা বন্ধ না করতে চাইলে অবশ্যই তাকে কলেজে যেতে হবে। ত্রয়ীকে যেহেতু গতকাল এই অঞ্চলে দেখেছে এর মানে সে এই অঞ্চলের কোনো না কোনো কলেজে পড়ে। শীর্ষের ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠল। সকলকে তাড়া দিয়ে বলল,
“আশেপাশের সকল কলেজ গুলোতে খোঁজ নে কোথাও তাসফিয়া ত্রয়ী নামের কেউ আছে কিনা। একেক জন একেক কলেজে যাবি তাহলে খুঁজতে সুবিধা হবে।”
রবি শুনলো শীর্ষের কথা। গত ছয় মাস যাবত সে দেখছে তার বন্ধুর অবস্থা। আর সে এও জানে, কেন ত্রয়ী বাড়ি ছেড়েছিল। এত কিছুর পরেও কি ত্রয়ী এখনো শীর্ষের আছে কিংবা শীর্ষকে ভালোবাসে? শীর্ষ চাইলেই কি মেয়েটা খুব সহজে ফিরে যাবে তার সাথে? হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল রবি। আলভীর দেহের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছড়া কাটতে শুরু করল,
“শীর্ষ ভাই হন্যে হয়ে খুঁজছে নিজের বউ
কি জানি এতদিনে তার বউয়ের মনের ঘরে,
জায়গা করে নিয়েছে কিনা অন্য কেউ।”
শীর্ষের মেজাজ বিগড়ালো। এমনিই বউকে খুঁজে পাচ্ছে না সে, তার চিন্তায় চিন্তায় দিশেহারা মন মস্তিষ্ক সব সময় দিশেহারা হয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার রবির এসব অলক্ষুনে কথা বার্তা। ত্রয়ীর মনে অন্য কেউ জায়গা করে নিবে মানে কি? সে এখনো ত্রয়ীর স্বামী। স্বামী বর্তমান থাকতে তার স্ত্রীর হৃদয়ে অন্য কেউ জায়গা করে নিবে মানে কি? আর নিলেও শীর্ষ কি তাকে ছেড়ে দিবে নাকি? মে’রে মাটিতে পু’তে দিবে। শীর্ষ কটমট করে তাকাল রবির দিকে। দাঁতে দাঁত পিষে রবির ন্যায় ছড়া কে’টে’ই বলল,
“সেই মনের ঘরের দরজায় আমি মারলাম একটা লাথি।
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৫
ওমা ভিতর থেকে দেখি,
বেরিয়ে এলো এক সান্ডার নাতি।
সেই সান্ডার নাতিকে করলাম ভাজা ভাজা
জাপটে ধরে খাইয়ে দিলাম তোকে হা’রাম’জা’দা।”