অনুরাগে তুই পর্ব ৫০
সাদিয়া শওকত বাবলি
ত্রয়ী দিশেহারা হয়ে উঠল। অদ্ভুত এক অনুভূতি হানা দিলো তার হৃদয় জুড়ে। কেমন লজ্জা, ভয়, সংকোচ এবং ভালোবাসার তীব্র মিশ্রণে গড়া এ অনুভূতি। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াও অস্বাভাবিক। শীর্ষের এহেন গাঢ় স্পর্শে ধীরে ধীরে নাজুক হয়ে পড়তে শুরু করল ত্রয়ী। উপায় না পেয়ে হাত দুটো রাখলো শীর্ষের প্রশস্ত বক্ষের উপরে। ঠেলে তাকে সরিয়ে দিতে চাইলো দূরে। তবে শীর্ষ কি আর দূরে যাওয়ার পাত্র? সে এক চুলও নড়লো না। বরং নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাঁধা পাওয়ার ভীষণ বিরক্ত হলো সে। কপাল কুঁচকে ত্রয়ীর দুই হাত ধরে মুঠোবন্দী করে নিল সাথে সাথে। এরপর আবার নতুন উদ্যমে মেয়েটাকে অনুভূতির জোয়ারে নাজেহাল করে তুলতে উদ্যত হলো।
কিছুটা সময় নিয়ে নিজ কার্যসিদ্ধি করে তবেই ত্রয়ীকে ছাড়লো শীর্ষ। তবে দূরে গেল না। মেয়েটিকে কোলের উপর বসিয়ে রেখেই প্রশ্ন করল,
“র’ক্ত গেছে?”
র’ক্ত গেছে নাকি যায়নি তা দেখবে কখন? একটু আগে যা ঘটলো তারপর লজ্জা, অস্বস্তিতে শীর্ষের দিকে তাকনোটাই তো দায় হয়ে পড়েছে ত্রয়ীর। শীর্ষ তাকে ছাড়ার পর সে সেই যে মেয়েটা মাথা নুইয়ে ফেলেছে তার চোখ তুলে তাকায়নি। শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“নিচে কি দেখিস? তাকা আমার দিকে।”
ত্রয়ী তাকালো না। যেভাবে দৃষ্টি নুইয়ে রেখেছিল সেভাবেই আছে সে। শীর্ষ ত্রয়ীর থুতনিতে হাত দিলো। টেনে মাথা উঠিয়ে শুধাল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এবার দেখ র’ক্ত গিয়েছে কিনা।”
ত্রয়ী এক পলক তাকালো শীর্ষের মুখ পানে। পরপর আবার দৃষ্টি নুইয়ে নিল। উপর নিচ মাথা দুলিয়ে বুঝালো র’ক্ত গিয়েছে। শীর্ষ ওষ্ঠ প্রসারিত করল। আলতোভাবে ত্রয়ীর নাক টেনে দিয়ে বলল,
“স্বামীর ঠোঁটে র’ক্ত দেখলে এভাবে মুছতে হয়। আজ শিখিয়ে দিলাম। পরের বার থেকে যেন মনে থাকে।”
ত্রয়ী এবার মাথা তুললো। ফট করে প্রশ্ন করল,
“কেন আপনি আবার মা’রা’মা’রি করবেন নাকি?”
শীর্ষ নিজের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিটা রাখলো ত্রয়ীর নরম ওষ্ঠের উপরে। একটু আগে তার আক্রমণের দরুন মেয়েটার ঠোঁটটা লাল হয়ে উঠেছে। শীর্ষের কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে। সে আলতোভাবে ত্রয়ীর ওষ্ঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“মা’রা’মা’রি করে যদি বউয়ের থেকে এমন দুর্দান্ত চিকিৎসা পাওয়া যায় তাহলে আবার কেন রোজ সকাল বিকাল নিয়ম করে দুই বেলা মা’রা’মা’রি করতেও আমার সমস্যা নেই।”
ত্রয়ী লাজনম্র হলো। লাজে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো তার দুই গালে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে সে বলল,
“বাড়িতে যাবেন না?”
“হুম, একটু পর।”
ত্রয়ী বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাড়িতে প্রবেশ করল। গাল দুটোতে এখনো তার লজ্জালু আভা ছড়িয়ে, ওষ্ঠের কোণে চমৎকার হাসি। মেয়েটা শীর্ষের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাবতে ভাবতে নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। তবে কক্ষের দরজার নিকটে আসতেই তার পথ আগলে দাঁড়াল রিমা। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
“কোথায় গিয়েছিলি তুই?”
ত্রয়ী শীর্ষের কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল। দ্বিধাদ্বন্দ্বে জর্জরিত হয়ে পড়লো তার ভিতরটা। শীর্ষ কলেজ থেকে তাকে নিয়ে গিয়েছিল এ কথা রিমাকে বলাটা কি ঠিক হবে? এমনিই এই মেয়েটা তাকে পছন্দ করে না, সর্বদা তার ক্ষুত ধরার জন্য মুখিয়ে থাকে। এখন আবার যদি শোনে তার ভাই ত্রয়ীকে কলেজ থেকে নিয়ে গিয়েছিল এবং এতটা সময় তার সাথেই ছিল ত্রয়ী তাহলে না আবার কোনো ঝামেলা বাঁধায়। মেয়েটা আমতা আমতা শুরু করল। রিমার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে কি জবাব দেওয়া যায় মস্তিষ্ক হাতরে খুঁজতে শুরু করল তা। এর মধ্যে পিছন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো,
“আমার সাথে গিয়েছিল ও।”
ত্রয়ী কিছুটা ভরকে গেল। চমকে উঠে তাকালো পিছন ঘুরে। রিমাও তাকালো শীর্ষের দিকে। চকিত কণ্ঠে শুধাল,
“তোর সাথে গিয়ে গিয়েছিল?”
শীর্ষ পা চালিয়ে এসে দাঁড়াল রিমার মুখোমুখি। ত্রয়ীর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার দৃষ্টি দিলো নিজের বোনের দিকে। বেশ শান্ত কণ্ঠেই জবাব দিলো,
“হ্যা, কোনো সমস্যা?”
“না, সমস্যার কি আছে? কিন্তু ও কেন গিয়েছিল তোর সাথে?”
“কাজ ছিল।”
“কি কাজ?”
শীর্ষের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজের দেখা মিললো। থমথমে কণ্ঠে সে বলল,
“তোকে কইফিয়ৎ দিতে হবে?”
“না কইফিয়ৎ না….”
“তাহলে?”
“কিছু না। আমি আসছি।”
রিমা আর দাঁড়াল না। শীর্ষের অভিমুখে দাঁড়িয়ে খুব বেশি প্রশ্ন করার, রাগ দেখানোর বা জেড়া করা কোনোটার সাহসই নেই তার। রিমা শেষ একবার তাকালো ত্রয়ী এবং শীর্ষের দিকে অতঃপর চলে গেল নিজ কক্ষে। রিমা চলে যাওয়ার পর ত্রয়ীও আর দাঁড়াল না। আড় চোখে একবার শীর্ষের দিকে তাকিয়ে ঢুকলো কক্ষে।
বেশ সময় নিয়ে গোসল সেড়ে বেরুলো ত্রয়ী। চুলগুলো ভেজা। লম্বা চুলের ডগা বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় টুপটাপ পানি ঝড়ছে। ত্রয়ী একটা তোয়ালে তুলে মাথা মুছতে মুছতে গিয়ে দাঁড়াল বারান্দায়। হঠাৎ তার স্মরণে এলো শীর্ষের কথা। লোকটা আজ যে পরিমাণ মা’রা’মা’রি করেছে। বাহ্যিকভাবেই তো কপাল আর ঠোঁটে ক্ষত দেখলো। এরপর যদি আরও কোথাও ব্যথা পেয়ে থাকে। তখন গাড়িতে ঐ ঘটনার পর আর তেমন কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি। ত্রয়ী চিন্তিত হলো, অস্থির হয়ে উঠল তার হৃদয়। হাতের তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে ব্যস্ত পায়ে সে এসে দাঁড়াল শীর্ষের দরজার অভিমুখে। দরজাটা চাপানো। ত্রয়ী হাত উঁচিয়ে দরজায় টোকা দিলো। সাথে সাথে ভিতর থেকে ভেসে এলো,
“কে?”
“আমি।”
শীর্ষ কেবলই তার মোবাইলটা হাতে নিয়েছিল ত্রয়ীকে কল করবে বলে। কিন্তু মেয়েটা তো তার আগেই হাজির। শীর্ষ মোবাইল তার বিছানার পাশে টেবিলের উপরে রাখতে রাখতে বলল,
“ভিতরে আয়।”
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো ত্রয়ী। শীর্ষ ওষ্ঠ বাঁকিয়ে হাসলো। ত্রয়ীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“ব’ল’দী থেকে তোর একটু উন্নতি হয়েছে দেখছি। ডাকার আগেই চলে এলি।”
ত্রয়ী অপমানিত বোধ করল। সে কত চিন্তা নিয়ে অস্থির হয়ে লোকটাকে দেখতে এলো আর এই লোক কিনা তাকেই বলছে ব’ল’দী। এর জন্যই মানুষের ভালো করতে নেই। ত্রয়ীর মুখশ্রী থমথমে রূপ ধারণ করল। ভারী কণ্ঠে সে বলল,
“মা’রা’মা’রি করে তো কপাল, ঠোঁট ফাটিয়েছেন। আরও কোথাও ব্যথা পেয়েছেন কিনা সেটা দেখতে এসেছিলাম।”
“আর কোথাও ব্যথা পাইনি।”
“ওহ, তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।”
ত্রয়ী পিছন ঘুরে পা বাড়ালো। অমনি শীর্ষ হাত টেনে ধরলো তার। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“আমি বললাম আর তুই তা বিশ্বাস করে নিলি? এমনও তো হতে পারে আমি তোকে মিথ্যা বলেছি।”
“মিথ্যা কেমন বলবেন?”
“ব্যথা লুকানোর জন্য।”
“ব্যথা কেন লুকাবেন?”
শীর্ষ দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দিলো,
“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।”
“ওহ।”
ত্রয়ীর ছোট জবাব। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো শীর্ষ। গায়ের টিশার্টটা খুলে হাতে নিল। ত্রয়ীর পানে এক পলক তাকিয়ে সেটা ছুঁড়ে ফেলল মেঝেতে। সাথে সাথে তার ফর্সা মেদহীন শরীরটা বেরিয়ে পড়ল। ছেলেটার শরীরটা শক্তপোক্ত পেটানো। প্রতিদিন ব্যায়াম করে বোধহয়। পেটের পেটের কাছে আবার দুই একটা লাল লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। ত্রয়ী হাঁসফাঁস করে উঠল। লাজে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল তার দুই গাল জুড়ে। দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে মেঝের দিকে তাকাল সে। শীর্ষ আর একটু এগিয়ে এলো ত্রয়ীর নিকটে। শীতল কণ্ঠে বলল,
“তাকা আমার দিকে।”
ত্রয়ী একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইল। তাকাল না চোখ তুলে। শীর্ষ ধমকে উঠল। কণ্ঠ উঁচিয়ে বলল,
“কি বলেছি শুনতে পাসনি? তাকা আমার দিকে।”
ত্রয়ী কাচুমাচু করল। ঢোক গিলে তাকাল শীর্ষের দিকে। শীর্ষ নিজের বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুলটা তুলে ইশারা করল বুকের দিকে। থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“এটা কি?”
ত্রয়ীর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবে তাকাল শীর্ষের বুকের দিকে। দেখতে পেল একটা কুচকুচে কালো তিল। মেয়েটা আবার দৃষ্টি নামিয়ে নিল। মেঝের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
“তিল।”
“গাঢ় একটা চু’মু খা তো এখানে।”
ত্রয়ী চমকালো, ভরকালো। সে এখানে এসেছিল ব্যথার কথা জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু এ ব্যাটা তো এখন নিজের ব্যথাকে চেপে দিয়ে চু’মু খাওয়ার কথা বলছে। ত্রয়ী চোখ বড়ো বড়ো বড়ো করে তাকলো শীর্ষের দিকে। শীর্ষ কপাল টান টান করল। ওষ্ঠ বাঁকিয়ে বলল,
“ওভাবে তালের আটির মতো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। এতে তোর চু’মু মাফ হবে না। তাড়াতাড়ি চু’মু খা এখানে।”
ত্রয়ী আমতা আমতা শুরু করল। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
“আআমি পারবো না।”
“স্বামীর আদেশ অমান্য করতে তোর একটুও বুক কাঁপবে না বালির বস্তা?”
ত্রয়ী ভীত হলো। বাঙালি মেয়েদের বিয়ের পরে স্বামীই তো সব। তার উপরে ত্রয়ীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা গ্রামে। সেখানে সে সর্বদাই নারীদের অতি স্বামী ভক্তি দেখে এসেছে। ত্রয়ী আমতা আমতা শুরু করল। ইতস্তত করে বলল,
“না মানে….”
“চু’মু না দিলে কিন্তু আমি অভি’শাপ দেব। যা করবি ভেবে চিন্তে করিস। মুখ থেকে একবার অভিশাপ বেরিয়ে গেলে কিন্তু আর তা ফেরত নেওয়া যায় না।”
ত্রয়ী দ্বিধাগ্রস্ত হলো। অভি’শাপে ভীষণ ভয় তার। এমনিই তো তার জীবনটা অভিশপ্ত। ছোটবেলায় বাবাকে হারালো, মা ছেড়ে গেল। বড়ো হলো দাদীর কাছে। সেও চলে গেল তাকে ফেলে। এখন একটু সুখের দেখা মিলেছে তাও যদি শীর্ষের অভি’শাপে হারিয়ে যায়। ত্রয়ী একবার ভাবলো সে চু’মু’টা দিবে। কিন্তু শীর্ষের নগ্ন বক্ষ ভাবতেই তার ভিতরটা লজ্জায় কুঁকড়ে উঠছে। কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ত্রয়ীকে একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু বাঁকালো শীর্ষ। হুমকি দিয়ে বলল,
“চু’মু খাবি নাকি অভি’শাপ দেব?”
ত্রয়ী ব্যস্ত হলো। তাড়াহুড়ো করে বলল,
“না, না অভি’শাপ দিবেন না দয়া করে। আমি এখনই চু’মু খাচ্ছি।”
“তাড়াতাড়ি কর।”
ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। ঢোক গিলে এগিয়ে গেল শীর্ষের কাছে, খুব কাছে। এরপর পা দুটো উঁচু করে নিজের ওষ্ঠজোড়া নিল শীর্ষের বক্ষের তিলটার নিকটে। মেয়েটার উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তার নগ্ন বক্ষে। শীর্ষের দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে উঠল। অদ্ভুত এক অনুভূতি আষ্টেপৃষ্ঠে ধরলো তাকে। পুরুষালী ইচ্ছেরা জাগ্রত হলো তড়িঘড়ি করে। ত্রয়ী আলতোভাবে নিজের দুই ওষ্ঠ ছোঁয়ালো শীর্ষের তিলে। পরপরই আবার সরে আসতে নিল। কিন্তু তা কি আর শীর্ষ হতে দেয়? সে তৎক্ষণাৎ ত্রয়ীর মাথার পিছনে হাত দিয়ে থামিয়ে দিল, টেনে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে। ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল,
“শুধু বুকে চু’মু খেলে হবে? ঠোঁট দুটো আছে কি করতে? এই ঠোঁট দুটো সর্বক্ষণ শুধু তোর ছোঁয়া চায়।”
লজ্জা, অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করে উঠল ত্রয়ী। শীর্ষের নিকট থেকে দূরে সরে যেতে চাইল সে। শীর্ষ তৎক্ষণাৎ তার মাথার পিছনের ভাগটা চেপে ধরলো। টেনে একটু খানি উপরে তুললো ত্রয়ীর ছোটখাটো দেহটা। হকচকিয়ে উঠল মেয়েটা। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল যেন। পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ মুখ খিচে ধরলো সে, দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো শীর্ষকে। সাথে সাথে শীর্ষের হাত আলগা হয়ে এলো। কণ্ঠে ‘আহহ’ সূচক ব্যথাতুর ধ্বনি তুলে দুই কদম পিছিয়ে গেল সে। ত্রয়ী ভরকালো। এই লোকের আবার কি হলো? সে তো এত জোরেও ধরেনি যে ব্যথা পেতে পেরে। ত্রয়ী অস্থির হয়ে উঠল। ব্যস্ত কণ্ঠে শুধাল,
“কি হয়েছে? আবার কোথায় ব্যথা পেলেন?”
ত্রয়ী কথাটা বলতে বলতে শীর্ষের পিছনের দিকে এলো। অমনি চমকে উঠল সে। শীর্ষের পিঠে আড়াআড়ি ভাবে একটা দাগ। মনে হচ্ছে যেন কেউ মোটা লাঠি দ্বারা বেশ শক্তপোক্তভাবে আঘাত করেছে। জায়গাটা কেমন কালো হয়ে গেছে, বোধ হয় রক্ত জমাট বেঁধেছে। ত্রয়ীর অস্থিরতা বাড়লো। আলতোভাবে সে জায়গাটায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“ইসসস কি অবস্থা। আপনি বসুন আমি ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছি।”
শীর্ষ বসলো না বরং উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। ত্রয়ী দ্রুত ফাস্ট এইড বাক্স নিয়ে বসলো তার পাশে। দেরি না করে আলতোভাবে ঔষধ লাগিয়ে দিতে শুরু করল ব্যথা স্থানে। ঔষধ লাগাতে লাগাতে অসাবধানতাবশত হঠাৎ একটু চাপ পড়লো সেখানে। অমনি চ্যাচিয়ে উঠল শীর্ষ,
“আহহ, বালির বস্তা ব্যথা পাচ্ছি।”
ত্রয়ী ভেংচি কাটলো। ওষ্ঠ বাঁকিয়ে বলল,
“আপনি না আমাকে একদিন বলেছিলেন ব্যথাতেই আপনার শান্তি। তাহলে এখন শান্তি নিন। ব্যথা ব্যথা করছেন কেন?”
পরপর ত্রয়ী ইচ্ছে করেই আবার চাপ প্রয়োগ করল ব্যথার স্থানে। ফের চ্যাচিয়ে উঠল শীর্ষ,
“বালির বস্তার বাচ্চা তোর হাত কিন্তু আমি ভেঙে দেব।”
“কেন আপনার তো আমাকে আরও ধন্যবাদ দেওয়ার কথা। কত শান্তি দিচ্ছি আপনাকে আমি।”
ত্রয়ী আবারও শীর্ষের পিঠে চাপ দিতে উদ্যত হলো। অমনি ঘুরে গেল শীর্ষ। চেপে ধরলো ত্রয়ীর হাত খানা। শীতল কণ্ঠে বলল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৪৯
“এখন আর ব্যথায় শান্তি পাই না। শান্তি পাই তোর স্পর্শে।”
ত্রয়ী লাজনম্র হলো। নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল শীর্ষের হাতের ভাঁজ থেকে। মিনমিনে কণ্ঠে শুধাল,
“আর কোথায় ব্যথা পেয়েছেন দেখি।”
শীর্ষ চোখে মুখে নিরীহ ভাব ফুটিয়ে তুললো। পলক ঝাপটে বলল,
“তোর সামনে টিশার্ট বা শার্ট খুলতে লজ্জা না লাগলেও প্যান্ট খুলতে লজ্জা লাগবে আমার।”