অনুরাগে তুই পর্ব ৩৭

অনুরাগে তুই পর্ব ৩৭
সাদিয়া শওকত বাবলি

ত্রয়ী যেন এবারে একটু উত্তেজিত হয়ে উঠল। অস্থির হয়ে শুধাল,
“তাহলে আপনার চোখ মুখের অবস্থা এমন কেন? মনে হচ্ছে যেন দীর্ঘদিন কোষ্টকাঠিন্যতে ভুগছেন।”
শীর্ষ হতভম্ব হয়ে গেল। তার অনুভূতির বারোটা তো বাজিয়ে দিলোই সাথে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীও বানিয়ে দিলো! পৃথিবীতে আরো কত রোগ ছিল। সব বাদ দিয়ে মেয়েটার তাকে এটাই বলতে হলো? বেচারা ছিটকে দূরে সরে গেল। নাকমুখ কুঁচকে বলল,
“ছিঃ! শেষ পর্যন্ত কিনা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগী?”
ত্রয়ী মুখাবয়বে নিরীহ ভাবভঙ্গি ফুটিয়ে তুললো। পলক ঝাপটে বলল,
“কোষ্ঠকাঠিন্য রোগী নয় তবে চোখ মুখের অবস্থা দেখে অমনই মনে হচ্ছিল।”
শীর্ষের হতবাকতা বাড়লো। একটু আগে তো সে ত্রয়ীকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে গিয়েছিল অর্থাৎ তার মুখাবয়বে একটি প্রেমময় স্নিগ্ধ অভিব্যক্তি ফুটে ওঠার কথা। তা না উঠে উঠেছে কোষ্ঠকাঠিন্যর অভিব্যক্তি? নাকি তার ঐ প্রেমময় স্নিগ্ধ অভিব্যক্তিকেই ত্রয়ীর মনে হয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য! চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল শীর্ষের। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

“আমার সামনে থেকে দূর হ বালির বস্তা।”
“কেন?”
“যা বলেছি তাই কর।”
ধমকে উঠল শীর্ষ। ত্রয়ী অবাক হলো। মাত্রই তো লোকটা ঠিক ছিল। এর মধ্যে আবার রেগে গেল কেন? সে কোষ্ঠকাঠিন্যর কথা বলেছে বলে কি রেগে গেছে? কিন্তু সে তো শীর্ষকে সরাসরি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগী বলেনি। বলেছে অমন লাগছে। এই লোকের মতিগতি বোঝা দায়। এই ভালো তো এই খারাপ। ত্রয়ীর মুখশ্রী থমথমে আকার ধারণ করল। তবে আর সে দাঁড়াল না ঐ স্থানে। শীর্ষের দিকে এক পলক তাকিয়ে দ্রুত পা চালালো গৃহের দিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে নয়টা।‌ ত্রয়ী কেবলই কলেজে এসে পৌঁছালো। গাড়ি থেকে নামতেই দেখা পেল কায়সারের। কলেজের গেটের সামনেই একটা বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। সাথে তার জনা কয়েক তরুণও রয়েছে। তাদের সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করছে আর হাসাহাসি করছে। লোকটাকে দেখেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো ত্রয়ীর। বাড়িতে আছে শীর্ষ আর বাইরে আছে এ লোক। দুটোই ভয়ং’কর শ্রেনী। প্রাণী জগতের শ্রেণীবিভাগে যদি মানুষের নিখুঁত শ্রেণী বিভাগ করা হতো। তবে এই লোক দুটো নির্ঘাত ধারাবাহিকভাবে গু’ন্ডা, ভয়ংকর এবং অভদ্র শ্রেনীবিভাগের আওতায় পড়তো। আর এই কায়সার নামক লোকটা তো আরও এক ধাপ বাড়িয়ে গায়ে পড়া শ্রেনীবিভাগের আওতায়ও পড়তো। ইদানীং লোকটা একটু বেশিই গায়ে পড়ছে। ত্রয়ী কায়সারের মুখোমুখি হতে চাইলো না। মুখোমুখি হলেই দেখা যাবে লোকটা যেচে এসে তার সাথে কথা শুরু করেছে। মেয়েটা মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটার মতো দিল। কায়সারের পাশ কাটিয়ে ঢুকতে শুরু করল কলেজের ভিতরে। কিন্তু শেষ রক্ষা বোধহয় আর হলো না। গেটের নিকট যেতেই কায়সার তাকে চিনে নিল। হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে ডেকে উঠল,

“আরে ত্রয়ী যে।‌ এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমার? সেই কখন থেকে তোমার আসার অপেক্ষা করছি আমি।”
ত্রয়ী মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হলেও মুখে তা প্রকাশ করল না। ভদ্রতা বজায় রাখতে সে নরম কণ্ঠেই বলল,
“জ্বি, কেন অপেক্ষা করছিলেন? কিছু বলবেন কি?”
“আমার ছাতাটা কোথায়? ফেরত দিবে না?”
ছাতা! কায়সারের দেওয়া ছাতা তো ত্রয়ী রিকশাওয়ালাকে দিয়ে দিয়েছে। সে ছাতা এখন ফেরত দিবে কোথা থেকে? আর এই লোক যে ছাতা দিয়ে আবার তা ফেরত নিতেও চলে আসবে সেদিন তাড়াহুড়োতে তা একবারও মাথায় আসেনি ত্রয়ীর। মাথায় আসলে নিশ্চয়ই সে ছাতাটা রিকশা চালককে দিয়ে দিতো না। এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো মেয়েটা। আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে ছাতাটা….”
কণ্ঠে এইটুকু উচ্চারণ করতেই আগমন ঘটলো শীর্ষের। থমথমে কণ্ঠে সে ত্রয়ীকে শুধাল,
“এখানে কি করছিস তুই?”
ত্রয়ী কোনো জবাব দিবে তার পূর্বেই কায়সার বলল,
“আমার সাথে কথা বলছে।”
শীর্ষ দাঁতে দাঁত চাপলো। ত্রয়ীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“ক্লাসে যা।”

ত্রয়ী যেন সুযোগ পেল। এমনিই রিকশা চালককে ছাতা দিয়ে এখন সে বিপাকে। রিকশা চালককে ছাতা দেওয়ার কথা জানতে পারলে কায়সার নিশ্চয়ই বিষয়টা ভালোভাবে নিবে না। হাজার হলেও লোকটা তাকে বিপদের সময় সাহায্য করেছে। সেই সাহায্যের বিনিময়ে তার হৃদয়ে ব্যথা দিতে দ্বিধাবোধ হলো ত্রয়ীর। শীর্ষের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সে। এরপরে চটজলদি ঢুকে গেল কলেজের ভিতরে। ত্রয়ী চলে যেতেই শীর্ষ তাকালো কায়সারের দিকে। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“তুই তো দেখছি কু’ত্তা’র চেয়েও বেলাজ, নির্লজ্জ। এতবার বারণ করা সত্ত্বেও আবার এসেছিস ত্রয়ীর সাথে কথা বলতে।”
কায়সার দাঁত বের করে হাসলো। ওষ্ঠ বাঁকিয়ে জবাব দিলো,
“তুই আর আমি এক নায়ের মাঝি তো তাই।”
শীর্ষ থমথমে কণ্ঠে বলল,

“ত্রয়ীকে আমি ভালোবাসি। ও আমার কলিজা লাগে তাই আমি আসি। তুই আসবি কেন?”
“ত্রয়ী আমারও কলিজা লাগে। শুধু কলিজা না। ফুসফুস, যকৃত, কিডনি সব লাগে। তাই আমিও আসতে পারি।”
“তুই কিন্তু এবার বেশি করছিস বা’ল পাকনা ডিসের লাইন।”
“আরও বেশি করব। দেখি তুই কিভাবে আকটকাস।”
কথাটা বলে থামলো কায়সার। পরপর আবার তার সাথে থাকা তরুনদের ডেকে বলল,
“চল এখন আমরা। এটার সাথে এখানে কথা বাড়িয়ে আমাদের লাভ নেই। পার্টির কাজে যেতে হবে।”
কায়সার তার দলবল নিয়ে চলে গেল। কপালে ভাঁজ পড়লো শীর্ষের। এই কায়সারটা ইদানীং একটু বেশিই করছে। তাকে সাবধান করা হচ্ছে, মা’রা হচ্ছে অথচ কোনোভাবেই তাকে দমানো যাচ্ছে না। নাহ, এবার তাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে শুধু কায়সার কেন অন্য কোনো পুরুষও আর ত্রয়ীর উপরে অধিকার বসানোর সুযোগ না পায়। বলা তো যায় না, আজ কায়সার ত্রয়ীর দিকে নজর দিয়েছে কাল অন্য কেউ দিবে। সুন্দরী মেয়ে নিয়ে এই এক জ্বালা। এই মেয়েকে এত সুন্দরী হতে কে বলেছে? একটু অসুন্দরও হতে পারতো।

বিকালের নরম আলোয় শীর্ষ, নয়ন, রবি আর আলভী একত্র হয়েছে শীর্ষদের অফিসের নিকটেই একটি টঙের দোকানে। পড়াশোনা শেষে শীর্ষের ন্যায় আলভীও বাবার ব্যবসায় যোগদান করেছে। তাদের অফিস দুটি কাছাকাছিই — মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। তাই তো শীর্ষ ডাকলেই আলভী যোকোনো সময় চলে আসতে পারে। যেমন এখন এসেছে। ইতোমধ্যে চারজন চার কাপ চা—ও হাতে নিয়েছে। চা খেতে খেতে বিভিন্ন গল্প গুজবে মেতে উঠেছে নয়ন, রবি এবং আলভী। আর শীর্ষ চুপচাপ কি যেন ভাবছে আর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। আলভী ভ্রু কুঁচকাল। নিজেদের গল্প গুজবে বিরতি দিয়ে শুধাল,
“কি রে শীর্ষ তুই কোনো কথা বলছিস না কেন?”
শীর্ষ থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,
“নিজের জ্বা’লা’য়’ই বাঁচছি না। আবার তোদের সাথে কি কথা বলবো?”
নয়ন কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“কেন আপনার আবার কি হয়েছে স্যার?”
“আর বলিস না। কায়সারের বাচ্চাটা ত্রয়ীর পিছনে কু’ত্তা’র মতো পড়ে আছে। বা’ল’টা’রে এত মা’রি, এত সাবধান করি তারপরও ওর গায়ে লাগে না।”
শীর্ষের কথা শেষ হতে না হতেই মুখ খুললো রবি। এক প্রকার হইহই করেই বলল,

“ত্রয়ী মানে তোর বাপের মামাতো ভাইয়ের ঐ মেয়েটা না? মেয়েটা সুন্দর আছে কিন্তু। কায়সার….”
আলভী নিজের চা ফেলে রেখে তড়িঘড়ি করে মুখ চেপে ধরল রবির‌। শীর্ষ ত্রয়ীকে নিয়ে যে কি পরিমাণ আক্রমণাত্মক তা সেদিন সে ক্লাবেই টের পেয়েছে। আর এখন এই ছেলে কিনা শীর্ষের সামনেই বলছে ত্রয়ী সুন্দর। নিশ্চয়ই ম’রা’র শখ হয়েছে এর। শীর্ষ এখন না একে মে’রে এই টঙের দোকানেই লটকে দেয়। তবে আলভী মুখ চেপে ধরলেও রবি দমলো না। সে নিজের মুখ থেকে আলভীর হাতটা ছিটকে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগ দেখিয়ে বলল,
“কথার মাঝখানে মুখ চেপে ধরা কোন ধরনের স্বভাব আলভী? সর দূরে সর।”
পরপর সে আবার তাকালো শীর্ষের দিকে। পুনরায় বলল,
“হ্যা যা বলছিলাম, কায়সার কেন যেকোনো পুরুষের ত্রয়ীর দিকে চোখ পড়াটা স্বাভাবিক।”
শীর্ষের অন্তর জ্বলে উঠল। তবে সে তা প্রকাশ করল না তৎক্ষণাৎ বরং শীতল দৃষ্টিতে তাকালো রবির দিকে। শান্ত অথচ গম্ভীর কণ্ঠে শুধাল,

“তোরও কি ওর উপর চোখ পড়েছে?”
“এখনো পড়েনি তবে পড়তে কতক্ষণ? দুই চারদিন দেখলে পড়ে যাবে বোধহয়।”
নয়ন এবং আলভী ঢোক গিললো। নয়ন একটু ঘেঁষে দাঁড়াল আলভীর দিকে। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“এই শেষ। এবার রবি স্যারের জীবন, যৌবন, ভবিষ্যৎ কোনটা নিয়ে টানাটানি বাঁধে আল্লাহ জানেন।”
শীর্ষ কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে তাকিয়ে রইল রবির দিকে। অতঃপর গলা উঁচিয়ে বলল,
“নয়ন, আগামীকাল থেকে এক সপ্তাহ রবির সব কাজ তো ওর নিজেরই সাথে অফিসের আরও চারজনের কাজ দিবি ওকে। কাজ করতে করতে রাত গড়িয়ে দিন চলে এলেও কাজ কমাবি না।”
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না শীর্ষ। চায়ের কাপটা রেখে হনহন করে বেরিয়ে গেল দোকান থেকে। মাথার মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা ঘোরপাক খাচ্ছে। ত্রয়ীকে যেভাবেই হোক তার করে নিতে হবে। এভাবে আর ফেলে রাখা যাবে না।
রবি হতবাক হয়ে পড়লো শীর্ষের কর্মকাণ্ডে। সে আবার কি করল যে শীর্ষ তাকে এত বড়ো একটা শাস্তি দিলো? নতুন নতুন চাকরি পেয়েছে সে। এই মুহূর্তে একজনের কাজ করতেই তো হিমশিম খেয়ে যেতে হয়। সেখানে চারজনের কাজ কিভাবে করবে? রবি কণ্ঠ বাড়ালো। হড়বড় করে বলল,
“হঠাৎ চ্যাতলি কেন? আমি আবার কি করলাম? চারজনের কাজ আমাকে একাকে করতে হবে কেন?”
রবির কথায় তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো আলভী। তার কাঁধে হাত রেখে বলল,

“চারজনের কাজ দিয়েছে তো কমই দিয়েছে। আমি তো ভেবেছিলাম তোকে মে’রে এই টঙের দোকানেই লটকে দিবে।”
“কেন?”
“তুই যে জায়গায় নজর দেওয়ার কথা বলেছিস ঐটা শীর্ষের কলিজা লাগে।”
“মানে?”
আলভী আর নয়ন কায়সারের সাথে ঘটা সেদিনের ঘটনাটা খুলে বলল রবিকে। সবটা শুনে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল তার। একটা দিন ক্লাবে না আসায় এত কিছু মিস করল সে? আর এই আলভী এবং নয়নও হয়েছে এক একটা ব’দ’মা’ই’শ। সে না হয় সেদিন ক্লাবে যায়নি। তাই বলে ক্লাবে কি ঘটলো না ঘটলো তাকে জানাবে না? তাকে যদি আগে থেকে পুরো ঘটনাটা জানাতো তাহলে নিশ্চয়ই শীর্ষের অভিমুখে এত বড়ো একটা ভুল সে করে বসতো না, আর শাস্তিও পেতে না। রবি চোখ মুখ শক্ত করল। কটমট করে বলল,

“এইসব তোরা আমাকে আগে বলবি না? আগে বললে কি আমি এত বড়ো ভুলটা করতাম?”
আলভী মুখ বাঁকিয়ে জবাব দিলো,
“বলিনি তো কি হয়েছে? তোর মুখ তো চেপে ধরেছিলাম। কিন্তু তুই কি করলি? মুখ থেকে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে কথাটা বলেই ফেললি।”
রবি তবুও অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো আলভী এবং নয়নের দিকে।‌ পরপর ছুট লাগালো শীর্ষ যেদিকে গিয়েছে। চ্যাচিয়ে বলল,
“আমি ত্রয়ী কেন কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না ভাই। সারাজীবন আইবুড়ো থাকবো। তবুও মাফ কর ভাই। চারজনের কাজ উঠিয়ে নে আমার উপর থেকে।”

রাত্রি বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে আঁধারের ঘনত্ব। শীর্ষ কেবলই সদর দরজা থেকে বাড়ির ভিতরে পা রাখলো। অতঃপর নিজ কক্ষে না গিয়ে পা চালিয়ে গিয়ে দাঁড়াল রান্নাঘরের অভিমুখে। ত্রয়ী যে প্রতিদিন এই সময়ে রান্নাঘরে থাকে। সকল এটো বাসন ধুয়ে মুছে গুছিয়ে রাখে তা এতদিনে জানা হয়ে গেছে তার। শীর্ষ রান্নাঘরের ভিতরে প্রবেশ করেই গম্ভীর কণ্ঠে শুধাল,
“কি রে কি করছিস?”
ত্রয়ী একটি থালা মুছতে মুছতে জবাব দিলো,
“এই তো থালা বাসন গুলো পরিষ্কার করছি। কেন কফি বানাতে হবে আপনার?”
“না।”
ত্রয়ী অবাক হলো। যে সারাদিন কফি কফি করে হেদিয়ে ম’রে সে কিনা বলছে কফি বানাতে হবে না? আর এমনিও তো শীর্ষ প্রতিদিন এই সময়ে কফি চায়। প্রয়োজনে ত্রয়ীর ঘুম ভাঙিয়ে কফি চায়। মেয়েটা থালা মোছা রেখে তাকালো শীর্ষের দিকে। অবাক কণ্ঠেই শুধাল,
“কি বললেন আপনি? কফি বানাতে হবে না?”

জবাবে শীর্ষ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। হঠাৎ তার নজর গেল ত্রয়ীর গলার দিকে। ছোট ছোট দুই তিনটা লাল দাগ দেখা যাচ্ছে সেখানে। মেয়েটা ফর্সা হওয়ায় ঐ লাল দাগ গুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে তার দৃশ্যপটে। হৃদস্পন্দন বাড়লো শীর্ষের। ঐ লাল দাগ গুলো যেন মেয়েটাকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। কেমন নে’শা লেগে যাচ্ছে তার। ইচ্ছে হচ্ছে এখনই ত্রয়ীকে ঠেসে ধরে গলার লাল দাগ গুলোর উপরে ঠুস ঠাস কতগুলো চু’মু খেতে। ঢোক গিললো বেচারা। মেয়েটার উপর থেকে এই মুহূর্তে চোখ সরানোই দায় হয়ে পড়েছে শীর্ষের, তবুও কণ্ঠে কেমন ভাঙা সুর নিয়ে শুধাল,

“তোর গলায় কি হয়েছে?”
ত্রয়ী গলার হাত দিলো। কপাল কুঁচকে বলল,
“মনে হয় মশায় কামড় দিয়েছে।”
শীর্ষের চোখ মুখ কুঁচকে এলো। বিরবিরিয়ে বলল,
“বা’লে’র মশা। আমার আগেই আমার অধিকারে ভাগ বসাতে চলে এসেছে।”
“জ্বি, কিছু বললেন?”

অনুরাগে তুই পর্ব ৩৬

শীর্ষ তৎক্ষণাৎ কোনো জবাব দিলো না। একটু এগিয়ে হঠাৎ করেই খপ করে ধরলো ত্রয়ীর এক হাত। টেনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
“আমার আত্ম নিয়ন্ত্রণে আ’গু’ন লেগেছে। চল এখনই বিয়ে করে ফেলি।”

অনুরাগে তুই পর্ব ৩৮