অনুরাগে তুই পর্ব ৪৩
সাদিয়া শওকত বাবলি
এইটুকু বলতেই তাকে থামিয়ে দিলো শীর্ষ। ত্রয়ীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“এই ক’ট খেয়ে বিয়ে ব্যতীত এই মেয়েকে বাগে আনতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না।”
নয়ন বিষম খেল। এতদিন যাকে কঠোর, যুক্তিবাদী ভাবতো সেই মানুষটিই কিনা আজ প্রেমে পড়ে এমন একটি নীতি বিরুদ্ধ কাজ করার তোড়জোড় চালাচ্ছে! শীর্ষ, যে কিনা একটা সময় ‘কট’ শব্দটিকে ঘৃ’ণা করতো, ব্যঙ্গ করত, ঠাট্টায় উড়িয়ে দিতো। আজ সে-ই এই শব্দটিকে নিজের গায়ে মেখে নিতে চাইছে! হায়রে ভালোবাসা! এই ভালোবাসা মানুষকে দ্বারা কি কি না করাতে পারে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল নয়ন। আশেপাশে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে পূর্বের ন্যয়ই কণ্ঠ খাদে নামিয়ে রেখেই বলল,
“আপনি ভালোবাসেন তা না হয় মানলাম। কিন্তু তাই বলে এটা করা কি ঠিক হচ্ছে স্যার?”
“কোনটা করার কথা বলছিস তুই?”
“এই যে ম্যামকে কাঁদিয়ে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করা।”
শীর্ষ ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো,
“তুই ভুল করছিস নয়ন। আমি তোর ধারণা অনুযায়ী কিছুই করছি না। আমি শুধু সুযোগের সদ্ব্যবহার করছি। তুই কোনো কথা না বলে চুপচাপ দেখে যা কি কি হয়।”
আতাউর রহমান, বর্তমানে এ বাড়ির সবচেয়ে বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। বয়স প্রায় সত্তরের কোঠা ছাড়িয়েছে তবে দাপট কমেনি একটুও। চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, মাথার চুল উঠে গিয়ে চকচকে একটি টাকের দেখা মিলেছে, চোখের দৃষ্টিশক্তিও কমেছে অনেকটা। তাই নিয়ে তিনি পুরো গ্রাম চষে বেড়ান। বিভিন্ন সালিশী, মিমাংশায় অংশ নেন। বাড়ির সকলেও তাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে। ছোট বড়ো কাজে তার পরামর্শ গ্রহণ করে। নাজমা বেগমের হাঁক ডাকে এই লোকটাও তখন ঘুম বাদ দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। এতক্ষণ কোনো কথা না বলে শুধু পরিস্থিতি দেখে যাচ্ছিলেন। তবে এবারে আর চুপ থাকলেন না তিনি। শীর্ষ এবং ত্রয়ীর দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে শুধালেন,
“এই রাইতের বেলায় তোমরা বাইরে কি করতাছিলা?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শীর্ষ চুপ রইল। সত্যি কথা তো সে বলতে পারবে না। আর মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে কিছু বললে ত্রয়ী তার পরিকল্পনা ধরে ফেলবে। তারপর দেখা যাবে বোকা মেয়েটা তার সব পরিকল্পনায় সুনিপুণভাবে জল ঢেলে দিয়েছে। তার থেকে এই মুহূর্তে চুপ থাকাই শ্রেয়। তবে ত্রয়ী ডুকরে কেঁদে উঠল। ভেজা গলায় বলল,
“কিছুই করছিলাম না। উনি উনার কাজে মানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বেরিয়েছিলেন আর আমি আমাদের ঘরটাকে এক নজর দেখতে বেরিয়েছিলাম।”
শীর্ষের ললাটে ভাঁজ পড়লো। চিন্তারা হানা দিলো মস্তিষ্কে। এই মেয়ে যে ম’রা কান্না শুরু করেছে, আর মুখে তোতা পাখির ন্যায় সত্যের বুলি আওড়াচ্ছে তাতে না সবাই এর কথাই বিশ্বাস করে নেয়। শীর্ষ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নাজমা বেগমের দিকে। বিরবির করে বলল,
“এখন ভরসা শুধু এই মহিলার উপরে। এই মহিলার কূটনীতি আর আমার বিয়ে একই সুতোয় বাঁধা।”
নাজমা বেগম ভেংচি কাটলেন। ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ঘর দেখতে বার হয়েছিলি তাও এত রাইতে? আমাদের ব’ল’দ পেয়েছিস যে যা বলবি তাই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেব?”
পরপর তিনি আবার তাকালেন আতাউর রহমানের দিকে। কণ্ঠে জোর দিয়ে বললেন,
“ও সব মিথ্যা কথা বলতেছে চাচা। ওরা ঘরে জায়গা না পেয়ে এই রাইতের বেলায় বাইরে বার হয়েছিল ন’ষ্টা’মি করতে। নয়তো এত রাইতে বিয়ার যোগ্য দুই পোলা মাইয়া ঘরের বাইরে কি করবে আপনারাই বলেন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া লাগলেও না হয় একজন বার হবে। এক সাথে দুইজনই কেন বার হবে বলেন?”
নাজমা বেগমের কথায় সায় জানালো উপস্থিত বাকি সকলে। আতাউর রহমান মাথা ঝাকালেন। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তিনি ভাবলেন কিছু একটা। অতঃপর হুট করেই বললেন,
“কাজী ডাকো।”
উপস্থিত সকলে কিছুটা হলেও চমকালেন। সবচেয়ে বেশি চমকালেন নাজমা বেগম। কণ্ঠে বিস্ময় নিয়ে তিনি শুধালেন,
“কাজী ডেকে কি হবে?”
“ওদের বিয়ে হবে।”
নাজমা বেগমের বিস্ময়ভাব বাড়লো। মনের মধ্যে ত্রয়ীর ক্ষতির চিন্তা করতে করতে এই বিয়ের কথাটা তো মাথা থেকে একদম বেরিয়েই গিয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন ত্রয়ীকে বদনাম করে দিবেন। আর শীর্ষকে প্যাঁচিয়ে বদনাম করলে সেও মেয়েটাকে সাথে করে শহরে নিবে না। ফলস্বরূপ ত্রয়ীকে সারাজীবন এই গ্রামেই পঁচে ম’র’তে হবে। কিন্তু এখন আতাউর রহমান এসব কি বলছেন? ত্রয়ীর সাথে শীর্ষের বিয়ে? শীর্ষরা যে বেশ স্বচ্ছল এবং সমাজে মর্যাদা সম্পন্ন তা তিনি জানেন। এত বড়ো ঘরে ত্রয়ীর বিয়ে হবে, ত্রয়ীর সারাটা জীবন সুখে শান্তিতে কাটবে এটা তিনি মেনে নিতে পারলেন না। আমতা আমতা শুরু করলেন তিনি। ইতস্তত করে বললেন,
“ওদের আবার বিয়া কেন? ছেলেটা শহরে মানুষ এবং বেশ মর্যাদাসম্পন্ন। ওর লগে কি ত্রয়ীর খাটে? গ্রামে আসছে দুজন একটা ভুল কইরা ফেলছে। একটু শাসায়ে ছেড়ে দেন। ফাও ফাও বিয়ার মতো এত বড়ো একটা কাজ করার কি দরকার?”
শীর্ষ ললটে ফের ভাঁজ পড়লো। এই মহিলা তো এখন আবার উলটো সুর গাইছে। যার ভরসায় এতক্ষণ ধরে সে চুপচাপ বসে আছে সেই কিনা শেষ পর্যন্ত পাল্টি খেল? এ মহিলা তো সুবিধার নয়। ক্ষণে ক্ষণে নিজের রূপ বদলায়। শীর্ষ দাঁতে দাঁত চাপলো। বিরবির করে বলল,
“গিরগিটি একটা।”
শীর্ষ নিজ ভরসার স্থল পরিবর্তন করল। আগে নাজমা বেগম ছিল তার ভরসার স্থল আর এখন আতাউর রহমান। যদি ভালো কিছু হয় তবে এই লোকটার দ্বারাই হবে। লোকটাকে দেখে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। অন্তত তার বিয়ে দেওয়ার মতো ভালো লোক। শীর্ষ আতাউর রহমানের দিকে তাকালো। মনে মনে আওড়ালো,
“এখন একমাত্র আপনিই আমার ভরসা দাদু। গিরগিটিটা তো নিজের রং বদলালো। এখন আপনি দয়া করে নিজের রং টা ঠিকঠাক রাখুন। এই বুড়ো বয়সে নিজের রং বদলিয়ে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের পরিচয় দিবেন না।”
নাজমা বেগমের কথায় আতাউর রহমানের মুখশ্রী থমথমে রূপ ধারণ করল। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি বললেন,
“ধনী, শহুরে কিংবা বংশমর্যাদা সম্পন্ন হলেই তো আর তার অন্যায় মাফ হয়ে যাবে না। অন্যায় তো অন্যায়ই তাতে সে যত বড়ো মাপের ব্যক্তিই হোক না কেন। তুমিই তো বললে ওরা ন’ষ্টা’মি করতে এত রাইতে বাহিরে বার হয়েছিল। তুমি ওদের হাতেনাতে ধরেছো। তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে ওরা কঠিন অন্যায় করেছে। ওদের সেই অন্যায় থেকে উদ্ধার করে সঠিক পথ দেখানো আমাদের বয়জ্যেষ্ঠদের কর্তব্য।”
এই টুকু বলে থামলেন লোকটা। পাশ ফিরে এ বাড়িরই আরেকজন ব্যক্তি সোবহান হোসেনকে বললেন,
“তাড়াতাড়ি উত্তর পাড়ায় যাবি। কাজীকে সঙ্গে নিয়ে এক্ষুনি এখানে আসবি।”
সোবহান হোসেন দেরি করলেন না এক মুহুর্তও। আতাউর রহমানের আদেশ পেয়েই তিনি চটজলদি চলে গেলেন গৃহ ছেড়ে। শীর্ষের ওষ্ঠ জুড়ে চমৎকার হাসির রেখা ফুটে উঠল। তবে নাজমা বেগমের মুখশ্রীতে আঁধার নেমে এলো। এত কৌশল করলেন তিনি ত্রয়ীর ক্ষ’তি করার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল মেয়েটির ক্ষ’তি হয়নি বরং ভালো হয়েছে। তার ষ’ড়’য’ন্ত্রে’র কারণেই এখন মেয়েটির এত বড়ো ঘরে বিয়ে হচ্ছে। নাজমা বেগমের এই মুহূর্তে নিজের কপালে নিজে একটা আঘাত করতে ইচ্ছে হলো। তিনি করতে গেলেন খারাপ অথচ হয়ে গেল ভালো। কপাল! সবই কপাল।
ভোরের আলো এখনো ফোটেনি। চারদিকটা গভীর আঁধারে নিমজ্জিত। এই রাতেই শীর্ষ আর ত্রয়ীর বিয়ের তোড়জোড় চলছে। কাজী সাহেবকেও ইতোমধ্যে ডেকে আনা হয়েছে, বসানো হয়েছে ঝর্ণাদের গৃহের অভিমুখের কক্ষে। বিয়ের কোনো সাজ নেই, আনুষ্ঠানিকতা নেই, পূর্ব পরিকল্পনা নেই অথচ বিয়ে।
ত্রয়ী কারিগরের হাতে তৈরি কাঠের পুতুলের ন্যায় নিস্তেজ হয়ে বসে রয়েছে এক কোনে। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ মুখ ফুলে ফেঁপে উঠেছে, ফরসা মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। অনেক চেষ্টা করেছে সে সবাইকে বুঝানোর, এই বিয়ে আটকানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ব্যর্থ। কেউ শুনলো না তার কোনো কথা। সবাই মিলে কাজীকে ডেকেই আনলো। ত্রয়ীর ভাবনার মধ্যেই তার কানে ভেসে এলো একটি গমগমে পুরুষালী কণ্ঠস্বর,
“বলুন মা কবুল।”
‘কবুল’ ছোট একটি শব্দ। অথচ এর ক্ষমতা অনেক। এই ছোট একটি শব্দই পারে দুটো মানুষের জীবন একসাথে বেঁধে দিতে। তাদের একটি পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ করতে। ত্রয়ী চেয়েছিল তার বিয়ে হোক। অন্তত নিজের জীবনটা একটু সুন্দর করতে, একটি ভরপুর পরিবার পেতে, অন্যের ঘাড়ের উপর আর বোঝা হয়ে না থাকার জন্য সে চেয়েছিল তার অতি দ্রুত বিয়ে হোক। তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য কেউ আসুক, তাকে ভালোবাসুক। কিন্তু এভাবে নয়। কিছু না করেও মাথার উপরে একটি কলঙ্কের বোঝা নিয়ে সে কখনোই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায়নি। আর সবচেয়ে বড়ো কথা সে কখনো চায়নি শীর্ষের সাথে তার বিয়ে হোক। তাও কাউকে না জানিয়ে হুট করে এমন একটি পরিস্থিতিতে। আব্দুর রহমান খান দয়া ধরে তাকে তার বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিলেন। যখন ত্রয়ীর নিজের স্বজনেরা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন তখন ঐ লোকটা তাকে এক প্রকার রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, সন্তানের মতো স্নেহ দিয়েছেন, কলেজে ভর্তি করেছেন। অথচ আজ তারই ছেলের সাথে বিয়ে তাও এমন একটি জঘন্য পরিস্থিতিতে। মানুষটা জানতে পারলে নিশ্চয়ই ভীষণ কষ্ট পাবে। ত্রয়ীর কণ্ঠনালী ভেদ করে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে। সৃষ্টিকর্তা কেন তার সাথে সব সময় এমন করে। সব তো তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সম্মানটুকুও কেড়ে নিল? নষ্টা উপাধি পেয়ে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হলো?
বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ত্রয়ীকে কবুল বলতে না দেখে ভ্রু কুঁচকালেন আতাউর রহমান। থমথমে কণ্ঠে বললেন,
“তাড়াতাড়ি কবুল বলে দাও। তোমাদের জন্য আমরা আর সময় নষ্ট করতে পারুম না। এমনেই রাইত অনেক হয়েছে।”
ত্রয়ীর কবুল বলতে ইচ্ছে হলো না। কিন্তু কবুল না বলেও তো উপায় নেই। এরা সবাই মিলে আজ তার বিয়ে না দিয়ে ছাড়বে না। আর শীর্ষকে দেখো সেও চুপচাপ বসে রয়েছে। অবশ্য সে বলবেও বা কি? সেও তো তার মতোই চাপে পড়েছে। কি দুর্ভাগ্য লোকটার! গ্রামে এসেছিল তাকে একটু ঘোরাতে আর এখন চাপে পড়ে বিয়ে করতে হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। ধীর কণ্ঠে বলল,
“কবুল।”
“আর দুইবার।”
“কবুল।”
একটু থামলো মেয়েটা। জোরে একবার নিঃশ্বাস নিয়ে তৃতীয় বারের ন্যায় বলেই ফেললো,
“কবুল।”
এরপর শীর্ষকে কবুল বলতে বললে সে মুখশ্রীতে একটি অসহায়ভাব ফুটিয়ে তুললো। থেমে থেমে ধীর গলায় বলল,
“কবুল….কবুল, কবুল।”
ব্যস শীর্ষ এবং ত্রয়ীর বিয়ে সম্পন্ন। কি থেকে কি হয়ে গেল। গতকালও সব ঠিকঠাক ছিল আর আজ! ত্রয়ী ফুঁপিয়ে উঠল। আজ তার জীবনে যা ঘটলো এটার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল? কি হতো তার জীবনটা যেভাবে চলছিল সেভাবে চললে? কেন এমন হলো তার সাথে? কেন? জীবনের এই পর্যন্ত তো কষ্টে কষ্টেই কাটলো এখন বাকি দিনগুলোও হয়তো তেমনই কাটবে। এমন একটি জঘন্য পরিস্থিতিতে প্রেম, ভালোবাসাহীন বিয়ে নিশ্চয়ই তার জীবনে সুখ বয়ে আনবে না।
নিশীথের অন্ধকার কেটে প্রকৃতিতে ভোরের আলো ফুটেছে। সূর্যটাও ইতোমধ্যে তার তেজ ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে। নির্জন গ্রামের রাস্তা ধরে দ্রুতগতিতে ছুটে চলছে শীর্ষদের গাড়িটা। নয়ন গাড়ি চালাচ্ছে আর পিছনের সিটে পাশাপাশি বসে রয়েছে শীর্ষ এবং ত্রয়ী। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই তারা শহরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। রাতে যা ঘটলো তারপর আর ত্রয়ী এক মুহুর্তও গ্রামে থাকতে চায়নি। শীর্ষও মেনে নিয়েছে তার ইচ্ছাকে।
কিন্তু গাড়িতে উঠে ত্রয়ী সেই যে কান্না শুরু করেছে, এখনো থামেনি। শীর্ষ বিরক্ত হলো। কপাল কুঁচকে বলল,
“এ চোখ না সমুদ্র। থামাথামির তো কোনো নাম নিচ্ছে না।”
ত্রয়ী কোনো উত্তর দিলো না। সে একইভাবে গুনগুনিয়ে কাঁদতে রইল। শীর্ষ ফের শুধাল,
“এ তোর গলা ব্যথা করছে না?”
ত্রয়ী এবারেও চুপ রইল। শীর্ষের কপালের ভাঁজ আরও গাঢ় হলো। থমথমে কণ্ঠে সে বলল,
“যেভাবে কাঁদছিস, মনে হচ্ছে আমার সাথে তোর বিয়ে না বরং তোকে বনবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এ পর্যায়ে ত্রয়ী মুখ খুললো। নাক টেনে বলল,
“অনেকটা তেমনই।”
“মানে?”
“মানে, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি।”
“কেন?”
“কারণ, আপনাকে আমার পছন্দ না।”
অনুরাগে তুই পর্ব ৪২
শীর্ষের ভিতরটা যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। এই বিয়েটার জন্য কত কি করল সে। নিজের গায়ে ‘কট’ নামক জঘন্য একটা বিষয়ের তকমা পর্যন্ত লাগালো অথচ এই মেয়ে বলছে ‘আপনাকে আমার পছন্দ না!’ ঢং যত। শীর্ষ দাঁতে দাঁত চাপলো। কটমট করে বলল,
“তোকেও তো আমার পছন্দ না। গ্রামের লোকজনের চাপে না পড়লে তোকে বিয়ে করতো কে? ঐ তো চেহারা—তার উপর গা’ধী, ব’ল’দী। আর এখন দেখছি কান্নাকাটিতেও পিএইচডি করা।”