অনুরাগে তুই পর্ব ৪৭
সাদিয়া শওকত বাবলি
শীর্ষ বাইকের চাবি ঘুরালো। শান্ত, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
“বিয়ে করেছি। ঘরে সুন্দরী বউ রেখে এসেছি। এখন ঘরের দরজা বন্ধ করে বউয়ের সাথে অ্যাডাল্ট আড্ডা দেওয়ার সময়। তোদের মতো ছাও পোনাদের সাথে পরেও আড্ডা দেওয়া যাবে।”
আলভী, নয়ন এবং রবি বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়লো যেন। বিস্ময়ের রেশ সহ্য করতে না পেরে নয়নের হাত থেকে হেলমেটটা ছিটকে পড়লো ভূমিতে। কি বলল শীর্ষ? এখন বউয়ের সাথে অ্যাডাল্ট আড্ডা দেওয়ার সময়! কোন মুখ দিয়ে বলল সে কথাটা? শীর্ষ তো এমন ছিল না। উলটো বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য সর্বদা মুখিয়ে থাকতো সে। এখন বিয়ে করে সব ভুলে গেল? আলভী চোখে মুখে হতাশার ভাব ফুটিয়ে তুললো। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“বিয়ে করতে না করতেই আমাদের এভাবে ভুলে গেলি শীর্ষ? এখন আমাদের সাথে আড্ডা দেওয়ার তুলনায় তোর বউ বড়ো হয়ে গেল?”
রবিও একইভাবে হতাশা নিয়ে বলল,
“তোকে আমি সবার থেকে আলাদা ভেবেছিলাম শীর্ষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তুইও বউয়ের আঁচল ধরলি?”
তবে সবার বিপরীতে মত প্রকাশ করল নয়ন। নাক মুখ কুঁচকে সে বলল,
“ছিঃ ছিঃ, অ্যাডাল্ট আড্ডা আবার কি? বিয়ে হতে না হতেই আপনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছেন স্যার।”
শীর্ষ ততটা পাত্তা দিলো না কারো কথাই। বাইকে স্টার্ট দিয়ে অভিমুখের দিকে ছুটতে ছুটতে বলল,
“বিয়ে করেছিই নষ্ট হওয়ার জন্য।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চারিদিকটা গভীর আঁধারে ছেয়ে গেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নীরবতা। শীর্ষের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় একটা বেজে গেছে। বাড়িতে প্রবেশ করেই পকেট ঘেঁটে নিজের মোবাইলটা বের করল সে। নিজ কক্ষের দিকে পা চালাতে চালাতে ত্রয়ীর নাম্বারে মেসেজ করল,
“কফি নিয়ে আমার রুমে আয়।”
কক্ষে এসে মোবাইলটা বিছানার উপরে ছুঁড়ে দিলো সে। ফ্রেশ হওয়ার উদ্দেশ্যে একটি টাওয়েল নিয়ে ঢুকলো ওয়াশ রুমে।
ত্রয়ী এই মুহূর্তে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এই রাত একটা দেড়টা পর্যন্ত শুধু শুধু বসে থাকবেই বা কে? ত্রয়ী মেসেজটা দেখলো না। মোবাইলের মেসেজ রিংটোনও খুব ক্ষীণ হওয়ায় তার কান অব্দি পৌঁছাল না শব্দ।
শীর্ষ কিছুটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। কোমড়ে তার সাদা টাওয়েলটা জড়ানো, উদম শরীর, মস্তকে স্থান পাওয়া চুলগুলো বেয়ে টুপটাপ পানি বিন্দুরা ঝড়ে পড়ছে এখনো। বুকের কাছের কালো লোমগুলোও পানিতে সিক্ত। সদ্য গোসল সেড়েছে বোধহয়। ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়েই শীর্ষ পুরো কক্ষে একবার চোখ বুলালো। ত্রয়ীকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো তার। বিছানার নিকট এগিয়ে এসে মোবাইলটা হাতে নিল। ত্রয়ীকে প্রেরিত নিজের মেসেজটায় একবার চোখ বুলিয়ে আবার মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেললো বিছানার উপর। অতঃপর এগিয়ে এসে দাঁড়াল কক্ষের এক কোনে অবস্থানরত আলমারির নিকটে। সেখান থেকে কালো রঙা একটি টিশার্ট এবং ট্রাউজার শরীরে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো কক্ষ ছেড়ে।
ত্রয়ীর কক্ষের দরজা বন্ধ। শীর্ষ হাত উঁচিয়ে টোকা দিলো দরজায়। তবে খুললো না কেউ। শীর্ষ একটু সময় নিল। ফের আবার টোকা দিলো বন্ধ দরজায়। সাথে মৃদু স্বরে ডাকলো,
“বালির বস্তা! বালির বস্তা!”
ত্রয়ীর কানে পৌঁছাল সে শব্দ। বিরক্ত অনুভব করল সে। এই ভদ্রলোকের চোখে কি ঘুম টুম কিছু নেই? এই রাত বিরাতে এসেও দরজা ধাক্কাচ্ছে। ত্রয়ী উঠবে না উঠবে না ভেবেও উঠে বসলো। বিছানার পাশে অযত্নে ফেলে রাখা ওড়নাটা গায়ে জড়ালো ভালোভাবে। ঢুলু পায়ে এসে খুললো দরজাটা। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,
“ঘুম টুম কি সব খেয়ে ফেলেছেন? এত রাতে দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন?”
শীর্ষ যেন শুনলো না ত্রয়ীর কোনো কথা। দরজাটা খুলতেই সে এক প্রকার হামলে পড়লো মেয়েটির উপরে। হাত বাড়িয়ে কোমড় চেপে ধরলো তার। টেনে নিল নিজের কাছে, খুব কাছে। এরপর মোহিত কণ্ঠে বলল,
“আমাকে রেখে ঘুমিয়েছিলি কেন?”
ত্রয়ী জবাব দিবে কি? শীর্ষের এহেন আকস্মিক স্পর্শে কেঁপে উঠল তার সম্পূর্ণ কায়া। চোখ জোড়া থেকে ঘুম ঘুম ভাব উবে গেল মুহুর্তেই। হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো তড়িঘড়ি করে। ত্রয়ী হাত উঁচালো দ্রুত। শীর্ষকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো দূরে। তবে শীর্ষ কি আর দূরে যাওয়ার পুরুষ? সে আরও শক্ত করে চেপে ধরলো স্ত্রীর নরম, সুঢৌল কোমড় খানা। ছোট ছোট পা ফেলে ধীর গতিতে মেয়েটিকে ঠেলে নিয়ে ঢুকলো কক্ষের ভিতরে। হাতের কনুই তুলে আলতো ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে দিলো দরজাটা। ত্রয়ীর অপ্রস্তুত ভাব বাড়লো। লাজে, অস্বস্তিতে মুষড়ে পড়লো তার ভিতরটা। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে সে বলল,
“কি করছেন কি? ছাড়ুন আমাকে।”
শীর্ষ নিজের মুখটা এগিয়ে আনলো ত্রয়ীর মুখের নিকটে। আলতোভাবে তার মুখের উপরে ফু দিয়ে বলল,
“ছাড়ার জন্য তোকে ধরেছি নাকি?”
“না মানে….”
“কি না মানে?”
শীর্ষের নেশাক্ত কণ্ঠস্বর। হাতের স্পর্শ বেশামাল। ত্রয়ী সহ্য করতে পারছে না এ স্পর্শের দাপট। ভিতরটা কেমন নাজুক হয়ে পড়েছে তার। কণ্ঠনালী রোধ হয়ে আসতে চাইছে। তবুও কোনো রকমে সে বলল,
“চুলগুলো মুছে নিন। ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার।”
ত্রয়ীর কথায় বোধ হয় কাজ হলো। শীর্ষ ছেড়ে দিলো তাকে। একটু এগিয়ে গিয়ে আলনা থেকে ত্রয়ীর তোয়ালেটা নিয়ে বসলো বিছানার উপরে। সেটা আবার ত্রয়ীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তুই মুছে দে।”
ত্রয়ী দ্বিধাগ্রস্ত হলো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে হাত বাড়ালো তোয়ালেটা ধরার উদ্দেশ্যে। শীর্ষ অমনি তার হাতটা ধরে ফেললো। হ্যাঁচকা টানে বসিয়ে দিলো নিজের কোলের উপর। ত্রয়ী ধরফর করে উঠল। সময় না নিয়ে উঠে যেতে চাইল কোল থেকে। শীর্ষ উঠতে দিলো না। বরং মেয়েটির কোমড় চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
“মুছে দে মাথাটা।”
ত্রয়ী ভীত নারী। তার উপর স্বামীর হঠাৎ এত গাঢ় স্পর্শে নাজুক হয়ে পড়েছে মেয়েটা। লাজে, ভয়ে, সংকোচে দিশেহারা হয়ে উঠেছে তার দেহ, মন। ত্রয়ী হাতে তোয়ালেটা নিয়ে ওভাবেই বসে রইল। মুছে দিলো না শীর্ষের মাথা। শীর্ষও আর অপেক্ষা করল না। সে মুখ গুজলো ত্রয়ীর গলায়। আলতোভাবে ভেজা মাথাটা ঘষে পানির বিন্দু গুলো দ্বারা সিক্ত করে তুলতে লাগলো মেয়েটির ঘাড়, গলা। ত্রয়ীর সম্পূর্ণ শরীর যেন অবশ হয়ে এলো। শীতল এক রক্ত স্রোত নামলো শিরদাঁড়া বেয়ে। পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল সে। খামচে ধরলো শীর্ষের মাথার পিছনের দিকের চুলগুলো।
শীর্ষ আরও কিছুটা সময় নিয়ে ত্রয়ীর গলা থেকে মুখ তুললো। প্রিয়তমার মুখশ্রীর পানে দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“আমি ফেরার পূর্বে আর কখনো ঘুমাবি না।”
ত্রয়ী চোখ মেলে তাকালো। অস্ফুট কন্ঠে জবাব দিলো,
“হুম।”
শীর্ষ এবার ত্রয়ীকে নিয়েই শুয়ে পড়লো বিছানায়। আবারও মুখ গুঁজলো মেয়েটির গলায়। সেখানে আলতোভাবে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
“কি ব্যবহার করিস? ঘ্রাণটা তো সুন্দর।”
ত্রয়ীর হৃদয় দিশেহারা, নিঃশ্বাস ভারী। শীর্ষের স্পর্শ আজ একটু বেশিই বেশামাল, বেশিই গভীর। লোকটা আগে তো এমন ছিল না। আগে তো তাকে দেখলেই ধমকের উপরে রাখতো, সব সময় মেজাজ দেখাতো। আর এখন সব সময় তার সাথে চিপকে থাকার কারণ খোঁজে। অবশ্য শীর্ষের এই চিপকে থাকাটা যে ত্রয়ীর খারাপ লাগে তেমন নয়, বরং ভালোই লাগে। শীর্ষের স্পর্শ গুলো, তার পাগলামী গুলো ত্রয়ীর ভিতরে একটি অন্যরকম সুখ সুখ অনুভূতির সৃষ্টি করে। ত্রয়ী চেয়েও বাঁধা দিতে পারে না তাকে। অবশ্য তার বাঁধা দেওয়াও সাজে না। শীর্ষের সাথে বিয়ে হয়েছে তার। শীর্ষের এখন তার উপরে সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারকে উপেক্ষা করে লোকটাকে বাঁধা দেওয়া তার খাটে না। আর বাঁধা দিলেও তা ন্যাকামির পর্যায়ে চলে যায়। ত্রয়ী ছোট ছোট কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেললো। ধীর কণ্ঠে শুধাল,
“এখানে শুয়েছেন যে? রুমে যাবেন না?”
“উম…আজ এখানেই ঘুমাবো।”
“আচ্ছা আমাকে ছাড়ুন তাহলে। বালিশ পেতে দেই। তাতে মাথা দিন।”
শীর্ষ একটু নড়েচড়ে উঠল। জড়ানো কণ্ঠে জবাব দিলো,
“না, এভাবেই ভালো লাগছে।”
ত্রয়ী আর দ্বিরুক্তি করল না। চুপচাপ শুয়ে রইল ওভাবেই। তবে তার দুই চোখ জুড়ে ঘুম নেই এক ফোঁটাও। আজ রাতে আর ঘুম আসবে কিনা তাও জানা নেই। শরীরের সাথে এভাবে একজন লেপ্টে থাকলে কি আর চোখে ঘুম ধরা দেয়? আবার লোকটাকে যে নিজের থেকে সরিয়ে দিবে তাও পারছে না। লোকটার এই তাকে ছুঁয়ে থাকাটা ভীষণ আনন্দময় অনুভূতি জাগাচ্ছে তার ভিতরে। আচ্ছা, শীর্ষের এই এত ছোঁয়া, এত পাগলামী এগুলো কি সব তাকে ভালোবাসে? নাকি শুধুই অধিকারবোধ কিংবা শারীরিক টান? ভালোবাসা না থাকলে কি এভাবে একটা মানুষের কাছে আসা যায়, তাকে স্পর্শ করা যায়? ত্রয়ী তো ভালোবাসা ব্যতীত কারো স্পর্শ কল্পনাও করতে পারে না। তবে কি ত্রয়ী ভালোবাসে শীর্ষকে? ত্রয়ীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বাড়লো। কেমন ধুকপুক ধুকপুক করে উঠল বুকের ভিতরটা। ঘাড় বাঁকিয়ে সে তাকালো শীর্ষের মুখ পানে। হৃদয়কে প্রশ্ন করল,
“সে কি ভালোবাসে শীর্ষকে?”
ত্রয়ীর হৃদয় সময় নিল না। প্রশ্নটা করার সাথে সাথেই সগৌরবে তাকে জানান দিলো,
“হ্যা, তুই ভালোবাসিস এই পুরুষকে।”
কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? ত্রয়ী আগে কখনো তো শীর্ষের জন্য তেমন কিছু অনুভব করেনি। শীর্ষকে যে খুব একটা পছন্দ ছিল তার তেমনও নয়। তাহলে হঠাৎ এই ভালোবাসা কোথা থেকে এলো? ত্রয়ীর হৃদয় ফের জানান দিলো,
“ভালোবাসা কি জানিয়ে শুনিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে হয়? ভালোবাসা হলো একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া। এটা যখন তখন যার সাথে ইচ্ছে ঘটতে পারে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা বিয়ের সময় ঐ তিন কবুলেরও একটা মাহাত্ম্য রয়েছে। ঐ তিন কবুলই দুজন নর নারীকে বেঁধে দেয় পবিত্র এক বন্ধনে। যে বন্ধনে সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ নিয়োজিত। বিয়ে শুধু একটি শব্দ নয়। এটি দুজন নর নারীর হৃদয়ের টান। যা তাদের সারা জীবনের জন্য একে অপরের সাথে আবদ্ধ করে। যদি তা না হতো তবে যুগ যুগ ধরে চলে আসা পারিবারিক বিয়ে গুলো টিকে থাকতে পারতো না। না দেখে শুনে আমাদের নানী, দাদীরা অচেনা এক পুরুষের সাথে সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে পারতো না।”
ত্রয়ীর দৃষ্টি গভীর হলো। আলতোভাবে হাত উঁচিয়ে রাখলো সে শীর্ষের গালে। মৃদু কণ্ঠে বলল,
“আমার ভালোবাসা, আমার প্রিয় পুরুষ, একান্তই আমার ব্যক্তিগত পুরুষ।”
শীর্ষ ঘুমিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তাই তার কর্ণ ভেদ করে পৌঁছালো না ত্রয়ীর এত আবেগ মাখা শব্দগুলো। যদি কোনোরূপে আজ এই ক্ষণে এই শব্দগুলো শীর্ষের কান অব্দি পৌঁছাতো তবে নিশ্চয়ই সে খুব খুশি হতো। আন্দোলিত হতো তার হৃদয়। প্রিয় মানুষকে পাওয়ার অভূতপূর্ব আনন্দে দিশেহারা হয়ে উঠতো তৎক্ষণাৎ।
ভোরের আলো ফুটেছে। আকাশের সূর্যটা তার ঝলমলে আলোয় আলোকিত করে তুলেছে চারপাশ। ত্রয়ীর ঘুম ভাঙলো মাত্রই। আধো আধো ভাবে চোখ মেলে তাকালো সে। দৃশ্যপটে ভেসে উঠল মাথার উপরে ঝুলানো সিলিং ফ্যানটা। ঘুম থেকে উঠে তার মস্তিষ্ক সচল হতে সময় নিল একটু। মস্তিষ্ক তার ক্রিয়া শুরু করতেই ত্রয়ীর খেয়ালে এলো শীর্ষ তো রাতে তার সাথেই ঘুমিয়েছিল। সে কি এখনো আছে নাকি চলে গেছে? ত্রয়ী পাশ ফিরে তাকালো। বিছানা ফাঁকা, শীর্ষের দেখা নেই কক্ষের কোথাও। লোকটা বোধহয় তাহলে চলেই গেছে। কিন্তু তাকে না জাগিয়েই চলে গেল? ত্রয়ী বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। হঠাৎ অনুভব করল তার কপালের মধ্যভাগে কিছু একটা লাগানো।
কপালে হাত দিলো সে। স্কচটেপ দিয়ে একটা ছোট কাগজের টুকরা লাগানো। এ নিশ্চয়ই শীর্ষের কাজ। লোকটা আর ভালো হলো না। ত্রয়ী কপাল থেকে কাগজটা টেনে এনে চোখের অভিমুখে ধরলো। লেখা পেল,
“শুভ সকাল বালির বস্তা। নাক টেনে ঘুমাচ্ছিলি তাই আর তুলিনি। আমি নিজের কক্ষে গেলাম।”
ছোট একটা বার্তা, প্রশান্তির হাওয়া বইলো ত্রয়ীর হৃদয় জুড়ে। কিন্তু মেয়েটা ভেবে পেল না, এটা স্কচটেপ দিয়ে তার কপালে লাগিয়ে যেতে হবে কেন? টেবিলেও তো রেখে যেতে পারতো। কপাল কুঁচকাল ত্রয়ী। বিরবির করে বলল,
“উদ্ভট একটা লোক। উদ্ভট তার যত কাজ কারবার।”
অনুরাগে তুই পর্ব ৪৬
সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত দিন। ত্রয়ী আর আরফা বসে রয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসে ঘাসের উপরে। পড়াশোনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে টুকটাক আলোচনা করছে তারা। ক্লাস শুরু হতে এখনো বেশ কিছুটা সময় বাকি। এর মধ্যে কোথা থেকে কায়সার এসে উপস্থিত হলো সেখানে। ত্রয়ীদের মতো করেই ঘাসের উপর বসলো সে। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে শুধাল,
“কি কেমন আছো?”