অন্তঃদহন পর্ব ৪১

অন্তঃদহন পর্ব ৪১
DRM Shohag

আকাশ তার দাঁড়ি থেকে সন্ধ্যার হাত ছাড়িয়ে নেয়। ডানহাতে সন্ধ্যার হাতদু’টো চেপে ধরে। এরপর সন্ধ্যার উপর আধশোয়া হয়ে, এক সেকেন্ড-ও সময় ন’ষ্ট না করে সন্ধ্যার ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁটজোড়া চেপে ধরে। সন্ধ্যা শিউরে ওঠে। চোখ বড় বড় করে তাকায়। আকাশের দৃষ্টি সন্ধ্যার চোখে। দু’জনের চোখাচোখি হতেই সন্ধ্যা দ্রুত চোখ বুজে নেয়। আকাশ মিটিমিটি হাসে। মুখ সামান্য উঁচু করে মৃদুস্বরে ডাকে,
– বউ চোখ খোলো।

সন্ধ্যা চোখ খোলে না। আকাশ মিটিমিটি হেসে মুখ নামিয়ে আবার-ও সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় চুমু আকে। পুনরায় সন্ধ্যার সারামুখে ছোট ছোট চুমু আঁকতে শুরু করে। সন্ধ্যা চোখ মেলে বিরক্ত চোখে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ সন্ধ্যাকে তাকাতে দেখে সন্ধ্যার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে মোহনীয় গলায় বলে,
– বউ তোমাকে আদর করব। কিছু বলবেনা, হুম? আমার সোনা বউ তুমি।
কথাটা বলে মাথা উঁচু করে সন্ধ্যার দিকে তাকালে দেখল, সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। আকাশ ঢোক গিলে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– প্লিজ বউ! আদর করতে দাও। আর ওয়েট করতে পারছি না। তুমি না আমার সোনা বউ!
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশ সন্ধ্যার গালে নাক ঘষে। বলে,
– বউ আদর করি?
কথাটা বলে আকাশ সন্ধ্যার উপর থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। সাথে সাথে সন্ধ্যা শোয়া থেকে উঠে বসে। দৃষ্টি আকাশের দিকে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে পরনের পাঞ্জাবি খুলে রাখল। এরপর সন্ধ্যার দিকে এগোলে সন্ধ্যা বিছানার উপর বসে থেকেই সরে যায়। আকাশ দেখল সন্ধ্যাকে। সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ডান হাত সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে,

– সোনা বউ এদিকে এসো।
সন্ধ্যার বুক ধুকধুক করছে। মাথা নিচু করে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে মেয়েটা। আকাশ মৃদুস্বরে বলে,
– স্বামী কাছে ডাকলে দ্রুত চলে আসতে হয়, জানো না? নয়তো ফেরেস্তারা সারারাত আমার সন্ধ্যামালাতীর নামে বদদোয়া করবে। এসো বউ।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালে দেখল আকাশ হাসছে৷ সন্ধ্যা দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশ আবার-ও বলে,

– সোনা বউ, আসবেনা? এই দেখ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
আকাশের এরকম ডাককে কিভাবে উপেক্ষা করবে সন্ধ্যা? মেয়েটা হাজারো ভীতি, অস্বস্তি দূরে রেখে আকাশের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসলে আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যার কোমর জড়িয়ে মেঝেতে দাঁড় করিয়ে দেয়। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। আকাশ সন্ধ্যাকে ছেড়ে প্যান্টের বেল্ট খুলতে খুলতে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যার আকাশকে প্যান্টের বেল্ট খুলতে দেখে আগের চেয়েও বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ মিটিমিটি হাসছে। সন্ধ্যা ঢোক গিলল। চোখ নামিয়ে দু’পা পিছিয়ে যায়। আকাশ বেল্টটি খুলে ছুড়ে ফেলল। এরপর সন্ধ্যার দিকে চেয়ে বলে,
– দূরে গেলে কেন? এদিকে এসো বউ।
সন্ধ্যা দু’হাতে শাড়ি মুঠো করে ধরে রেখেছে। মাথা নিচু করে থুতনি গলায় নামিয়ে রেখেছে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে এগোতে গিয়েও গেল না। মৃদুস্বরে বলে,

– তুমি না চাইলে কিচ্ছু করব না। তুমি কি চাও বলো?
সন্ধ্যা চুপ। একটু-ও নড়লো না। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে। সন্ধ্যার হাঁটু সমান চুলগুলো দু’সাইড দিয়ে হেলে সামনের দিকে এসেছে। শাড়ির কুচিগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। বাম কাঁধে শাড়ির আঁচল নেমে মেঝে ছুঁয়েছে। আকাশ ঢোক গিলে বলে,
– সোনা বউ? আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব? এসো।
সন্ধ্যাকে এবারেও চুপ দেখে আকাশের দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব ঘিরে ধরে। চোখ বুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

– আচ্ছা, কিছু করব না বউ।
কথাটা বলে উল্টো ঘুরতে নিলে সন্ধ্যা এগিয়ে এসে ডান হাতে আকাশের বা হাত টেনে ধরে। আকাশ সাথে সাথে ঘাড় বাঁকিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যা আকাশের দিকেই চেয়ে আছে। দু’জনের চোখাচোখি হয়। সন্ধ্যার চোখেমুখে ল’জ্জা, তবুও দৃষ্টি সরালো না। আকাশ দ্রুত সন্ধ্যার দিকে পুরোপুরি ফিরে দু’হাতে সন্ধ্যার কোমর ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে। মুখ এগিয়ে এনে সন্ধ্যার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে ফিসফিসিয়ে বলে,
– আমার সোনা বউ তুমি।
সন্ধ্যার চোখ বন্ধ। আকাশ চোখ মেলে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হেসে বলে,
– সোনা বউ, আদর চাই তোমার?
সন্ধ্যা কেঁপে উঠলো। ল’জ্জায় মেয়েটা আকাশের প্রশস্ত উম্মুক্ত বুকে গুটিয়ে যায়। আকাশ ডান হাত তুলে সন্ধ্যার মুখের উপর আসা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়। এরপর সন্ধ্যার বাম গালের সাথে নিজের গাল ঘষে ফিসফিসিয়ে বলে,

– আমার সন্ধ্যামালতী ফুল তুমি।
কথাটা বলে সন্ধ্যার গাল থেকে মুখ উঠিয়ে সন্ধ্যার বন্ধ চোখের দিকে তাকায়।
সন্ধ্যা মৃদু কাঁপছে, তবে শান্ত। মেয়েটা চোখ বন্ধ রেখেই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। আকাশ ঢোক গিলল। সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় দৃষ্টি রেখে ঘোরের মাঝে বলে,
– তুমি অনেক সুন্দর সন্ধ্যামালতী।
কথাটা বলে সাথে সাথে সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় নিজের আধিপত্য চালায়। সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। দু’হাতে আকাশের পিঠ আঁকড়ে ধরে। আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যার কোমর আরও শ’ক্ত করে ধরে। কিছু সময় পর আকাশ সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকায়। সন্ধ্যার বন্ধ চোখের পাতা মৃদু কাঁপছে। আকাশ সন্ধ্যার পুরো মুখ অবলোকন করে নিঃশব্দে হাসলো।

সন্ধ্যা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালে আকাশের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললে আবার-ও ল’জ্জারা ঘিরে ধরে। দৃষ্টিজোড়া নামিয়ে নেয়।
আকাশের হাসি দীর্ঘ হয়। তার বউটা কি আদুরে! দেখলেই শুধু চুমু খেতে ইচ্ছে করে!
এগিয়ে এসে সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় একটা শুকনো চুমু আঁকে। সন্ধ্যা আবার-ও চোখ বুজে নেয়।
আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যাকে নিজের দিকে টেনে নেয়। সন্ধ্যার গলায় মুখ নামিয়ে পুরো গলায় ছোট ছোট চুমু আঁকে। ডান হাত বাড়িয়ে সন্ধ্যার কাঁধ থেকে থেকে শাড়ির আঁচল ফেলে দেয়। ধীরে ধীরে আকাশের এলোমেলো বাড়ে। সন্ধ্যার কোমরে গুঁজে রাখা শাড়ি টান মেরে খুলে ফেলে। সন্ধ্যাকে নিজের কাছে টেনে নেয়।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। এলোমেলো আকাশকে একটু-ও বাঁধা দেয় না। কিন্তু তার ভেতরটা কাঁপছে। স্বাভাবিক নয়, অস্বাভাবিক। তার যে মনে পড়ে যায়, একটা ন’র’প’শু তাকে ছুঁয়েছিল। তার শরীরের কোথাও বাদ রাখেনি। তার শরীরে নোংরা স্পর্শে ভরা। সে বেঁচে গিয়েছিল, কিন্তু তার শরীরে ওই ন’র’প’শুর স্পর্শের কথা আজ-ও সন্ধ্যা ভুলতে পারেনা।

কথাগুলো ভেবে সন্ধ্যার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।
তাকে স্পর্শ করার আগে সন্ধ্যা আকাশকে ডেকেছিল, তার সৌম্য ভাইয়াকে ডেকেছিল। কেউ তার ডাকে তার কাছে যায়নি। আর তারপর লোকটি তার উপর উঠে এসেছিল। কথাগুলো ভেবে সন্ধ্যা মুখ চেপে কাঁদে। একপর্যায়ে মেয়েটি না পেরে ফুঁপিয়ে ওঠে।
সন্ধ্যার ফোঁপানোর শব্দ পেয়ে আকাশ দ্রুত সন্ধ্যাকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
সন্ধ্যা ঝাপসা চোখে তাকায় আকাশের দিকে। দু’চোখের পাতা বেয়ে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার বলতে ইচ্ছে করল,

– আপনি সেদিন আসেননি আমার কাছে। তাই আমি অপবিত্র হয়ে গিয়েছি। আমি আপনাকে আমার খাঁটি পবিত্রতা দিতে পারছি না।
সন্ধ্যা কথাগুলো মনে মনে আওড়ালেও, ইশারায় আকাশকে বুঝিয়েও দিল। আকাশ সন্ধ্যার মনের কথাগুলো বুঝলো-ও। ছেলেটা নির্জীব চোখে চেয়ে রইল তার সন্ধ্যামালতীর দিকে।
সন্ধ্যা কাঁদতে কাঁদতে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ে। দু’হাতের মাঝে মুখ লুকিয়ে ফোঁপায়। আকাশ ঢোক গিলল। তার আগে তার সন্ধ্যামালতীকে অন্যকেউ ছুঁয়েছে ভাবলেই তার হৃদয় টা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
আকাশ এগিয়ে এসে সন্ধ্যার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে। কান্নারাত সন্ধ্যার পানে কতক্ষণ চেয়ে রইল। সন্ধ্যামালতীকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আকাশ ধরা গলায় বলে,

– স্যরি সন্ধ্যামালতী!
সন্ধ্যা মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকায়। দু’জনের চোখাচোখি হয়। সন্ধ্যার পানিতে টইটুম্বুর চোখজোড়া দেখে আকাশের বুক ভারী হয়।
সন্ধ্যা কাঁদতে কাঁদতে হাত দিয়ে ইশারায় তার ঠোঁটের কোণা দেখায়, গলা দেখায়, দু’হাত বাড়িয়ে হাত দেখায়। দু’পা একটুখানি সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে উম্মুক্ত পেট দেখায়।
এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বোঝায়,
– ওই লোক আমার সব জায়গায় ছুঁয়েছে। আমি আর পবিত্র নেই।
আকাশ সন্ধ্যার কথাগুলো পড়তে পারলো। বুকটা হাহাকার করে উঠল। সেদিন যদি সে তার সন্ধ্যামালতীকে তার বুকে আগলে নিত, তবে আজ তার সন্ধ্যামালতীর জীবনে এমন একটি কালো অধ্যায় থাকতো না। আকাশের ছটফট লাগে। চোখদু’টো লাল হয়ে গিয়েছে। তার সন্ধ্যামালতীর য’ন্ত্র’ণা যে সহ্য হয় না।

আকাশ মেঝেতে একেবারে বসে পড়ল। ডান পা সামান্য উঁচু করে রেখে, ডান হাত ডান পায়ের উপর রেখে মাথা নিচু করে নিল। সে কিভাবে তার সন্ধ্যামালতীর স্মৃতি থেকে এসব জ’ঘ’ণ্য অনুভূতি মুছিয়ে দিবে? সে তো ওই লোকগুলোকে এক চুল পরিমাণ ছাড়েনি, কিন্তু তাতে তো তার সন্ধ্যামালতীর স্মৃতি শুদ্ধ হয়ে যায়নি।
আকাশের মনে পড়ে যায়, তার বাবার কথা। তার বাবা-ও পরপারে চলে গিয়েছে। কিন্তু বাবা তার সন্ধ্যামালতীকে এ কি অ’ভি’শ’প্ত জীবন দিয়ে গেল? তার বাবা কি একটাবার পারতো না, সন্ধ্যামালতীকে নিজের মেয়ে ভেবে এমন অ’ভি’শ’প্ত জীবনে ঠেলে না দিয়ে ছেড়ে দিতে!

সেদিন যদি তার সন্ধ্যামালতী রে’প হয়ে যেত। নিয়াজ না বাঁচাতো। তবে তার সন্ধ্যামালতীর অবস্থা এখনকার চেয়েও কতটা করুণ হত! কথাটা ভাবতেই আকাশের রুহ কেঁপে উঠলো।
আকাশের ক’ষ্ট হয়। তার সন্ধ্যামালতীর জীবনের এই কালো অধ্যায় তার-ই বাবার জন্য। সে ছেলে হয়ে মানতে পারেনা। সে সন্ধ্যামালতীকে বলেছিল, তার বাবাকে ক্ষমা করে দিতে। অথচ তার সন্ধ্যামালতীর জীবন থেকে তার বাবা-ই এক টুকরো সুখ কিভাবে কেড়ে নিয়েছে।
তার সন্ধ্যামালতী আজ-ও হঠাৎ অন্ধকার দেখলে ভ’য় পেয়ে যায়। আজ-ও সেসব জ’ঘ’ণ্য স্মৃতি তার সন্ধ্যামালতীকে ভালো থাকতে দেয় না।

কথাগুলো ভেবে আকাশের চোখের কোণে পানি জমে। তার বাবা, তার সন্ধ্যামালতী তার ভালোবাসা। অথচ কি থেকে কি হয়ে গিয়েছে। আকাশ ভাঙা গলায় বিড়বিড় করে,
– তুমি কেন এতোটা খারাপ হয়েছিলে বাবা? এই দেখ, তোমার জন্য আমার সন্ধ্যামালতী ভালো নেই। আমার সন্ধ্যামালতীর পরিচ্ছন্ন জীবনটা কেন এভাবে কাঁটাযুক্ত করে দিয়ে গেলে বাবা?
কথাগুলো বলতে গিয়ে আকাশের চোখ থেকে টুপ করে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ছেলেটা কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলল। ডান হাতে চোখজোড়া ডলে নিজেকে সামলে নিতে চাইলো।
মাথা উঁচু করে সন্ধ্যার দিকে তাকালে দেখল, সন্ধ্যা মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তো কাঁদছেই। আকাশের বুকে ব্য’থা বাড়ে। হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে যায়।
দু’হাতে সন্ধ্যার দু’গাল আগলে নিয়ে সন্ধ্যার মাথা উঁচু করে ধরে। সন্ধ্যার বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আকাশ ঢোক গিলল। করুণ সুরে ডাকে,

– সোনা বউ?
আকাশের আবেগমাখা ডাকে সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। আকাশের সাথে চোখাচোখি হয়। আকাশ সন্ধ্যার কান্নাভেজা চোখে চোখ রেখে ভারী গলায় বলে,
– পবিত্রতার খাতায় আমার সন্ধ্যামালতীর অবস্থান সর্বদা শীর্ষে থাকবে। বুঝেছ সোনা বউ?
আকাশের কথাটি শুনে সন্ধ্যা অবাক হয়ে চেয়ে রইল আকাশের দিকে। সময়ের সাথে সাথে কান্নার গতি কমে আসে তার। আকাশের লালিত চোখজোড়ায় দৃষ্টি রেখে অপলক চেয়ে রইল। সে আকাশকে যত অবাক হয়। আকাশকে তার একদম অন্যরকম এক মানুষ মনে হয়।

আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যার ভেজা গাল মুছে দেয়। এরপর সন্ধ্যাকে কোলে তুলে নেয়। সন্ধ্যা
কিছু বলল না। সে শুধু আকাশকে দেখছে। আকাশ সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে এসে একটি চেয়ারে বসে। এরপর তার কোলে সন্ধ্যাকে বসিয়ে দু’হাতে সন্ধ্যাকে নিজের সাথে শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যা চোখ বুজে নেয়। গুটিশুটি মেরে আকাশের বুকে লেপ্টে যায়।
আকাশ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। সন্ধ্যার কান্না থেমেছে। তবে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। আকাশ সন্ধ্যার মাথায় দু’টো চুমু খায়। এরপর সন্ধ্যার থুতনিতে হাত রেখে সন্ধ্যার মুখ সামান্য উঁচু করে। সন্ধ্যা পিটপিট করে চোখ মেলে। আকাশের দৃষ্টি সন্ধ্যার চোখে। চাঁদের আলোয় দু’জন দু’জনের দিকে প্রায় অনেককটা সময় চেয়ে রইল। দু’জনেই নিশ্চুপ। আকাশ ঢোক গিলল। এরপর সন্ধ্যার চোখের দিকে চেয়ে ভারী গলায় বলে,

– এই পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষকে লড়াই করে বাঁচতে হয় সন্ধ্যামালতী। হয় নিজের সাথে নয়তো অন্যের সাথে। নয়তো কাছের মানুষগুলোর সাথে, যারা আপন হয়েও পিছন থেকে ছু’রি চালায়।
এটুকু বলে আকাশ থামলো। গলা বেঁধে আসে। তার বাবা তাকে কেমন ভালোবাসতো! সে তার সন্ধ্যামালতীকে এতো ভালোবাসে জানার পর-ও তার বাবা তার থেকে তার সন্ধ্যামালতীকে কে কে’ড়ে নেয়ার জন্য সেই বাড়িতে আ’গু’ন লাগিয়ে দিয়েছিল। তার সন্ধ্যামালতীকে তার বাবা কতবার মা’র’তে চেয়েছিল। আর আল্লাহ তার সন্ধ্যামালতীকে বারবার বাঁচিয়ে নিয়েছে। আকাশ ঢোক গিলল। সন্ধ্যার চোখে চোখে রেখে ভারী গলায় বলে,
– আমি ভেবেছিলাম— আমার তুমি পু’ড়ে গিয়েছ। আর তাই, আমার অপেক্ষাটা ছিল কেবল মৃ’ত্যু’র। আমি সব ভুলে, শুধু তোমার সাথে সাক্ষাৎের জন্য প্রতিনিয়ত মৃ’ত্যু’র প্রহর গুনতাম সন্ধ্যামালতী।

সন্ধ্যা ফ্যালফ্যাল করে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। মুহূর্তেই মেয়েটার চোখজোড়া ভরে ওঠে। সে বুঝে পায় না, আকাশ তাকে কেন এতো ভালোবাসে! তার কি আছে যে আকাশ তাকে এতো ভালোবাসে!
আকাশ তার ডান হাতে সন্ধ্যার বাম হাত তুলে তার ডান গালে ঠেকিয়ে মলিন গলায় বলে,
– আমার সোনা বউ তুমি। আর কখনো সেসব ভাববে না। মনে আসলে ওসব ভাবনা তাড়িয়ে দিবে। আমার সোনা বউ আমার কাছে পবিত্র। একদম খাঁটি। আর কখনো ওসব ভাববে না। তুমি সেসব ভাবলে ভীষণ ব্য’থা পাই আমি।
আমি জানি আমার সন্ধ্যামালতী ভীষণ নরম মনের মেয়ে। কিন্তু প্রয়োজনে সে একটু হলেও স্ট্রং, আমি এটাও জানি। তবে তুমি কেন আগের বা’জে স্মৃতি ভেবে ক’ষ্ট পাও সন্ধ্যামালতী? তুমি না আমার স্ট্রং সোনা বউ, হুম?
আকাশের কথাগুলোয় কি ছিল কে জানে। সন্ধ্যার ভারী বুকটা নিমিষেই হালকা হয়ে গেল। আবেগে মেয়েটার চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যাকে কাঁদতে দেখে আকাশ বিচলিত হয়। সন্ধ্যা ইশারায় বোঝায়,
– আমি স্ট্রং-ই থাকব। আর আপনি অনেক ভালো।

এরপর নিজে থেকেই এগিয়ে এসে দু’হাতে আকাশের গলা জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যার কাজে আকাশ একটু অবাক হলো, সাথে একটু হাসলো। নিজেও দু’হাতে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে।
খেয়াল করল, সন্ধ্যার পরনে শাড়ি নেই। আকাশ দুষ্ট হেসে ফিসফিসিয়ে বলে,
– সন্ধ্যামালতী তোমাকে শাড়ি ছাড়া বেশি সুন্দর লাগে। আমি শিওর, বাকিগুলো খুলে ফেললে আরও বেশি সুন্দর লাগবে। খুলে দিই বউ?

আকাশের কথায় সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। তার মনেই ছিল না শাড়ির কথা। এতোক্ষণে খেয়ালে এসেছে। সন্ধ্যা দ্রুত আকাশকে ছেড়ে দেয়। এরপর আকাশের কোল থেকে নামতে চাইলে আকাশ শ’ক্ত করে সন্ধ্যাকে চেপে ধরে। সন্ধ্যা ভীষণ ল’জ্জা পায়। মাথা নিচু করে এলোমেলো দৃষ্টি ঘোরায়। সন্ধ্যার ল’জ্জা বুঝতে পেরে আকাশ একটু হাসল, তবে কিছু বলল না আর। ভাবল, সন্ধ্যাকে সময় নিয়ে আগে একদম স্বাভাবিক করতে হবে।
অতঃপর সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে ঘরে আসে। বিছানার উপর সন্ধ্যাকে বসিয়ে দিয়ে মেঝে থেকে সন্ধ্যার শাড়ি উঠিয়ে সন্ধ্যার কোলের উপর রাখে। সন্ধ্যা অবাক হয় আকাশের কাজে। আকাশ সন্ধ্যার দৃষ্টি দেখে মৃদু হাসলো। সন্ধ্যার কপালে চুমু খেয়ে মৃদুস্বরে বলে,

– শাড়ি পরে নাও বউ। আমি পাঁচমিনিটে আসছি।
কথাটা বলে আকাশ ওয়াশরুমে চলে যায়। সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেয়ে রইল। আকাশের মনোভাব বোধয় সন্ধ্যা বুঝল। আকাশের চিন্তাভাবনার প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা জন্মালো তার।
সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে শাড়ি পরে নিল। এরপর বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ল।
প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় আকাশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। সন্ধ্যা আকাশকে দেখে বুঝল, আকাশ শাওয়ার নিয়েছে। আকাশ কোনোদিকে না তাকিয়ে বিছানায় এসে সন্ধ্যার পাশে শুয়ে সন্ধ্যাকে টেনে জড়িয়ে ধরল। সন্ধ্যা কিছু বলল না। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল আকাশের দিকে। এতো রাতে গোসল করার কি দরকার পড়ল আকাশের, সন্ধ্যা সেটাই ভাবছে।

আকাশ সন্ধ্যাকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিটিমিটি হেসে বলে,
– গরমে ঘেমে গিয়েছিলাম বলে শাওয়ার নিলাম। উল্টাপাল্টা ভাবা বাদ দাও বউ। তোমার বর এতোটাও উইক না। ভীষণ স্ট্রং। বুঝেছ?
আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ল’জ্জায় দ্রুত চোখ খিঁচে নেয়। আকাশ হাসল। সন্ধ্যার তার মাথা বুকে চেপে চোখ বুজল।
প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথায় আকাশের বুক ভেজা ভেজা লাগলো। ভ্রু কুঁচকে যায় তার। চোখ মেলে সন্ধ্যার কপালে হাত দিয়ে সন্ধ্যার মুখ সামান্য ঠেলে সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকালে দেখল সন্ধ্যার চোখ বেয়ে নোনাপানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আকাশ দ্রুত দু’হাতে সন্ধ্যার দু’গাল আগলে নিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– কাঁদছ কেন সোনা বউ? একটু আগেই যে বললে, তুমি স্ট্রং থাকবে।
সন্ধ্যা চোখ মেলে আকাশকে বোঝায়,

– সে ওইজন্য কাঁদছে না।
আকাশ বুঝতে পেরে বলে,
– তবে কেন কাঁদছ? আমি ক’ষ্ট দিয়েছি? তাহলে স্যরি বউ!
সন্ধ্যা এবারেও মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– তাহলে কেন কাঁদছ?
সন্ধ্যা অসহায় চোখে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। আকাশ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
– সৌম্য’র জন্য কাঁদছ বউ?

সন্ধ্যা চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশ বুঝল, তার বউ আবার ভাইয়ের জন্য কাঁদছে। ভালোই লাগলো তার। কয়জন বোন ভাইকে এভাবে ভালোবাসে! সৌম্য’ও তার সন্ধ্যামালতীকে কত ভালোবাসে! কিন্তু আকাশের আফসোস একটাই, তার বউটা ভাইপা’গ’ল হলেও, স্বামীপা’গ’ল আর হলো না! সে হতাশ! একদম হতাশ!
সন্ধ্যাকে ছেড়ে আকাশ উঠে দাঁড়ালো। এরপর এগিয়ে গিয়ে কাভার্ড থেকে একটি সাদা পাঞ্জাবি বের করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। এগিয়ে এসে টেবিলের উপর থেকে ওয়ালেট নিয়ে প্যান্টের পকেটে রাখে। হাতঘড়ি ডান হাতে পরতে পরতে সন্ধ্যার দিকে তাকালে দেখল, সন্ধ্যা শোয়া থেকে উঠে বসেছে। তার দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে আছে। আকাশ হাতঘড়ি পরে এগিয়ে এসে সন্ধ্যাকে কোলে তুলে নেয়। সন্ধ্যা অবাক হয়। কিছু বোঝানোর জন্য সন্ধ্যা তার বা হাত আকাশের ডান গালে রাখলে আকাশ মুখ বাঁকা করে সন্ধ্যার হাতে একটা চুমু খেয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকায়।
ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে বলে,

– ভেবেছিলাম আগামীকাল অফিসের কিছু কাজ গুছিয়ে নিয়ে সন্ধ্যামালতীকে তার ভাইয়ের বাড়ি নিয়ে যাবো। কিন্তু বউ আমার যা ছিঁছকাদুনে! আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিল।
সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। এতো রাতে, তাও আবার এভাবে তাদের গ্রামে যাবে আকাশ? সন্ধ্যা দ্রুত আকাশের গালে হাত দিয়ে তার দিকে ফেরাতে চায়। আকাশ সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
– কি বউ? চুমু খাবে?

কথাটা বলতে বলতে মুখ নামিয়ে সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় একটা চুমু আঁকে। সন্ধ্যা হতাশ হয়ে চেয়ে থাকে।
আকাশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্যারেজে রাখা গাড়ির এখানে এসে সন্ধ্যাকে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দেয়। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়াতে নিলে সন্ধ্যা আকাশের পাঞ্জাবির কলার টেনে ধরে। আকাশ আবার-ও সন্ধ্যার ঠোঁটে শুকনো চুমু খায়। সন্ধ্যা বিরক্ত চোখে তাকায় আকাশের দিকে। সুযোগ পেলেই শুধু চুমায় তাকে।
আকাশের পাঞ্জাবির কলার ছেড়ে দেয় সন্ধ্যা। আকাশ একটু হাসল। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ির দরজা আটকে দিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। বাড়ির গেইট লাগিয়ে এসে একদম মেইন গেইট খুলে দেয়। দারোয়ান ঘুমিয়েছে। তাই আকাশ নিজেই সব করল।
তার মা ঘুমিয়েছে। রাতে মাকে আর জ্বালালো না। এজন্য আকাশ বায়ানের নাম্বারে একটি মেসেজ করে,

– ঘুম থেকে উঠেই আমার মাকে নিয়ে তোমার গার্লফ্রেন্ড এর গ্রামের বাড়ি আসবে।
মেসেজটি বায়ানকে সেন্ড করে আকাশ গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ির ড্যাশবোর্ডের উপর ফোন রেখে পাশে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা পাশের সিটে বসে আছে। আকাশ গাড়ি স্টার্ট দেয়। মেইন গেইট থেকে গাড়ি বের করে আবার-ও গাড়ি থেকে নেমে গেইট লাগিয়ে দেয়। এরপর গাড়িতে এসে বসলে সন্ধ্যা আকাশের ফোন আকাশের সামনে ধরলে আকাশ পড়ল,
– এখন অনেক রাত। আমাদের গ্রামে এখান থেকে অনেক দূর। এতোরাতে এতোদূর আপনি গাড়ি চালিয়ে যাবেন? আপনি কি পা’গ’ল?
আকাশ সন্ধ্যার হাত থেকে তার ফোন নিয়ে গাড়ির ড্যাশবোর্ডের উপর রাখে। এরপর সন্ধ্যাকে পাশের সিট থেকে এনে তার কোল বসিয়ে বলে,
– পা’গ’ল-ই তো আমি! বোঝোনা তুমি?
সন্ধ্যা চুপচাপ চেয়ে রইল আকাশের দিকে। আকাশ গাড়ি স্টার্ট দিলে সন্ধ্যা পাশের সিটে বসতে গেলে আকাশ সন্ধ্যার কোমর চেপে বলে,

– এখানেই থাকতে হবে বউ। নয়তো চুমু খেতে প্রবলেম হবে। রাত জেগে গাড়ি চালাবো। এনার্জি লাগবে, বোঝোনা?
সন্ধ্যা অদ্ভুদভাবে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে বলে,
– সন্ধ্যামালতীকে চুমু খেলে আমি স্পেশাল এনার্জি পাবো। আর আমার সেই স্পেশাল এনার্জিতেই গাড়ি চলবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
কথাটা বলে সন্ধ্যার মুখে আবার-ও চুমু খাওয়ার জন্য এগোলে সন্ধ্যা দ্রুত তার দু’হাতে পুরো মুখ ঢেকে নেয়। এই লোকটা আজ তাকে একটু-ও শান্তি দিচ্ছেনা। শুধু চুমু খাচ্ছে তো খাচ্ছেই।
আকাশ একটু হাসলো। বা হাতে সন্ধ্যার মাথা তার বুকে চেপে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ দু’হাত রেখে গাড়ি চালানো শুরু করে।

সৌম্য আর ইরা বগুড়া মেইন শহরে বাস থেকে নেমেছে রাত সাড়ে তিনটায়। এরপর একটি সিএনজি রিজার্ভ করে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ভদ্রলোক সৌম্যদের গ্রামের। সৌম্যকে দেখে যেন ঝটকা খেয়েছে। তাদের পুরো গ্রাম জানে,, সন্ধ্যা, সৌম্য আ’গু’নে পু’ড়ে মা’রা গিয়েছে। অথচ আজ হঠাৎ সৌম্যকে বগুড়া শহরে দেখে ভদ্রলোক ভ’য় পেয়েছে। সৌম্য পরিচিত মানুষকে পেয়ে সিএনজিতে উঠে বসলে ভদ্রলোক গাড়ি স্টার্ট দেয়। এখনো একটা কথাও বলেনি। সে ঘোর থেকেই বেরোতে পারছে না। এখন পর্যন্ত সৌম্য’র সাথে কোনো কথা বলেনি। সৌম্য গলা ঝেড়ে বলে,

– রাহেল মামা কথা বলো না ক্যান? কতদিন পর দেখা হলো।
রাহেল সৌম্য’র বয়সী-ই হবে। সে এবার উত্তর করে,
– মামা আমি তো শক সামলাইতেই পারতেছি না। তুমি আর সন্ধ্যা খালা না-কি ম’রে গেলা। আমরা পুরো গ্রাম কত দুঃখ করলাম। এখন তোমারে দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি সৌম্য মামার ভূত! কেমনে কথা কই কও!
লোকটির কথায় ইরা মুখে হাত দিয়ে একটু হাসলো। সৌম্য-ও হাসলো। এখানে জমি কেনা থেকে বাড়ি করার জন্য বেশ কয়েকবার এসেছিল লুকিয়ে। কিন্তু গ্রামের তার এক পরিচিত সে-ই সব করে দিয়েছে। এজন্য সৌম্য’কে সেভাবে আসতে হয়নি। আর সে ছেলেটিকে তার আর সন্ধ্যার ব্যাপারে বলতে নিষেধ করেছিল। ভেবেছিল, একেবারে গ্রামে আসলে সবাই অবাক হবে। ওটাই ভালো লাগবে।
অতঃপর সৌম্য হেসে বলে,

– ম’রিনি আমরা। আরেকদিন গল্প শোনাবো। মিথ্যা খবর পাইছ তোমরা। তোমাদের কি খবর বলো।
– মামা আমরা তো ভালোই আছি। কিন্তু তোমার আর সন্ধ্যা খালা মা’রা যাওয়ার খবর শুনে খুব ক’ষ্ট পাইছিলাম। সন্ধ্যা খালা-ও বেঁচে আছে?
সৌম্য সাথে সাথে উত্তর করে,
– হুম, বোনুও ঠিক আছে।
রাহেল ইরাকে দেখে বলে,
– তোমার সাথে এইডা কে মামা? আগে তো কোনোদিন দেখিনি।
সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,
– আমার বউ।

কথাটা শুনতেই লোকটি গাড়ির ব্রেক কষে। সৌম্য দ্রুত ডান হাতে ইরার পেট চেপে ধরে। ইরা দু’হাতে সৌম্যকে চেপে ধরে। পড়তে পড়তে বেঁচেছে।
সৌম্য সামনে তাকিয়ে দেখল রাহেল পিছু ফিরে তাদের দিকে চেয়ে আছে। ছেলেটি বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
– কি কও? তুমি বিয়ে করছ? পুরো কাহিনী সংক্ষেপে কও। নয়তো আমি সিএনজি চালাবার পারমু না।
সৌম্য মৃদুহেসে বলে,
– একেবারে গ্রামে চলে আসলাম। সব গল্প করব। কাল একবার আমার বাড়ি আসো। গ্রামে মাত্র যে নতুন বাড়িটা হইছে, ওইটাই আমার বাড়ি।
রাহেল মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– কিহ! ওই বাড়ি তুমি করলা? আমরা আরও ভাবতেছিলাম, আমাদের ওই অজপাড়া গ্রামে কে ছাদের বাড়ি করে! হায়াত কে জিজ্ঞেস করলে, ওই কইল—এক শহরের ছেলে ওই বাড়ি করতেছে। তোমার কথা কইলো না। আমি তো খালি ঝটকা খাচ্ছি সৌম্য মামা।
সৌম্য হেসে বলে,

– হায়াতকে আমি বলতে নিষেধ করেছিলাম। তোমাদের ঝটকা-ই দিতেই এমন করছি।
রাহেল সিএনজি স্টার্ট দিতে দিতে বলে,
– তুমি, মামি, সন্ধ্যা খালারে নিয়া আমার বাড়ি আসো মামা। অনেক খুশি হমু।
সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,
– সময় অনেক আছে। যাওয়া যাবে।
ইরা পাশ থেকে ফিসফিসিয়ে বলে,
– এই লোকটা তোর কে হয়?
সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,
– প্রতিবেশী।
ইরা অবাক হয়ে বলে,
– প্রতিবেশী এভাবে কথা বলে? মনে হচ্ছে তোর আপন কেউ।
সৌম্য মৃদু হেসে বলে,
– গ্রামের সবাই পর হয়েও অনেক আপন হয়। গ্রামে থাকলে আরও ভালো বুঝবি।
ইরা অবাক হলেও ভালো লাগলো তার। শহরে তো আপনজনরাই পর হয়ে যায়। আর এখানে পর-রা-ই আপন হয়।

প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাহেল সৌম্য’দের বাড়ির সামনে এসে সিএনজি দাঁড় করায়। সৌম্য সিএনজি থেকে নেমে ইরার হাত ধরে সিএনজি থেকে নামায়। সাথে দু’টো ব্যাগ নামিয়ে মাটিতে রাখল। রাহেল সিএনজি থেকে নামলে সৌম্য ছেলেটির সাথে হাত মিলিয়ে একবার জড়িয়ে ধরে বলে,
– দিনে দেখা হবে। সময় পেলে এদিকে এসো।
রাহেল হেসে বলে,
– আচ্ছা মামা। আসছি।
এরপর লোকটি সিএনজিতে উঠে চলে যায়। সৌম্য পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের ফ্লাশ জ্বালায়। ধরণীতে সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– ওই গাড়ি কার?
ইরার কথায় সৌম্য ফোনের ফ্লাশ তার বাড়ির উঠানের দিকে ধরলে একটি কার গাড়ি দেখে অবাক হয়। ব্যাগদু’টো হাত নিয়ে এগোতে এগোতে বলে,
– এটা আকাশ ভাইয়ার গাড়ি না?
ইরা বলে,

– আমার-ও তো তাই মনে হচ্ছে।
সৌম্য এগিয়ে গিয়ে গাড়ির জানালার ভেতরদিকে ফোনের ফ্লাশ তাক করলে দেখল, আকাশ ড্রাইভিং সিটে বসে ঘুমিয়ে আছে। আর সন্ধ্যা আকাশের কোলে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। সৌম্য বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। ইরা মাথাটা একটুখানি ঝুঁকে আকাশ আর সন্ধ্যাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
– আরে এরা এখানে কি করছে?
সৌম্য সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ইরা-ও সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সৌম্য’র দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নেয়, তার আগেই সৌম্য শব্দ করে হেসে দেয়। ইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি হয়েছে?
সৌম্য বহু ক’ষ্টে নিজেকে সামলে বলে,

– বোনু আমার জন্য কাঁদবে এটা জানতাম। বোনু কাঁদলে আকাশ ভাইয়া ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবে এটা-ও জানতাম। কিন্তু তাই বলে আমাদের আসার আগেই এসে বসে থাকবে এতোটা ভাবিনি। এমন হবে জানলে আসার সময় আকাশ ভাইয়াকে ঘরের চাবি দিয়ে আসতাম।
এ পর্যায়ে ইরার নিজের-ও হাসি পায়।
ওদিকে সৌম্য, ইরার কথাবার্তায় আকাশের ঘুম ভেঙে যায়। সে সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
– সৌম্য বাড়ির তালা খুলে দাও। ঘুমানো লাগবে।
সৌম্য দেখল, আকাশের কোলে তার বোনু ঘুমিয়ে। সৌম্য’র কি যে ভালো লাগে, তার বোনুকে আকাশের সাথে ভালো থাকতে দেখলে!
এগিয়ে এসে আকাশের উদ্দেশ্যে বলে,
– আপনি আসবেন বললেন না যে!
আকাশ হাতশ কণ্ঠে বলে,

– যা ভাইপা’গ’ল বোন বানিয়েছ। আমি বুঝে গেছি, আমাকে ঘরজামাই থাকতে হবে।
সৌম্য তার বাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে, পকেট থেকে চাবি বের করে। এরপর তালা খুলতে খুলতে বলে,
– আমি এটা আগে থেকেই জানতাম। এজন্য এই বাড়িতে আপনাদের জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। চিন্তা করবেন না।
ইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– এইজন্যই তোকে সন্ধ্যার ব্যাপারে অনেক রিল্যাক্স মুডে দেখলাম, তাইনা সৌম্য?
সৌম্য একটু হাসল। আকাশ ইরার দিকে চেয়ে হতাশার সুরে বলে,
– আমাকে সাদাসিধে পেয়ে ভাই-বোন দু’টোই কিভাবে জ্বালায় দেখলে ইরা? তুমি সাবধানে থেকো।
আকাশের কথায় ইরা হাসল।

সৌম্য বাড়ির ভেতরে গিয়ে একে একে সব লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আকাশ সন্ধ্যাকে নিয়েই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে সৌম্য আকাশকে রুম দেখিয়ে দেয়। আকাশ আশপাশটা দেখতে দেখতে সৌম্য’র দেখানো ঘরে এসে সন্ধ্যাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। সন্ধ্যা একটু নড়েচড়ে উঠলে আকাশ সন্ধ্যা পেটে হাত দিয়ে আলতো করে থা’প্প’ড় দিতে লাগলো। যেন কোনো বাচ্চার ঘুম না ভাঙে, একদম সেই ভঙ্গিতে। সন্ধ্যা ঘুমে বিভোর হলে আকাশ সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এগিয়ে গিয়ে ঘরের ফ্যান ছেড়ে দেয়।
পুরো বাড়ি বেশ সাজানো গোছানো। আকাশের ভালোই লাগলো।
পরনের পাঞ্জাবি খুলে দরজা আটকে সন্ধ্যার পাশে এসে শুয়ে সন্ধ্যার জড়িয়ে চোখ বুজে নেয়। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।

দুপুরের রোদ পড়ে গিয়েছে। চারপাশে মিটিমিটি ঠান্ডা বাতাস বইছে।
সৌম্য’র বাড়ির উঠানে সৌম্য, আকাশ চেয়ারে বসে টুকটাক কথা বলছে।
পাশে বায়ান-ও বসে আছে। বায়ান আকাশের মেসেজ পেয়ে আসমানী নওয়ানকে নিয়ে সকালে রওয়ানা দিয়েছিল। দুপুরের আগে আগে গ্রামে এসে পৌঁছেছে। এরপর সে ঘুমিয়েছিল। কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠে বাইরে আসলো।
সৌম্য’র পরনে শার্ট, প্যান্ট। সে বাজারে গিয়েছিল। মাত্র ফিরেছে বাজার থেকে। আকাশের পরনে টি-শার্ট, প্যান্ট। রাতে তার আর সন্ধ্যার কিছু নিতে ভুলে গিয়েছেল। এরপর তার মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলে তার মা তাদের দু’জনের কাপড় আনে।
ইরা, সন্ধ্যা ফাঁকা উঠানে দু’জন হাঁটছে, আর ইরা টুকটাক কথা বলছে। সন্ধ্যা ইশারায় বোঝাচ্ছে। সকাল থেকে তাদের বাড়িতে অনেকে তাদের দেখতে এসেছে। ইরা হেসে বলে,
– সন্ধ্যা, তোমাকে আর সৌম্যকে সকাল থেকে যত মানুষ দেখতে আসলো। বিশ্বাস কর, আমাদের শহরে নতুন বর-বউকেও এতো মানুষ দেখতে যায় না।
ইরার কথায় সন্ধ্যা একটু হাসলো। হাঁটতে হাঁটতে আকাশ আর সৌম্য’র দিকে এগিয়ে আসে।
আকাশ মৃদুস্বরে বলে,

– এই পাশের জমিটা কার সৌম্য?
সৌম্য উত্তর করে,
– আমি এই জমি যার থেকে কিনেছি, তার-ই। কেন?
আকাশ ডান পা বাম পায়ের উপর তুলে বলে,
– ওখানে সন্ধ্যামালতী ফুলের বাগান করব।
আকাশের কথা শুনে সৌম্য আর বায়ান দু’জনেই কেশে ওঠে। কেউ সন্ধ্যামালতী ফুলের বাগান করে আজকেই প্রথম শুনলো। আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যা, ইরা দু’জনেও অবাক হয়ে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি হয়েছে? ভুল বললাম না-কি! সবাই এরকম রিয়েকশন দিচ্ছো কেন?
কেউ কিছু বলল না।

তখন-ই ভেতর থেকে আসমানী নওয়ান বেরিয়ে আসেন। তিনি জার্নি করে এসে গোসল করে ঘুমিয়েছিল। শরীর খারাপ লাগছিল। আসমানী নওয়ান আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে রে’গে বলে,
– তুমি ওতো রাইতে ঘুম জাইগা গাড়ি চালায়া আসলা ক্যান? যদি এক্সিডেন্ট হইত?
আকাশ মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– হত না মা। সন্ধ্যামালতী ছিল তো! এক্সিডেন্ট হওয়ার চান্স ছিল না।
সৌম্য তার পাশে রাখা দু’টো ব্যাগের একটি ব্যাগ ঢাললে অনেকগুলো জীবিত মাছ চারিদিকে ছোটাছুটি করে। ইরার পায়ে কাছে একটি মাছ আসলে ইরা চেঁচিয়ে সন্ধ্যার সাথে চিপকে দাঁড়ায়। সৌম্য ইরার দিকে চেয়ে একটু হাসল।
সবাই তাকায় মাটিতে গড়াগড়ি মাছগুলোর দিকে। সন্ধ্যা মাছগুলো দেখে ভীষণ খুশি হলো। উপুর হয়ে ইরার পায়ের কাছে থাকা ছোট মাছটি ধরে সরিয়ে রাখল।
সন্ধ্যার কাজে আকাশ আর ইরা দু’জনেই অবাক হলো। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে বলে,

– আরে আমার বউ তো দেখি বহুত সাহসী!
আকাশের কথায় সবাই হাসল। সন্ধ্যা একটু ল’জ্জা পায়। সে গ্রামে থাকতে কত মাছ কে’টেছে। মাছ কা’ট’তে ভালো লাগে তার। আর মাছগুলো যদি ভালো হয়, তাহলে তো মাছ কাটার জন্য হাত নিশপিশ করে। যেটা এখন সন্ধ্যার হচ্ছে।
ভাবনা অনুযায়ী সন্ধ্যা একটু এগিয়ে যায় বটি আনতে। কিছুক্ষণ আগে এখানে কয়েকটা পেয়ারা কে’টে খেয়েছিল সবাই। তাই বটি এখানে রেখেছে। সন্ধ্যা কয়েকপা এগিয়ে গেলে হঠাৎ-ই কোথা থেকে সকাল দৌড়ে এসে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যা বুঝতেই পারেনি তাকে কে জড়িয়ে ধরল। দু’সেকেন্ডের মাথায় সকাল সন্ধ্যাকে ছেড়ে হাঁপানো কণ্ঠে বলে,

– তুই বেঁচে আছিস সন্ধ্যা? আমি ভেবেছিলাম তুই বেঁচে নেই। একটু আগেই তোর আর সৌম্য ভাইয়ার কথা শুনে ছুটতে ছুটতে আসলাম।
কথাটা বলে সন্ধ্যাকে আবার-ও জড়িয়ে ধরে। সকালের ব্যবহারে সন্ধ্যার চোখেমুখে বিস্ময় ভর করে। সকালের কণ্ঠ পেয়ে আকাশ, সৌম্য, ইরা, আসমানী নওয়ান, বায়ান সবাই তাকায়। সবচেয়ে বেশি অবাক হয় বায়ান।
সকাল গতকাল গ্রামে এসেছিল। এখানে এসে তার সাথে সকালের কথা-ও হয়েছে। একটু পর তাদের দেখা করার কথা। অথচ এখন সকাল সন্ধ্যাকে এসে এভাবে জড়িয়ে কথা বলছে, বেচারার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ইরা সকালকে চিন্তে না পারায় ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। আসমানী নওয়ানের চেনা চেনা লাগছে, আবার মনে হচ্ছে চেনে না। সৌম্য গম্ভীর চোখে চেয়ে আছে।

আকাশ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। চোখমুখ শ’ক্ত তার। মাঝখানে তার বাবা মা’রা যাওয়ায় মেয়েটি এতোদিন তার হাত থেকে পার পেয়েছে। আজ একে সামনে থেকে দেখে যেন আকাশের গায়ে আ’গু’ন জ্বলে উঠল। এই বে’য়া’দ’ব মেয়ের জন্য তার সন্ধ্যামালতী আজ কথা বলতে পারেনা। আকাশের আর সহ্য হলো না। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে সন্ধ্যাকে টেনে সকালের থেকে ছাড়িয়ে তার ডানপাশে দাঁড় করায়।
সকাল আকাশকে দেখে অবাক হলো না। সে তো জানেই আকাশ সন্ধ্যার স্বামী। কিন্তু আকাশ তার দিকে এভাবে রে’গে তাকিয়ে আছে কেন বুঝল না। আকাশের দৃষ্টি দেখে ঢোক গিলল। ভাবনার মাঝেই আকাশ ডান হাতে সকালের বাম গালে সর্বশক্তি দিয়ে থা’প্প’ড় মে’রে দেয়।
শ’ক্ত হাতের শ’ক্তপোক্ত থা’প্প’ড় খেয়ে সকাল হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
আকাশের কান্ডে সকলে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। সন্ধ্যা দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সকালের পাশে গিয়ে বসে সকালকে আঁকড়ে ধরে।
বায়ান-ও একপ্রকার দৌড়ে এসে সকালের পাশে বসে কাঁপা গলায় ডাকে,

– সকাল?
সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ এখনো ভস্ম করে দেয়া দৃষ্টিতে সকালের দিকে চেয়ে আছে।
সন্ধ্যার চোখের কোণে পানি জমেছে। সে জানেনা কেন তার চোখ ভিজল। তবে আকাশের রা’গের কারণটা সে বুঝেছে।
আসমানী নওয়ান, ইরা এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। তারা কিছু বুঝতে পারছে না।

অন্তঃদহন পর্ব ৪০

সৌম্য নিরব। সে নড়লো না জায়গা থেকে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। চোখের কোণে পানি। তার শুধু মনে পড়ল শেষবার যখন তার বোনু তাকে সৌম্য ভাইয়া বলে ডেকেছিল। অথচ আজ বছরের পর বছর, তার বোনুর কণ্ঠ থেকে একটা শব্দ বের হয়না, যার পিছনে তার পরিবার নামের খারাপ মানুষগুলো ছিল।

অন্তঃদহন পর্ব ৪২