অনুরাগে তুই পর্ব ২৯
সাদিয়া শওকত বাবলি
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। শাসনের সুরে ফের বলল,
“মনে রাখিস আমার এই কথাগুলোর এক ইঞ্চিও যদি অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে প্রথমে মোবাইল ভাঙবো তারপর তোকে। একটাকেও আস্ত রাখবো না।”
ত্রয়ী তবুও ইতস্তত করল। একে তো এটা শীর্ষের নিজের মোবাইল তার উপর এত দামী। ত্রয়ীর মোবাইলটা নিতে কেমন দ্বিধা লাগছে। সে মোবাইলটা আবার বাড়িয়ে দিলো শীর্ষের দিকে। আমতা আমতা করে বলল,
“আমার মোবাইল লাগবে না। মোবাইল দিয়ে আমি কি করব? তার থেকে এটা বরং আপনিই রাখুন।”
“তোর না লাগলেও আমার লাগবে। বারবার তোকে ডাকতে আসতে এবং দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে আমার বিরক্ত লাগে।”
“কিন্তু….”
শীর্ষ বিরক্ততে কপাল কুঁচকে নিল। ত্রয়ীকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এত প্যাঁচা প্যাঁচি করিস না তো। ভালোভাবে মোবাইল দিচ্ছি ভালোভাবে নে। নয়তো থাপ্রে নেওয়াবো।”
হতবাক হয়ে পড়লো মেয়েটা। একজন মানুষ তার দেওয়া কিছু নেওয়ার জন্যও কিনা ধমকাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে? এর ভিতরে কি ভালো কিংবা নরমভাব বলতে কোনো বস্তু নেই? ত্রয়ীর ভাবনার মধ্যেই মুখ বাঁকালো শীর্ষ। ফের বলল,
“আমার মোবাইল যে তোকে দিয়েছি সেটাই তো তোর রাজকপাল। আবার বলছিস নিবি না। ঢং যত।”
পরপর চলে গেল শীর্ষ। ত্রয়ী স্বল্প সময় নিয়ে চেয়ে রইল তার গমনপথের দিকে। অতঃপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফের তাকালো মোবাইলটার দিকে। যতই সে মোবাইলটা নেওয়ার ক্ষেত্রে না না করুক না কেন ভিতরে ভিতরে কিছুটা উত্তেজিতও অনুভব করছিল। কত দিনের শখ তার একটা স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। সেই শখটা বুঝি এবারে পূরণ হলো। ত্রয়ীর ওষ্ঠের কোনে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখতে শুরু করল মোবাইলটা। তখনই মেসেজ টোন বেজে উঠল। মেয়েটা তাকালো মোবাইলের স্ক্রীনে। দেখতে পেল ‘অতি সুদর্শন ধৈর্যশীল ভদ্র পুরুষ’ নামক একটি নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। ত্রয়ীর কপালে ভাঁজ পড়লো। এই অতি সুদর্শন ধৈর্যশীল পুরুষটা আবার কে? শীর্ষ কি তার নাম্বার ব্যতীত আরও কারো নাম্বার সেভ করে দিয়েছে? ত্রয়ী মেসেজের ভিতরে ঢুকলো। লেখা পেল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তোকে মোবাইল দিয়েছি এর মানে এই নয় যে তুই রাত জেগে গোল গোল চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকবি। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড় যা।”
কথার ধাঁচ দেখেই ত্রয়ী বুঝে গেল এটা শীর্ষ। কিন্তু এ কি অদ্ভুত নাম দিয়ে সে নিজের নাম্বার সেভ করেছে? সুদর্শনটা না হয় তাও মানা যায় কিন্তু এই লোক ধৈর্যশীল আর ভদ্র কোন দিক থেকে? নাকের ডগায় সর্বক্ষণ এর ক্রোধ নাচতে থাকে। একটু পান থেকে চুন খসলেই ছ্যাত করে ওঠে। সে নাকি আবার ধৈর্যশীল, ভদ্র। ত্রয়ী মুখ বাঁকলো। পরপর আবার অবাকও হলো। এ লোক কিভাবে জানলো সে না ঘুমিয়ে মোবাইল দেখছে? ত্রয়ী এদিক ওদিক তাকালো। দেখতে পেল কক্ষের দরজাটা খোলা। তবে কি এই দরজা থেকেই শীর্ষ তাকে দেখেছে? কিন্তু শীর্ষ না কিছুক্ষণ পূর্বেই এখান থেকে চলে গেল? মেয়েটা ততটা ভাবলো না। উঠে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলো। তবে ফিরে এসে আর মোবাইল ঘাটলো না। এখন ঘুমানোটা জরুরি। কাল সকালে আবার কলেজ আছে।
অম্বরে ঝলমলে সূর্যের অবস্থান। জনজীবন দিশেহারা প্রচন্ড গরমে। এই গরমের মধ্যে মেহের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে নাক মুখ কুঁচকে। তার ঠিক অভিমুখেই তার গাড়িটা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। গত প্রায় এক ঘন্টা ধরে ড্রাইভার গাড়িটা সাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু এখনো অব্দি ফলাফল শূন্য। আশেপাশে কোনো গ্যারেজ বা দোকানও দেখা যাচ্ছে না যে সেখানে গিয়ে গাড়ি সাড়াবে। বাড়িতে কল করে কাউকে আসতে বলল তারাও এখনো আসেনি। মেহের একটু এগিয়ে এসে দাঁড়াল ড্রাইভারের পাশাপাশি। নরম স্বরেই শুধাল,
“চাচা গাড়ি ঠিক করতে পেরেছেন কি?”
মধ্যবয়স্ক ড্রাইভার লোকটা বিরস মুখে তাকালো মেহেরের দিকে। হতাশ কণ্ঠে জবাব দিলো,
“না আম্মা।”
মেহের তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল। কপাল কুঁচকে দৃষ্টি দিলো এদিক ওদিক। ঠিক তখনই তার অভিমুখে একটি বাইক এসে ব্রেক কষলো। মেহের চমকাল। নিজের অবস্থান থেকে পিছিয়ে গেল দুই কদম। সাথে বিরক্তও হলো বেজায়। এমনিই ঝামেলায় ঝামেলার অন্ত নেই তার মধ্যে আবার এ এসেছে কোথা থেকে? নিশ্চয়ই মাঝ রাস্তায় একা একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুযোগ নিতে চলে এসেছে। মেহের তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো বাইক চালকের দিকে। ততক্ষণে বাইক চালকও বাইক থেকে নেমে এসেছে। মাথা থেকে হেলমেটটা সরিয়ে নিয়েছে। মেহের অবাক হলো। এ তো সেই আলভী নামক লোকটা। এই লোক এখানেও! মেহেরের অবাকত্বের মধ্যেই আলভী এসে দাঁড়াল তার মুখোমুখি। শান্ত কণ্ঠেই শুধাল,
“আপনি এখানে? গাড়ি নষ্ট হয়েছে বুঝি?”
“হ্যা। কিন্তু আপনি এখানে?”
“এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আপনাকে চোখে পড়তে দাঁড়িয়ে গেলাম।”
মেহেরের কেমন বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো আলভীর কথা। ছেলেটার সাথে কয়েকদিন যাবৎ হুট হাট দেখা হয়ে যাচ্ছে। আর প্রতিবারই জিজ্ঞেস করলে এক উত্তর ‘এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম, আপনাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম।’ ভাগ্যের হেরফেরে একবার বা দুইবার দেখা হতে পারে। তাই বলে বারবার। মেহের কপাল কুঁচকে রেখেই সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“প্রতিদিনই আমি যেখানে থাকি আপনি কি সে পথ দিয়েই যাতায়াত করেন যে আমাকে চোখে পড়ে যায়?”
আলভী বিরক্ত হলো। মেয়েটা কি তবে ধরে ফেললো যে সে তাকে অনুসরণ করে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো আলভী। আমতা আমতা করে বলল,
“ঐ আপনার বাড়ি আর আমার বাড়ি মনে হয় এক দিকে তাই আপনাকে চোখে পড়ে যায়।”
“কিন্তু আমি তো সর্বক্ষণ বাড়ির পথেই থাকি না। আর আপনার সাথেও আমার প্রতিবার বাড়ির পথেই দেখা হয়নি। কখনো শপিং মল, কখনো কলেজের অভিমুখে আবার কখনো অন্য রাস্তায় দেখা হয়েছে।”
আলভীর ভিতরে অপ্রস্তুত ভাব বাড়লও আরও। জোরপূর্বক হেসে সে বলল,
“না মানে ঐ কপালের জোরে হুট হাট দেখা হয়ে যায় আর কি। যাই হোক গাড়ি তো বোধহয় নষ্ট। আপনার কলেজেরও দেরি হয়ে যাচ্ছে। আপনি চাইলে আমি আপনাকে কলেজ পর্যন্ত দিয়ে আসতে পারি।”
মেহেরের খুব একটা বিশ্বাস হলো না আলভীর কথাগুলো। তবে আর কিছু বললও না সে। এখন তার কলেজে যাওয়াটা অধিক জরুরি। নয়তো দেখা যাবে কলেজে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেছে। মেহের মেনে নিল আলভীর কথাই। ড্রাইভারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে বসলো বাইকে।
কলেজ ক্যাম্পাসে আরফাকে সাথে নিয়ে হাঁটছিল ত্রয়ী। রাকিব এখনো আসেনি। হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল তাদের অভিমুখে। নরম স্বরেই শুধাল,
“আপনাদের মধ্যে ত্রয়ী কে?”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো। পলক ঝাপটে জবাব দিলো,
“জ্বি, আমি।”
“আপনাকে কলেজের ঐ বকুল তলায় একজন ডাকছেন।”
ত্রয়ী অবাক হলো। তকে আবার কে ডাকছে? শীর্ষ কি? কিন্তু শীর্ষ হলে তো সরাসরিই এখানে আসতে পারতো। মানুষ পাঠানোর কি দরকার? ত্রয়ী অবাক কণ্ঠেই শুধাল,
“কে ডাকছেন আমাকে?”
“আমি ঠিক চিনি না। আমি ওখান থেকে আসার সময় একজন আপনাদের দুজনকে দেখিয়ে বলল ত্রয়ীকে গিয়ে বলবে আমি ডাকছি। যাই হোক আসছি আমি। আমার ক্লাস শুরু হবে একটু পরেই।”
মেয়েটি চলে গেল। ত্রয়ী তাকালো বকুলতলার দিকে। তবে তার অবস্থান থেকে বকুলতলাটা স্পষ্ট রূপে দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা প্রথমে একবার ভাবলো সেখানে যাবে না। আবার ভাবলো পরিচিত কেউও তো ডাকতে পারে। তাই আরফাকে সাথে নিয়েই এলো বকুলতলায়। ত্রয়ী সেখানে পৌঁছাতেই একজন বলিষ্ঠদেহী পুরুষ এসে দাঁড়াল তার মুখোমুখি। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে শুধাল,
“আবার এলাম তোমার সাথে দেখা করতে। কেমন আছো ত্রয়ী?”
মেয়েটা চমকাল। এ তো সেই লোক। সেদিন মাঝ রাস্তায় শীর্ষের সাথে মা’রা’মা’রি করেছিল। তারপরে একদিন কলেজে এসে তার পথ আগলেও তো দাঁড়িয়েছিল। এ লোক আবার এখানে এসেছে কেন? ত্রয়ী কপালে ভাঁজ ফেলল। অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“আপনি আমাকে এখানে ডাকছিলেন?”
কায়সার মাথা নাড়ালো। ছোট করে উত্তর দিলো,
“হ্যা।”
“কিন্তু কেন?”
“তোমার সাথে কথা বলতে।”
“কিন্তু আপনাকে তো আমি ভালোভাবে চিনি না।”
“তা তো আমিও তোমাকে ভালোভাবে চিনি না। কিন্তু চেনার ভীষণ ইচ্ছা।”
ত্রয়ী বিরক্ত হলো ভীষণ। এই শহরে আসার পর থেকে তার জীবনে ভয়ং’কর সব মানুষের আনাগোনা যেন সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য ঘরেই যেখান শীর্ষ নামক ভয়ং’কর মানবের বসবাস সেখানে বাইরে ভয়ং’কর মানবের আনাগোনা খুব স্বাভাবিক। ত্রয়ী কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলল,
“কিন্তু আমার সে ইচ্ছে নেই।”
কায়সার ততটা গায়ে মাখলো না ত্রয়ীর কথা। আলতো হেসে বলল,
“চলার পথে আমাদের অনেক কিছুরই পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করা থাকে না বা ইচ্ছে থাকে না। তবুও আমাদের জীবনে তাই ঘটে। তোমার আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনই না হয় ধরে নাও। আমার ভিতরের তীব্র ইচ্ছার দাপটেই আমি তোমাকে চিনবো, জানবো। আবার তোমার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমাকে তোমার চিনতে হবে, জানতে হবে।”
ত্রয়ীর মেজাজ গরম হলো। এই লোক কে যে তাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধেও চিনতে হবে জানতে হবে? ত্রয়ী শক্ত কণ্ঠে কিছু বলতে চাইল কায়সারকে। তবে তার পূর্বেই খেকিয়ে উঠল আরফা। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“আপনি কোন দেশের প্রেসিডেন্ট যে আপনাকে চিনতে হবে, জানতে হবে? আপনাকে আমার বান্ধবী চিনবেও না, জানবেও না। কি করবেন আপনি?”
কায়সার ফুঁসে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এই মেয়ে আমি তোমাকে কিছু বলেছি? যার সাথে কথা বলছি সে কিছু বলছে না আর তুমি ফটর ফটর করছো। বেয়াদব মেয়ে।”
আরফা তেতে গেল আরও। কণ্ঠে গভীর রোষ নিয়ে বলল,
“আপনি কি বললেন? আমি বেয়াদব মেয়ে? ঠিক আছে তাহলে আমিও আমার বান্ধবীর হয়ে কথা বলেছি, বেশ করেছি। আরও বলবো। পারলে আটকান।”
“তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো।”
“আরও করব।”
ত্রয়ী ভরকালো কায়সার এবং আরফার ঝগড়ায়। কি শুরু করেছে এরা দুজন? বাচ্চাদের ন্যায় পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে। মেয়েটা চোখ ঘুরিয়ে তাকালো আশেপাশে। অনেকেই তাদের দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিশ্চয়ই কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে এক জোড়া প্রাপ্তবয়স্ক নর নারীর ঝগড়া ভালো চোখে দেখছে না তারা। নাহ, এদের এখন থামানো উচিত। নয়তো মান ইজ্জত বলতে কিছু থাকবে না। ত্রয়ী হাত বাড়িয়ে চেপে ধরলো আরফার এক হাত। টেনে নিয়ে শ্রেণীকক্ষের দিকে যেতে যেতে বলল,
“আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চল।”
আরফা তবুও দমলো না। ত্রয়ীর সাথে যেতে যেতে সে তাকালো কায়সারের দিকে। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“যে না চেহারা, নাম রাখছে পেয়ারা।”
কায়সার দাঁতে দাঁত পিষলো। কণ্ঠ উঁচিয়ে বলল,
“অভদ্র, বেয়াদব মেয়ে।”
রাত বারোটার অধিক। শহরের ব্যস্তময় পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে উঠেছে এই মুহূর্তে। ত্রয়ী বিছানায় শুয়ে আছে। চোখে কেবল ঘুমের আভা লেগেছে। ঠিক তখনই বালিশের পাশে রাখা তার মোবাইলটা বেজে উঠল প্রবল ঝংকার তুলে। ত্রয়ী ধরফরিয়ে উঠে বসলো বিছানায়। আকস্মিক চোখ থেকে ঘুম ছুটে যাওয়ায় মস্তিষ্ক সক্রিয় হতে সময় লাগলো কিছুটা। কিন্তু মস্তিষ্ক সক্রিয় হতেই বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে এলো মেয়েটার। নির্ঘাত ঐ শীর্ষ ব্যাটা কল করেছে। নয়তো আর কেউ নেই যে এত রাতে কল করে তার ঘুমের বারোটা বাজাবে। ত্রয়ী একরাশ বিরক্তি নিয়ে কলটা ধরলো। মোবাইলটা কানের কাছে নিয়ে বলল,
“হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম।”
শীর্ষ সালামের জবাব দিয়েই বলল,
“কফি নিয়ে আয় সুইমিং পুলের নিকটে। আমি অপেক্ষা করছি সেখানে।”
“কিন্তু এত রাতে…..”
ত্রয়ীর কথাটা শুনলো না শীর্ষ। তার পূর্বেই কল কাটলো। বিরক্তি বাড়লো মেয়েটার। এত রাতে ঘুম ভাঙিয়ে কফি? প্রতিদিন একটা নাটক পেয়েছে এই লোক। কিছু বলাও যাচ্ছে না। শত হলেও এরা ত্রয়ীর আশ্রয়দাতা। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো সে। আর কোনো উপায় না পেয়ে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এলো কফি বানাতে।
বেশ কিছুটা সময় নিয়ে এক মগ কফি হাতে সুইমিং পুলের নিকট এগিয়ে এলো ত্রয়ী। দূর থেকেই লক্ষ্য করল শীর্ষ পুলের স্বচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে। মেয়েটা চোখ মুখ কুঁচকাল। তীব্র ক্রোধ নিয়ে মনে মনে বলল,
“ইচ্ছে তো করছে ব্যাটাকে এই কফির মধ্যেই চুবিয়ে মা’রি। দিন রাত একটা মানুষ এত কফি খায় কিভাবে আল্লাহ মালুম। অবশ্য এটা মানুষ নাকি এলিয়েন সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”
মনে মনে এতগুলো কথা বললেও এর একটা কথাও মুখে প্রকাশ করার সাহস হলো না ত্রয়ীর। সে এগিয়ে এসে দাঁড়াল শীর্ষের নিকটে। ওষ্ঠে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল,
অনুরাগে তুই পর্ব ২৮
“আপনার কফি।”
শীর্ষ চোখ তুলে তাকালো মেয়েটির দিকে। তার হাত থেকে কফির মগটা নিতে নিতে শুধাল,
“কফি শুধু আমার জন্য এনেছিস? তোর জন্য আনিসনি?”