অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৮

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৮
সাদিয়া শওকত বাবলি

লুঙ্গি গুলোর দিকে এক নজর তাকিয়ে হাঁটা ধরল তামিমের কক্ষের দিকে। কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই সে এসে দাঁড়াল কক্ষের অভিমুখে। ভিতরে যাবে কি যাবে না দোটানার মধ্যেই হঠাৎ তার কানে এসে বারি খেল একটি বাক্য,
“তোরা বস। আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।”

এই কণ্ঠ! এই কণ্ঠ ত্রয়ী আগেও শুনেছে। খুব কাছ থেকে শুনেছে। ত্রয়ীর কলিজাট ধক করে উঠল। ছয় মাস কেটে গিয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু ত্রয়ী এখনো তাকে ভুলতে পারেনি, তার কণ্ঠস্বর ভুলতে পারেনি। ভুলবে কিভাবে? ভালোবাসে তো। ভালোবাসার মানুষকে ভোলা এত সহজ নাকি? কিন্তু এই লোক এখানে কেন? নাকি সে ভুল শুনেছে? হয়তো তাই হবে। সে ভুলই শুনেছে। নয়তো সে লোক এখানে আসবে কিভাবে? সে তো ঢাকায় থাকে। বরিশালে তার কোনো আত্মীয় স্বজন আছে বলেও তো শোনেনি। ত্রয়ীর বিভিন্ন চিন্তা ভাবনার মধ্যেই সেখানে এসে উপস্থিত হলো তৃপ্তি। কপাল কুঁচকে শুধাল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো আপু?”
তৃপ্তিকে দেখে ত্রয়ী যেন সুযোগ পেল। এমনিই তো সে এই কক্ষের ভিতরে যেতে চায় না। তার উপর অতীতের স্মৃতি স্মরণে এখন হৃদয়ের অবস্থা বড়োই নাজুক। ত্রয়ী চটজলদি হাতের লুঙ্গি এবং টিশার্ট গুলো গুঁজে দিল তৃপ্তির হাতে। পিছন ঘুরে পা চালাতে চালাতে বলল,
“এগুলো তামিম ভাইয়ার বন্ধুদের দিয়ে দিও। আমার কাজ আছে।”
“কিন্তু….”
ত্রয়ী শুনলো না কোনো কথা। ব্যস্ত পায়ে চলে গেল ওখান থেকে। তৃপ্তিরও বা আর কি করার। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও লুঙ্গি এবং টিশার্ট গুলো নিয়ে সে ঢুকলো তামিমের কক্ষে।

নিশিথের কালো আঁধার সরে গেছে। চারদিকটা আলোকিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে সূর্যের সোনালী আলোয়। গাছে গাছে পাখিদের আনাগোনাও শুরু হয়ে গেছে। কাছে পিঠে থেকে ভেসে আসছে তাদের মিষ্টি কলকাকলি। শীর্ষরা ইতোমধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে যেমন নিদ্রা নামে তাড়াতাড়ি তেমনি নিদ্রা ভাঙেও তাড়াতাড়ি। আর তারপরেই শুরু হয় তাদের কর্ম। এ বাড়ির লোকেরাও অনেক আগেই উঠে পড়েছে। সেই সাথে সাথে শীর্ষরাও উঠে পড়েছে। এমনিও তাদের ত্রয়ীকে খুঁজতে যেতে হবে। যদিও তামিমের নিকট ত্রয়ীর ব্যাপারে এখনো কিছুই বলেনি শীর্ষ। তবে আশেপাশের কোথায় কি আছে সে বিষয়ে জেনে নিয়েছে। এখন সেই অনুযায়ী খুঁজবে। তারপরেও যদি না পায় তাহলে এখানকার থানায় যোগাযোগ করবে।
শীর্ষ, রবি এবং আলভী এক কক্ষেই ঘুমিয়েছিল আজ। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল তারা, এর মধ্যেই দরজায় টোকা পড়ল। আলেয়া বেগমের কণ্ঠে ভেসে এলো,

“আসবো?”
শীর্ষ ওষ্ঠে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো। নম্র কণ্ঠে জবাব দিল,
“এতে আবার অনুমতি নেওয়ার কি আছে? আসুন, আসুন।”
আলেয়া বেগম এবং তৃপ্তি দুই হাত ভর্তি খাবার নিয়ে প্রবেশ করল কক্ষের ভিতরে। একটি টেবিলের উপরে খাবার গুলো রাখতে রাখতে আলেয়া বেগম বললেন,
“তোমাদের নাস্তা।”
রবি ভদ্রতা বজায় রাখতে বলল,
“আহ, আন্টি আপনি আবার কষ্ট করে এগুলো আমাদের কক্ষে নিয়ে আসতে গেলেন কেন? আমরা গিয়ে খেতাম।”
সাথে সাথে ভেংচি কাটলো তৃপ্তি। মুখ বাঁকিয়ে বলল,

“তা আগেভাগে বলেননি কেন? শুধু শুধু মা আমাকে কাঁচা ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এসেছে, আপনাদের খাবার দিতে।”
আলেয়া বেগম লজ্জাবোধ করলেন। তার মেয়ের কি বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে? অতিথিদের সাথে কেউ এমন আচরণ করে? আলেয়া বেগম চোখ গরম করে তাকালেন তৃপ্তির দিকে। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,
“বুদ্ধি সুদ্ধি সব পানিতে গুলিয়ে খেয়েছিস, বেয়াদব মেয়ে? যা এখান থেকে। দেখ চা টা হয়েছে কিনা।”
তৃপ্তি রবির দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো একটা। অতঃপর বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে। আলেয়া বেগম অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসলেন। ইতস্তত করে বললেন,
“ওর কথায় কিছু মনে করো না তোমরা। ও একটু এমনই। কোথায় কি বলতে হবে এখনো ঠিকঠাক ভাবে বুঝতে পারে না।”

আলেয়া বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই কক্ষে প্রবেশ করলেন সোহরাব হোসেন এবং সুমন হোসেন। শীর্ষদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে সোহরাব হোসেন বললেন,
“তোমাদের সাথে তো আমাদের দেখাই হয়নি। বোঝোই তো, তামিম নেই কাজের চাপ বেশি‌। গতকাল রাতে বাড়ি ফিরেছি অনেক দেরিতে। তোমরা বোধ হয় তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলে‌। তাই আর বিরক্ত করতে আসিনি, সকাল সকাল এলাম। একটু পর আবার বেরুতে হবে।”
স্বামী এবং দেবরকে দেখে আলেয়া বেগম বেরিয়ে গেলেন কক্ষ থেকে। শীর্ষ সৌজন্য সূচক হাসলো। সোহরাব হোসেন এবং সুমন হোসেন বসলেন কক্ষের এক পাশে স্থান করে নেওয়া সোফায়। শীর্ষদের উদ্দেশ্য করে সোহরাব হোসেন বললেন,

“তোমরা দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসো।”
শীর্ষরা বসলো। সবাই মিলে মেতে উঠল বিভিন্ন আলাপ আলোচনায়। এর মধ্যে তৃপ্তি একটি ট্রেতে করে চা নিয়ে ঢুকলো কক্ষের ভিতরে। সবাই ট্রে থেকে চায়ের কাপ নিলেও শীর্ষ নিল না। তা দেখে সোহরাব হোসেন বললেন,
“কি হলো, চা নাও। আমার বড়ো মেয়ে বানিয়েছে। ওর হাতের চায়ের যা স্বাদ। একদম মুখে লেগে থাকে।”
আলভী একটু অবাক শুধাল,
“আপনার তৃপ্তি ব্যতীত আরও একজন মেয়ে আছে? কই কাল থেকে একবারের জন্যও দেখলাম না তো তাকে।”
“আসলে ও একটু লাজুক এবং ভীত স্বভাবের তো তাই সবার সামনে তেমন আসে না।”
সোহরাব হোসেনের কথা শেষ হতে না হতেই রবি বিরবিরিয়ে বলল,
“একটা লাজুক এবং ভীত স্বভাবের আর আরেকটা বজ্জাত, বেয়াদব। এ বাড়ির সবাই এত ভালো মানুষ। এর মধ্যে ঐ বেয়াদবটা যে এলো কোথা থেকে কে জানে?”

“কিছু বললে?”
“না, কিছু না।”
সোহরাব হোসেনও আর কথা বাড়ালেন না। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তিনি ফের বললেন,
“নাও, চা নাও।”
শীর্ষ একটু ইতস্তত করল। আমতা আমতা করে জবাব দিল,
“আসলে আমি চা তেমন পছন্দ করি না। আমার জন্য কফি হলে ভালো হতো।”
সুমন হোসেন সাথে সাথে বললেন,
“আরে তা আগে বলবে না। তাহলে আগেই বলতাম তোমাকে কফি দিতে।”
পরপর সুমন হোসেন তাকালেন তৃপ্তির দিকে। আদেশের সুরে বললেন,
“এখানে একটা কফি দিতে বল‌, তৃপ্তি।”

তৃপ্তি সাথে সাথে ছুটে গেল রান্নাঘরে। ত্রয়ী তখনো চুলার কাছেই। তৃপ্তি ত্রয়ীর নিকটে গিয়ে বলল,
“আপু একটা কফি বানিয়ে দাও তো। ওখানে একজন আবার চা পছন্দ করেন না। কফি চাইছেন।”
ত্রয়ীর স্মরণে এলো পুরনো দিনের কথা। শীর্ষও চা পছন্দ করতো না তেমন। সকাল, বিকাল, মধ্যরাতে শুধু কফি কফি করে চোটপাট দেখাতো। আর তাকে যখন তখন কফি নিয়ে ছুটতে হতো। সময় কেটে যায়, সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। অথচ স্মৃতিগুলো থেকে যায় আজন্ম। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ত্রয়ীর। আর কথা না বাড়িয়ে কফি বানাতে শুরু করল সে। শীর্ষ একটু ভিন্ন নিয়মে কফি খেত। দুধ চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি খেত সে। এই অতিথি আবার কোন নিয়মে, কোন ধরণের কফি খায় কে জানে। ত্রয়ী আর অতকিছু ভাবল না। এমনি সাধারণ নিয়মেই কফি বানিয়ে পাঠিয়ে দিল তৃপ্তির দ্বারা।
তৃপ্তি কফি নিয়ে গেল কক্ষে। যদিও শীর্ষের কফি পছন্দ হয়নি। কিন্তু কিছু করার নেই। একবার চা পছন্দ না বলে কফি আনিয়েছে। এখন আবার যদি বলে এই কফিও পছন্দ না। তাহলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু হয়ে দাঁড়ায়।

রাত্রি এখনো খুব বেশি নয়। ঘড়ির কাঁটায় কেবল নয়টা। এর মধ্যেই চারদিকটা নিস্তব্ধ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। শীর্ষ সারাদিন ত্রয়ীকে খুঁজেছে কোথাও পায়নি। শুধু এ এলাকা নয়, আশেপাশের এলাকাগুলোতেও খুঁজেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দেখা নেই কোথাও। গেল কোথায় মেয়েটা? পরশু ছবিতে তাকে দেখার পর পরই তো শীর্ষ চলে এলো এখানে। এই টুকু সময়ের মধ্যে কি উধাও হয়ে গেল ত্রয়ী? হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল শীর্ষ। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল কক্ষের দক্ষিণ পাশের জানালার দিকে। বাইরেটা অন্ধকারে ঢাকা। শীর্ষ পকেট থেকে একটা সিগা’রেট বের করল। সিগা’রেটটা জ্বালিয়ে দুই ওষ্ঠ দ্বারা ফুঁকতে ফুঁকতে তাকালো অন্ধকারের দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তুই যেন অমাবস্যার রাতের আকাশের চাঁদ হয়ে গেছিস, ত্রয়ী। আমি জানি ঐ আকাশের গাঢ় আঁধারত্ব গায়ে মেখে তুই আছিস। কিন্তু আমি তোকে ধরতে পাচ্ছি না, ছুঁতে পাচ্ছি না, দেখতেও পাচ্ছি না। এত কেন পোড়াচ্ছিস আমাকে?”

এই টুকু বলে একটু থামল সে। সিগা’রেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ফের বলল,
“আমি কি খুব বড়ো কোনো অপরাধ করে ফেলেছিলাম ত্রয়ী? কোন অপরাধের শাস্তি তুই দিচ্ছিস আমাকে? তারপর যদি বড়ো কোনো অপরাধ করেও ফেলি তার শাস্তি কাছে থেকে দিতি। দূরে কেন গেলি? এত যন্ত্রণা কেন দিলি?”
শীর্ষের সিগা’রেট ফোকার মধ্যেই কক্ষে প্রবেশ করল রবি। বন্ধুর অবস্থা দেখেই সে আন্দাজ করে নিল তার মনের অবস্থা। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“খেতে ডাকছে তোকে।”
শীর্ষ আরেকটা টান দিল সিগা’রেটে। ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বলল,
“যা তুই। আসছি আমি।”

খাবার টেবিলে খেতে বসেছে শীর্ষ, আলভী, রবি, সোহরাব হোসেন এবং সুমন হোসেন। লুৎফা বেগম রান্নাঘর থেকে খাবার আনা নেওয়া করছেন এবং আলেয়া বেগম পরিবেশন করছেন। তৃপ্তি খাবার নিয়ে গেছে তামিমের কক্ষে। তাকে খাওয়াতে। ত্রয়ী আছে রান্নাঘরে, সেখান থেকে থেকে সব গুছিয়ে দিচ্ছে। সবকিছু আনার পরেও একটা বাটি থেকে গিয়েছিল। ত্রয়ী একবার কাউকে ডাকবে ভেবেও ডাকলো না। শুধু শুধু এই ছোট বাটিটার জন্য আবার কাউকে ডাকার কি প্রয়োজন? তার থেকে নিজের গিয়ে দিয়ে আসাই ভালো। ত্রয়ী বাটিটা নিয়ে এলো। তবে খাবার কক্ষের অভিমুখে এসেই দাঁড়িয়ে পড়ল একটি বাক্য শুনে,
“না না আন্টি, আর দিয়েন না। এই টুকুই ঠিক আছে।”

আবার সেই কণ্ঠস্বর, সেই অনুভূতি, সেই মায়া। ত্রয়ী কি সকালের মতো এবারেও ভুল শুনলো? না, না, ভুল শুনলে একবার শুনবে বারবার কেন? তবে কি শীর্ষ এখানে এসেছে? ভাগ্য আবার তাদের দুজনকে এক স্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে? ত্রয়ী উঁকি দিল দরজা গলিয়ে। বিস্ময়ে, আবেগে কেঁপে উঠল তার সম্পূর্ণ কায়া। শীতল হলো আঁখিদ্বয়। তবে তার ধারণনাই সঠিক। শীর্ষ এসেছে, তার কাছে এসেছে। ঐ তো টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। আবেগে আঁখিদ্বয় ভরে উঠল ত্রয়ীর। কতদিন পর, ঠিক কতদিন পর তার স্বামীকে, তার ভালোবাসার মানুষটাকে দেখলো সে। ত্রয়ীর ইচ্ছে হলো এক ছুটে গিয়ে শীর্ষকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিতে। সে অনুযায়ী পা ও বাড়ালো সে। তবে দুই কদম যেতেই অতীতের সকল স্মৃতি ভেসে উঠল তার চোখের সম্মুখে। থেমে গেল ত্রয়ী। তার হৃদয় চিৎকার করে উঠে বাঁধা দিল তাকে। বলল,

“না যাবি না। যে পুরুষ তোকে বিয়ে করেও স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারেনি, নিজের পরিবার থেকে তোকে রক্ষা করতে পারেনি। সে পুরুষ আর যাই হোক তোকে ভালোবাসেনি। তোকে পাওয়ার কোনো যোগ্যতা তার নেই।”
ত্রয়ী আর ভিতরে গেল না। দরজার অভিমুখ থেকেই বাটি হাতে নিয়ে ফিরে এলো রান্নাঘরে।‌ বসে পড়লো মেঝেতে। হৃদয়ে যেন ঝড় উঠেছে তার। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। ত্রয়ী আর নিজেকে সামলাতে পারল না। রান্নাঘরের মেঝেতে বসেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। কেন ঐ লোক এখানে এসেছে, কেন এসেছে? জীবনের সব হারিয়ে কেবল একটু সুখের মুখ দেখে উঠেছিল ত্রয়ী। এর মধ্যে আবার গ্রহণ লাগাতে চলে এসেছে একজন।

সুদীর্ঘ এক রাত কেটে ভোরের দেখা মিলল। চারদিকটা ইতোমধ্যে আলোয় আলোয় ভরে উঠেছে। জনজীবনও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তাদের নিত্যদিনের কর্মে। শীর্ষরা আজ সকালের নাস্তা সেড়েই তামিমের কক্ষে এলো। তামিমও ইতোমধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। তবে শুয়ে রয়েছে বিছানায়। সারাদিন শুয়ে বসে থাকা ব্যতীত তার আর কাজ কি এখন? শীর্ষ এগিয়ে গিয়ে বসলো তামিমের নিকটে। অতঃপর জিজ্ঞেস করল,
“এখন কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ, এখন অনেকটাই ভালো। তা আপনাদের এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?”
“আরে না না। আপনারা যা আদর আপ্যায়ন করছেন তারপর আর অসুবিধা হতে পারে?”
শীর্ষ এবং তামিমের কথাপকথনের মধ্যেই আলভী বলল,
“থানা থেকে এসে না হয় কথা বলবি। আগে থানার কাজটা সেড়ে আসি।”
আলভীর কথায় কপাল কোঁচকাল তামিম। সন্দিহান কণ্ঠে শুধাল,
“থানায় কেন যাবেন? কিছু কি হয়েছে?”
শীর্ষ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মলিন কণ্ঠে বলল,

“হারিয়েছে।”
“কি হারিয়েছে?”
“মানুষ হারিয়েছে।”
“মানে?”
ফের দীর্ঘশ্বাস ফেলল শীর্ষ। কণ্ঠে একরাশ বিষন্নতা নিয়ে বলল,
“এর মানেটা না হয় আপনাকে পরে কখনো বলবো।”
তামিম আর জোর করল না। সবারই ব্যক্তিগত কিছু বিষয়াদি থাকে। শীর্ষ যখন ভালো মনে করবে তখনই না হয় নিজে থেকে সবটা খুলে বলবে। এখানে জোরজবরদস্তি মানায় না। তাছাড়া তাদের পরিচয়ই বা কয়দিনের‌। তামিম তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৭

“আমার এক আঙ্কেল আছেন থানায় কাজ করে। উনি হয়তো আপনাদের সাহায্য করতে পারবে। আমি উনাকে কল করে দেব। সাথে আমার বোনও আপনাদের সাথে যাবে। আপনাদের তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসবে।”
কথা গুলো বলেই গলা উঁচাল তামিম। হাঁক ছেড়ে ডাকল,
“ত্রয়ী, ত্রয়ী।”

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৯