অনুরাগে তুই পর্ব ৪৬

অনুরাগে তুই পর্ব ৪৬
সাদিয়া শওকত বাবলি

মৃদু স্বরে চ্যাচিয়ে উঠে সাথে সাথে বলল,
“আপনি গাড়ির সিট এভাবে নিচের দিকে নিচ্ছেন কেন? সমস্যা কি?”
শীর্ষ এবারেও কোনো উত্তর দিলো না। বরং নিঃশব্দে নিজের সুবিধা অনুযায়ী ত্রয়ীর সিটটা নিচের দিকে নামিয়ে নিল। এরপর হুট করেই মাথা রাখলো মেয়েটির কোলের উপরে। ত্রয়ী হকচকাল। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে সামান্য সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। তবে তাতে কাজের কাজ খুব একটা হলো না। গাড়ির অভ্যন্তরে সীমিত স্থান। এখানে যতই দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন খুব বেশি দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। শীর্ষ বস্ত্রের উপর থেকেই আলতোভাবে নাক ঘষলো ত্রয়ীর পেটে। সাথে সাথে কেঁপে উঠল মেয়েটি। অজানা এক অনুভূতির দাপটে মুষড়ে পড়লো যেন মুহুর্তেই। হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো তড়িঘড়ি করে। শীর্ষ সবটাই অনুভব করল। তবে খুব একটা পাত্তা দিলো না। বরং মিহি স্বরে সে বলল,

“মাথাটা ধরেছে। চুলগুলো একটু টেনে দে তো।”
শীর্ষের কণ্ঠে যেন একরাশ ক্লান্তি, আদুরে আবদার। ত্রয়ীর ইচ্ছে হলো না স্বামীর এই আবদারকে ফিরিয়ে দিতে। সে নিজের ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলো শীর্ষের চুলের দিকে, তবে পরমুহূর্তেই আবার সে হাত গুটিয়ে নিল। কেমন লজ্জা, সংকোচ এবং জড়তা চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে তাকে। শীর্ষ যতই তার স্বামী হোক না কেন প্রথম প্রথম লজ্জা, সংকোচ এবং জড়তা কাজ করাটা খুব স্বাভাবিক। ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। তবে নিজের ভিতরের জড়তায় হাতটা শীর্ষের মাথার উপরে রাখার সাহস করল না। শীর্ষ আর একটু অপেক্ষা করল। এরপর নিজেই ত্রয়ীর হাতটা টেনে মাথার উপরে রাখলো। পূর্বের তুলনায় একটু গম্ভীর স্বরে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“চুলগুলো টেনে দে।”
ত্রয়ী আর দ্বিরুক্তি করল না। আলতোভাবে শীর্ষের মাথার চুলগুলো সে টেনে দিতে শুরু করল। এরপর দুজনেই নিশ্চুপ। দু’জনের এই নীরবতায় কতটা সময় কেটে গেল জানা নেই। তবে বেশ কিছুটা সময় পরে নীরবতা ভাঙলো ত্রয়ী। আমতা আমতা করে বলল,
“একটা কথা বলার ছিল।”
“বল।”
“আপনি আমাদের বিয়ের কথা বাড়িতে কেন জানাচ্ছেন না?”
শীর্ষ ঘুরে চিৎ হলো। এক পলক তাকালো স্ত্রীর কোমল সুশ্রী মুখ খানার দিকে। অতঃপর এতক্ষণ তার মাথায় ত্রয়ীর চালিত হাতটা নিজের হাতের ভাঁজে নিল। মেয়েটির পাঁচ আঙুলের ভাঁজে নিজের পরিপুষ্ট হাতের পাঁচ আঙ্গুল চালনা করতে করতে বলল,

“বাবা মাকে আমাদের হঠাৎ বিয়ের কথা বললে হয়তো তারা কষ্ট পাবেন কিংবা গ্রামের মানুষদের মতো ভুল বুঝবেন। তাই একটু সময় নিচ্ছি। ভাবছি এই বিয়ের কথাটা গোপন রেখে তাদের বুঝাবো। তারপর আবার আমরা নতুনভাবে বিয়ে করবো। এতে তারাও আমাদের ভুল বুঝবে না।‌ আর আমাদের বিয়েটাও রয়ে যাবে।”
ত্রয়ী ইতস্তত করে বলল,
“কিন্তু তারা যদি আমাকে না মেনে নেন কিংবা আমার আর আপনার বিয়ে দিতে রাজি না হন।”
“তা নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। আমার বাবা মা তো। ও আমি ঠিক ম্যানেজ করতে পারবো। তুই এখন আমার চুল টেনে দে তো।”

ত্রয়ী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। শীর্ষের উপরে তার ভরসা আছে। লোকটা একবার যখন বলেছে সবকিছু ম্যানেজ করে নিবে তখন ঠিক ম্যানেজ করে নিবে। কিন্তু এই লোকটা এত কেন করছে তার জন্য? তাদের যে পরিস্থিতিতে আর যেভাবে বিয়ে হলো তাতে এত সহজে শীর্ষের তো বিয়েটা মেনে নেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু সে কি সুন্দরভাবে বিয়েটা মেনে নিল। আবার বিয়ের পরবর্তী সময়টাও কি সুন্দরভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন, তাদের মধ্যে কোনো জোরপূর্বক বিয়ে হয়নি। বরং ভালোবেসে দুজনের সম্মতিক্রমে বিয়ে হয়েছে। আচ্ছা লোকটা কি তাকে পূর্ব থেকেই ভালোবাসে? বিয়ে করতে চায়? হতে পারে! আগেও তো লোকটা তাকে কয়েকবার বিয়ের কথা বলেছিল। যদি তেমন হয় তবে ত্রয়ীর ভাগ্য বোধ হয় এবার খুলে গেছে। এবার বোধহয় মেয়েটা একটু সুখের দেখা পাবে, একটু ভালোবাসা পাবে। আর মেয়েটাকে অনিশ্চয়তার সাগরে ডুবে ম’র’তে হবে না। ত্রয়ীর হৃদয়ে একটু হলেও সুখের হাওয়া বইলো। আলতোভাবে সে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করল শীর্ষের মাথায়।

ত্রয়ী বেরিয়ে যাওয়ার কিছুটা সময় পরই কলেজ থেকে বেরিয়ে এলো রিমা। ক্লাস শেষে প্রয়োজনীয় কিছু নোটস সংগ্রহ করতে লাইব্রেরীতে গিয়েছিল সে। যার দরুন ফিরতে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।
কলেজ থেকে বেরিয়ে গেটের অভিমুখেই বাড়ির গাড়িটা দাঁড় করা অবস্থায় পেল সে। রিমা আর দেরি করল না। চটজলদি উঠে বসলো গাড়িতে। কিন্তু ত্রয়ী কোথায়? রিমা আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো। সে ভেবেছিল ত্রয়ী ক্লাস শেষে গাড়িতে তার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু মেয়েটা তো এখানে নেই। তবে কি সে বাড়িতে চলে গেছে? রিমা ভ্রু কুঁচকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে গাড়ি চালককে শুধাল,
“ত্রয়ী কোথায় চাচা? ও কি একা একাই বাড়িতে চলে গেছে?”
“না, শীর্ষ বাবা ওরে নিয়া গেছে।”
রিমা অবাক হলো। কণ্ঠে বিস্ময় নিয়ে ফের শুধাল,
“শীর্ষ ভাই নিয়ে গেছে!”
“হ।”

রিমার কপালের ভাঁজ গাঢ় হলো। শীর্ষ ত্রয়ীকে নিয়ে গেছে? কেন নিয়ে গেছে? তাকে তো সচরাচর নিতে আসে না। অনেকবার বললেও আসে না। অথচ ত্রয়ীর ক্ষেত্রে প্রায়ই শীর্ষ তাকে নিতে আসে আবার দিয়ে যায়। আবার ত্রয়ীর অপমানে সে হুলস্থূল বাঁধায়, তাকে বকে। ত্রয়ীর সাথে এত কিসের সম্পর্ক শীর্ষের? রিমার হৃদয়ে কেমন সন্দেহ জন্ম নিল। ইচ্ছে হলো বিষয়টা খুঁটিয়ে দেখার।

মাথার উপরে উত্তপ্ত সূর্য। আবহাওয়ায় দাপুটে গরম। এই তীব্র গরমের মধ্যেই আলভী দাঁড়িয়ে রয়েছে মেহেরের কলেজের অভিমুখে। মেয়েটি আজ গাড়ি আনেনি। আসার সময় তো সে-ই বাইকে করে পৌঁছে দিয়ে গেল। কলেজ শেষে বাড়িতে ফেরার জন্যও হয়তো মেয়েটি তার জন্য অপেক্ষা করবে। তাছাড়া আজ আলভীর এখানে আসার পিছনে অন্য একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। আজ যেভাবেই হোক সে তার মনের কথা মেহেরকে জানাবে। অনেক তো হলো লুকোচুরি, নিজের মনের কথাকে গোপনে রেখে ভালোবেসে যাওয়া। এবার না হয় সব প্রকাশ্যে আসুক। আর তাছাড়া আলভীর যতটুকু মনে হয় তাতে মেহেরও তাকে ভালোবাসে। নয়তো তার সাথে এভাবে অবাধে চলাফেরা করতো না। যখন তখন যেখানে খুশি ঘুরতে যেতে পারতো না। উলটো তার আগমনে বিরক্ত হতো, অপমান করতো। আলভীর মনের ভিতরকার নিদারুণ এই চিন্তা ভাবনার মধ্যেই কলেজ থেকে বেরিয়ে এলো মেহের। গেট থেকেই আলভীকে দেখে মিষ্টি হাসলো‌‌ সে। তার দিকে এগিয়ে এসে শুধাল,

“দিয়ে গেছেন আবার নিতেও এসেছেন নাকি?”
আলভী আলতো হাসলো। বাইকে উঠে বসতে বসতে বলল,
“দিয়ে যখন গিয়েছি তখন নিয়ে যাওয়াটাও তো আমারই কর্তব্য। তাই চলে এলাম। এখন বাইকে উঠে বসুন তো।”
মেহের বাইকে উঠে বসলো। আলভীও আর দেরি করল না। বাইকে স্টার্ট দিয়ে সাঁই সাঁই গতিতে ছুটলো অভিমুখে। এরপরে দু’জনেই চুপ। মেহেরের ইচ্ছে হলো কিছু বলার, এই পুরো পথটা আলভীর সাথে বাক্যালাপের সাথে কাটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তার লজ্জা, সংকোচ কেমন যেন তার কণ্ঠনালীকে দাবিয়ে রেখেছে। চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। মেহের কিছুটা সময় নিল। নিজেকে ধাতস্থ করতে ওষ্ঠ জোড়া ফাঁকা করল কিছু বলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার কণ্ঠনালী ভেদ করে কোনো শব্দ বের হওয়ার পূর্বেই আলভী বলল,

“আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিল।”
“বলুন।”
“এখানে নয়। কোনো রেস্টুরেন্ট বা ফাঁকা স্থানে গিয়ে বলি?”
মেহের হালকা হাসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে বুড়িগঙ্গার ধারে চলুন। খোলা আকাশের নিচে নদী দেখতে দেখতে না হয় আমাদের কথা হবে।”
প্রস্তাবটি খুব একটা মন্দ নয়। আলভীর ভালো লাগলো। সে আর কোনো বাক্যবিনিময় না করে বাইকটা ঘুরিয়ে নিল বুড়িগঙ্গার দিকে।

কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। মেহেরকে নিয়ে আলভী এসে পৌঁছালো বুড়িগঙ্গার ধারে। বুড়িগঙ্গার এই ধারটা বেশ শান্ত এবং নিরিবিলি। পানিটাও একটু স্বচ্ছ। শহরের কাছের বুড়িগঙ্গার ধারটার দিকে তো তাকানো যায় না। অসচ্ছ দূষিত পানি, দুর্গন্ধ ভরপুর, আর ময়লা আবর্জনারও কমতি নেই। মানুষ তার নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের সুখের তাগিদে প্রকৃতিকে মে’রে ফেলছে। তবুও সুখের দেখা পাচ্ছে না।
বাইক থেকে নেমে বুড়িগঙ্গার তীরে গিয়ে দাঁড়াল মেহের এবং আলভী। দুপুর হওয়ায় আশেপাশে জনমানবের তেমন দেখা নেই। শুধু দুই একটা গরুকে দেখা যাচ্ছে ঘাস খেতে। মেহের আশেপাশে একবার দৃষ্টি বুলালো। অতঃপর মিহি কণ্ঠে বলল,

“কি যেন বলতে চাইছিলেন আপনি?”
আলভী দ্বিধাগ্রস্ত হলো। তখন তো বড়ো সাহস নিয়ে নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে এসেছিল সে কিন্তু এখন কেমন যেন সংকোচ হচ্ছে, ভিতরে জড়তা অনুভব করছে। যদিও আলভী জানে মেহের তাকে পছন্দ করে তবুও প্রত্যাখ্যানের একটি মৃদু ভয় থেকেই যায়। আলভীকে চুপ করে থাকতে দেখে মেহের কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকাল। ফের বলল,
“কি হলো কিছু বলছেন না যে।”
আলভী মাথা চুলকালো। ইতস্তত করে বলল,
“আসলে কথাটা কিভাবে বলবো, কোথা থেকে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না।”
মেহের ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে তুললো। আলভীকে সাহস দিয়ে বলল,

“এত কেন ভাবছেন? আপনি নির্দ্বিধায় আপনার কথাগুলো আমাকে বলতে পারেন। সমস্যা নেই।”
আলভী লম্বা লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল। অতঃপর হুট করেই বলে উঠল,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি মেহের।”
বহুল প্রতিক্ষীত সেই বাক্য। যে বাক্যটি শ্রবণের তাগিদে এতকাল ছটফটিয়ে ম’রে’ছে মেহের। অবশেষে সেই বাক্যটি শ্রবণের সৌভাগ্য তার হলো। আকস্মিক আলভীর কণ্ঠে প্রেমময় এই বাক্য শ্রবণে কিঞ্চিৎ চমকে গিয়েছিল সে। তবে পরক্ষণেই হৃদয়ে হানা দিয়েছে একরাশ শীতলতা। কান দুটো শীতল হয়েছে গভীর আবেগে। মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আলভীর দিকে। কণ্ঠে শীতলতা নিয়ে শুধাল,

“কি বললেন? আবার বলুন তো।”
আলভী এবার আর সময় নিল না। চটজলদি জবাব দিলো,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি মেহের।”
আবেগে আঁখি দ্বয় ভরে উঠল মেহেরের। হৃদয় আন্দোলিত হলো নিজের হৃদয়ের কথা প্রকাশের তাগিদে। মেহের দৃষ্টি নুইয়ে নিল। থেমে থেমে শুধু উচ্চারণ করল,
“আমিও আপনাকে….”
এই টুকু বলতেই তাকে থামিয়ে দিলো আলভী। অভয় দিয়ে বলল,
“এখনই জবাব দেওয়ার কোনো তাড়া নেই। আপনি বরং সময় নিন। ভেবে চিন্তে তারপর আমাকে জানান।”
মেহের দৃষ্টি তুললো। তবে আলভীর কথা অনুযায়ী সে সময় নিল না। ধীর কণ্ঠে প্রায় সাথে সাথেই জবাব দিলো,
“আমিও আপনাকে ভালোবাসি।”
আলভী শুনলো কথাটা। সাথে সাথে হৃদয় আন্দোলিত হয়ে উঠল তার। সে জানতো মেহেরের তরফ থেকে এমন উত্তরই আসবে। তবুও প্রেয়সীর কণ্ঠ থেকে সরাসরি এ উত্তর শোনার আনন্দই আলাদা। আলভী উৎফুল্ল হলো। অতি আনন্দে দুই হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে উদ্যত হলো মেহেরকে। তবে পরক্ষণেই আবার থেমে গেল। মাথা চুলকে বলল,
“বহুল আকাঙ্ক্ষিত কিছু পাওয়ার আনন্দ তো। একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম আর কি।”
মেহের জবাব দিলো না কোনো। মাথা নুইয়ে একটু খানি লাজুক হাসি উপহার দিলো শুধু।

চারদিকটা ঘুটঘুটে আঁধারে ছেয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটা সগৌরবে ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে রাত এগারোটার অধিক। এই ক্ষণে শহরের এক ধারে নির্জন এক রাস্তা ধরে প্রচন্ড গতি নিয়ে ধেয়ে চলছে তিনটা বাইক। একটা বাইকে আলভী, একটাতে রবি, অন্যটাতে শীর্ষ এবং নয়ন। চারজনের মাথাই কালো রঙা হেলমেট দ্বারা আবৃত। আকস্মিক দেখে বোঝার উপায় নেই কে কোনটা।
বহুদিন পর আজ তারা চারজন মিলে বাইক চালানোর প্রতিযোগিতা লাগিয়েছে এই নির্জন রাস্তা ধরে। আগে যখন শীর্ষের বাইক ছিল তখন প্রায়ই এ রাস্তা ধরে দেখা মিলতো এ চারজনের। তারপর হঠাৎ শীর্ষ বাইক এক্সিডেন্ট করল, তার বাইক নষ্ট হলো। ফাহমিদা বেগমের হাহাকার আর কান্নার দাপটে পরবর্তীতে আর বাইক কেনা হলো না শীর্ষের বা পুরোনোটাও সাড়ানো হলো না। আজকে যে বাইকটা চালাচ্ছে এটাও তার নয়। এটা নয়নের। নয়ন পিছনে বসে রয়েছে আর শীর্ষ সামনে বসে বাইক চালাচ্ছে।
কিছুটা সময় নিয়ে শীর্ষদের প্রতিযোগিতা শেষ হলো। বরাবরের ন্যায়ই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলো রবি। রবি এমনি হাস্যরসাত্মক, ছটফটে, অতিরিক্ত কথা বলা যেমনই হোক না কেন এসব প্রতিযোগিতা কিংবা খেলাধুলার বিষয়ে বেশ পারদর্শী।

প্রতিযোগিতা শেষে রবি, আলভী, শীর্ষ এবং নয়ন একে একে বাইক থেকে নামে দাঁড়াল। রবি মাথার হেলমেটটা খুলতে খুলতে বলল,
“আমাকে হারিয়ে জেতা অত সহজ না জানিস। তারপরেও যে কেন প্রতিযোগিতা করতে আসিস কে জানে।”
শীর্ষ জবাব দিলো না রবির কথার। ফের বাইকের উপরে বসতে বসতে বলল,
“আমি বাড়িতে যাচ্ছি।”
আলভী এসে দাঁড়াল শীর্ষের পাশে। তার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“এত তাড়াতাড়ি গিয়ে কি করবি? আর একটু সময় থাক। আড্ডা দেই আমরা। অনেকদিন তেমন আড্ডা দেওয়া হয় না আমাদের।”

অনুরাগে তুই পর্ব ৪৫

শীর্ষ বাইকের চাবি ঘুরালো। শান্ত, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
“বিয়ে করেছি। ঘরে সুন্দরী বউ রেখে এসেছি। এখন ঘরের দরজা বন্ধ করে বউয়ের সাথে অ্যাডাল্ট আড্ডা দেওয়ার সময়। তোদের মতো ছাও পোনাদের সাথে পরেও আড্ডা দেওয়া যাবে।”

অনুরাগে তুই পর্ব ৪৭