অনুরাগে তুই পর্ব ৫১

অনুরাগে তুই পর্ব ৫১
সাদিয়া শওকত বাবলি

পলক ঝাপটে বলল,
“তোর সামনে টিশার্ট বা শার্ট খুলতে লজ্জা না লাগলেও প্যান্ট খুলতে লজ্জা লাগবে।”
ত্রয়ীর কান দুটো গরম হয়ে উঠল। লজ্জালু আভা ছড়িয়ে পড়লো চোখ মুখ জুড়ে। এই লোক দিন দিন নির্লজ্জতার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যা খুশি বলে বলছে। কিছু মুখে আটকায় না। না, এখানে আর থাকা যাবে না। তাহলে আর কি কি যে শুনতে হবে কে জানে! ত্রয়ী উঠে দাঁড়াল। আমতা আমতা করে বলল,
“আমি তাহলে এখন আমার রুমে যাই।”
শীর্ষ তৎক্ষণাৎ মেয়েটার হাত টেনে আবার বসিয়ে দিলো বিছানায়। একটু এগিয়ে নিজের মাথাটা রাখলো ত্রয়ীর কোলে। অতঃপর মেয়েটার হাতটা নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে বলল,

“যাবি তো। আগে শোন আমার কথা‌।”
“কি?”
“শয়’তান’টা এমনভাবে আঘাত হেনেছিল আর একটু হলে আমার ভবিষ্যতে লাল বাত্তি জ্বলে যেতো। ভাগ্যিস আমি সঠিক সময় সরে গিয়েছিলাম। নয়তো তোর আর ঐ জীবনে মা ডাক শোনা হতো না।”
ঠিক এর জন্যই ত্রয়ী এখানে আর বসতে চায়নি। লোকটার মুখ থেকে দিন দিন লাগাম হারিয়ে যাচ্ছে। ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। ইতস্তত করে বলল,
“আপনি দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছেন।”
“বিয়ের পর সবাই একটু আধটু নির্লজ্জ হয়। বিয়ের আগে নির্লজ্জ হলে তো আবার লু’চু বলে গা’লি দিতি। চ’ড় থা’প্প’ড়ে’র’ও ভয় ছিল।”
শীর্ষের কথা শেষ হতে না হতেই দরজায় টোকা পড়লো। সাথে ভেসে এলো পন্নার কণ্ঠস্বর,
“ভাইয়া নিচে আয়। মা তোকে খেতে ডাকছে।”
শীর্ষ বিরক্ত হলো। কপাল কুঁচকে জবাব দিলো,
“আসছি, যা তুই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চারদিকে শহুরে ব্যস্ততা। জনমানবের হইহই রইরই কলরব। মেহের আজও কলেজ বাদ দিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে আলভীর সাথে। আজ আর দু’জনে কোথাও যাওয়া বা দু’জন একান্তে বসে সময় কাটানোর কোনো চিন্তা চেতনা নেই। আজ তারা পরিকল্পনা করেছে বাইকে করে পুরো শহর ঘুরবে। তারপর কোনো রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার সেড়ে বাড়িতে ফিরবে।
কিছুটা সময় গড়াতেই জ্যামে পড়লো আলভী এবং মেহের। ঢাকা শহরের জ্যাম, এ জ্যাম কখন ছুটবে কে জানে। আলভী সম্মুখের দিকে দৃষ্টি দিলো। তাদের অভিমুখে যেন গাড়ির মেলা বসেছে। এদিকে আকাশে তেজস্বী সূর্য। গরমে দিশেহারা চারপাশ। স্বল্প সময়েই ঘেমে নেয়ে একশা অবস্থা আলভী এবং মেহেরের। দু’জনেই দু’জনের মাথার হেলমেট খুলে হাতে নিল। মেহের ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জবাব দিলো,

“একে তো গরম, তার উপর জ্যাম।”
“এ জ্যাম খুব তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেও মনে হচ্ছে না।”
আলভীদের পাশেই একটি গাড়িতে ছিলেন সরোয়ার চৌধুরী। জ্যামের অবস্থা পরিদর্শনের তাগিদে গাড়ির জানালা খুলে বাইরে দৃষ্টি দিয়েছিল তিনি। চারদিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ তার নজর পড়লো আলভী এবং মেহেরের দিকে। বিস্মিত হলেন সরোয়ার চৌধুরী। আলভীকে চিনে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না তাকে। শীর্ষ তার শত্রু। মানুষ নিজের বন্ধুর তুলনায় শ’ত্রু’র খোঁজ খবর রাখে অধিক। শ’ত্রু’র প্রতিটি পদক্ষেপকে সে শিয়ালের ন্যায় স্থীর মস্তিষ্কে পর্যবেক্ষণ করে। সরোয়ার চৌধুরীও তার ব্যতিক্রম নয়।

তিনিও শীর্ষ, তার বন্ধু এবং তার সাহায্যকারীদের সম্পর্কে ইতোমধ্যে খোঁজ খবর নিয়েছেন। সেই সুবাদে আলভীও তার শ’ত্রু’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এই ছেলের সাথে তার মেয়ে কি করছে? আবার দুজন হেসে হেসে কি যেন বলছে। সরোয়ার চৌধুরীর বিচক্ষণ মস্তিষ্ক ধরতে পারলেন সবটাই। তার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠল যেন। তার মেয়ে শেষ পর্যন্ত কিনা তার শ’ত্রু’র সাথে প্রেম করছে? এর জন্য মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি? আবার এত আদর যত্ন করে, এত অর্থ নষ্ট করে বড়োও করেছেন। সরোয়ার চৌধুরী খ্যাপে গেলেন। তীব্র রাগ নিয়ে গাড়ির দরজাটা খুললেন আলভী এবং মেহেরের নিকট যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এর মধ্যেই জ্যাম ছেড়ে দিলো। সামনের গাড়িগুলো ধীর গতিতে এগুতে শুরু করল অভিমুখে। সরোয়ার চৌধুরী আর নামলেন না, বসে রইলেন গাড়িতে। যদিও একটু এগিয়ে আবার গাড়িগুলো থেমে গেল তবে সরোয়ার চৌধুরী আর খুঁজে পেলেন না আলভী এবং মেহেরকে। অসংখ্য গাড়ির মধ্যে কোথায় যেন হারিয়ে গেল আলভীর ছোট বাইকটা।

দুপুরের তপ্ত রৌদ্র। চারদিকে কেমন একটা গুমোট ভাব বিরাজমান। মেহের পরিকল্পনা অনুযায়ী আলভীর সাথে দুপুরের খাবার সেড়েই বাড়িতে ফিরলো। ফুরফুরে মেজাজে বসার কক্ষে পা রাখতেই গুরু গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
সরোয়ার চৌধুরী বেশ অনেকক্ষণ বাড়িতে ফিরেছেন। সেই থেকে বসে আছেন বসার কক্ষে। অপেক্ষা মেয়ের আসার। মেয়ে ফিরতেই তার দিকে ছুঁড়ে দিলেন উক্ত প্রশ্ন। মেহের থমকে দাঁড়াল। প্রথম দিকে বাবার প্রশ্ন তাকে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত করে তুললেও পরক্ষণেই আবার নিজেকে সামলে নিল সে। ওষ্ঠ জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
“কেন, কলেজে।”

সরোয়ার চৌধুরী উঠে এসে দাঁড়ালেন মেহেরের মুখোমুখি। থমথমে কণ্ঠে বললেন,
“তোমার কি মনে হয় আমি বোকা? ঘাসে মুখ দিয়ে চলি?”
মেহের চমকালো। সাথে ভীত হলো তার হৃদয়। তবে কি তার বাবা সব জেনে গেল? কিন্তু কিভাবে? মেহের তবুও আলভীর বিষয়টা ঢাকার চেষ্টা করল। আমতা আমতা করে বলল,
“মানে? তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না বাবা।”
সরোয়ার চৌধুরী এবারে আর কথা ঘুরালেন না। সরাসরিই প্রশ্ন করলেন,
“আলভীর সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”
মেহের হকচকাল। এর মানে তার ধারণাই ঠিক। সরোয়ার চৌধুরী আলভী এবং তার সম্পর্কে জেনে গেছেন সব। এখন কি হবে? তার বাবা কি এ নিয়ে কোনো ঝামেলা শুরু করবে? মেহের এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,

“না মানে না….”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললেন সরোয়ার চৌধুরী। গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,
“কতদিন ধরে চলছে এসব?”
মেহের মাথা নুইয়ে নিল। বুঝলো বাবার কাছে আর কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। এতে ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না। মেহের জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। একটু সাহস করে বলল,
“এই কিছুদিন। কিন্তু বাবা….আলভী খুব ভালো ছেলে। তুমি একবার ওর সাথে কথা বলে দেখো তোমার পছন্দ হবে নিশ্চিত।”
“তোমার ওকে চেনাতে হবে না। ওকে তোমার থেকে আমি ভালো চিনি।”
মেহের অবাক হলো। চোখে মুখে কিঞ্চিৎ বিস্ময়ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,

“তুমি ওকে চেনো?”
পরপর মেহেরের ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠল। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“তাহলে তো ভালোই হলো। তোমাদের আগে থেকেই পরিচয় আছে।”
“শুধু পরিচয় না শত্রুতাও আছে। তুমি জানো ও আর ওর বন্ধুদের কারণে আমার কতটা ক্ষতি হয়েছে, আমার ব্যবসায় কতটা লোকসান হয়েছে।”
এই টুকু বলে থামলেন তিনি। দম নিয়ে ফের বললেন,
“তুমি অমার মেয়ে হয়ে কিনা আমার শ’ত্রু’র সাথে প্রেম করছো। ভাবতেও অবাক লাগছে। এর জন্য তোমাকে আমি বড়ো করেছি? এত আদর যত্ন দিয়েছি?”
“মানে!”

“মানে তোমার জন্মদিনের দিন অতিথি সেজে ওরা আমার বাড়িতে ঢুকেছিল। আমার ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ সব কাগজ চু’রি করে নিয়ে গেছে। ফলস্বরূপ লসে পড়তে হয়েছে আমাকে। তাছাড়া ছেলে হিসেবেও ও ভালো না। সারাদিন গু’ন্ডা’মি মা’স্তা’নি করে বেড়ায়। কয়েকদিন আগেও কার সাথে যেন মা’রা’মা’রি করেছে।”
মেহেরের স্মরণে এলো তার জন্মদিনের কথা। সেদিন আলভী এসেছিল তো। ভুলবশত তার কক্ষেও ঢুকে পড়েছিল। সেখান থেকেই তো তাদের পরিচয়। কিন্তু আলভী তার বাবার ব্যবসার কাগজ চু’রি করেছে, গু’ন্ডা’মি মা’স্তা’নি করে বেড়ায় এই কথাগুলো বিশ্বাস করতে কেমন কষ্ট হলো তার। তাদের প্রেমটা অল্প কয়েকদিনের হলেও পরিচয় তো বেশ অনেকদিনের। এর মধ্যে মেহের খারাপ কিছু দেখেনি আলভীর মধ্যে। মেহের বাবার কথার প্রতিবাদ জানালো। কণ্ঠে জোর দিয়ে বলল,

“তোমার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে। আলভী এমন ছেলে নয় বাবা।”
“এখন তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে কে কেমন ছেলে?”
“ঠিক তেমন নয়। কিন্তু আলভীর সাথে আমার পরিচয় বেশ অনেক দিনের। এই এতগুলো দিনের মধ্যে তাকে কখনো আমি খারাপ দেখিনি।”
সরোয়ার চৌধুরী চোখে মুখে তীক্ষ্মতা নিয়ে তাকালেন মেয়ের মুখ পানে। মেহেরের মধ্যে তিনি আলভীর জন্য অগাত বিশ্বাস এবং ভালোবাসা টের পেলেন। তিনি বুঝলেন মেয়েকে এভাবে ফিরানো সম্ভব নয়। আর সবচেয়ে বড়ো কথা নিজের সন্তানদের সাথে তিনি ঝামেলায় জড়িয়ে তাদের চোখে খারাপ হতে চান না। এমনি সরোয়ার চৌধুরী বাহিরে যেমনই হোক না কেন নিজের দুই ছেলেমেয়ের নিকট ফেরেশতা। সরোয়ার চৌধুরী একটু সময় নিয়ে ভাবলেন। কণ্ঠে কোমলতা এটে বললেন,

“আলভীকে আমার সাথে দেখা করতে বলো। তোমাদের বিষয়ে কথা বলবো।”
মেহেরের চোখ মুখ চকচক করে উঠল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠল তার হৃদয়। সরোয়ার চৌধুরী যে এত সহজে সবটা মেনে নিবে ভাবতেও পারেনি মেহের। মেহের কণ্ঠে প্রফুল্লতা নিয়ে বলল,
“সত্যি বলছো তুমি? তুমি সবথেকে ভালো বাবা। আমি কালই আলভীকে বলবো তোমার সাথে দেখা করতে।”

কলেজ শেষে আরফার সাথে কথা বলতে বলতে গেট থেকে বেরিয়ে এলো ত্রয়ী। কায়সার গেটের সামনেই দাঁড়ানো ছিল। ত্রয়ীকে বেরিয়ে আসতে দেখেই এগিয়ে গেল তার দিকে। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“কেমন আছো?”
ত্রয়ী বিরক্ত হলো। এই লোকটাকে গতকাল সে প্রত্যাখ্যান করল, শীর্ষের সাথে মা’রা’মা’রি হলো তারপর আজ আবার এসেছে। এর কি লাজ লজ্জা বলতে কিছু নেই। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়লো ত্রয়ীর। কণ্ঠে কিছুটা ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
“আপনি আজ আবার এসেছেন?”
“কি করবো বলো? তোমাকে ছাড়া যে মন টিকে না কোথাও।”
“না টিকলেও টিকাতে হবে।”
“পারবো না।”
“দেখুন….”

“তুমি দেখো আমাকে। কোন দিক থেকে খারাপ আমি? টাকা-পয়সা, চেহারা, লম্বা, ক্ষমতা সব আছে আমার। তারপরেও কেন তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো? একটু ভালোবাসার চেষ্টা করো আমাকে। তুমি চেষ্টা করলেই ভালোবাসতে পারবে।”
কায়সারের কথার পরিপ্রেক্ষিতে ত্রয়ী কিছু বলবে তার আগেই আরফা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“যে না চেহারা, নাম রাখছে পেয়ারা।”
কায়সার খ্যাপে গেল। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“এই মেয়ে এই একদম কথার মধ্যে বাম হাত ঢুকাবে না। তাহলে হাতটাই কেটে দেব।”
আরফা সাথে সাথে নিজের বাম হাতটা বাড়িয়ে দিলো। কপাল টান টান করে বলল,
“নিন কাটুন। দেখি আপনার কত ক্ষমতা।”

কায়সার কটমট করল আরফার কথায়। এই মেয়েটাকে তার এত পরিমাণ বিরক্ত লাগে। সব সময় তার কথার মধ্যে বাম হাত দেয়। আর ত্রয়ীটাও এই মেয়েটাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকে না। কায়সার আরফার হাতটা ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো। রোষ পূর্ণ কণ্ঠে বলল,
“দেখো তোমার সাথে আমি কথা বলতে কিংবা ঝগড়া করতে আসিনি। সুতরাং আমার কথার মধ্যে বাম হাত দিও না।”
“দেব, কি করবেন আপনি?”
কায়সার দাঁতে দাঁত পিষে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। তবে জবাব দিলো না আরফার কথার। বরং সে দৃষ্টি দিলো ত্রয়ীর দিকে। নিজেকে রাগকে কিছুটা সংযত করে বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি ত্রয়ী। আমাকে দয়া করে ফিরিয়ে দিও না। অনেক আশা নিয়ে আমি তোমার কাছে এসেছি।”

ত্রয়ীর কেমন যেন খারাপ লাগলো। ভালোবাসা তো কোনো পাপ নয়। আর এটা কখন কার সাথে হয়ে যায় কেউ জানে না। ভালোবাসা একটি হৃদয় ঘটিত ব্যাপার। আর হৃদয় যেকোনো সময় যেকারো জন্য স্পন্দিত হতে পারে। এখানে কায়সারের কোনো দোষ নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে যদি কায়সারকে ত্রয়ী না থামায়, উলটো আরও প্রশ্রয় দেয় তখন তার দোষ হবে। আর তাছাড়া ত্রয়ী বিবাহিত। তার পক্ষে অন্য কোনো পুরুষকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। এই কথা যদি কায়সারকে না জানানো হয় তাহলে হয়তো লোকটা আশা নিয়ে থাকবে। সে ভাববে ত্রয়ী যেহেতু একা তখন তার সুযোগ আছে। কাউকে এভাবে আশায় রাখাটা উচিত হবে না। ত্রয়ী জোরে একটা নিঃশ্বাস নিল। এরপর কণ্ঠে জোর দিয়ে বলল,

“আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।”
আরফা এবং কায়সার দুজনেই চমকালো। আরফাকে এখনো বলা হয়নি তার এবং শীর্ষের বিয়ের কথা। সে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। বিস্মিত কণ্ঠে শুধাল,
“কি তোর বিয়ে হয়ে গেছে?”
ত্রয়ী উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে ইতিবাচক জবাব দিলো। কায়সারের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল। বুকের ভিতরে যেন দহনের আগুন জ্বলে উঠল। নিজের অজান্তেই দুই কদম পিছিয়ে গেল সে। আরফা চোখ বড়ো বড়ো করেই ফের শুধাল,
“কি? কবে? আর কার সাথে? আমাকে তো এর কিছুই জানাসনি।”
ত্রয়ী মিনমিনে কণ্ঠে জবাব দিলো,

“শীর্ষ ভাইয়ের সাথে হয়েছে। এই কয়েকদিন আগে। সে অনেক কথা। তোকে পরে সব খুলে বলবো।”
কায়সারের স্মরণে এলো শীর্ষও বলেছিল তার সাথে ত্রয়ীর বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়েটা কি সত্যিই হয়েছে? তার কান অব্দি না হয় বিয়ের কথা পৌঁছায়নি। কিন্তু আরফার কানে তো পৌঁছানোর কথা ছিল। ত্রয়ীর প্রাণের বান্ধবী মেয়েটার। কিন্তু আরফার মুখাবয়ব দেখে বা প্রশ্ন শুনে তো মনে হচ্ছে না সে কিছু জানতো। আচ্ছা এসব শীর্ষের সাজানো নয়তো? তাই হবে হয়তো। শীর্ষ নিশ্চয়ই ত্রয়ীকে শিখিয়ে দিয়েছে এই বিয়ের কথা বলতে আর মেয়েটাও সেই শেখানো বুলি আওড়াচ্ছে। কায়সার নাক টানলো। ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে শুধাল,

“তুমি মিথ্যা বলছো তাই না?”
“মিথ্যা কেন বলতে যাব? সত্যিই আমার সাথে শীর্ষ ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে….”
ত্রয়ী কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলো না। তার আগেই কায়সার তেড়ে এলো। দুই হাতে এক প্রকার খামচে ধরলো মেয়েটির দুই বাহু। গভীর ক্রোধ নিয়ে বলল,
“তুমি মিথ্যা বলছো। তোমার কারো সাথে বিয়ে হয়নি। এ নিশ্চয়ই ঐ শীর্ষ তোমাকে শিখিয়ে দিয়েছে তাই বলছো।”
কায়সারের এই রূপ দেখে আঁতকে উঠল ত্রয়ী এবং আরফা দু’জনেই। সাথে দুই বাহুর ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল ত্রয়ী। তবুও নিজেকে সামলে মেয়েটা কোনো রকমে উচ্চারণ করল,
“না সত্যিই….”

“কি সত্যি, কি? তুমি আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।‌ তুমি আমাকে ভালো না বাসো, অন্য পুরুষের হতে পারো না।”
আরফা অস্থির হলো। বান্ধবীর এই অবস্থা দর্শনে ভীচ হলো তার হৃদয়। দ্রুত সে ত্রয়ীর বাহুতে থাকা কায়সারের এক হাত ধরলো। টেনে হাতটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
“ছাড়ুন, ছাড়ুন ওকে।”
কায়সার ফুঁসে উঠল। ছিটা মে’রে সরিয়ে দিলো আরফাকে। চ্যাঁচিয়ে বলল,
“তোকে বলেছি না আমাদের মধ্যে নাক গলাবি না। তারপরেও বারবার কেন আসিস? নির্লজ্জ মেয়ে মানুষ কোথাকার।”
কথাটা বলে পরপর সে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। মেয়েটার বাহু ছেঁড়ে এবারে একটা হাত ধরলো শক্ত করে। কণ্ঠে কাঠিন্য এটে বলল,
“লাগবে না তোর ভালোবাসা আমার। শুধু তোকে পেলেই চলবে।”
কায়সার ত্রয়ীর হাত টেনে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। ত্রয়ী ভীত হলো। কায়সার তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে? তবে কি লোকটার মনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে? না, না ত্রয়ী শীর্ষকে ব্যতীত আর কাউকে ভাবতেও পারে না। মেয়েটার গলা শুকিয়ে এলো। সে নিজেকে কায়সারের বাঁধণ থেকে মুক্ত করতে ব্যস্ত হলো। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ছাড়ুন বলছি, ছাড়ুন।”
আরফাও ছুটে এলো। কায়সারের সামনে রুখে দাঁড়ালো সে। অস্থির হয়ে বলল,
“ছাড়ুন ওকে। আপনি ওকে এভাবে নিয়ে যেতে পারেন না। শীর্ষ ভাইয়া জানতে পারলে কিন্তু আপনাকে জীবিত রাখবে না।”
কায়সার কেমন যেন উন্মাদ হয়ে উঠল। ধাক্কা মে’রে আরফাকে ফেলে দিলো মাটিতে। আঙ্গুল তুলে বলল,
“তোর শীর্ষ ভাই আমার কোন বা’ল ফালাতে পারে আমিও তা দেখে ছাড়বো। ত্রয়ী শুরু আমার, শুধু আমার।”
কথাটা বলে কায়সার ত্রয়ীকে টেনে নিয়ে গেল একটা গাড়ির নিকট। ত্রয়ী কেঁদে দিলো। অনুরোধের সুরে বলল,
“আমাকে ছাড়ুন দয়া করে। সত্যিই আমার আর শীর্ষ ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে।”

অনুরাগে তুই পর্ব ৫০

কোনো অনুরোধ গলাতে পারল না কায়সারের মনকে। ত্রয়ী এবং আরফা দু’জনেই চ্যাঁচালো। সাহায্য চাইলো কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না। এমনিই সময়টা দুপুর হওয়ায় তেমন মানুষ ছিল না কলেজের সামনে। আর যে কয়জন ছিল তারাও কায়সারের ভয়ে গুটিয়ে রইল। কায়সার যে এমপির সাথে থাকে তা এলাকার সবাই জানে, তার ক্ষমতাকেও ভয় পায় তারা। এই মুহূর্তে কেউ কিছু বললে তাদের যদি কোনো ক্ষতি করে দেয় কায়সার। সেই ভয়ে সবাই চুপচাপ দেখলো শুধু পরিস্থিতি, কেউ কিছু বলার সাহস পেল না। কায়সার এক প্রকার টেনে হিচড়ে ত্রয়ীকে গাড়িতে তুললো। ত্রয়ীর আকুতি, মিনতি, অনুরোধ, কান্নাকে উপেক্ষা করেই গাড়িটা সাঁই সাঁই করে ছুটলো অভিমুখে।

অনুরাগে তুই পর্ব ৫২