অনুরাগে তুই পর্ব ৩৩
সাদিয়া শওকত বাবলি
কোনোরূপ বাক্যব্যয় না করে মেয়েটার হাত থেকে ছিনিয়ে নিল নিজের মোবাইলটা। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“নিজের ভিতরের অহংকার, ঔদ্ধত্য সংবরণ করতে শেখ। নয়তো তুই আজ যাদের মানুষ বলে গণ্য করছিস না দুই দিন পর তারাও তোকে মানুষ বলে গণ্য করবে না।”
শীর্ষ ক্রোধে ফোঁস ফোঁস করতে করতে নিজের ঘটালো। দাঁতে দাঁত পিষলো রিমা। একটা সামান্য আশ্রিতার জন্য সবাই আজ তার সাথে এমন ব্যবহার করলো? এখানে তারও বা দোষ কি? সে কি ইচ্ছে করে কিছু করেছে নাকি? যে মোবাইল শীর্ষ কাউকে ধরতে দেয় না সেই মোবাইল ঐ মেয়েটাকে দিয়ে দিবে এটা সে বুঝেছে নাকি? তাই তো চো’র বলেছে। পূর্ব থেকে এ বিষয়ে অবগত থাকলে নিশ্চয়ই বলতো না। সব দোষ ঐ মেয়েটার। ঐ মেয়েটার জন্য শীর্ষ তাকে আজ এতগুলো কথা বলল। ঐ মেয়েটাকে তো সে দেখে নিবে। এ বাড়িতে ও কিভাবে থাকে তাও দেখে ছাড়বে।
ত্রয়ী ছুটে গেল নিজের কক্ষের দিকে। ভিতরে ঢুকে দরজা আটকাতে উদ্যত হতেই অভিমুখ থেকে বাঁধা পেল। দরাজার ফাঁকা গলিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা পেল শীর্ষের। ভয়ং’কর লোকটা এক হাত দিয়ে সম্মুখ থেকে দরজাটা ঠেলে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ত্রয়ীর মেজাজ গরম হলো। একটা মোবাইল দিয়েছে ভালো কথা। সবার সম্মুখে বলে কয়ে দিতো বা দিয়ে সবাইকে বলে দিতো। তাহলে তো আজ এত ঝামেলা হতো না। তার উপরে চো’রের মতো একটি জঘন্য অপবাদও কেউ দিতে পারতো না। মেয়েটি ক্রোধে দিশেহারা হলো। শরীরের সর্বশক্তি দ্বারা ঠেলে ধরলো কাঠের তৈরি কারুকার্য খচিত সুন্দর দরজাটা। ওদিক থেকে থেকে শীর্ষও নিজের সর্বশক্তি দ্বারা ঠেলে দিলো সে দরজা। ত্রয়ী, এক ক্ষুদ্র মানবী! তার কি এত শক্তি রয়েছে যা দ্বারা সে প্রতিহত করবে শীর্ষ নামক এক বলিষ্ঠদেহী পুরুষকে। মেয়েটি পারলো না। উলটো দুজনের যুদ্ধে ত্রয়ী নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চিৎ হয়ে পড়লো মেঝেতে। হকচকিয়ে উঠল শীর্ষ। হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করল মেয়েটিকে। কিন্তু হাত ধরার পূর্বেই ত্রয়ীর স্থান হলো নিচে। শীর্ষ ছুটে ঢুকলো কক্ষের ভিতরে। অস্থির হয়ে মেয়েটিকে মেঝে থেকে তোলার চেষ্টা করল। ত্রয়ীর দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। তৎক্ষণাৎ সে সরে গেল দূরে। অতঃপর নিজে একা একাই উঠে দাঁড়াল। দাঁতে দাঁত পিষে প্রশ্ন করল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপনার আমার রুমে কি? এখানে এসেছেন কেন?”
শীর্ষ তার হাতে ধরে থাকা মোবাইলটা বাড়িয়ে দিলো ত্রয়ীর দিকে। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
“মোবাইলটা রেখে এসেছিলি।”
ত্রয়ী তাকালো মোবাইলটার দিকে। রাগে দুঃখে ফের কান্না পেল তার। এই মোবাইলের জন্যই তো আজ এত কিছু। সে আর নিবে না এই মোবাইল। একটা মোবাইল না ব্যবহার করলে কি ত্রয়ী ম’রে যাবে? এতদিন যখন ম’রে’নি আজও ম’র’বে না। মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। কণ্ঠে কাঠিন্য এটে বলল,
“আপনার মোবাইল আপনি নিয়ে যান। এটার আর প্রয়োজন নেই আমার।”
শীর্ষ কপাল কুঁচকাল। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,
“আমার বোনের কৃতকর্মের ঝাল এখন তুই আমার উপর থেকে তুলতে চাইছিস?”
প্রত্যুত্তরে ত্রয়ী চুপ রইল। শীর্ষ আর একটু এগিয়ে এলো মেয়েটির দিকে। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“সে শুধু ঝাল কেন? টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতা সবকিছুই তুই আমার উপর থেকে তুলতে পারিস। আমি একদম মাইন্ড করবো না।”
ত্রয়ী চমকালো, ভরকালো। তড়িৎ গতিতে সে তাকালো শীর্ষের দিকে। লোকটা এসব কি বলছে? মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? রিমার ঝাল না হয় সে এর উপর থেকে তুলছে। কিন্তু টক, মিষ্টি, নোনতা কিভাবে তুলবে? মেয়েটি চোখ বড়ো বড়ো করল। বিস্ময় নিয়ে বলল,
“মানে!”
শীর্ষ আলতো হাসলো। মিহি স্বরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। চোখ পড়লো ত্রয়ীর গালের দিকে। নিকট থেকে গালের দাগগুলো আরও স্পষ্ট রূপে ধরা দিয়েছে তার দৃশ্যপটে। মুহুর্তেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল তার। ক্রোধে দিশেহারা হলো হৃদয়। তবে অনেক কষ্টে নিজের ক্রোধকে দমালো সে। হাত উঁচিয়ে হুট করেই আলতোভাবে হাত রাখলো ত্রয়ীর গালে। ত্রয়ী চমকে উঠল। আকস্মিক এক পুরুষালী স্পর্শে কেঁপে উঠল বদন খানি। হৃদযন্ত্রটা লাফিয়ে উঠল যেন। তৎক্ষণাৎ সে পিছিয়ে গেল কয়েক পা। শীর্ষ ঐ কয়েক পা এগিয়ে এসে দূরত্ব ঘুচালো ত্রয়ী এবং তার মধ্যে। আবারও হাত রাখলো মেয়েটির গালে। ত্রয়ী এলো দৃষ্টি ফেলল। আমতা আমতা করে বলল,
“কি করছেন কি? আমার গালে হাত দিচ্ছেন কেন?”
শীর্ষ ত্রয়ীর করা প্রশ্নের উত্তর দিলো না। বরং তার গালে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শুধাল,
“বেশি ব্যথা পেয়েছিস?”
“না মানে আপনি….”
এইটুকু বলতেই ত্রয়ীকে থামিয়ে দিলো শীর্ষ। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“আমি আসছি একটু পরেই। সাবধান দরজা আটকাবি না।”
কথাটুকু শেষ করেই শীর্ষ লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে। ত্রয়ীর কপালে ভাঁজ পড়লো। এ লোক আবার কোথায় গেল? মেয়েটি দরজাটা আটকাতে গিয়েও আটকালো না। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো বিছানায়। এ পৃথিবীতে বাবা-মা নেই মানে কিচ্ছু নেই। সবাই মুখে মুখে বলে আমরা আছি, আমরা আছি কিন্তু প্রয়োজনের সময় কেউ থাকে না। বাবা মায়ের জোরেই আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাই ভালোবাসে। বাবা-মা না থাকে আর কেউ ডেকেও জিজ্ঞেস করে না। এই পৃথিবীতে বাবা-মা হীনা সন্তানরাই বোধ হয় সবচেয়ে বড়ো অসহায়, সবচেয়ে বড়ো অবহেলিত। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। শীর্ষও তখনই একটা বাটি হাতে ঢুকলো কক্ষের ভিতরে। এগিয়ে গিয়ে বসলো বিছানায় ত্রয়ীর নিকটে। হাতের বাটিটা রাখলো পাশেই। ত্রয়ী তাকালো বাটিটার দিকে। চোখে পড়লো কতগুলো বরফ খন্ড। মেয়েটি কিঞ্চিৎ অবাক হলো। কপালে গুটি কয়েক ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“বরফ এনেছেন কেন? কি করবেন এগুলো দিয়ে?”
শীর্ষ জবাব দিলো না। বাটি থেকে এক খন্ড বরফ তুলে রাখলো ত্রয়ীর গালে। ফের কেঁপে উঠল মেয়েটি। হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো তড়িঘড়ি করে। হৃদয়ের আঙ্গিনায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল অদ্ভুত এক অনুভূতির মায়াজাল। ত্রয়ী আড়ষ্ট হলো। ইতস্তত করে বলল,
“আমকে দিন। আমিই করছি। আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না।”
শীর্ষ শুনলো না ত্রয়ীর কথা। হাতে ধরে থাকা বরফ খন্ডটি আলতোভাবে ঘঁষে দিতে শুরু করল মেয়েটির নরম গালে। ত্রয়ীর শরীর শিহরিত হলো। হৃদয়ের আঙ্গিনায় অজানা এক অনুভূতির উল্লাসে আঁখিদ্বয় বন্ধ করে নিল সাথে সাথে। শীর্ষ কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে তাকিয়ে রইল প্রায়সীর স্নিগ্ধ মুখ পানে। অতঃপর কণ্ঠে নিগূঢ় শীতলতা এটে হুট করেই শুধাল,
“আমাকে বিয়ে করবি বালির বস্তা?”
ত্রয়ী বিস্মিত হলো। তড়িৎ গতিতে খুললো তার আঁখি দ্বয়। এই পুরুষ এসব কি বলছে? নাকি সে ভুল শুনছে? মেয়েটির বিশ্বাস হলো না নিজের কানকে। নিশ্চয়ই সে ভুল শুনছে। নয়তো শীর্ষের কোনো ক্রমেই তাকে এই ধরণের কথা বলার নয়। যে পুরুষ তাকে দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না, কথায় কথায় রাগ দেখায়, ধমক দেয় সে কিনা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে? অসম্ভব! ত্রয়ী পলক ঝাপটালো। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে শুধাল,
“কি বললেন আপনি? আবার বলুন তো।”
“আমি তোকে….”
এইটুকু বলতেই কণ্ঠ রোধ হলো শীর্ষের। পকেটে থাকা তার মোবাইলটা বেজে উঠল কর্কশ ধ্বনিতে। বিরতিক্তে কপালে ভাঁজ পড়লো তার। এই সময়ে আবার কে কল করে? শীর্ষ পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল। স্ক্রীনে রবির নাম দেখে কলটা ধরলো সে। মোবাইলটা কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো,
“বেলা শুনছো, চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি।”
শীর্ষের কপালের ভাঁজ গাঢ় হলো। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“আমি বেলা না। বেলার বাপ বলছি।”
“আচ্ছা শ্বশুর মশাই চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি। এবার আর আপনার মেয়ে এবং আমার মধ্যে কোনো বাঁধা থাকবে না।”
শীর্ষের বিরক্তি ভাব বাড়লো। একে তো এই সময়ে কল করে তার অনুভূতির বারোটা বাজিয়েছে। এখন আবার যতসব উদ্ভট কথা শুরু করে দিয়েছে। শীর্ষ দাঁতে দাঁত চাপলো। কটমট করে বলল,
“যা বলার ভালোভাবে বল।”
“আমার চাকরিটা হয়ে গেছে রে শীর্ষ।”
“হুম জানি। নাম সিলেক্ট করার সময়ে দেখেছি। তোর বাবাকে জানিয়েছিস খবরটা?”
“না এখনো জানাইনি। মাত্রই কোম্পানি থেকে মেসেজটা এলো।”
“আঙ্কেলকে আগে জানা খবরটা। তিনি ভীষণ খুশি হবে।”
“হুম জানাবো। তার আগে ইউ বল ইউ কি ইট করবি? মিষ্টি ইট করবি নাকি ঝাল?”
শীর্ষ কিঞ্চিৎ তেতে গেল। সর্পের ন্যায় ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল,
“তোর কল্লাটা খাবো। ঐটা নিয়ে আয়।”
“আমার হেড ইট করলে আমি তো বাঁচবো নট বেলার বাপ। ইউর ডটর তো বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে।”
শীর্ষ ফের দাঁতে দাঁত চাপলো। এইটা কোনো মজা করার সময়? কড়া গলায় সে বলল,
“হয় বাংলায় বল নয়তো ইংরেজিতে বল বদমাইশ।”
“পারবো না।”
“শ’লা’র বা’ল তোরে আমি….”
এই টুকু বলেই থেমে গেল শীর্ষ। ত্রয়ীর দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটা কেমন ড্যাব ড্যাব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হলো সে। মোবাইলটা কানে নিয়েই উঠে দাঁড়াল শীর্ষ। চোখের ইশারায় ত্রয়ীর থেকে বিদায় নিয়ে যত্রতত্র পায়ে বেরিয়ে এলো কক্ষ ছেড়ে। রোষপূর্ণ কণ্ঠে বলল,
“তোরে একটবার হাতের কাছে পাই। দেখিস করি করি।”
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের দিকে পা বাড়িয়েছে সময়। রাশেদ আহমেদ বাড়ি ফিরেছেন একটু আগেই। বাহিরের জামা কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুতে ওয়াশ রুমে যাবেন তখনই টোকা পড়লো কক্ষের দরজায়। ওপাশ থেকে ভেসে এলো,
“বাবা আসবো?”
রাশেদ আহমেদ আর ওয়াশ রুমে ঢুকলেন না। থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলেন,
“এসো।”
অনুমতি পেয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো রবি। হাতে তার একটি মিষ্টির বাক্স। রবি মিষ্টির বাক্সটা এগিয়ে দিলো বাবার দিকে। রাশেদ আহমেদ ভ্রু কুঁচকালেন। গম্ভীর কণ্ঠে শুধালেন,
“হঠাৎ মিষ্টি কেন? মিষ্টি খাওয়ার মতো কি এমন করেছো তুমি?”
রবি হাসি হাসি মুখে জবাব দিলো,
“আমি চাকরি পেয়েছি বাবা।”
রাশেদ আহমেদ বিস্মিত হলেন। সাথে খুশিও হলেন বেশ। যাক অবশেষে তার ছেলের একটি চাকরি হয়েছে, জীবনের একটি গতি হয়েছে। এরপর ছোট ছেলেমেয়ে দুটোর একটা গতি হলেই হলো। তিনি ম’রে’ও শান্তি পাবেন। মনে মনে আনন্দিত হলেও মুখে তা প্রকাশ করলেন না তিনি। চোখে মুখে থমথমে ভাব বজায় রেখেই বললেন,
“এত তাড়াতাড়ি চাকরি পেলে কিভাবে তুমি? নিশ্চয়ই কারো হাত পা ধরে ঝুলে পড়েছিলে তারপর তারা দয়া ধরে তোমাকে চাকরিটা দিয়েছেন।”
রবি হতবাক হয়ে পড়লো। এত কষ্ট করে রাতদিন পড়াশোনা করে সে চাকরিটা পেল অথচ তার বাবা কিনা বলছেন হাতে পায়ে ধরে চাকরি পেয়েছে! রবি কপাল টান টান করল। দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“জ্বি না। ইন্টারভিউ দিয়ে নিজ যোগ্যতায় আমি চাকরি পেয়েছি।”
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“তোমার বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি। যাই হোক মাকে সংবাদটা জানিয়ে আসি। তাকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি।”
রবি পিছন ঘুরলো। দরজার দিকে দুই কদম এগুতেই পিছন থেকে ডাক পড়লো তার। রাশেদ আহমেদ স্বাভাবিক কণ্ঠেই বললেন,
“জানাবে তো। তার আগে মিষ্টি খেয়ে যাও।”
রবি থমকে দাঁড়াল। পিছন ঘুরে সে বলল,
“তোমার জন্য এনেছি। তুমিই খাও।”
রাশেদ আহমেদ শুনলেন না ছেলের কথা। এগিয়ে এসে দাঁড়ালেন তিনি রবির মুখোমুখি। প্যাকেট খুলে একটি মিষ্টি তুলে ধরলেন ছেলের মুখের অভিমুখে। শীতল কণ্ঠে বললেন,
“তোমার চাকরির মিষ্টি তুমিই আগে খাও।”
রবি মিষ্টিতে কামড় বসিয়ে অর্ধেকটা খেল। বাকিটা নিজের হাতে নিয়ে ধরলো বাবার মুখের সম্মুখে। অতঃপর বলল,
“এবার তুমি খাও।”
রাশেদ আহমেদ মিষ্টির টুকরোটা মুখে নিলেন। অধরের কোনে তার ফুটে উঠলো এক টুকরো হাসি। প্রশান্তির সে হাসি।
রাত বেড়েছে কিছুটা। ঘড়ির কাঁটায় টিক টিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে রাত কেবল নয়টা। খান বাড়ির সকলে একে একে ঢুকলো খাবার কক্ষে। শীর্ষ এলো সবার শেষে। চোখ বুলালো পুরো টেবিলে। ত্রয়ী টেবিলের এক পাশে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রয়েছে। আর রিমা বসে রয়েছে অন্য পাশে। শীর্ষ একটা চেয়ার টেনে তাতে বসলো। রিমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুধাল,
“তোর কৃতকর্মের জন্য ত্রয়ীর কাছে মাফ চেয়েছিস?”
অনুরাগে তুই পর্ব ৩২
রিমা বিরক্ত হলো। সাথে ভয়ও পেল ভীষণ। এখানে তাদের বাবা রয়েছে। তার সম্মুখে এসব কথা না তুললেই কি হতো না? বিষয়টা নিয়ে শীর্ষ তাকে কম কিছু তো শোনায়নি তারপর আবার মাফ চাইতে হবে কেন? তাছাড়া সে ইচ্ছে করে কিছুই করেনি। জানতো না বলে করেছে। সুতরাং এখানে মাফ চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এখন শুধু ভয় আব্দুর রহমান খানকে নিয়ে। তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করলেই হলো। তার কানে একবার পুরো বিষয়টা গেলে আবার হুলুস্থুল লাগাবেন। দয়ার শরীর যে তার। নিজের মেয়ের থেকে বাইরের মানুষদের জন্য সবসময়ই তার দরদ বেশি। রিমা মুখ বাঁকালো। তবে তার ভয়কে সত্যি করে দিয়ে আব্দুর রহমান খান হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে বসলেন,
“কি হয়েছে? রিমা কি এমন করেছে যার জন্য ত্রয়ীর নিকট মাফ চাইতে হবে?”