অনুরাগে তুই পর্ব ৫৩
সাদিয়া শওকত বাবলি
এই টুকু বলে থামলো কায়সার। কাতর কণ্ঠে ফের বলল,
“আমি কি শীর্ষের থেকে খুব বেশি খারাপ ছিলাম ত্রয়ী? তাহলে তুমি আমার কেন হলে না?”
ততক্ষণে রবি, নয়ন, আলভী এবং তাদের দলবল এসে উপস্থিত হয়েছে সেখানে। তারা এসেই সবাই মিলে শীর্ষকে ছাড়িয়ে নিল কায়সারের লোকদের থেকে। ছাড়া পেয়ে শীর্ষ ফুঁসে উঠল আরও। তেড়ে গিয়ে লাথি বসালো কায়সারের পিঠে। কায়সার মুখ থুবড়ে পড়লো মেঝেতে। তবে বলল না কিছুই। কেন যেন তার কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না আর, ইচ্ছে হলো না শীর্ষের সাথে কোনোরূপ যু’দ্ধে জড়াতে। বুকের ভিতরটা ভীষণ জ্বলছে। এই মুহূর্তে তার হৃদয়ের ব্যথার নিকট শীর্ষের এই বাহ্যিক আঘাত যেন কিছুই নয়। শীর্ষ গভীর ক্রোধ নিয়ে ফের লাথি বসালো কায়সারের শরীরে। রোষ পূর্ণ কণ্ঠে বলল,
“কু’ত্তা’র বাচ্চা ম’রা’র শখ জেগেছে? আমার সামনে আমার বউকে ভালোবাসা বলিস।”
শীর্ষ একের পর এক লাথি দিয়েই যাচ্ছে কায়সারের শরীরে। কায়সার মেঝেতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে তার আঘাত গুলো সহ্য করছে। না কোনো প্রতিবাদ করছে, আর না মেঝে থেকে মুখ তুলে তাকাচ্ছে কারো দিকে। শীর্ষের এমন উন্মাদ রূপ দর্শনে উপস্থিত সবাই ঘাবড়ে গেল। রবি, নয়ন এবং আলভী এসে কায়সারের থেকে সরিয়ে নিতে চাইলো তাকে। কিন্তু তা কি পারে? সবাই মিলে টেনে হিচড়ে শীর্ষকে একটু খানি দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। পরমুহূর্তেই আবার নতুন উদ্যমে সে এসে লাথি বসায় কায়সারের শরীরে। মা’র খেতে খেতে বেচারার অবস্থা শোচনীয়। নাক মুখ দিয়ে লাল রক্ত বেরিয়ে এসেছে। ত্রয়ী ভীত এলো। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল যেন। এত রক্ত, এমন মা’রা’মা’রি সে স্বচক্ষে আগে কখনো দেখেনি। ত্রয়ী দ্রুত ছুটে এলো। জাপটে ধরলো শীর্ষকে। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কি করছেন কি? লোকটা তো ম’রে যাবে।”
“ম’রু’ক। মে’রে ফেলার জন্যই তো ওকে মা’র’ছি আমি।”
ত্রয়ীর ভয় বাড়লো। এভাবে মা’র’তে থাকলে লোকটা তো ম’রে’ই যাবে। আর তারপর জে’লে যেতে হবে শীর্ষকে। ত্রয়ী এবার সব লাজ লজ্জা ভুলে সকলের অভিমুখে দাঁড়িয়েই জড়িয়ে ধরলো শীর্ষকে। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
“এমন পাগলামী করবেন না। দয়া করে থামুন এবার।”
শীর্ষ এবার বোধহয় একটু শান্ত হলো। শরীরটা দুর্বল হয়ে এসেছে। এমনিই তো অসুস্থ, তার উপর এতক্ষণ যা চোটপাট দেখালো। এখন মাথাটা কেমন ঘুরছে। শীর্ষ আঘাত করা বন্ধ করল। জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে কায়সারকে শাসিয়ে বলল,
“আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। ফের যদি কখনো আমার বউয়ের দিকে তাকানোরও দুঃসাহস করিস তবে তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো বা’ল পাকনা ডিসের লাইন।”
পরপর শীর্ষ তাকালো ত্রয়ীর দিকে। মেয়েটার হাত টেনে অভিমুখের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,
“বাড়ি চলে বালির বস্তা।”
শীর্ষ আর ত্রয়ীকে চলে যেতে দেখে তাদের পিছু পিছু বাকিরাও চলে গেল। শুধু থেকে গেল আরফা এবং কায়সারের দলের ঐ দুই চারজন লোক। কায়সারকে এতদিন দেখতে না পারলেও আজ লোকটার জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আরফার। একটা মানুষ এক তরফা ভাবে যে কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে, তার জন্য জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে জানা ছিল না তার। আরফার হৃদয়ে হঠাৎ কড়া নাড়লো একটি বাক্য,
“এই ভালোবাসাটা তো তারও হতে পারতো, কায়সার তো ত্রয়ীর স্থানে তাকেও ভালোবাসতে পারতো।”
পরক্ষণেই আবার নিজের ভাবনার উপর নিজেই বিরক্ত হলো আরফা। ত্রয়ী তার ভালো বান্ধবী। তাকে একজন পুরুষ ভালোবাসে। সেই ভালোবাসা কিভাবে তার হৃদয় দাবি করতে পারে? পর মুহুর্তেই আবার আরফার মনে হলো ভালোবাসলে কায়সার একা ভালোবেসেছে, এক তরফা ভাবে। ত্রয়ী তো তাকে ভালোবাসনি। তাহলে এখানে কায়সারের ভালোবাসা দাবি করে তার হৃদয় কোনো ভুল বা পাপ করেনি। তারা যদি দুজন দুজনকে ভালোবাসতো আর তাদের মধ্যে আরফা আসার চেষ্টা করতো তাহলে পাপ হতো। আরফা মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের চিন্তা ভাবনা গুলোকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু চাইলেই কি সব চিন্তা ভাবনা দূরে সরানো যায়? মানুষের মন মস্তিষ্কের উপর কারো হাত থাকে না। সে নিজ গতিতে নিজের ভাবে চলে। আরফাও তার মন থেকে এসব চিন্তা ভাবনা সরাতে পারলো না। উলটো কায়সারের ভালোবাসার লোভ জাগ্রত হলো তার মন, মস্তিষ্কে। এর মধ্যেই কায়সার গুঙ্গিয়ে উঠল। আরফা অস্থির হলো। নিজের চিন্তা ভাবনাকে বিদায় জানিয়ে ছুটে গেল কায়সারের নিকটে। হাঁটু মুড়ে বসলো তার পাশে। কায়সারের মাথাটা টেনে নিজের কোলে তুলে নিল। ব্যস্ত হয়ে বলল,
“কি হয়েছে আপনার? বেশি খারাপ লাগছে?”
কায়সারের চোখে মুখে রক্ত লেপ্টে আছে। দাঁতগুলো লাল হয়ে উঠেছে রক্তের ছোঁয়ায়। তবুও সে ওষ্ঠ প্রসারিত করে মৃদু হাসলো। পরপর আবার কাতর কণ্ঠে বলল,
“আমি কি খুব বেশি খারাপ ছিলাম? তাহলে ও আমায় কেন ভালোবাসলো না?”
এরপর আর কিছু উচ্চারণ করতে পারলো না বেচারা। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। চোখ দুটোও বন্ধ করে নিল। আরফা বার কয়েক ডাকলো তাকে। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। আরফা দিশেহারা হয়ে উঠল। চটজলদি কায়সারের লোকদের ডাকল,
“তাড়াতাড়ি এদিকে আসুন। উনাকে হাসপাতালে নিতে হবে।”
আরফার ডাক শুনে সবাই ছুটে এলো। তারাও বেশ আঘাতপ্রাপ্ত। তবে কায়সারের অবস্থা দেখে সবাই কিছুটা ভীত হয়ে পড়লো। সকলে মিলে ধরে তাকে নিয়ে ছুটলো হাসপাতালে।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে প্রকৃতির বুকে। আকাশের উজ্জ্বল সূর্যটা ডুবে গিয়ে আঁধারের চাদরে ঢেকে যেতে শুরু করেছে চারিদিকটা। খান বাড়ির বসার কক্ষে বসে রয়েছে আব্দুর রহমান খান, ফাহমিদা বেগম, রিমা এবং পন্না। রিমা ব্যতীত সকলের চোখে মুখেই চিন্তার ছাপ। ত্রয়ীর কলেজ শেষ হয়েছে সেই দুপুরে। অথচ মেয়েটির ফেরার এখনো কোনো নাম গন্ধ নেই। দুপুরে বাড়ির গাড়িতে রিমা বাড়িতে ফিরলেও ত্রয়ী ফিরেনি। রিমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বেশ সাবলীলভাবেই জবাব দিয়েছিল,
“ও তো আমার আগেই চলে এসেছে। আমি কলেজ শেষে বেরিয়ে ওকে খুঁজে পাইনি।”
তবে রিমা এই টুকু বলল না যে সে খুঁজেওনি ত্রয়ীকে। কলেজ থেকে বেরিয়ে যখন সে দেখলো ত্রয়ী আসেনি। সে আর অপেক্ষা করেনি মেয়েটির জন্য। নিজের মতো করে বাড়িতে চলে এসেছে। কিন্তু ত্রয়ীর দেখা নেই এখনো। মেয়েটি গেল কোথায়? এদিকে শীর্ষেরও কোনো খোঁজ নেই। সেই দুপুরে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে ছেলেটা তারপর আর দেখা নেই। আব্দুর রহমান খান এবং ফাহমিদা বেগম ইতোমধ্যে শখানেক কল করেছেন শীর্ষকে। এর মধ্যে একটা কলও ধরেনি সে। এই ছেলেটাও বা এই সময়ে কোথায় গেল কে জানে! শীর্ষ এবং ত্রয়ীর চিন্তায় চিন্তায় দিশেহারা হয়ে উঠছে আব্দুর রহমান খান, ফাহমিদা বেগম এবং পন্না। রিমার অত চিন্তা নেই। ত্রয়ী কোনোভাবে এ বাড়ি থেকে বিদায় হলে আরও সে খুশি হয়। সকলের এই অস্থিরতার মধ্যেই রবি এবং আলভীর কাঁধে ভর করে শীর্ষ বাড়িতে প্রবেশ করল। যদিও শীর্ষকে নিয়ে ত্রয়ীর কিংবা তার বন্ধুদের বাড়িতে ফেরার কোনো ইচ্ছা ছিল না কিন্তু শীর্ষের জেদের কাছে হার মেনে শেষ পর্যন্ত ফিরতে হলো। তারা বারবারই হাসপাতালে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছিল। কিন্তু শীর্ষের এক কথা সে কোথাও যাবে না। সোজা বাড়িতে ফিরবে।
হঠাৎ শীর্ষকে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে আঁতকে উঠলেন সকলে। ফাহমিদা বেগম দিশেহারা হয়ে ছুটে গেলেন ছেলের নিকট। অস্থির কণ্ঠে শুধালেন,
“কি হয়েছে বাবা? তোর এই অবস্থা কেন?”
আব্দুর রহমান খান শীর্ষের পাশাপাশি ত্রয়ীর দিকেও দৃষ্টি দিলেন। মেয়েটাকে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো, শরীরে পরিহিত পোশাকে ধূলোমাখা, চোখ মুখও ফুলে উঠছে। মনে হচ্ছে যেন মেয়েটি কেঁদেছে অনেক। আব্দুর রহমান খান চিন্তিত হলেন। বসা থেকে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“কোথায় ছিলে তোমারা? আর এতটা বিধ্বস্তই বা লাগছে কেন তোমাদের?”
ত্রয়ী ওষ্ঠ ফাঁকা করল কিছু বলার উদ্দেশ্যে। তবে সে কণ্ঠনালী ভেদ করে কোনো শব্দ বের করার পূর্বেই শীর্ষ জবাব দিলো,
“ছোট খাটো একটি এক্সিডেন্ট করেছি রাস্তায়।”
এক্সিডেন্টের কথা শুনে ফাহমিদা বেগম আরও অস্থির হয়ে উঠলেন। ছেলের শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“কি! কিভাবে এক্সিডেন্ট করলি তুই? কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?”
শীর্ষ কোনো উত্তর দিবে তার পূর্বেই রিমা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“কিভাবে আবার এক্সিডেন্ট করবে? সাথে অমন একটা অ’ল’ক্ষ্মী থাকলে এক্সিডেন্ট না করে পারে? ভাইয়া তো আরও একবার এক্সিডেন্ট করেছিলে ওকে নিয়েই।”
কথাটা শেষ হতে না হতেই শীর্ষ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো রিমার দিকে। সাথে সাথে চুপসে গেল মেয়েটা। তবে সে এই অ’ল’ক্ষ্মী কথাটা কাকে বলেছে কারোরই বুঝতে তেমন অসুবিধা হলো না। তার এই কথাটা যেন তীরের মতো আঘাত করল ত্রয়ীর হৃদয়ে। সে অ’ল’ক্ষ্মী? হয়তো। না হলে ছোট বেলায় বাবাকে কেন হারাবে, মা কেন তাকে ছেঁড়ে যাবে, তারপর দাদীও তো ছেঁড়ে গেল, আশ্রিতা হিসেবে ঠাঁই মিললো এ বাড়িতে, এখন শীর্ষের সাথে জীবন জড়িয়ে তারও বিপদের শেষ নেই। এসবই বোধহয় তার জন্যই হচ্ছে। কারণ সে অলক্ষ্মী। ত্রয়ীর কণ্ঠনালী ভেঙে এলো। নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য কান্না পেল ভীষণ।
রিমার কথাটা ফাহমিদা বেগমের আন্তরেও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেললো। তিনি আগের দিনের মানুষ। এসব কুসংস্কারে বেশি বিশ্বাস রাখেন। তার উপর মায়ের মন। সন্তানের একটু ব্যথাও তার হৃদয়ে সন্দেহ, পীড়া এবং চিন্তার সৃষ্টি করে। তবে তিনি এই মুহূর্তে বললেন না কিছুই। এখন এসব বলার সময়ও নয়। ফাহমিদা বেগম তাকালেন স্বামীর দিকে। তাড়া দিয়ে বললেন,
“আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ডাক্তারকে ডাকুন তাড়াতাড়ি। ছেলেটার আমার কি অবস্থা হয়েছে!”
পরপর আবার তিনি ফিরে তাকালেন রবি এবং আলভীর দিকে। ব্যস্ত হয়ে বললেন,
“তোমারা একটু কষ্ট করে ওকে ওর ঘরে নিয়ে এসো বাবা।”
রাত প্রায় আটটা। শহরের বুকটা আলোকিত হয়ে উঠেছে সোডিয়ামের কৃত্রিম আলোয়। শীর্ষের চাচা রাশেদুল খানকে ডাকা হয়েছে। এই মুহূর্তে তিনিই দেখছেন ছেলেটাকে। অবশ্য এ পরিবারের খুঁটি নাটি রোগ শোক তিনিই দেখেন। যেখানে নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যেই ডাক্তার রয়েছে সেখানে বাইরে অন্য ডাক্তারের নিকট গিয়ে কি লাভ? রাশেদুল খান বেশ সময় নিয়ে দেখলেন শীর্ষকে। আজ তেমন আঘাত পায়নি সে তবে পুরোনো আঘাত গুলো তাজা হয়ে উঠেছে। রাশেদুল খান সে আঘাত গুলোর চিকিৎসা করলেন। অতঃপর বললেন,
“চিন্তার কিছু নেই। একটু বিশ্রাম নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।”
রাশেদুল খান কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে চলে গেলেন। শীর্ষও ঘুমিয়ে পড়লো কিছুটা সময়ের মধ্যে। এরপর কক্ষ থেকে একে একে বেরিয়ে গেল সবাই। শুধু থেকে গেল ত্রয়ী এবং ফাহমিদা বেগম। ত্রয়ী এখনো সেই ধুলো মাখা পোশাকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে কক্ষের এক কোনে। লোকটাকে এই অবস্থায় ফেলে নিজ কক্ষে যেতে কিছুতেই তার মন সায় দিচ্ছে না তার। ইচ্ছে হচ্ছে এখানেই থাকতে, শীর্ষের সেবা করতে। কিন্তু এ কথা সে কিভাবে ফাহমিদা বেগমকে বলবে? আর বললেই কি ফাহমিদা বেগম মেনে নিবে? ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। অনেক কষ্টে নিজের ভিতরে একটু সাহস সঞ্চয় করে ডাকল,
“আন্টি!”
ফাহমিদা বেগম ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালেন ত্রয়ীর দিকে। ভ্রু কুঁচকে শুধালেন,
“তুমি এখনো যাওনি?”
“না মানে….”
“নিজের ঘরে যাও। পোশাক বদলে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমার ছেলের কাছে আমি আছি।”
ফাহমিদা বেগমের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আর কিছু বলার সাহস করল না ত্রয়ী। শেষ একবার সে তাকালো শীর্ষের ঘুমন্ত মুখ পানে। অতঃপর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে।
সুখ দুঃখের যেন মিলনমেলা হাসপাতালে। কেউ জটিল রোগ নিয়ে এখানে এসে একদম সুস্থ হয়ে হাসতে হাসতে বাড়িতে ফেরেন। আবার কেউ জীবনের অন্তিম সময়টা এখানে কাটিয়ে লা’শ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। একপাশে স্বজনরা সুখে হাসে। আর অন্যপাশে স্বজনদের গগনবিদারী আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।
আরফা এই মুহূর্তে বসে আছে হাসপাতালের করিডোরে। তখন কায়সারকে নিয়ে এখানে আসার সাথে সাথেই ডাক্তাররা তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে। বেচারার জ্ঞান ফেরেনি এখনো। কায়সারের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে এখানে এসে পৌঁছেছেও। এখন আর এখানে আরফার কোনো কাজ নেই বললেই চলে।
অনুরাগে তুই পর্ব ৫২
কিন্তু কেন যেন তার এখান থেকে না যেতে ইচ্ছে করছে না। অন্তত কায়সারের জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত এখানে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে সে উপায় নেই। এখন আরফার বাড়িতে ফেরা উচিত। তার বাড়ির লোকেরা আর এখানে অনুমতি দিবে না। এই রাত পর্যন্ত থেকেছে তাও এক বান্ধবী অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি এই অজুহাত দিয়ে। কিন্তু এরপরেও যদি বাড়িতে না ফেরে তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াল আরফা। কায়সারের পরিবারের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো হাসপাতাল থেকে।