অনুরাগে তুই পর্ব ১৫

অনুরাগে তুই পর্ব ১৫
সাদিয়া শওকত বাবলি

আঁধারের চাদরে মুড়িয়ে থাকা রাস্তার বুক চিরে আগমন ঘটলো দুটো বাইকের। বাইক দুটিতে দুজন করে মোট চারজনের অবস্থান। চারজনেরই আপাদমস্তক কালো রঙা পোশাকে আবৃত, মাথার হেলমেটটাও কালো। সুন্দর কারুকার্য খচিত ডুপ্লেক্স একটি বাড়ির অভিমুখে এসে থামল সে বাইক দুটো। একে একে চারজন নেমে দাঁড়াল বাইক থেকে। মাথায় পরিহিত হেলমেট গুলো খুলতেই ধারাবাহিকভাবে দৃশ্যমান হলো শীর্ষ, রবি, আলভী এবং নয়ন। হেলমেটের ঘর্ষণে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো হাত দ্বারা ঠিক করে তারা এগিয়ে গেল বাড়ির গেটের দিকে। ভিতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হতেই তাদের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল দুজন দ্বাররক্ষী। তাও আবার যেইসেই দ্বাররক্ষী নয়। লম্বা, বলিষ্ঠদেহী, পেশিবহুল দ্বাররক্ষী। তাদের মধ্যে একজন থমথমে কণ্ঠে বলল,

“আপনাদের কার্ড?”
নয়ন দ্বাররক্ষী দুজনকে দেখেই পিছিয়ে গেল। আলভীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে শুধাল,
“এগুলো মানুষ নাকি জলহস্তি?”
আলভী দ্বাররক্ষীদের দিকে দৃষ্টি রেখেই ঝুঁকে গেল নয়নের দিকে। ফিসফিসিয়ে বলল,
“কাছে গিয়ে দেখ বুঝে যাবি‌।”
নয়ন আর কাছে যাবে কি? এ দুজনকে দেখেই তো তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। কি দেহ! আর কি তেজ! তবে শীর্ষের কপালে ভাঁজ পড়লো দ্বাররক্ষীর কণ্ঠ নিঃসৃত বাক্যে। গভীর কণ্ঠ সে শুধাল,
“কিসের কার্ড?”
“পার্টির কার্ড। কার্ড ব্যতীত ভিতরের পার্টিতে কারো ঢোকার অনুমতি নেই, দুঃখিত।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শীর্ষের কপালের‌ ভাঁজ গাঢ় হলো। চিত্তপটে নিগূঢ় বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকালো সে বাড়ির গেটের দিকে। গেটের কাছটায় বেশ খোদাই করে লেখা “চৌধুরী বাড়ি”। শীর্ষদের প্রধান শত্রু সরোয়ার চৌধুরীর বাড়ি এটি। লোকটা তাদের ম্যানেজার ফাহাদ এবং আব্দুর রহমান খানের এসিস্ট্যান্ট নুহাকে হাতে নিয়ে কোম্পানির বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ হাতিয়ে নিয়েছে যা এই মুহূর্তে তাদের প্রয়োজন। নয়তো এই রাত বিরাতে এ বাড়িমুখো হতো না তারা। কিন্তু আজই এখানে পার্টি হতে হলো? আর দ্বাররক্ষীদের ভাষ্যমতে কার্ড ব্যতীত ভিতরেও ঢুকতে দিবে না। ঝামেলা করে যে ঢুকবে তাও সম্ভব না। এদের যা দেহ! এদের সাথে ঝামেলা করলে দেখা যাবে তাদের একেক জনকে তুলে মশার মতো দুই আঙ্গুলে পিষে দূরে ছুঁড়ে দিয়েছে। শীর্ষ কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে ভাবলো। অতঃপর পিছু ঘুরে আলভী, নয়ন, রবিকে ইশারা করল কিছু একটা।
শীর্ষ আলভীদের নিয়ে খুব সাবধানে চৌধুরী বাড়ির চতুর্দিক ঘুরলো। শেষে বাড়ির পিছনের দিকে একটি ছোট ডোবার কাছে এসে থামলো তারা। ডোবা থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। হয়তো এ বাড়ি এবং আশেপাশের সকল বর্জ্য পদার্থ এখানেই ফেলা হয়। তবে বাড়ির এদিকটা একটু নির্জন। জনমানবের সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। যদিও এদিকটায়ও প্রাচীর তোলা তবে ভিতরে ঢোকার জন্য এখন এখানটাই ভরসা। শীর্ষ আরেকবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করল চারিপাশ। অতঃপর নয়নকে বলল,

“তুই আগে যা।”
নয়ন হোচট খেল যেন। তড়িঘড়ি করে বলল,
“আমিই আগে কেন?”
আলভী দাঁত কেলিয়ে জবাব দিলো,
“কারণ তুইই আমাদের একমাত্র বলির পাঁ’ঠা। এখন তাড়াতাড়ি দেয়াল টপকে ভিতরে যা তো।”
“না না, আমি আগে যাব না। ভিতরে যদি ঐ জলহস্তির মতো কেউ থাকে। তাহলে আমাকে দুই আঙ্গুলে তুলে মাছির মতো এদিকে ছুঁড়ে দিবে নিশ্চিত।”
শীর্ষ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“আলভী তুই আগে যা তাহলে।”
আলভী হকচকাল। কথা বলেও তো বিপদ। এখন নয়নকে ছেড়ে তাকেই যেতে বলেছে। বেচারা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলল। আমতা আমতা করে বলল,
“আমি কেন? নয়নই তো….”
এইটুকু বলতেই নয়ন বাঁধ সাধলো। ব্যস্ত হয়ে বলল,
“আমি না, আমি না। আপনিই যান স্যার।”
শীর্ষ বিরক্ত হলো। আলভী এবং নয়ন দুজনের ঘাড় দুই হতে চেপে ধরে বলল,
“দুটোই একসাথে যা। কারো আগে পড়ে যাওয়ার দরকার নেই।”
“কিন্তু আমরা….”
আলভী, নয়ন দুজনে একসাথেই বলে উঠেছিল কথাটা। শীর্ষ খেকিয়ে উঠল সাথে সাথে,

“যাবি নাকি ঐ দ্বাররক্ষীদের হাতে তুলে দিয়ে আসবো তোদের দুটোকে?”
আলভী, নয়ন আর দ্বিরুক্তি করল না। শীর্ষ তাদের ঐ দ্বাররক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়ার থেকে দেয়াল টপকে ভিতরে যাওয়া ভালো। আলভী এবং নয়ন শুকনো ঢোক গিলল। সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে দুজনে এক যোগে হাতে ভর দিয়ে লাফিয়ে পৌঁছালো ওপাশে। ভাগ্য তাদের সহায়। এদিকে সত্যিই কেউ নেই জলহস্তী আকার মানব তো দূরে থাক। বেচারারা বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আলভী হালকা গলা উঁচিয়ে বলল,
“এদিকে কেউ নেই। তোরা চলে আয় তাড়াতাড়ি।”
শীর্ষ এবং রবি আর দেরি করল না। আলভীদের কথায় আস্বস্ত হয়ে তারাও দেয়াল টপকে এলো এপাশে। আশেপাশে ভালোভাবে নজর বুলিয়ে গেল সামনের দিকে। বাড়ির মূল ভবনের পাশেই সুইমিং পুলের কিনার ঘেঁষে বাগানে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। লাল, নীল, সবুজ বিভিন্ন ধরণের আলোর ব্যবহার করে পার্টিটা একটু পশ্চিমা রূপদানের চেষ্টা চালানো হয়েছে। বেশ কিছু মানুষজনও দেখা যাচ্ছে সে স্থানে। সুন্দর সুসজ্জিত পোশাকে নিজেদের আবৃত করে রেখেছে তারা। হয়তো তারা এখানে আমন্ত্রিত। তবে আমন্ত্রিতদের মধ্যে বেশির ভাগ নারীদের পোশাকই পশ্চিমাদের ন্যায় সংকীর্ণ বিশেষ করে অল্প বয়সী তরুণীদের। গুটি কয়েক ওয়েটার আবার পানীয় ভর্তি ট্রে হাতে নিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন। শীর্ষ, আলভী, রবি এবং নয়ন নিজেদের পরিপাটি করে এক সারিতে দাঁড়াল। সিনা টান করে বেশ ভাব নিয়ে একই সাথে হেঁটে গিয়ে দাঁড়াল পার্টির স্থানে। যে কেউ তাদের আগমন দেখে নির্দ্বিধায় বলবে তারাও এখানে আমন্ত্রিত এবং সামনের গেট থেকেই ঢুকেছে। অনেক তরুণীই ইতোমধ্যে তাদের দেখে হুশ ক্ষুয়িয়ে বসেছে। সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিকে। রবি নাক মুখ কুঁচকাল। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,

“চারদিকে খালি বেডি আর বেডি।”
আলভী রবির ন্যায় একইভাবে গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
“ক্যান পার্টিতে কি তুই শুধু ব্যাডা মানুষ আশা করেছিলি?”
“ঠিক তা না….”
রবি পুরো কথাটা সম্পন্ন করার পূর্বেই খেয়াল করল একজন ওয়েটার তার পাশ থেকে পানীয় ভর্তি ট্রে হাতে হেঁটে যাচ্ছে। রবি ট্রে থেকে একটা গ্লাস হাতে তুলে নিল। ঢক ঢক করে পানীয়টা গিলে নিয়ে বলল,
“ওয়াহ কি স্বাদ মাইরি। চৌধুরী সাহেবের থেকে জেনে নিতে হবে এটা কোথা থেকে আনিয়েছেন।”
শীর্ষ পাত্তা দিলো না রবির কথা। এদিক ওদিক দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“কিন্তু এই চৌধুরী সাহেব আছেন টা কোথায়? তাকে খুঁজে বের করে কাজ সাড়তে হবে অতি দ্রুত। তারপর এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। কোনোভাবে যদি ঐ পালোয়ানদের হাতে পড়ি তাহলে জান নিয়ে এখান থেকে একটাকেও বেরুতে হবে না।”
নয়ন আশেপাশে নজর বুলিয়ে বলল,

“এখানে তো দেখছি না। আশেপাশে খুঁজে দেখতে হবে পাই কিনা ঐ বদমাইশ চৌধুরী সাহেবকে।”
শীর্ষরা সবাই দল বেঁধে পার্টির স্থানে, বাড়ির প্রাঙ্গণ এবং নিচের তলায় খুঁজলো সরোয়ার চৌধুরীকে। কিন্তু সে ভদ্রলোকের দেখা কোথাও নেই। পার্টি হওয়ায় পুরো বাড়ি এবং বাড়ির বাইরে বেশ জনমানবের উপস্থিতি থাকায় তাদের এভাবে বাড়িতে প্রবেশকে সন্দেহজনকভাবেও দেখেনি কেউ। এই দিক থেকে আজ পার্টি হয়ে ভালোই হয়েছে। শীর্ষরা নিচের তলা ভালোভাবে দেখে পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে। দুটো সিঁড়ি উঠতেই থেমে গেল রবি। এক হাতে মাথা চেপে বলল,
“একি মাথা ঘুরাচ্ছে কেন আমার? কেমন গা গুলিয়ে উঠছে।”
পরপর রবি তাকালো সামনের দিকে। গলার স্বর বাড়িয়ে বলল,
“এই আলভী, এই শীর্ষ সব ঘুরাচ্ছে আমার। বা*ল তোরাও দেখছি ঘুরছিস। তোরা ঘুরছিস কেন? দাঁড়া এক জায়গায়।”
রবি দুই হাতে মাথা চেপে কেমন হেলেদুলে উঠল। আলভী তড়িঘড়ি করে ধরলো তাকে। উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,
“তোর আবার হঠাৎ কি হলো? এমন করছিস কেন?”
রবি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। আঙ্গুল তুলে থেমে থেমে বলল,
“তুই, এই কে তুই? ব্যাকাভরা উরচুঙ্গার মতো মুখটা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
আলভী তেতে উঠল। রবিকে তৎক্ষণাৎ ধাক্কা মে’রে বলল,
“আমার মুখ ব্যাকাভরা উরচুঙ্গার মতো? শা*লা তোর মুখ ব্যাকা ভরা, তোর চৌদ্দ গুষ্টির মুখ উরচুঙ্গার মতো।”

আলভীর ধাক্কায় রবি গিয়ে পড়লো নয়নের উপর। শীর্ষের মেজাজ বিগড়ালো। রবির আচরণ দেখে তার বুঝতে বাকি রইল না কি হয়েছে এর। এ নিশ্চয়ই তখনকার পানীয়র ফল। এখানে তারা এসেছে একটা কাজে। কোথায় কাজ সাড়ার তৎপরতা চালাবে তা না পার্টিতে এসেই পানীয় গিলেছে। ইচ্ছে তো করছে এটাকে এখন ঐ পানীয়র মধ্যেই চুবিয়ে মা’র’তে। আর এই সরোয়ার চৌধুরীকেও বলি হারি যাই। এটা কি ঐ ইউরোপ আমেরিকা ভেবেছে যে এখানে পার্টিতে এত সহজভাবে লাল পানি ছেড়ে দিয়েছে? এর বিরুদ্ধে তো প্রকাশ্যে মা’দ’ক সরবারহ করার জন্য গোটা কয়েক মা’ম’লা ঠুকে দেওয়া প্রয়োজন। শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
“শা*লা*র পেটে মা*ল পড়েছে। হুশ খেয়াল হারিয়েছে। ওটাকে নয়নের কাছে রেখে তুই আমার সাথে আয় আলভী। সরোয়ার চৌধুরীকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো নিতে হবে তাড়াতাড়ি।”
আলভী রবির দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো একটা। অতঃপর হাঁটা ধরল শীর্ষের পিছু পিছু। রবি নয়নের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। টেনে টেনে বলল,

“এত সুন্দর কেন তুমি ললনা? আহা কি সুন্দর টানা টানা চোখ, পদ্ম পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট, কুলার মতো কান আর…”
রবি ভ্রু কুঁচকাল। নয়নের গালে হাত রেখে বলল,
“কিন্তু তোমার গালে কেন কালো দাড়ি বলো না?”
নয়নের কান্না পেল ভীষণ। সব সময় তার সাথেই কেন এমন হয়? সব আপদ কেন তার ঘাড়েই ওঠে? এখন এই রবি নামক জন্তুটাকে নিয়ে সে কোথায় যাবে? বদমাইশটা কেমন হেলেদুলে পড়ছে তার গায়ের উপরে।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে থামলো শীর্ষ এবং আলভী। দেখলো বাম ও ডান দুই দিকে দুটো পথ গিয়েছে। সরোয়ার চৌধুরী কোন দিকে আছেন কে জানে! শীর্ষ দুটো পথের দিকেই তাকালো চোখ ঘুরিয়ে। অতঃপর ডান দিকে পা বাড়িয়ে আলভীকে বলল,
“তুই ওদিকটায় যা। আমি এদিকটায় দেখছি।”
শীর্ষের আদেশ অনুযায়ী আলভী বাম দিকে এলো। এদিকটায় তেমন মানুষ দেখা যাচ্ছে না। দুই একজন আছে তাও বেশ দূরত্ব নিয়ে। আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ তার নজর আটকালো একটি কক্ষের দিকে। কক্ষের দরজাটা আধখোলা। সরোয়ার চৌধুরী এ কক্ষে নেই তো! থাকতেও পারেন। আলভী এগিয়ে গেল কক্ষের দিকে। দরজা ঠেলে ঢুকলো ভিতরে। চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাতেই থমকে গেল সে। হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো তড়িঘড়ি করে। তার সামনে আকাশী রঙা এক খানা লম্বা গাউন পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক তরুণী। দুধে আলতা গায়ের রং, ছিপছিপে শরীরের গড়ন। লম্বাটাও মানানসই। চুলগুলো খোলা, তার সাথে হালকা সাজ। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। এ নারী নাকি পরি? আলভীর কাছে মনে হলো এ কোনো সাধারণ নারী নয়। এ রূপকথার কোনো রাজকুমারী। ঘোর লেগে গেল তার। এক দৃষ্টে সে চেয়ে রইল মেয়েটির দিকে। তবে তার ঘোরের মধ্যেই মেয়েটি এসে দাঁড়াল আলভীর মুখোমুখি। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

“আপনি কে? আর এভাবে হুট করে আমার রুমে ঢুকে পড়েছেন কেন?”
ধ্যান ভাঙলো আলভীর। অপ্রস্তুত হলো সে। আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
“ওয়াশ রুম, ওয়াশ রুম খুঁজতে এসেছিলাম।”
“কেন ওয়াশ রুম নিচে নেই? তার জন্য উপরে আসতে হবে কেন?”
“ঐ ভুলে আর কি…”
এই টুকু বলতেই আলভীকে থামিয়ে দিলো মেয়েটি। রুক্ষ স্বরে বলল,
“ভুল হোক আর যা হোক এখন আপনি আসতে পারেন। আর হ্যা এর পরবর্তী কারো রুমে ঢোকার আগে অবশ্যই নক করে নিবেন। এটা ভদ্রতা।”
আলভী অপমানিত বোধ করল। তবে মুখ ফুটে বলল না কিছুই। বলবেও বা কি সে? নক না করে ঢোকাটা তারই ভুল ছিল। আলভী চলে যেতে নিয়েও থেমে গেল। ইতস্তত করে শুধাল,
“আপনার নাম?”
“আপনি পার্টিতে এসেছেন?”
আলভী তড়িঘড়ি করে জবাব দিলো,
“হ্যা হ্যা আর কি কাজে আসবো?”
“যার জন্মদিনের পার্টিতে এসেছেন তারই নাম জানেন না? আশ্চর্য!”

নাম তো দূরের কথা। আজ যে এ বাড়িতে পার্টি আছে তাও আবার জন্মদিনের পার্টি তাই তো তারা জানতো না। তবুও আলভী জোরপূর্বক হেসে বলল,
“আসলে খেয়াল করিনি।”
“আমার নাম মেহের।”
“বাহ সুন্দর নাম। সরোয়ার চৌধুরীর সাথে আপনার সম্পর্ক?”
“উনি আমার বাবা হন।”
“আচ্ছা। আসছি তাহলে আমি।”
আসছি বলেও চলে গেল না আলভী। কিছু ইতস্তত করে বলল,
“শুভ জন্মদিন।”
মেহের বিরস কণ্ঠে জবাব দিলো,
“ধন্যবাদ।”
এবার আর আলভী দাঁড়াল না।‌ যেতে ইচ্ছে না হলেও পা চালিয়ে প্রস্থান করল‌ সে। তাকে আগে সরোয়ার চৌধুরীকে খুঁজে বের করতে হবে। নয়তো শীর্ষ তার কলিজা ছিঁড়ে এই পার্টির মধ্যেই ভাগ বসাবে।

অনুরাগে তুই পর্ব ১৪

নয়ন রবিকে কোনোমতে টেনেটুনে বাহিরে আনলো। এত বড়ো দেহী এক পুরুষকে কি আর এত সহজে আনা যায়? তীব্র বিতৃষ্ণা নিয়ে নয়ন পা বাড়ালো গেটের দিকে। ঠিক তখনই পিছন থেকে তার নাম ধরে ডেকে উঠল কেউ। নয়ন থমকে দাঁড়াল। ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল বেচারা। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল তার। একি মিস্টার সোহাগ এখানে কি করছে? একজনকে দিয়ে হচ্ছিলো না। সৃষ্টিকর্তা এখন আরও একজনকে পাঠিয়ে দিয়েছে? মিস্টার সোহাগ দৌড় শুরু করল নয়নের দিকে। ঢোক গিলল বেচারা। আতঙ্কিত স্বরে বলল,
“শয়তান সব দূরে যা, দূরে যা। কাছে আসিস না। ফুউউউউ।”

অনুরাগে তুই পর্ব ১৬