অনুরাগে তুই পর্ব ২৪
সাদিয়া শওকত বাবলি
“ও ওর বাপের মেয়ে। ওর জন্মদিনের পার্টিতেই লাল পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গিয়ে দেখ ও সব জানে। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে ও নিজেও লাল পানি সেবন করে কিনা। দেখিস না আজকাল বড়ো লোকদের মেয়েরা এক একটা আদরে বাদর তৈরি হয়। নাইট ক্লাব, লাল পানি, পুরুষ সঙ্গ এসব তাদের কাছে নগন্য বিষয়।”
আলভীর হৃদয়ে ভয় হানা দিলো। এসব বিষয়গুলো তো সে ভাবেনি। আজকাল বড়ো লোকদের অনেক ছেলেমেয়েকেই বিগড়ে যেতে দেখা যায়। তারা নিজেদের মধ্যে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে ধারণ করে অতি আধুনিক হয়ে উঠতে চায়। নাইট ক্লাব, মা’দ’ক, পুরুষ সঙ্গ তাদের নিকট অতি সাধারণ বিষয়। মেহেরও কি তেমন শ্রেনীর কেউ? হতেও পারে। তার বাড়িতে, তার উপস্থিতিতে, তারই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মা’দ’কে’র ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাছাড়া তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানটাও তো পশ্চিমদের মতোই আয়োজিত ছিল। সেখানে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণীরই দেহ আবৃত ছিল পশ্চিমাদের ন্যায় সংকীর্ণ পোশাকে। আলভী তাকালো মেহেরের দিকে। তার হৃদয় আর্তনাদ করে চেয়ে উঠল মেহের যেন রবির ভাষ্যের ন্যায় কেউ না হয়।
ষড় ঋতুর এদেশে এখন গ্রীষ্মকাল। চারদিকে কেমন একটা উষ্ণভাব বিরাজমান। সেই সাথে উত্তপ্ত সূর্যের চড়া রশ্মি তো আছেই। আর এই উত্তপ্ততাকে মাথায় নিয়েই জনজীবন বয়ে চলছে নিজের নিয়মে। ত্রয়ী গরমে নাজেহাল হয়ে ঢুকলো শ্রেণীকক্ষে। গেট পর্যন্ত বাড়ির গাড়িতেই এসেছে। গাড়িতে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বিদ্যমান থাকায় তেমন গরমের আভাস পায়নি। কিন্তু গেট থেকে শুধু শ্রেণীকক্ষ, এইটুকু পথ আসতেই ঘেমেনেয়ে একশা অবস্থা মেয়েটার। সূর্যের দুর্দান্ত তাপে ফরসা মুখটাও কেমন রক্তিম হয়ে উঠেছে। ত্রয়ী শ্রেণীকক্ষের সামনে দাঁড়িয়েই পুরো কক্ষে চোখ বুলালো। কক্ষের একদম শেষের দিকে ফ্যানের নিচে একটা বেঞ্চ এখনো খালি পড়ে আছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে বসলো সে বেঞ্চে ফ্যানের নিচে। ঘাম মুছতে ওড়নাটার এক কোনা তুলে গলায় রাখতেই তার পাশে এসে বসলো কেউ। ত্রয়ী ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো। দৃশ্যপটে ভেসে উঠলো এক সুশ্রী তরুণীর মুখশ্রী। হ্যাংলা পাতলা গড়নের দারুন এক কন্যা সে। শ্যামবর্ণা গায়ের রং-টা যেন মেয়েটির মুখশ্রী জুড়ে একটি আলাদাই মায়া ছড়িয়ে রেখেছে। ত্রয়ী তাকাতেই মেয়েটি এক টুকরো মিষ্টি হাসি উপহার দিলো তাকে। সহজ গলায় বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“যা গরম পড়েছে। মনে হচ্ছে যেন ফ্যানের নিচ থেকে সরলেই সিদ্ধ হয়ে যাব।”
বিনিময়ে ত্রয়ীও হাসলো। তবে নিজের অন্তর্মুখী ভীত স্বভাবের নিমিত্তে কণ্ঠ বাড়িয়ে নিজে থেকে কোনো বাক্য উচ্চারণ করল না। মেয়েটিই ফের বলল,
“যাইহোক আমি আরফা। তুমি?”
এ পর্যায়ে ত্রয়ী নিজের সংকোচ ভেঙে বলল,
“আমি ত্রয়ী।”
“বাহ সুন্দর নাম। তা এই কলেজে নতুন বুঝি?”
ত্রয়ী মাথা নাড়িয়ে ইতিবাচক জবাব দিলো। আরফা ওষ্ঠে হাসির ধারা বহাল রেখেই বলল,
“এই জন্যই আগে তেমন একটা দেখিনি তোমাকে। তবে তুমি কিন্তু ভারী মিষ্টি দেখতে।”
“ধন্যবাদ। আপনিও দেখতে ভীষণ মিষ্টি।”
আরফা কপাল কুঁচকাল। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“কি আপনি আপনি করছো? আমাকে কি তোমার সিনিয়র মনে হয়? আমরা এক ক্লাসে পড়ি। আমাকে তুই করে বলবে তুই, আমিও আজ থেকে তোমাকে তুই করেই বলব।”
ত্রয়ী মাথা নাড়ালো। সাথে আফরা মেয়েটার প্রতি তার হিং’সাও জন্মালো বেজায়। মেয়েটা কি মিশুক এবং প্রাণবন্ত। এই অল্প সময়ের মধ্যেই কেমন সহজ গলায় কথা বলছে তার সাথে। আপন আপন ব্যবহার করছে। ত্রয়ী কেন এসব পারে না? সে কেন অন্তর্মুখী ভীত স্বভাবের? কেন তার সবকিছুতে এত ভয়? একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতেও লজ্জা, সংকোচে মুষড়ে পড়ে। এই যেমন একটু আগে আরফার ক্ষেত্রেও পড়েছিল। ইসস, সেও যদি আরফার মতো হতো। ভয় না পেয়ে সবার সাথে খুব সহজে মিশতে পারতো। তবে জীবনটা বোধহয় আর একটু সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারতো। ত্রয়ী এবং আরফার কথোপকথনের মধ্যেই তাদের দিকে এগিয়ে এলো রাকিব। কণ্ঠ বাড়িয়ে আরফাকে বলল,
“কি রে তুই এখানে কি করছিস?”
আরফা তাকালো রাকিবের দিকে। কপালে ভাঁজ ফেলে জবাব দিলো,
“দেখছিস না ওর সাথে কথা বলছি।”
রকিব ঘুরে গিয়ে বসলো ত্রয়ী এবং আরফার মুখোমুখি একটি বেঞ্চে। ত্রয়ীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুধাল,
“সেদিনের কথা মনে আছে?”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো। ভদ্র স্বরে শুধাল,
“কোন কথা?”
“সেদিন যে বলেছিলাম আমি তোমার বন্ধু হতে চাই।”
“আমি পুরুষ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করি না।”
ত্রয়ীর নরম কণ্ঠস্বর। আরফা চোখ বড়ো বড়ো করল। অবাক কণ্ঠে বলল,
“এই তুই কি রাকিবের বন্ধুত্বের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করলি? তাও এত নরম ভাবে? এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখলাম কাউকে এভাবে নরম গলায় প্রত্যাখ্যান করতে। তুই কি মানুষ নাকি এলিয়েন?”
ত্রয়ী অপ্রস্তুত হলো কিঞ্চিৎ। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে তাকালো আরফার দিকে। তবে রাকিব তাদের একজনের কথাকেও গায়ে মাখলো না। বরং ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“তুই পুরুষ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব না করলেও আমি মেয়ে মানুষের সাথে করি। সেই অনুযায়ী আমি তোকে মন থেকে আমার বন্ধু বানিয়ে নিয়েছি। এখন আর তা পাল্টানো যাবে না।”
ত্রয়ীর ভিতর থেকে দ্বিধাবোধ সরে গিয়ে এবার হানা দিলো একরাশ বিরক্তি। ছেলেটাকে বলছে সে পুরুষ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে না। তারপরেও গায়ে পড়ে এসে বন্ধুত্ব করতে চাইছে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো ত্রয়ীর। তবে সে মুখে প্রকাশ করল না কিছুই। এই ছেলের সাথে কথা বাড়ানোই বেকার। তার থেকে চুপ থাকাই বোধ হয় শ্রেয়।
অম্বরে স্থান করে নেওয়া সূর্যটা ঘুরতে ঘুরতে মাথার উপরে চলে এসেছে। জানান দিচ্ছে দুপুরের। সেই সাথে সে তার উত্তপ্ততাও ছড়িয়ে দিয়েছে পূর্বের তুলনায়। জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে নিজের উপস্থিতিতে। শীর্ষের ঘুম ভেঙেছে কেবল। গতকাল মধ্যরাতে বাড়িতে ফিরে আর ঘুমায়নি সে। ঘুমিয়েছিল এই ভোরের দিকে। যার দরুন ঘুম থেকে উঠতে উঠতে এত দেরি। শীর্ষ কপালে ভাঁজ ফেলে নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো। এগিয়ে গেল খাবার কক্ষের দিকে। একটা চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়লো তাতে। গলা উঁচিয়ে বলল,
“মা খাবার দাও।”
ফাহমিদা বেগম রান্নাঘরে রান্নার কাজ করছিলেন। ইতোমধ্যে অনেক খুঁজে খুঁজে একটি মেয়েকে নিজের সাহায্যের জন্য রেখেছেন তিনি। তাদেরই গ্রামের মেয়ে। চার পাঁচটা ভাই-বোন। অভাবের তাড়নায় বাবা মা ধরে ধরে এখানে ওখানে কাজে দিয়ে দিচ্ছিলেন। সেই সংবাদ ফাহমিদা বেগমকে কর্ণে পৌঁছাতেই তিনি চটজলদি মেয়েটিকে আনিয়ে নিয়েছেন নিজের বাড়িতে। চৌদ্দ পনেরো বছরের প্রাণবন্ত এক কিশোরী সে। ছিপছিপে গড়নের হ্যাংলা পাতলা মেয়েটা, গায়ের রংটা একটু চাপা হলেও চেহারার আকৃতি আকর্ষণীয়। কণ্ঠে চঞ্চলতা। নাম তার নুড়ি। শীর্ষের কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ফাহমিদা বেগম ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। প্লেটে রুটি তরকারি সাজিয়ে ধরিয়ে দিলেন নুড়ির হাতে। নুড়ি কিছুটা অবাক হলো। কপাল কুঁচকে শুধাল,
“এই দুপারকালে রুটি তরকারী কেডায় খাইবো আম্মা?”
“শীর্ষ, আমার গুনধর পুত্র খাবে। যা গিয়ে দিয়ে আয়।”
নুড়ি আর দ্বিরুক্তি করল না। চুপচাপ শীর্ষকে খাবারটা দিয়ে চলে গেল সে। শীর্ষ খাওয়া শুরু করতেই সদর দরজা থেকে বাড়িতে প্রবেশ করল ত্রয়ী, রিমা এবং রিমার বান্ধবী শিলা। ত্রয়ী বাড়িতে প্রবেশের পরপরই নিজ কক্ষে চলে গেলেও রিমা আর শিলা গেল না। তারা এগিয়ে এলো শীর্ষের দিকে। শিলা চোখে মুখে কিঞ্চিৎ লাজুক ভাব ফুটিয়ে তুলে শুধাল,
“কেমন আছেন ভাইয়া?”
“ভালো।”
শীর্ষের থমথমে কণ্ঠের জবাব। সে একবার চোখ তুলে তাকালো না মেয়েটির দিকে। পালটা প্রশ্ন করে এও জিজ্ঞেস করল না ‘তুমি কেমন আছো?’ শিলা আশাহত হলো। শীর্ষকে প্রথম যেদিন সে কলেজে দেখেছিল সেদিনই মন দিয়ে বসেছিল। অনেকটা শীর্ষের জন্যই তার রিমার সাথে বন্ধুত্ব করা। আর তারপর এ বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু। কিন্তু এই লোক তো তাকে পাত্তাও দেয় না। কখনো তার দিকে তাকিয়েও দেখে না। শিলা তবুও একটু সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আশা করল শীর্ষের দিক থেকে কোনো প্রশ্ন আসবে। কিন্তু তাকে নিরাশ করে শীর্ষ টা টু কোনো শব্দ করল না। সে নিজের ভাবে খেয়ে যাচ্ছে। যেন তার আশেপাশে আর কোনো মানবের অস্তিত্ব নেই। এই পুরো কক্ষ জুড়ে সে শুধু একাই রয়েছে। ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলল শিলা। ফের নিজে থেকেই শুধাল,
“আপনারা নাকি কয়েকদিন পর আমাদের কলেজ মাঠে ক্রিকেট খেলবেন?”
প্রত্যুত্তরে শীর্ষ কিছু বলার পূর্বেই ত্রয়ী কক্ষ থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। শীর্ষের পিছন থেকেই রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো সে। তৎক্ষণাৎ খাওয়া থেমে গেল শীর্ষের। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো সে ত্রয়ীর দিকে। মেয়েটা রান্নাঘর অব্দি যাওয়া পর্যন্ত ওভাবেই চেয়ে রইল এক দৃষ্টে। অতঃপর ত্রয়ী রান্নাঘরে প্রবেশ করে তার দৃষ্টির আড়াল হতেই গলা উঁচালো। কণ্ঠ বাড়িয়ে বলল,
“পানি দিয়ে যা বালির বস্তা।”
পানির জগ, গ্লাস দুটোই শীর্ষের সম্মুখে টেবিলেই ছিল। সে পানি চাইতেই শিলা ব্যস্ত হয়ে উঠল। তাড়াহুড়ো করে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিলো শীর্ষের দিকে। নিচু কণ্ঠে বলল,
“এই নিন আপনার পানি।”
ত্রয়ী রান্নাঘর থেকে উঁকি দিলো। শিলাকে পানি এগিয়ে দিতে দেখে আর এদিকে এলো না সে। শীর্ষ বিরক্ত হলো বেজায়। এই মেয়েকে সে পানি দিতে বলেছে? সব সময় সময় পাকনামি। শীর্ষ কপাল কুঁচকাল। বিরবিরিয়ে বলল,
“বা*ল।”
শীর্ষ আর পানিটা খেল না। মনের মধ্যে একরাশ বিরক্তি নিয়ে খাওয়ায় মনোনিবেশ করল। ত্রয়ী এগিয়ে গেল ফাহমিদা বেগমের দিকে। ওষ্ঠে আলতো হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল,
“আন্টি আমাকেও কিছু কাজ দিন। আমিও করি।”
বিনিময়ে ফাহমিদা বেগমও ওষ্ঠ প্রসারিত করলেন। মাথা দুলিয়ে বললেন,
“তোমাকে কিছু করতে হবে না মা। তুমি বরং গিয়ে গোসল সেড়ে বিশ্রাম নাও।”
“ঐ একটু কলেজে যাই তারপর তো সারাদিন বিশ্রাম নিয়েই কাটাই আন্টি। এত বিশ্রাম নিতে নিতেও আর ভালো লাগে না। তার থেকে বরং আপনি আমাকে কোনো কাজ দিন। আমারও একটু সময় কাটুক, আর আপনারও সাহায্য হোক।”
ফাহমিদা বেগম মিষ্টি হাসলেন এবার। একটা কফির মগ ত্রয়ীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“আচ্ছা এত কাজ কাজ যখন করছো তখন তোমাকে একটা কাজ দিচ্ছি। তুমি এটা শীর্ষকে দিয়ে এসো।”
ত্রয়ী হতাশ হলো। কাজ দিতে বলেছে বলে ফাহমিদা বেগম তাকে এই কাজ দিবেন? যে লোকটার থেকে সে দূরে দূরে থাকতে চাইছে, যার চোখের সম্মুখে যেতে চাইছে না এরা সবাই মিলে তাকে তার সম্মুখে পাঠাতেই তৎপর। কপাল! সবাই কপাল। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। ফাহমিদা বেগমের হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে এলো খাবার কক্ষে। এতক্ষণে রিমা আর শিলাও ভিতরের দিকে চলে গেছে। ত্রয়ী কফির মগটা রাখলো খাবার টেবিলের উপর। শীর্ষ ঘাড় বাঁকিয়ে তাকলো তার দিকে। সাথে সাথে দৃষ্টি জোড়া থমকে গেল তার।
হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো পূর্বের তুলনায়। তীব্র গরমে ঘেমেনেয়ে একশা অবস্থা মেয়েটির। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মনে হচ্ছে যেন একটু ছুঁয়ে দিলেই বিন্দু গুলো দুর্বল হয়ে ঢলে পড়বে। সেই সাথে গরমের দাপটে মেয়েটির ফর্সা মুখশ্রীও কিছুটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। শীর্ষের মনে হচ্ছে যেন এ ত্রয়ী নয়। কোনো স্নিগ্ধ পদ্ম পুষ্প ফুটে রয়েছে তার দৃশ্যপটে। ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত মুখশ্রীতেও কাউকে এত সুন্দর লাগতে পারে জানা ছিল না তার। শীর্ষের দৃষ্টি আরও গাঢ় হলো। সে খেয়াল করল ত্রয়ীর চুলের ভাজ থেকে মুক্ত দানার ন্যায় ঘাম বিন্দুরা গড়িয়ে পড়ছে। তারপর সে ঘাম বিন্দুরা মিলেমিশে এক চিকন জলস্রোতের রূপ নিয়ে গাল বেয়ে নামছে চিবুকে, চিবুক বেয়ে গলায়, আর গলা বেয়ে……ঢোক গিলল শীর্ষ। তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো অন্যত্র। তার হৃদয়ের অবস্থা বেগতিক। ইতোমধ্যে তার পৌরুষ সত্ত্বা নাড়া দিতে শুরু করেছে ভিতরে। নিষিদ্ধ কিছু চাওয়ারা টগবগ করে ফুটে উঠতে শুরু করেছে মস্তিষ্ক জুড়ে। শীর্ষ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা চালালো। দাঁড়িয়ে পড়লো চেয়ার ছেড়ে। যত্রতত্র পায়ে হাঁটা ধরলো নিজের কক্ষের দিকে। তবে কক্ষের সম্মুখে আসতেই সে খেয়াল করল কফির মগটা আনা হয়নি। শীর্ষ দরজার সামনে দাঁড়িয়েই গলা উঁচিয়ে বলল,
“মা কফিটা নুড়িকে দিয়ে আমার কক্ষে পাঠিয়ে দাও?”
ত্রয়ী শুনলো শীর্ষের কথা। রান্নাঘরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখলো ফাহমিদা বেগম এবং নুড়ি দু’জনেই ব্যস্ত। এই সময়ে তাদের না জ্বালানোটাই শ্রেয়। অগত্যা ত্রয়ীই কফির মগটা নিয়ে এলো শীর্ষের কক্ষের সম্মুখে। হাত উঠিয়ে দরজায় টোকা দিতেই ভিতর থেকে ভেসে এলো,
“আয়।”
শীর্ষ মাত্রই বসেছে বিছানায়। ত্রয়ী এগিয়ে গেল তার দিকে। কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার কফি।”
যে মেয়ের জন্য পালিয়ে আসা সেই মেয়েই এবার কক্ষে হানা দিয়েছে। শীর্ষ চোখ তুলে তাকালো মেয়েটির দিকে। আবারও নজর গেল গলায়। তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি নামিয়ে নিল সে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“ওড়না ঠিক কর।”
ত্রয়ী চমকাল, ভরকালো। তার ওড়না এলোমেলো হয়ে গেছে তাও এক পুরুষের দৃষ্টি সম্মুখে? মেয়েটা চটজলদি তাকালো নিজের ওড়নার দিকে। সাথে সাথে ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো। কই, তার ওড়না তো ঠিকই আছে। তাহলে শীর্ষ হঠাৎ এমন কথা বলল কেন? ত্রয়ী ভ্রু কুঁচকে রেখেই নিজেকে আর একবার পর্যবেক্ষণ করল। অতঃপর ঠিক করা ওড়নাটাই টেনেটুনে আরও ঠিক করতে তৎপর হলো। শীর্ষ উঠে দাঁড়াল। ত্রয়ীর গলার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“ওড়না ঠিক বলতে আমি তোর গলা ঢাকতে বলেছি।”
“গলা ঢাকতে!”
অনুরাগে তুই পর্ব ২৩
ত্রয়ীর কণ্ঠে বিস্ময়। শীর্ষ হাত উঁচিয়ে একটা আঙ্গুল তাক করল মেয়েটির গলার দিকে। একটু একটু করে আঙ্গুলটা নিয়ে গেল গলার কাছে, খুব কাছে। তবে সে আঙ্গুল স্পর্শ করল না ত্রয়ীকে। শীর্ষের দৃষ্টিতে কেমন মা’দ’ক’তা হানা দিলো। শীতল কণ্ঠে সে বলল,
“এখন থেকে আমার সামনে সবসময় গলা ঢেকে আসবি। নয়তো তোর ঐ ফরসা গলায় ভ্যাম্পায়ার সিল পড়তে বেশি সময় লাগবে না।”