অনুরাগে তুই পর্ব ২২
সাদিয়া শওকত বাবলি
লুটিয়ে পড়লো শীর্ষের বক্ষের উপরে। বিরবিরিয়ে বলল,
“আসমান ভেঙে এর মাথায় একটা ঠা’ডা পড়ুক। আমাকে জ্বালানোর আগে এই ব্যাটাই জ্বলে পুড়ে যাক।”
শীর্ষ হতভম্ব হয়ে গেল। ত্রয়ীর মুখটা অতি নিকটে থাকায় মেয়েটির কণ্ঠে তোলা প্রতিটি বাক্যই তার কর্ণে হানা দিলো বেশ সহজে। কিন্তু মেয়েটি এ কি বলল? তার মাথার উপরে ঠা’ডা পড়ার মতো এক ভয়ংকর অভিশাপ দিলো? একটু আগে থা’প্প’ড় মে’রে’ও এর শান্তি হয়নি? এখন আবার অভিশাপও দিচ্ছে? ক্রোধে রি রি করে উঠল শীর্ষের শরীরটা। কটমট করে সে ধরল মেয়েটির দুই বাহু। টেনে দাঁড় করানোর চেষ্টা করল তার মুখোমুখি। ত্রয়ী ভয় পেয়েছে তবে জ্ঞান হারায়নি। তার স্নায়ুতন্ত্র এতটাও দুর্বল নয় যে এই টুকু ভয়ে জ্ঞান হারাবে। মেয়েটি হালকাভাবে চোখ দুটো ফাঁকা করল, তাকালো শীর্ষের মুখ পানে। রক্তিম সে মুখশ্রী। চোখ দুটোও কেমন হিংস্র। ঢোক গিললো বেচারী। চোখ বন্ধ করে জ্ঞান হারানোর ভান ধরে ফের সে লুটিয়ে পড়লো শীর্ষের দেহের উপর। এখন এই জ্ঞান হারানোর অভিনয়ই ভরসা। একমাত্র এই অভিনয়ই পারে শীর্ষের হাত থেকে তাকে বাঁচাতে।
শীর্ষ তবুও দমলো না। মৃদুভাবে ধাক্কা দিলো ত্রয়ীর দুই বাহু ধরে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“নাটক বন্ধ কর বালির বস্তা। চোখ খোল তাড়াতাড়ি। আজ তোর খবর আছে। কোন সাহসে তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস?”
ত্রয়ী সাড়া দিলো না কোনো। ঘাপটি মে’রে পড়ে রইল শীর্ষর উপর। কটমট করল শীর্ষ। রুক্ষ কণ্ঠে ফের বলল,
“চোখ খুলবি নাকি এই পাকা রাস্তায় ফেলে তোর হাড়গোড় সব ভেঙে দেব?”
ত্রয়ী শুকনো ঢোক গিললো। তবে শীর্ষের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হলো কায়সার। শীর্ষের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে দৌড়ে পালাতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ত্রয়ীর উপরে শীর্ষকে চড়াও হতে দেখে থেমে গিয়েছেল। এরপর মেয়েটি জ্ঞান হারালো। অথচ এই ছেলে এখনো চোটপাট দেখিয়েই যাচ্ছে। এর মস্তিষ্কে কি ঢুকছে না যে মেয়েটি জ্ঞান হারিয়েছে, তার কথা শুনছে না? কায়সার কপাল কুঁচকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ত্রয়ী এবং শীর্ষের মুখোমুখি। কণ্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“পাগল তুই? মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে দেখছিস না? তারপরও চোটপাট দেখিয়ে যাচ্ছিস।”
শীর্ষ তাকালো ত্রয়ীর দিকে। এ পর্যায়ে তার মস্তিষ্কেও হানা দিলো চিন্তারা। এতক্ষণ সে ভেবেছিল মেয়েটি অভিনয় করছে। তাই শাসিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু এখনো মেয়েটিকে চোখ খুলতে না দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো তার। হাত উঁচিয়ে আলতোভাবে দুটো চাপড় মা’র’লো ত্রয়ীর গালে। চিন্তিত স্বরে বলল,
“এই বালির বস্তা চোখ খোল। তুই কি সত্যিই জ্ঞান হারিয়েছিস নাকি অভিনয় করছিস? এই বালির বস্তা!”
ত্রয়ী এবার দাঁতে খিল দিলো। হেলেদুলে পড়লো শীর্ষের উপর। যেন তার শরীরে কোনো সাড় নেই। শীর্ষের বুক কাঁপলো। হঠাৎই এই মেয়েটির চিন্তায় দিশেহারা হয়ে উঠল তার মন, মস্তিষ্ক। আতংকিত হলো হৃদয়। কি হলো ত্রয়ীর? শীর্ষের মুখাবয়বের পরিবর্তন ঘটলো অতি দ্রুত। দৃষ্টিতে হানা দিলো উৎকণ্ঠা। অস্থির হয়ে সে মৃদুভাবে ধাক্কা দিতে শুরু করল ত্রয়ীকে ধরে। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
“এই বালির বস্তা চোখ খোল! এই! এই!”
ত্রয়ী চোখ খুললো না। কায়সার কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“এভাবে মনে হয় চোখ খুলবে না। ওকে হাসপাতালে নিতে হবে।”
কথাটা বলে কায়সার হাত বাড়ালো ত্রয়ীর দিকে। শীর্ষের চোখ দুটো জ্বলে উঠল সাথে সাথে। হিংস্র হায়েনার ন্যায় সে থাবা বসালো কায়সারের হাতে। ত্রয়ীকে স্পর্শ করার পূর্বেই মুচড়ে ধরলো তার হাত। ব্যথায় ককিয়ে উঠল কায়সার। শীর্ষ দাঁতে দাঁত চাপলো। হিসহিসিয়ে বলল,
“একদম না, ভুলেও ওর দিকে হাত বাড়ানোর দুঃসাহস দেখাস না। তাহলে ঐ হাত কিন্তু আর তোর সাথে থাকবে না।”
শীর্ষ এক প্রকার ছুড়ে দিলো কায়সারের হাতটা। ত্রয়ীকে কোলে তুলে নিয়ে এগুলো গাড়ির দিকে। মেয়েটাকে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে। আর সময় ব্যয় না করে গাড়ি স্টার্ট করে ছুটলো সামনের দিকে।
কিছুটা সময় গড়ালো। শীর্ষের গাড়িটা এখনো ছুটছে হাইওয়ে ধরে। মূল শহরে পৌঁছে হাসপাতালে যেতে যেতে এখনো ত্রিশ মিনিটের মতো সময় ব্যয় হবে। শীর্ষের আর সেই ধৈর্য ধরছে না। ত্রয়ীর চিন্তায় চিন্তায় মন, মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। মেয়েটি হঠাৎ এভাবে জ্ঞান হারালো কেন? তারপর জ্ঞান না হয় হারিয়েছে কিন্তু এখনো হুশে ফিরেছে না কেন? অজানা আশঙ্কায় হৃদয় দিশেহারা হলো তার। কেমন যেন ভয় হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে, নিজেকে অস্থির লাগছে। এমন কেন হচ্ছে? শীর্ষ গাড়িটা আর সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার মতো ধৈর্য ধরতে পারলো না। রাস্তার একপাশে হুট করেই গাড়িটা থামিয়ে দিলো সে। সিট বেল্টটা খুলে তড়িঘড়ি করে উঠে এলো পিছনের সিটে। ত্রয়ী এখনো চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। শীর্ষ বসলো ত্রয়ীর পাশে। অস্থির হয়ে তার মাথাটা তুলে নিল নিজের কোলে। হাত বাড়িয়ে গাল দুটোতে আলতোভাবে চাপড়ে ডাকল,
“বালির বস্তা! বালির বস্তা!”
ত্রয়ী শুনলো সে ডাক। এবারে চোখ খোলার সিদ্ধান্ত নিল সে। নয়তো একটু বেশিই হয়ে যাবে। তাছাড়া তাকে চোখ খুলতে না দেখে যদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় শীর্ষ তখন কি হবে? ডাক্তার তো দেখেই বলে দিবে সে অভিনয় করছিল। তারপর নিশ্চিয়ই শীর্ষ তাকে ছাড়বে না। একদম মে’রে বালি চাপা দিয়ে দিবে। মেয়েটি পিটপিট করে চোখ খুললো। শীর্ষ যেন এতক্ষণ প্রাণে প্রাণ ফিরে পেল। অস্থির হয়ে বলল,
“এতক্ষণ চোখ খুলছিলি না কেন? জানিস তোর জন্য কত চিন্তা হচ্ছিলো আমার? আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?”
ত্রয়ী অবাক হলো। শীর্ষ তার জন্য চিন্তা করছিল? ভয় পাচ্ছিলো? একটু আগেই না লোকটা তার উপর রেগে ছিল? তাকে মা’রা’র জন্য তৎপর হয়েছিল? সেই কারণেই তো সে জ্ঞান হারানোর ভান ধরে এতক্ষণ ঘাপটি মে’রে পড়ে রয়েছিল। ত্রয়ী শীর্ষের কোল থেকে উঠে বসলো। অবাক কণ্ঠেই শুধাল,
“আপনি আমার জন্য চিন্তা করছিলেন?”
শীর্ষ হঠাৎ দমে গেল। নিজের এতক্ষণের কর্মকান্ডের কথা ভেবে নিজেই আশ্চর্য হলো। সে সত্যিই চিন্তা করছিল এই মেয়েটির জন্য? এর জন্য সে ভয়ে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে উঠেছিল? কেন এমন হয়েছিল? শীর্ষ গভীর ভাবনায় নিবদ্ধ হলো। ত্রয়ীর প্রশ্নের কোনোরূপ উত্তর না দিয়ে গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে। আবারও শুরু করল গাড়ি চালনা। এরপর আর সে হাসপাতালে গেল না। গাড়িটা সোজা এনে থামালো বাড়ির সম্মুখে। ত্রয়ী এমনিই অধৈর্য হয়ে বসেছিল শীর্ষের সান্নিধ্য থেকে বাঁচা এবং বাড়িতে ফেরার জন্য। বাড়ির অভিমুখে গাড়িটা থামতেই তড়িঘড়ি করে নেমে দাঁড়ালো সে। শীর্ষ একবার তাকালো সেদিকে। অতঃপর আবারও গাড়ি চালনা শুরু করল। মন, মস্তিষ্ক অস্থির হয়ে উঠেছে তার। সে কেন ঐ মেয়েটির জন্য চিন্তা করছিল? কেন ঐ মেয়েটির জ্ঞান হারানোতে তার হৃদয়ে ব্যাকুলতা হানা দিয়েছিল? কই আগে তো এমন কখনো ঘটেনি। আগে তো কোনো নারীর জন্য তার হৃদয় এত উতলা হয়নি। তাহলে এই বোকাশোকা মেয়েটির জন্য কেন এমন হলো? তবে কি সে প্রেমে পড়েছে ত্রয়ীর? ভালোবেসে ফেলেছে তাকে? শীর্ষ হঠাৎ গাড়িতে ব্রেক কষলো। বুকের ভিতরটা আন্দোলিত হলো যেন। শীর্ষ হাত রাখলো সে আন্দোলনরত বুকে। অবাক হয়ে বলল,
“প্রেমে পড়লাম তো পড়লাম শেষ পর্যন্ত কিনা ঐ ব’ল’দী’র প্রেমে পড়লাম?”
অম্বরের সোনালী সূর্যটা গা ঢাকা দিয়েছে অনেক আগেই। চারদিকটা আঁধারের মেলায় বিলীন হতে শুরু করেছে একটু একটু করে। শীর্ষ তার শহরের বাহিরের ফ্ল্যাটের অভিমুখে এসে দাঁড়ালো কেবল। হাত উঁচিয়ে বাজালো কলিংবেলটা। প্রায় সাথে সাথেই দরজাটা খুলে গেল। চোখের সম্মুখে দৃশ্যমান হলো নয়ন। শীর্ষ নয়নের দিকে এক পলক দৃষ্টি দিয়ে ঢুকলো ভিতরে। দেখা পেল রবি এবং আলভীর। কক্ষে খাট থাকার পরেও দুজনেই মেঝে দখল করে শুয়ে আছে তারা। শীর্ষের দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,
“সমস্যা কি তোদের? এই রাত বিরাতে বাড়িঘর ছেড়ে এখানে এসেছিস কেন? আবার আমাকে ডেকেছিস!”
শীর্ষের কথা শেষ হতে না হতেই তার পিছন থেকে নয়ন বিরস কণ্ঠে বলল,
“আমাকেও ডেকেছে স্যার। আসতে না চাইলে বলেছে আমার চাকরি নাকি খেয়ে দিবে।”
শীর্ষ কপাল কুঁচকে তাকালো আলভীর দিকে। আলভী চোখ ছোট ছোট করল। বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আমার দিকে ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন? আমি কি জানি? রবি ডেকেছে তোদের সবাইকে। ওকে জিজ্ঞেস কর।”
এবার এক যোগে সকলের দৃষ্টি গিয়ে নিবদ্ধ হলো রবির উপর। বেচারা মলিন মুখশ্রী নিয়ে বসেছিল। সবাই তাকানোতে হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল সে। অতঃপর বলল,
“বাবা আমাকে চাকরি খুঁজতে বলেছেন। তিনি নাকি আর এক টাকাও আমার পিছনে খরচ করতে পারবেন না।”
আলভী মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“এ আর নতুন কি? আঙ্কেল তো তোকে রোজই চাকরি খুঁজতে বলেন।”
“এবার গুরুতর। সেদিন ম’দ খেয়ে ভাই ডেকেছিলাম না তারই শাস্তি এটা।”
“তাহলে ঠিক আছে।”
নয়ন হুট করেই বলে উঠল কথাটা। রবি রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো তার দিকে। রুক্ষ স্বরে শুধাল,
“কি ঠিক আছে?”
নয়ন আমতা আমতা শুরু করল। মেকি হেসে বলল,
“ঐ আর কি…কিছু না।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো শীর্ষ। রবির পাশ ঘেঁষে বসতে বসতে বলল,
“তোকে তো আমি আগেই বলেছিলাম আমাদের কোম্পানিতে যোগদান কর। কিন্তু তুই ই আসতে চাইলি না। বললি মামু, দাদু, বন্ধু, চাচার শক্তিতে তুই চাকরি করবি না। সৎভাবে আর পাঁচটা মানুষের মতো যখন চাকরির পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাবি তখনই করবি।”
রবি মলিন হাসলো। হতাশ কণ্ঠে জবাব বলল,
“চেয়েছিলাম তো তাই। ভেবেছিলাম অর্থের জোর, কোনো সুপারিশ কিংবা কারো ক্ষমতায় চাকরি নেব না। সৎভাবে নিজের যোগ্যতায় চাকরি নেব। কিন্তু এদেশে বোধহয় তা আর সম্ভব হবে না। এ দেশে চাকরি পেতে হলে অর্থ, বাপ-দাদার ক্ষমতা দেখাতে হবে আর নয়তো সারাজীবন বেকারত্বকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হবে।”
শীর্ষ হাত রাখলো রবির কাছে। হালকা হেসে বলল,
“তুই যেভাবে চেয়েছিস সেভাবেই চাকরি হবে তোর। আমাদের কোম্পানিতে নতুন কিছু লোক নেওয়া হবে। আবেদন করিস আগামীকাল। আমি অন্যদের যেভাবে চাকরি দেব ঠিক তোকেও সেভাবেই দেব। যোগ্যতা অনুসারে। আশা রাখছি তোর চাকরিটা হবেই।”
রবি একটু হলেও আশার আলো খুঁজে পেল। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“সত্যি ভাই?”
“সত্যি, আমি অবশ্য এ কথা আগেও তোকে বলেছিলাম। কিন্তু তুই আমাকে বিশ্বাস করতে পারিসনি। তুই ভেবেছিলি তুই আবেদন করলে আমি একটু হলেও একচোখামি করে তোকে চাকরি দেব।”
রবি মাথা নাড়ালো। মৃদুস্বরে বলল,
“তা ঠিক।”
শীর্ষ এবার উঠে দাঁড়াল। সকলের দিকে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলল,
“আচ্ছা আমি তাহলে আসছি এখন। বাড়ি ফিরতে হবে।”
“আজ ভেবেছি আমরা তিনজনই এখানে থাকব। তুইও থেকে যা আমাদের সাথে।”
আলভী বলল কথাটা। শীর্ষ হাত হাত ঘড়িটার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“না বাড়িতে যেতে হবে। কাজ আছে।”
আঁধারে ঢাকা রজনী। চারদিকটা নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। খান বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে কাঁদা। শীর্ষ রাত্রির এই ক্ষণে দরজা ঠেলে ঢুকলো বাড়ির ভিতরে। লম্বা লম্বা পা ফেলে গিয়ে দাঁড়ালো ত্রয়ীর কক্ষের সম্মুখে। হাত উঁচিয়ে আলতোভাবে ধাক্কা দিলো দরজায়। তবে দরজাটা খুললো না মেয়েটি। হয়তো ঘুমিয়েছে সে। শীর্ষ ফের দরজায় আঘাত করল। মৃদু স্বরে ডাকল,
“বালির বস্তা! বালির বস্তা!”
এবারে দরজাটা খুলে গেল। শীর্ষের চোখের সম্মুখে ঘুমঘুম মুখশ্রী নিয়ে প্রকট হলো ত্রয়ী। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,
“এত রাতে ডাকছেন কেন? কিছু বলবেন?”
অনুরাগে তুই পর্ব ২১
শীর্ষ যেন থমকে গেল এক মুহূর্তের জন্য। মেয়েটির ঘুম জড়ানো ফোলা ফোলা মুখশ্রী, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে ললাট জুড়ে। এই মুহূর্তে কি স্নিগ্ধই না লাগছে তাকে! মোটা কণ্ঠস্বরটা যেন নে’শা ধরিয়ে দিচ্ছে। শীর্ষের হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো। তবে সে নিজেকে সামলাল। পা চালিয়ে ত্রয়ীর পাশ কাটিয়ে ঢুকলো কক্ষের ভিতরে। মেয়েটির হৃদয় কাঁপলো। এক মুহুর্তে চোখ দুটো থেকে সকল ঘুম ঘুম ভাব ছুটে পালালো পোঁটলাপুটলি নিয়ে। মস্তিষ্কে হানা দিলো দুপুরের সেই থা’প্প’ড়ে’র ঘটনা। এ কথা তো সে ভুলেই বসেছিল। লোকটা কি তবে সেই থা’প্প’ড়ে’র প্রতিশোধ নিতে এত রাতে তার কক্ষে হানা দিয়েছে? হতেও পারে। এমন কিছু হবে জানলে সে দরজাই খুলতো না। ত্রয়ীর ভাবনার মধ্যেই শোনা গেল শীর্ষের কণ্ঠস্বর। গম্ভীর কণ্ঠে সে বলল,
“এদিকে আয়।”