অনুরাগে তুই পর্ব ২৫

অনুরাগে তুই পর্ব ২৫
সাদিয়া শওকত বাবলি

শীর্ষের দৃষ্টিতে কেমন মা’দ’ক’তা হানা দিলো। শীতল কণ্ঠে সে বলল,
“এখন থেকে আমার সামনে সবসময় গলা ঢেকে আসবি। নয়তো তোর ঐ ফরসা গলায় ভ্যাম্পায়ার সিল পড়তে বেশি সময় লাগবে না।”
ভ্যাম্পায়ার মানে অতিপ্রাকৃত কিছু। যার জীবনধারণই অন্য প্রাণীর রক্ত চুষে, অন্য প্রাণীর অস্তিত্বকে বিলীন করে। ত্রয়ী টিভিতে দেখেছিল ভ্যাম্পায়ারকে। কিন্তু যতদূর সে জানে বাস্তবে এই প্রাণীর কোনো অস্তিত্ব নেই। তাহলে শীর্ষ হঠাৎ এই প্রাণীর নাম বলল কেন? আর এই ভ্যাম্পায়ার সিলটাই বা কি? শীর্ষ কি কোনোভাবে তাকে মে’রে ফেলার হুমকি দিচ্ছে? যেমন ভ্যাম্পায়ার মানুষকে মে’রে ফেলে। গলায় দাঁত বসিয়ে রক্ত চুষে সেভাবে? ত্রয়ী গলায় হাত দিলো। ভীত হলো তার হৃদয়। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল,

“আপনি সব সময় আমার সাথে এমন কেন করেন? আমি কি দোষ করেছি?”
শীর্ষের চোখ ছোট ছোট হলো। এক ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
“আমি কখন বললাম তুই দোষ করেছিস?”
“তাহলে আপনি আমাকে মা’র’তে চাইছেন কেন?”
শীর্ষ অবাক হলো। সে আবার কখন এই মেয়েকে মা’র’তে চাইল? মেয়েটির ঘর্মাক্ত মুখশ্রী দর্শনে একটু অনুভূতির জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল মাত্র। তাই বলে এই মেয়ে তাকে ঘাতক বানিয়ে দিবে? ঘাতক তো সে নয়, ঘাতক তো এই ত্রয়ী নামক মেয়েটি। ভয়ংকর এক ঘাতক এই রমনী। তাই তো এত বোকাসোকা হয়েও তার মতো এক শক্তপোক্ত পুরুষের হৃদয়কে কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। তাকে অনুভূতির জোয়ারে ভাসিয়ে ধীরে ধীরে উন্মাদ করে তুলছে। শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। থমথমে কণ্ঠে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি কখন তোকে মা’র’তে চাইলাম?”
“মাত্রই তো মা’র’তে চাইলেন। গলায় ভ্যাম্পায়ার সিল বসাতে চাইলেন।”
শীর্ষ এতক্ষণে বুঝলো বিষয়টি। ভ্যাম্পায়ার সিল পড়া বলতে এই মেয়েটি তাকে মে’রে ফেলা বুঝেছে? আলতো হাসির রেখা ফুটে উঠল তার ওষ্ঠ জুড়ে। কোমড় ভাঁজ করে সে ঝুঁকে এলো নিচের দিকে। নিজের মুখ মন্ডলটা ঠিক ত্রয়ীর মুখশ্রী বরাবর রেখে বলল,
“ভ্যাম্পায়ার সিল পড়া মানে আমি তোকে মে’রে ফেলা বুঝাইনি।”
ত্রয়ী পলক ঝাপটালো। বোকা বোকা কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“তাহলে কি বুঝিয়েছেন?”
“আমি বুঝিয়েছি….”

এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। নিজের মুখ মন্ডলটা আর একটু এগিয়ে আনলো ত্রয়ীর মুখশ্রীর দিকে। দুজনের মধ্যকার দূরত্ব এখন খুব কম। ত্রয়ী আড়ষ্ট হলো। তৎক্ষণাৎ দুই কদম পিছিয়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ালো। শীর্ষ মৃদু হাসলো। সে আবার দুই কদম সামনের দিকে এগিয়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ঘুচালো। ফের ত্রয়ীর মুখশ্রী বরাবর নিজের মুখটা রেখে মোহাবিষ্ট কণ্ঠে বলল,
“ধর তোর গলা আর আমার দাঁত….”
এইটুকু বলতেই ত্রয়ী ফট করে বলে উঠল,
“আপনার দাঁত আমার গলা বা ঘাড়ে বসবে না। ভ্যাম্পায়ারদের মতো অত ধারও আপনার দাঁতে নেই।”
শীর্ষের মেজাজ বিগড়ালো। ত্রয়ীর হঠাৎ এমন বাক্যে অনুভূতির জোয়ারে ভাটা পড়লো তার। কতটা অনুভূতি নিয়ে মোহাবিষ্ট হয়ে সে কথাটা বলতে গিয়েছিল আর এই মেয়ে কিনা বলে বসলো তার দাঁতে ধার নেই? শীর্ষ ভেবে পায় না এমন একটা বোকা মেয়ের প্রেমে সে কিভাবে পড়লো। এই মেয়ের মধ্যে তো কোনটা হুমকি মিশ্রিত বাক্য, কোনটা ভালো বাক্য আর কোনটা প্রেম মিশ্রিত বাক্য তাই বোঝার সক্ষমতা নেই। অবশ্য যে মেয়ে একটা সোজা কথা ভালোভাবে বোঝে না সে প্রেমময় বাক্য বুঝবে তা আশা করাটাও বোকামি। সাধারণ দৃষ্টিতে তাকালেও আড়ষ্ট হয়ে পড়ে এই মেয়ে।

শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কটমট করে শুধাল,
“আমার কামড় খেয়ে দেখেছিস কখনো? তাহলে বুঝলি কিভাবে আমার দাঁতে ধার আছে কি নেই।”
ত্রয়ী ততটা ভাবলো না। হুট করেই উত্তর দিলো,
“কামড় খেতে হবে কেন? দেখেই তো বোঝা যায় আপনার দাঁতে ধার নেই। আপনার দাঁত ভোতা।”
এইটুকু বলেই থেমে গেল ত্রয়ী। কি বলতে সে কি বলে ফেলেছে মস্তিষ্কে নাড়া দিলো হঠাৎ। ভীত হয়ে পড়লো হৃদয়। সন্ত্রস্ত নয়নে তাকালো শীর্ষের দিকে। শীর্ষের চোখ মুখ ইতোমধ্যে শক্ত হয়ে উঠেছে। চোখ দুটোও কেমন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ত্রয়ী ফাঁকা ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার পূর্বেই শীর্ষ কণ্ঠে ধ্বনি তুললো। হুংকার ছেড়ে বলল,

“আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ গাধী। তোর মুখটা দেখলেই আমার রাগ উঠছে।”
শীর্ষের হুংকারে ঈষৎ কেঁপে উঠল ত্রয়ীর কায়া। সে আর ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পেল না। কোনো মতে হাতের কফির মগটা কক্ষে অবস্থানরত টেবিলে রেখে যত্রতত্র পায়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। ত্রয়ীকে শীর্ষের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেই ভ্রু কুঁচকাল শিলা। সে দাঁড়িয়ে ছিল রিমার কক্ষের দরজায়। শীর্ষের দুই কক্ষ আগে রিমার কক্ষের অবস্থান। শীর্ষ তখন গলা উঁচিয়ে নুড়িকে কফি নিয়ে আসার কথা বলার কিছুক্ষণ পরই এখানে এসে দাঁড়িয়েছে সে। আশা ছিল নুড়ি এখান থেকে কফি নিয়ে যাওয়ার সময় তার হাত থেকে কফিটা রেখে দিবে। তারপর সে-ই শীর্ষের কক্ষে যাবে কফি নিয়ে। এই সুযোগে শীর্ষের সাথে একটু কথাও বলা যাবে, আর তার কাছাকাছি যাওয়ার প্রায়াসও চালানো যাবে। শিলা ভ্রু কুঁচকে রেখেই আবার ভিতরে গেল। রিমার দিকে তাকিয়ে শুধাল,

“তোদের বাড়ির ঐ নতুন মেয়েটা শীর্ষ ভাইয়ের রুমে গিয়েছিল কেন রে?”
রিমা মোবাইল টিপতে টিপতে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
“গিয়েছিল হয়তো কোনো কাজে। মায়ের সাথে আজকাল বাড়ির টুকটাক কাজ করে ও।”
রিমা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জবাবটা দিলেও শিলা নির্লিপ্ত থাকতে পারলো না। বুক জ্বলছে তার। নারীরা স্বভাবতই তার প্রিয় পুরুষের আশেপাশে অন্য নারীকে সহ্য করতে পারে না। শিলাও পারছে না। হয়তো শীর্ষের সাথে তার কোনো প্রণয়ের সম্পর্ক নেই, শীর্ষ তাকে ভালোবাসা তো দূরে থাক পছন্দও করে না। কিন্তু শিলা তো করে। সে তো ভালোবাসে শীর্ষকে। হৃদয়ে হিংসাত্মক মনভাব জেগে উঠল মেয়েটার। না চাইতেও ত্রয়ী তার অপছন্দের কেউ হয়ে উঠল মুহুর্তেই।

আকাশের সূর্যটা অস্ত গিয়ে প্রকৃতি ঢেকে গেছে আঁধারের ছোঁয়ায়। তবে রাত এখনো খুব বেশি নয়। শহরের বুকটা জ্বলজ্বল করছে কৃত্রিম সোডিয়ামের আলোয়। আলভী একটি বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেহেরের বাড়ির অভিমুখে। সকালে রবির বলা কথাগুলো কিছুতেই মস্তিষ্ক থেকে বের করতে পারছে না সে। মেহের কি সত্যিই বড়ো লোকের বখে যাওয়া সন্তান নাকি তার মনের মতো কেউ? একটা মেয়েকে প্রথম দেখাতেই ভালো লাগলো। ধীরে ধীরে তার জন্য হৃদয়ে ভালোবাসার বীজও বপন হলো। তবে সে বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পূর্বেই এত সংশয়, এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে পতিত হলো। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল আলভী। চোখ তুলে তাকালো মেহেরদের বাড়িটার দিকে। অমনি দেখা পেল একটি গাড়ির। বাড়ির গেট গলিয়ে বেরিয়ে আসছে গাড়িটি। গাড়ির জানালা খোলা থাকায় ভিতরের দিকটাও দৃষ্টিগোচর হলো আলভী। গাড়ির মধ্যে মেহের, ড্রাইভার এবং একটি অল্প বয়স্ক তরুণ রয়েছে বোধ হয়। আলভীর কলিজাটা ছলকে উঠল। মেহের এই রাতে কোথায় যাচ্ছে? তাও সাথে একটি ছেলেকে নিয়ে? তবে কি রবির কথাগুলোই সত্যিই ছিল? আলভী দ্রুত বাইক স্টার্ট করল। পিছু নিল মেহেরদের গাড়িটার।

কিছুটা সময় পরে শহরের এক দিকে রাস্তার পাশ ঘেঁষে মেহেরদের গাড়িটা থামল। সে রাস্তার ফুটপাত জুড়ে শুয়ে বসে রয়েছে অসংখ্য হতদরিদ্র, দুস্থ মানুষ। দিনের বেলায় এদের কেউ কেউ রাস্তার কাজ করে, কেউ টোকাইয়ের কাজ করে, কেউ দোকানে খুব সামান্য যেমন পন্য সামগ্রী বহন, ধোঁয়া ফালার কাজ করে, কেউ ভিক্ষা করে, আবার কেউ পেটের দায়ে কাজ খোঁজার জন্য হন্যে হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। আর তারপর রাতে মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই না থাকার কারণে এই রাস্তার ধারের ফুটপাতে ঠাঁই নেয়। ভাগ্য ভালো থাকলে কোনোদিন এরা তিন বেলাই খেতে পায় আর ভাগ্য খারাপ থাকলে কোনো কোনো দিন এক বেলাও খেতে পায় না।

মেহের গাড়ি থেকে নামলো। তার সাথের ছেলেটাও হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে নেমে দাঁড়াল পাশেই। মেহের সেই ব্যাগ থেকে খাবারের প্যাকেট বের করে দিতে শুরু করল রাস্তার ফুটপাতে ঘুমানো দুস্থ মানুষগুলোকে। হাসি ফুটে উঠল হতদরিদ্র মানুষ গুলোর মুখে। কেউ কেউ হাত তুলে মেয়েটির মাথায় রেখে দোয়াও দিলো। আলভী দাঁড়িয়ে ছিল একটু দূরে। সেখান থেকে সে দেখছিল সবটা। চক্ষুদ্বয় শীতল হলো তার। মেয়েটিকে নিয়ে হয়তো তারা ভুল সন্দেহ করেছিল। এমন পরোপকারী, অন্যের জন্য ভাবা মেয়ে কখনো খারাপ হতে পারে না। জরুরি নয় বাবা খারাপ হলেই তার সন্তানরা খারাপ হবে। একটা বয়সের পর প্রতিটি মানুষই নিজের ভালো-মন্দ এবং কোনটা খারাপ কোনটা ভালো বুঝতে শুরু করে। তখন বাবা মা বা নিকট আত্মীয়দের খারাপ পরামর্শও তাদের বিপথে চালিত করতে পারে না যদি তারা ভালো হয়। আলভী কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে চেয়ে রইল মেহেরের দিকে। অতঃপর এগিয়ে এলো তার নিকট। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

“আমি সাহায্য করি?”
নিজের পাশে পরিচিত কণ্ঠস্বর শ্রবণে তার দিকে ফিরে তাকালো মেহের। রাতের এই সময়ে আলভীকে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“আপনি এখানে?”
“এদিক থেকেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আপনাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম আর কি।”
“ওহ।”
মেহের ছোট করে উত্তরটি দিয়ে আবারও দুস্থ মানুষগুলোকে খাবার দিতে শুরু করল। আলভী ফের শুধাল,
“আমি সাহায্য করি।”
“আমি একাই পারবো।”
“তবুও আমাকে একটু সাহায্য করতে দিন। আপনার সাথে সাথে আমাকেও একটু সওয়াব কামানোর সুযোগ দিন।”
প্রত্যুত্তরে মেহের চুপ রইল। আলভীও আর তার উত্তরের অপেক্ষায় রইল না। নিজে থেকেই ব্যাগ থেকে খাবারের প্যাকেট এনে মেহেরের পাশাপাশি দিতে শুরু করল অভাবী, দুস্থ মানুষগুলোকে।

ব্যস্ত নগরী, ব্যস্ত মানুষজন। চারদিকে হইহই রইরই কলরব। সেই সাথে আকাশের সূর্যটাও হইহই করে দাপটের সাথে নিজের উষ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। এই উষ্ণতাকে গায়ে মেখেই ত্রয়ীদের গাড়িটা এসে থামল কলেজের অভিমুখে। গাড়ি থামতেই রিমা নেমে দাঁড়াল সেখান থেকে। ত্রয়ীর অপেক্ষা না করেই গটগট করে চলে গেল ভিতরে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল ত্রয়ী। গাড়ি থেকে নেমে কলেজে ঢুকবে ঠিক তখনই তার পথ আগলে দাঁড়াল কেউ। আকস্মিক কেউ সামলে চলে আসায় হকচকিয়ে উঠল মেয়েটি। নিজের তাল ঠিক রাখতে দুই কদম পিছিয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। চোখ তুলে তাকালো সম্মুখের দিকে। দৃশ্যপটে ভেসে উঠল সেদিনের সেই ভয়ংকর মানব। যে মানব সেদিন রাস্তার মধ্যে শীর্ষের সাথে মা’রা’মা’রি করছিল। কিন্তু এই মানব এখানে কি করছে? আর তার পথ আগেই বা দাঁড়িয়েছে কেন? ত্রয়ীর হৃদয় ভীত হলো। মস্তক নুইয়ে কায়সাকে পাশ কাটিয়ে সে পা বাড়ালো ভিতরের দিকে। কায়সার আবারও তার পথ আগলে দাঁড়াল। কিছুটা ইতস্তত করে বলল,

“তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”
ত্রয়ী দাঁড়াল। মস্তক নুইয়ে রেখেই জবাব দিলো,
“জ্বি বলুন।”
কায়সার একটু সময় নিলো। মাথা চুলকে শুধাল,
“তোমার নাম কি?”
ত্রয়ীর উত্তর দিতে ইচ্ছে হলো না। কেমন ভয়, সংকোচ, বিরক্তি ঘিরে ধরেছে তাকে। তবুও ভদ্রতা বজায় রাখতে বলল,
“ত্রয়ী।”
এই টুকু বলে একটু থামল সে। দম নিয়ে বলল,
“আমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আসছি আমি।”

ত্রয়ী হাঁটা ধরল কলেজের দিকে। কায়সার ফের তার পথা আগলে দাঁড়ানোর জন্য পা বাড়ালো। তবে সে ত্রয়ীর পথ রোধ করার পূর্বেই তার পথ রোধ করল কেউ একজন। কায়সার দৃষ্টি দিলো অভিমুখে। দেখা পেল শীর্ষের। চোখ মুখ শক্ত করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন এখনই ঐ চোখ দ্বারাই তাকে জ্বা’লি’য়ে পু’ড়ি’য়ে ভস্ম করে দিবে। কায়সার ভ্রু কুঁচকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“কি?”
শীর্ষ কায়সারের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করল,
“তোর ওদিকে কি?”
“যা খুশি তাই। তুই তা দিয়ে কি করবি?”

দাঁতে দাঁত পিষলো শীর্ষ। ত্রয়ীর সাথে কথা বলার সময়ে কায়সারের মুখভঙ্গি দর্শনে তার আর বুঝতে বাকি নেই কিছু। এই পুরুষ যে তার জিনিসের দিকে নজর দিয়েছে তা বেশ ভালোভাবেই বুঝেছে সে। একজন পুরুষ হয়ে যদি আরেকজন পুরুষের চোখের ভাষা না বোঝে তাহলে কি করে হয়। শীর্ষ কণ্ঠে গভীর রোষ ঢেলে বলল,
“আমার ঘরের দিকে নজর দিচ্ছিস আবার আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস তা দিয়ে আমি কি করব? তোর সাহস আছে বলতে হবে।”
“সাহস আমার বরাবরই বেশি।”
“বেশি সাহস দেখাস না। এখনো সময় আছে নজর সংযত কর। নয়তো তোর জন্যই খারাপ হবে।”
কায়সার তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। অধর বাঁকিয়ে বলল,
“কি করবি তুই আমার? তোকে আমি ভয় ভাই নাকি?”

অনুরাগে তুই পর্ব ২৪

শীর্ষের ইচ্ছে হলো এখনই একটা ঘুষি মে’রে এই ব’জ্জা’ত’টা’র নাক ফাটিয়ে দিতে কিন্তু আশেপাশে অনেক মানুষ। এই স্থানে মারামারি করলে ঝামেলা হয়ে যাবে। এ কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র সে। অধ্যাপকরা ভালো জানেন তাকে। শীর্ষ জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সংযত করল। একটু এগিয়ে এসে দাঁড়াল কায়সারের নিকটে। তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“আমার কলিজায় আগুন লাগতে এলে আমিও তোর বা’লে আগুন লাগিয়ে দেব।”
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। বাঁকা হেসে বলল,
“আর বা’লে আগুন লাগালে নিশ্চয়ই আগুন শুধু ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার আশেপাশের এলাকাও পুড়বে। নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে চাইলে সাবধান এবং নজর সংযত।”

অনুরাগে তুই পর্ব ২৬