অনুরাগে তুই পর্ব ৩৬

অনুরাগে তুই পর্ব ৩৬
সাদিয়া শওকত বাবলি

শীর্ষ আলতো হাসলো। দুই কদম এগিয়ে ঘনিষ্ট হলো ত্রয়ীর সাথে। ফিসফিসিয়ে বলল,
“বিয়ের।”
ত্রয়ী পিছন ঘুরলো। চোখে চোখ রাখলো শীর্ষের। পলক ঝাপটে বলল,
“তো করে ফেলুন না বিয়ে। আন্টিকে বলুন মেয়ে খুঁজতে। এমনিও এখন আপনার বিয়েটা করে ফেলা উচিত। বয়স তো আর কম হলো না।”
এইটুকু থামল মেয়েটা। মনে মনে আবার বলল,
“হ্যা ভাই তাড়াতাড়ি করে ফেল না বিয়েটা। তুই বিয়ে করলেই আমি বাঁচি। অন্তত সকাল বিকাল এই কফি বানানোর হাত থেকে তো বাঁচবো। শা’লা ধলা মুলা কোথাকার! সারাক্ষণ শুধু কফি আর কফি‌। এভাবে চলতে থাকলে তোকে একদিন আমি এই কফির মধ্যেই চু’বি’য়ে মা’র’বো।”
শীর্ষ চোখে হাসলো।‌ দুষ্টুমি মাখা কণ্ঠে বলল,

“ঠিকই বলেছিস। বয়স বেড়ে যাচ্ছে এখন আমার বিয়ে করা উচিত।”
“হ্যা করে ফেলুন। আন্টি আঙ্কেলকে আজই বলুন মেয়ে দেখতে।”
“তাদেরকে আর মেয়ে দেখতে বলতে হবে না। মেয়ে তো আমার….”
এইটুকু বলে ঠোঁট কামড়ে হাসলো শীর্ষ। সম্মুখ পানে পা বাড়িয়ে ত্রয়ী আর তার মধ্যে থাকা স্বল্প দূরত্বটুকুও ঘুচিয়ে নিল। শীর্ষকে এত নিকটে আসতে দেখে হকচকিয়ে উঠল মেয়েটা। দ্রুত পা চালিয়ে দুই কদম পিছনে সরে গেল সে। শীর্ষ ওষ্ঠ বাকালো। ফের সম্মুখ পানে পা চালিয়ে দূরত্ব ঘুচালো। ত্রয়ীও ফের পিছনের দিকে সরে গেল। তবে একটু পিছিয়ে যেতেই সে খেয়াল করল তার আর পিছিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই। শীর্ষের ওষ্ঠের হাসি আরও চওড়া হলো। পা তুলে ত্রয়ীর দিকে এক কদম এগিয়ে এলো সে। ঘাবড়ে গেল মেয়েটা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই লোক তার দিকে এভাবে এগুচ্ছে কেন? সেদিন হুট করেই তাকে বিয়ে করার কথা বলেছিল। আজ আবার আবহাওয়ার দোহাই দিয়ে বিয়ের কথা বলছে। লোকটার মতিগতি তো তেমন ভালো ঠেকছে না। এই লোক তাকে নিয়ে কোনো উলটা পালটা চিন্তা করছে না তো? আবার তাকে একা কক্ষে ডেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে, ওষ্ঠে কেমন শ’য়’তা’নি হাসিও ধারণ করেছে। ঐ ভ্যাম্পায়ার ধর্মী ছবিগুলোতে ভ্যাম্পায়ার গুলো যেমন হাসে ঠিক তেমন। ত্রয়ীর চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। স্মরণে এলো সেদিনের কথা। লোকটা তো সেদিন তার গলায় ভ্যাম্পায়ার সিল মানে কামড় দেওয়ার কথা বলেছিল। সেদিন তো কোনোমতে সে পালিয়ে বেঁচেছিল। তবে কি আজ আবার তার গলায় ভ্যাম্পায়ার সিল বসাতে চাইছে শীর্ষ? ত্রয়ী ঢোক গিললো। ভয়ে তার ছোটখাটো দেহটা একদম মিশিয়ে নিল বারান্দার গ্রিলের সাথে। শীর্ষ আর একটু এগিয়ে গেল তার দিকে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বাড়লো ত্রয়ীর। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে শুধাল,

“একি আপনি আমার দিকে এভাবে এগুচ্ছেন কেন?”
শীর্ষ ওষ্ঠে শ’য়’তা’নি হাসি বহাল রেখেই আর এক পা এগুলো। এরপর হুট করেই ঘুরে গেল। ত্রয়ীর দিকে পিঠটা দিয়ে বলল,
“পিঠটা চুলকাচ্ছে ভীষণ। একটু চুলকে দে তো।”
ত্রয়ী চমকাল, ভরকালো। এই লোক এতক্ষণ পিঠ চুলকানোর জন্য তার দিকে এগুচ্ছিল? আর সে কি না কি ভেবে বসেছিল। অবশ্য এই লোকের পিঠ চুলকানোর জন্য তার দিকে এতটা এগুনোর কি দরকার ছিল? দূরে দাঁড়িয়ে বললেই তো হতো। যতসব নাটক! শুধু শুধু তাকে এত ভয় দেখালো। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়লো ত্রয়ীর। তখনই আবার শীর্ষ বলে উঠল,
“কি হলো পিঠটা চুলকে দে।”
ত্রয়ী নাক মুখ কুঁচকে শীর্ষের পিঠে হাত রাখলো। ধীরে ধীরে চুলকাতে শুরু করল পুরো পিঠ। শীর্ষ মৃদুভাবে পিঠ ঝাকালো অতঃপর বলল,
“এই আর একটু উঁচুতে…. না না আর একটু নিচে। ইসসস কি আরাম যে লাগছে। জোরে জোরে চুলকে দে। আরও জোরে জোরে।”
ত্রয়ী দাঁতে দাঁত পিষলো। বিরবিরিয়ে বলল,
“অভদ্র, শয়তান পুরুষ মানুষ কোথাকার।”
অনেকটা ক্রোধের বশেই মেয়েটা জোরে জোরে চুলকাতে শুরু করল শীর্ষের পিঠ। সাথে সাথে লাফিয়ে উঠল বেচারা। চ্যাচিয়ে বলল,

“বালির বস্তা, পিঠ খামচাচ্ছিস কেন?”
“আপনিই তো বললেন জোরে জোরে চুলকে দিতে।”
“তাই বলে খামচাবি তুই? রা’ক্ষ’সী একটা।”
ত্রয়ী পলক ঝাপটালো। নিরীহ মুখ করে বলল,
“আচ্ছা আর খামচাবো না। এবারে আস্তে আস্তে চুলকে দেব। দেখি পিঠটা পাতুন তো আপনার।”
শীর্ষ আর পিঠ পাতলো না। কক্ষের ভিতরের দিকে পা চালাতে চালাতে বলল,
“থাক তোকে আর আমার পিঠ চুলকে দিতে হবে না। ভিতরে আয়।”
ত্রয়ী ভেংচি কাটলো। শীর্ষর পিছু পিছুই বারান্দা ছেড়ে এলো ভিতরে। শীর্ষ বিছানার পাশ থেকে তার মোবাইলটা তুলে বাড়িয়ে দিলো তার দিকে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“ঢং অনেক করেছিস। এবার মোবাইলটা নিয়ে উদ্ধার কর আমাকে।”
ত্রয়ী মোবাইলটা ধরলো না। মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
“আমার মোবাইল লাগবে না। এটা বরং আপনার কাছেই রেখে দিন।”

শীর্ষের চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল। দাঁতে দাঁত পিষে সে বলল,
“থা’প্রে তোর গাল লাল করে দেওয়ার আগে মোবাইল নে।”
ত্রয়ী তবুও মোবাইলটা নিল না। এবারে তাকে ধমকে উঠল শীর্ষ। হুংকার ছেড়ে বলল,
“তুই কিন্তু আমায় চিনিস না বালির বস্তা। আমার কথার অবাধ্য হলে আমি ঠিক কি কি করতে পারি সে সম্পর্কে তোর কোনো ধারণাও নেই।”
এ পর্যায়ে ত্রয়ী কিছুটা ভীত হলো। শীর্ষকে খুব ভালোভাবে এখনো অব্দি চিনে উঠতে না পারলেও কমও তো চিনেনি। লোকটার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা রয়েছে তার। মেয়েটা এবার আর শীর্ষের মুখের উপরে না বলতে পারলো না। হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিল। মস্তক নত করে বলল,
“এখন তাহলে আসছি আমি।”
শীর্ষ আর বাঁধা দিলো না মেয়েটিকে। গম্ভীর কণ্ঠে শুধু বলল,
“হুম।”

ভোরের আলো ফুটেছে। গত রাতে প্রায় সারারাত ধরেই বৃষ্টি ছিল। যার দরুন আজ প্রকৃতি যেন একটু বেশিই সতেজ এবং চনমনে রূপ ধারণ করেছে। আকাশের সূর্যটাও বেশ উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির পানিতে তার ময়লা ধুয়ে গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। মেহের এই সকালের স্নিগ্ধতাকে গায়ে মেখেই হাঁটতে বেরিয়েছে। আলভীর সাথে তার দেখা হয় না বেশ কয়েকটা দিন। ছেলেটার সাথে ঐ অল্প কয়েকদিনের দেখা, সকল প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হুট হাট তাকে পাশে পাওয়াটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল তার। যদিও প্রথম প্রথম এই ব্যাপারগুলোতে ভীষণ বিরক্তবোধ করতো মেহের তবে এখন সেই ব্যাপারগুলোকেই মিস করছে। আচ্ছা আলভী এই কয়েকদিন ধরে আসে না কেন? সে কি ভুলে গেছে তাকে? মনের মধ্যে রাজ্যের চিন্তা ভাবনা নিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে হাঁটছিল মেহের। হঠাৎ কেউ একজন পথ আগলে দাঁড়াল তার। হকচকিয়ে উঠল মেয়েটা। তৎক্ষণাৎ দুই কদম পিছনে সরে গেল সে। চোখ তুলে তাকাতেই দেখা পেল আলভীর। অবাক হলো মেহের। এই লোক এতদিন পর এই সকালে এখনে কি করছে? মেহের চোখ বড়ো বড়ো করল। কণ্ঠে কিঞ্চিৎ বিস্ময় নিয়ে শুধাল,

“আপনি এখানে?”
আলভী আলতো হেসে জবাব দিলো,
“এলাম একটু ঘুরতে।”
“এত সকালে?”
“হ্যা, হঠাৎ সকালের সতেজতাকে একটু গায়ে মাখতে ইচ্ছে হলো। তাই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।”
“বাইক এনেছেন?”
আলভী মাথা ঝাঁকালো। মেহের একটু সময় নিল। ইতস্তত করে বলল,
“এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি। বেশ অনেকদিন আপনার দেখা পাইনি।”
“কেন আমাকে মিস করছিলেন বুঝি।”
মেহের অপ্রস্তুত হলো। আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে….”
এই টুকু বলতেই তাকে থামিয়ে দিলো আলভী। কোমল কণ্ঠে বলল,
“এ কয়দিন কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম যে কারণে বাহিরেও তেমন বেরুতে পারিনি আর আপনিও আমাকে দেখেননি।”
“ওহ।”
“বাইকে ঘুরবেন?”
“এখন?”
“হ্যা, চলুন না নীরব শহরটা ব্যস্ত হওয়ার আগেই আমরা একটু ঘুরে আসি। শান্ত শহরের নীরবতাকে উপভোগ করি।”
মেহের দ্বিরুক্তি করল না। ভোরের এই ক্ষণে তার শহর ঘোরা তেমন কখনো হয়নি। তাও এই সুযোগে শহরটা ঘোরা হবে‌। মেহের ওষ্ঠে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো।‌ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“চলুন।”

বেলা গড়িয়েছে কিছুটা। আকাশের সূর্যটা আরও উজ্জ্বল রূপে ধরা দিয়েছে প্রকৃতিতে। আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় খান বাড়ির সবাই-ই বাড়িতেই রয়েছে। ত্রয়ীরও কলেজ না থাকায় ফাহমিদা বেগম এবং নুড়িকে সাহায্য করার জন্য এসে ঢুকলো রান্নাঘরে। ফাহমিদা বেগমের দিকে তাকিয়ে শুধাল,
“আন্টি কি কি কাজ বাকি আছে আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।”
ফাহমিদা বেগম থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলেন,
“তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি বরং গিয়ে বিশ্রাম নাও।”
রিমার সাথে ত্রয়ীর ঝামেলা লেখেছিল যেদিন সেদিন থেকেই ফাহমিদা বেগম কেমন যেন বদলে গিয়েছেন। আগে ত্রয়ীর সাথে মিষ্টি এবং কোমল স্বরে কথা বললেও এখন বলেন ভারী স্বরে। ত্রয়ী বুঝতে পারে সব তবে বলতে পারে না কিছুই। এতকিছুর পরেও যে তাকে এই গৃহ থেকে বিতারিত করা হয়নি তাই অনেক। এখানে অবশ্য ফাহমিদা বেগমেরও দোষ নেই। সবাই তার নিজের সন্তানকে অধিক ভালোবাসবে, তার দোষ-ত্রুটিকে ঠুনকোভাবে নিবে এটাই কাম্য। তার মা হলেও হয়তো তার সকল দোষ ত্রুটির ক্ষেত্রে এমনটাই করতেন। কিন্তু তার মা নেই। সাথে বাবাও নেই‌‌। কেউ নেই তার। তাই তো আজ এভাবে অন্যের বাড়ির আশ্রিতা হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল মেয়েটা। এগিয়ে গেল নুড়ির দিকে। নুড়ি আলু কাটছিল। ত্রয়ী হাত বাড়িয়ে নুড়ির হাত থেকে ছু’রি’টা নিল। অতঃপর আলু গুলোও নিজের দিকে নিতে নিতে বলল,

“তুমি অন্য কাজে যাও। আমি কাটাকাটি সব করে দিচ্ছি।”
“আর কোনো কাম নাই আপা। এই কাটাকাটিই বাকি আছে শুধু। এইটা আমিই করতে পারুম। আপনে বরং আম্মার কথা মতো গিয়া বিশ্রাম করেন।”
ত্রয়ী মিষ্টি হেসে বলল,
“তাহলে তুমি গিয়ে বিশ্রাম করো। কাটাকাটির কাজটা আমিই করে দিচ্ছি।”
“না না আপা। আপনে করবেন ক্যান? আমিই করছি।”
নুড়ি ত্রয়ীর হাতের ছু’রি’টা ধরলো। এর মধ্যে পন্নাও দৌড়ে এলো রান্নাঘরে। জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলল,
“ত্রয়ী আপু এখানে। আর আমি তোমাকে পুরো বাড়িতে খুঁজেছি।”
ত্রয়ী ছু’রি’টা ছেড়ে দিল। ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“কেন খুঁজছিলে আমাকে?”
পন্নার চোখ মুখ চকচকে হয়ে উঠল। উৎফুল্ল হয়ে সে বলল,
“তোমাকে নাকি শীর্ষ ভাইয়া তার মোবাইলটা দিয়ে দিয়েছে। চলো না ঐ মোবাইল দিয়ে আমরা কয়েকটি ছবি তুলি। ভাইয়ার মোবাইলে ছবি খুব সুন্দর আসে।”
“কিন্তু আমি তো এখানে….”
এইটু বলতেই ফাহমিদা বেগম বলে উঠলেন,

“তোমাকে এখানে কিছু করতে হবে না। তুমি গিয়ে ওর ছবি তুলে দাও যাও।”
ত্রয়ীর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও পন্নার সাথে এলো। বলা তো যায় না এখানে যদি পন্নাকে সে কাজের জন্য না করে দিতো তাহলেও তার দোষই ধরা হতো। পন্না ত্রয়ীকে নিয়ে এলো বাড়ির সামনেরই বাগানে। একটি ফুল গাছের পাশে দাঁড় করিয়ে বলল,
“দাঁড়াও আগে তোমার একটা ছবি তুলি।”
শীর্ষ দাঁড়িয়ে ছিল তার কক্ষের সাথে লাগোয়া বারান্দায়। সেখান থেকেই ত্রয়ী এবং পন্নাকে খেয়াল করে নিচে নেমে এলো। গম্ভীর কণ্ঠে শুধাল,
“তোরা কি করছিস এখানে?”
শীর্ষের কণ্ঠস্বর কানে পৌঁছাতেই তার দিকে ফিরে তাকালো পন্না এবং ত্রয়ী। পন্না দৌড়ে এলো ভাইয়ের নিকট। তার হাতে মোবাইলটা গুঁজে দিয়ে বলল,
“তুমি ত্রয়ী আপুর কয়েকটা ছবি তুলে দাও তো। আমি এখনই আসছি।”

কথাটা বলে আর কারো কোনো মতামতের অপেক্ষা করল না পন্না। ছুট লাগালো গৃহের দিকে। শীর্ষ তাকালো ত্রয়ীর পানে। মেয়েটা আজ একটি শুভ্র রঙা জামা পড়েছে। আর সে যে ফুল গাছটির নিকটে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানেও কিছু শুভ্র রঙা ফুলই ফুটেছে। শীর্ষের নিকট এই মুহূর্তে ত্রয়ীকে একটি সুন্দর পুষ্পর ন্যায়ই মনে হচ্ছে। শুভ্র রঙা জামায় এই প্রকৃতির বুকে মেয়েটিকে কি স্নিগ্ধই না লাগছে! শীর্ষের দৃষ্টিতে মুগ্ধতা হানা দিলো। হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো পূর্বের তুলনায়। বিরবিয়ে সে আওড়ালো,
“দিগন্ত বিস্তৃত সতেজ প্রকৃতির বুকে একটি সুন্দর, সুস্নিগ্ধ পুষ্প তুমি।”
শীর্ষের অবস্থান দূরে হওয়ায় বাক্যটি ত্রয়ীর কান অব্দি পৌঁছালো না। তবে তাকে ঠোঁট নাড়াতে দেখলো ঠিকই।
ত্রয়ী ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“কিছু বললেন?”

শীর্ষ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় হেঁটে গিয়ে দাঁড়াল ত্রয়ীর নিকটে। ভাবলো এই সময়, আজ এই সময়েই মেয়েটিকে তার মনের কথা জানিয়ে দেওয়া উচিত। শীর্ষের হৃদয় আন্দোলিত হলো। কেমন ভীত ভীত লাগলো নিজেকে। কাউকে প্রেম প্রস্তাব দিতেও গিয়েও যে ভীতি অনুভব হয় জানা ছিল না তার। জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল শীর্ষ। অতঃপর থেমে থেমে বলল,
“আমি তোকে….”
এই টুকু বলতেই তাকে থামিয়ে দিলো ত্রয়ী। শীর্ষের ভারী নিঃশ্বাস, ঘোলাটে দৃষ্টি, চোখে মুখে হানা দেওয়া দুর্বলতা কোনোটাই দৃষ্টি এড়ালো না মেয়েটার। চোখ বড়ো বড়ো করল সে। কণ্ঠে বিস্ময় নিয়ে শুধাল,

অনুরাগে তুই পর্ব ৩৫

“আপনি কি অসুস্থ শীর্ষ ভাই?”
“না, কেন?”
ত্রয়ী যেন এবারে একটু উত্তেজিত হয়ে উঠল। অস্থির হয়ে শুধাল,
“তাহলে আপনার চোখ মুখের অবস্থা এমন কেন? মনে হচ্ছে যেন দীর্ঘদিন কোষ্টকাঠিন্যতে ভুগছেন।”

অনুরাগে তুই পর্ব ৩৭