অন্তঃদহন পর্ব ৩৫

অন্তঃদহন পর্ব ৩৫
DRM Shohag

আকাশ বুঝল সন্ধ্যা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ছেলেটা বিচলিত হয়। কি হয়েছে তার সন্ধ্যামালতীর? বা হাত সন্ধ্যার মাথার পিছনে রেখে মৃদুস্বরে ডাকে,
– সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা নড়ে না। আকাশকে আরও শ’ক্ত করে ধরে। আকাশের বুকে চাপ লাগে। কিন্তু সে এটুকু ব্য’থা গায়ে মাখলো না। অবাক হলো সন্ধ্যার কাজে। সন্ধ্যা নিজে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে, ভাবতেই তার সব কেমন এলোমেলো লাগে।

সন্ধ্যা ফোঁপায়। আকাশ ঢোক গিলল। সন্ধ্যাকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারেনা। সন্ধ্যা কাট্টি মেরে আকাশকে ধরে আছে, যেন ছেড়ে দিলেই আকাশ হারিয়ে যাবে। আকাশ অবাকের উপর অবাক হয়। এটা সত্যিই তার সন্ধ্যামালতী? তার সন্ধ্যামালতী তাকে জড়িয়ে ধরেছে, এই অবাকের রেশটুকুই কাটাতে পারছেনা। তার উপর সন্ধ্যাকে সে নিজে একটুখানি সরাতে চাইলেও সন্ধ্যা তাকে ছাড়ছে না। আকাশ ঢোক গিলল। দু’হাতে সন্ধ্যার মুখ খানিকটা জোর করেই তার বুক থেকে তোলে। সন্ধ্যার মুখ উঁচু করে ধরে।
চারপাশের লাইটের আলো সন্ধ্যার মুখে এসে পড়েছে। সন্ধ্যার চোখমুখ ফোলা। কাঁদতে কাঁদতে এই অবস্থা করেছে, আকাশ বুঝল। আকাশ দু’হাতের আঁজলায় সন্ধ্যার মুখ নিয়ে কোমল স্বরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– কি হয়েছে সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যার চোখ বন্ধ। দু’হাত আকাশের পিঠের শার্ট এখন-ও খামচে ধরে রেখেছে। আকাশ আবার-ও বলে,
– কাঁদছ কেন সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা কোনো সাড়া দেয়না। ভেতরে ভেতরে ফোঁপানি থামে না তার। সন্ধ্যার কপালের উপর আসা চুলগুলো আকাশ ডান হাতে সরিয়ে দেয়। অসহায় চোখে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। নরম কণ্ঠে বলে,
– তোমার কি হয়েছে সন্ধ্যামালতী? আমাকে বলো? এভাবে কাঁদছ কেন? কোনো কারণে ক’ষ্ট পেয়েছ? শুধু একবার বলো বউ। আমি সব ঠিক করে দিব।

সন্ধ্যা ঢোক গিলল। একটু পর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। ভেজা চোখদুটো অসম্ভব লাল। আকাশ উদ্বিগ্ন হয়। সন্ধ্যার মুখের দিকে একটু ঝুঁকে, দু’হাতের আঁজলায় সন্ধ্যার মুখখানি রেখে হাসফাস কণ্ঠে বলে,
– কি অবস্থা করেছ চোখের? এতো কেঁদেছ কেন বউ? বলো?
অতিরিক্ত কান্নার ফলে সন্ধ্যা থেকে থেকে কেঁপে ওঠে। চোখে থেকে গাল বেয়ে পানির কণা গড়ায় তো গড়ায়। আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যার গাল মুছে দেয়। অসহায় কণ্ঠে বলে,
– বউ কান্না অফ কর, প্লিজ!

সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেয়ে। না কান্না থামায়, না তো কিছু ইশারা করে। অভিমানী চোখে আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখা হওয়ার পর থেকে আকাশ তাকে কত জোর করে জড়িয়ে ধরত! অথচ সে সেই কখন থেকে আকাশকে জড়িয়ে আছে। কিন্তু আকাশ তাকে একবার-ও জড়িয়ে ধরে না। সে তো চাইছে, তার শুভ্র-পুরুষ তাকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরুক।
তাছাড়া আকাশকে দেখে আকাশের ওসব পা’গ’লা’মি করে বলা কথাগুলো তার বেশি মনে পড়ছে। যার ফলে না চাইতেও চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
আকাশ না তো সন্ধ্যার অভিমানী চোখের ভাষা বুঝল, না সন্ধ্যার কান্নার কারণ বুঝল। সে তো তার সন্ধ্যামালতীর মনের খবর এখনো পায়নি। কিভাবে বুঝবে? কিন্তু তার সন্ধ্যামালতীকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার যে ক’ষ্ট হয়। অনুতপ্ত স্বরে বলে,

– আমার কোনো কাজে ক’ষ্ট পেয়েছ সন্ধ্যামালতী? এমন হলে, স্যরি বউ! প্রমিস করছি, আর ভুলেও ভুল কিছু করে তোমায় ক’ষ্ট দিব না।
সন্ধ্যা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। নতুন করে চোখ ভেজে মেয়েটার। আকাশ সন্ধ্যার চোখে পানি দেখে আবার-ও হাসফাস করে। তার বউ নিশ্চয়ই অনেক ক’ষ্ট পেয়েছে। অসহায়ত্বে ঘেরা কণ্ঠে আকাশ বলে,
– আমি কি অনেক বড় অপরাধ করেছি বউ? তুমি বললে, কান ধরে ওঠাবসা করব। এখানে না হলে বাড়ির সবার সামনে করব। এটাও না হলে ঢাকা শহরের মাঝখানে গিয়ে কান ধরে ওঠাবসা করব। আরও অনেক উপায় আছে। তোমরা কোনটা চাই বউ, বলো?
সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ সন্ধ্যার দৃষ্টি দেখে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,

– এরকম কিছু করলে আমাকে সবাই জোকার ভাববে জানি। কিন্তু প্রবলেম নেই বউ। তুমি হাসলেই হবে।
সন্ধ্যা অদ্ভুদ চোখে তাকায়। তার আকাশকে আসলেই পা’গ’ল লাগলো। আকাশ জানেই না, সে কেন কাঁদছে। অথচ নিজের ভুল মনে করে, কোথায় কোথায় কান ধরে ওটাবসা করতে চাইছে। আবার জোকার উপাধিও নিতে চাইছে। সন্ধ্যা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু তার হাসি আসলো না। আকাশের সবকিছুতে এতো এতো ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে সে। না চাইতেও বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে। যেমন এখন আবার-ও চোখজোড়া জলে টইটুম্বুর হয়ে গেল।
আকাশের নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগলো। তার বউ একটুও হাসেনা কেন? সে কি করলে তার সন্ধ্যামালতী একটু হাসবে? আকাশ সন্ধ্যার গাল মুছে দিয়ে, সন্ধ্যার চোখে চোখ রেখে ভয়েস নামিয়ে বাচ্চাদের মতো আবদার করে,

– প্লিজ বউ আর কান্না কর না! স্যরি তো!
সন্ধ্যার চোখজোড়া টলমল করে ওঠে। সে আকাশের সামনে থাকলে কান্না থামাতেই পারবে না। কিভাবে পারবে? আকাশ তাকে এতো ভালোবাসে! সে যে প্রতিটি মুহূর্ত অনুভব করছে। আকাশের বলা প্রতিটি শব্দে সে অসীম ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে। এতো এতো খুশি, এতো শান্তি সে কোথায় রাখবে? কিভাবে প্রকাশ করবে? তার অশ্রু ঝরে। সে আকাশের কথা মানতে পারছে না। সে কান্না থামাতে পারছেনা। সে যে অতিরিক্ত খুশি হয়ে কেঁদে ফেলে, এটা আকাশকে কিভাবে বোঝাবে সে?
আকাশ সন্ধ্যার গালে গড়িয়ে পড়া পানির দিকে চেয়ে রইল। ঢোক গিলল ছেলেটা। তার মা বলল, সন্ধ্যামালতী তার জন্য কাঁদছে। তার কোন দোষে কাঁদছে, এটা যে সে বুঝতে পারছেনা। আকাশের নিজের উপর রা’গ লাগছে এবার। নিজেকে চারটে থা’প্প’ড় মা’র’তে ইচ্ছে করছে। সে তার বউটাকে জীবনে হাসাতে পারলো না, শুধু কাঁদিয়েই গেল। ভীষণ অসহায় লাগলো নিজেকে।

আকাশ সন্ধ্যার ভেজা গাল আলতো হাতে মুছে দেয়। আকাশের আদুরে ভাবে সন্ধ্যার আবার-ও চোখ ভেজে। আকাশ দেখল, কিছু বলল না। বেশ কিছুক্ষণ পর আকাশ সন্ধ্যার চোখে চোখ রাখে।
ছেলেটা অবাক হয়, সন্ধ্যা চোখ খোলার পর থেকে তার চোখ থেকে এক সেকেন্ড এর জন্য-ও চোখ সরায়নি। কথাটা ভেবে আকাশের ভীষণ ভালো লাগে।
আকাশ সন্ধ্যার ডান হাত তার বা হাতে মাঝে রেখে
তার বুকের বা পাশে চেপে রাখে। এরপর সন্ধ্যার বা হাত তার ডান হাতের মাঝে নিয়ে একটু উঁচু করে, সন্ধ্যার বা হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ায়। সন্ধ্যা সামান্য কেঁপে ওঠে। দু’জনের দৃষ্টি দু’জনের পানে।
আকাশ সন্ধ্যার হাতের পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখা অবস্থায়, সন্ধ্যার চোখে চোখ রেখে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– সন্ধ্যামালতীর অশ্রু আমার বুক ব্য’থার কারণ,
সে কি আমার এই ব্য’থা করবে না নিবারণ?
সন্ধ্যার পুরো শরীরে একধরনের শিরশিরানি অনুভূতি হয়। আগের চেয়েও ভীষণ আবেগী হয়ে পড়ে মেয়েটি। বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণা জমতে শুরু করে।
আকাশ বা হাতে সন্ধ্যার কোমর জড়িয়ে ধরে। ডান হাতে সন্ধ্যার চুল কানের পিঠে গুঁজে দেয়। এরপর সন্ধ্যার গালে হাত রেখে আবদার করে,

– একবার হাসো বউ। কতদিন তোমার হাসি দেখিনা!
সন্ধ্যার মুখখানি মলিন হয়। আকাশ আবার-ও একটই সুরে আবদার করে,
– বউ হাসো।
সন্ধ্যা এবার আকাশের আবদার রাখলো। চোখে পানি নিয়েই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। সন্ধ্যার গালে সৃষ্ট টোলে দৃষ্টি আটকায় আকাশের। ডান হাতের বুড়ে আঙুল টোলটির উপর রেখে মৃদুস্বরে বলে,
– এটা ভীষণ সুন্দর!
সন্ধ্যা অবাক হয়। সে বুঝেছে, আকাশ তার গালে টোলের কথা বলছে। হঠাৎ আকাশের চোখে থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি পড়লে আকাশের লাল পাঞ্জাবিতে র’ক্ত দেখে ভীত হয়। বা হাত বাড়িয়ে আকাশের বুক বরাবর র’ক্তভেজা পাঞ্জাবির উপর হাত দেয় সন্ধ্যা।

আকাশ বুঝতে পেরে দ্রুত সন্ধ্যার হাত অনুসরণ করে তার বুকে তাকায়। এরপর সন্ধ্যার দিকে তাকালে দেখল সন্ধ্যার চোখেমুখে ভীতি। আকাশ সন্ধ্যার দু’হাত তার দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। সন্ধ্যার চোখের কোণে নতুন জলকণা আকাশের চোখে পড়ে। কপালে চিন্তার ভাঁজ। সন্ধ্যা তার দৃষ্টি দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আকাশের দিকে। উত্তরের আশায় চেয়ে থাকে।
আকাশ নিজের প্রতি সন্ধ্যার চিন্তিত মুখ দেখে একটু হাসলো। সন্ধ্যার মনোভাব পড়তে পারলেও সঠিক উত্তর দিল না। তার বউকে আর কাঁদাতে চাইলো না। সন্ধ্যার হাত ধরে বাড়ির দিকে যেতে যেতে বলে,
– এসব কিছু না সন্ধ্যামালতী।
সন্ধ্যা খুব ভালোই বুঝল, আকাশ তাকে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল। তার ভীষণ চিন্তা হয়।
আকাশ সন্ধ্যার হাত ধরে একেবারে দোতলায় সন্ধ্যার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা ইশারায় বোঝায়,
– আপনার কি হয়েছে বলুন?

আকাশ মৃদু হাসলো। তার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না। বুক, হাত, পা সবজায়গায় ব্য’থা সাথে ভীষণ জ্বলুনি। শরীরের যে কি অবস্থা আল্লাহ-ই জানে। সন্ধ্যাকে এসব দেখাতে চাইলো না। সে একটুখানি সুস্থ থাকলে কায়দা করে তার বউকে ঠিক নিজের কাছে রাখতো। সেদিন ছাদে বসার মতো করে হলেও।
আকাশ ভাবনা রেখে সন্ধ্যার গালে হাত দিয়ে বলে,
– অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়।
কথাটা বলে আকাশ দ্রুতপায়ে তার ঘরের দিকে যায়। স্বাভাভিক ভাবেই হাঁটাছে, যার ফলে সন্ধ্যা বুঝল না। কিন্তু আকাশের পাঞ্জাবিতে র’ক্ত দেখে তার মন উতলা হয়। সে শব্দবিহীন ছোট ছোট পায়ে আকাশের পিছু পিছু যায়।
আকাশ তার ঘরে গিয়ে দরজা আটকাতে নিলে সামনে তাকিয়ে থেমে যায়। সন্ধ্যা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মলিন মুখে তার দিকে চেয়ে আছে। আকাশের চোখেমুখে বিস্ময়।
কি মায়াবী চাহনী তার সন্ধ্যামালতীর! আকাশের বুক ধুকধুক করে। সন্ধ্যা যেন কত মায়া, কত আকুতি নিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে।

আকাশ দ্রুত দু’পা এগিয়ে এসে ডান হাতে সন্ধ্যাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। সন্ধ্যা আকাশকে জড়িয়ে ধরে আবার-ও ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। মেয়েটি বোধয় আকাশের জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় ছিল। আকাশ বুঝল, সন্ধ্যার চোখের পানিতে তার পাঞ্জাবি নতুন করে ভিজতে আরম্ভ করেছে। বুকে ব্য’থা পেলেও হাতের বাঁধন শ’ক্ত করল। কি হয়েছে তার বউটার আজ! শুধু কাঁদছে কেন? সন্ধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– তোমার কি হয়েছে সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা ফোঁপায়। আকাশকে শ’ক্ত করে ধরে। আকাশ বুঝল সন্ধ্যার কান্ড। মৃদুস্বরে বলে,
– কোথাও যাচ্ছিনা আমি।
এরপর সন্ধ্যাকে ছেড়ে সন্ধ্যার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
– হুশ! আর কাঁদে না বউ।
সন্ধ্যা নাক টানলো। এরপর তার দু’হাতে আকাশের পাঞ্জাবির বোতামগুলো খুলতে শুরু করে। আকাশ অবাক হয় সন্ধ্যার কান্ডে।

সন্ধ্যা আকাশের পাঞ্জাবির সবগুলো বোতাম খুলে ডানদিকে পাঞ্জাবি সরিয়ে দেখল, আকাশের বুকে ব্যান্ডেজ। আর পুরো ব্যান্ডেজ ভিজে র’ক্তে মাখামাখি হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা তার কাঁপা হাত আকাশের বুকে রেখে ফুঁপিয়ে ওঠে। এতো র’ক্ত কেন তার আকাশের বুকে? মেয়েটার যে ক’ষ্ট হয়।
আকাশ বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সন্ধ্যার দিকে। তার জন্য সন্ধ্যামালতী এভাবে কাঁদছে? সন্ধ্যামালতীর চোখের জল তাকে ক’ষ্ট দেয়। কিন্তু এবেলায় আকাশ স্থির চোখে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে রইল। কোথাও একটা পরম শান্তি মিলেছে। আকাশ সন্ধ্যাকে টেনে বেডের উপর বসায়। এরপর সন্ধ্যার সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাতে সন্ধ্যার চোখমুখ মুছে দিয়ে
মৃদু হেসে বলে,

– আমার কিছু হয়নি সন্ধ্যামালতী। কিছু হলে কি আমি এভাবে হাঁটতে পারতাম বলো? তুমি বসো। আমি পাঁচমিনিটে শাওয়ার নিয়ে আসছি।
কথাটা বলে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন রাখতে গিয়েও মায়ের নাম্বার থেকে একটি মেসেজ এসেছে দেখে রাখলো। নোটিফিকেশনে ক্লিক করে মেসেজটি পড়ল,
– জান্নাত কিন্তু খায়নাই আব্বা। আমি ঘুমাইতাছি।
মেসেজটি এসেছে প্রায় ৪০ মিনিট আগে। আকাশ আড়চোখে সন্ধ্যার দিকে তাকালো। এগিয়ে গিয়ে ফোন বাড়িয়ে দিলে সন্ধ্যা সাথে সাথে আকাশের ফোন নিয়ে কিছু টাইপ করে। আকাশ পড়ল,
– আপনার কি হয়েছে প্লিজ বলুন। আর আপনি এক্ষুনি হসপিটালে যান।
আকাশ মেসেজটি পড়ে হাসলো। মৃদুস্বরে বলে,

– মাত্র বলেছি কিছু হয়নি আমার। আমি এসব ব্যান্ডেজ খুলে আবার-ও করব সন্ধ্যামালতী। তুমি দু’মিনিট বসো। আমি এক্ষুনি আসছি।
কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে দরজা আটকেছে। দ্রুতপায়ে নিচে নেমে ফ্রিজ খুলে সব খাবার বের করল। গরুর মাংস রান্না করেছে। আকাশ ভাত, মাংস দু’টো বাটিই ওভেনে দিয়ে গরম করল। এরপর দু’প্লেটে ভাত, মাংস বেড়ে তার ঘরের দিকে এগিয়ে আসে।
আকাশ ঘরের দরজা খুলে দেখল সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ ডান হাতের ঢাকা প্লেট টেবিলের উপর রাখলো। আরেকটি প্লেট নিয়ে সন্ধ্যার সামনে এসে বলে,
– দ্রুত খাবে।

সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সে খায়নি আকাশ জানলো কিভাবে? আর তরকারি গরম দেখে আরও অবাক হয়। আকাশ এসব গরম করে আনলো? সে নিজেই করে নিত। আকাশ সন্ধ্যার বিস্ময় দৃষ্টির উত্তর মৃদুস্বরে করে,
– মা বলেছে, তুমি খাওনি। আর আমি শুধু খাবার গরম নয়, তোমাকে রেঁধে খাওয়ানোর মতো প্রায় অনেক রান্না পারি। তাই অবাক না হয়ে দ্রুত খাও।
কথাটা বলে সন্ধ্যার হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে,
– আমার হাত, পা-ও কেটেছে সন্ধ্যামালতী। কিন্তু তুমি যদি এক্ষুনি না খাও। তাহলে আমার আর ব্যান্ডেজ করা হবেনা।

সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেয়ে রইল। সে দেখেছে, আকাশের অপর হাতের প্লেটটি। আকাশ হয়ত নিজের জন্য খাবার এনেছে ওটাতে। সন্ধ্যার ইচ্ছে করল, আকাশের সাথে খেতে। কিন্তু সে না খেলে আকাশ যদি ব্যান্ডেজ না করে? এতোক্ষণে এটুকু বুঝেছে আকাশ কাটা-ফাটাকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু তার তো ভীষণ খারাপ লাগে। এটুকু ভাবতে গিয়েই চোখের কোণে পানি জমলো। সন্ধ্যা ডান হাতে চোখে মুছে নেয়। এরপর পানির বোতল নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে ভাত মাখায়। আকাশ মানুষটাকে সে এখন-ও পুরোপুরি চেনেনা। হঠাৎ পা’গ’লা’মি দেখে,, সবচেয়ে বেশি সে আকাশের রা’গ-ই দেখেছে। তাকে খেতে না দেখে রে’গে যদি সত্যিই আর নিজের যত্ন না নেয়, এজন্যই সন্ধ্যা আকাশের কথার অবাধ্য হলো না।

আকাশ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। ভেতর থেকে শার্ট-প্যান্ট পরে বেরিয়েছে। যদিও শাওয়ার নেয়ার ফলে সব র’ক্ত ধুয়েমুছে গিয়েছে। আর বোঝা যাচ্ছেনা দাগগুলো তেমন। তবে শরীর জ্বলছে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সেসব আকাশের গায়ে লাগছে না। তার সন্ধ্যামালতীর তার জন্য এটুকু চিন্তা, একটুখানি যত্ন করার চেষ্টা এসব তার মনে ভীষণরকম শান্তি দিচ্ছে। যে শান্তি কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া যায়না।
আকাশ টেবিলের উপর থেকে তার খাবারের প্লেট এনে সন্ধ্যার পাশে বসে। সন্ধ্যার খাওয়া শেষ। শেষবারের নলা মুখে নিয়ে চিবোচ্ছে। আকাশকে তার পাশে বসতে দেখে আকাশের দিকে তাকালো।
আকাশের পরনে সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট। শার্টের হাতা ছেড়ে দেয়া,, তাড়াহুড়োর ফল এটা। সন্ধ্যামালতীকে বসিয়ে রেখে ওয়াশরুমে সময় ব্য’য় করার ধৈর্য তার নেই। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে বলে,

– ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে মানুষ পড়ে গেলে কি কেউ ব্যান্ডেজ করে? আমার কেসটা সেরকম-ই। এজন্য ব্যান্ডেজ করার প্রয়োজন নেই। আমি একদম সুস্থ মানুষ।
এটুকু বলে থামে আকাশ। এরপর কণ্ঠে আবেগ ঢেলে বলে,
– আজ আমাকে খাইয়ে দিবে সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা মায়া মায়া চোখে আকাশের দিকে চেয়ে রইল। আকাশ সন্ধ্যার উত্তরের অপেক্ষা করে। হাতে ভাতের প্লেট। সন্ধ্যার নিরবতায় আকাশের মন ছোট হয়। সন্ধ্যাকে জোর করল না। এমনিতেই তার সন্ধ্যামালতী আজ অনেক কেঁদেছে। মৃদুস্বরে বলে,

– তুমি পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড় সন্ধ্যামালতী।
কথাটা বলে ভাত মাখানোর জন্য ডান হাত প্লেটের উপর রাখতে নেয়, সন্ধ্যা তার আগেই আকাশের হাত থেকে ভাতের প্লেট টেনে নেয়। আকাশ কিছু বলল না। সন্ধ্যার কান্ড দেখল। সন্ধ্যা তার এঁটো প্লেট পাশেই রেখে দিয়ে আকাশের প্লেটের ভাত মাখায়। এরপর ছোট হাতে এক নোলা ভাত আকাশের মুখের সামনে ধরে। আকাশ অবাক হয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে।
আকাশের দৃষ্টি সন্ধ্যাকে অস্বস্তি ঘিরে ধরে। তার
দৃষ্টি এলোমেলো হয়। হাতটাও কেমন কাঁপছে। সে ঠিক থাকতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। জীবনের প্রথম তার ভাইয়া ছাড়া অন্য একজনকে খাওয়াতে গিয়ে বেচারির এই অবস্থা। আকাশ সন্ধ্যার হাতের দিকে তাকালো। মুখে হাত দিয়ে লুকিয়ে খুব সামান্য হাসলো। সন্ধ্যার কাঁপা হাত তার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছে। কিন্তু তার সন্ধ্যামালতী তাকে খাইয়ে দিচ্ছে, এটা ভেবে তো তার লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার তো লুঙ্গি নেই। থাকলে আজ সত্যিই লুঙ্গি পড়ে নাচতো বোধয়।

সন্ধ্যা চোখ নামিয়ে রেখেছে। তার কেন যেন ভীষণ ল’জ্জা লাগছে।
আকাশ লজ্জানত সন্ধ্যাকে দেখল মন দিয়ে। সময় ন’ষ্ট না করে মুখ এগিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার হাত থেকে খাবারটুকু নিজের মুখে নিয়ে নেয়। আকাশের ঠোঁটের স্পর্শ তার আঙুলে ঠেকলে সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। আকাশ বুঝতে পারলো সন্ধ্যার অবস্থা। মৃদু হাসলো সে।
হঠাৎ আকাশ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আকাশের মুখে ভাত ভর্তি। সন্ধ্যা কিছু বোঝায় আগেই আকাশ সামান্য ঝুঁকে সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় একটা শুকনো চুমু খায়। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়।
আকাশ আর একমুহূর্ত-ও এখানে দাঁড়ালো না। বড় বড় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ঘর থেকে বেরিয়ে হঠাৎ-ই দৌড় দেয়৷ মুখে ভাত না চিবিয়েই গিলে ফেলে। মুখে হাসি লেপ্টে। উদ্দেশ্য মায়ের ঘর। তার মাকে গিয়ে আগে চারটে চুমু খাবে। তার সন্ধ্যামালতী তাকে খাইয়ে দিয়েছে, এটা তো তার বিশ্বাস-ই হয় না। আকাশ দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে।

আসমানী নওয়ান ডায়নিং রুমে পানি খেতে এসেছিল। আকাশকে এভাবে দেখে ভদ্রমহিলা ভীষণ ভ’য় পেয়ে যায়। কি হলো তার ছেলেটার? ভাবনার মাঝে আকাশ দৌড়ে এসে মাকে জাপ্টে ধরে। আসমানী নওয়ান ভীত কণ্ঠে বলে,
– কি হইছে আব্বা?
আকাশ তার মাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুরতে থাকে। আসমানী নওয়ানের মাথা ঘুরছে। তার ছেলেকে কোন ভূ’তে ধরল। আসমানী নওয়ান আকাশকে থামানোর চেষ্টা করে আর বলে,
– আকাশ থামো। আমার মাথা ঘুরতাছে।

আকাশ তার মাকে ছেড়ে দেয়। এরপর বেসিনের সামনে গিয়ে মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ ক্লিন করে নিয়ে দ্রুত তার মায়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। আসমানী নওয়ান কিছু বলার আগেই আকাশ তার মায়ের কপালে দু’টো চুমু খায়। এরপর দু’গালে দু’টো চুমু খায়। গুণেগুণে মোট চারটে চুমু খেয়ে হেসে বলে,
– মা জানো, সন্ধ্যামালতী আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে।
আসমানী নওয়ান হতভম্ব চোখে আকাশের দিকে তাকায়। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। এইজন্য কেউ এমন রিয়েকশন দেয়? আকাশের বাহুতে একটা থা’প্প’ড় মে’রে বলে,
– বে’য়া’দ’ব ছেলে। আমি ভ’য় পাইছি।
আকাশ অসহায় কণ্ঠে বলে,

– তুমি অবাক হচ্ছো না কেন মা? সন্ধ্যামালতী নিজে থেকে আমার পাশে বসবে, এটাই আমার জন্য দুঃস্বপ্ন ছিল,, সেখানে ও নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দিয়েছে। একবার ভাবো?
আসমানী নওয়ান ছেলের পানে তাকালেন। সময় কতকিছু বদলে দেয়, তাইনা? সন্ধ্যাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার কারণে তার ছেলে কত কথা শোনাতো তাকে। সন্ধ্যাকেও কত কটু কথা শুনিয়েছে। কতবার ডিভোর্স দিতে চেয়েছে। ডিভোর্স পেপারে সাইন পর্যন্ত করেছে। অথচ আজ সেই ছেলে সন্ধ্যার ভালোবাসার কাঙাল! সন্ধ্যার হাতে একটুখানি ভাত খেতে পেয়ে খুশিতে কেমন পা’গ’লের মতো ছুটেছে৷
কথাগুলো ভেবে আসমানী নওয়ান মৃদু হাসলেন। তিনি চেয়েছিলেন, আকাশ তার জান্নাতকে মেনে নিক। তিনি কখনো কল্পনাও করেনি, আকাশ তার জান্নাতকে এভাবে ভালোবাসবে।
আসমানী নওয়ান আকাশের দিকে চেয়ে বলে,

– জান্নাত তোমার বউ। খাওয়াইবোই। তাই বইলা এভাবে বাচ্চাদের মতো দৌড়াবা? তুমি তো রীতিমতো নাচানাচি শুরু কইরা দিছ।
আকাশ মৃদু হেসে বলে,
– মহাখুশিতে মানুষ মহা কাজ করে বুঝলে মা? হয় পা’গ’ল হয়, নয়তো নাচে, নয়তো গান গায়। আমি তো কোনোটাই ঠিকঠাক পারছি না। আমার কোনো প্রতিভাই নেই। সন্ধ্যামালতী অনেক সুন্দর নাচতে পারে।
আকাশের শেষ কথায় তীব্র আফসোস ঝরে পড়ে।
আসমানী নওয়ান মৃদু হেসে বলে,

– প্রতিভা দিয়া কি করবা আব্বা? দিনশেষে ভালোবাসা-ই সব। হাজারটা প্রতিভাবান মানুষ দেখবা, তোমার মতো কইরা এতো নিখুঁতভাবে ভালোবাসতে জানে না। তারা ব্যর্থ, তুমি সার্থক।
আকাশ তার মায়ের দু’হাত তার দু’হাতে ধরে বলে হেসে বলে,
– তোমার কথা শুনে সন্ধ্যামালতীকে ডেডিকেট করে একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে। ভাঙা গলায় শোনো তবে,
এরপর আকাশ তার মাকে নিয়ে নাচের ভঙ্গিমা করে মৃদু হেসে গাইতে থাকে,

– তুমি কি জানো কেউ
আড়ালে বসে,
তোমাকে জীবন দিয়ে
ভালো সে বাসে।
তার মনের, যত কথা,
তার গোপন, প্রেমের ব্য’থা
বলে যায়, আমার এ গান
মনে রেখ, আমার এ গান
শুধু মনে রেখ…..

আকাশ থেমে যায়। দোতলায় সন্ধ্যার বিস্ময় মুখ দেখে আকাশ দ্রুত তার মাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। একদম স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়ায়। মুখের হাসির ছিঁটেফোঁটা নেই, যেন আকাশ হাসতেই জানেনা। অসহায় কণ্ঠে বিড়বিড় করে,
– ইয়া আল্লাহ! সব মানসম্মান শেষ!
সন্ধ্যা আকাশের পিছু পিছু বেরিয়ে এসেছিল। আকাশকে ওভাবে দৌড়াতে দেখে যতটা না অবাক হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি অবাক হয় এতোক্ষণের আকাশের বলা কথা সাথে কাজে।
আসমানী নওয়ান মৃদু হেসে বলেন,

– তোমার গলা ভাঙা নয়। আমার ছেলেরে ছোট করবানা। আমার ছেলের গুণের শেষ নাই। ওয় আমারে কত রান্না করে খাওয়াইছে! এইডা অনেক বড় গুণ বুঝছ? এখন ঘুমাইতে যাও আব্বা।
কথাটা বলে ঘরে যেতে নিলে দোতলায় সন্ধ্যাকে দেখে ভদ্রমহিলা অবাক হয়। আকাশের দৃষ্টি সন্ধ্যার দিকেই। আসমানী নওয়ান একটা প্রশান্তির শ্বাস ফেলে তার ঘরে চলে যায়।
আকাশ ঢোক গিলছে বারবার। ভীষণ বিব্রতবোধ করছে সে। সে নিজেকে সন্ধ্যার সামনে প্রকাশ করে ঠিকআছে। কিন্তু এভাবে না!
বেশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। সন্ধ্যার সামনে এসে দাঁড়ায়। তাদের মাঝে দূরত্ব দু’হাত।

সন্ধ্যার দৃষ্টিতে এখনো বিস্ময়। আকাশ কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু কি বলবে! কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
চোখ বুজে ডান হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে কপাল ঘষে। এরপর আবার-ও চোখ মেলে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যা এখন-ও একইভাবে তাকিয়ে আছে।

অন্তঃদহন পর্ব ৩৪

হঠাৎ আকাশ তাদের মাঝের দু’হাত দূরত্ব ঘুচিয়ে সন্ধ্যাকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। সন্ধ্যা ব্য’থা পেলেও একদম শান্ত থাকলো। আকাশের চোখ বন্ধ। ফিসফিসিয়ে বলে,
– আস্ত কলিজা তুমি আমার!

অন্তঃদহন পর্ব ৩৫ (২)