অনুরাগে তুই পর্ব ৪৫
সাদিয়া শওকত বাবলি
“কেন আমি পড়িয়ে দিলে কি তোর শরীরে ফোস্কা পড়বে? ফোস্কা পড়লে আমাকে বলিস সুঁই নিয়ে এসে একটা একটা করে ফাটিয়ে দেব। এখন কথা না বাড়িয়ে সামনে বস।”
ত্রয়ী নিঃশব্দে বসে পড়ল বিছানার কিনারায়। মুখশ্রী জুড়ে তার দ্বিধা, দৃষ্টি এলোমেলো। মেয়েটির নাক আগে থেকেই ছিদ্র করা। তবে সেখানে কোনো অলংকার ছিল না। শীর্ষ নাকফুলটা পড়ানোর উদ্দেশ্যে হাত রাখলো মেয়েটির নাকে। আকস্মিক পুরুষালী স্পর্শ! ত্রয়ীর সম্পূর্ণ শরীর যেন আবিভূত হলো শিরশির এক অনুভূতির দাপটে। হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো পূর্বের তুলনায়। মেয়েটি সাথে সাথে নিজের আঁখি দ্বয় বন্ধ করে নিল, খামচে ধরল বিছানার চাদর।
শীর্ষ খেয়াল করল সবটাই। তবে পাত্তা দিলো না। আস্তে ধীরে নাকফুলটা সে পড়িয়ে দিলো সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীর নাকে। এরপর দুই কানে ছোট ছোট দুটো দুল পড়িয়ে তার পিছনের দিকে এলো। ত্রয়ীর চুল গুলো উপরে তুলে খোঁপা করা ছিল। ফলস্বরূপ শীর্ষের দৃষ্টির সম্মুখে তার ঘাড় এবং পিঠের কিছু অংশ উন্মুক্ত। কেমন ঘোর লেগে গেল শীর্ষের, হৃদযন্ত্র তার ক্রিয়া বাড়িয়ে দিলো তড়িঘড়ি করে। হৃদয় কুঠুরিতে উঁকি দিলো নিষিদ্ধ চাওয়ারা। তবুও শীর্ষ নিজেকে দমিয়ে রাখলো। কোনোমতে চেইনটা পড়িয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। তবে শেষ পর্যন্ত সে দূরে সরে যেতে পারলো না। মেয়েটির উন্মুক্ত ফরসা ঘাড়, পিঠ কেমন যেন তাকে কাছে টানছে। চুম্বকের ন্যায় খিচে ধরে রেখেছে। শীর্ষ দ্বিধাগ্রস্ত হলো। তবে তার এই দ্বিধাকেও ভেঙে দিলো মন। তার মনটা তাকে বেশ সাহস দিয়ে বলে উঠল,
“ত্রয়ী এখন তোর স্ত্রী। সে তোর জন্য সম্পূর্ণ হালাল। তার সাথে তুই যা ইচ্ছে করতে পারিস।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শীর্ষ মনের কথা শুনলো। কিছুটা সময় নিয়ে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্ত্রীর উন্মুক্ত ঘাড় এবং পিঠের উপরিভাগের দিকে। অতঃপর হুট করেই এক কামড় বসালো মেয়েটির ঘাড়ে। হকচকিয়ে উঠল ত্রয়ী। এতক্ষণ অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যাওয়া নদীল স্রোতে বাঁধা পড়লো তার। চটজলদি লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল সে। ঘাড়ে হাত দিয়ে শুধাল,
“আপনি আমাকে কামড় কেন দিলেন?”
শীর্ষ নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
“আমার দাঁতের ধার দেখালাম।”
ত্রয়ী নাকমুখ কুচকাল। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“কামড় দিয়ে কেউ দাঁতের ধার দেখায়? অসভ্য লোক।”
শীর্ষ কপাল টানটান করল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এটা তোর বাসর রাতের উপহার, ভ্যাম্পায়ার সিল। অভ্যাস করে নে এখন থেকে দিন রাত তোর শরীরে এমন অগণিত ভ্যাম্পায়ার সিল পড়বে।”
ত্রয়ী ভরকে গেল। স্মরণে এলো শীর্ষের সেদিনের বলা সেই ভ্যাম্পায়ার সিলের কথা। এই তবে ভ্যাম্পায়ার সিল! আর দিন রাত তার শরীরে ভ্যাম্পায়ার সিল পড়বে মানে কি? শীর্ষ কি সারাদিন এভাবে তাকে কামড়াবে? ঢোক গিললো মেয়েটা। আমতা আমতা করে বলল,
“কককেন পড়বে? কামড়ে ব্যথা লাগে না বুঝি? আপনি এসব উলটা পালটা কাজ আমার সাথে করবেন না।”
শীর্ষ বাঁকা হাসলো। এগিয়ে এসে দাঁড়াল ত্রয়ীর নিকটে। ঢোক গিললো বেচারী। পিছনে পা দিলো শীর্ষের নিকট থেকে দূরে সরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। অমনি শীর্ষ হাত বাড়িয়ে দিলো প্রিয়তমার দিকে। এক আঙ্গুল দ্বারা আঁকড়ে ধরল ত্রয়ীর গলার চেইনটা। চেইনে টান দিয়ে ধীরে ধীরে নিজের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়ালো তার। অতঃপর কোমড়ে ভাঁজ ফেলে একটু ঝুঁকে গেল মেয়েটির দিকে। তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“তুই আমার বউ। উলটা পালটা কাজ তোর সাথে করব না তো কার সাথে করব?”
‘বউ’ শব্দটা যেন ঝংকার তুললো ত্রয়ীর হৃদয়ে। কেমন একটা সুখ সুখ অনুভব করল সে। ভালো লাগায় ছেয়ে গেল হৃদয়, মন। কেন এমন হলো? শীর্ষকে যে তার আগে খুব ভালো লাগতো তেমন নয়, আবার যে খুব খারাপ লাগতো তেমনও নয়। কিন্তু আজ ভীষণ ভালো লাগছে। এই যে শীর্ষ তার ঘরে এলো, ছোট ছোট উপহার দিলো। ত্রয়ীকে যেন এ উপহার সুখের সমুদ্রে ভাসিয়েছে। এই মনে হয় পবিত্র সম্পর্কের টান। ঐ কবুল বলার মাহাত্ম্য। ত্রয়ী খেয়াল করেছে ঐ কবুল বলার পর থেকে তার শীর্ষকে যতটা ভালো লাগছে, যতটা তার জন্য অনুভব করেছে আগে কখনো করেনি। আগে শীর্ষকে সে কখনো চায়নি কিন্তু এখন চাইছে, খুব করে চাইছে। কি, কেন ত্রয়ী কিচ্ছু জানে না। সে শুধু এইটুকু জানে সে চাইছে এই সম্পর্কটা না ভাঙুক। শীর্ষ তার স্বামী হয়েই থাকুক। ত্রয়ীর ভাবনার মধ্যেই শীর্ষ তার আরও নিকটে এলো। পূর্বেই ন্যায় ফিসফিসিয়ে বলল,
“এমনিই বাচ্চা মানুষ তুই। তার উপর ক্যাবলা, বুদ্ধিসুদ্ধিহীন, মাথামোটা। তাই আজ তোকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু মনে রাখিস পরবর্তীতে কিন্তু আর ছাড়বো না।”
ত্রয়ী ভ্রু কুঁচকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“মানে?”
শীর্ষ আলতো হাসলো। ত্রয়ীর গলার চেইন ছেড়ে এবার সে হাত দিলো মেয়েটির গালে। বৃদ্ধা আঙ্গুলটি প্রিয়তমার ওষ্ঠের উপরে রেখে বাকি চারটা আঙ্গুলের ঠাঁই দিলো কানের উপরে। অতঃপর নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুলটি দ্বারা ত্রয়ীর নরম কোমল ওষ্ঠে আলতোভাবে স্লাইড করতে করতে বলল,
“বাচ্চা মানুষ তুই। তার উপর ব’ল’দী। এখনই আমাকে সামলানোর ক্ষমতা পুরোপুরিভাবে তোর মধ্যে হয়ে ওঠেনি। নিঃসন্দেহে ঘরে এত সুন্দরী বউ রেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর তবুও আমি আমার আজকের বাসরটা স্থগিত করলাম।”
এই টুকু বলে থামলো শীর্ষ। দম নিয়ে ফের বলল,
“সময় দিচ্ছি নিজেকে তৈরি কর আমার জন্য। আমি কাছে আসতে চাইলে কিন্তু ফিরিয়ে দিতে পারবি না। অবশ্য ফিরিয়ে দিলেও আমি ফিরবো না।”
নিজের কথা শেষ করে ত্রয়ীকে ছেড়ে দিলো শীর্ষ। ঠোঁট গোল করে মৃদু স্বরে শীষ বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে। ত্রয়ী হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল তার গমন পথের দিকে। লোকটা কিসব বলে গেল। এ লোক এতটা নির্লজ্জ হলো কবে থেকে? বিকাল পর্যন্তও তো ভালো ছিল। অন্য সব দিকে যেমনই হোক না কেন এই দিকে তো একদম ভদ্র, সুশীল ছিল। আর এখন! ত্রয়ী নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“নির্লজ্জ, বদ লোক কোথাকার।”
[ পঁচাত্তর ]
ভোরের মিষ্টি রোদে ভরে গেছে শহরের বুক। রাতের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে একটু একটু করে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে শহরটা। প্রতিদিনের ন্যায়ই ফাহমিদা বেগম ভোরে উঠে সকলের জন্য নাস্তা তৈরির কাজে লেগে পড়েছেন। নুড়ি সাহায্য করছে তাকে। আর ত্রয়ী সবার জন্য নাস্তা পরিবেশনের তোড়জোড় চালাচ্ছে।
কিছুটা সময়ের ব্যবধানে ফাহমিদা বেগমের নাস্তা তৈরির অবসান ঘটলো। খাবার টেবিলে খাবার গুলো সাজিয়ে তিনি হাঁক ছাড়লেন,
“কই খেতে এসো তোমরা।”
স্বল্প সময়ের মধ্যেই আব্দুর রহমান খান, শীর্ষ, রিমা এবং পন্না এসে ঢুকলো খাবার কক্ষে। শীর্ষ একবার ত্রয়ীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে বসলো চেয়ারে। বাকিরাও একে একে বসলো। রিমা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ তার নজর আটকালো ত্রয়ীর দিকে। সাথে সাথে ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো তার। মেয়েটাকে আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। কেমন নতুন বউ বউ। রিমা ভ্রু যুগল কুঁচকে রেখেই প্রশ্ন করল,
“তোকে আজ এমন লাগছে কেন?”
ত্রয়ী থমকালো। পলক ঝাপটে শুধাল,
“কেমন?”
“নতুন বউ বউ।”
রিমার কথায় উপস্থিত সকলে দৃষ্টি দিলো ত্রয়ীর দিকে। ফাহমিদা বেগমও সকাল থেকে খেয়াল করেছেন মেয়েটাকে আজ একটু ভিন্ন রকম লাগছে। কিন্তু কাজের চাপে খুব গাঢ় ভাবে খেয়াল করেও দেখা হয়নি আর কোনো প্রশ্নও করা হয়নি। তবে ত্রয়ী চমকে উঠল রিমার কথায়। নতুন বউ বউ! রিমা কি তবে সব ধরে ফেললো? ত্রয়ী আমতা আমতা শুরু করল। ইতস্তত করে বলল,
“নতুন গহনা পড়েছি তো তাই হয়তো।”
“নতুন গহনা পেয়েছিস তুই কোথা থেকে?”
ত্রয়ী কোনো জবাব দিবে তার পূর্বেই শীর্ষ খেতে খেতে বলল,
“ওর দাদী রেখে গেছেন ওর জন্য। গ্রামে গিয়েছিল যখন তখন নিয়ে এসেছে।”
সবাই বোধ হয় বিশ্বাস করল শীর্ষের কথা। এমনিও নাকফুল, কানের দুল সবগুলোই ছোট ছোট। হাতের চুড়ি জোড়াও চিকন। এখানে সন্দেহ করার মতো খুব বেশি কিছু নেই। কেউ আর এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করল না ত্রয়ীকে। চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সবাই।
ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে নয়টা। আলভী বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরদের বাড়ির গেটে। অপেক্ষা মেয়েটির বেরিয়ে আসার। গতকাল রাতেই মেয়েটির সাথে তার মুঠোফোন মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। তখনই বলে রেখেছিল আজ সকালে তাকে নিয়ে আসবে।
কিছুটা সময় বাদেই মেহের কলেজর জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে এলো। গেট থেকে বেরিয়ে এসেছি সে মিষ্টি হাসলো। আলভীর দিকে এগিয়ে এসে শুধাল,
“কখন এলেন?”
“এই তো একটু আগে। এখন তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে পড়ুন তো। নয়তো আপনার কলেজের দেরি হয়ে যাবে।”
মেহের বাইকে উঠে বসলো। হাত রাখলো আলভীর কাঁধে। দুষ্টুমির স্বরে বলল,
“আপনি কিন্তু আমার অভ্যাসটাই খারাপ করে দিচ্ছে মশাই।”
আলভী বাইকে স্টার্ট দিতে দিতে শুধাল,
“কিভাবে?”
“এই যে কখনো বাইকে কলেজে নিয়ে যাচ্ছেন, কখনো ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন তো আমার গাড়িতে উঠতেই ইচ্ছে করে না। তার থেকে বাইকে খোলা আকাশ দেখতে দেখতে পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াতে ভালো লাগে।”
আলভী আলতো হাসলো। ঘাড় বাঁকিয়ে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে অভ্যাসটা খারাপ করেও কিছুটা ভালো হয়েছে তাই না বলুন। অন্তত নতুন কিছু উপভোগ করতে পারছেন।”
প্রত্যুত্তরে মেহের কোনো শব্দ ব্যয় করল না। শুধু মাথা নাড়িয়ে একটুখানি মিষ্টি হাসলো।
আকাশের সূর্যটা উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। ব্যস্ত নগরীটা আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। চারদিকে জনমানব ছুটছে তাদের নিজেদের কর্মের তাগিদে। তবে সকালের সময়টা এখনো পুরোপুরিভাবে গড়ায়নি। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে কেবল এগারোটা। শীর্ষ, আলভী, রবি এবং নয়ন এই ক্ষণে একটি নামি-দামি রেস্টুরেন্টে বসে রয়েছে। তাদের অভিমুখের টেবিলটায় খাবার ভর্তি। রবি বড়ো বড়ো চোখ করে সবগুলো খাবারের দিকে নজর বুলালো একবার। অতঃপর শীর্ষের দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুধাল,
“হঠাৎ ডেকে এনে খাওয়াচ্ছিস যে। খাবারে আবার বি’ষ টিস মিশিয়ে দিসনি তো?”
শীর্ষ থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,
“হ্যা মিশিয়েছি তো, ইঁদুর মা’রা’র বি’ষ। তোকে মা’রা’র জন্য এর থেকে শক্তিশালী আর কোনো বি’ষে’র প্রয়োজন হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
“ছিঃ ছিঃ শীর্ষ এই ছিল তোর ঐ মোটা পেটে? শেষ পর্যন্ত তুই কিনা আমাকে ইঁদুর মা’রা’র বিষ খাইয়ে মা’র’তে চাইছিস? ভেবেছিলাম আমার বিয়েতে তোকে একটা রোস্ট বেশি দেব। প্রয়োজনে রোস্টের হাড্ডি চিবিয়ে চিবিয়ে তোর মুখে তুলে দেব। তুই আর তা হতে দিলি না।”
রবি ঠোঁট উল্টে কান্নার ভান করল। বিরক্ত হলো আলভী। কপাল কুঁচকে সে রবিকে বলল,
“থামবি তুই?”
“হ্যা হ্যা তুই তো এখন আমাকেই থামতে বলবি। আর ওদিকে যে তোর বন্ধু আমাকে ইঁদুর মা’রা’র বিষ খাইয়ে মা’র’তে চাইছে তার বেলায় কিছু না তাই না?”
এই টুকু বলে থামলো রবি। দম নিয়ে ফের বলল,
“তোরা দুজন নিশ্চয়ই এক সাথে সংযুক্ত তাই না? তোরা দুজন মিলে আমাকে আমাকে মারতে চাইছিস। এখন আমার কি হবে গো। আমার বন্ধুরাই আমার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে গো।”
আলভী ততটা পাত্তা দিলো না রবির অভিনয়ে। এই ছেলেকে তারা তো আজ থেকে চিনে না। এতদিনে একে হাড়ে হাড়ে চেনা হয়ে গেছে তাদের। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো আলভী। শীর্ষের দিকে তাকিয়ে শুধাল,
“হঠাৎ এমন জরুরি তলব, আবার রেস্টুরেন্টে ডেকে এনে খাওয়াচ্ছিস যে কাহিনী কি?”
শীর্ষ একটু সময় নিল। এরপর হুট করেই বলল,
“আমি বিয়ে করেছি।”
সামান্য একটি বাক্য। তবে বজ্রপাতের না কাজ করল সকলের ভিতরে। রবি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল। চ্যাচিয়ে উঠে বলল,
“কি!”
নয়ন ঢোক গিললো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
“কি নয় জ্বী। আমরা গ্রামে গিয়েছিলাম না তখন শীর্ষ স্যার বিয়ে করে নিয়েছেন।”
আলভী কণ্ঠে কিছুটা বিস্ময়বোধ নিয়ে শুধাল,
“কিন্তু কিভাবে কি হলো? গ্রামে গিয়ে তাও এত স্বল্প সময়ের মধ্যে।”
শীর্ষ নয়নের দিকে দৃষ্টি দিলো। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো নয়ন। একে একে বলতে শুরু করল সেদিনের রাতের সকল ঘটনা। সবটা শুনে রবি তার নিজের স্থানে বসে পড়লো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ওহ তাহলে কট খেয়ে বিয়ে হয়েছে। অবশ্য ওর কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আর কিই বা আশা করা যায়। ব্যাটা লু’চু। নির্ঘাত সহজ সরল মেয়েটাকে রাতের আঁধারে একা পাওয়ার চান্সে ডান্স মা’র’তে গিয়েছিল। গ্রামবাসী মিলেও দিয়েছে বিয়ে পড়িয়ে। একদম ঠিক আছে।”
শীর্ষ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো রবির দিকে। সাথে সাথে চুপসে গেল বেচারা। আমতা আমতা করে বলল,
“কটেই পূর্ণতা। তুই একটা না ভাই আরও পাঁচটা কট খা। তবুও ওভাবে তাকাস না।
দুপুরের তপ্ত রৌদ্র। আকাশে সূর্যের চড়া তেজ। ত্রয়ীর কেবলই কলেজ শেষ হয়েছে। আরফার সাথে কথা বলতে বলতে কলেজ থেকে বাহিরে বেরিয়ে এলো সে। গেটের বাইরে পা রাখতেই চোখে পড়লো শীর্ষকে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে লোকটা। ত্রয়ীকে চোখে পড়তেই শীর্ষ ইশারা দিয়ে বলল,
“গাড়িতে ওঠ।”
ত্রয়ীও কোনো দ্বিরুক্তি করল না। আরফাকে বিদায় জানিয়ে সে উঠে বসলো গাড়ির সামনের সিটে। এরপর শীর্ষও তার পাশে ড্রাইভিং সিটে উঠে গাড়ি স্টার্ট করল।
কিছুটা পথ অতিক্রান্ত হতেই রাস্তার এক কিনার ধরে গাড়িটা থামিয়ে দিলো শীর্ষ। ত্রয়ী ভ্রু কুঁচকাল। এদিক ওদিক দৃষ্টি দিতে দিতে শুধাল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৪৪
“একি এখানে গাড়ি থামিয়েছেন কেন? বাড়িতে যাব না আমরা?”
শীর্ষ কোনো জবাব দিলো না। সে ধীরে ধীরে ত্রয়ীর সিটটা নিচের দিকে নামাতে শুরু করল। চমকে উঠল মেয়েটা, হৃদযন্ত্রটা যেন লাফিয়ে উঠল মুহূর্তেই। আকস্মিক সিটটা নিজের দিকে চলে যাওয়ায় সেও হেলে পড়লো অনেকটা। মৃদু স্বরে চ্যাচিয়ে উঠে সাথে সাথে বলল,
“আপনি গাড়ির সিট এভাবে নিচের দিকে নিচ্ছেন কেন? সমস্যা কি?”