অনুরাগে তুই পর্ব ২৭
সাদিয়া শওকত বাবলি
শক্ত হাতে ত্রয়ীকে টেনে নামালো গাড়ি থেকে। রিমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তুই বাড়িতে চলে যা। ওর সাথে আমার কিছু হিসাব নিকাশ আছে।”
ত্রয়ী আঁতকে উঠল। এই লোকের আবার তার সাথে কিসের হিসাব নিকাশ? তাও এই মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে? ভীত হলো মেয়েটার হৃদয়। আমতা আমতা করে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার পূর্বেই ভেসে এলো রিমার কণ্ঠস্বর,
“ওর সাথে আবার তোর কিসের হিসাব নিকাশ ভাইয়া?”
“অত কিছু বুঝে তোর কাজ নেই। তোর বাড়িতে যাওয়ার কাজ বাড়িতে চলে যা।”
“কিন্তু ভাইয়া….”
শীর্ষ শুনলো না রিমার কথা। ঠাস করে আটকে দিলো গাড়ির দরজাটা। অতঃপর ত্রয়ীর হাত টেনে হাঁটা ধরলো নিজের গাড়ির দিকে। মেয়েটা ভীত হলো আরও। নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো শীর্ষের বাঁধন থেকে। ভয়ার্ত কণ্ঠে শুধাল,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
শীর্ষ ত্রয়ীকে টেনে এনে এক প্রকার ছুড়ে ফেললো গাড়ির ভিতরে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“জাহান্নামে।”
“আমি কি করেছি? আপনি হঠাৎ এমন করছেন কেন?”
শীর্ষ জবাব দিলো না কোনো। ঘুরে এসে বসলো ত্রয়ীর পাশে ড্রাইভিং সিটে। কোনোরূপ বাক্য ব্যয় না করে গাড়ি ঘোরালো। অতঃপর গাড়ির গতি স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই বাড়িয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটলো সামনের দিকে। ত্রয়ীর কান্না পেল ভীষণ। এ কোথায় এসে ঠেকলো সে? এই লোক এমনিই তো তাকে দেখতে পারে না। উঠতে বসতে ধমকের উপরে রাখে। আর আজ যেভাবে চোটপাট দেখাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে মেরেই ফেলবে। ত্রয়ীর আঁখি দ্বয় টলমলে হলো। হালকা নাক টেনে শুধাল,
“আপনি আমাকে দেখতে পারেন না মানলাম। তাই বলে কোনো কারণ ছাড়াই সবসময় আমার সাথে এমন করবেন? আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শীর্ষের চোখে অগ্নি, মুখশ্রী জুড়ে কাঠিন্যতা। সে ত্রয়ীর করা প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করল,
“আমি তোর সাথে কারণ ছাড়াই এমন করি?”
“করেনই তো। তারপর আগে যাই টুকটাক ভুলের জন্য চোটপাট দেখিয়েছেন। কিন্তু আজ তো আমি কিছুই করিনি। তাহলে শুধু শুধু এমন কেন করছেন?”
শীর্ষ সময় নিল একটু। কণ্ঠে প্রবল ক্রোধ এটে বলল,
“সাহেদের সাথে তোকে কথা বলতে বারণ করেছিলাম না আমি? তারপর আজ কলেজ শেষে ওর সাথে কি কথা বলছিলি তুই?”
ত্রয়ী চমকাল। এই কথা শীর্ষের কানে পৌঁছালো কিভাবে? কে বলেছে তাকে? রিমা বলেছে কি? কিন্তু সাহেদের সাথে কথা বলার পরবর্তী সময়টুকু তো সে রিমার সাথেই ছিল। তখন তো তাকে মোবাইলই ধরতে দেখলো না। কাউকে কিছু বলবে কি? ত্রয়ী আমতা আমতা শুরু করল। ইতস্তত করে বলল,
“এমনি পড়ার বিষয়ে কথা বলেছি।”
“পড়ার বিষয়ে কি এমন কথা বলেছিলি যা হেসে হেসে বলতে হয়েছে?”
এবারে ভয় বাদ দিয়ে বিরক্তি অনুভব হলো ত্রয়ীর হৃদয়ে। কারো সাথে হেসে কথা বলা কি অপরাধ? তারপর না হয় সে একটু হেসেই কথা বলেছে তাতে এর কি? মনে মনে মেয়েটার কিছুটা ক্রোধ জন্মালেও শীর্ষের অভিমুখে তা প্রকাশ করার সাহস পেল না। বরং মিনমিনে গলায় সে বলল,
“তাতে কি হয়েছে? সাহেদ স্যার লোকটা তো ভালোই তার উপর আপনার বন্ধু। সৌজন্যতা রক্ষার্থেও কথা বলার সময়ে ওষ্টে একটু হাসি ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজন আছে।”
কথাটা শেষ হতে না হতেই শীর্ষ গাড়িতে ব্রেক কষলো হঠাৎ। হকচকিয়ে উঠল ত্রয়ী। নিজের তাল ঠিক রাখতে না পেরে ফের সে ঝুঁকে গেল সামনের দিকে। তবে সৃষ্টিকর্তা সহায়। এবারে কপালে আঘাত লাগার পূর্বেই নিজেকে সামলে নিতে সক্ষম হলো মেয়েটি। নয়তো বড়ো কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হতো তাকে। এবারে আর আগের বারের মতো তার সামনে গাড়ির সিট ছিল না যে কপালে আঘাত লাগার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে। এবারে তার অভিমুখে কাঁচ ছিল। হতে পারতো কাঁচের সাথে আঘাত লেগে কাঁচ ভেঙে সে বাহিরে পড়ে গেল অথবা কাঁচের টুকরো মাথায় ঢুকে পড়লো। ত্রয়ী বুকে হাত দিলো। জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে তাকালো শীর্ষের দিকে। সাথে সাথে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল তার। শীর্ষ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পূর্বের থেকেই হিংস্র তার মুখশ্রী। চোখ দুটো রক্তলাল। মনে হচ্ছে যেন ঐ দৃষ্টি দ্বারাই সামনে যা কিছু আছে সব হয় ধ্বং’স করে দিবে নয়তো জ্বা’লি’য়ে পু’ড়ি’য়ে দিবে। ভয়ে চুপসে গেল ত্রয়ী। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে তাকালো এদিক ওদিক। তখনই ভেসে এলো শীর্ষের হুংকার,
“গাড়ি থেকে নাম।”
ত্রয়ী কেঁপে উঠল। আবার সে কি করল যে এই লোক এতটা রেগে গেছে? সে তো ঠিকভাবে কোনো কথাও বলল না। ত্রয়ী ঢোক গিললো। তুতলিয়ে শুধাল,
“কককেন?”
“নামতে বলেছি নাম।”
ত্রয়ী সন্ত্রস্ত হয়ে নেমে দাঁড়াল গাড়ি থেকে। শীর্ষ অগ্নি দৃষ্টিতে একবার তাকালো তার দিকে। পরপর মেয়েটাকে ঐ মাঝ রাস্তায়ই ফেলে রেখে গাড়ি নিয়ে চললো অভিমুখে। ত্রয়ী ছলছল নয়নে চেয়ে রইল গাড়িটার দিকে। এখন সে বাড়িতে যাবে কিভাবে? তার কাছে পর্যাপ্ত টাকাও নেই যে অন্য গাড়ি বা রিকশায় যাবে। বাড়ি থেকে যতটুকু টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল তার অধিকাংশই ক্যান্টিনে খেতে গিয়ে খরচ করে ফেলেছে। দিনের এই ক্ষণে এসে যে এমন কিছু ঘটবে আগে জানলে ক্যান্টিনে খেতো না সে। প্রয়োজনে পেট বেঁধে রাখতো। ত্রয়ীর ভীষণ কান্না পেল। কণ্ঠনালী রোধ হয়ে এলো। বসে পড়লো সে রাস্তা এক ধার ঘেঁষে। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে এই মুহূর্তে। আজ তার পরিবার থাকলে বোধ হয় এমনটা ঘটতো না। পরিবারের সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারতো। মানুষের নিকট গুরুত্ব পেতো। কেউ বিনা অপরাধে শাস্তি দিতে পারতো না, যখন যা খুশি বলতে পারতো না। নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ত্রয়ীর। হাতের উলটো পিঠে চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল সে। পাশ ফিরে তাকাতেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠল শীর্ষের মুখশ্রী। ত্রয়ী চমকাল। এই লোক এখানে কিভাবে? এ না একটু আগেই তাকে একা ফেলে চলে গিয়েছিল? কান্না ভুলে চোখ বড়ো বড়ো করল মেয়েটা। বিস্ময় নিয়ে শুধাল,
“আপনি এখানে?”
“কেন তুই ভেবেছিলি আমি চলে গেছি?”
“না মানে….”
শীর্ষ কপাল টানটান করল। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,
“বাড়িতে যাবি?”
ত্রয়ী মাথা নুইয়ে নিল। জবাব দিলো না কোনো। শীর্ষ ভ্রু বাঁকালো। গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন,
“গাড়িতে তখন কি বলছিলি? কে লোকটা ভালো?”
ত্রয়ী ভরকালো। চোখ তুলে তাকালো শীর্ষের দিকে। এই লোক এর জন্য তখন খ্যাপে গিয়েছিল? সে তো শুধু কথার কথা বলেছিল ‘সাহেদ স্যার লোকটা ভালো।’ এতেও অন্যায় হয়ে গেছে? ত্রয়ী আর ঝুঁকি নিতে চাইলো না। মিনমিনে কণ্ঠে জবাব দিলো,
“কেউ না। কেউ ভালো না।”
শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে বলল,
“আমিও না?”
ত্রয়ী ঢোক গিললো। কি এক যন্ত্রণা! এর সামনে বাঁচার জন্য কিছু বলেও শান্তি নেই। ত্রয়ী আমতা আমতা করল। ইতস্তত করে বলল,
“আপনি ভালো।”
শীর্ষ বাঁকা হাসলো। এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“ওভাবে বললে হবে না। বল এই পৃথিবীর সব চেয়ে ভালো মানুষ শীর্ষ রিজওয়ান।”
ত্রয়ীর রাগ লাগলো। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হলো,
“এই পৃথিবীর সবচেয়ে অভদ্র, বেয়াদব, পাষান, খারাপ মানুষ শীর্ষ রিজওয়ান।”
মনে মনে এতগুলো কথা বললেও মুখে বলার সাহস হলো না। বরং দৃষ্টি নুইয়ে সে বলল,
“এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো পুরুষ শীর্ষ রিজওয়ান।”
শীর্ষ ঠোঁট এলিয়ে দিলো। ফের বলল,
“বল আমার দেখা সকল পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ শীর্ষ রিজওয়ান।”
ত্রয়ী আড়ালে ভেংচি কাটলো। মনে মনে বলল,
“আমার দেখা সবচেয়ে বাজে পুরুষ শীর্ষ রিজওয়ান। শুধু ধলা হলেই কি মানুষ সুন্দর হয় নাকি? ধলা তো মুলাও হয়। তুই আগা গোড়াই একটা ধলা মুলা। যা খেলে পেটের মধ্যে দূষিত বায়ু উৎপাদন ব্যতীত আর কিছুই হয় না।”
তবে মুখে বলল,
“আমার দেখা সকল পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ শীর্ষ রিজওয়ান।”
“তারপর বল আজ থেকে আমি সবসময় শীর্ষ রিজওয়ানের সব কথা মেনে চলবো।”
ত্রয়ী ফের মনে মনে বলল,
“তোর কথা মেনে চলবো? তোকেই তো আমার দেখতে ইচ্ছে হয় না। তোর কথা মেনে চলবো কি?”
তবে সে কণ্ঠে ধ্বনি তুলে ভদ্র মেয়ের ন্যায় বলল,
“আজ থেকে আমি সবসময় শীর্ষ রিজওয়ানের সব কথা মেনে চলবো।”
শীর্ষ বিশ্ব জয়ের হাসি হাসলো। তাদের একটু দূরেই নিজের গাড়িটা রেখে এসেছিল সে। সেদিকে পা চালাতে চালাতে বলল,
“গাড়িতে আয়।”
কিছুটা সময় অতিবাহিত হতেই খান বাড়ির অভিমুখে চলে এলো শীর্ষদের গাড়িটা। গাড়ি থামতেই ত্রয়ী তড়িঘড়ি করে নেমে পড়লো সেখান থেকে। এতক্ষণে যেন একটু শান্তি মিললো। নয়তো পুরোটা রাস্তায়ই সে ভয়ে ভয়ে ছিল কখন আবার শীর্ষ তাকে হুট করে নামিয়ে দেয়। যাক লোকটা আর পথিমধ্যে কোনো ঝামেলা করেনি। ত্রয়ী বাক্য বিনিময় করল না। শীর্ষের থেকে কোনো অনুমতিও নিল না। যত্রতত্র পায়ে হাঁটা ধরলো বাড়ির দিকে। তখনই পিছন থেকে শীর্ষ ডেকে উঠল,
“শোন।”
ত্রয়ী দাঁড়ালো। পিছন ঘুরে শুধাল,
“জ্বি।”
শীর্ষ সময় নিল একটু। কিছুটা নরম গলায় শুধাল,
“একদিন বলেছিলি না তোর একা ঘুমাতে ভয় লাগে। আগে দাদীর সাথে ঘুমাতি। এখনো কি একা ঘুমাতে ভয় লাগে তোর? লাগলে বলতে পারিস।”
এই টুকু বলে থামলো শীর্ষ। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে ফের বলল,
“এখন কট খেয়ে হলেও তোকে বিয়ে করতে আমার আর কোনো সমস্যা নেই।”
ত্রয়ী শুনলো না শীর্ষের নিচু কণ্ঠে বলা কথাগুলো। তাকে আশাহত করে মেয়েটি নিচু কণ্ঠে বলল,
“না এখন আর ভয় লাগে না আমার। অভ্যাস হয়ে গেছে।”
কথাটা বলেই ত্রয়ী পিছন ঘুরলো। সময় ব্যয় চলে গেল বাড়ির ভিতরে। শীর্ষ কপালে ভাঁজ ফেলল। নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“বা’ল, অভ্যাস এত তাড়াতাড়ি হয় ক্যামনে? অন্তত চার পাঁচ মাস সময় নিয়ে হওয়া উচিত ছিল।”
বিকালের সময়। আকাশের সূর্যটা তার তেজ কমিয়ে দিয়েছে কিছুটা। তবে তাতে গরম কমেনি একটুও। শীর্ষ দুপুরের পর পরই চলে এসেছে ক্লাবে। কয়েকদিন পরের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নিয়েও আলোচনা আছে আর বাড়িতেও ভালো লাগছিল না। আলভী এবং নয়ন সহ ক্লাবের আরও কিছু সদস্যরা এসেছে এখানে। শুধু আসেনি রবি। তার আগামীকাল শীর্ষদের কোম্পানিতে ইন্টারভিউ। এই মুহূর্তে পড়াশোনায় ভীষণ ব্যস্ত সে। শীর্ষ কিছু চেয়ার টেনে ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে গোল হয়ে বসলো, মাতলো ক্লাব প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন আলোচনায়। তবে আলোচনা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই তাদের সভা ভঙ্গ হলো। কায়সার তার দলবল নিয়ে প্রবেশ করল ক্লাবে। কায়সারকে দেখেই ফুঁসে উঠল ক্লাবের সদস্যরা। সেদিন এই ব্যাটা এসে তাদের এবং ক্লাবের কম ক্ষতি করেনি। ক্রোধে দিশেহারা হয়ে দাঁড়িয়েও পড়লো জনা তিনেক সদস্য। হাসলো কায়সার। তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“আরে বস বস। আমি আজ এখানে মা’রা’মা’রি করতে আসিনি। বরং তোদের সাথে সবটা ঠিক করে নিতে এসেছি।”
শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,
“কিসের ঠিক?”
“অনেক ভেবে দেখলাম তোর সাথে শত্রুতা করে আমার কোনো লাভ নেই বরং ক্ষতি। তাই নিজের ক্ষতি এড়াতে চলে এলাম তোর সাথে মিলে যেতে।”
“তুই এলেই আমি তোর সাথে মিলে যাব ভাবলি কিভাবে?”
কায়সার একটা চেয়ার টেনে বসলো। ওষ্ঠে হাসির ধারা অব্যাহত রেখেই বলল,
“ঐ দিন শাকিব গিয়ে হঠাৎ বলল তুই ওকে ক্লাব থেকে বের করে দিয়েছিস। ব্যস আমার মাথা গরম হয়ে গেল। আমিও কোনো বাছবিচার না করেই ক্লাবে এসে ঝামেলা করেছি।”
এই টুকু বলে থামল কায়সার। দম ফেলে ফের বলল,
“যাক ওসব কথা বাদ দে। পুরোনো শত্রুতা ধরে রেখে লাভ কি বল? তার থেকে আয় আমরা বরং মিলে যাই।”
শীর্ষ গা এলিয়ে দিলো চেয়ারের সাথে। বাঁকা হেসে বলল,
“দুঃখিত রে। আমার তোর মতো বা’ল পাকনা ডিসের লাইনের সাথে মেলার কোনো ইচ্ছা নেই। শত্রুতাটা থেকে যাক। তোর আর আমার জন্য ওটাই ভালো হবে।”
“ভবিষ্যতে তোকে আমার শা’লা বানানোর চিন্তা ভাবনা। সেখানে শত্রুতাটা রেখে দেই কিভাবে বল?”
শীর্ষ সোজা হয়ে বসলো। এক ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
“মানে?”
কায়সার একটু সময় নিল। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,
“তোদের বাড়িতে যে মেয়েটা নতুন এসেছে। সম্পর্কে তো তোর বোনই হয় তাই না। কি যেন নাম ওর? হ্যা ত্রয়ী…. ত্রয়ী। ওকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ওসব প্রেম টেম তো আর আমার দ্বারা সম্ভব হবে না তাই ভাবছি অতি শীঘ্রই ওকে বিয়েটা করে ফেলবো।”
অনুরাগে তুই পর্ব ২৬
শীর্ষ গর্জে উঠল। ক্রোধে দিশেহারা হয়ে লাথি বসালো কায়সারের পেট বরাবর। ফলস্বরূপ সে ছিটকে পড়লো মেঝেতে। কায়সারের সাথে আসা জনবল খ্যাপে গেল। তারা তেড়ে এলো শীর্ষের দিকে। সাথে সাথে ক্লাবের সদস্যরা আটকে দিলো তাদের। শীর্ষ চোখে মুখে প্রবল হিংস্রতা নিয়ে এগিয়ে এলো কায়সারের দিকে। একটু ঝুঁকে থাবা বসালো তার কলারে। হিসহিসিয়ে বলল,
“তোকে সাবধান করার পরও ওর দিকে তাকানোর সাহস হলো কি করে? বা’ল আর তার আশেপাশের এলাকার জন্য মায়া নাই তোর?”
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। হুংকার ছেড়ে ফের বলল,
“ও আমার কলিজা লাগে, কলিজা। ওর দিকে ফের দৃষ্টি দিলে তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো কু’ত্তা’র বা’চ্চা।”