অনুরাগে তুই পর্ব ১৭
সাদিয়া শওকত বাবলি
শীর্ষ কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে কপাল কুঁচকে চেয়ে রইল ত্রয়ীর দিকে। অতঃপর নিজের কক্ষের দিকে পা চালাতে চালাতে বলল,
“এক মগ কফি নিয়ে আমার রুমে আয়।”
ত্রয়ী বিরক্ত হলো। মাত্রই সে এলো রান্নাঘর থেকে। এখন আবার রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানাতে হবে। তবে সে মুখে প্রকাশ করল না কিছুই। শীর্ষকে না বলার সাহস তার নেই। লোকটা যা ভয়ংকর। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল মেয়েটা। কিছুটা সময় নিয়ে কফি বানিয়ে গিয়ে দাঁড়াল শীর্ষের কক্ষের অভিমুখে। দরজাটা হালকা ফাঁকা করা। তবুও ত্রয়ী হাত উঁচিয়ে দরজায় টোকা দিলো। গলা বাড়িয়ে শুধাল,
“আসবো?”
“আয়।”
ত্রয়ী দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। বিছানার দিকে নজর দিতেই চোখে পড়লো শীর্ষকে। লোকটা ফের তখনকার মতো উদম শরীরে আধশোয়া হয়ে বসে রয়েছে বিছানায়। মেয়েটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল বিছানার পাশে। কফির মগটা বাড়িয়ে দিয়ে কিছুটা ইতস্তত করেই শুধাল,
“এভাবে একটা মেয়ের সামনে বারবার পোশাক খুলে শরীর প্রদর্শন করছেন। লজ্জা লাগছে না আপনার?”
শীর্ষ কফির মগটা নিতে নিতে জবাব দিলো,
“আমার লাজ লজ্জা ছোট বেলা থেকেই একটু কম। স্কুল, কলেজে পড়াকালীন মেয়েরাও তাই বলতো।”
ত্রয়ী অবাক হলো। চোখ বড়ো বড়ো করে শুধাল,
“আপনি স্কুল, কলেজে থাকতেও খালি গায়ে হতেন? তাও মেয়েদের সামনে?”
“খেলতে গেলে হতাম।”
ত্রয়ী নাক মুখ কুঁচকাল। খুব বেশি না ভেবেই ফট করে বলল,
“যে ছেলেরা পরনারীর সামনে স্বাচ্ছন্দ্যে খালি গায়ে হতে পারে সেই ছেলেদের আমি দুই চক্ষে দেখতে পারি না। এমন ছেলেদের আমি কখনো বিয়ে করব না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শীর্ষ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। কপাল কুঁচকে বলল,
“তোকে বিয়ে করতে বলেছে কে? আমি কি একবারও বলেছি আমাকে তোকে বিয়ে করতে হবে?”
ত্রয়ী থতমত খেল। কি বলতে মুখ ফস্কে সে কি বলে ফেলেছে একদম বুঝতে পারেনি। এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে। শীর্ষ তাকে কি ভেবেছে কে জানে। মেয়েটা আমতা আমতা শুরু করল। শীর্ষ নজর সরালো তার দিক থেকে। কফির মগে চুমুক বসাতে বসাতে বলল,
“তুই নিশ্চিন্তে থাক। তোর মতো গাধীর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি অন্তত তোকে বিয়ে করব না।”
ত্রয়ী অপমানিত বোধ করল। সে মোটেই গাধী নয়। ঐ যা একটু ভীতু এবং স্বল্পভাষী। তবে শীর্ষকে বিয়ে করার ইচ্ছা তারও নেই। পৃথিবীতে কি পুরুষ মানুষের অভাব পড়েছে যে একে বিয়ে করতে হবে? প্রয়োজনে অবিবাহিত থাকবে তবুও তো লাজ লজ্জাহীন রুক্ষ স্বভাবের নিরামিষ এই অভদ্র লোকটাকে সে বিয়ে করবে না। ত্রয়ী মনে মনে ভেংচি কাটলো। তবে কথা বাড়ালো না আর। পিছন ঘুরে পা বাড়াল চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। দুই কদম সে সামনে যেতেই পিছু ডাকল শীর্ষ,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
ত্রয়ী পিছন ঘুরলো। দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ রেখে বলল,
“রুমে যাচ্ছিলাম। কেন কিছু বলবেন?”
শীর্ষ ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানার পাশের টেবিলের উপরে রাখা ফাস্ট এইড বক্সটার দিকে ইশারা করল। ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,
“শুকিয়ে যাওয়া যে ক্ষত তুই তাজা করেছিস এখন সেই ক্ষতে মলম লাগা।”
“মানে?”
শীর্ষ নিজের পেটের ক্ষতস্থানটার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল,
“তখন খামচে ধরায় রক্ত বেরিয়েছে। পরিষ্কার করে ঔষধ লাগিয়ে দে।”
অবাক হলো ত্রয়ী। এই লোক সন্ধ্যায় এই ক্ষত নিয়েই না কত বড়ো বড়ো কথা বলল? সে যখন জিজ্ঞেস করল ব্যথা হচ্ছে কিনা তখন না বলল ‘ব্যথাই চড়ম উপভোগ্য’ আবার রক্ত বের হওয়ার কথা বলাতে বলেছিল কলুষিত রক্ত বেরিয়ে যাওয়া নাকি ভালো। তারপর যখন সে ঐ ক্ষত স্থানটা একটু ছুঁয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল তখন তো বেশ বড়ো গলায় বলেছিল তাকে ছুঁলে নাকি জ্বলে পুড়ে যাবে। তাহলে এখন ছুঁলে জ্বলে পুড়ে যাবে না? ত্রয়ী এক পলক তাকালো শীর্ষের দিকে। পরপর আবার চোখ নামিয়ে বলল,
“আপনিই না তখন বলেছিলেন ব্যথাই ভালো। তাছাড়া আপনি এটাও বলেছিলেন আপনাকে ছুঁলে নাকি আমি জ্বলে পুড়ে যাব। এরপরও কি আপনাকে ছোঁয়াটা ঠিক হবে আমার?”
শীর্ষ হাতের কফির মগটা রাখলো টেবিলে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“এত কথা তো তোর থেকে আমি শুনতে চাইনি। আমার শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতস্থান যখন তুই তাজা করেছিস তখন এর চিকিৎসাও তোকেই করতে হবে। তাতে যদি তুই জ্বলে পুড়ে যাস তো যাবি। কিন্তু এই ক্ষতে মলম না লাগিয়ে তুই এই কক্ষ থেকে এক পা ও নড়তে পারবি না।”
ত্রয়ীর রাগ লাগলো। চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছা হলো,
“আপনার ঐ ক্ষতস্থান মোটেই শুকনো ছিল না। আমি সন্ধ্যায়ও দেখেছি ওটা তাজা ছিল। আমি কোনো শুকনো ক্ষত স্থানকে তাজা করিনি।”
মনে মনে এতগুলো কথা বললেও মুখে বলার সাহস পেল না মেয়েটা। এ কথা বললে আবার না শীর্ষ বলে,
“তুই আমার তাজা ক্ষত স্থানকে আঘাত করে ভর্তা করে দিয়েছিস, রক্ত বের করেছিস। এই অপরাধে তোকে আমি জে’লে দেব।”
তখন কি করবে মেয়েটা? কিন্তু এই ক্ষতের চিকিৎসাও বা সে কিভাবে করবে? লোকটাকে উদম শরীরে দেখেই তার ভিতরে অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে। এখন আবার সেই উদম শরীরকে ছুঁয়েও দিতে হবে। ত্রয়ীকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকাল শীর্ষ। ধমকে বলল,
“কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি কাজ শুরু কর।”
ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো ত্রয়ী। ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে বসলো শীর্ষের পাশে। আলতোভাবে ঔষধ লাগাতে শুরু করল ক্ষতস্থানে। তবে একটু ঔষধ ছুঁইয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিচ্ছে মেয়েটা। আবার একটু সময় নিয়ে ঔষধ লাগাচ্ছে। শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“ওভাবে নাক মুখ কুচকাচ্ছিস কেন?”
“না মানে আপনি ব্যথা পাচ্ছেন না? ঔষধ লাগতেই স্থানটা জ্বলে উঠছে না?”
“তা জ্বলে উঠলে আমার উঠছে। তাতে তোর কি? তুই নাক মুখ কুঁচকাচ্ছিস কেন?”
“ঐ আর কি এমনি।”
ত্রয়ী আবারও মনোযোগ দিলো ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগাতে। শীর্ষের দৃষ্টি শীতল হলো। কেমন অদ্ভুত এক প্রশান্তি হানা দিলো তার হৃদয় জুড়ে। দৃষ্টি স্থির হলো ত্রয়ীর দিকে। সে তাকাতে চাইছে না এই মেয়েটির দিকে। তবুও কেন যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। বেহায়া চোখ দুটো তার আদেশের অবাধ্য হয়েই দেখছে ত্রয়ীকে। মেয়েটা কিছুটা সময় নিয়ে ঔষধ লাগিয়ে উঠে দাঁড়াল। নরম কণ্ঠে বলল,
“ঔষধ লাগানো শেষ। আমি তাহলে এখন আসছি।”
শীর্ষ প্রত্যুত্তরে কিছুই বলল না। ত্রয়ী দাঁড়িয়ে রইল কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে। অতঃপর বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে। শীর্ষ চেয়ে রইল তার গমনপথে। এই মেয়েটির জন্য তার হৃদয়ে কিছু হচ্ছে। কোনো সুখকর অনুভূতির উদয় ঘটছে। শীর্ষ চাইছে নিজেকে দমিয়ে রাখতে কিন্তু পারছে না। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল সে। দৃষ্টি নামিয়ে পেটের ক্ষতস্থানের দিকে তাকাতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল। এই আঘাতটা ক্লাবে মা’রা’মা’রি’র সময় লেগেছিল। ঐ কায়সারটা নির্ঘাত হাতে ধারালো কিছু নিয়ে এসেছিল। তখন মা’রা’মা’রি’তে অত কিছু খেয়াল করা হয়নি। তারপর আবার পরে হঠাৎ পুলিশ চলে আসায় তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। কিন্তু ঐ কায়সার একবার, শুধু একবার শীর্ষের হাতে পড়ুক ওকে এই আঘাতের মূল্য সুদে আসলে তুলে নিবে।
রাত বাড়ার সাথে সাথে রবির পাগলামি বেড়েছে। তখন পার্টিতে বসে হুঁশ হারানোর পর সবাই ভেবেছিল তারা বেঁচেছে। কিন্তু না, মাঝ রাস্তায়ই আবার হুঁশে ফিরে পাগলামী শুরু করেছে সে। তাই এই অবস্থায় তাকে আর বাড়িতে পৌঁছে দেয়নি আলভী এবং নয়ন, নিয়ে এসেছে শীর্ষের ফ্ল্যাটে। রবির বাবা এমনিই যা বদমেজাজি মানুষ। ছেলে ম’দ খেয়ে মাতাল হয়েছে দেখলে নির্ঘাত রা’ম দা তুলে ছুটে আসবেন কো’পা’তে। এমনিই লোকটা নাকি প্রথম জীবনে কষাই ছিলেন। এই অবস্থায় রবিকে বাড়িতে নিলে রবি তো ম’র’বে ম’র’বে’ই সাথে নয়ন আর আলভীও প্রাণ হারাবে অকালে। নয়ন ফ্ল্যাটে ঢুকেই এক গ্লাস লেবুর শরবত এনে ধরল রবির সামনে। অতঃপর বলল,
“এটা খেয়ে নিন স্যার।”
রবি নিলো না গ্লাসটা। একটু গন্ধ শুঁকে নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“কি এটা? নিশ্চয়ই বি’ষ। তোরা আমাকে বি’ষ খাইয়ে মে’রে ফেলতে চাইছিস? কি ভয়ংকর লোক তোরা। তোদের নামে আমি মা’ম’লা করব।”
“তা না হয় করবেন। আগে এটা খেয়ে তো নিন।”
“না খাবো না। কিছুতেই খাবো না।”
আলভী এগিয়ে এলো। গ্লাসটা রবির মুখের সামনে ধরে বলল,
“আল্লাহ ওয়াস্তে খেয়ে নে ভাই। আমাদের একটু উদ্ধার কর।”
“কেন তোদের ধরেছে কে যে উদ্বার করতে হবে?”
আলভীর অধৈর্য হলো। রবিকে চেপে ধরে সে খাওয়াতে নিল শরবতটা। রবিও ফুঁসে উঠল। শরবতের গ্লাসটা সাথে সাথে ছুঁড়ে ফেলল নিচে মেঝেতে। সাথে সাথে ঝনঝন ধ্বনি তুলে কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল। আলভীর মেজাজ বিগড়ালো। খ্যাপাটে কণ্ঠে সে বলল,
“শা’লা তোকে তো আজ আমি….”
পুরো কথাটা শেষ করার আগেই রবির মোবাইলটা বেজে উঠল। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল সে। স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে বাবা নামটা। এত রাত হলো তবুও ছেলে বাড়িতে ফিরেনি তাই হয়তো কল করেছে। রবি কলটা রিসিভ করল। কানের কাছে মোবাইলটা ধরে বলল,
“হ্যালো রাশেদ ভাই? কেমন আছেন? আপনার বউ কেমন আছে?”
আঁতকে উঠল নয়ন এবং আলভী। তড়িঘড়ি করে তারা রবির থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিল। কলটা কেটে দিলো দ্রুততার সাথে। শেষ পর্যন্ত বাপকে বলছে ভাই! এই ছেলে যা শুরু করেছে আজ তাদের না মে’রে বোধ হয় শান্ত হবে না।
রৌদ্রজ্জ্বল সুন্দর দিন। আকাশের সোনালী সূর্যটা আজ বেশ উজ্জ্বল রূপেই ধরা দিয়েছে। জানালা গলিয়ে সূর্যের আলো চোখে মুখে পড়তেই নড়েচড়ে উঠল রবি। শরীরের উপরে ভারী কিছু অনুভব করল। পিটপিট করে চোখ খুললো সে। ডান দিকে তাকাতেই দেখলো নয়ন ঘুমিয়ে আছে আর বাম দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো আলভী কে। দুজনেই দুই দিক থেকে চেপে ধরে রেখেছে তাকে। রবির কপাল কুঁচকে এলো। এরা এই সকাল সকাল তার সাথে কি করছে? রাতভর কি তার কক্ষেই ছিল এরা? ছিটা মে’রে দুজনকে নিজের শরীরের উপর থেকে সরিয়ে দিলো সে। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিয়ে উঠল নয়ন এবং আলভী। ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠে বসলো বিছানায়। নয়ন হড়বড় করে বলল,
“কি হয়েছে? কে ম’রে’ছে?”
আলভীও হঠাৎ ঘুম ভাঙায় আতংকিত হয়ে পড়েছে বেশ। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে সে বলল,
“কই কে ম’রে’ছে? কোনো লা’শ তো দেখছি না।”
রবি বিরক্ত হলো। বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে অনুভব করল তার মাথার পিছনের দিকে বেশ ব্যথা। তাছাড়া মাথাটাও বেশ ভারী ভারী লাগছে। রবি মাথাটা চেপে ধরল। ব্যথায় নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“মাথায় এত ব্যথা কেন? আহ!”
ধীরে ধীরে উঠে বসলো রবি। মাথার পিছনের দিকে হাত দিয়ে বুঝলো পিছনের দিকটা ফুলেও উঠেছে। রবি চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে তুললো। তেতে উঠে বলল,
“এই তোরা আমার সাথে কি করেছিস? আমার মাথার পিছনের দিকটা ফুলেছে কেন?”
নয়ন এবং আলভী আগের থেকে স্বাভাবিক হলো কিছুটা। কোথাও কেউ ম’রে’নি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তারা। নয়ন রবির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার চাচি আপনাকে গতকাল রাতে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিয়েছিল। তখন ব্যথা পেয়ে ফুলে উঠেছে বোধ হয়।”
রবি পাশ ফিরে তাকালো নয়নের দিকে। কপাল কুঁচকে শুধাল,
“কোন চাচি? আর তোরা দুইটা আমার রুমে কি করছিস? কাল বাড়িতে ফিরিসনি তোরা?”
আলভী বিরক্তি ভরা কণ্ঠে জবাব দিলো,
“শুধু আমরা না। কাল তুইও বাড়ি ফিরিসনি। আমরা সবাই শীর্ষের ফ্ল্যাটে আছি।”
রবি আশেপাশে তাকালো। চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল তার। কাল রাতে বাড়িতে না ফিরে সে এখানে ছিল? কিন্তু কেন ছিল? রবি মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করল। গতকাল তারা সরোয়ার চৌধুরীর বাড়িতে গিয়েছিল, সেখানে পার্টি ছিল। সে এক গ্লাস পানীয় পান করেছিল, তারপর সিঁড়ির কাছে গিয়েছিল উপরে ওঠার জন্য। এরপর আর কিছু মনে নেই। এরপর কি হয়েছিল? তার মনে পড়ছে না কেন? রবি আরও কিছুটা সময় নিয়ে সবটা মনে করার চেষ্টা করল। শেষে ব্যর্থ হয়ে তাকালো আলভীর দিকে। অসহায় কণ্ঠে বলল,
“আমরা কাল বাড়ি ফিরিনি কেন? আমার কিছু মনে পড়ছে না কেন?”
আলভী দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দিলো,
“কারণ কাল তুই মা’ল খেয়ে টাল হয়ে পড়েছিলি শা’লা। আর তোর জন্য আমরাও বাড়ি যেতে পারিনি।”
“মা’ল খেয়েছিলাম!”
“ঐ পার্টিতে যে পানীয়টা খেয়েছিলি ওটাই বিদেশি লাল পানি ছিল।”
“ওহ, তাহলে আমাকে বাড়িতে না নিয়ে এখানে এনেই ভালো করেছিস। নয়তো আমার বাপ জানতে পারলে আমাকে কালই ক’ব’র দিয়ে দিতো।”
অনুরাগে তুই পর্ব ১৬
নয়ন বিছানার পাশের টেবিল থেকে রবির মোবাইলটা তুলে বাড়িয়ে দিলো তার দিকে। অতঃপর বলল,
“আপনার বাবা কাল কল করেছিল স্যার। আপনি কল রিসিভ করে তাকে ভাই ডেকেছিলেন। সেই থেকে সে আপনার জন্য রা’ম দা নিয়ে অপেক্ষা করছে। আপনার বোন মেসেজ করেছে চেক করে দেখুন। রা’ম দা সহ ছবিও পাঠিয়েছে বোধ হয়। উপর থেকে মেসেজটা পড়তে পারলেও ছবিটা দেখতে পারিনি।”