অনুরাগে তুই পর্ব ৪৮

অনুরাগে তুই পর্ব ৪৮
সাদিয়া শওকত বাবলি

ত্রয়ীদের মতো করেই ঘাসের উপর বসলো সে। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে শুধাল,
“কি কেমন আছো?”
কায়সারকে দেখে ত্রয়ীর কপালে ভাঁজ পড়লো গুটি কয়েক। বিরক্ত হলো ভিতরে ভিতরে। তবুও ভদ্রতার খাতিরে জবাব দিলো,
“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?”
“এই আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা কি করেছো তোমরা?”
ত্রয়ী কোনো জবাব দিবে তার পূর্বেই আরফা কপাল কুঁচকে জবাব দিলো,
“দেখছেন না বসে আছি।”
“তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আমি।”

“আপনি জিজ্ঞেস করেছেন ‘কি করছো তোমরা?’ এখানে আপনার অভিমুখে শুধু আমার আর ত্রয়ীরই উপস্থিতি রয়েছে। তবে কি আমি আপনার ব্যবহৃত ঐ ‘তোমারা’ শব্দের মধ্যে পড়লাম না?”
কায়সার থতমত খেয়ে গেল আরফার যুক্তির নিকট। অভ্যাসবশত সে নিজের প্রশ্নে ‘তোমরা’ শব্দটা ব্যবহার করে ফেলেছে। এখন তা নিয়েও মেয়েটির কত যুক্তি! কায়সার আমতা আমতা শুরু করল। নিজের দোষ ঢাকতে বলল,
“দেখুন আমি এখানে আপনার সাথে ঝগড়া করতে আসিনি।”
আরফা প্রায় সাথে সাথেই মুখ বাঁকিয়ে জবাব দিলো,
“তাহলে আমি আপনার সাথে ঝগড়া করতে গিয়েছি নাকি?”
“আপনি কিন্তু…..”
কায়সার নিজের সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করার পূর্বেই ত্রয়ী উঠে দাঁড়াল ঘাসের উপর থেকে। তাড়া দিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ক্লাসে চল আরফা। আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
আরফাও আর সময় ব্যয় করল না। তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াল সে। কায়সারের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে হাঁটা ধরলো ক্লাসের দিকে। কায়সারও তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াল। ব্যস্ত হয়ে বলল,
“শুনুন।”
ত্রয়ী এবং আরফা দু’জনেই থেমে গেল। ত্রয়ী পিছন ঘুরে ভদ্রভাবেই শুধাল,
“কিছু বলবেন?”
কায়সার মাথা চুলকালো। ইতস্তত করে জবাব দিলো,
“জ্বী তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা বলার ছিল।”
“বলুন।”

কায়সার এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। কেমন ভীত লাগছে আজ তার নিজেকে। এমনি সময় রাজনীতির মাঠে কত বড়ো বড়ো ঝামেলা সামলায়, মা’রা’মা’রি’তে জড়ায় তখন তো ভয় লাগে না। বরং সিনা টান করে, বুকের পাটা শক্ত করে সে সাহসিকতার পরিচয় দেয়। আর এখন? সামান্য এক নারীর নিকটে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে কতটা দ্বিধা, ভয়। এই বোধহয় নারী শক্তি। যে কিনা পুরুষকে প্রেমে ফেলে এক মুহূর্তে বাঘ থেকে বিড়ালে পরিণত করে দিতে পারে।
বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও কায়সারকে কিছু বলতে না দেখে ভ্রু বাঁকালো আরফা। কণ্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কথা কি ভুলে গেছেন নাকি? চুপ করে আছেন কেন? যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমার ক্লাস আছে।”
কায়সার তবুও একটু সময় নিল। খানিকটা ইতস্তত করে এবার বলেই ফেললো,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি ত্রয়ী।”

আরফা এবং ত্রয়ী খুব একটা অবাক হলো না। এ আশঙ্কা তাদের হৃদয় আগে থেকেই করে রেখেছিল। আরফা মুখ বাঁকালো। তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
“পুরাণ পাগলের ভাত নাই, নতুন পাগলের আমদানি।”
কায়সার বিরক্ত হলো। সব স্থানেই এই মেয়েটার লম্বা নাকটা উপস্থিত। সে ত্রয়ীকে প্রেম নিবেদন করেছে ভালো খারাপ যা জবাব দেওয়ার ত্রয়ী দিবে তা না এর যত বাড়াবাড়ি। কায়সার চোখ মুখ কুঁচকাল। রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
“আপনাকে আমি কিছু বলিনি।”
“আমার বান্ধবীকে তো বলেছেন।”
“তাহলে উত্তরটাও আপনার বান্ধবীকেই দিতে দিন। আপনি দিচ্ছেন কেন?”
“আপনি….”
ত্রয়ী হাত চেপে থামিয়ে দিলো আরফাকে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে কায়সারকে বলল,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি না।”
ত্রয়ীর এমন সোজাসাপ্টা জবাবে কায়সার একটু হোঁচট খেল যেন। তবে পরমুহূর্তেই সে নিজকে সামলে নিল। অধর কোনে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

“আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। ভালোবাসার কথাও নয়। আমাদের দেখাই তো হলো মাত্র কয়েকদিন। প্রথম দেখাতেই আমি তোমাকে মন দিয়ে বসলেও, তুমি আমাকে মন দাওনি। তা তোমার দৃষ্টিই আমাকে বরবার জানিয়েছে, বুঝিয়েছে। আমাদের দেখা হওয়ার পর এই কয়দিন আমি তোমার পিছু করলেও, তুমি কখনো আমার পিছু করোনি। আমি তোমাকে অনুভব করলেও, তুমি আমাকে অনুভব করোনি। সেক্ষেত্রে তুমি আমাকে ভালোবাসবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি শুধু আমার দিককার ভালোবাসার কথা তোমাকে জানালাম। এখন তুমি সময় নাও, আমাকে নিয়ে ভাবো। এই মুহূর্তে তুমি আমাকে ভালো নাই ভাসতে পারো। তবে ভবিষ্যতে ভালোবাসার চেষ্টা তো করতে পারো।”

অন্য কাউকে ভালোবাসা? ত্রয়ীর পক্ষে এ কখনো সম্ভব নয়। সে এখন শীর্ষের স্ত্রী। তার মন, মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই শীর্ষের বিচরণ। সেখানে অন্য কোনো পুরুষকে ভালোবাসা তো দূরে থাক, ভাবাও পাপ। তাছাড়া ত্রয়ী এখন মনে প্রাণে শীর্ষকে ভালোবাসে এবং চায়। তাকে ব্যতীত অন্য কাউকে ভাবতেও পারে না। মেয়েটা চোখে মুখে কাঠিন্যতা ফুটিয়ে তুললো। শক্ত কণ্ঠে বলল,
“সে চেষ্টা করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
“কেন?”
ত্রয়ী নিজের বিয়ের কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। শীর্ষ এখনো তাদের বিয়ের কথাটা কাউকে জানায়নি। বলেছে সবটা গুছিয়ে ধীরে সুস্থে বলবে। সেখানে কায়সারের ন্যায় একজন বাইরের লোকের কাছে তাদের বিয়ের কথাটা বলা কি ঠিক হবে? তাদের বিয়ের কথা জেনে এই লোকটা যদি কোনো ঝামেলা করে? কায়সার নামক এই লোকটা এমনিই তো শীর্ষের শত্রু। ত্রয়ী চেপে গেল তার আর শীর্ষের বিয়ের কথাটা। শুধু রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
“আপনার সব প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাঁধ্য নই।”

পরপর সে আরফার হাত ধরে হাঁটা ধরলো শ্রেণীকক্ষের দিকে। কায়সার হতাশ হলো। পিছন থেকে ত্রয়ীকে একবার ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। মেয়েটির সোজাসাপ্টা প্রত্যাখ্যানে হৃদয়টা অস্থির হয়ে উঠেছে তার, কিছুটা কষ্টও হচ্ছে। যদিও এ প্রত্যাখ্যানের জন্য সে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। আর সাথে এও ভেবে এসেছিল যে, ত্রয়ী তাকে প্রত্যাখ্যান করলেও সে পিছু হাঁটবে না। আঠার ন্যায় লেগে থাকবে মেয়েটির পিছনে। কবি বলেছেন,
“একবারে না পারিলে দেখো শতবার।”
ত্রয়ী একবার তাকে প্রত্যাখ্যান করলে, সে আরও শতবার ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়াবে তার অভিমুখে। মেয়েটিও বা আর কতবার তাকে ফিরাবে? একবার না একবার ঠিক মেনে নিবে। এই মেয়েটিকে সে যেভাবেই হোক নিজের প্রেমে ফেলে ছাড়বেই ছাড়বে।

শান্ত নদীর ধার, শান্ত তার জল।‌ মৃদু হিমেল হাওয়া বইছে চারিধারে। মেহের আজ কলেজে যায়নি। আলভীর সাথে এসেছে সেদিনের সেই নদীর ধারে। বুড়িগঙ্গা নদীর এই কিনারটা তার বেশ ভালোই লাগে। শহুরে কোলাহল, ব্যস্ততার কোনো দাপট নেই এখানে। চারদিকে একটি নিরিবিলি পরিবেশ বিদ্যমান। কেউ বিরক্ত করার মতো কিংবা কিছু বলার মতো নেই। নিঃসন্দেহে এই স্থানটি প্রেমিক যুগলের জন্য স্বর্ণস্থান।
মেহের আর আলভী নদীর ধারে সবুজ ঘাসের উপরে বসলো। মেহের আলতোভাবে মাথা রাখলো আলভীর কাঁধে। আলভী ওষ্ঠে মৃদু হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো সাথে সাথে। মেহেরের এক হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে বলল,
“জীবন কত অদ্ভুত তাই না? এই তো কয়েকদিন আগেও আমরা একে অপরকে ঠিকভাবে চিনতাম না, জানতাম না। অথচ এখন কত কাছে। দুজন দুজনকে ছাড়া কিছু ভাবতেও পারি না।”

“হুম।”
“আচ্ছা একটা কথা বলুন তো।”
“কি?”
“আপনি আমাকে কবে থেকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন?”
“জানি না ঠিক।”
“কেন জানেন না?”
“ভালোবাসা কি ওভাবে দিনক্ষণ, সময় দেখে হয়? এটা মনের অজান্তেই হয়ে যায়। আমি আপনাকে কখন মন দিলাম, কখন ভালোবেসে ফেললাম এতকিছু কখনো ভেবে দেখেনি। শুধু ভেবেছি আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। হঠাৎ-ই মনের কোনের বিস্তার এক জায়গা আপনার নামে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছি।”
মেহের থামলো। আলভী ওষ্ঠের কোনে হাসির ঝিলিক বজায় রেখেই বলল,
“আমি আপনাকে কখন থেকে ভালোবাসা শুরু করেছি জানি না। তবে আপনার প্রেমে পড়ার দিনক্ষণ কিন্তু স্মরণে রেখেছি।”

মেহের মাথা তুললো আলভীর কাঁধ থেকে। মৃদু স্বরে শুধাল,
“তাই? তা আপনি কোন দিন, কোন তারিখে আমার আমার প্রেমে পড়েছিলেন?”
“যেদিন আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন।”
এই টুকু বলে থামলো আলভী। প্রেয়সীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে ফের বলল,
“আমি প্রথম যেদিন আপনাকে দেখেছিলাম সেদিন আপনার জন্মদিন ছিল। শরীরে জড়ানো ছিল হালকা আকাশী রঙা একটি লম্বা পোশাক। কি যেন নাম ঐ পোশাকের…..ভুলে গেছি। যাক বাদ দিন। আমি তখনই আপনাকে দেখে থমকে গিয়েছিলাম, হারিয়ে গিয়েছিলাম আপনার ভিতরে। মনে হয়েছিল আমার অভিমুখে সাধারণ নারী নয়, বরং রূপকথার কোনো রাজকুমারী এক টুকরো আকাশ হয়ে নেমে এসেছে।”

মেহের মনযোগ দিয়ে শুনলো আলভীর কণ্ঠ নিঃসৃত প্রতিটি ধ্বনি। হৃদয় প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল তার। আলভী তাকে এতটা ভালোবাসে আগে জানা ছিল না। আগে তো সে এও নিয়ে সন্দিহান ছিল, লোকটা কি আদৌ তাকে ভালোবাসে কিনা। মেহের আলতোভাবে মাথা রাখলো আলভীর বক্ষে। আলভীও এক হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে আগলে নিল নিজের সাথে। ঠিক তখনই তার প্যান্টের পকেটে থাকা মুঠোফোনটা বেজে উঠল কর্কশ ধ্বনি তুলে। বিরক্ত হলো আলভী। এই সময়ে আবার কে কল করল? নিজের অফিস, কাজ-বাজ সব রেখে এসেছে একটু প্রেম করতে, প্রেয়সীর সাথে সময় কাটাতে সেখানেও শান্তি নেই। আলভী পকেট থেকে নিজের মোবাইলটা বের করল। স্ক্রীনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলো রবি কল করেছে। আলভী কলটা ধরে মোবাইলটা কানের কাছে নিল। কপাল কুঁচকে বলল,

“হ্যা, রবি বল।”
আলভীর কথা শেষ হতে না হতেই রবি হন্তদন্ত হয়ে বলল,
“ভাই কই তুই? এদিকে কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে। শীর্ষ খ্যাপে গেছে। দিয়াশলাই নিয়ে ছুটেছে কায়সারের বা’লে আগুন লাগাতে।”
আলভী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কণ্ঠে একরাশ বিস্ময় নিয়ে শুধাল,
“কি! কার বা’লে?”
“কায়সারের বা’লে, কায়সারের। তাড়াতাড়ি আয় তুই।”
রবি কলটা কেটে দিলো। আলভী হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল তৎক্ষণাৎ। নির্ঘাত ঐ কায়সারটা আবার কিছু ঘটিয়েছে যার কারণে শীর্ষও খ্যাপে গেছে। নাহ, এদের নিয়ে আর পারা গেল না। শীর্ষ যা ছেলে তাতে সে কায়সারের বা’লে আগুন লাগিয়েও দিতে পারে। আলভীকে উঠে যেতে দেখে মেহেরও উঠে দাঁড়াল। ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“কি হয়েছে?”
আলভী কোনো দিক বিবেচনা না করেই তাৎক্ষণিক জবাব দিলো,
“কায়সারের ভবিষ্যত মহাসংকটে।”
“মানে? আর কায়সারটাই বা কে?”
“আপনাকে সব পরে বলবো। এখন যেতে হবে। ওদিকে ঝামেলা হয়ে গেছে।

সকালের সময়টা এখনো পুরোপুরিভাবে গড়ায়নি। তবে সূর্যের তেজ বেড়েছে বেশ। এই তেজের মধ্যেই আরও ঔদ্ধত্য নিয়ে কায়সারের আস্তানার অভিমুখে এসে থামলো শীর্ষের গাড়িটা। গাড়ি থামতেই সিনা টান করে তেজস্বী ভঙ্গিতে নেমে পড়লো সে। একটু ঘুরে এসে দাঁড়াল গাড়ির পিছনের দিকে। চোখ মুখ শক্ত করে দুই হাতের হাতা গুটিয়ে তুললো কনুইয়ের উপরিভাগে, গলায় লাগানো টাইটা ঢিলা করল টেনেটুনে। অতঃপর গাড়ির ডিকি খুলে সেখান থেকে বের করে আনলো একটি হকিস্টিক। হাতে নিয়ে তার শক্তপোক্ততা পর্যবেক্ষণ করল স্বল্প সময় নিয়ে। গাড়ির মধ্য থেকে ইতোমধ্যে নয়ন, রবি এবং আলভীও বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে শীর্ষের দুই পাশ জুড়ে। তারাও ডিকির ভিতর থেকে একটা একটা করে হকিস্টিক তুলে নিল হাতে। এরপর শীর্ষকে মাঝে রেখে লম্বা লম্বা পায়ে সবাই ঢুকলো ভিতরে।

একটা ছোট খাটো ঝুপড়ির মতো কায়সারের আস্তানাটা। অবশ্য এটা তার আস্তানা বললেও ভুল হবে। এখানে যে সে সর্বক্ষণ সময় কাটায় বা আড্ডা দেয় তেমন নয়। ঐ মাঝে মাঝে দলবল নিয়ে একটু দাবা, ক্রাম অথবা তাস খেলতে আসে। আজও এসেছিল। কলেজে ত্রয়ীর প্রত্যাখ্যানের পরে মনটা একটু খারাপ হয়ে পড়েছিল বেচারার। তাই মন ভালো করার উদ্দেশ্যে এখানে আসা। তবে সে মন ভালো কি আর এখানে আদৌও হবে? উলটো এখন মনের সাথে সাথে শরীরটাও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।

কায়সার নিরিবিলিতে বসে রয়েছে একটি চেয়ারে। হাতে তার কিছু তাসের পাতা। কিছুটা সময় নিয়ে সে হাতের তাস গুলোকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করল। অতঃপর চোখে মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তুলে একটি তাস রাখলো সম্মুখে থাকা টেবিলের উপরে। অপর দিক থেকে অন্য একজন টেবিলে আরেকটি তাস রাখবে ঠিক তখনই হকি স্টিকের একটি জোরালো আঘাত এসে পড়লো সেখানটায়। মুহুর্তেই টেবিলে থাকা তাসের পাতাগুলো ছিটকে গেল। টেবিলের মধ্যভাগের কিছু অংশও ভেঙে দেবে গেল নিল নিচের দিকে। হকচকিয়ে উঠল উপস্থিত সকলে। কায়সার এবং তার সাথে বসে থাকা অন্যরা দাঁড়িয়ে পড়লো তৎক্ষণাৎ। আতঙ্কিত হয়ে তাকালো পাশ ফিরে। কায়সারের চোখে মুখে প্রথমে আতঙ্ক ধরা দিলেও শীর্ষকে দর্শনে তা শীথিল হয়ে এলো। সে আগে থেকেই জানতো শীর্ষ এখানে আসবে। কায়সার ত্রয়ীর নিকট গিয়েছে, তাকে প্রেম নিবেদনের মতো এত বড়ো একটা কর্ম ঘটিয়েছে সেখানে শীর্ষ যদি তার নিকট ছুটে না আসে তাহলে কি হয়? কায়সার নিজের ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে তুললো। বেশ রসিকতার সাথে বলল,

অনুরাগে তুই পর্ব ৪৭

“আরে শা’লা বাবু যে। তোমার অপেক্ষাতেই তো ছিলাম। তবে এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে ভাবতে পারিনি।”
ক্রোধে শীর্ষের শরীরটা রি রি করে উঠল যেন। কলেজে গিয়ে তারই বউকে প্রেম নিবেদন করে এসেছে, এখন আবার তাকেই বলছে শা’লা বাবু। শীর্ষ একটু এগিয়ে এক হাতে চেপে ধরলো কায়সারের কলার। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হা’রাম’জাদা, বা’ল পাকনা ডিসের লাইন। কতদিন তোকে বলেছি ত্রয়ীর থেকে দূরে দূরে থাকবি তা না। শা’লা লু’চ্চা। মেয়ে দেখলেই জিহ্বার আগায় লোভ ট্যাক ট্যাক করে। তোর জিহ্বাই আজ আমি কে’টে দেব লু’চ্চা শা’লা।”

অনুরাগে তুই পর্ব ৪৯