অনুরাগে তুই পর্ব ৩৮
সাদিয়া শওকত বাবলি
একটু এগিয়ে হঠাৎ করেই খপ করে ধরলো ত্রয়ীর এক হাত। টেনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
“আমার আত্ম নিয়ন্ত্রণে আ’গু’ন লেগেছে। চল এখনই বিয়ে করে ফেলি।”
ত্রয়ী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়লো। লোকটা কী বলল? এখনই বিয়ে করবে তাকে? মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে এর নাকি মজা করছে তার সাথে, কোনটা? শীর্ষের হাতের বাঁক থেকে নিজের হাতটা টেনে ছাড়িয়ে নিল ত্রয়ী। চোখে মুখে বিস্ময়ের ঝড় নিয়ে বলল,
“কি করছেন কি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি আপনার?”
শীর্ষ কপাল টানটান করল। চোখে মুখে দৃঢ়তা নিয়ে বলল,
“পাগল হতে যাব কেন? বিয়ের বয়স হয়েছে আমার। তাই বিয়ে করতে চাচ্ছি। চল এখনই বিয়েটা করে ফেলি।”
কণ্ঠে তোলা ধ্বনি দ্বয়ের সমাপ্তি ঘটিয়ে শীর্ষ আবারও ত্রয়ীর হাত ধরলো। তার আঁখি দ্বয়ে যেন মুহুর্তেই ভর করল একরাশ দৃঢ়তা, এক অদৃশ্য আকুতি। কিন্তু ত্রয়ী এবারও নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বলল,
“আপনি…আপনি আমার সাথে মজা করছেন, তাই না?”
শীর্ষের দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। কণ্ঠে একরাশ গম্ভীরতা নিয়ে বলল,
“তোর সঙ্গে কি আমার মজার সম্পর্ক যে মজা করবো?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শীর্ষের কণ্ঠে উচ্চারিত শব্দগুলো যেন ত্রয়ীর হৃদয়ে ধাক্কা দিলো। চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল বিস্ময়ে। তবে কি শীর্ষ সত্যিই তাকে বিয়ে করতে চাইছে? তার এতক্ষণের কথাগুলো মজা ছিল না? ত্রয়ী স্বল্পক্ষণের জন্য না হয় ধরেও নিল শীর্ষ তার সাথে কোনো মজা করেনি। তার প্রতিটি বাক্য সত্যি ছিল। তবুও তার পক্ষে শীর্ষকে বিয়ে করা সম্ভব নয়, কিছুতেই নয়। বাবা-মা এবং দাদিকে হারানোর পরে নিজের রক্ত, নিজের চাচারাই যখন ত্রয়ীকে বোঝা মনে করে দূরে ঠেলে দিয়েছিল—তাদের বাড়িতেই ঠাঁই দেয়নি, তখন দয়া ধরে আব্দুর রহমান খানই তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, নিজের ঘরে ঠাঁই দিয়েছিলেন। নিজের সন্তানের মতো করে কলেজেও ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। রিমা মাঝে মাঝে একটু খারাপ ব্যবহার করলেও বাড়ির বাকিরা আপন করে নিয়েছে তাকে। এই মানুষ গুলোর অগোচরে, তাদের আস্থা ভেঙে ত্রয়ী কিছুতেই শীর্ষের সাথে কোনো ধরণের সম্পর্কে জড়াতে পারবে না। আর যাই হোক এই মানুষগুলোর সাথে সে বে’ই’মা’নি করতে পারবে না। তাছাড়া ত্রয়ী এতিম, চাল চুলোহীন একটি মেয়ে। তার মতো একটি মেয়েকে হয়তো কোনো ভালো পরিবারই বউ করে তাদের ঘরে তুলতে চাইবে না। সেখানে শীর্ষদের পরিবার বেশ ধনী এবং সমাজে মর্যাদাসম্পন্ন। তারা নিশ্চয়ই ত্রয়ীকে এ বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে চাইবে না। কাউকে আশ্রয় দেওয়া আর বাড়ির বউ করা সমান নয়। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো মেয়েটি। কণ্ঠ স্বাভাবিক করে বলল,
“আমি জানি না আপনি সত্যি বলছেন নাকি মজা করছেন। তবে সত্য মিথ্যা যাই হোক না কেন আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।”
শীর্ষ থমকালো। সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথার আভাস পেল বক্ষ অভ্যন্তরে। নিজ প্রেয়সীর কণ্ঠ থেকে প্রত্যাখ্যান যুক্ত বাক্য শোনা নিশ্চয়ই কোনো পুরুষের জন্য সুখকর নয়। শীর্ষের অন্তঃস্থল ভারী হলো। ঠান্ডা কণ্ঠেই শুধাল,
“কেন? আমি কোন দিক থেকে খারাপ?”
শীর্ষকে ত্রয়ী ভয় পায় তা ঠিক তবে এর মানে এই নয় যে লোকটা খারাপ কিংবা তাকে সে ঘৃণা করে। বরং মাঝে মাঝে শীর্ষের কিছু কথা, কিছু ব্যবহার ত্রয়ীর হৃদয়ে তার জন্য অনুভূতি জাগাতে বাধ্য করে। তবে সে অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে ত্রয়ীও নিজেকে রুখে দেয় এই ভেবে যে—সে একজন সামান্য আশ্রিতা, আর শীর্ষ এই বাড়ির স্বত্বাধিকারী। তার সাথে শীর্ষের কোনোভাবেই কিছু সম্ভব নয়। শীর্ষের বারবার ত্রয়ীকে বিয়ের কথা বলা এবং কিছু আচরণ তার হৃদয়ে সন্দেহ জাগিয়েছিল যে লোকটা হয়তো তার প্রতি দুর্বল। তবে সে সন্দেহও সে গুরুত্বসহকারে নেয়নি। নিছকই একটা ভুল ধারণা ভেবে মনকে শান্তনা দিয়েছিল। ত্রয়ী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নরম কণ্ঠেই বলল,
“খারপ আপনি না। খারাপ আমি। না হয় সব খারাপ কেন আমার সাথেই হবে? সবাই কেন আমাকেই ছেড়ে যাবে? যাই হোক সেসব কথা বাদ দিন। আপনার সাথে আমার কোনো দিক থেকেই মিলে না। আপনি যে বাড়ির কর্তা, আমি সে বাড়ির সামান্য এক আশ্রিতা। তাছাড়া আমি এতিম। চারকুলে কেউ নেই বললেই চলে। আমাকে হয়তো আপনার পরিবার মানবে না। আর আপনিও আবেগে পড়ে এখন বিয়ের জন্য ম’রি’য়া হয়ে উঠেছেন। দুই দিন পর যখন দেখবেন আমাকে আপনার পরিবার মানছে না, সমাজ মানছে না তখন আফসোস করবেন। তাই বলি কি আমার পিছনে ঘুরে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। বিয়ে করতে ইচ্ছে হলে সুন্দর, শিক্ষিত, বংশ মর্যাদা সম্পন্ন একটি মেয়েকে খুঁজে বিয়ে করে নিন। সুখী হবেন।”
এই টুকু বলে থামলো ত্রয়ী। দম নিয়ে ফের বলল,
“আর বিয়ের কথাটা যদি নিছকই মজার ছলে বলে থাকেন তবে আশা রাখছি এই পর্যন্তই থেমে যাবেন। আমার এই ধরণের মজা পছন্দ নয়।”
ত্রয়ী নিজের কথার সমাপ্তি টেনে নীরবে চলে গেল। শীর্ষ দাঁড়িয়ে রইল ঐ স্থানেই। তবে স্থির নয়। তার ছোট্ট হৃদয়টা যেন এক অস্থির, উত্তাল সমুদ্রের রূপ নিয়েছে যার প্রতিটি ঢেউয়ে অস্ফুট আর্তনাদ ভেসে আসছে। চিন্তারাও এই মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে উঠেছে, যেন প্রচন্ড বাতাসে দিকহারা, বিপথগামী কাগজের টুকরোর ন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছে। ত্রয়ী মাত্রই স্পষ্ট রূপে তাকে জানিয়ে গেল সে শীর্ষকে বিয়ে করতে পারবে না। বরং অন্য কাউকে খুঁজে নিতে বলল। কি সাবলীলভাবেই
না ত্রয়ী কথা গুলো বলে গেল। অথচ তা পুনরায় স্মরণে আনতেও শীর্ষের কষ্ট হচ্ছে। এ কেমন যন্ত্রণা! ভালোবাসলে কি প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয়ে এভাবেই কষ্ট পেতে হয়? তবে বোধহয় শীর্ষ ভালোবেসেই ভুল করেছে। আর এই ভুল তাকে কোন অব্দি টেনে নিয়ে যায় কে জানে?
সুন্দর সোনালী সকাল। শহুরে আবহাওয়া একটু একটু করে ভারী হয়ে উঠতে শুরু করেছে কোলাহলের কর্কশ ধ্বনিতে। মানুষজন নিজেদের কর্মব্যস্ততায় ছুটে চলেছে দিগ্বিদিক। এই ক্ষণে ত্রয়ীও নিজের কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করল। আরফা কলেজের গেটের নিকটেই দাঁড়িয়ে ছিল ত্রয়ীর অপেক্ষায়। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে আসতে দেখেই তার দিকে ছুটে এলো আরফা। কপালে ভাঁজ ফেলে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় থাকিস তুই? অনলাইনে দেখি না, মোবাইলে কল করলে তাও ধরিস না!”
ত্রয়ী রিমার করা ঝামেলার কথাটা চেপে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে আমি শীর্ষ ভাইয়ার ফেসবুক আইডিটা লগ আউট করে ফেলেছি। এখন আইডির পাসওয়ার্ডও জানি না, আর উনার কাছে জিজ্ঞেস করতেও ভয় লাগছে। তাই অনলাইনে পাচ্ছিস না আমাকে।
“উনার আইডির পাসওয়ার্ড জানতে হবে কেন তোকে? এখন এই মোবাইল তো তোর নিজেরই। নতুন একটা আইডি খুলে নে।”
ত্রয়ী আশেপাশে তাকালো। গলা নামিয়ে বলল,
“আমি পারি না নতুন আইডি খুলতে। আর তাছাড়া শীর্ষ ভাইয়া যদি রাগ করেন।”
আরফা হেসে বলল,
“ধুর, উনি রাগ করবেন কেন? তোর মোবাইলটা দে। আমি তোকে নতুন একটা আইডি খুলে দিচ্ছি।”
ত্রয়ী এবং আরফা দুজনেই কলেজ ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসের উপরে বসে পড়লো। ত্রয়ীর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে আরফা ব্যস্ত হাতে নতুন আইডি খোলার কাজে লেগে পড়লো। আইডির নামটা ত্রয়ী নিজের নামই দিলো। পাসওয়ার্ডটাও গোপনীয়তা অবলম্বন করে সে—ই স্থির করল। কিন্তু আইডিটা খোলা শেষে আরফা আর ত্রয়ীর নিকট থেকে কোনো অনুমতি নিল না। নিজ উদ্যোগেই গ্যালারির ঘেঁটে তার একটি সুন্দর ছবি লাগিয়ে দিলো প্রোফাইলে। অতঃপর চোখে-মুখে সন্তুষ্টির ছাপ নিয়ে বলল,
“নে, তোর আইডি খোলা শেষ।”
ত্রয়ী মোবাইলটা হাতে নিলো। সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে তার পূর্বেই সেখানে এসে উপস্থিত হলো রাকিব। আরফার মাথায় আলতো একটা টোকা মে’রে বলল,
“কি রে, তোরা এখানে বসে কি করছিস? ওদিকে তো ক্লাস শুরু হয়ে গেল বলে!”
ত্রয়ী আর কিছু যাচাই করে দেখলো না। চটজলদি মোবাইলটা গুঁজে নিল ব্যাগের ভিতরে। এই ছেলেটার ওপর কোনো ভরসা নেই। কিছু আঁচ করতে পারলেই নির্ঘাত শীর্ষকে জানিয়ে দেবে। শীর্ষ ভাইয়ের বড়ো ভক্ত যে সে। আরফাও বিরক্ত হলো রাকিবের আগমনে। চোখ মুখ কুঁচকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“গেলে যাক। তোর এখানে কি? যা, ক্লাসে যা।”
রাকিব আরফার নিকট থেকে একটু দূরত্ব রেখে বসে পড়লো ঘাসের উপরেই। দম ফেলে বলল,
“তোরা ক্লাসে না গেলে আমি একা একা গিয়ে কি করবো?”
আরফা ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো,
“একা কোথায়? ক্লাসে তো আরও অনেকে আছে।”
“তা থাক গিয়ে, তোরা তো নেই।”
“তুই…..”
আরফার কথার মাঝেই একটি মেয়ে এসে দাঁড়াল তাদের অভিমুখে। ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে শুধাল,
“তুমি ত্রয়ী?”
ত্রয়ী পলক ঝাপটালো। নরম কণ্ঠে জবাব দিলো,
“জ্বি, কিন্তু আপনি?”
মেয়েটি হেসে বলল,
“আমি মিষ্টি।”
এইটুকু বলে থামলো সে। একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা রাখো। তোমার সিনিয়র রাফিন ভাইয়া দিয়েছেন।”
ত্রয়ী অবাক হলো। এই রাফিনটা আবার কে? আগে কখনো এর নাম শুনেছে বলেও তো মনে হচ্ছে না। সে আবার ত্রয়ীকে কাগজ পাঠিয়েছে কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে প্রেমপত্র। মেয়েটা কাগজটা হাতে নিলো না। বরং ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“রাফিন ভাই কে? আর এটাতেও বা কি আছে?”
মিষ্টি নামক মেয়েটি কাগজটা গুঁজে দিলো ত্রয়ীর হাতে। এরপরে পিছন ঘুরে দ্রুত গতিতে দিকে পা চালাতে চালাতে বলল,
“পড়ে দেখো কি আছে। আমার আবার ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে তো, পরে সময় করে এসে তোমার সাথে কথা বলবো।”
মেয়েটি চলে যেতেই হইহই করে উঠল আরফা। ত্রয়ীর হাত থেকে এক প্রকার কাগজটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,
“দেখি দেখি কি আছে এতে। নিশ্চয়ই ঐ রাফিন ভাই না কি সে তার ভালোবাসা দিয়ে প্রেমপত্র পাঠিয়েছে।”
ত্রয়ী বাঁধা দিলো না আরফাকে। কে না কে প্রেমপত্র পাঠিয়েছে ওটা বরং আরফাই পড়ুক। আরফা কাগজটা খুললো। কণ্ঠ বাড়িয়ে পড়তে শুরু করল,
প্রিয় ত্রয়ী,
কেমন আছো? আশা করি ভালোই আছো। অবশ্য ভালো থাকবেই বা না কেন? আমার হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে তোমারা তো ভালো থাকারই কথা। জানো তো মেয়ে, যেদিন তোমাকে এই কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথমবার দেখেছিলাম সেদিনই আমার মন দিয়ে বসেছিলাম। তারপর থেকেই, নিভৃতে তোমাকে নিয়ে বুনেছি হাজারও স্বপ্নের জাল। সেদিন থেকে তোমার কথা ভেবে একটা রাতেও ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি। অনেক দিন তোমাকে কথাটা বলবো বলবো ভেবেও সাহস করে বলতে পারিনি। তবে আজ সাহসটা করেই ফেলেছি। সাহস করেই বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি ত্রয়ী। তোমার হৃদয়ে আমাকে কি একটু আশ্রয় দিবে? তোমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
রাফিন।
এক নিঃশ্বাসে চিঠিটা পড়ে থামলো আরফা। রসিয়ে রসিয়ে বলল,
“বাহ! এ তো দেখছি তোর প্রেমে একদম হাবুডুবু খাচ্ছে। আবার উত্তরের অপেক্ষায়ও থাকবে বলেছে। কি প্রেম! কি প্রেম!”
বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়লো ত্রয়ীর। তবে সে বলল না কিছুই। পাশ থেকে রাকিব ছো মে’রে আরফার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিল। মোবাইল বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল তাতে। ত্রয়ী ভ্রু কুঁচকালো। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“একি তুমি ছবি তুলছো কেন এটার?”
রাকিব জোরপূর্বক হেসে জবাব দিলো,
“জীবনে কখনো প্রেমপত্র পাইনি তো। তাই তোমার প্রেমপত্রের ছবি তুলে নিচ্ছি। ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে।”
ত্রয়ীর যে রাকিবের কথাগুলো বিশ্বাস হলো তেমন নয়। তবে সে আর কথা বাড়ালো না। ক্লাসের দিকে হাঁটা লাগিয়ে বলল,
“ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে বোধ হয়। ক্লাসে চল সবাই।”
প্রায় ঘণ্টাখানেকের দীর্ঘ মিটিং শেষে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল শীর্ষ। মিটিং শেষ হতেই বাকিরা একে একে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও শীর্ষ আর নয়ন রয়ে গেল। শীর্ষ ক্লান্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে হেলান দিলো। হাত উঁচিয়ে গলার টাই টা একটু ঢিলা করতেই টেবিলে রাখা মোবাইলটি থেকে ভেসে এলে মেসেজের রিংটোন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোবাইলটা হাতে নিল সে। মুহুর্তেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল ক্রোধে। ললাট জুড়েও কয়েকটি ভাঁজের দেখা মিললো। এই মেয়েটিকে নিয়ে আর পারা গেল না। সবাই শুধু এই মেয়ের পিছনেই লেগে থাকে। কেন? পৃথিবীতে কি মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি? এখনো তার আর ত্রয়ীর মধ্যে কিছু শুরুই হলো না। সে ত্রয়ীকে ঠিকভাবে নিজের মনের কথাও জানাতে পারলো না। এর ভিতরে হাজার জন চলে এসেছে তাদের মনের কথা জানাতে। শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে বলল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৩৭
“বা’লে’র একটা মাইয়া। তার পিছনে আবার কু’ত্তা’র অভাব নাই। একটা কু’ত্তা তো আগে থেকেই ছিল। এখন আরও একটা এসে জুটেছে।”
নয়ন পাশ থেকে শুনলো শীর্ষের প্রতিটি কথা। ততটা ভাবলো না সে। ফট করেই প্রশ্ন করে বসলো,
“তাহলে কি আপনিও কু’ত্তা স্যার?”