অনুরাগে তুই পর্ব ৫৬
সাদিয়া শওকত বাবলি
শক্ত কণ্ঠে তিনি বললেন,
“অসম্ভব, ঐ মেয়েকে কখনো আমি আমার ছেলের বউ করবো না।”
স্ত্রীর এহেন কঠিন ভাষ্যে আব্দুর রহমান খান হোঁচট খেলেন যেন। ফাহমিদা বেগম যে ত্রয়ীর বিষয়ে বেঁকে বসবেন তা তিনি ভাবেননি। তিনি সর্বদাই ফাহমিদা বেগমকে ত্রয়ীর সাথে ভালো ব্যবহার করতে দেখেছেন, মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতে দেখেছেন। তিনি ভেবেছিলেন ত্রয়ীকে এক কথায় মেনে নিবেন ফাহমিদা বেগম। কিন্তু এ নারী তো বেঁকে বসলেন। আব্দুর রহমান খান কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে চেয়ে রইলেন স্ত্রীর মুখ পানে। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“ত্রয়ীকে শীর্ষের বউ করার কথা আমি বলিনি। সে নিজেই বলেছে। তোমার ছেলের ত্রয়ীকে ভীষণ পছন্দ।”
ছেলের পছন্দ শুনে একটু দমলেন ফাহমিদা বেগম। ত্রয়ী মেয়েটিকে যে তিনি খুব অপছন্দ করেন তেমন নয়। শুধু ছেলের ভবিষ্যত চিন্তায় ঐ মেয়েটিকে মেনে নিতে চাননি এতক্ষণ। কিন্তু যেখানে তার ছেলের নিজেই ত্রয়ীকে পছন্দ করেছেন সেখানে তিনি আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেলেন না। ছোটবেলা থেকে তিনি নিজের কোনো মতামতই তার তিন সন্তানের উপরে চাপিয়ে দেননি। সর্বদাই তাদের মতামতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আজ বিয়ের মতো একটা বিষয়েও শীর্ষের মতামতাকেই তিনি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলেন। তবে আব্দুর রহমান খানের কণ্ঠে ছেলের পছন্দের কথা শুনে কিছুটা অভিমান হলো তার। শীর্ষের ত্রয়ীকে পছন্দ! কই, এ কথা তো শীর্ষ তাকে বলল না। গিয়ে বলল বাবাকে। সে কি সবার এতটাই দূরের হয়ে গেছে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত গভীর। ব্যস্ত শহরের বুকটা এই মুহূর্তে ঢেকে গেছে নীরবতার চাদরে। বাড়ির সবাইও ইতোমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। শুধু ঘুম নেই শীর্ষের দুই চোখে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে সে। আজ সারদিনেও ত্রয়ীর দেখা পায়নি। মেয়েটি একবারের জন্যও তার কাছে আসেনি। সে কি জানে না শীর্ষ অসুস্থ? অবশ্যই জানে। তাকে উদ্ধার করতে গিয়েই তো আজ শীর্ষের এই অবস্থা। যেখানে স্বামীর অসুস্থতায় অস্থির হয়ে ওঠার কথা ছিল ত্রয়ীর, সর্বদা তার পাশে পাশে থাকার কথা ছিল, তার সেবা করার কথা ছিল। সেখানে মেয়েটা একবার উঁকি দিয়েও দেখে গেল না তাকে। শীর্ষের হৃদয়ে কিঞ্চিৎ অভিমানেরা হানা দিলো।
বালিশের পাশ থেকে নিজের মোবাইলটা তুলে নিল হাতে। ত্রয়ীকে একবার কল করবে ভেবেও করল না। ত্রয়ী যদি তার অসুস্থতায় তার খোঁজ খবর না নেয়, তার কাছে না আসে তাহলে সে কেন ত্রয়ীকে কল করবে বা নিজের কাছে আসতে বলবে? শীর্ষ নিজের ভিতরে চাপা অভিমান নিয়েই ফেসবুকে ঢুকলো। নিউজফিড ঘাটতে ঘাটতেই হঠাৎ একটি আইডি এলো তার সামনে। সাথে সাথে কপাল কুঁচকে গেল তার। দ্রুত উঠে বসলো বিছানায়। এটা ত্রয়ী না? হ্যা, ত্রয়ীই তো। শীর্ষ দ্রুত ঢুকলো সে আইডির ভিতরে। প্রোফাইল লক। আর কিছু দেখার উপায় নেই। কিন্তু শীর্ষের মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠল মুহুর্তেই। এই মেয়েটাকে কি সে এইসব করার জন্য মোবাইল দিয়েছে?
নিজের একটা পুরোনো আইডি লগ ইন করে দেওয়ার পরও নতুন আইডি খোলার কি দরকার ছিল এর? এই আইডিতে কে কে যুক্ত আছে তার সাথে? কার সাথে কথা বলে এটা দিয়ে? তারপর নতুন আইডি খুলেছে না হয় ভালো কথা কিন্তু তা শীর্ষকে একবার জানালো না? ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও তো দেয়নি। শীর্ষের চোয়াল জোড়া শক্ত হয়ে উঠল। ক্রোধে দিশেহারা হয়ে উঠে দাঁড়াল বিছানা থেকে। লম্বা লম্বা পা ফেলে এসে দাঁড়াল ত্রয়ীর কক্ষের অভিমুখে। হাত উঁচিয়ে টোকা দিল বন্ধ দরজায়।
ত্রয়ী ঘুমায়নি এখনো। সারাদিন শীর্ষের সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। সে ঠিক জানতো রাতে সবাই ঘুমালে শীর্ষ তার নিকট আসবে। আর এসেছেও। দরজায় টোকার শব্দ পেতেই ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠল ত্রয়ীর। এক মুহূর্তও দেরি করল না সে। দৌড়ে এসে খুললো দরজাটা। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“আপনি এসেছেন? আমি ঠিক জানতাম আপনি আসবেন।”
শীর্ষ কোনো জবাব দিলো না। ত্রয়ীর পাশ কাটিয়ে ঢুকলো কক্ষের ভিতরে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“তোর মোবাইল কোথায়?”
ত্রয়ী দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ভিতরে এলো। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“আছে বোধহয় বিছানার উপরে। মোবাইল দিয়ে কি করবেন আপনি?”
শীর্ষ এবারেও জবাব দিলো না। বিছানার উপর থেকে ত্রয়ীর মোবাইলটা হাতে নিয়ে ঘাঁটতে শুরু করল। ত্রয়ী ওদিকে ততটা পাত্তা দিলো না। সে বরং চিন্তিত স্বরে শুধাল,
“এখন কেমন আছেন আপনি? সুস্থবোধ করছেন একটুও?”
শীর্ষ যেন শুনেও শুনলো না ত্রয়ীর কথা। সে এক মনে ত্রয়ীর সম্পূর্ণ মোবাইল পর্যবেক্ষণ করল। তেমন সন্দিহান কিছুই পেল না। তবে তাতেও রাগ কমলো না তার। কিছু সন্দিহান থাকুক বা না থাকুক তাকে না জানিয়ে মেয়েটা নতুন আইডি খুলবে কেন? শীর্ষ ত্রয়ীর প্রোফাইল বের করে মোবাইলটা ধরলো তার চোখের অভিমুখে। ক্রোধ মেশানো কণ্ঠে শুধাল,
“এটা কি?”
ত্রয়ী চমকালো, ভরকালো। এটার কথা তো প্রায় ভুলেই বসেছিল। এই অইডিটা খোলার পর পরই সে গ্রামে গিয়েছিল। তারপর থেকে একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে। সব মিলিয়ে ত্রয়ী মোবাইল ধরারই তো তেমন সুযোগ পায়নি আর তো ফেসবুক আইডি। মেয়েটা মাথা নুইয়ে নিল। আমতা আমতা করে বলল,
“আপনার আগের আইডিটা ভুলবশত লগ আউট হয়ে গিয়েছিল। ঐ আইডির পাসওয়ার্ড জানা ছিল না বলে ঢুকতে পারছিলাম না। তারপর আরফা এটা খুলে দিয়েছে।”
কথা শেষ হতে না হতেই শীর্ষ ধমকে উঠল,
“তোর পাসওয়ার্ড জানা ছিল না বলে কি আমারও জানা ছিল না? আমাকে জিজ্ঞেস করলি না কেন?”
ত্রয়ী কেঁপে উঠল স্বামীর ধমকে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
“আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আপনি যদি আবার কিছু বলেন, আইডি লগ আউটের কারণে আমাকে বকেন। তাই বলিনি।”
“তুই…”
শীর্ষ দাঁতে দাঁত পিষে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের ক্রোধ কমানোর প্রচেষ্টা করল। এত রাতে চিৎকার, চেঁচামেচি করাটা হয়তো ঠিক হবে না। বাড়ির লোকদের ঘুম ভেঙে গেলে আবার ঝামেলা। শীর্ষ এই মুহূর্তে কোনো ঝামেলা চাইছে না। এমনিই আজ সকালে আব্দুর রহমান খানের সাথে তাদের বিয়ের কথা বলেছে। এখন ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলে হয়। শীর্ষ ত্রয়ীর মোবাইলটা এক প্রকার ছুঁড়ে ফেললো বিছানায়। এরপর তেড়ে এলো মেয়েটার দিকে। চাপা কণ্ঠে বলল,
“এর জন্য তোকে আমি মোবাইল দিয়েছিলাম? তোর আইডি পাসওয়ার্ড না হয় জানা ছিল না, তুই অমার কাছে আসতি। আসিসনি। যাই হোক নতুন আইডি খুলেছিস ভালো কথা, আমাকে কেন বলিসনি।”
“বিভিন্ন ঝামেলায় ঝামেলায় খেয়াল ছিল না, দুঃখিত।”
“তোর খেয়াল থাকবেও না। আমার কোন দিকে তোর খেয়াল থাকে? তুই জানিস পূর্ব থেকেই আমার শরীরে ক্ষত, তার উপর গতকাল আবার এত ঝামেলা। তুই একবারও খোঁজ নিয়েছিস আমি বেঁচে আছি নাকি ম’রে গেছি? একবারও দেখতে গিয়েছিলি আমাকে? যেখানে আমার অসুস্থতায় তোর অস্থির হয়ে ওঠার কথা সেখানে আমাকে একটা বার চোখের দেখাও দেখতে গেলি না সারাদিন।”
“আমি যেতে চেয়েছিলাম তো। কিন্তু….”
এই টুকু বলতেই ত্রয়ীকে থামিয়ে দিলো শীর্ষ। রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
“অজুহাত দিতে হবে না তোকে। এক বাড়িতেই থাকি আমরা। এমন নয় যে আমরা দুজন দুই শহরের বাসিন্দা। তাই তোর আমাকে দেখতে আসতে সময় লাগবে, বাড়িতে হাজার কাজ গুছিয়ে আস্তে হবে।”
নিজের কথা শেষ করে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না শীর্ষ। ধুপ ধাপ পা ফেলে বেরিয়ে এলো ত্রয়ীর কক্ষ থেকে। মেয়েটা অস্থির হয়ে উঠল। শীর্ষ যে তার উপর ভীষণ রেগে গেছে তা বুঝলো বেশ ভালোভাবেই। আর যাই হোক এবারের দোষটা তারই বেশি। শীর্ষকে না জানিয়ে তার নতুন আইডি খোলা উচিত হয়নি। ত্রয়ীও আর নিজ কক্ষে দাঁড়িয়ে রইল না। ছুটে এলো শীর্ষের পিছু পিছু। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“আমি এমনটা আর করবো না। এবারের মতো মাফ করে দিন আমাকে।”
শীর্ষ শুনলো না ত্রয়ীর কোনো কথা। লম্বা লম্বা পা ফেলে সে ঢুকলো নিজ কক্ষে। অতঃপর ত্রয়ী ঢোকার পূর্বেই দরজাটা এঁটে দিলো। মেয়েটা দাঁড়িয়ে পড়লো সাথে। অস্থিরতা বাড়লো তার। হাত তুলে দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলল,
“আমার কথাটা তো শুনুন। দয়া করে দরজাটা খুলুন একবার।”
শীর্ষ দরজা খুললো না। ভিতর থেকে কোনো আওয়াজও দিলো না। ত্রয়ী আরও কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কা ধাক্কি করে থামলো। এর বেশি দরজা ধাক্কানোটা বোধ হয় ঠিক হবে না। বাহির লোকদের ঘুম ভেঙে যেতে পারে। ত্রয়ী হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। শেষ একবার শীর্ষের কক্ষের বন্ধ দরজাটার দিকে দৃষ্টি দিয়ে চলে এলো নিজ কক্ষে। এরপরই অদূরে অন্ধকারের মধ্য থেকে বেরিয়ে এলো রিমা। মাঝ রাতে পানির পিপাসা লেগেছিল তার। কিন্তু কক্ষের জগে পানি না থাকায় পানি নিতে বেরিয়েছিল সে। নিজ কক্ষ থেকে বেরুতেই সে দেখলো শীর্ষ ত্রয়ীর কক্ষ থেকে বেরুচ্ছে। ঘটনাটা কি বুঝতে দ্রুত সে লুকিয়ে পড়েছিল পাশেই। এমনি ত্রয়ীর কক্ষের ভিতরে তাদের ভিতরে কি হয়েছে না হয়েছে রিমা কিছুই দেখেনি। তবে কক্ষের বাহিরে শীর্ষের রেগে চলে যাওয়া, ত্রয়ীর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া, ত্রয়ীর দরজা ধাক্কানোর পরও দরজা না খোলা সবটাই দেখেছে সে।
নিশিথের আঁধার কেটে গেছে। আকাশটা সোনালি সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। খান বাড়ির সবাই খাবার কক্ষের টেবিল দখল করে বসেছে সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে। শীর্ষের খাবার আজ আর কক্ষে পাঠানো হয়নি। তার আগেই সে টেবিলে এসে বসেছে। স্যুট বুট পড়ে একদম তৈরি হয়ে এসেছে। অফিসে যাবে বোধ হয়। খাবার মধ্যে ত্রয়ী অনেক বার তাকালো শীর্ষের দিকে। অথচ ছেলেটা একবারও তাকালো না না তার দিকে। মাথা নিচু করে চুপচাপ নিজের খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে গেল বাড়ির বাইরে। ত্রয়ী আহত হলো। সামান্য একটা বিষয়ের জন্য এত রাগ? সে শুধু তো একটা আইডিই খুলেছে। এ ছাড়া আর তো কিছু করেনি। ঐ আইডি দিয়ে আরফা ব্যতীত না আর কারো সাথে কথা বলেছে, আর না আর তেমন কাউকে যুক্ত করেছে।
শীর্ষ এবং আব্দুর রহমান খান অফিসের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি এখন মোটামোটি ফাঁকা। পন্নাও স্কুলে চলে গিয়েছে। তবে আজ রিমা বা ত্রয়ী কেউ কলেজে যায়নি। রিমা চারিদিকটা একটু নিরিবিলি দেখে এসে দাঁড়াল মায়ের কক্ষের অভিমুখে। হাত উঁচিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“আসবো?”
“আয়।”
রিমা চাপানো দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। ফাহমিদা বেগম আলমারি থেকে তার গহনার বাক্সগুলো এনে এক এক করে রাখছিলেন বিছানায়। মেয়েকে দেখে এক গাল হাসলেন তিনি। পরপর আবার চোখে মুখে চিন্তার রেশ ফুটিয়ে তুলে বললেন,
“এখানে হালকা পাতলা গহনা আছে। ভারী গুলো এখনো ব্যাংকের লকারে। ওগুলো তুলতে হবে। কত কাজ।”
এই টুকু বলে থামলেন তিনি। দম নিয়ে ফের বললেন,
“দেখ তো মা গয়নাগুলো কেমন। এগুলো পুরোনো দিনের, আগে গড়িয়েছিলাম। আজকালকার দিনের মেয়েরা পছন্দ করবে তো? নয়তো আবার ভেঙে বর্তমানে চলমান নতুন নকশা দিয়ে গড়াবো।”
রিমা অবাক হলো। অবাক কণ্ঠেই সে বলল,
“তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এগুলো এখন তুমি বের করছো কেন? আবার বলছো ব্যাংক থেকে গয়না তুলবে। কি করবে এত গয়না দিয়ে।”
“তোর ভাইকে বিয়ে করাবো।”
রিমা এবার অবাকের সাথে সাথে খুশিও হলো। বাড়িতে বিয়ে লাগবে তাও নিজের ভাইয়ের। কত আনন্দ মজা হবে। তাছাড়া এই সুযোগ, তার বান্ধবী শিলার কথাটা তার বাড়ির সবাইকে বলার। সে আগে থেকেই জানতো শিলা শীর্ষকে পছন্দ করে। আর তারও শিলাকে ভীষণ পছন্দ। প্রিয় বান্ধবীকে ভাইয়ের বউ করে আনতে পারলে কতই না ভালো হবে। সর্বক্ষণ দুই বান্ধবী এক সাথে থাকতে পারবে। সময়ে অসময়ে একে অপরকে পাশে পাবে। অন্য বাড়ির একটি মেয়েকে নিজের ভাইয়ের বউ করে আনলে সে কেমন না কেমন হয় কে জানে। শিলা বেশ উৎফুল্ল হয়েই বলল,
“পাত্রী দেখবে কবে থেকে? আমার খোঁজে কিন্তু একজন ভালো পাত্রী আছে।”
“ভালো খারাপ যেমনই থাকুক না কেন তাকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। তোর ভাই আগে থেকেই মেয়ে পছন্দ করে রেখেছে।”
রিমার অবাকতা বাড়লো। চোখে মুখে বিস্ময় ভাব নিয়ে সে বলল,
“কি? কোন মেয়ে?”
“কেন আমাদের ত্রয়ী।”
আবার সেই ত্রয়ী! এই মেয়ে তার হাড় মাংস পুরোপুরিভাবে জ্বা’লি’য়ে খাওয়া ব্যতীত বোধ হয় থামবে না। এতদিন তাও ভেবেছিল বিয়ে হলে মেয়েটা বাড়ি থেকে বিদায় হবে। কিন্তু এ মেয়ে তো তার ভাইকে বিয়ে করে এ বাড়িতে আরও গেঁড়ে বসার বন্দোবস্ত করছে। আর সাথে তার বান্ধবীর জায়গাটাও হরন করতে চাইছে। রিমার কত শখ শিলাকে এ বাড়ির বউ করবে। বান্ধবী থেকে সম্পর্কটা ননদ ভাবীতে উন্নিত করবে। এই শখ তো সে পূরণ করেই ছাড়বে। আর তাছাড়া শীর্ষ যদি শিলা ব্যতীত অন্য কাউকে বিয়ে করে তাহলে মেয়েটা কষ্টও পাবে ভীষণ। বান্ধবী হয়ে রিমা কিভাবে বান্ধবীর হৃদয় ভাঙা সে কষ্ট সহ্য করবে? রিমা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“আর কোনো মেয়েকে পেলে না? তোমাদের ঐ মেয়েটাকেই পেতে হলো আমার ভাইয়ের বউ করার জন্য?”
“কেন ত্রয়ী খারাপ কিসে? সুন্দরী, শিক্ষিত, নম্র, ভদ্র, কাজে কর্মের সুনিপুণ।”
অনুরাগে তুই পর্ব ৫৫
“এগুলো দিয়ে তুমি কি করবে যদি না একটা মেয়ের বংশ মর্যাদাই থাকে। বাবা ছোট বেলায় ম’রা গেছে, মা ওকে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেছে। চাচারাও খোঁজ খবর নেয় না। এক প্রকার চাল চুলোহীন মেয়ে ও। আর আমাদের সমাজে একটা মূল্য আছে, বংশ মর্যাদা অছে। কত বড়ো বড়ো মানুষের সাথে আমাদের ওঠা বসা। ওকে ঘরের বউ করে আনার পর যদি একজন এসে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার ছেলের বউয়ের বাড়ি কোথায়, বাবা কি করে, বংশ মর্যাদা কি? তখন তুমি কি উত্তর দিবে?”