অন্তঃদহন পর্ব ৩২
DRM Shohag
প্রায় সাত মিনিট গড়িয়েছে, কিন্তু আকাশ নিজেকে দমিয়ে নেয়না। সন্ধ্যা আকাশের ঘাড় থেকে হাত নামিয়ে আকাশকে ঠেলে সরাতে চায়, কিন্তু ব্যর্থ। সন্ধ্যা মোচড়ামুচড়ি করছে বুঝতে পেরে আকাশ দ্রুত নিজেকে সরিয়ে নেয়। অসহায় চোখে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকালে দু’জনের চোখাচোখি হতেই সন্ধ্যা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় ল’জ্জায়। আকাশ বোধয় বুঝল সন্ধ্যার ল’জ্জা। একটু হাসলো। সন্ধ্যা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। নিঃশ্বাস ভারী তার। সে নড়তে পারছে না। আকাশ যেন তার সব শক্তি শুষে নিয়েছে।
আকাশ সন্ধ্যার শরীর শ’ক্ত করে ধরে রেখেছে। ডান হাত সন্ধ্যার থুতনির নিচে রেখে সন্ধ্যার মুখ একটুখানি উঁচু করে। সন্ধ্যার কম্পিত ঠোট, অনবরত কাঁপতে থাকা চোখের পাতা,, সবকিছু অবলোকন করে আকাশ ঢোক গিলল। মৃদুস্বরে বলে,
– বউ? আমার তৃষ্ণা মেটেনি।
কথাটা শুনতেই সন্ধ্যা দ্রুত চোখ মেলে তাকায়। আকাশকে ঠেলে সরাতে চাইলো। কিন্তু আকাশ সেই সুযোগ দিল না। সন্ধ্যার নিরবতায় ছেলেটা যেন আশকারা পেয়েছে। মৃদু কাঁপতে থাকা সন্ধ্যাকে নিজের দিকে টেনে নিল।
উপরের আকাশে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা বাড়লো। ধীরে ধীরে বাতাসের বেগ বাড়তে শুরু করেছে। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। আসমানী নওয়ানের মাতৃত্ব থেকে জন্ম নেওয়া আকাশের সাথে প্রকৃতির আকাশ বোধয় সঙ্গ দিতে চাইছে।
সন্ধ্যার শাড়ির আঁচল বাতাসে উল্টো দিকে উড়ছে। সৌম্য, ইরা রিক্সা থেকে নেমে বাড়ির দিকে দ্রুতপায়ে হাঁটছিল। সৌম্য’র চোখে পড়ে মৃদু উড়ন্ত সন্ধ্যার শাড়ির আঁচল। পিঠ ফিরিয়ে রাখা আকাশকেও দেখল। বৃষ্টি পড়ছে, অথচ এরা এখানে কি করছে? সৌম্য বিরক্ত হয়ে ইরাকে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– ইরাবতী তুই ভেতরে যা, আমি আসছি।
সৌম্য কথাটা বলে বাগানের দিকে এগিয়ে যায়। সৌম্য বললেও ইরা গেল না। দাঁড়িয়ে রইল।
সৌম্য এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
– বোনু এখানে কি করছিস? বৃষ্টি পড়ছে তো!
ভাইয়ের কণ্ঠ পেয়ে সন্ধ্যার ছটফটানি শুরু হয়। দু’হাতে আকাশকে ঠেলে। আকাশ না তো সৌম্য’র কথা শুনল, আর নাতো সন্ধ্যার ছটফটানি গায়ে মাখলো। সৌম্য’র কণ্ঠ আরও কাছ থেকে পেয়ে সন্ধ্যার কান্না পায়। তার ভাইয়া এখানে আসলে কি হবে? সন্ধ্যা হাতিয়ে হাতিয়ে আকাশের গলায় দু’হাতে খামচে দেয়। এ পর্যায়ে আকাশ বিরক্ত হয়ে সন্ধ্যাকে ছেড়ে দেয়।
সন্ধ্যা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সৌম্য তিনহাত দূরে দাঁড়িয়ে। সন্ধ্যা কারো দিকে তাকালো না। আকাশকে পাশ কাটিয়ে এক দৌড় দেয়।
সন্ধ্যাকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে সৌম্য’র পা থেমে যায়। একবার ডাকে,
– বোনু??
সন্ধ্যা দাঁড়ালো না। এ জীবনে এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েনি মেয়েটি।
সৌম্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। তার বোন তার ডাকে সাড়া দিল না? এটা আদৌও সম্ভব? বিস্ময় নিয়ে আকাশের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
– আমার বোনু এভাবে দৌড়ে গেল কেন?
আকাশ উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে। ডান হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্য ঠোঁট মুছে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– নিজের বোনকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
সৌম্য আকাশের সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আপনি আমার বোনুর সাথে কি করেছেন?
আকাশ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় সৌম্য’র দিকে। তার মুডটার পুরো ১২ টা বাজিয়ে দিল। এ তো পুরো সম্মন্ধি নামের ক’ল’ঙ্ক। জীবনে তার বউটা তার দিকে ফিরেও তাকায় না। আজ যা একটু কাছে পেয়েছে, এই সম্মন্ধি নামের শ’ত্রু সব ভেস্তে দিল। সৌম্য ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কথা বলছেন না কেন? কি করেছেন আমার বোনুর সাথে?
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– আমার বউকে আমি আদর করছিলাম। যদিও আমি বুঝতে পারছি, এসবে তুমি খুব কাঁচা। তবে তোমার বড় ভাই খুবই পাকা। তোমাকে হাতে-কলমে শেখাবো। একদম চিন্তা করনা।
কথাটা শুনে সৌম্য চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরা সন্ধ্যাকে ডাকলেও শোনেনি, দৌড়ে চলে গিয়েছে। এজন্য সে বাগানের দিকে এগিয়ে এসেছিল। আকাশের কথা শুনে বেচারি কেশে ওঠে। আকাশ আবার-ও কিছু বলতে চাইছিল, কাশির শব্দে পিছন ফিরলে ইরাকে দেখে বলে,
– ইরা তোমার এই ফিউচার বরকে আঁচলে বেঁধে রাখবে। আমার বউয়ের পিছনে যেন ঘুরঘুর না করতে পারে, বুঝেছ?
ইরা কি বলবে বুঝল না। সৌম্য কটমট চোখে তাকিয়ে বলে,
– আপনার সাহস তো কম না, আপনি এখনি আমার বোনুর সাথে আমার দূরত্ব তৈরী করার চেষ্টা করছেন।
আকাশ বিরক্ত হয়ে বলে,
– তো কি করব? আমার বউকে আদর করার সময়, তোমাকে ডেকে এনে লাইভ দেখাবো?
আকাশের কথা শুনে ইরার অবস্থা আগের চেয়েও শোচনীয়। বেচারী এখানে এসে কতবড় ভুল করেছে এবার বুঝতে পারছে। জায়গাটি প্রস্থান করার উদ্দেশ্যে দ্রুত পা চালায় উল্টোদিকে।
সৌম্য হতাশ চোখে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে সৌম্য’র দিকে। চোখেমুখে বিরক্তি। সৌম্য দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলে,
– আপনার মুখ থেকে কি জীবনে ভালো কথা বের হয়না? আপনার উচিৎ আমার কাছে সভ্যতা শেখা।
আকাশ রে’গে বলে,
– কোনো দরকার নেই। তুমি এবার আমার বউয়ের পিছু ছাড়ো। ওর সুদর্শন এক হাসবেন্ড আছে, এটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।
সৌম্য আকাশকে পাশ কাটিয়ে বড় বড় পা ফেলে যেতে যেতে বলে,
– আপনার মতো অ’স’ভ্য লোকের সাথে আমার বোনকে জীবনেও ঘেঁষতে দিব না আমি।
আকাশ দাঁত কিড়মিড় করে তাকায়। বউ তার। অথচ তার সাথেই না-কি ঘেঁষতে দিবে না। বললেই হলো? রে’গে বলে,
– আমিও আমার বোনকে তোমার মতো সভ্য পুরুষকে দিবনা। পরে দেখা যাবে আমার মামা হওয়ার সাধ এ জনমে পূরণ হচ্ছে না।
কথাটা শুনে সৌম্য দাঁড়িয়ে যায়। আকাশ কথাটা দ্বারা কি তাকে অ’ক্ষম বোঝালো? কি পরিমাণ বে’য়া’দ’ব ভাবা যায়!
আকাশ নিচু হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা সন্ধ্যার ফোন নিয়ে প্যান্টের পকেটে রাখে। এরপর সৌম্য’কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সৌম্য কটমট দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে। আকাশ পাত্তা দিল না।
শিমু ডায়নিং রুমে দাঁড়িয়ে ছিল। সন্ধ্যা দৌড়ে আসায় হঠাৎ শিমুর সাথে ধাক্কা খায়। দু’জনেই পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। শিমু অবাক হয়ে বলে,
– আরে ভাবি, তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন?
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে বলেন,
– কি হইছে মা? ভ’য় পাইছিস কিছু দেইখা?
শিমু অসহায় কণ্ঠে বলে,
– ভাবি তোমাকে কি সুন্দর করে হিজাব বেঁধে দিলাম। এটুকু সময়ে এতো এলোমেলো করে ফেলেছ?
সন্ধ্যা অসহায় চোখে, একবার আসমানী নওয়ানের দিকে তাকায় আরেকবার শিমুর দিকে তাকায়। সন্ধ্যা ইশারায় বোঝালো,
– খালাম্মা তোমার ঘরে যাই?
আসমানী নওয়ান হেসে বলে,
– পারমিশন নিতাছস ক্যান? যা।
সন্ধ্যা দ্রুত পা চালায়। এখানে সে জীবনেও থাকতে পারবে না। আকাশকে কিভাবে এই মুখ দেখাবে, ভাবতেই কেঁপে ওঠে। শিমু মাথা চুলকালো।
ইরা দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। ইরার মা সন্ধ্যাকে দেখে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল৷ এতো মাস পর মেয়েকে সুস্থ দেখে ভদ্রমহিলা ইরাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নামাখা গলায় বলে,
– তুই ভালো হইছিস মা? আমি যে কত দোয়া করছি তোর জন্য।
ইরা-ও তার মাকে জড়িয়ে ধরল। পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
– আমি ঠিক আছি মা। কান্না কর না।
ইরার মা ইরাকে ছেড়ে মেয়ের কপালে, গালে অগণিত চুমু আঁকে। এই দিনটার জন্য তিনি কত অপেক্ষা করেছেন, তা শুধু তিনিই জানেন। ইরা দু’হাতে মায়ের ভেজা গাল মুছে দিয়ে বলে,
– কিছুই হয়নি আমার। কান্না অফ কর তো।
ভদ্রমহিলা ইরাকে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়। ইরা বাড়িটির চারপাশে চোখ বুলায়। তাদের বাড়ির মতোই এই বাড়িটি। তবে পরিচিত নয় তার। এইখানকার মানুষগুলো-ও তার অপরিচিত ঠেকল। তবে তার কোন ফুপু কে। এর জন্য ভেতরে ভেতরে ভীষণ অস্থির সে। এতোদিন যাদের গল্প শুনেছে, তাদের দেখার আগ্রহ ভীষণ।
আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে ইরার গালে হাত দিয়ে বলে,
– সেই কত ছোটতে তোরে দেখছিলাম। বড় হইয়া তো আমারে ভুইলাই গেলি।
ইরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। মৃদুস্বরে বলে,
– আপনার নাম কি?
আসমানী নওয়ান হেসে বলে,
– আমার নাম আসমানী।
ইরা এবার চিনল। এটা তার বড় ফুপি। আসমানী নওয়ান ইরার মুখে বেশ কয়েকটা চুমু খায়। এরপর জড়িয়ে ধরে। চোখের কোণে পানি। তার ভাইটার শূণ্যতা খুব করে অনুভব করছেন।
এরপর শিমুর মা তারা ইরাকে জড়িয়ে ধরে। তিনিও ইরার মুখে চুমু খেয়ে বলে,
– আমাদের তিন মেয়েকেই আমরা পেয়েছি। আর কি চাই?
ইরা মৃদু হাসলো। তার খুব ভালো লাগলো। বাবা বাড়ির আত্মীয়দের থেকে কখনো আদর পায়নি। এ নিয়ে তার কত দুঃখ ছিল। কিন্তু এখন মনটা ভীষণ ফুরফুরে লাগছে।
ইরা বেখেয়ালে বলে বলে,
– ছোট ফুপি কোথায়? ওনার কথা বাবা বেশি বলত।
কথাটা বলে ইরা নিজেই কেমন অস্বস্তিতে পড়ে যায়। সকলের মুখ থমথমে হয়ে যায়। ইরা তো জানে সৌম্য’র মা বেঁচে নেই। আর উনিই তো তার ছোট ফুপি। ইরা পাশ ফিরে সৌম্য’র দিকে তাকায়। সৌম্য মলিন মুখে ইরার দিকে চেয়ে আছে। ইরা মাথা নিচু করে নেয়। চোখের কোণে পানি জমলো। তার জন্য সৌম্য’র মন খারাপ হয়ে গিয়েছে ভেবে বেশি খারাপ লাগছে।
ইরা তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করতে চাইল। সে কোথায়? কিন্তু করল না। ভীষণ অভিমান তার বাবার উপর। বাবা সৌম্যকে নিয়ে সবসময় কত বা’জে বা’জে কথা বলত! ইরা নিজের ঘরে বসে কাঁদতো। তারপর নিজেকে সামলে আবার-ও সৌম্য’র কাছে ছুটে যেত। তার বাবা সৌম্য’কে কখনো মানুষ-ই মনে করত না।
সৌম্য তাকে বলেছে, তাদের এই আত্মীয়তার কথা কেউ জানতো না। এমনকি তার বাবা-ও না।
ইরার মনে প্রশ্ন জাগে, আজ সৌম্য তার বাবার সবচেয়ে প্রিয় ছোট বোনের ছেলে জেনে তিনি কি ল’জ্জায় মুখ লুকিয়েছে?
ইরার খারাপ লাগে। সৌম্য তাদের আত্মীয় না হলেও বা কি ছিল? ও তো মানুষ ছিল। খুব ভালো মানুষ সৌম্য। সন্ধ্যার প্রতি সৌম্য’র ভালোবাসা সে সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছে। তার ভীষণ ভালো লাগতো। কিন্তু তার বাবা সৌম্যকে কখনো মানুষ ভেবে একটুও সম্মান করেনি।
কথাগুলো ভেবে ইরার চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
মেয়েটি ভাবছে তার বাবা ল’জ্জায় মুখ লুকিয়েছে। ভাবনাটি হয়তো একেবারে ভুল নয়। হয়তো ইশতিয়াক আহমেদ সত্যিই ল’জ্জায় মুখ লুকিয়েছে। তবে তা একেবারে মাটির তলায়। আর ল’জ্জার সাথে যে তীব্র ব্য’থা ছিল, যা তার নিঃশ্বাস কেড়ে নিয়েছিল। তা ইরা এখনো জানলো না। সে তার বাবার জন্য অভিমান জমা রাখলো।
শিমু এগিয়ে এসে ইরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– হাই আপু! আমি শিমু। তারা মায়ের মেয়ে।
ইরা শিমুকে দেখে মৃদু হাসলো। কিছু একটা ভেবে বলে,
– তুমিই কি সৌম্য’র কাছে প্রায়ভেট পড়তে?
শিমু মাথা উপরনিচ করে সম্মতি দিল। ইরা একটু হাসলো। এই শিমুর কথা সৌম্য প্রায়ই বলত। কারণ সৌম্য এর উপর খুব বিরক্ত ছিল। বেশি চঞ্চল, সাথে পড়ায় খুব ফাঁকি দিত। সৌম্য’র এসব সহ্য হত না। এসব কথা সৌম্য তার কাছে এসে উগলে দিত।
ইরা নিজেই শিমুকে জড়িয়ে ধরল। এই মেয়ে তো তার চেয়ে অনেক ছোট, সন্ধ্যার সমানই বলতে গেলে।
শিমু হাসলো। আগে শুধু সে আর আকাশ ভাইয়া ছিল। এখন কতগুলো ভাই-বোন হয়ে গেল।
আকাশ সোফায় বসে আশেপাশে চোখ ঘোরায়। সন্ধ্যাকে কোথাও না দেখে হতাশ হয়। ভীষণ চিন্তিত সে। সে তো নিজেকে দমাতে পারেনি। এবার তার বউ তাকে কি করবে? উল্টাপাল্টা রিয়েকশন হলে তার কি হবে? ভেবেই কপালের ঘাম মুছল।
এরপর সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
– বিকালে কাজী আসবে। সৌম্য আর ইরার বিয়ে। কি কি লাগবে আমাকে লিস্ট দিও মা।
আকাশের কথা শুনে কেউ অবাক হলো না। গতকাল আকাশেরা হসপিটাল থেকে ফেরার পর সৌম্য আকাশের সাথে এই ব্যাপারে ফোনে কথা বলেছিল। এরপর আকাশ সকালে তার মাকে জানায়। আর আসমানী নওয়ান সবাইকে জানায়। ইরার এই দশার কারণ-ই ছিল সৌম্য। তাই আজ একদম ছোট্ট করে হলেও ইরাকে সৌম্য’র নামে লেখাতে তাদের কোনো সমস্যা নেই। আর এজন্য কেউ দ্বিমত করেনি।
ইরা আকাশের কথা শুনে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সৌম্য’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– সৌম্য আমাদের আজকেই বিয়ে?
সৌম্য ছোট করে বলে,
– হুম।
ইরা সৌম্য’র হাত ধরে বলে,
– আমি আজকে বিয়ে করতে চাইনা, প্লিজ! এভাবে বিয়ে করতে চাইনা আমি।
সৌম্য বিরক্ত চোখে তাকায়। অতঃপর বলে,
– আমি এভাবেই বিয়ে করতে চাই।
ইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
– এরকম করিস না। কয়েকটা দিন-ই তো চাইছি।
সৌম্য রে’গে বলে,
– তাহলে আমাকে বিয়ে করতে হবে না, যা।
ইরা ছলছল দৃষ্টিতে তাকায়। সৌম্য খেয়াল করল। নরম স্বরে বলে,
– কাঁদছিস কেন? বিয়ে করতে না চাইলেও কাঁদিস। চাইলেও কাঁদিস। আমি কোনদিকে যাব?
ইরা সৌম্য’র হাত ছেড়ে যেতে নিলে সৌম্য ইরার হাত টেনে ইরাকে তার সামনে দাঁড় করায়। মৃদুস্বরে বলে,
– তোর সব ইচ্ছে পূরণ করব ইরাবতী। পরে সব অনুষ্ঠান করব। আজ শুধু তোকে আমার নামে লিখে নিই। নয়তো তোকে জড়িয়ে ধরতে-ও পারছি না আমি।
ইরা মাথা নিচু করে বলে,
– আচ্ছা।
সৌম্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
সৌম্য, ইরাকে কথা বলতে দেখে সবাই সবার মতো কাজে ব্যস্ত হয়েছে।
আকাশ বিরক্ত চোখে সৌম্য আর ইরার দিকে চেয়ে আছে। তার সামনে ছোট দু’টো ভাই-বোন প্রেম করছে, আর সে পুরো দেবদাস মুডে বসে বসে এসব দেখছে। তার কপাল টা কি ফাটা! তার বউটা যদি ইরার এক কানি-ও তাকে ভালোবাসতো। তবে তার জীবনে হয়ত আর চাওয়ার কিছু থাকতো না। কিন্তু সে হতাশ! দু’টো চুমু খেয়েছে বলে বউ তার লাপাত্তা।
দুপুর পর পর বাসায় কাজি এসে সৌম্যকে বিয়ে পড়িয়ে রেখে গিয়েছে।
আকাশ মূলত বায়ানকে দিয়ে কাজি আনিয়েছে। অরুণকে হাজারটা কল দিয়েছে। ফোন বন্ধ দেখায়। সৌম্য বলল, অরুণ অনেক সকালে উঠে সৌম্যকে, ‘ কাজ আছে’ বলে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। আকাশ আনিকাকে কল করে আসতে বললে, সে বলেছে,’ আজ আসতে পারবেনা। আগামীকাল আসবে।’
আকাশ বিরক্ত। এদের সবার হয়েছে টা কি বুঝতে পারছে না।
একটু পর পর আকাশ চোখ ঘুরিয়ে সন্ধ্যাকে খোঁজে। তার বউ কোথায় হারালো? হায় আল্লাহ! হতাশ সে হতাশ! ধরনীতে সন্ধ্যা নেমেছে। সৌম্য পাশেই বসা। আকাশ মৃদুস্বরে বলে,
– সৌম্য ছাদে আসো তো। কথা আছে তোমার সাথে।
সৌম্য আকাশের কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো। আকাশের আর সে একসাথে ছাদে যায়। আকাশ ছাদে এসে রেলিঙের উপর পা ঝুলিয়ে বসে। এটা তার অভ্যাস। সৌম্যকে বসতে বললে সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,
– এভাবেই ঠিক আছি। আপনি বলুন।
আকাশ চুপ থাকলো বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ বলে,
– সন্ধ্যার গলার অপারেশনের ব্যাপারে কি ভেবেছ?
সৌম্য চুপ হয়ে যায়। সে ঢাকা শহরে আসার দু’মাসের মাথায় সন্ধ্যাকে ডক্টর দেখিয়েছিল। ডক্টর বলেছে, তার বোনুর গলা অপারেশনে অনেক রিস্ক। সে আর সামনে এগোনোর সাহস পায়নি। কিন্তু এই কথা সে সন্ধ্যাকে বলেনি। তার বোনু শুনলে খুব ক’ষ্ট পাবে। সে জানেনা কি করবে। কিন্তু সে তো তার বোনুকে ক’ষ্ট দিতে পারবেনা। আকাশ সৌম্য’কে চুপ দেখে নিজেই বলে,
– আমি কথা বলেছি নিয়াজের সাথে। সন্ধ্যামালতীর অপারেশনে অনেক রিস্ক আছে। তুমি যদি তবুও অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নাও। তাহলে আমি আমার সিদ্ধান্ত বলছি, আমি আমার ওয়াইফকে নিয়ে ১%-ও রিস্ক নিতে চাইনা, সেখানে ৯০% রিস্ক নেয়ার প্রশ্নই নেই। ও যেমন তেমনি সুন্দর। বুঝতে পেরেছ তো আমি কি বলতে চাইছি?
কথাটা শুনে সৌম্য বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশের কথায় ভীষণ আপ্লূত হয় সে। আকাশ আবার-ও বলে,
– সো, অপারেশনের টপিকটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
একটু থেমে পাশ ফিরে সৌম্য’র দিকে চেয়ে বলে,
– কিভাবে এই এক্সিডেন্ট টা হয়েছিল?
সৌম্য আকাশের প্রশ্নে অবাক হলো না। তার বোনু তো স্পষ্ট শুনতে পায়। শুধু কথা বলতে পারেনা। আর এটা তো কেবল এক্সিডেন্ট হলেই সম্ভব। জন্মগত হলে, তার বোনু কানেও শুনতো না। কিন্তু কিভাবে এই এক্সিডেন্ট হয়েছিল, এটা সে ভুলে যেতে চায়। তার জীবনে এই জিনিসটা তাকে ততটা ক’ষ্ট দেয়, যতটা ক’ষ্ট সে তার মা, মামি মামাদের, সাধন ওদের হারিয়ে পেয়েছিল।
সে তার কথা বলা বোনুকে রেখে ঢাকায় পড়তে এসেছিল। অথচ বাড়ি ফিরে আর তার বোনুর কণ্ঠ শুনতে পায়নি। কতগুলো বছর পেরিয়ে গেল। আজও তার বোনু সেই আগের মতো সৌম্য ভাইয়া বলে একটা ডাক দেয়নি।
এখন জানলো, তার বোনুকে বেঁচে রাখতে চাইলে বাকহীন সন্ধ্যাকে নিয়েই বাঁচতে হবে।
কথাগুলো ভেবে সৌম্য’র চোখজোড়া ঝাপসা হয়। বুক ভারী হয়ে আসে। কার কাছে অভিযোগ করবে সে? যার বাবা-ই এর পিছনে দায়ী!
সন্ধ্যা আর শিমু মিলে ইরাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যা যদিও এসবে কাঁচা, যেটুকু পেরেছে করেছে। এরপর ছাদে এসেছিল। সব লাইট জ্বালানো থাকায় ভ’য় পায়নি। কিন্তু ছাদে আকাশ আর সৌম্যকে দেখে সন্ধ্যা জায়গাটি প্রস্থান করতে যেয়েও সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে যায় আকাশের কথা শুনে। আকাশের বলা সব কথা শুনে সন্ধ্যার চোখ ছাপিয়ে জল গড়ায়।
মনে পড়ে গেল, একদিন সকাল তাকে তরল জাতীয় কি যেন খেতে দিয়েছিল। কি মিষ্টি করে কথা বলছিল তার সাথে। সন্ধ্যা খুব খুশি হয়েছিল। সকাল তো তার সাথে কখনো ভালো করে কথা বলেনি। সেদিন একটুখানি ভালো ব্যবহার পেয়ে সন্ধ্যার সে কি খুশি! সকাল শরবতের মতো কি যেন বাড়িয়ে দিল, সন্ধ্যা খুশি মনে সেটা নিয়ে খেয়ে নিল। আর তারপর তার ছটফটানি বাড়লো। তা দেখে সকাল হাসলো।
কথাগুলো ভেবে সন্ধ্যার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।
সে সত্যিই আর কখনো কথা বলতে পারবে না? বা হাত উঠিয়ে গলায় আলতো করে বুলালো। কয়েক বছর আগেও মন খুলে কত কথা বলতো সে। আজ কতবছর পেরিয়ে গেল, এই কণ্ঠ থেকে একটি শব্দ বের হয়না। সে ভেবেছিল, তার ভাইয়ার টাকা হলে, তাকে অপারেশন করাবে। আর তারপর সে আবার-ও কথা বলতে পারবে। কিন্তু এটা তো তার ভাগ্যে নেই। কথাটা ভাবতেই দম আটকে আসলো।
সন্ধ্যা আর এখানে দাঁড়ালো না। ছোট ছোট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো। কতদিন পর যে আবার-ও এমন দম আটকে আসা অনুভূতি হচ্ছে সে জানেনা। কয়েকটা সিঁড়ি নেমে দাঁড়িয়ে যায়। দু’হাতের মাঝে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। তার খুব ক’ষ্ট হয়। তার জীবনটা এতো এলোমেলো কেন? কিছুই নেই তার। তার আর বাঁচতেই ইচ্ছে করেনা। একটু পর সন্ধ্যা পায়ের গতি বাড়িয়ে এগিয়ে যায়। চোখের পানির বাঁধ ভেঙেছে। তাতে কি? সৌম্য ভাইয়া সবসময় বলত,
– আমাদের দু’ভাইবোনের কপালে আল্লাহ অনেক দুঃখ লিখে রেখেছে বোনু। এজন্যই আমরা এখনো বেঁচে আছি।
কথাটা সন্ধ্যার কাছে সত্যিই মনে হলো। আল্লাহ তাদের দু’ভাইবোনকে বেছে বেছে কত ক’ষ্ট দেয়! আরও দুঃখ বাকি আছে হয়ত, এজন্য তার নিঃশ্বাস এখনও চলছে।
সৌম্য’র থেকে সব শুনে আকাশ ছাদের রেলিঙের উপর থেকে নেমে দাঁড়ায়। বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় সৌম্য’র দিকে। কোনো সুস্থ মানুষ এরকম করতে পারে? এটাই আকাশ মানতে পারছে না। সৎ মা, সৎ বোন খারাপ হয় ঠিকাছে। তাই বলে তার সন্ধ্যামালতীর গলার স্বরটুকু এতো করুণভাবে কেড়ে নিল? আকাশ ঢোক গিলল। তার ক’ষ্ট হচ্ছে। তার সন্ধ্যামালতী কতটা ছটফট করেছিল? তার সন্ধ্যামালতীকে আর কত ক’ষ্ট সহ্য করতে হয়েছে? সৎ মা, সৎ বোন মিলে তার সন্ধ্যামালতীকে এতো ক’ষ্ট দিয়েছে?
তাছাড়া নিজের বাবা এসব দেখেও এরকম করে?
তার বাবা খারাপ, আকাশ মানে। অনেক মানুষকে মে’রে’ছে তাও মানে। কিন্তু সে তার বাবার প্রাণ। এই যে আকাশ তার সন্ধ্যামালতীকে এই বাড়িতে আনবেনা, তার বাবা এই বাড়ি আছে বলে,, এটা আকাশের বাবা জানার পর, সে চলে গিয়েছে এখান থেকে। আকাশকে অনুরোধ করেছে, সে যেন কোথাও না যায়। আকাশ জানে তার বাবা ভালো নেই। একটুও ভালো নেই। কিন্তু সে ভালো মানুষ হিসেবে তার বাবাকে চেয়েছিল। তবে তার বাবা অ’মানুষ হয়ে এসেছিল তার বাবা হতে। সে এমন বাবার ভালোবাসা চায় না।
আর এদিকে সৌম্য, সন্ধ্যার নিজের বাবা হয়ে নিজের ছেলে মেয়ের প্রতি এতো পা’ষা’ণ কি করে হয়? কোনো বাবা এমন হতে পারে? আকাশের অবাকের মাত্রা পেরিয়েছে। রা’গে তার শরীর কাঁপছে। এদের প্রত্যেককে সে যে কি করবে নিজেই জানেনা। দু’হাতে পাঞ্জাবির হাতা তুলে এপাশ-ওপাশ হাঁটতে লাগলো। দু’হাতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরল। এক পর্যায়ে রা’গে ছাদের দোলনায় জোরেসোরে একটা লাথি বসায়।
আকাশকে হঠাৎ এতো রা’গতে দেখে সৌম্য অবাক হয়। আকাশ সময় নিয়ে নিজেকে সামলালো। এরপর এগিয়ে এসে সৌম্য’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– তোমার সৎ বোনের নাম কি?
সৌম্য ঢোক গিলে বলে,
– সকাল।
নামটি শুনে আকাশের ভ্রু কুঁচকে যায়। পরিচিত ঠেকছে এই নাম। কোথায় শুনেছে যেন! মাথায় একটু চাপ দিতেই কিছু মনে পড়ল। দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে বায়ানকে কল করে। রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে আকাশ গম্ভীর গলায় বলে,
– তোমার গার্লফ্রেন্ড এর নাম কি?
বায়ান থতমত খেয়ে যায়। আকাশ তার গার্লফ্রেন্ড এর কথা কিভাবে জানে? আমতা আমতা করে বলে,
– স্যার, আমার তো গার্লফ্রেন্ড……..
আকাশ রাগান্বিত স্বরে বলে,
– একটা মিথ্যা বলবি তো, তোর জ’বান কে’টে ফেলব।
বায়ান ভ’য়ে লাফিয়ে ওঠে। আকাশ তো মারাত্মক রে’গেছে। বায়ান ঢোক গিলে মিনমিনে গলায় বলে,
– ওর নাম হাসিনা।
আকাশের পছন্দ হলো না বায়ানের উত্তর। দাঁত কিড়মিড় করে ধমকে ডেকে ওঠে,
– বায়ান????
বায়ান আবার-ও ঢোক গিলল। ভীত কণ্ঠে বলে,
– স্যার সত্যি বলছি, ওর নাম হাসিনা। তবে আরেকটা নাম সকাল।
আকাশ সাথে সাথে প্রতিত্তোরে বলে,
– মেয়েটির পিক সেন্ড কর। এক্ষুনি।
বায়ান মাথা চুলকায়। তার গার্লফ্রেন্ড এর ছবি আকাশ চায় কেন? কিন্তু ছেলেটি আকাশের কথা অমান্য করল না। বেচারার আকাশের ধমক খেয়েই অবস্থা খারাপ। আকাশের নাম্বারে সকাল আর তার একটি পিক সেন্ড করে। আকাশ পিকটি পেয়ে সাথে সাথে সৌম্য’র সামনে ফোনটি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– দেখ তো এই মেয়েটি তোমার সৎ বোন কি-না!
সৌম্য অবাক হয় সকালকে দেখে। সকালকে দেখে চিনতেই পারছেনা। মেয়েটি কেমন শহুরে মেয়েদের মতো হয়ে গিয়েছে। মর্ডান পোষাক পরেছে। সৌম্য অবাক হয়ে বলে,
– আপনি সকালকে কোথায় পেলেন আকাশ ভাইয়া?
আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– আগে আমার কথার অ্যান্সার কর।
সৌম্য ছোট করে বলে,
– জ্বি। এটাই আমার সৎ বোন।
আকাশ চোখ বুজে শ্বাস ফেলল। শ’ক্ত গলায় বলে,
– তোমাদের গ্রামের নামটা যেন কি সৌম্য?
সৌম্য উত্তর দেয়,
– জ্বি, মিলনের পাড়া।
আকাশ ফোনে কিছু টাইপ করতে করতে মৃদুস্বরে বলে,
– সৌম্য তুমি ঘরে যাও। ইরা তোমার জন্য ওয়েট করছে।
সৌম্য কিছু বলতে গিয়েও বলল না। আকাশের থেকে হয়ত, আপাতত কোনো উত্তর পাবেনা, এমন ভাবনা থেকে সে চুপ হয়ে গেল। তবে ভীষণ অবাক হলো, সকালের সাথে আকাশের কানেকশন দেখে। ভাবনা নিয়েই ছাদ থেকে নেমে যায়।
আকাশ আবার-ও বায়ানকে কল করে। বায়ান আকাশের কল দেখে বারবার কপালের ঘাম মুছে। এরপর কল রিসিভ করে ফোন কানে ধরে। আকাশ শ’ক্ত গলায় বলে,
– তোমার গার্লফ্রেন্ড কোথায়?
বায়ান মিনমিন করে বলে,
– স্যার ও তো আজকেই গ্রামে গেল। আপনাকে বলেছিলাম তো!
আকাশ এপাশ-ওপাশ পায়চারি করতে করতে শ’ক্ত গলায় বলে,
– আগামীকাল বগুড়া যাবো। সকাল ছয়টার মধ্যে যেন তোমাকে আমার বাড়ির সামনে পাই।
বায়ান সাথে সাথে উত্তর করে,
– জ্বি স্যার!
আকাশ কল কেটে দেয়। ক’ষ্টে, রা’গে শরীর কাঁপছে তার। এখানে আর দাঁড়ালো না। বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে।
সন্ধ্যা ঘরে বসে একা একা অনেকক্ষণ কেঁদেছে। এরপর নিজেকে সামলে চোখেমুখে পানি দেয়। মাঝে কয়েকদিন কলেজ যায়নি। আগামীকাল কলেজ যাবে ভাবলো। তাহলে এতো খারাপ-ও লাগবেনা। লামিয়ার সাথে কয়েকদিন কথা নেই। অতঃপর রুম থেকে বের হয়।
তখন-ই আকাশ তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। সন্ধ্যা অবাক হয়। এগিয়ে গিয়ে রেলিঙের সাথে দাঁড়ালে দেখল আকাশ দ্রুতপায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। কোনোদিকে তাকায় না। দৃঢ় পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আসমানী নওয়ান আকাশকে বেশ কয়েকবার পিছু ডাকলো। আকাশ তাকায়নি। শুধু ছোট করে বলে,
– কাজ আছে।
এরপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সৌম্য ঘরে ঢুকতে গিয়ে আকাশকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে অবাক হলো। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সন্ধ্যা ভীষণ অবাক হয়। আকাশের চলনেই বুঝেছে মানুষটা হয়ত কোনো কারণে অনেক রে’গে আছে। কিন্তু কারণ বুঝলো না।
সৌম্য সন্ধ্যাকে দেখে এগিয়ে এসে ডাকে,
– বোনু?
সন্ধ্যা ভাইয়ের ডাকে ফিরে তাকায়। সৌম্য সন্ধ্যার চোখ দু’টো লাল দেখে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
– তোর কি হয়েছে বোনু? চোখ দু’টো এমন কেন?
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। তার ফোনটা খুঁজে পাচ্ছেনা। সৌম্য’র হাত থেকে সৌম্য’র ফোন নিয়ে টাইপ করে,
– ঘুম কম হয়েছিল তাই। আমি কালকে কলেজ যেতে চাই। কিন্তু আমার তো এই বাড়ি ড্রেস, বইখাতা কিছুই নেই। আমাকে এগুলো ওই বাড়ি থেকে এনে দিবে ভাইয়া?
লেখাটি পড়ে সৌম্য তাকালো সন্ধ্যার দিকে। সৌম্য একবার আকাশের পাশের ঘরের দিকে তাকালো, যে ঘর আসমানী নওয়ান তার জন্য গুছিয়েছে। আর ওই ঘরে তার ইরাবতী ওয়েট করছে। আকাশ ভাইয়া কোথায় যেন গেল! রে’গেও আছে। নয়তো আকাশকে বললেই হতো।
সন্ধ্যা সৌম্যকে ভাবুক দেখে আবার-ও টাইপ করে,
– তোমার ফ্রেন্ড রিহান ভাইয়াকে একটু বলবে? আমি উনার সাথে গিয়ে ড্রেস আর বইগুলো আনবো শুধু। আর তুমি এখন যেতে চাইলেও আমি তোমার সাথে যাবো না। আমি অনেক ক’ষ্ট করে ইরা আপুকে সাজিয়েছি।
লেখাটি পড়ে সৌম্য মৃদু হাসলো। সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন নিয়ে রিহানের নাম্বরে কল করে বললে, রিহান জানায় ১০ মিনিটে আসছে। সৌম্য বেশ কয়েকবার বলে,
– বোনুকে সাবধানে নিয়ে যাবি। আর তাড়াতাড়ি এই বাড়ি রেখে যাবি।
রিহান এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
– আরে ভাই, তোর বোনকে আমি খাবো না। এমন ভাব করিস যেন, মানুষের আর বোন নেই।
সৌম্য পাত্তা দেয়না। কল কেটে দেয়। সন্ধ্যা তার ঘরে চলে যায়, রেডি হতে। সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে যায়।
ইরাকে শিমু আর সন্ধ্যা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিল। মুখে একটু-আধটু সাজের ছোঁয়া-ও দিয়েছিল জোর করে। ইরার সাজগোছ এতো পছন্দ নয়। তবুও দিয়েছিল। কিন্তু বেচারি টিকতে না পেরে মুখ ধুয়ে এসে ঘরে বসে ছিল। ওভাবে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। জীবনের প্রথমবার শাড়ি পরেছে, সাথে আবার ঘুমিয়েছে। শাড়ির পুরো এলোমেলো হয়ে যা তা অবস্থা। শাড়ির অর্ধেকের বেশি অংশ মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বাকি অর্ধেকটা কোনোরকমে গায়ের উপর জড়ানো।
ইরার অবস্থা দেখে সৌম্য কেশে ওঠে। সে জানে ইরা কখনো শাড়ি পরেনি। শাড়ি তো দূর, এ তো থ্রি-পিস-ই পরেছে হয়তো দুই থেকে তিন দিন। একে শাড়ি পরিয়েছে কেন দুঃখে! ভেবে সৌম্য হতাশ হলো।
সৌম্য এগিয়ে এসে ইরার মুখটা ভালোভাবে দেখার জন্য একটু ঝুঁকলে, ইরা তখন-ই চোখ মেলে তাকায়। মুখের উপর সৌম্য’র মুখ দেখে ধড়ফড় করে উঠে বসতে গিয়ে সৌম্য’র থুতনির সাথে তার মাথা লাগে। সৌম্য চোখমুখ কুঁচকে ‘আহ!’ শব্দ করে ওঠে। ইরা দু’হাতে চোখ ডলে অনুতপ্ত স্বরে বলে,
– আমি বুঝতে পারিনি।
সৌম্য সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ডান হাতে থুতনি ডলে বলে,
– তুই কি বাচ্চা?
ইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কেন?
সৌম্য বিরক্ত হয়ে চোখের ইশারায় ইরাকে দেখিয়ে বলে,
– কি পরেছিস এটা?
ইরা নিজের দিকে তাকালো। শাড়ি তো তার গায়েই নেই। বিছানার উপর পড়ে থাকা শাড়ির অংশ গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– শাড়ি পরেছিলাম। কিন্তু খুলে গিয়েছে।
সৌম্য হতাশ হয়ে হয়ে,
– আগে জামা পরতে শেখ।
ইরা সৌম্য’র দিকে তাকিয়ে বলে,
– শিখব। আমাদের বিয়ে কখন হবে?
– হয়েছে।
ইরা অবাক হয়ে বলে,
– মানে? আমাকে ছাড়া কিভাবে বিয়ে হলো? আমি কবুল বলব না?
সৌম্য দু’টো শার্টের বোতাম খুলে মৃদুস্বরে বলে,
– মেয়েদের অনুমতি লাগে। কবুল বলা লাগেনা।
ইরা ছোট করে বলে,
– ওহ।
সৌম্য বিছানার কিনারায় দাঁড়ানো। ইরা বিছানায় কোণায় হাঁটুতে ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়। ডান হাত বাড়িয়ে সৌম্য’র গালে হাত দিয়ে বলে,
– সত্যি আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে সৌম্য?
সৌম্য ইরার দিকে তাকালো। মেয়েটির চোখের কোণে পানি সৌম্য’র চোখে আটকায়। ছোট করে বলে,
– হুম।
ইরার কি হলো কে জানে। দু’হাতে সৌম্যকে জড়িয়ে ধরে, সৌম্য’র বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ওঠে। সৌম্য ঢোক গিলল। শ’ক্ত করে ইরাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজল। ইরাকে কাঁদতে নিষেধ করল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। বেশ অনেকটা সময় পর-ও ইরাকে থামতে না দেখে সৌম্য ইরার মাথা উঁচু করে। ইরা ফোঁপায়। গাল বেয়ে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ে। সৌম্য দু’হাতে ইরার চোখের পানি মুছে দেয়। মৃদুস্বরে বলে,
– কান্না থামা ইরাবতী। অসুস্থ হয়ে যাবি।
ইরা চোখ মেলে তাকায়। ধরা গলায় বলে,
– আমি কখনো ভাবিনি, আমি তোকে পাবো। আমার এখন-ও বিশ্বাস হচ্ছেনা তুই আমার স্বামী।
সৌম্য মৃদু হাসলো। কবুল বলতে গিয়ে কতবার যে বেঁধে যাচ্ছিল। চোখের কোণে পানি জমেছিল। তার ইরাবতীকে সে পেয়েছে, সারাজীবনের জন্য। তার নিজেরই তো এখন-ও অবিশ্বাস্য লাগে।
সৌম্য ইরার কপালে সময় নিয়ে চুমু আঁকে। এরপর ইরার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে মৃদুস্বরে বলে,
– আমার ইরাবতী, আমার বউ।
আকাশ রাস্তার পাশে গাড়ি সাইড করে রেখেছে। ড্রাইভিং সিটে বসে এক ডান গাড়ির বাইরে বের করে, বাম পা গাড়ির ভেতরে রেখেছে। ডান হাতে সিগারেট। সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস তার নেই বললেই চলে। তবে মাঝে মাঝে খায়। অতিরক্তি রা’গ, নয়তো টেনশনে এমন করে।
বা হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে আলতো হাতে কপাল স্লাইড করে একটু পর পর। মাথা ব্য’থা করছে।
হঠাৎ-ই খেয়াল করল, রাস্তার অপর পাশে একটি সিএনজি এসে থামে। কয়েক সেকেন্ড এর মাঝে সিএনজিটি চলে যায়। আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দু’জনকেই চিনতে পেরে মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। আধখাওয়া জ্বলন্ত সিগারেটের উপর বুড়ো আঙুলে চেপে ধরে।
সন্ধ্যা আগে আগে এগিয়ে যায়, রিহান পিছু পিছু যায়। আকাশ গাড়ির সিট থেকে উঠে দাঁড়ায়। বা হাতে শব্দ করে গাড়ির দরজা লাগায়। এমনিতেই এক বিষয় নিয়ে রা’গে, ক’ষ্টে মাথা ফেটে যাচ্ছিল। এর মধ্যে আরেকটা এসে হাজির হয়েছে। বা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়। ডান হাতের বুড়ো আঙুল জ্বলন্ত সিগারেটে এখনো চেপে ধরা।
রিহান গেইটের সামনে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা রিহানের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কিছু বোঝাতে চায়। তখন-ই আকাশ পিছন থেকে তার হাতের জ্বলন্ত সিগারেট রিহানের চোখে চেপে ধরে। রিহান চেঁচিয়ে ওঠে। ছিটকে সরে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে পড়তে নিলে আকাশ বা হাতে রিহানের শার্টের কলার ধরে পিছন দিকে ধাক্কা দেয়। রিহান কয়েক পা পিছিয়ে যায়। ডান হাতে তার চোখ চেপে ধরেছে। প্রচুর জ্বলছে।
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় তাকায়। কাহিনী পুরো তার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।
আকাশ রিহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বা হাতে সর্বশক্তি দিয়ে রিহানের গলা চেপে ধরে। গর্জন তুলে বলে,
– সেদিন বলেছিলাম আমার বউয়ের আশেপাশে আসবি না। দু’দিন না পেরোতেই ম’রা’র জন্য আবার আমার বউয়ের পিছেই হাজির হয়েছিস। তো এবার ম’র।
রিহানের অবস্থা খারাপ। সন্ধ্যা দৌড়ে এসে আকাশকে সরিয়ে দিতে চায়। আকাশ ভ’স্ম করে দেয়া চোখে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা ঢোক গিলল। তার জন্য রিহান ভাইয়াকে বারবার এভাবে হে’ন’স্তা হতে হচ্ছে। সন্ধ্যা আগে বুঝলে কখনো রিহানের সাথে আসতো না। সন্ধ্যা আকাশকে ইশারায় বোঝায়,
– রিহানকে ছেড়ে দিতে।
আগুনে ঘি ঢালার ন্যায় কাজ করল, সন্ধ্যার এটুকু কাজ। রিহানকে ধাক্কা দিয়ে সন্ধ্যাকে টেনে উল্টোপাশে নিয়ে এসে দাঁড় করায়। ডান হাতে শ’ক্ত করে সন্ধ্যার গাল চেপে হিসহিসিয়ে বলে,
– বাইরের মানুষের জন্য দরদ দেখাস ক্যান? দু’টোকেই জ’বাই করব বলে দিলাম।
সন্ধ্যা গালে ব্য’থা পায়। চোখ বুজে নেয়। বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে জল গড়ায়। আকাশ সন্ধ্যার গালে পানি দেখে সন্ধ্যার গাল ছেড়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
– ওর জন্য আবার কান্না-ও করছ? তোমার সামনেই ওকে কে’টে টুকরো টুকরো করব আজ।
কথাটা বলে রিহানের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে সন্ধ্যা দ্রুত আকাশের সামনে এসে দাঁড়ায়। আকাশকে ঠেলে পিছিয়ে নিয়ে যায়। হাতজোর করে, রিহানকে কিছু না বলার জন্য।
আকাশ দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সন্ধ্যার দিকে আছে। রা’গে কাঁপছে সে। তার সন্ধ্যামালতী অন্যের জন্য তার-ই কাছে রিকুয়েষ্ট করছে? এসব সে হজম করবে? চোখ বুজে শ্বাস টানলো। আজ হয়ত, সন্ধ্যা তার হাতে মা’র না খেয়ে থামবে না।
হঠাৎ-ই চোখ মেলে সন্ধ্যাকে টেনে সন্ধ্যার পিঠ তার বুকে ঠেকিয়ে দেয়। বা হাতে শ’ক্ত করে সন্ধ্যার পেট চেপে ধরে নিজের সাথে। একটু ঝুঁকে সন্ধ্যার গালের সাথে গাল লাগিয়ে চোখ বুজে শ’ক্ত গলায় বলে,
– সন্ধ্যামালতী আমি প্রচন্ড রে’গে আছি। ওই ছেলেকে তো আমি মা’র’বোই। বাট তুমি ওকে নিয়ে কি ভাবো? ক্লিয়ার কর। নয়তো তুমি আমার হাতের শ’ক্ত আ’ঘা’ত পাবে।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশ চোখ মেলে তাকায়৷ পাঞ্জাবির পকেট থেকে তার ফোন বের করে সন্ধ্যাকে ফোন বাড়িয়ে দিলে সন্ধ্যা কাঁপা হাতে টাইপ করে,
– উনি ভাইয়ার ফ্রেন্ড। আমার সৌম্য ভাইয়ার মতো-ই আরেকটা ভাই। উনিও আমাকে বোন ভাবে। এই শহরে আসার পর আমাদের কেউ ছিল না। উনি সবসময় আমাদের উপকার করেন। প্লিজ উনাকে হসপিটালে নিয়ে যান।
সন্ধ্যার লেখাটি পড়ে আকাশ থমথমে মুখে তাকায়। সন্ধ্যার ভাই শব্দটি আকাশকে স্বস্তি দিল। তবে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– ও তোমাকে বোন ভাবে না।
সন্ধ্যা নিজেকে সামলালো। আকাশকে রা’গাতে চাইলো না। অতঃপর আকাশকে বোঝানোর জন্য আবার-ও টাইপ করে,
– উনি আমাদের অনেক হেল্প করেছেন। আপনি ছিলেন না বলে ভাইয়া উনার সাথে আমাকে এই বাড়ি পাঠিয়েছে। আমি আমার কলেজ ড্রেস নিয়ে এক্ষুনি চলে যেতাম। প্লিজ উনাকে হসপিটালে নিয়ে যান। আমার জন্য উনার ক্ষ’তি হলে আমার অনেক গিল্টি ফিল হবে।
আকাশ হতাশ! তার বউ তো যে কোনো ভাইয়ের জন্য পুরো দয়ার সাগর। আর সে যে কেঁদেকেটে পুকুর ভরিয়ে ফেলে তার বেলায় বউয়ের কোনো গিল্টি ফিল নেই। আকাশ ঘাড় বাঁকিয়ে রিহানের দিকে তাকালে দেখল রিহান তাদের দিকে চেয়ে আছে। একটা চোখ লাল। আকাশ এতো ভাবলো না। এই ছেলের চোখ দেখেই বোঝা যায়, তার বউয়ের উপর নজর দিয়েছে। এরপর সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন নিয়ে নিয়াজকে কল করে। রিসিভ হলে বলে,
– নিয়াজ পিছনদিকে ১০ মিনিট ব্যাক কর। একটা রোগী আছে। ওকে নিয়ে হসপিটাল যাও।
নিয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
অন্তঃদহন পর্ব ৩১
– আমাকে ভালো মানুষ পেয়ে আর কত খাটাতে চাও? তুমি আনলেই তো পারো।
আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– আমি পারবো না। ও আমার শ’ত্রু।
নিয়াজ অবাক হয়ে বলে,
– তুমি তোমার শ’ত্রুর ট্রিটমেন্ট করাতে চাও? কি উন্নতি তোমার!
আকাশ বা হাত সন্ধ্যার পেট থেকে উঠিয়ে সামনে দিয়েই সন্ধ্যার কাঁধ জড়িয়ে ধরে মৃদুস্বরে বলে,
– বউ আবদার করেছে। বউয়ের আবদার ফেলতে পারিনা।