অনুরাগে তুই পর্ব ৩২
সাদিয়া শওকত বাবলি
এই টুকু বলে থামল রিমা। দাঁতে দাঁত চেপে ফের বলল,
“আজ বাসায় চল। হচ্ছে তোর। বাবা দয়া ধরে গ্রাম থেকে একটা চো’র ধরে নিয়ে এসেছে বাড়িতে।”
ত্রয়ীর কান্না পেল ভীষণ। কিছু না করেও এত বড়ো একটি অপবাদ নেওয়ার ক্ষমতা যে তার ন্যায় এক নাজুক রমনীর অভ্যন্তরে নেই। ওষ্ঠ কামড়ে অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকালো সে। ধরা গলায় বলল,
“আমি চু’রি করিনি। সত্যি বলছি শীর্ষ ভাই নিজেই এটা আমাকে দিয়েছেন।”
রিমা কানে নিল না ত্রয়ীর কথা। জ্বলন্ত চোখ নিয়ে সে দৃষ্টি দিলো অভিমুখে। গলা উঁচিয়ে ড্রাইভারকে বলল,
“তাড়াতাড়ি গাড়ি চালান চাচা। আজ বাড়িতে গিয়ে এই চো’র’টা’র একটা হেস্তনেস্ত করবো আমি।”
ত্রয়ী পথিমধ্যে অনেক চেষ্টা করল রিমাকে বুঝানোর। কিন্তু রিমা তার কোনো কথাই শুনলো না। টেনে হিচড়ে নিয়ে এলো বাড়িতে। সদর দরজা থেকে ঢুকেই এক প্রকার ছুঁড়ে ফেললো মেয়েটাকে। ত্রয়ী নিজেকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেও পারলো না। হুমড়ি খেয়ে পড়লো বসার কক্ষের মেঝেতে। রিমা অগ্নি দৃষ্টিতে এক পলক তাকালো মেয়েটির দিকে। অতঃপর চ্যাচিয়ে উঠে ডাকল,
“মা, মা কোথায় তুমি? দেখে যাও বাড়িতে কোন চো’র এনে তুলেছো তোমরা। একে আবার আদর খাওয়াও পড়াও!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফাহমিদা বেগম এবং নুড়ি রান্নাঘরেই ছিল। হঠাৎ রিমার কণ্ঠের হাক ডাক শ্রবণে ছুটে এলো তারা। ত্রয়ীকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠল দুজনেই। ফাহমিদা বেগম ছুটে গেলেন মেয়েটির দিকে। অস্থির হয়ে শুধালেন,
“একি মা! তুমি এখানে এভাবে পড়লে কিভাবে?”
কান্নারা যেন এবার আর বাঁধা মানতে চাইলো না। কণ্ঠনালীর মধ্যে দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো বাইরে। ডুকরে কেঁদে উঠল ত্রয়ী। ফাহমিদা বেগম বিচলিত হলেন। মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে ফের শুধালেন,
“একি কাঁদছো কেন? ব্যথা পেয়েছো কোথাও? ইসস এখানে পড়লেও বা কিভাবে?”
রিমা মুখ বাঁকালো। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
“আমি ফেলেছি।”
ফাহমিদা বেগম হতবাক হয়ে পড়লেন। তার এই বড়ো মেয়েটা একটু উগ্র স্বভাবের তা তিনি জানতেন। কিন্তু তাই বলে এতটা! ত্রয়ীর মতো একটি নরম কোমল মেয়েকে এভাবে ফেলে দিলো? মেয়েটা নিশ্চয়ই ব্যথা পেয়েছে ভীষণ। কাঁদছে কেমন করে। ফাহমিদা বেগম ব্যথিত হলেন। ত্রয়ীকে ধরে দাঁড় করালেন তিনি। রিমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছুটা শক্ত কণ্ঠেই বললেন,
“এতটা নষ্ট হলি তুই কবে থেকে? কেন ফেলেছিস ওকে?”
রিমা গায়ে মাখলো না মায়ের শক্ত কণ্ঠকে। বরং রুক্ষ কণ্ঠে সে জবাব দিলো,
“ফেলবো না তো কি করবো? ও কি করেছে জানো তুমি? চু’রি করেছে ও, চু’রি।”
ফাহমিদা বেগম চমকালেন। ত্রয়ী চু’রি করেছে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো তার। মেয়েটাকে বেশ কিছুদিন ধরেই তো দেখছেন তিনি। মেয়েটা যথেষ্ট নরম এবং ভদ্র। এই মেয়ে চু’রি’র মতো একটি জঘন্য কর্ম করতে পারে বলে মন মানলো না ফাহমিদা বেগমের। তিনি ত্রয়ীর দিকে এক পলক তাকিয়ে ফের দৃষ্টি দিলো রিমার দিকে। কিছুটা চকিত কণ্ঠে বললেন,
“কিসব আবোল তাবোল বলছিস? ও চু’রি করতে যাবে কেন?”
রিমা তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটা ঘেটে শীর্ষের মোবাইলটা বের করল। সেটা মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এই দেখো মা শীর্ষ ভাইয়ের মোবাইল। এটা ওর কাছ থেকে পেয়েছি। ও যদি চু’রি নাই করে থাকে তাহলে এই মোবাইল ওর কাছে গেলো কিভাবে তুমিই বলো।”
ত্রয়ী তাকালো ফাহমিদা বেগমের দিকে। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলল,
“বিশ্বাস করুন আন্টি আমি চু’রি করিনি। শীর্ষ ভাইয়া নিজে আমাকে এই মোবাইলটা দিয়েছেন।”
রিমা এগিয়ে গেলো মায়ের দিকে। বুঝানোর উদ্দেশ্যে বলল,
“মা তোমার বিশ্বাস হয় শীর্ষ ভাইয়া এত দামি একটা মোবাইল ওকে দিয়ে দিবে? এই মোবাইল ভাইয়া আমাদের কাউকে ধরতে দেয় না। অথচ ওর মতো একটা দুই দিনের মেয়েকে নাকি একদম দিয়ে দিয়েছে।”
এই টুকু বলে থামলো রিমা। ত্রয়ীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে দৃঢ়তার সাথে বলল,
“এই মোবাইল নির্ঘাত ও চু’রি করেছে। এখন ধরা পড়ে যাওয়ায় ভাইয়ার কথা বলছে।”
এত কিছুর পরও ফাহমিদা বেগমের কেমন বিশ্বাস হলো না রিমার কথা। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে সে বলল,
“এক বাড়িতে থেকে মোবাইলের মতো একটা জিনিস ও চু’রি করতে যাবে কেন? ও কি জানে না এই মোবাইল কারো চোখে পড়লেই সে ধরে ফেলবে এটা শীর্ষের।”
“চো’রে অত কিছু ভেবে চু’রি করে নাকি? দামিও মোবাইল দেখেছে লোভ সামলাতে পারেনি তাই চু’রি করে নিয়েছে।”
ফাহমিদা বেগম বিরক্ত হলেন। কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন,
“এসব আজেবাজে কথা শুনতে আর ভালো লাগছে না। ত্রয়ী যখন বলছে এটা শীর্ষ ওকে দিয়েছে তখন বিষয়টা শীর্ষের কাছে জিজ্ঞেস করলেই তো ঝামেলা চুকে যায়।”
“ভাইয়ার কাছে আবার কি জিজ্ঞেস করবো? আমি নিশ্চিত ও এটা চু’রি করেছে। নয়তো ভাইয়া ওর মতো দুই দিনের একটা আশ্রিতাকে এত দামিও মোবাইল কখনোই দিবে না।”
‘আশ্রিতা’ শব্দটা কানে লাগলো ত্রয়ীর। হৃদয় ভারী হলো তার। হ্যা, সত্যিইও তো সে আশ্রিতা। এ বাড়ির উপরে, এ বাড়ির মানুষ গুলোর উপরে তার কোনো অধিকার নেই। তারা তার মতো একটি এতিম অসহায় মেয়ের আপন নয়। তারা শুধুমাত্র ত্রয়ীর আশ্রয়দাতা। কিন্তু তাই বলে তারা তাকে এভাবে চো’র উপাধি দিতে পারে না। সে আশ্রিতা ঠিক আছে। কিন্তু চো’র নয়। এত জঘন্য একটা অপবাদের কথা শুনতে শুনতে হাঁপিয়ে উঠল মেয়েটি। হৃদয়ে ক্রোধেরা চনমনে হয়ে উঠল। কান্না আটকে প্রতিবাদী কণ্ঠে বলল,
“আমি আশ্রিতা হতে পারি কিন্তু চো’র নই। আমি চু’রি করিনি। দয়া করে এত বড়ো একটি জঘন্য অপবাদ আমার উপরে দিবেন না।”
রিমা দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে বলল,
“কথায় আছে না চো’রে’র মায়ের বড়ো গলা। এখনো সময় আছে নিজের চু’রি’র কথা স্বীকার কর বলছি। নয়তো তোর এই চু’রি’র কথা যদি একবার ভাইয়ার কানে যায় তখন কিন্তু আর কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না। ভাইয়া একদম তোকে মে’রে’ই ফেলবে।”
ত্রয়ীর মেজাজ খারাপ হলো। একটা মানুষ আর কতক্ষণ সহ্য করতে পারে? সে অসহায় বলে কি এরা তার সাথে যা খুশি করবে? যা খুশি বলে অপমান করবে? ত্রয়ী চোখ মুখ শক্ত করল। গলা উঁচিয়ে বলল,
“বলছি তো আমি চু’রি করিনি। তারপরও বারবার এক কথা কেন বলছেন? আর কি বললেন ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে মে’রে ফেলবে? ডাকুন আপনার ভাইয়াকে। এরপর যা কথা হবে আপনার ভাইয়ার সামনেই হবে।”
রিমা ফুঁসে উঠল। তাদের বাড়িতে থাকে, তাদেরই আশ্রিতা, আবার তার সাথেই উঁচু কণ্ঠে কথা বলছে? কত বড়ো সাহস এর! অনেকটা ক্রোধের বশেই মেয়েটা ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ত্রয়ীর গালে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“আমাদের খাস, আমাদের পড়িস আবার আমার সাথেই উঁচু গলায় কথা বলিস? তোকে এত বড়ো সাহস কে দিয়েছে যে আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলিস?”
থাপ্পড়ের দাপটে ত্রয়ীর মাথাটা যেন ঘুরে উঠল। গালটাও টনটন করে উঠল ব্যথায়। আনমনেই গালে হাত দিলো মেয়েটা। নুড়ি এবং ফাহমিদা বেগমও আঁতকে উঠলেন রিমার হঠাৎ এহেন কার্যে। নুড়ি ছুটে এসে ধরল ত্রয়ীকে। ফাহমিদা বেগম অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন মেয়ের দিকে। রুক্ষ কণ্ঠে বললেন,
“এটা কি করলি তুই? মেয়েটাকে এভাবে মা’র’লি কেন?”
“মে’রে’ছি বেশ করেছি। আরও মা’র’বো। কত বড়ো সাহস ওর আমার সাথে উঁচু কণ্ঠে কথা বলে।”
“কেন তুই কোন দেশের কি হয়ে গেছিস যে তোর সাথে উঁচু কণ্ঠে কথা বলা যাবে না? একে তো কোনো প্রমাণ ছাড়াই মেয়েটাকে সেই তখন থেকে চো’র চো’র বলে হেদিয়ে ম’র’ছি’লি এখন আবার থাপ্পড় মে’রে’ছি’স।”
“মা তুমি ওর হয়ে সাফাই গাইবে না তো। ও….”
এই টুকু বলেই থামতে হলো রিমাকে। মা মেয়ের বাক বিতণ্ডার মধ্যে হঠাৎ গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে এলো,
“কি সমস্যা? এখানে এত চেঁচামেচি কিসের?”
পুরুষালী কণ্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই সেদিকে ফিরে তাকালো সবাই। দেখা পেল শীর্ষের। উসকোখুসকো চুল তার। চোখে মুখে এখনো ঘুম ঘুম ভাব। সারারাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সকালের দিকে বাড়ি ফিরে ঘুম দিয়েছিল সে। ভেবেছিল আজ সারাদিন ঘুমাবে। কিন্তু এদের চেঁচামেচিতে ঘরে থাকাই তো দায়। বিরক্তিতে কপালে ভাজ পড়লো শীর্ষের। মূল ঘটনা বোঝার তাগিদে সকলের দিকে দৃষ্টি দিলো সে। হঠাৎ ত্রয়ীর দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেল। কপাল টানটান হলো মুহুর্তেই। গুরুগম্ভীর কণ্ঠে ফের শুধাল,
“কি হয়েছে এখানে? ওর চোখে পানি কেন?”
রিমা যেন আরও সুযোগ পেল। শীর্ষের মোবাইলটা নিয়ে ছুটে গেল তার দিকে। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
“এই দেখ ভাইয়া তোর মোবাইল। ত্রয়ীর থেকে পেয়েছি।”
“তো?”
“তো মানে কি? এই মোবাইল ওর কাছে গেল কিভাবে? নিশ্চয়ই ও….”
এই পর্যন্ত বলতেই শীর্ষ থামিয়ে দিলো রিমাকে। কপাল কুঁচকে বলল,
“আমি দিয়েছি ওকে।”
রিমা চমকাল, ভরকালো। সত্যিটা শুনে পা দুটো যেন দুর্বল হয়ে এলো তার। এর মানে কি এতক্ষণ সে যা যা ভেবেছিল সব ভুল? মেয়েটা অস্ফুট কণ্ঠে আওড়ালো,
“তুই দিয়েছিস?”
“হ্যা আমিই দিয়েছি। নয়তো কার এত সাহস যে আমার মোবাইল ধরবে।”
রিমার কেমন যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো কথাটা। শীর্ষ যে মোবাইল কাউকে ধরতে তা এই মেয়েটাকে এত সহজে দিয়ে দিলো? রিমা ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে শুধাল,
“ওকে বাঁচানোর জন্য তুই মিথ্যা বলছিস তাই না ভাইয়া?”
“মিথ্যা কেন বলবো? আর ওকেই বা আমার বাঁচানোর কি প্রয়োজন? কি হয়েছে ওর?”
রিমা শীর্ষের প্রশ্নের উত্তর দিলো না। তার সব চিন্তাধারা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একটু সময় নিল সে। নিজে থেকে ফের শুধাল,
“তুই ত্রয়ীকে তোর মোবাইলটা দিয়ে দিয়েছিস কেন?”
“ওর ছিল না বলে দিয়েছি।”
“তাই বলে এত দামী মোবাইল?”
“আমি কাউকে অর্থের হিসেব করে কিছু দেই না। তাছাড়া আমি নতুন একটা কিনবো ভেবেছি তাই পুরাতনটা ওকে দিয়েছি।”
এ পর্যায়ে মুখ খুললো ত্রয়ী। ভেজা কণ্ঠে বলল,
“দেখেছেন আমি বলেছিলাম আমি চু’রি করিনি। শীর্ষ ভাইয়া নিজেই আমাকে মোবাইলটা দিয়েছিল।”
থামলো মেয়েটা। লম্বা একটি নিঃশ্বাস টেনে ফের বলল,
“আমি গরিব, অসহায়, এতিম কিংবা আপনাদের বাড়ির আশ্রিতা হতে পারি কিন্তু চো’র নই। আমার দাদি আমাকে সেই শিক্ষা দেয়নি।”
শীর্ষ অবাক হলো। কপালের ভাঁজ আরও গাঢ় করে বলল,
“চু’রি! কিসের চু’রি? এখানে ঠিক কি হয়েছে কেউ বলবে আমাকে?”
রিমা ফের ঢোক গিললো। এখানে যা যা হয়েছে তা যদি কোনোভাবে শীর্ষের কানে যায় তাহলে তাকে আর আস্ত রাখবে না। ফাহমিদা বেগমও ছেলের ক্রোধ সম্পর্কে জানেন ভালোভাবে। তাই তিনি কিছু বলতে গিয়েও চুপ রইলেন। তবে চুপ রইলো না নুড়ি। চটপটে কণ্ঠে বলল,
“আপনের বইনে এই মোবাইলের লাইগা ত্রয়ী আপারে চো’র ধরছে। এক খান খাপ্পড়ও দিছে গালে।”
শীর্ষের তাকালো ত্রয়ীর দিকে। মেয়েটির চোখের কোল ঘেঁষে এখনো অশ্রুর আনাগোনা। ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। শীর্ষ জানতো তার এই বোনটা একটু অহংকারী, উগ্র। বাবার অর্থ সম্পদের দাপটে মাটিতে রাখতেও এর কষ্ট। এ নিয়ে রিমাকে কম বুঝায়নি সে কিংবা পরিবারের লোকজন। কিন্তু এ মেয়ে তো অবুঝ। শীর্ষের চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“কোন সাহসে তুই ওকে চো’রে’র উপাধি দিয়েছিস? আর আমার মোবাইল চু’রি হলে আমি কি তোদের বলতাম না? এতটা চুপচাপ এবং স্বাভাবিক থাকতাম? এই টুকু তোর মাথায় ধরেনি? তারপর কোন বুদ্ধিতে তুই ওকে চো’র উপাধি দিলি?”
“না মানে আমি….”
শীর্ষ ধমকে উঠল। হুংকার ছেড়ে বলল,
“লাই দিতে দিতে মাথায় উঠে গেছিস। মানুষকে মানুষ বলে গণ্য না করার প্রবণতা তোর ভিতরে আগে থেকেই ছিল। বারবার আমি তোকে সাবধান করেছি, বুঝিয়েছি তারপরও আজ ত্রয়ীর সাথে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করলি কেন? ওর গায়ে হাত তোলার সাহস পেলি কোথায় তুই?”
রিমা কেঁপে উঠল শীর্ষের হুংকারে। আমতা আমতা শুরু করল সে। শীর্ষ ক্রোধে দিশেহারা হয়ে পড়লো। তেড়ে এলো বোনের দিকে। ফাহমিদা বেগম ভীত হলেন। শীর্ষের যা রাগ তাতে আজ মেয়েটাকে মেরেও ফেলতে পারে। ফাহমিদা বেগম ছুটে এসে দাঁড়ালেন শীর্ষের পথ আগলে। অস্থির হয়ে বললেন,
“শান্ত হ বাবা। ও বুঝতে পারেনি। বুঝলে এমন করতো না।”
পরপর তিনি তাকালেন ত্রয়ী এবং রিমার দিকে। তাড়াহুড়ো করে বললেন,
“তোমরা দুইজনই এখন ঘরে যাও মা। এ বিষয়ে আমরা পরে কথা বলবো।”
ত্রয়ী এমনিতেও এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে চাইছিল না। এতক্ষণ এত মিথ্যা অপবাদ, অপমান সহ্য করতে করতে ভিতরটা ভীষণ নাজুক হয়ে পড়েছে তার। ফাহমিদা বেগমের তরফ থেকে আদেশ আসার সাথে সাথে আর দেরি করল না সে। লম্বা লম্বা পা ফেলে ছুটলো নিজ কক্ষের দিকে। রিমাও পা বাড়ালো কক্ষের দিকে। শীর্ষ তখনই পিছন তার থেকে ডেকে উঠল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৩১
“দাঁড়া।”
রিমা দাঁড়াল। ভয়ে ভয়ে তাকালো ভাইয়ের মুখ পানে। শীর্ষ এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল তার মুখোমুখি। কোনোরূপ বাক্যব্যয় না করে মেয়েটার হাত থেকে ছিনিয়ে নিল নিজের মোবাইলটা। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“নিজের ভিতরের অহংকার, ঔদ্ধত্য সংবরণ করতে শেখ। নয়তো তুই আজ যাদের মানুষ বলে গণ্য করছিস না দুই দিন পর তারাও তোকে মানুষ বলে গণ্য করবে না।”
থামলো শীর্ষ। ফের রিমাকে শাসিয়ে বলল,
“কখনো এটা ভাববি না তুই আমার বোন বলে তোর সকল অন্যায়কে আমি প্রশ্রয় দেব। অন্যায় মানেই অন্যায় তা তুই করিস বা অন্য কেউ।”