অনুরাগে তুই পর্ব ৪৪
সাদিয়া শওকত বাবলি
শীর্ষ দাঁতে দাঁত চাপলো। কটমট করে বলল,
“তোকেও তো আমার পছন্দ না। গ্রামের লোকজনের চাপে না পড়লে তোকে বিয়ে করতো কে? ঐ তো চেহারা—তার উপর গা’ধী, ব’ল’দী। আর এখন দেখছি কান্নাকাটিতেও পিএইচডি করা।”
ত্রয়ীর হৃদয়টা আরও ভারী হয়ে উঠল। নিদারুণ এক যন্ত্রণা অনুভব করল বক্ষ পিঞ্জরে…এ কার সাথে তার বিয়ে হলো? কেন সৃষ্টিকর্তা তাকে এত বড়ো একটা শাস্তি দিলো? কেন দিলো? ছোট বেলা থেকেই কষ্ট যেন ছায়াসঙ্গী ত্রয়ীর। তারপর ভেবেছিল, হয়তো বিয়ের পর একটুখানি শান্তি আসবে, একটা সুন্দর পরিবার পাবে, একজন ভালোবাসার মানুষ পাবে যার ভালোবাসার ছোঁয়ায় দুঃখগুলো সব দূরে সরে যাবে। কিন্তু সে আশাও যেন মরীচিকার ন্যায় মিলিয়ে গেল আজ শীর্ষের কথায়। অবশ্য তারও বা দোষ কি? যেমন পরিস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়েছে তাতে ভালোবাসা আশা করাটা বোকামি। ত্রয়ী নিজেকে আর দমাতে পারল না। শব্দ করে কেঁদে উঠল এবার। শীর্ষের চোখ মুখে বিরক্তির ছায়া গাঢ় হয়ে উঠল। ধমকে উঠে সে বলল,
“থামবি নাকি থা’প্রে থামাতে হবে?”
ত্রয়ীর কান্নার গতি আরও বাড়লো। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই, তার উপর এই ধমক! বুকের ভিতর যেন একসাথে অনেকগুলো কাঁটা ফুটলো। সাথে ভয়ও পেলো ভীষণ। রাতে যা ঘটলো, বিয়ের মতো এত বড়ো একটা বিষয়কে শীর্ষের মাথার উপরে চাপিয়ে দিয়েছে তাদের বাড়ির সবাই মিলে। নিশ্চয়ই এই কারণে লোকটা তার উপরে রেগে আছে। এই রাগ থেকে এখন না আবার তার সাথে কিছু করে বসে। ত্রয়ী দ্রুত হাত তুলে নিজের মুখটা চেপে ধরল। কান্না আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালালো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ব্যর্থ। কান্না কিছুতেই আটকাতে পারছে না ত্রয়ী। কণ্ঠনালী ভেদ করে দুঃখরা সব বেরিয়ে আসতে চাইছে দ্বিধাহীন ভাবে। তবে মুখে হাত থাকায় শব্দ কম হচ্ছে। শীর্ষ গাঢ় দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল মেয়েটিকে। দৃষ্টি জোড়া শীতল হলো তার। নরম কণ্ঠে বলল,
“মুখ থেকে হাত সরিয়ে কাঁদ। আমি থা’প্রা’বো না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শীর্ষের কথাটা বলতে দেরি কিন্তু ত্রয়ীর মুখ থেকে হাত সরাতে দেরি হলো না। আবারও শব্দ করে কেঁদে উঠল সে। শীর্ষ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো। একটি পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“কাঁদতে কাঁদতে নিশ্চয়ই গলা শুকিয়ে গেছে তোর। একটু গলা ভিজিয়ে নে। তারপর আবার কাঁদ।”
ত্রয়ী বোতলটা হাতে নিয়ে এক ঢোক পানি গিলল। তারপর আবার সেই করুণ সুরে গুনগুনিয়ে কাঁদা শুরু করল। শীর্ষ এবার একটা টিস্যু এগিয়ে দিলো তার দিকে। ফের নরম কণ্ঠেই বলল,
“এটা দিয়ে নাক-মুখ মুছে নে। কাঁদতে সুবিধা হবে। কান্নার স্বর আরও তেজস্বী শোনাবে।”
ত্রয়ীর কিঞ্চিৎ ভরকালো। কাঁদতে কাঁদতেই প্রশ্ন করল,
“আপনি কি কোনোভাবে আমাকে নিয়ে মজা করছেন?”
শীর্ষ নিরুত্তাপভাবে জবাব দিল,
“না, একদম না। তোকে আরও কাঁদতে সাহায্য করছি আমি।”
নয়ন চোখ রাস্তার দিকে রেখে গাড়ি চালালেও কান ছিল পেছনের কথোপকথনে। শীর্ষ এবং ত্রয়ীর কথাপকথন শুনে নাক মুখ কুঁচকাল সে। বিরবির করে বলল,
“একটা হলো কাঁদুনে। যদি কান্নার কোনো প্রতিযোগিতা হতো, নিঃসন্দেহে প্রথম স্থান করতো এটা। আর অন্যটা হলো গিরগিটি। ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়।”
চারদিকে গরম ভাব। সূর্যটা তার পূর্ণ তেজ নিয়ে দুপুরকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে এখনো। শহুরে পরিবেশটাও এই মুহূর্তে কিঞ্চিৎ থমথমে, সময় যেন স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। এমন সময় শীর্ষদের গাড়িটা ধীরে ধীরে এসে থামল তাদের বাড়ির সামনে। গাড়ি থামতেই ত্রয়ী আর এক মুহূর্তও দেরি করল না, নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা পা দিলো গেটের দিকে।
শীর্ষ একবার তাকালো ত্রয়ীর দিকে। এরপর ধীরে সুস্থে নেমে এলো গাড়ি থেকে। নয়নকে একবার বলল,
“চল, ভিতরে চল।”
নয়ন ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক জবাব দিলো। ভদ্রভাবেই বলল,
“না স্যার এখন যাব না। অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছি শরীরটা এমনিতেই ক্লান্ত। তার উপর আবার রাতে ঘুম হয়নি। বাড়িতে গিয়ে একটু ঘুমাবো।”
শীর্ষ দ্বিরুক্তি করল না। ছেলেটাকে আর জ্বালানো ঠিক হবে না। সে মাথা নাড়িয়ে ত্রয়ীর পিছু পিছুই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল। আর নয়ন কোনো মতে শীর্ষের গাড়িটা গ্যারেজে রেখে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশে।
প্রকৃতিতে আঁধার নেমে এসেছে নিঃশব্দে। তবে রাত এখনো অগভীর—ঘড়ির কাঁটা টিক টিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে সময় কেবল রাত দশটা। শীর্ষ দাঁড়িয়ে রয়েছে বাবা-মায়ের কক্ষের সম্মুখে। চোখে মুখে তার লেপ্টে রয়েছে দ্বিধা, অস্বস্তি।
যেভাবেই হোক তার এবং ত্রয়ীর বিয়ে হয়েছে। তারা এখন স্বামী-স্ত্রী। আর এত বড়ো একটি সত্যি পরিবারের লোকদের নিকট থেকে লুকিয়ে রাখা নিশ্চয়ই উচিত হবে না। বিশেষ করে বাবা-মায়ের থেকে। আবার বাবা মায়ের কাছে সবটা বলবেও বা কিভাবে? তাদের যে পরিস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে তা কারো নিকট বর্ণনা করা নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক। সে কিভাবে বাবা-মায়ের অভিমুখে দাঁড়িয়ে বলবে রাতের আঁধারে ত্রয়ী আর তাকে একা পেয়ে গ্রামবাসীরা মিলে জোর করে তাদের বিয়ে দিয়েছে। হয়তো গ্রামবাসীরা তাদের ভুল বুঝেছে, তারা খারাপ কিছু করছিল না। কিন্তু দুই নর নারী একসাথে রাতের আঁধারে বাইরে ছিল এটা তো সত্যি। শীর্ষের কণ্ঠনালী কেমন শুকিয়ে আসছে। ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু না বলেও তো উপায় নেই। এত বড়ো একটি সত্যি পরিবারকে না জানিয়ে সামনের দিকে আগাবে কিভাবে? আর তাছাড়া সে তার এবং ত্রয়ীর সম্পর্কটার একটি সামাজিক স্বীকৃতি চায়। বাবা-মায়ের দোয়া নিয়ে নতুন জীবনে পা রাখতে চায়। শীর্ষ জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। ভেতরের সমস্ত সংকোচ, সংশয় ও দ্বিধাকে একপাশে ঠেলে দিয়ে টোকা দিলো বাবা-মায়ের কক্ষের দরজায়। গলা বাড়িয়ে শুধাল,
“ভিতরে আসবো?”
প্রায় সাথে সাথেই ভিতর থেকে ভেসে এলো আব্দুর রহমান খানের কণ্ঠস্বর,
“এসো।”
শীর্ষ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। ফাহমিদা বেগমও কক্ষেই ছিলেন। ছেলেকে দেখে এক গাল হাসলেন তিনি। এগিয়ে এসে বললেন,
“তোর কথাই বলছিলাম আমরা। এর মধ্যে তুই এসে গেলি।”
শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। বাবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
“আমার কথা বলছিলে!”
“হ্যা।”
এই টুকু বলে ফাহমিদা বেগম আলমারি থেকে একটি স্বর্ণের আংটি বের করে আনলেন। শীর্ষের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
“এটা তোর বউয়ের জন্য বানিয়েছি। সুন্দর না?”
আব্দুর রহমান খান শুনছিলেন মা ছেলের কথাপকথন। তিনি দু’জনের মধ্যে ফোড়ন কেটে বললেন,
“তোমার যা ছেলে। কবে ওর বিয়ে হয় কে জানে। তোমার ছেলে কোনো মেয়েকে পছন্দ করলেও তারা ওকে পছন্দ করবে বলে তো মনে হয় না।”
শীর্ষের ভীষণ অপমানিত বোধ হলো। চ্যাচিয়ে বলতে ইচ্ছে হলো,
“বিয়ে কবে হয় কে জানে মানে কি আমি ইতোমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছি। আর আমার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেছি।”
শীর্ষ কথাগুলো বলবে বলেও ঠিক করল। তবে কণ্ঠনালী থেকে কোনো শব্দ বের করার পূর্বেই ফাহমিদা বেগম বললেন,
“কেন আমার ছেলে খারাপ কোন দিক দিয়ে? তুমি একবার শুধু বলো দেখবে বাড়ির সামনে মেয়ের লাইন লাগিয়ে দেব।”
এই টুকু বলে থামলেন তিনি। দম নিয়ে ফের বললেন,
“শীর্ষের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন আমার। আমার একটা মাত্র ছেলে ও। ওর বিয়েতে পুরো বাড়ি সাজাবো। আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত করবো। বিশাল অনুষ্ঠান করে বউ আনবো।”
শীর্ষ থমকালো মায়ের কথা শুনে। যা যা বলতে এসেছিল এক মুহুর্তে সব গিলে ফেললো। তার বিয়ে নিয়ে মায়ের কত স্বপ্ন। এই স্বপ্নগুলো সে কিভাবে ভেঙে দিবে? আর এখন যদি সে তার কট খেয়ে বিয়ের কথা প্রকাশ করে তাতেও নিশ্চয়ই তার মা-বাবা কষ্ট পাবেন ভীষণ। শীর্ষ একটু সময় ভাবলো। সিদ্ধান্ত নিল এখন কিছুই বলবে না। ত্রয়ীকে হারিয়ে ফেলার ভয় ছিল। বিয়ে করে নিয়েছে, এখন সে ভয়টা অনেকটাই কমেছে। এখন না হয় সবটা গুছিয়ে গাছিয়ে ধীরে ধীরে ত্রয়ীর মনে জায়গা করে তারপর আবার নতুন ভাবে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করা যাবে। আব্দুর রহমান খানকে তো তার ত্রয়ীকে পছন্দের কথা আগে থেকেই বলা আছে। ভবিষ্যতে আর কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না। শীর্ষের ভাবনার মধ্যেই আব্দুর রহমান খান মুখ খুললেন। ছেলের দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুধালেন,
“যাক আপাতত ওসব কথা রাখো। তা শীর্ষ তুমি হঠাৎ এখানে এলে যে, কিছু বলবে কি?”
শীর্ষ জোরপূর্বক একটু হাসলো। কণ্ঠ স্বাভাবিক করে জবাব দিলো,
“না, তোমাদের দেখতে এসেছিলাম শুধু। আচ্ছা এখন তাহলে আমি আসছি।”
শীর্ষ বেরিয়ে এলো বাবা-মায়ের কক্ষ ছেড়ে। তবে নিজের কক্ষে আর গেল না। পা চালিয়ে এসে দাঁড়াল ত্রয়ীর কক্ষের অভিমুখে। হাত উঁচিয়ে টোকা দিলো কক্ষের বন্ধ দরজায়। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দরজাটা খুললো ত্রয়ী। শীর্ষকে নিজের কক্ষের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু বাঁকালো সে। ছোট ছোট করে প্রশ্ন করল,
“আপনি এখানে?”
শীর্ষ এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না। বরং এক ভ্রু উঁচিয়ে পালটা প্রশ্ন করল,
“কান্না থেমেছে তোর?”
ত্রয়ী দৃষ্টি নুইয়ে নিল। ছোট করে জবাব দিলো,
“হুম।”
“বুঝলি, অনেকক্ষণ ভেবে দেখলাম।”
ত্রয়ী কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“কি?”
শীর্ষ আড়চোখে একবার তাকালো মেয়েটার দিকে। তার পাশ কাটিয়ে কক্ষের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দিলো,
“আজ আমাদের বাসর রাত।”
ত্রয়ী চমকালো, ভরকালো। হিসেব অনুযায়ী সত্যিই তো আজ তাদের বাসর রাত। কান্নাকাটি আর বিভিন্ন চিন্তা ভাবনায় এ কথা তো সে প্রায় ভুলেই বসেছিল। কিন্তু এ লোক এখানে এসে হঠাৎ এই কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে কেন? এর কি চাই? তবে কি এ….হতেও পারে। পুরুষ মানুষদের বিশ্বাস নেই। মেয়ে দেখলেই এদের ছুঁকছুঁক ভাব বাড়ে। আর সেখানে তো সে এখন শীর্ষের বিয়ে করা বউ। ত্রয়ীর হৃদয় ভীত হলো। ঢোক গিলে সে বলল,
“কিসের বাসর রাত? আপনি এই রাতে আমার কক্ষে এসেছেন কেন? এখান থেকে এখনই চলে যান।”
শীর্ষ কপাল টানটান করল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“বাড়ি আমার, কক্ষ আমার, কক্ষে থাকা মেয়েটিও আমার।”
এইটুকু বলে একটু থামলো সে। কক্ষের দরজাটা আটকে দিতে দিতে বলল,
“সবকিছুই যখন আমার তখন তুই আমাকে এ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলার কে?”
ত্রয়ীর হৃদয়ের ভীতিভাব বাড়লো। এই লোক দরজা আটকাচ্ছে কেন? এর মতিগতি তো ভালো ঠেকছে না। সন্ধ্যা পর্যন্তও তো লোকটা তাকে দেখতে পারতো না, এখন একদম কক্ষে ঢুকে দরজাও আটকে দিচ্ছে? ত্রয়ী ফের ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে বলল,
“আপনি দরজা আটকাচ্ছেন কেন? আপনি চাইছেন টা কি?”
শীর্ষ এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। হাত ইশারা দিয়ে ডাকল,
“এদিকে আয়।”
ত্রয়ী গুটি গুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়াল বিছানার নিকটে। শীর্ষ তার পকেট থেকে একটি ছোট খাটো বাক্স বের করে আনলো। ত্রয়ীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“এগুলো তোর। পড়ে নে।”
ত্রয়ী বাক্সটা নিলো না। বরং অবাক কণ্ঠে শুধাল,
“এটা কিসের বাক্স? কি আছে এতে?”
শীর্ষ উত্তর দিলো না কোনো। বাক্সটা খুলে ধরলো মেয়েটার দৃষ্টির সম্মুখে। ত্রয়ী বিস্মিত হলো। চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল তার। বাক্সের ভিতরে সোনালী রঙা দুটো চিকন চুড়ি, একটা নাকের ছোট ফুল আর একটা চেইন রয়েছে। ত্রয়ী বিস্মিত কণ্ঠেই শুধাল,
“এগুলো আমাকে দিচ্ছেন কেন? আমি এগুলো দিয়ে কি করবো?”
শীর্ষ নাকের ফুলটা হাতে নিল। সেটা নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখতে দেখতে বলল,
“শুনেছি বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েকে নাকের অলংকার দিতে হয়। তাই কিনে এনেছি। একটু ছোট দেখে কিনেছি যাতে সব সময় পড়ে থাকতে সুবিধা হয়।”
ত্রয়ীর বিস্ময়ভাব বাড়লো। তাদের যে পরিস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে তাতে সে ভেবেছিল শীর্ষ এই বিয়েটাকেই মানবে না। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হবে তাকে। কিন্তু এ তো একদম গহনা নিয়ে হাজির। ত্রয়ী একবার গহনা গুলোর দিকে তাকালো। এরপর শীর্ষের দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুধাল,
“আপনি এই বিয়েটা মেনে নিয়েছেন?”
“মানবো না কেন?”
“না মানে যে পরিস্থিতিতে আমাদের বিয়েটা হলো আমি ভেবেছিলাম আপনি বিয়েটা মানবেন না। শীঘ্রই আমাকে তা’লা’ক দিয়ে দিবেন।”
শীর্ষের মেজাজ বিগড়ালো। ঠিকঠাক ভাবে বিয়ে করতে পারলো না এর মধ্যে এই মেয়ে তা’লা’ক পর্যন্তও চলে গেছে? এত বুদ্ধি খাটিয়ে, মাথার উপর ব’দ’না’মে’র বোঝা নিয়ে বিয়ে করেছে কি তালাক দেওয়ার জন্য নাকি? শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে বলল,
“জীবনটাকে কি সিনেমা পেয়েছিস নাকি? যেভাবেই হোক আমাদের বিয়েটা হয়েছে। আর বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয় হয় যে এটা নিয়ে নাটক শুরু করবো। আমি এই বিয়ে মেনেছি আর তোকেও মানতে হবে। এখন সামনে বস তো এগুলো পড়িয়ে দেই।”
ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। আমতা আমতা করে বলল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৪৩
“আপনাকে পড়িয়ে দিতে হবে না। আমি পড়ে নিতে পারবো।”
“কেন আমি পড়িয়ে দিলে কি তোর শরীরে ফোস্কা পড়বে? ফোস্কা পড়লে আমাকে বলিস সুঁই নিয়ে এসে একটা একটা করে ফাটিয়ে দেব। এখন কথা না বাড়িয়ে সামনে বস।”