অনুরাগে তুই পর্ব ৩১
সাদিয়া শওকত বাবলি
ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল,
“খেলা দেখছো নাকি?”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো। সাহেদকে দেখে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লো সে। ওদিকে মাঠে শীর্ষ দাঁড়িয়ে রয়েছে আর অভিমুখে সাহেদ। হাজার হলেও লোকটা তার শিক্ষক। একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। তার কথার উত্তর না দিয়ে কি পারা যায়? উত্তর না দিলে বিষয়টা খারাপ দেখাবে। আবার কোনো উত্তর দিলেও শীর্ষ রেগে যাবে। সেদিন কার কাছ থেকে না কার কাছ থেকে শুনেছিল সে সাহেদের সাথে কথা বলেছে তাতেই যে পরিমাণ রেগে গিয়েছিল আর আজ তো একদম মুখোমুখি। ত্রয়ী ঢোক গিললো। সাহেদের প্রশ্নের বিপরীতে জোরপূর্বক হাসলো একটু খানি। সাহেদ তাকালো শীর্ষদের দিকে। ওষ্ঠে হাসির ধারা বজায় রেখেই বলল,
“শীর্ষরা ভালোই খেলছে। মনে হচ্ছে জিতে যাবে আজ।”
রিমা ভাইয়ের খেলা দেখছিল আর বান্ধবীদের সাথে সে বিষয়েই আলোচনা করছিল। তার নজর ত্রয়ী এবং সাহেদের দিকে না পড়লেও শিলার নজর ঠিকই পড়লো। সে কনুই দিয়ে খোঁচা দিলো রিমাকে। রিমা বিরক্ত হলো। কপাল কুঁচকে শুধাল,
“কি?”
শিলা সাহেদ এবং ত্রয়ীর দিকে ইশারা করে বলল,
“ঐ দেখ।”
রিমা ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো ত্রয়ী এবং সাহেদের দিকে। সাথে সাথে চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল তার। সাহেদ আবার ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলছে? কই তার সাথে তো কখনো নিজে থেকে এভাবে এসে কথা বলে না। তাহলে ঐ মেয়েটার সাথে বারবার এত কথা কিসের? রিমার দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। সাহেদ ফের ত্রয়ীকে বলল,
“তোমাকে সেদিন যা জিজ্ঞেস করেছিলাম সে ব্যাপারে পরবর্তীতে আর খোঁজ নিয়েছিলে?”
ত্রয়ী ডানে বামে মাথা ঝাঁকিয়ে ‘না’ বোধক জবাব দিলো। পরপরা আবার ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো শীর্ষের দিকে। শীর্ষ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখে মুখে তার তীক্ষ্মতার ছড়াছড়ি। ললাটে ভাঁজ। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল মেয়েটার। এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো সে। তখনই একটি একটি উঁচু কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে এলো,
“রেডি?”
শীর্ষ ব্যাট হাতে নিজের অবস্থান ঠিক করল। মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,
“হ্যা, বল কর।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই বিপরীত পক্ষের বলার তীব্রবেগে বল ছুঁড়ে দিলো শীর্ষের দিকে। শীর্ষ ব্যাটে বলে লাগিয়ে দিলো তৎক্ষণাৎ। বলটা সোজা উড়াল দিলো ত্রয়ীদের দিকে। মেয়েটা হকচকালো। হৃদয়টা ভয়ে ছলকে উঠল যেন। এটা নিশ্চয়ই সাহেদের সাথে কথা বলার অপরাধে শীর্ষ তাকে উদ্দেশ্য করেই ছুঁড়েছে। ত্রয়ী দ্রুত উঠে দাঁড়াল। সরে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত হলো খুব করে। কিন্তু তাকে আর সরে যেতে হলো না। তাকে অবাক করে দিয়ে বলটা সোজা গিয়ে আঘাত করল সাহেদের হাঁটুতে। আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে উঠল বেচারা। এত দূর থেকে বলটা ছুটে আসায় ব্যথাও পেল বেশ। সাহেদ কণ্ঠে ব্যথাতুর ধ্বনি তুলে হাঁটু চেপে বসে পড়লো মাটিতে। সাথে সাথে চারদিকে হইচই পড়ে গেল। রিমা, শিলাসহ আরও ছাত্র ছাত্রীরা ছুটে এসে ভীড় জমালো সাহেদের চারদিকে। রিমা হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়লো লোকটার নিকটে। অস্থির কণ্ঠে শুধাল,
“কি হয়েছে স্যার? বেশি ব্যথা পেয়েছেন?”
শীর্ষ, আলভী, রবিও খেলা রেখে ছুটে এলো সেখানে। শীর্ষ ভীর ঠেলে ঢুকলো ভিতরে। বসে পড়লো সাহেদের পাশ ঘেঁষে। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“স্যরি, স্যরি রে ভাই। আমি দেখে বলটা ছুড়িনি।”
পরপর কণ্ঠ খাদে নামালো সে। সাহেদের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“আপাতত হাঁটুতে মে’রে সাবধান করলাম। এরপরেও যদি দেখি তুই আবার আমার ঘরের দিকে নজর দিয়েছিস একদম জায়গা মতো মে’রে দেব। তারপর তোর ভবিষ্যতে লাল বাত্তি।”
থামল শীর্ষ। চিবিয়ে চিবিয়ে ফের বলল,
“বংশের প্রদীপ জ্বালানোর ইচ্ছে থাকলে আজ থেকে নিজের চোখ, নাক এবং মনকে সংযত রাখিস।”
সাহেদ চমকাল শীর্ষের কণ্ঠ নিঃসৃত ধ্বনিগুলো শ্রবণে। শীর্ষ কি বলল তাকে? তার ঘরের দিকে নজর দিতে বারণ করল? তবে কি শীর্ষ জেনে গেছে সে রিমাকে পছন্দ করে? সাহেদ ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিল। সে আগেই ভেবেছিল রিমার সাথে তাকে শীর্ষ মানবে না। আর হলোও তাই। সাহেদ জোরপূর্বক হাসলো একটু খানি। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,
“সমস্যা নেই। তেমন ব্যথা পাইনি। সামান্য একটা বলই তো পড়েছে।”
শীর্ষ কাঁধ চেপে ধরলো সাহেদের। কপাল কুঁচকে শুধাল,
“ঠিক তো? বেশি ব্যথা পাশনি তো?”
সাহেদ অবাক না হয়ে পারলো না। ইচ্ছে করে বল মা’র’লো, একটু আগে কানে কানে তার ভবিষ্যতে লাল বাত্তি জ্বালানোর হুমকি পর্যন্ত দিলো আর এখন লোকচক্ষুর সম্মুখে কত দরদ! দাঁতে দাঁত পিষলো সাহেদ। চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দিলো,
“না, বেশি ব্যথা পাইনি। তোরা গিয়ে খেলা শুরু কর।”
সবাই একটু হলেও আস্বস্ত হলো। ভীর কমিয়ে ফের যে যার স্থানে চলে গেল। শীর্ষরাও আবার খেলা শুরু করল। তবে রিমা আর শিলা গেল না সাহেদের নিকট থেকে। রিমা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। বসলো তার এবং সাহেদের মাঝখানে। এই ত্রয়ীর সাথে সাহেদের এত কিসের কথা আজ সে দেখেই ছাড়বে।
বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। আকাশের উজ্জ্বল সূর্যটা তার তেজ বাড়িয়েছে আরও। চারদিকটা এমনিই গরমে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তার মধ্যে আবার এই খেলা। এই গরমে এসব খেলা টেলা না খেললে কি হতো? ক্লাস শেষে এতক্ষণে বাড়িতে গিয়ে খাওয়া, গোসল সেড়ে একটা চমৎকার ঘুমও দেওয়া যেতো। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো ত্রয়ীর। তাকালো সে মাঠের দিকে। মাঠের মধ্যে এই মুহূর্তে বিজয়ের উল্লাস চলছে। খেলায় জেতার আনন্দে শীর্ষ এবং তার দলের সদস্যরা গলাগলি বেঁধে লাফাচ্ছে। ত্রয়ীর চোখ মুখ কুঁচকে এলো। ঘাড় ঘুরিয়ে সে তাকালো তার পাশেই বসা রিমার দিকে। খেলা তো শেষ কিন্তু এই মেয়েটা এখনো উঠছে না কেন? এ কি আজ বাড়িতে যাবে না নাকি? আর এ বাড়িতে না গেলে সেও বা যাবে কিভাবে? ত্রয়ীর ভাবনার মধ্যেই শীর্ষ এসে দাঁড়াল তাদের অভিমুখে। হাঁপাতে হাঁপাতে রিমাকে বলল,
“মাকে বলিস আজ রাতে বাড়িতে ফিরবো না। খেলায় জেতার আনন্দে সব বন্ধুরা মিলে ক্লাবে পার্টি দেব ভাবছি।”
রিমা মাথা নাড়ালো। ছোট করে জবাব দিলো,
“আচ্ছা।”
তবে শীর্ষের কথা শুনে ত্রয়ী মনে মনে আনন্দিত হলো ভীষণ। লোকটা বাড়িতে না ফিরলেই ভালো। অন্তত আজ রাতটা একটু শান্তিতে কাটাতে পারবে সে।
রাত খুব বেশি নয়। কেবল ঘড়ির কাঁটায় এগারোটা দেখাচ্ছে। চারদিকটা এখনো কৃত্রিম উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। শীর্ষ ক্লাবে বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো আর মাঝে মাঝে মোবাইল ঘাটছিল। হঠাৎ তার নজরে পড়লো তার পুরোনো আইডিটা যেটা সে ত্রয়ীকে দিয়েছিল। আইডিটা এখনো অনলাইন দেখাচ্ছে। কপাল কুঁচকে এলো শীর্ষের। ত্রয়ী এখনো অনলাইনে কি করছে? সে দ্রুত পাসওয়ার্ড দিয়ে পুরোনো আইডিটায় ঢুকলো। না, সন্দেহভাজন কিছু নেই। ত্রয়ী কারো সাথে কথা বলছে না। তাহলে অনলাইনে কি এর? প্রতিদিন মাঝরাতে ঘুম ভাঙায় বলে মুখটা হাড়ির মতো করে রাখে। তাহলে আজ এখনো জেগে রয়েছে কেন? আজ যেহেতু সে বাড়িতে ফিরবে না সেহেতু মেয়েটা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে। তা না এখনো অনলাইনে উঁকি মে’রে রয়েছে। শীর্ষ আবার নিজের আইডিতে ফিরে এলো। হাত চালিয়ে মেসেজ করল,
“এখনো অনলাইনে কি তোর? ঘুমাচ্ছিস না কেন?”
ত্রয়ী পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ১০ টার দিকে মোবাইল নিয়ে বসেছিল একটা মুভি দেখবে বলে। শীর্ষ যেহেতু আজ বাড়িতে ফিরবে না সেহেতু মাঝরাতে ওঠার ভয় নেই। দুই আড়াই ঘন্টার মধ্যে মুভিটা শেষ করে ১২ টা কিংবা সাড়ে বারোটার দিকে ঘুমাবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। তার মধ্যে আবার এই মেসেজ। ত্রয়ী নোটিফিকেশন থেকে মেসেজটা দেখলো। তবে উত্তর দিলো না কোনো। নোটিফিকেশনটা সরিয়ে ফের মনোযোগী হলো মুভি দেখায়। শীর্ষ কিছুটা সময় অপেক্ষা করল ত্রয়ীর উত্তরের জন্য। এরপর আবার মেসেজ করল,
“কি সমস্যা তোর? উত্তর দিচ্ছিস না কেন? আমি মাঝরাতে ঘুম ভাঙালে তো মুখের দিকে তাকানো যায় না। তাহলে এখন ঘুমাচ্ছিস না কেন?”
ত্রয়ী দেখলো মেসেজ গুলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“মাঝ রাতে ঘুম ভাঙিয়ে কফি বানানো আর না ঘুমানো কি এক? আজাইরা, বদমাইশ লোক একটা।”
ত্রয়ী এবারেও কোনো উত্তর দিলো না। নোটিফিকেশন সরিয়ে আবারও মুভির দেখতে শুরু করল। মেজাজ বিগড়ালো শীর্ষের। মেয়েটা কি তাকে ইগনোর করছে? সে দ্রুত কল করল ত্রয়ীর নাম্বারে। বিরক্ত হলো মেয়েটা। লোকটা বাড়িতে থাকতে তো এক দন্ড শান্তি দেয় না। বাড়ির বাহিরে থেকেও শান্তি দিচ্ছে না। চাইছেটা কি এই লোক? ত্রয়ী একবার ভাবলো কলটা ধরবে না পরক্ষণেই আবার ভাবলো কল না ধরলে শীর্ষ রেগে যেতে পারে। এমনিই তার মেসেজের কোনো উত্তর দেয়নি তার উপর যদি কলও না ধরে। ত্রয়ী একটু সময় নিয়ে কলটা ধরলো। মোবাইলটা কানের নিকট নিয়ে নম্র কণ্ঠে বলল,
“হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম।”
শীর্ষ সালামের জবাব দিলো। পরপর রুক্ষ কণ্ঠে শুধাল,
“না ঘুমিয়ে এতো রাতে অনলাইনে কি তোর?”
ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। আমতা আমতা করে বলল,
“ঐ একটা মুভি দেখছিলাম আর কি।”
“মুভি দেখছিলি ভালো কথা। আমি যে মেসেজ গুলো করেছি তার উত্তর দিসনি কেন এতক্ষণ?”
“না মানে আসলে মুভির দেখায় এতটাই মশগুল ছিলাম যে আপনার মেসেজ দেখিনি, দুঃখিত।”
“মেসেজ তো মোবাইলেই গিয়েছে তাই না? আর নোটিফিকেশনে….”
এইটুকু বলে থেমে গেল শীর্ষ। তার আশেপাশে বসা সুশীল মানবসমাজ চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকেই। শীর্ষ কপাল কুঁচকালো। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,
“সমস্যা কি? তোরা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
সাথে সাথে সবাই অন্য দিকে ফিরে তাকালো। তবে কান তাদের এদিকেই। শীর্ষ জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। আদেশের স্বরে ত্রয়ীকে বলল,
“মুভি দেখতে হবে না। এখন ঘুমা তুই।”
“মুভিটার অনেকটা দেখা শেষ। আর একটু খানি বাকি আছে। ঐ টুকু দেখে ঘুমাই?”
“বাকিটা কাল দেখবি। এখন ঘুমাতে বলেছি ঘুমা। তোকে যেন আর অনলাইনে না দেখি।”
ত্রয়ী দ্বিরুক্তি করল না। ভদ্র মেয়ের মতো মেনে নিল শীর্ষের কথা। ছোট করে বলল,
“আচ্ছা।”
শীর্ষ স্বস্তি পেল একটু। মেয়েটা অনলাইনে থাকলেই তার কলিজাটা ছ্যাত ছ্যাত করতো। বারবার মনের দুয়ারে কড়া নাড়তো “এত রাতে ত্রয়ী অনলাইনে কি করছে? অন্য কারো সাথে কথা বলছে না তো? অন্য কারো প্রেমে পড়লো না তো।” ফলস্বরূপ সারারাত তার মন মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকতো। মেয়েটার দিকে নজর রাখার জন্য এই আইডি থেকে ঐ আইডি লাফাতে হতো ক্ষণে ক্ষণে। তার থেকে ত্রয়ীর অফলাইনে থাকাই ভালো। সেও একটু শান্তিতে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারবে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো শীর্ষ। পূর্বের তুলনায় কিছুটা নরম কণ্ঠে বলল,
“রাখছি আমি।”
কল কাটলো শীর্ষ। ত্রয়ী মুখ বাঁকালো সাথে সাথে। ভেংচি কেটে বলল,
“উনি বললেই আমাকে ঘুমাতে হবে নাকি? আগে মুভি দেখবো তারপর ঘুমাবো।”
ত্রয়ী আগে স্মার্টফোন ব্যবহার করেনি এর মানে এই নয় যে সে স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে কিছুই জানে না। গ্রামে থাকতে বন্ধু বান্ধবদের নিকট থেকে স্মার্টফোন সম্পর্কে অনেকটাই শিখেছিল আর যতটুকু বাকি ছিল তাও আফরার থেকে শিখে নিয়েছে। ত্রয়ী ফেসবুক, মেসেঞ্জার সব স্থান থেকে শীর্ষের আইডিটা লগ আউট করে দিলো। না থাকবে আইডি আর না তাকে অনলাইন দেখাবে। সে নিশ্চিন্তে এখন মুভি দেখতে পারবে।
মধ্য দুপুর। ত্রয়ী বসে রয়েছে গাড়িতে। কলেজ শেষে রিমা আর সে একসাথেই বাড়িতে ফিরছে। রিমা বসে রয়েছে তার পাশেই। এই সময়ে ব্যাগের মধ্যে হঠাৎ ত্রয়ীর মোবাইলটা বেজে উঠল। মেয়েটা ব্যাগ খুলে চটজলদি বের করল মোবাইলটা। রিমা এমনিই মোবাইলের রিংটোন শুনে তাকিয়েছিল ত্রয়ীর দিকে। কিন্তু তার হাতে থাকা মোবাইলটা দেখতেই চমকে উঠল। এক প্রকার হামলে পড়ে ছিনিয়ে নিলো মোবাইলটা। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
“এটা শীর্ষ ভাইয়ের মোবাইল না।”
ত্রয়ী কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
“হ্যা।”
“এটা তুই কোথায় পেয়েছিস?”
“শীর্ষ ভাইয়া আমাকে দিয়ে দিয়েছে।”
রিমা বোধ হয় বিশ্বাস করল না ত্রয়ীর কথা। চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল তার। মোবাইলটা উলটেপালটে দেখতে দেখতে বলল,
“এত দামী একটা মোবাইল শীর্ষ ভাই তোকে দিয়ে দিয়েছে? আর এটা আমাদের বিশ্বাস করতে বলছিস? এটা নিশ্চয়ই তুই চু’রি করেছিস।”
ত্রয়ী আঁতকে উঠল। সাথে হৃদয় ভারী হলো তার। শেষ পর্যন্ত একটা মোবাইলের জন্য কিনা রিমা তাকে চু’রি’র অপবাদ দিচ্ছে? আর এ মোবাইল তো সে চু’রি করেনি। শীর্ষই তাকে দিয়েছে। সে প্রথমে নিতেও চায়নি। তারপর শীর্ষ কত হুমকি ধমকি দিয়ে মোবাইলটা দিলো। আঁখি দ্বয় ভরে উঠল ত্রয়ীর। তবুও সে নিজেকে কোনোমতে সামলে বলল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৩০
“আমি সত্যিই মোবাইল চু’রি করিনি। শীর্ষ ভাইয়া নিজেই আমাকে এটা দিয়েছেন।”
“মিথ্যা বলার জায়গা পাস না? যে মোবাইল শীর্ষ ভাইয়া আমাদের কাউকে ধরতে পর্যন্ত দেয় না সে মোবাইল কিনা তোকে এমনি এমনি দিয়ে দিয়েছে! নাকি তুই চু’রি করেছিস?”
এই টুকু বলে থামল রিমা। দাঁতে দাঁত চেপে ফের বলল,
“আজ বাসায় চল। হচ্ছে তোর। বাবা দয়া ধরে গ্রাম থেকে একটা চো’র ধরে নিয়ে এসেছে বাড়িতে।”