অনুরাগে তুই পর্ব ২৮
সাদিয়া শওকত বাবলি
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। হুংকার ছেড়ে ফের বলল,
“ও আমার কলিজা লাগে, কলিজা। ওর দিকে ফের দৃষ্টি দিলে তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো কু’ত্তা’র বা’চ্চা।”
শীর্ষের কণ্ঠ নিঃসৃত এহেন বাক্য দ্বয় শ্রবণে চমকাল উপস্থিত সকলে। বিস্ময়ে আঁখি দ্বয় কিঞ্চিৎ বড়ো আকার ধারণ করল নয়ন এবং আলভীর। তারা ভেবেছিল ত্রয়ী মেয়েটির প্রতি শীর্ষের আলাদা একটা অনুভূতি রয়েছে তাই বলে এতটা? একদম কলিজা বলে দিলো! কায়সারও খ্যাপে গেল। চোখ দুটো পরিপূর্ণ হয়ে উঠল হিংস্রতায়। যে নারীকে তার হৃদয় কুঠুরিতে স্থান দিয়েছে সেই নারীর দিকেই কিনা নজর শীর্ষের? কায়সারও দুই হাত বাড়িয়ে চেপে ধরলো শীর্ষের শার্টের কলার। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“তাহলে প্রস্তুত থাক। তোর ঐ কলিজা ছিঁড়ে আমার ঘরে নেওয়ার সময় এসে গেছে।”
শীর্ষ হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল। পরপর চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“বা’ল পাকনা ডিসের লাইন। তুই চিনোস আমারে? আমার কলিজা ছিঁড়ে নেওয়া এতই সহজ? পারলে আসিস আমার কলিজা ছিঁড়ে নিতে। আমি তোর কলিজা, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, নাড়িভুঁড়ি সব বের করে চার রাস্তার মোড়ে ভাগ দিয়ে দেব।”
কায়সার আরও খ্যাপে গেল। হিসহিসিয়ে বলল,
“তুই আমার কলিজা, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, নাড়িভুঁড়ি বের করতে এলে আমি বুঝি বসে থাকবো? মে’রে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেব তোকে।”
“তুই যে আমার কোন বা’ল করতে পারবি তা জানা আছে। আপাতত আমার সম্পদের দিক থেকে দৃষ্টি সরা নয়তো দৃষ্টি দেওয়ার জন্য তোর ঐ পটলের মতো চোখ দুটোই থাকবে না।”
এবার কায়সার ক্রোধে দিশেহারা হয়েই একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো শীর্ষের নাক বরাবর। আকস্মিক হামলায় হকচকিয়ে উঠল শীর্ষ। দেহের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে পিছিয়ে গেল দুই কদম। নাক ফেটে গড়িয়ে নামলো লাল তরল রক্ত। শীর্ষ হাত দিলো নাকে। চোখের সম্মুখভাগে এনে রক্তের দেখা মিলতেই লাথি বসালো কায়সারের পেট বরাবর। মেঝেতে ছিটকে পড়লো কায়সার। তবে সময় ব্যয় না করেই পুনরায় উঠে দাঁড়াল। ক্রোধে দিশেহারা হয়ে সেও লাথি বসালো শীর্ষের পেটে। শীর্ষ মেঝেতে না পড়ে গেলেও পিছিয়ে গেল কিছুটা। পরপর ঝড়ের বেগে এসে গলা টিপে ধরল কায়সারের। কায়সারও কম যায় না। সেও তৎক্ষণাৎ টিপে ধরল শীর্ষের গলা। দুই জনের হাতের অবস্থানই বেশ শক্তপোক্ত। আঁতকে উঠল শীর্ষ এবং কায়সারের সাথে আসা জনবল। এদের দুজনকে থামাতে হবে এক্ষুনি। নয়তো বিষয়টা খু’নো’খু’নি পর্যন্ত চলে যেতে পারে। আলভী এবং নয়নসহ ক্লাবের বাকি সদস্যরা এসে টেনে ধরল শীর্ষকে। আর কায়সারের সাথে আসা তার লোকজন টেনে ধরলো তাকে। দুইজনকে সরিয়ে নিল দুই দিকে। তবুও কি থামানো যায় তাদের? দুজনের মধ্যেই সমান উত্তেজনা বিরাজমান। তবে কিছুটা সময় পরও তারা নিজেদের ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে শান্ত হলো কিছুটা। কায়সার আর ঝামেলা না করে চলে গেল ক্লাব থেকে। তবে চলে যাওয়ার পূর্বে শীর্ষকে শাসিয়ে বলে গেল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ত্রয়ী আমারই হবে। মেয়েটিকে আমার ভালো লেগেছিল বলে তোর নিকট এসেছিলাম। কিন্তু ও এখন আর শুধু আমার ভালো লাগাতেই সীমাবদ্ধ নেই, জেদে পরিনত হয়েছে। তোর থেকে ত্রয়ীকে কেড়ে নেওয়ার জন্য হলেও ওকে আমার করে নেব। মনে রাখিস।”
কায়সার চলে যেতেই শীর্ষ একটা চেয়ার টেনে বসলো। আলভী চটজলদি একটা ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে দাঁড়াল তার মুখোমুখি। ক্লাবে সব সময়ই ফাস্ট এইড বক্স থাকে। খেলাধুলা করতে গিয়ে সদস্যরা যদি কোনোভাবে আঘাত পায় তাদের তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যই এই ব্যবস্থা। শীর্ষ ফাস্ট এইড বক্স থেকে কিছু তুলা ছিঁড়ে নিল। তুলা গুলো দলা পাকিয়ে নাকের ছিদ্রের মধ্যে পুরতে পুরতে বলল,
“বা’ল পাকনা ডিসের লাইন একটা। তোকে তো আমি পরে দেখে নেব।”
সন্ধ্যা গড়িয়েছে। প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপ রস হারিয়ে আঁধারে ঢেকে যেতে শুরু করেছে একটু একটু করে। আব্দুর রহমান খান মাগরিবের নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে কেবলই বাড়িতে ফিরলে। বসার কক্ষের সোফায় বসে গলা উঁচালেন,
“এক কাপ চা দাও তো।”
ত্রয়ী আর নুড়ি রান্নাঘরেই ছিল। নামাজ শেষ করে তারাও চা বানানোরই আয়োজন করছিল। আব্দুর রহমান খানের কণ্ঠ পেয়ে রিমা, পন্না এবং ফাহমিদা বেগমও নিজেদের কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। বসলেন বসার কক্ষের সোফায়। সন্ধ্যা বেলায় চা-এর আয়োজন আগে ফাহমিদা বেগম করলেও ত্রয়ী এ বাড়িতে আসার পর থেকে তিনি এ কার্য থেকে ছুটি পেয়েছেন। এখন প্রতিদিন সন্ধ্যার চা বানানোর কাজটা ঐ মেয়েটাই সামলায়। ফাহমিদা বেগম কখনো সখনো এই সময়ে চা বানানোর উদ্দেশ্যে রান্নাঘরে হানা দিলেও ত্রয়ী আর নুড়ি মিলে তাকে পাঠিয়ে দেয়।
কিছুটা সময় অতিবাহিত হতেই একটি ট্রেতে করে চা, বিস্কুট নিয়ে বসার কক্ষে হাজির হলো ত্রয়ী। প্রথমেই ট্রে থেকে একটি চায়ের কাপ তুলে বাড়িয়ে দিলো আব্দুর রহমান খানের দিকে। কাপটা ধরলেন তিনি। অতঃপর বেশ নরম কণ্ঠেই বললেন,
“ট্রে টা ঐ টেবিলের উপরেই রাখো। যার যার নেওয়ার নিয়ে নিবে। তোমাকে আর কাউকে দিতে হবে না। তুমি বরং নিজেও একটা কাপ নিয়ে বসে পড়ো।”
ত্রয়ী মাথা নাড়ালো। ট্রেটা সোফার সামনের টি টেবিলের উপরে রেখে একটা কাপ হাতে নিয়ে বসে পড়লো সোফায়। আব্দুর রহমান খান চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শুধালেন,
“তা এখানে কেমন লাগছে তোমার? কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? আর কলেজ! সেখানে সব ঠিক ঠাক আছে?”
আব্দুর রহমান খানের কথা শেষ হতে না হতেই গৃহের সদর দরজা থেকে ভিতরে প্রবেশ করল শীর্ষ। ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে এখানকার প্রতিটি কথাই তার কানে পৌঁছেছে। ত্রয়ী হালকা মাথা নাড়ালো। নরম কণ্ঠে বলল,
“হ্যা চাচা, সব ঠিকঠাকই আছে। আর আমার কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”
শীর্ষ কপাল টান টান করে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। এগিয়ে এসে ধপ করে বসে পড়লো তার পাশেই। বিরবিরিয়ে বলল,
“এর আবার সমস্যা আসবে কোত্থেকে? এর সব সমস্যা তো আমার মাথায় তুলে দিয়েছে। বালির বস্তা একটা। বস্তা ভরে ভরে সমস্যাগুলো সব আমার উপরে ঠেলে দিচ্ছে।”
শীর্ষ আসায় প্রায় সবাই তার দিকে দৃষ্টি দিলো। শুধু মাথা নুইয়ে রাখলো ত্রয়ী। তবে শীর্ষের দিকে তাকাতেই সকলে চমকে উঠল যেন। ফাহমিদা বেগম বেশ অস্থির হয়েই শুধালেন,
“একি তোর নাকে কি হয়েছে? ওভাবে লাল হয়ে আছে কেন?”
শীর্ষ থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,
“ক্লাবে খেলতে গিয়ে বল পড়েছে।”
ফাহমিদা বেগম আরও অস্থির হয়ে উঠলেন। চা রেখে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ব্যগ্র কণ্ঠে বললেন,
“তুই যে কি করিস না। একটু দেখেশুনে খেলবি না? দাঁড়া আমি এখনই ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসছি।”
“তার আর প্রয়োজন হবে না। আমি…..”
ফাহমিদা বেগম শুনলেন না ছেলের কথা। ছুটে গেলেন নিজ কক্ষের দিকে। এ পর্যায়ে ত্রয়ীও চোখ তুলে তাকালো শীর্ষের দিকে। সত্যিই লোকটার নাকটা লাল হয়ে আছে। গায়ের বর্ণ ফরসা হওয়ায় রক্তিম আভাটা যেন একটু বেশিই গাঢ় দেখাচ্ছে। তবে বল পড়ে যে এই ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো ত্রয়ীর। দৃষ্টি নামিয়ে নিল সে। বিরবিরিয়ে বলল,
“বল পড়েছে না ছাই। নির্ঘাত আবার কোথাও মা’রা’মা’রি করতে গিয়েছিল। সেখানে প্রতিপক্ষ মে’রে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে।”
শীর্ষ ত্রয়ীর নিকটে হওয়ায় শুনে নিল সব কথাগুলো। কণ্ঠ একটু খাদে নামিয়েই বলল,
“একদম ঠিক বলেছিস। মা’রা’মা’রি করেই নাক ফাটিয়েছি। আর মা’রা’মা’রি কার জন্য করেছি জানিস?”
“কার?”
“তোর।”
ত্রয়ী অবাক হলো। চোখ তুলে তাকালো শীর্ষের দিকে। অবাক স্বরেই বলল,
“আমার জন্য! আমি আবার কি করেছি যে আমার জন্য আপনার মা’রা’মা’রি করতে হয়েছে?”
“সেসব কথা তোর না জানলেও চলবে। তুই শুধু এই টুকু জেনে রাখ তোর জন্য মা’রা’মা’রি করতে গিয়ে আমার নাক ফেটেছে। এর মাশুল তোকেই দিতে হবে, শুধু তোকে।”
ত্রয়ীর কপালে ভাঁজ পড়লো। মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করে স্মরণের চেষ্টা করল সে কি এমন করেছে যার জন্য মা’রা’মা’রি লাগতে পারে। নাহ, তেমন কিছুই তো স্মরণে আসছে না। এ লোক নির্ঘাত মিথ্যা বলছে। নিজে মা’রা’মা’রি করে এসে এখন তার উপরে দোষ চাপাতে চাইছে। ত্রয়ী দাঁতে দাঁত পিষলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“আপনি মিথ্যা বলছেন।”
“ঠিক আছে। এরপর থেকে মা’রা’মা’রি বাঁধলে তোকে নিয়ে পার্সেল করে মা’রা’মা’রি’র মধ্যে ঠেলে দেব। তখন তুই নিজেই যাচাই বাছাই করে নিস সত্যি নাকি মিথ্যা।”
শীর্ষের কথা শেষ হতে না হতেই ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেও ফাহমিদা বেগম। এক প্রকার হামলে পড়লেন ছেলের নাকের উপর। একটি ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলেন তড়িঘড়ি করে। পন্না মুখ বাঁকালো। ব্যঙ্গ করে বলল,
“বলটা আর পড়ার কোথাও জায়গা পেল না ভাইয়া? একদম তোর ঐ নাকের উপরেই পড়লো?”
রিমা হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল,
“ভাইয়া তোর নাকটা এখন দেখতে কেমন লাগছে জানিস? একদম টমেটোর মতো, লাল টমেটো।”
শীর্ষের মুখশ্রী থমথমে রূপ ধারণ করল। তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে সে তাকালো রিমার দিকে। সাথে সাথে হাসি বন্ধ হয়ে গেল তার। খাওয়ায় মনোযোগী হলো আবারও। এতক্ষণে মুখ খুললেন আব্দুর রহমান খানও। থমথমে কণ্ঠে তিনি ছেলেকে বললেন,
“এখন ওসব ক্লাব ফ্লাব ছাড়ো। বয়স তো কম হলো না।”
শীর্ষ ততটা গায়ে মাখলো না বাবার কথা। টেবিলের দিকে দৃষ্টি দিলো সে। ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“আমার কফি কোথায়?”
ফাহমিদা বেগম তাড়াহুড়ো করলেন। ব্যস্ত হয়ে বললেন,
“তুই তো বাড়িতে ছিলি না। আর হঠাৎ চলে আসবি বুঝতে পারিনি। দাঁড়া আমি এখনই বানিয়ে আনছি।”
শীর্ষ বাধ সাধলো মায়ের কথায়। ত্রয়ীর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
“তোমার কি দরকার কফি বানাতে যাওয়ার? ত্রয়ীকে বা নুড়িকে বলো। ওরা বানিয়ে আনবে।”
কথাটা শুনেই ত্রয়ী নিজের স্থান ছেড়ে উঠতে উদ্যত হলো। কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে ফাহমিদা বেগম নুড়িকে বললেন,
“যা তো মা। কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।”
শীর্ষ বিরক্ত হলো। সে তো ত্রয়ীকে কফি বানাতে পাঠানোর জন্যই ঐ কথাটা বলল অথচ তার মা পাঠিয়ে দিলেন নুড়িকে।
রাত্রি বেড়েছে। সবাই যে যার কক্ষের দ্বার দিয়ে শুয়ে পড়েছে হয়তো। ত্রয়ীও কেবল বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল। এর মধ্যেই দরজায় টোকা পড়লো তার। বিরক্ত হলো মেয়েটা। কে এসেছে এত রাতে? নির্ঘাত ঐ শীর্ষ ব্যাটা। এত রাতে ঐ বদ লোক ব্যতীত তো আর কেউ তার কক্ষে কড়া নাড়ে না। আবার কি লাগবে ঐ লোকের কে জানে? ত্রয়ী কপাল কুঁচকে বিছানা ছাড়লো। এগিয়ে এসে খুললো দরজাটা। যা ভেবেছিল তাই। দরজা খুলতেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠল শীর্ষের মুখ খানা। ত্রয়ী ভিতরে ভিতরে যতই বিরক্ত হোক না কেন মুখশ্রীতে স্বাভাবিক ভঙ্গিমা বজায় রাখলো। নরম কণ্ঠে শুধাল,
“কিছু লাগবে কি?”
“হুম।”
“কি?”
“তোর মোবাইল নাম্বার।”
ত্রয়ী অবাক হলো কিঞ্চিৎ। পলক ঝাপটে শুধাল,
“কি?”
“তোর মোবাইল নাম্বারটা দে। মাঝে যাঝেই তোকে প্রয়োজন পড়ে আমার। বারবার তোকে ডাকতে আসতে বা তোর কক্ষের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করতে আমার বিরক্ত লাগে। তার থেকে নাম্বার দে। যখন প্রয়োজন পড়বে কল করে নেব।”
ত্রয়ী ইতস্তত করে জবাব দিলো,
“আমার তো মোবাইল নেই। দাদীর একটা বাটন মোবাইল ছিল। তাও তার মৃ’ত্যু’র পরে চাচারা নিয়ে গেছেন।”
মোবাইল নেই শুনে প্রথমে একটু অবাক হলেও পরক্ষণেই নিজের ভুল বুঝতে পারলো শীর্ষ। এই একা একটা মেয়ে যার বাবা মা নেই। চাচারা, খালারা বোঝা মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তাকে আর মোবাইলই বা কিনে দিবে কে? শীর্ষ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল। ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“অপেক্ষা কর একটু। আসছি আমি। আর দরজা আটকাবি না। আমি আবার এসে এই দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে পারবো না।”
শীর্ষ চলে গেল। ত্রয়ী কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে দরজার নিকট দাঁড়িয়ে থেকে ভিতরে চলে গেল।
কিছুটা সময় নিয়ে ফিরে এলো শীর্ষ। ত্রয়ীর দিকে একটা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা এখন থেকে তোর।”
ত্রয়ী অবাক হলো। এটা তো শীর্ষের মোবাইল। তাকে দিয়ে দিচ্ছে কেন? ত্রয়ী হতবাক হয়ে শুধাল,
“এটা তো আপনার মোবাইল। এটা আপনি আমাকে দিয়ে দিলে আপনি ব্যবহার করবেন কি?”
“আমার ঘরে পুরোনো একটা আছে। আপাতত ওটা দিয়েই চালিয়ে দেব। তারপর পরে না হয় একটা কিনে নেব।”
ত্রয়ী মোবাইলটা উলটেপালটে দেখলো একবার। অতঃপর ইতস্তত করে বলল,
“কিন্তু এটা তো অনেক দামিও মনে হচ্ছে।”
অনুরাগে তুই পর্ব ২৭
“দাম নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। ওটা আমি বুঝে নেব। সিম বদলে দিয়েছি। আমার নাম্বারও সেভ করে দিয়েছি তাতে। সাবধান অপরিচিত কাউকে নিজের নাম্বার দিবি না বিশেষ করে পুরুষদের। ফেসবুকে আমার পুরোনো একটা আইডি লগ ইন করে দিয়েছি। ওটাই ব্যবহার করবি। অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবি না। বাকি অন্যান্য মাধ্যম যেমন ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, ইমো ওসব কিছুর প্রয়োজন নেই তোর।”
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। শাসনের সুরে ফের বলল,
“মনে রাখিস আমার এই কথাগুলোর এক ইঞ্চিও যদি অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে প্রথমে মোবাইল ভাঙবো তারপর তোকে। একটাকেও আস্ত রাখবো না।”