অনুরাগে তুই পর্ব ৪০
সাদিয়া শওকত বাবলি
শীর্ষ সৌজন্যেসূচক হাসলো। নম্র কণ্ঠে বলল,
“আসলে ত্রয়ীকে একটু প্রয়োজন ছিল। বাবা ওকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছেন।”
অধ্যাপক বিশেষ কিছু বললেন না। সহজেই ত্রয়ীকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। ত্রয়ী নিঃশব্দে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো। শীর্ষের পেছনে হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্ন করল,
“বাড়িতে কি কিছু হয়েছে? আঙ্কেল হঠাৎ এত জরুরি তলব করলেন যে?”
শীর্ষ কোনও উত্তর দিলো না। নিশ্চুপ, দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলল সামনের দিকে। শীর্ষের চলন দ্রুত হওয়ায় ত্রয়ী তার গতির সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হলো। খানিকটা হাপিয়ে উঠে বলল,
“আস্তে হাঁটুন না! আমি এত দ্রুত হাঁটতে পারি না।”
শীর্ষ কানে নিল না ত্রয়ীর কথা। বরং নিজের চলন গতি বাড়িয়ে দিলো পূর্বের তুলনায়। মেয়েটা এবার রীতিমতো দৌড় শুরু করল শীর্ষের পিছু পিছু। তবুও থামলো না সে। খুব বেশি সময় ব্যয় হলো না—স্বল্প সময়ের মধ্যেই তারা কলেজ চত্বর পেরিয়ে রাস্তায় এসে পড়ল। কলেজের একটু এপাশেই শীর্ষের গাড়িটা দাঁড় করানো ছিল। শীর্ষ কোনোরূপ বাক্য ব্যয় না করে গাড়ির সামনের ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল। ত্রয়ী গাড়ির পিছনের দরজা খুললো। ভিতরে ঢুকে বসবে তখনই অভিমুখ থেকে রূঢ় স্বরে ভেসে এলো,
“সামনে আয়।”
ত্রয়ী দ্বিরুক্তি করল না। ধীর পায়ে গিয়ে বসলো সামনের সিটে। শীর্ষ গাড়ির দরজা লক করে সিটে গা এলিয়ে দিলো। ত্রয়ী অবাক হলো। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“গাড়ি চালু করছেন না কেন? বাড়িতে যাবেন না নাকি?”
শীর্ষ এবারেও জবাব দিলো না। চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল সিটের সাথে। ত্রয়ীর অবাকের মাত্রা বাড়লো। কপাল কুঁচকে রেখেই ফের শুধাল,
“কি হলো? এখনো গাড়ি চালু করেছেন না কেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ পর্যায়ে শীর্ষ ধপ করে খুললো স্বীয় আঁখি দ্বয়। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। ভরকে গেল মেয়েটা, অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল যেন। শীর্ষের মুখাবয়বের অবস্থা দেখে তার বুঝতে বাকি রইল না যে, লোকটা রেগে রয়েছে। কিন্তু লোকটা রেগে কেন রয়েছে? একটু আগেও তো সব ঠিকঠাক ছিল। তবে কি সে কিছু করেছে? ত্রয়ী মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করল। স্মরণ করার চেষ্টা করল তার কার্যক্রম গুলো। নাহ, রেগে যাওয়ার মতো তেমন কিছু করেছে বলে তো স্মরণে আসছে না। শীর্ষ তাকে আনতে গেল, সেও চলে এলো, তারপর দুই একটা প্রশ্ন করল। ব্যস এই টুকুই তো। এখানে তো রেগে যাওয়ার মতো কিছু নেই। তাহলে লোকটা রেগে গেল কেন? ত্রয়ী ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে শুধাল,
“কি হয়েছে? ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। অত্যন্ত রুক্ষ স্বরে জবাব দিলো,
“দেখছি তোর মতো বালির বস্তার মধ্যে কি এমন আছে যে সব পুরুষ তোর পিছনেই হাত ধুয়ে পড়েছে?”
ত্রয়ীর ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো। এই লোক আবার এসব কি বলছে? সব পুরুষ তার পিছনে পাগল? ত্রয়ী কিছুটা অবাক হয়েই শুধাল,
“কই? কোথায়?”
শীর্ষ ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। কটমট করে বলল,
“রাফিন কে? ও তোকে চিঠি দেওয়ার সাহস পেল কোথা থেকে?”
ত্রয়ী চমকালো, ভরকালো। এর মধ্যে এ তথ্যও পৌঁছে গেছে এই লোকের কানে? এ নিশ্চয়ই ঐ রাকিবের কাজ। ঐ ছেলেটাকে তখন তাদের সাথে রাখাই ভুল হয়েছে। যখনই ছেলেটা তাদের পাশে এসে বসেছিল লা’ত্থি মে’রে উঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো ত্রয়ীর। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“মেয়েরা বড়ো হলে অমন দুই একটা প্রেমের প্রস্তাব, চিঠি আসে।”
“আর কাউকে তো দেখলাম না। শুধু তোর ক্ষেত্রেই দেখলাম।”
“কয়টা মেয়েকে দেখেছেন আপনি? নাকি এ বিষয়ে জানার জন্য এখন আমি বা অন্যান্য মেয়েদের দিকে নজর দেওয়া শুরু করেছেন?”
শীর্ষ থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
“তুই বা অন্য মেয়েদের দিকে নজর দিতে যাব কেন? রিমা আর পন্না আছে না। ওদের ক্ষেত্রে তো দেখলাম না এত প্রেমের প্রস্তাব আসতে।”
“আসে ঠিকই আপনি হয়তো খেয়াল করেন না।”
শীর্ষ আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। সত্যিই সে পন্না এবং রিমার ক্ষেত্রে এতটা খেয়াল করেনি। সে ভেবেছে বাড়ির গাড়িতে বোনদের যাতায়াত, স্কুল কলেজও তাদের পরিচিত, শিক্ষদের বলা রয়েছে খেয়াল রাখতে এরপরে আর খারাপ কিছু ঘটবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঐ টুকুই যথেষ্ট ছিল না। নাহ, এখন থেকে পন্না এবং রিমার দিকেও নজরদারি বাড়িয়ে দিতে হবে। নিজের বোনদের ক্ষেত্রেও তার দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। শীর্ষ গাড়ি স্টার্ট করল। সাঁই সাঁই গতিতে ছুটলো অভিমুখে।
নয়ন বসে রয়েছে অফিসে তার জন্য নির্ধারিত টেবিলে। মনের মধ্যে তার বিস্তর অস্থিরতা। মিস্টার সোহাগ যেকোনো সময় চলে আসতে পারে। আর চলে এলেই তো তার গা ঘেঁষা শুরু করবে। মেয়েলী কণ্ঠে নয়ন, নয়ন ধ্বনি তুলে তার কানকে আহত করে দিবে। এখন যে ঐ লোকের ভয়ে সে অফিস ছেড়ে পালাবে তারও উপায় নেই। তাহলে শীর্ষ তার চাকরিটাই খেয়ে দিবে। রবির কাছে যে একটু সাহায্যের জন্য অনুরোধ করবে তাও সে এই মুহূর্তে অফিসে নেই। নয়ন মনের মধ্যে বিশাদ চিন্তা ভাবনা নিয়েই একটা কলম নাড়ছিল। এর মধ্যেই কাছে পিঠে থেকে ভেসে এলো,
“নয়ন, ওহ মাই সুইট বয়! আমি চলে এসেছি।”
নয়ন কিঞ্চিৎ চমকে উঠল। দৃষ্টি দিলো অভিমুখে। ঐ চলে এসেছে? শ’য়’তা’নে’র নাম নেওয়ার সাথে সাথে শ’য়’তা’ন হাজির। কেন যে সে মুখ ফসকে তখন শীর্ষকে কু’ত্তা বলতে গেল? বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো বেচারার। তবে কণ্ঠ বাড়িয়ে বলল না কিছুই। মিস্টার সোহাগ নিজ উদ্যেগে একটি চেয়ার টেনে বসলো নয়নের অভিমুখে। নিজের সাথে আনা ছোট লেডিস ব্যাগটা টেবিলের উপরে রাখতে রাখতে বলল,
“কেমন আছো মাই সুইট বয়? একদিন অফিসে আসিনি বলে আমাকে এত মিস করছিলে যে একদম শীর্ষকে দিয়ে কল করিয়ে ডেকে আনলে?”
নয়ন ভেংচি কাটলো। মনে মনে বলল,
“মিস তো দূরে থাক। তুই অফিসে আসিসনি বলে আমি আরও খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ঐ বজ্জাত শীর্ষটা তোকে আমার ঘাড়ে তুলে দিয়ে চম্পট দিয়েছে। ব্যাটা খচ্চর একটা।”
পরপর আবার কণ্ঠ বাড়ালো নয়ন। জোরপূর্বক হেসে বলল,
“ঐ আর কি….”
মিস্টার সোহাগের চোখ মুখে হঠাৎ আঁধার নেমে এলো। মলিন কণ্ঠে বলল,
“একদিন অফিসে আসিনি বলেই মিস করছিলে। এরপর তো তোমাকে আরও মিস করতে হবে। তবুও আমাকে পাবে না।”
“কেন?”
“তুমি তো মনে হয় জানো আমার সম্পূর্ণ পরিবার আমেরিকায় থাকে। আমিও বেশিরভাগ সময় ওখানেই কাটাই। শুধু মাঝে মাঝে ব্যবসার কাজে দেশে আসি। এই যেমন তোমাদের সাথে ডিল ফাইনাল করতে এলাম।”
“হুম।”
“যদিও আমার আরও এক মাস দেশে থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মা বারবার কল করে আমাকে যেতে বলছে। এখন না গিয়েও উপায় নেই।”
নয়নের চোখ মুখ চকচক করে উঠল। যাক অবশেষে আবদটা বিদায় হচ্ছে। এবার একটু শান্তিতে থাকতে পারবে সে। নয়ন উৎফুল্ল হলো। আনন্দিত কণ্ঠে বলল,
“চলে যান, এখনই চলে যান।”
মিস্টার সোহাগ চোখ ছোট ছোট করলেন। থমথমে কণ্ঠে শুধালেন,
“এখনই চলে যেতে বলছো মানে? তুমি কি আমার চলে যাওয়ার কথা শুনে খুশি হয়েছো?”
নয়ন অপ্রস্তুত হলো। আমতা আমতা করে বলল,
“না, না খুশি কেন হবো? আসলে আপনার বাবা অসুস্থ শুনে একটু চিন্তা হচ্ছিলো। তাই বলে ফেলেছি। মনে কিছু করবেন না।”
“হুম, বাবার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে চিন্তা তো আমারও হচ্ছে। কিন্তু আমার তোমাদের সাথে আরও কিছুটা সময় কাটানোর ইচ্ছে ছিল।”
“আমরা তো আর হারিয়ে যাচ্ছি না। আর আপনিও তো দেশ ছেড়ে একদম চলে যাচ্ছেন না যে আর কখনো আসবেন না। আমাদের অবশ্যই আবার দেখা হবে। তখন না হয় একসাথে অনেক সময় কাটানো যাবে।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললেন মিস্টার সোহাগ। ছোট করে জবাব দিলেন,
“হুম।”
সময় গড়িয়ে চলছে। আকাশে অবস্থানরত উজ্জ্বল সূর্যটা একটু একটু করে তার স্থান পরিবর্তন করছে। শীর্ষ ত্রয়ীকে কলেজ থেকে এনে আর বাড়িতে যায়নি। তাদের গাড়িটা কেবলই এসে থামলো একটি ছোট সরু রাস্তার ধারে। দুজন নেমে দাঁড়াল গাড়ি থেকে। শহরের বাইরে কোলাহল বিহীন স্থানটা। চারদিকে জনমানবের দেখাও খুব একটা নেই। ত্রয়ী আশেপাশে তাকালো। কপাল কুঁচকে শুধাল,
“এটা কোথায় এসেছি আমরা? আপনি না বলেছিলেন আঙ্কেল আমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছে?”
শীর্ষ সম্মুখ পানে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,
“পরে আবার বারণ করেছেন।”
“তাহলে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?”
“ভাবলাম এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে গিয়ে কি করবো? তাই এখানে নিয়ে এলাম। একটু ঘুরতে।”
ত্রয়ী অবাক হলো। এই লোক আবার এত ভালো হলো কবে থেকে যে তাকে ঘুরতে নিয়ে এলো? এমনি সময় তো শুধু ধমকের উপরে রাখে। মেয়েটা পলক ঝাপটালো। কণ্ঠে অবাকতা নিয়েই বলল,
“আপনি আমাকে…..”
বাক্যটা আর সম্পূর্ণ করা হলো না ত্রয়ীর। তার পূর্বেই তার নজর পড়লো অদূরে অবস্থানরত একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে। বিশাল আকৃতির পরিপুষ্ট গাছটা। বেশ অনেকটা স্থান জুড়ে তার ডালপালা ছড়িয়ে রয়েছে। মস্তক জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রক্তিম বর্ণের সুশ্রী কৃষ্ণচূড়া ফুলেরা। নিচে মাটিতেও ঝড়ে পড়েছে অনেক। মাটিটা কেমন লাল হয়ে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া ফুলেদের আন্দোলনে। ত্রয়ী ছুটে গেল সেখানে। কিছু কৃষ্ণচূড়া ফুল হাতে নেওয়ার তীব্র বাসনা জাগলো তার হৃদয়ে। কিন্তু হায়! ত্রয়ী ক্ষুদ্র মানবী, অত বড়ো গাছকে ডিঙিয়ে তার মস্তক থেকে গুটি কয়েক ফুল ছেঁড়া তার জন্য অসম্ভব প্রায়। মেয়েটা আর চেষ্টাও করল না গাছ থেকে ফুল ছেঁড়ার। মাটি থেকেই কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি তুলে কাঁধে চড়ানো ব্যাগের পকেটে ঠাঁই দিতে লাগলো। শীর্ষ পা চালিয়ে এগিয়ে এসে দাঁড়াল ত্রয়ীর পাশে। শান্ত কণ্ঠে শুধাল,
“তাজা ফুল নিবি?”
“কোথায় পাবেন?”
শীর্ষ জবাব দিলো না এ প্রশ্নের। বরং তার মোবাইল এবং বাম হাতের কব্জিতে পড়ে থাকা ঘড়িটা খুলে বাড়িয়ে দিলো ত্রয়ীর দিকে। অতঃপর বলল,
“এই দুটো ধর।”
ত্রয়ী ধরলো মোবাইল আর ঘড়িটা। শীর্ষ আর কথা না বাড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিকটে গেল। আস্তে ধীরে উঠতে শুরু করল গাছটায়। গাছটা বেশ মোটাসোটা হওয়ায় শীর্ষ দুই হাত এবং দুই পা দ্বারা জাপটে ধরলো গাছটাকে। অতঃপর লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করল উপরের দিকে। ত্রয়ী কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে। অতঃপর হুট করেই খিলখিল করে হেসে উঠল। শীর্ষ অবাক হলো। গাছ ধরে ফিরে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। অমনি থমকে গেল যেন। সুন্দর, সুশ্রী এই প্রকৃতির বুকে একটি স্বচ্ছ ফুল আচমকাই ফুটে উঠেছে যেন, খিলখিল করে হেসে উঠে তার রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে। এই মেয়েটা সর্ব দিক দিয়ে সর্বদা তাকে ঘায়েল করার জন্য প্রস্তুত থাকে। এতদিন ঘায়েল করেছে তার রূপ-সৌন্দর্য, দৃষ্টি, আচরণ দ্বারা আর আজ হাসি দ্বারা। শীর্ষের হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো। গাছ থেকে আলগা হয়ে এলো হাত জোড়া। ধরফরিয়ে উঠল বেচারা। গাছ থেকে পড়তে পড়তেও বাঁচিয়ে নিল নিজেকে। নাহ, এই মেয়ে তাকে না শেষ করে ছাড়বে না বোধ হয়। আর একটু হলেই গাছ থেকে পড়ে পটল তুলতো নির্ঘাত। শীর্ষ কপাল কুঁচকাল। কণ্ঠে একরাশ বিরক্তি যোগ করে শুধাল,
“শেওড়া গাছের পেত্নীর মতো অমন হাসছিস কেন?”
ত্রয়ী শত চেষ্টা করেও নিজের হাসি থামাতে পারলো না। হাসতে হাসতেই জবাব দিলো,
“আপনাকে কেমন ব্যাঙের মতো লাগছে শীর্ষ ভাই।”
শীর্ষের মুখশ্রী থমথমে আকার ধারণ করল। ত্রয়ী কি বলল তাকে? ব্যাঙ! শীর্ষ খুব ভালো গাছে উঠতে পারে না। তবুও শুধু এই মেয়েটার জন্য ফুল আনতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাছ বাইতে উদ্যত হয়েছিল। আর মেয়েটা কিনা তাকে ব্যাঙ বলে দিলো? এই জন্যই লোকে বলে ‘যার জন্য করি চু’রি সেই বলে চো’র।’ নাহ, শীর্ষ এই গাছে আর উঠবে না। একবার গাছ থেকে পড়তে পড়তেও বেঁচে গেছে। এরপর পড়ে যদি ম’রে যায়। তাহলে তো ত্রয়ীকেও পাওয়া হবে না। শেষে দেখা যাবে তার ম’রা’র পর ত্রয়ী অন্য কাউকে বিয়ে করে সানন্দে ঘর সংসার করছে। শীর্ষ আর গাছে উঠল না। নেমে এলো ভূমিতে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“তোর জন্য ফুল আনতে উঠেছিলাম। আর আনবো না ফুল।”
ত্রয়ী ভেংচি কাটলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আনতে কে বলেছে আপনাকে?”
শীর্ষ অপমানিত বোধ করল। এত কষ্ট করে সে এই মেয়েটার জন্য ফুল আনতে গেল আর এই মেয়ে কিনা তাকে ভেংচি দিচ্ছে, মুখ বাকাচ্ছে। শীর্ষ আড় চোখে তাকালো মেয়েটির দিকে। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,
“এখন এখানে বসবি নাকি বাড়িতে যাবি?”
“বসবো।”
রাত্রি খুব বেশি নয়। কেবল চারদিকে আঁধার ঘনাতে শুরু করেছে। শীর্ষ আজ তাড়াতাড়িই বাড়িতে ফিরেছে। অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে। আর তাছাড়া আজ বন্ধুদের সাথে আড্ডাও ছিল না। শীর্ষ নিজ কক্ষেই বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাটছিল। ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়লো। পরপর আবার গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো,
“আসবো?”
“এসো।”
আব্দুর রহমান খান দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন। শীর্ষ বিছানায় উঠে বসলো। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“কিছু বলবে?”
আব্দুর রহমান খান একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন। থমথমে কণ্ঠে বললেন,
“আগামীকাল কি তুমি ফ্রি আছো?”
“কেন?”
“গ্রামে যেতে হতো একটু।”
শীর্ষ নাক মুখ কুঁচকাল। বিরস কণ্ঠে বলল,
“আমি পারবো না।”
আব্দুর রহমান খান কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে চেয়ে রইলেন ছেলের মুখ পানে। অতঃপর বললেন,
“তাহলে আর কি করার? ত্রয়ীকে নিয়ে আমাকেই যেতে হবে। মেয়েটা সেই কবে গ্রাম থেকে এসেছে। একটাবার দাদীর কবর দেখতে যাওয়ার বায়না ধরেছিল। আমার আবার কাল একটু কাজ আছে তাই তোমাকে বলেছিলাম।”
ত্রয়ীর নাম শুনেই লাফিয়ে উঠল শীর্ষ। তাড়াহুড়ো করে বলল,
“আমি যাব, আমি যাব। তোমাকে যেতে হবে না।”
আব্দুর রহমান খান আড়ালে হাসলেন। তার ছেলেকে ত্রয়ী ভালোই পাগল করেছে। মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভেবে লোকটা একটু স্বস্তি পেলেন। শান্ত কণ্ঠে বললেন,
“আচ্ছা আগামীকাল সকাল সকাল তাহলে তোমরা বেরিয়ে যেও। আর সাথে নয়নকেও নিয়ে যেও। তোমার একার সাথে ত্রয়ীকে যেতে দিতে আবার আমার মন সায় দিচ্ছে না।”
শীর্ষ ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“কেন?”
অনুরাগে তুই পর্ব ৩৯
“তোমার তো নজর ভালো না। মেয়েটাকে মাত্র কয়েকদিন হলো এ বাড়িতে নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে তুমি তার উপর নজর দিয়ে দিয়েছো। ইতোমধ্যে সে নজর বিয়ে পর্যন্তও চলে গেছে।”
বাবার কথায় শীর্ষ দারুন অপমানিত বোধ করল। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“তুমি আমাকে এমন কথা বলতে পারলে বাবা? এই কথাগুলো বললে না যেন আমার কলিজায় আঘাত করলে।”
আব্দুর রহমান খান মুখ বাঁকালেন। নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,
“শুধু আঘাতই তো করেছি। কলিজা ফুটো করে তো আর দেইনি।”