অনুরাগে তুই পর্ব ৩৪
সাদিয়া শওকত বাবলি
তবে তার ভয়কে সত্যি করে দিয়ে আব্দুর রহমান খান হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে বসলেন,
“কি হয়েছে? রিমা কি এমন করেছে যার জন্য ত্রয়ীর নিকট মাফ চাইতে হবে?”
রিমা ঢোক গিললো। যে ভয়টা পাচ্ছিলো তাই হলো। এখন সে কি উত্তর দিবে বাবাকে? তার বাবাও তো ভাইয়ের মতোই। নিজের আপনজনদের তুলনায় অন্যদের জন্য হৃদয় পুড়ে অধিক। ফাহমিদা বেগমও কিঞ্চিৎ ভীত হলেন স্বামীর এমন প্রশ্নে। তিনি আর কোনো ঝামেলা চাইলেন না। মেয়ের দোষ ঢাকার উদ্দেশ্যে বললেন,
“তেমন কিছু হয়নি। তুমি খেয়ে নাও তো তাড়াতাড়ি।”
“তেমন কিছু না হলে মাফ চাওয়ার কথা আসবে কেন?”
আব্দুর রহমান খানের কণ্ঠে সন্দেহ। ফাহমিদা বেগম আমতা আমতা শুরু করলেন। জোরপূর্বক হেসে বললেন,
“ঐ একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল।”
“কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল?”
“ছাড়ো তো। একসাথে থাকলে অমন একটু আধটু হয়। তুমি খাওয়া শুরু করো।”
আব্দুর রহমান খানের কপালে ভাঁজ পড়লো। শীর্ষের দিকে তাকিয়ে তিনি ফের শুধালেন,
“কি হয়েছে শীর্ষ? রিমা ত্রয়ীর সাথে কি এমন করেছে যার জন্য তুমি ওকে মাফ চাইতে বলছো?”
ফাহমিদা বেগম ফের সবটা চাপা দিতে উদ্যত হলেন। তাড়াহুড়ো করে বললেন,
“তুমিও না! বাচ্চা মানুষ ওরা। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে টুকটাক একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। ছাড়ো তো ওসব।”
শীর্ষের দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। শান্ত অথচ গম্ভীর কণ্ঠে সে বলল,
“এই ছোট ছোট করেই তোমরা ওকে মাথায় তুলেছো। অথচ ছোট ছোট করে ওর অন্যায় গুলোকে প্রশ্রয় না দিয়ে যদি শাসন করতে তবে আজ ও এতটা উগ্র এবং উশৃঙ্খল হতো না। ওর ভিতরে থাকা বিবেক এবং মনুষ্যত্ববোধটা একটু হলেও জাগ্রত থাকতো।”
ফাহমিদা বেগম চুপসে গেলেন। শীর্ষ হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো বাবার দিকে। একে একে খুলে বলল সবটা। আব্দুর রহমান খানের মুখশ্রী ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠল। তার অবর্তমানে তারই রক্ত, তারই মেয়ে বাড়িতে এত কিছু ঘটিয়ে ফেলেছে? এই ত্রয়ী নামক এতিম মেয়েটিকে তিনি তার বাড়িতে এনেছিলেন একটু ভালো রাখার আশায়। অথচ মেয়েটি যতটুকু ভালো পূর্বে ছিল ততটুকুও তার বাড়িতেই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আব্দুর রহমান খান তাকালেন রিমার দিকে। রুক্ষ কণ্ঠে শুধালেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এমনটা কেন করেছো তুমি?”
রিমা এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
“আমি জানতাম না শীর্ষ ভাই নিজে ওকে মোবাইলটা দিয়েছে। যে মোবাইল ভাইয়া আমাদের কাউকে ধরতে দেয় না সেই মোবাইল ওর হাতে দেখে আমি একটু সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম মোবাইলটা ও চু’রি করেছে।”
“মানলাম তুমি সংশয়ে পড়ে ভেবেছিলে ত্রয়ী মোবাইলটি চু’রি করেছে। কিন্তু কোনো প্রকার বাছ বিচার ব্যতীত ওকে অপমান করা কি তোমার ঠিক হয়েছে? ও নাকি বারবার বলেছিল মোবাইলটা ওকে শীর্ষ দিয়েছে এরপরেও কি তোমার উচিত ছিল না বিষয়টা নিয়ে একবার যাচাই বাছাই করা? অন্তত তুমি শীর্ষকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতে তারপর না হয় যা করার করতে। কোনো প্রকার যাচাই বাছাইয়ের পূর্বেই তুমি কেন ত্রয়ীকে চো’র অপবাদ দিলে? ওর গায়ে হাত কেন তুললে?”
রিমা ইতস্তত করল। ঢোক গিলে বলল,
“তখন অতকিছু খেয়াল ছিল না আমার।”
“কেন খেয়াল ছিল না?”
আব্দুর রহমান খান ধমকে উঠেও থেমে গেলেন। কণ্ঠ স্বাভাবিক করে বললেন,
“যাক যা করার করেছো এখন তোমার কৃতকর্মের জন্য মাফ চাও ত্রয়ীর কাছে।”
“মাফ কেন চাইতে হবে? আমি ইচ্ছে করে তো কিছু করিনি। আমি….”
“তুমি আবার আমার মুখে মুখে কথা বলছো। মাফ চাইতে বলেছি মাফ চাও ত্রয়ীর কাছে।”
এ পর্যায়ে মুখ খুললো ত্রয়ী। ইতস্তত করে বলল,
“মাফ চাওয়ার কোনো দরকার নেই আঙ্কেল। একটা ছোট ভুল বোঝাবুঝির কারণে পুরো ঘটনাটা ঘটেছে। এখন তো সেই ভুল বোঝাবুঝিটা মিটেই গেছে।”
আব্দুর রহমান খান যেন শুনেও শুনলেন না ত্রয়ীর কথা। তিনি দৃষ্টি রিমার দিকে স্থীর রেখেই বললেন,
“আমাকে আরও কঠিন হতে বাধ্য করো না রিমা। ওর কাছে মাফ চাও তাড়াতাড়ি।”
রিমার আঁখি দ্বয় ভরে উঠল। ছোট একটি বিষয় যা সে ইচ্ছে করে ঘটায়নি সেই কারণে কিনা এখন তাকে এই সামান্য মেয়েটির নিকট মাফ চাইতে হবে? ভীষণ অপমানিত বোধ করল সে। কিন্তু বাবা, ভাইয়ের সম্মুখে কোনো প্রতিবাদের সাহসও পেল না। এখানে কিছু বলা মানেই ঝামেলা আরও বাড়ানো। এই ত্রয়ী নামক মেয়েটিকে সে দেখে নিবে। এই মেয়েটির জন্য যতটা অপামানিত আজ তাকে হতে হলো প্রতিটির হিসেব সে সুদে আসলে নিবে। রিমা উঠে দাঁড়াল। ধরা গলায় উচ্চারণ করল,
“দুঃখিত।”
এইটুকু বলে আর এক মুহূর্তও ঐ স্থানে দাঁড়াল না মেয়েটা। এক ছুটে চলে গেল কক্ষের দিকে। ফাহমিদা বেগম ব্যস্ত হলেন। পিছন থেকে ডেকে বললেন,
“কোথায় যাচ্ছিস মা। খেয়ে তো যা।”
রিমা শুনলো না মায়ের কথা, দাঁড়ালও না আর। ফাহমিদা বেগম বিরক্ত হলেন। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এতদূর অব্দি না গেলেই কি হতো না? তাছাড়া পুরো ঘটনাটা নিয়ে সে এবং শীর্ষ দুজন মিলে তো কম কথা শোনায়নি রিমাকে। তারপর আবার মাফ চাওয়ানোর কি দরকার ছিল? সবকিছুতে এদের বারাবারি। একটা বাইরের মেয়ের জন্য আজ তার মেয়েকে কতটা অপমানিত হতে হলো! এক প্রকার দুইদিনও হলো না ত্রয়ী নামক মেয়েটা এ বাড়িতে এসেছে এর মধ্যে তার সংসারে গ্রহণ লাগাতেও শুরু করেছে।
রাতের খাবারের পাঠ চুকিয়ে বেশ কিছুটা সময় গড়িয়েছে। দুনিয়াবি সকল চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে বাড়ির সকলে ইতোমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে বোধ হয়। চারদিকটাতেও কেমন নীরব নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই নীরবতার বুক চিরে হঠাৎ ত্রয়ীর কক্ষের বন্ধ দরজায় টোকা পড়লো। মেয়েটি জেগেই ছিল। আজ সারাদিন যা যা ঘটলো তারপরে কি এত সহজে চোখে ঘুম ধরা দেয়? তবে এত রাতে তার কক্ষের দরজায় কে টোকা দিচ্ছে বুঝতে খুব একটা সময় লাগলো না ত্রয়ীর। এ নিশ্চয়ই শীর্ষ। মানুষের কাজ না থাকলে আর কি করবে? রাত বিরাতে অন্যকে তো জ্বালাবেই। ত্রয়ীর ইচ্ছে করল না দরজাটা খুলতে। দরজা খুললেই দেখা যাবে ঐ লোক যতসব উদ্ভট কথা শুরু করে দিয়েছে আর নয়তো এই রাতে আবার কফি বানানোর আদেশ দিয়েছে। ত্রয়ী আর উঠল না। দরজাটাও খুললো না। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দ তত গাঢ় হচ্ছে। ত্রয়ী বিরক্ত হলো। সাথে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুতও হলো। এই রাতে তার কক্ষের দরজা ধাক্কাচ্ছে শীর্ষ, এই কথাটা বাড়ির কারো কানে গেলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু হয়ে দাঁড়াবে। ত্রয়ী দরজা খুলবে না খুলবে না করেও দরজা খুললো। নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“কি সমস্যা? এত রাতে দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন?”
শীর্ষ তার মোবাইলটা বাড়িয়ে দিলো। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“মোবাইলটা নে। দুপুরে দিয়েছিলাম তখনও নিসনি।”
“আমি নেব না এই মোবাইল। আপনার মোবাইল আপনি রাখুন।”
“বালির বস্তা। এবার কিন্তু তুই বেশি করছিস। মোবাইল নিতে বলেছি মোবাইল নে।”
“না নেব না।”
“বালির বস্তা…..”
শীর্ষ কথাটা পুরোপুরিভাবে সম্পূর্ণ করার পূর্বেই দরজাটা আটকে দিলো ত্রয়ী। শীর্ষ বিস্মিত হলো। ত্রয়ী তার মুখের উপর এভাবে দরজা আটকে দিলো? এভাবে! শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে বলল,
“বালির বস্তার বাচ্চা বালির বস্তা। ইদানীং তোর সাহস বেড়ে গেছে দেখছি। তোকে তো আমি পরে দেখে নেব।”
সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত দিন। রবির আজ প্রথম অফিস, প্রথম অনুভূতি। এর পূর্বে ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য দুই একটা টিউশনি সে করিয়েছে। তবে এভাবে কাজ কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য অফিসে আসা এই প্রথম। নিজেকে কেমন ভীত ভীত লাগছে তার। ভিতরে ভিতরে ভয়, সংকোচেরও টের পাচ্ছে অল্প স্বল্প। নিজের ভিতরকার অযাচিত এই অনুভূতিগুলো দমনের আশায় লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিলো রবি। অতঃপর অফিসে ঢুকে বসলো নয়নের পাশে। নয়ন নামক ছেলেটার পাশেই তার বসার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সাথে ঐ ছেলেটার উপরেই দায়িত্ব পড়েছে রবিকে অফিসের সব কাজকর্ম, আদব কায়দা, নিয়মাবলী বুঝিয়ে দেওয়ার। নয়ন একটা ফাইল হাতে নিয়ে রবিকে সব বুঝিয়ে দিতে উদ্যত হলো। রবিও বেশ আগ্রহ নিয়ে বুঝতে শুরু করল সবটা। তখনই অফিসের দরজার নিকট থেকে থেকে ভেসে এলো,
“হাই হ্যান্ডসাম! কেমন আছো?”
কথার ধাঁচ এবং কণ্ঠস্বর শ্রবণে ব্যক্তিটিকে চিনে নিতে খুব একটা অসুবিধা হলো না নয়ন এবং রবির। দুজনেই এক যোগে তাকালো দরজার দিকে। নয়ন ঢোক গিললো। নিজের মাথাটা একটু নুইয়ে লুকানো রবির পিছনে। তবে রবি লুকালো না। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে সে বলল,
“জ্বি চাচা থুক্কু চাচি। আমরা বেশ ভালো আছি।”
ফুঁসে উঠল সোহাগ। রবির দিকে তেড়ে এসে বলল,
“কি বললে তুমি? আমি চাচি?”
“আপনি চাচি নন? তাহলে কি চাচা? আসলে আপনার সাজপোশাক দেখে একটু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল আর কি। রাগ করবেন না দয়া করে। আমি এরপর থেকে আপনাকে চাচা বলেই সম্বোধন করব। আমার কিউট, মিষ্টি, কি ভালো একটা চাচা।”
সোহাগ চেতে গেল আরও। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“এই অভদ্র ছেলেটা এখানে কি করছে? নয়ন, এটা আমাদের অফিসে কেন?”
নয়ন ঢোক গিললো। রবির পিছন থেকে মাথা বের করে বলল,
“উনি আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছেন স্যার।”
“কে এই বেয়াদবটাকে সিলেক্ট করেছে। আমি এখনই দেখছি দাঁড়াও।”
কথাটা বলে একটু থামল সোহাগ। পরপর আব্দুর রহমান খানের কেবিনের দিকে পা চালিয়ে বলল,
“আঙ্কেল, আঙ্কেল এই অভদ্র, বেয়াদবটাকে কে চাকরিতে রেখেছে?”
ফের ফাঁকা ঢোক গিললো নয়ন। রবির দিকে তাকিয়ে বলল,
“দিলেন তো উনাকে খ্যাপিয়ে। এখন উনি না আমার আর আপনার নামে বড়ো স্যারের কাছে নালিশ ঠুকে আমাদের এই চাকরি থেকেই বিতারিত করেন কে জানে।”
নয়নের কথাটা বলতে দেরি কিন্তু আব্দুর রহমান খানের কেবিন থেকে রবির নামে ডাক আসতে দেরি হলো না। অফিসের পিয়ন এসে নম্রভাবে জানিয়ে গেল আব্দুর রহমান খান নাকি তাকে ডাকছে। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো নয়ন। হতাশ কণ্ঠে বলল,
“ঐ আপনার ডাক পড়েছে। দেখুন গিয়ে কি হয়।”
এ পর্যায়ে রবিও একটু ভীত হলো। এত কষ্টের পর একটা চাকরি মিললো। আর প্রথম দিন এসেই এমন একটা কান্ড ঘটতে হলো? রবির নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগলো। কি হতো আজ অন্তত নিজের মুখটাকে একটু সামলে রাখলে। এখন না চাকরি নিয়েই টানাটানি বাঁধে। ঢোক গিললো বেচারা। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও এসে দাঁড়াল আব্দুর রহমান খানের কেবিনের অভিমুখে। দরজায় টোকা দিয়ে শুধাল,
“আসবো?”
প্রায় সাথে সাথেই ভিতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো,
“এসো।”
রবি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। ঢোক গিলে বলল,
“আ…স্যার ডাকছিলেন আমাকে?”
ছেলের বন্ধু হওয়ার সুবাদে আব্দুর রহমান খান রবিকে চিনেন আগে থেকেই। চোখ মুখ কিছুটা নরম করলেন তিনি। কণ্ঠে কোমলতা নিয়েই বললেন,
“তোমার আমাকে স্যার বলে ডাকতে হবে না। তুমি আঙ্কেল বলেই ডেকো।”
রবি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,
“আচ্ছা।”
“এখন বলো তো তুমি মিস্টার সোহাগের সাথে কি করেছো? উনি তো তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তুমি নাকি উনাকে অপমান করেছো।”
আব্দুর রহমান খানের নরম কণ্ঠে একটু সাহস পেল রবি। নয়তো সে ভেবেছিল প্রথম দিনেই চাকরির বারোটা বেজে যাবে। রবি ঠোঁট উল্টে দিলো। নিরীহ কণ্ঠে বলল,
“কোথায় অপমান করেছি আঙ্কেল? উনার পোশাক পরিচ্ছদে বিভ্রান্ত হয়ে একটু চাচি ডেকেছিলাম। পরে উনি রেগে গেলে বলেছি চাচা বলে ডাকবো। এখনে আমার দোষ কি আপনিই বলুন।”
আব্দুর রহমান খান আড়ালে হাসলেন। তবে চোখ মুখ গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তুলে বললেন,
“এখানে অবশ্যই তোমার দোষ রয়েছে। তোমার কি উনাকে দেখে তেমন বয়স্ক মনে হয় যে চাচা-চাচি বলে ডাকবে? আজ থেকে উনাকে তুমি ভাইয়া বলে ডাকবে।”
সোহাগ সাথে সাথে প্রতিবাদ করল আব্দুর রহমান খানের কথার। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“ভাইয়া না আপু বলে ডাকবে।”
আব্দুর রহমান খান কেশে উঠলেন। কাশতে কাশতেই বললেন,
“ঐ তো আপু বলে ডাকবে।”
রবি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো আব্দুর রহমান খানের কথায় তবে মনে মনে বলল,
“আপু ভাইয়া! তোকে তো এরপর থেকে আমি চাচা আক্তার চাচি ডাকবো।”
গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহের পরে একটু বৃষ্টির অভাস মিলেছে প্রকৃতিতে। এই দুপুরের প্রহরেই চারদিকটা আঁধারে ঢেকে গেছে। সূর্যটা লুকিয়ে পড়েছে মেঘের আড়ালে। একটু পরেই বৃষ্টি নামবে বুঝি। ত্রয়ীও এ কয়দিন চেয়েছে বৃষ্টি নামুক, মানব হৃদয়ে একটু স্বস্তি মিলুক। কিন্তু আজ হুট করেই বৃষ্টি চলে আসায় খুশি হতে পারছে না সে। একটু আগেই ক্লাস শেষ হয়েছে তার। কলেজ থেকে বেরিয়ে দেখে বাড়ির গাড়িটা নেই। হয়তো রিমা তাকে না নিয়েই চলে গেছে। এর মধ্যে আবার বৃষ্টির আভাস। কয়েকজন রিকশাওয়ালার নিকট গিয়েছিল তারাও এই আবহাওয়াকে মাথায় নিয়ে যেতে চাইছে না। এখন কি করবে মেয়েটা? কলেজে একা একা বসে থাকাটাও তো শোভনীয় নয়। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। শেষ একবার চেষ্টা করতে আবারও একজন রিকশাওয়ালার নিকট গেল। নম্র কণ্ঠে বলল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৩৩
“ভাইয়া যাবেন?”
“না আপা। এই আবহাওয়ায় যাইতাম না। যহন তখন বৃষ্টি নাইমা বইতে পারে।”
“চলুন না ভাইয়া। বৃষ্টি নামার আগে বাড়িতে পৌঁছানো আমার খুব প্রয়োজন। বুঝতেই তো পারছেন একা একজন মেয়ে মানুষ।”
“কিন্তু আফা….”
রিকশাওয়ালা সম্পূর্ণ কথাটা বলার পূর্বেই শোনা গেল তীব্র রুক্ষ একটি কণ্ঠস্বর,
“কিন্তু কি আবার? ত্রয়ী যখন বলেছে ওর বৃষ্টির আগে বাড়িতে যাওয়া প্রয়োজন তখন ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবি।”