অন্তঃদহন পর্ব ৫

অন্তঃদহন পর্ব ৫
DRM Shohag

সৌম্য নিজেকে সামলে নিল। মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। বাড়ি যেতে হবে।
ইরা নড়লো না। ভেজা চোখে সৌম্য’র দিকে তাকিয়ে রইল। সৌম্য ইরাকে চুপ দেখে আবারও বলে,
– আমাকে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি কর।
ইরা ভারী গলায় বলে,
– পালাতে চাইছিস?
সৌম্য হঠাৎ-ই চেঁচিয়ে ওঠে,

– যা ইচ্ছা ভাব। আমার থেকে দূরে থাকবি তুই। এমনিতেই জীবনে প্যারার শেষ নাই। তার মধ্যে আরেক প্যারা জুটেছে!
ইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। চোখ থেকে টুপ করে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। আশেপাশের অনেকে তাকিয়েছে। ইরা মাথা নিচু করে নিল। চুপচাপ একটু একটু করে খিচুরি খেতে শুরু করল। খিচুরি একটু করে নিচ্ছে, তার সাথে পানি। সৌম্য আড়চোখে দেখল ইরার খাওয়া। ইরা বেশি খেতে পারলো না। একটু খেয়ে রেখে দিল। সৌম্য কিছু বলল না। পকেট থেকে একটি নাপা বের করে ইরার সামনে রাখলো। ইরা চুপচাপ নাপা খেয়ে নিল। সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চেয়ার থেকে উঠে খাবারের বিল দিয়ে আসলো। এরপর ইরার উদ্দেশ্যে বলে,
– বাইরে আয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরা এবারেও সৌম্য’র কথামতো চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। এরপর সৌম্য’র পিছু পিছু হেঁটে যায়। সৌম্য বাইরে বেরিয়ে একটি রিক্সা ঠিক করে। ইরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই ইরা রিক্সায় উঠে বসে। ডান সাইডে চেপে বসেছে ইরা। মাথা নিচু তার। সৌম্য বেশ কিছুক্ষণ ইরার দিকে চেয়ে থাকে। ধমক খেয়ে আদুরে মেয়ের মনে অভিমান জমেছে।
সৌম্য’র মনে প্রশ্ন জাগে,
আচ্ছা মানুষ কাদের উপর অভিমান করে? যারা অভিমান ভাঙাবে তাদের উপর-ই তো, তাইনা? কিন্তু ইরা কেন সৌম্য’র উপর অভিমান করেছে? ইরা কি জানেনা? সৌম্য কখনো ইরার অভিমান ভাঙাবে না। সৌম্য’রা শুধু না পাওয়ার আক্ষেপে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে জানে। সৌম্য’দের পা’গ’লা’মিতে মানায় না।
ভাবনা নিয়ে সৌম্য ইরার পাশে উঠে বসল। আবারও ভাবে, আচ্ছা সে কি ইরার সঙ্গ পেতে রিক্সায় উঠে বসেছে? সাথে সাথে সৌম্য’র ভেতর থেকে উত্তর আসে,, নাহ, কখনো নয়। সৌম্য’রা কখনো নিজের শখ, আহ্লাদ কে প্রশ্রয় দেয় না। তারা দায়িত্ব পালন করে, সে দায়িত্বে যত কষ্ট-ই থাকুক না কেন!
সন্ধ্যাকে না পাওয়ার পর থেকে সৌম্য’র খুব ভ’য় লাগে, যদি ইরাটা-ও এভাবে হারিয়ে য়ায়! কিন্তু ইরা তো হারিয়ে যাবে, যে হারানোয় ইরা অন্যকারো হয়ে যাবে। যে হারানোয় সৌম্য’র সাথে ইরার এপারে-ওপারে হাজার-কোটি মাইল দূরত্ব সৃষ্টি হবে।

কথাগুলো ভেবে সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যস্ত রাস্তার পানে তাকালো মলিন মুখে।
ইরা আড়চোখে সৌম্য’র দিকে তাকায়। চোখের কোণে পানির কণা। যতক্ষণ রিক্সা চলল ইরা সৌম্য’র দিকে তাকিয়ে রইল।
সৌম্য রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা থামাতে বললে তিনি রিক্সা থামায়। সৌম্য ভদ্রলোককে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রিক্সা থেকে নামে আর বলে,
– আমি বুঝেছি, তোর সুন্দর জীবনের খুব নিখুঁত এক বাঁধা আমি। তাই আর কখনো তোর সামনে আসব না হয়তো। এবার তোর জীবন গুছিয়ে নে ইরা।
কথাগুলো বলতে বলতে সৌম্য রিক্সার উল্টোদিকে হাঁটতে থাকে। ইরা রিক্সা থেকে নেমে ভাঙা গলায় ডাকল,
– সৌম্য?

সৌম্য তাকালো না। বরং পায়ের গতি বাড়ালো। ইরার চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। সৌম্য ধীরে ধীরে যত দূরে সরে যায়, যত মিলিয়ে যেতে থাকে। ইরার চোখের পানির বাঁধ তত ভাঙে। রিক্সা চলে গিয়েছে। রাস্তার অপর পাশে ইরাদের বাসা। সৌম্যকে একেবারে মিলিয়ে যেতে দেখে ইরা ফুঁপিয়ে ওঠে। রাস্তার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে।
ইরা জানে সৌম্য এককথার মানুষ। সৌম্য সত্যি-ই আর আসবে না।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের অন্ধকার নেমেছে ধরণীতে।
ইরাদের বাসার রাস্তা বেশ ফাঁকা। তেমন মানুষ চলাচল করে না। ইরা দু’হাতের মাঝে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। সৌম্য আর আসলো না। আসলো না ইরার পাশে। এভাবে রাস্তার পাশে বসায় সৌম্য ইরাকে আর ধমকাতে আসলো না। কথাগুলো ভেবে ইরার দলা পাকিয়ে কান্না আসে।
ইরার মা দোতলায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ঝাপসা চোখে ইরাকে দেখে।
ইতিকে মেয়ের কাছে পাঠিয়েছে। ভদ্রমহিলার কিছুই করার নেই। শুধু মাঝে মাঝে অনেক কিছু করতে ইচ্ছে হয়, মেয়ের ক’ষ্ট দেখে। কিন্তু স্বামীর কাছে তার কথার মূল্য নেই।

রাত তখন ১০ টার কাছাকাছি। আকাশ অফিস থেকে ফিরল মাত্র। রুমে এসে সর্বপ্রথম গায়ের ব্লেজার খুলে, শার্ট খুলে ফেলল। এরপর কোনোদিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে অরুণ বেলকনিতে থেকে এসে আকাশের বেডের উপর ঠাস করে শুয়ে পড়ে। আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকায় অরুণের দিকে। গতরাতে এই বে’য়া’দ’ব টার জন্য ঘুমোতেই পারেনি। অতঃপর গম্ভীর গলায় বলে,
– ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যেন দেখি তুই এই রুমে নেই। নয়তো থা’প্প’ড় একটাও মাটিতে পড়বে না।
কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে যায় আকাশ। অরুণ পাত্তা দিল না আকাশের কথা। সে ফোনে ব্যস্ত।
পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই তার মাথায় কিছু একটা আসে। অতঃপর অরুণ বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। পরনের প্যান্ট টেনে একটু উপর দিকে উঠায়। বেল্ট খুলে রেখেছে, উদাম শরীর। ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে বেসুরা গলায় গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করে,

– পা’য়’খা’না লাগছে আমার! কার বাথরুমে যাবো?
আমার হা’গা বের হয়ে যাচ্ছে, এই তুই এখনি খোল!
পা’য়’খা’না লাগছে আমার, কার বাথরুমে যাবো?
আমার হা’গা বের হয়ে যাচ্ছে, এ্যাই চেপে রাখবো কেমনে?
পা’য়’খা’না লাগ…..
আর কিছু বলার আগেই আকাশ ওয়াশরুমের দরজা খুলে চিৎকার করে বলে,
– অরুণের বাচ্চা তোরে আজ খাইছি!
অরুণ লাফ দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। আকাশ ভেজা গায়েই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অরুণের পিছু যেতে যেতে রাগান্বিত স্বরে বলে,

– বের হ আমার ঘর থেকে। এসব উল্টাপাল্টা গান গেয়ে আমার বদনাম করবি? যা বের হ বে’য়া’দ’ব।
অরুণ মনে মনে হেসে উপর থেকে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে পিছু ফিরে বলে,
– আজ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ওয়াশরুম সাথে করে নিয়ে আসিনি বলে!
বলতে বলতে আকাশের ঘরের দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অরুণ, আকাশ পিছু পিছু যায়, দরজা থেকে বেরিয়ে আর এক পা বাড়ালে সামনে সন্ধ্যাকে দেখে পা থেমে যায় আকাশের। ধাক্কা খেতে গিয়েও খায়নি আকাশ থেমে যাওয়ায়।
অরুণ বামদিকে দৌড় দেয়, আর সন্ধ্যা ডানদিক থেকে এসে আকাশের ঘরের সামনে দাঁড়ায়৷
সন্ধ্যা আকাশের মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলায়। মেয়েটি কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না। আকাশের পুরো বডি ভেজা, সবচেয়ে হাস্যকর যেটা লাগছে, আকাশের শরীরে কিছু কিছু জায়গায় ফেনা, সাথে মাথায় ফেনা, দাঁড়ির কিছু অংশে ফেনা। সন্ধ্যা হাসতে চাইলো না। কিন্তু সে বহুকষ্টে-ও নিজেকে সামলাতে পারলো না। ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে ফেলে মেয়েটি।

আকাশের দৃষ্টি সন্ধ্যার গালে টোল টুকুতে। কিন্তু যখন বুঝল সন্ধ্যা তার করুণ অবস্থা দেখে হাসছে, সাথে সাথে ঘরের ভেতর গিয়ে সন্ধ্যার মুখের উপর ঠাস করে দরজা আটকে দেয়। দু’হাতে ভেজা প্যান্ট উপরদিকে টেনে তুলে অসহায় কণ্ঠে আওড়ালো,
– ও মাই আল্লাহ! আমার ই’জ্জ’ত!
এই মেয়েটার সামনে গতকাল থেকে তার ই’জ্জ’তের রফাদফা হচ্ছে! এতো রা’গ লাগছে আকাশের! ইচ্ছে করছে অরুণকে সত্যি সত্য লাত্থি মে’রে বাংলাদেশের বাইরে বের করতে। বেডের উপর অরুণের ফোন দেখে ধুপধাপ পা ফেলে সেদিকে এগিয়ে যায়। রে’গে’মে’গে অরুণের ফোন ছুঁড়ে মারতে গিয়েও থেমে গেল। চোখ বুজে বিড়বিড় করল,
– কুল আকাশ কুল!
একটি আইডিয়া আকাশের মাথায় ঘুরপাক খায়। এরপর দ্রুত অরুণের ফোনের লক খুলে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ম্যাসেজ টাইপ করে লেখে

~ বেইবি আমি বাংলাদেশে এসেছি, কাল বিকাল ৫ টায় দেখা হচ্ছে।
এই ম্যাসেজ গুণে গুণে দশজনকে ফরওয়ার্ড করে বাঁকা হাসে আকাশ। কাজ শেষে অরুণের ফোন বেডের উপর ছুঁড়ে মারে। এরপর দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়।
প্রায় ১৫ মিনিটের মাথায় আকাশ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে। পরনে কালো গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, শরীরে আর কিছু জড়ালো না। এগিয়ে গিয়ে ঘরের দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে বিস্ময় চোখে তাকায় সন্ধ্যাকে দেখে। তার মনে হলো, সন্ধ্যাকে সে ১৫ মিনিট আগে যেভাবে দেখেছিল, এখন-ও সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।
সন্ধ্যা আকাশ আর অরুণের জন্য দু’কাপ কফি এনেছিল। আসমানী নওয়ান তাকে পাঠায়নি। আকাশদের বাড়ির কাজের খালা আসছিল, মাঝপথে সন্ধ্যার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এজন্যই সন্ধ্যা কফি দিতে এসেছিল। কিন্তু আকাশ মুখের উপর দরজা লাগানোয় মেয়েটি ভেবেছে, সে হেসেছে বলে আকাশ তার উপর অনেক রে’গে গিয়েছে। এই ভাবনা সাথে কফি দেয়ার জন্য সে চুপটি করে এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল।
আকাশ গম্ভীর গলায় বলে,

– কি চাই?
সন্ধ্যা হাতের ট্রে আকাশের দিকে এগিয়ে দেয়। আকাশ দেখল সন্ধ্যা হাতে একটি ছোট ট্রে, যাতে দু’কাপ কফি। সন্ধ্যার মাথা নিচু। আকাশ সন্ধ্যার দিকে তাকিয়েই ট্রে-টি নিজের হাতে নিল। কিন্তু আকাশ তার ঘরের ভেতর গেল না, বরং এখানেই দাঁড়িয়ে রইল। সন্ধ্যা মাথা নিচু করে বারবার ঢোক গিলছে। সে হেসেছে বলে আকাশকে স্যরি বলতে চাইছে। কিন্তু সে তো কথাই বলতে পারে না। কথাটা ভাবতেই চোখের কোণে পানি জমে।
নিজেকে সামলে নেয় সন্ধ্যা। এরপর মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে,, প্রথমে ডান হাতের দু’আঙুল দ্বারা মুখের হাসি বোঝায়,, এরপর ডান হাতে ডান হাতের পাতা ধরে স্যরি বোঝায়। সন্ধ্যার মন বলে,
– আমি আপনাকে দেখে হেসেছি, তাই স্যরি!

আকাশ সন্ধ্যার কাজে ভীষণ অবাক হয়। সে বুঝেছে সন্ধ্যা হাসার কারণে তাকে স্যরি বলছে।
সন্ধ্যা অসহায় চোখে আকাশের দিকে চেয়ে আকাশের উত্তর শুনতে। আকাশ নিরব হয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে রইল।
আকাশের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সন্ধ্যার মন খারাপ হয়। সে ভেবেছে আকাশ তার কথা বোঝেনি। আবার-ও বোঝাতে চায়, তখন-ই নিচ থেকে আসমানী নওয়ান এর গলা পেয়ে সন্ধ্যা আর এখানে দাঁড়ায় না। দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায় তার শ্বাশুড়ির ডাকে সাড়া দিতে। ডান হাত বাড়িয়ে চোখের কোণে লেগে থাকা পানির কণা মুছে নেয়।
আকাশ দু’কাপ চায়ের একটি থেকে একবার চুমুক দিয়ে মুখ কুঁচকে বিরক্তিসূচক শব্দ করে। এই চায়ের চেয়ে শরবত-ও হাজারগুণ ভালো আছে।
বিরক্তি নিয়ে চায়ের কাপ হাতের ছোট্ট ট্রেতে রেখে দেয় শব্দ করে। কফির প্রয়োজন ছিল, কিন্তু দিয়েছে তো শরবত!
আকাশের দৃষ্টি সন্ধ্যার পানে। সন্ধ্যা ধীরপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার মাথায় শাড়ির আঁচল দ্বারা ঘোমটা টানা। আকাশ সেদিকে গম্ভীর চোখে চেয়ে রইল। মনে কি চলছে বোঝা যায় না। তবে সন্ধ্যাকে নিয়ে ভালো কিছু নয়। চোখেমুখে অগণিত বিরক্তির ছোঁয়া।

সৌম্য আকাশের খালাতো বোন শিমুদের বাড়িতে এসেছে। শিমুকে বেশ কয়েকটা অ্যাকাউন্টিং এর ম্যাথ দেখিয়ে দেয়। এরপর চেয়ারে হেলান দিয়ে দু’হাত আড়াআড়িভাবে রেখে চোখ বুজে রাখে।
দু’দিন আগে ইরার সাথে লাস্ট দেখা হয়েছিল। ইরাকে ইরার বাসার সামনে রেখে এসেছিল। এরপর ইরার আর কোনো খোঁজ পায়নি। সে তো ইরার কখনো খোঁজ নেয় না। ইরা নিজে থেকেই সবসময় সৌম্যকে মেসেজ, কলের উপর রাখে। কিন্তু এই দু’দিনে ইরার থেকে একটি মেসেজ, কল কিচ্ছু পায়নি। হয়তো নিজেকে গোছাতে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে মেয়েটা।
কথাটা ভেবে সৌম্য’র বুকে কেমন চিনচিন ব্য’থা হলো। ইরার আকুতিভরা দৃষ্টি ভেসে উঠল। সৌম্য চোখ বুজে রেখে ঢোক গিলল।

মনের কোণে কিছু কথা উঁকি দেয়,
এ দেশে সৌম্যদের দু’দিনের পরিচয়ের কেউ মনে রাখে না। কারণ তাদের পকেট ভর্তি টাকা থাকে না।
তবে সৌম্যদের অভাগী মা, বোন বেঁচে থাকলে তারা মনে রাখে ভাই, ছেলেকে।
সন্ধ্যা তাকে মনে রেখেছে তো? তার ছোট বোনটা তাকে দেখতে চায়? ক’ষ্ট পায় ভাইকে না দেখতে পেয়ে?
বোনের কথা ভেবে সৌম্য’র দমবন্ধ লাগলো। মা মা’রা যাওয়ার পর সৌম্য তার বোনটাকে মায়ের আদর দিতে চাইতো, ক’ষ্ট ভুলিয়ে রাখতে কতবার জোকার হয়ে বসে থাকতো। তবুও সবশেষে সন্ধ্যা ক’ষ্ট পেতো। আসলে তাদের দু’ভাইবোনের কপালে দুঃখ গুলো খুব যত্নে লেখা। তাই হাজার চেষ্টা করেও কেউ দুঃখ থেকে রেহাই পায় না।
শিমু ম্যাথ করার মাঝে মাঝে সৌম্য’র দিকে তাকায়। তার মা নাস্তা দিয়ে গিয়েছে, কিন্তু সৌম্য তাকিয়ে-ও দেখেনি। শিমুর মন খারাপ হয়। সৌম্য স্যার এর কি অনেক মন খারাপ? কয়েকদিন পর এসেছে, ঠিক করে কথা-ও বলেনি এসে। শিমু ম্যাথে মনোযোগ দিতে পারছে না। সৌম্য’র জন্য তার ভীষণ খারাপ লাগছে। মেয়েটি বেশ কিছুক্ষণ সৌম্য’র দিকে তাকিয়ে থেকে মিনমিন করে ডাকে,

– স্যার?
সাথে সাথে সৌম্য চোখ মেলে তাকায়। সোজা হয়ে বসে শিমুর খাতা তার দিকে ঘুরিয়ে নেয় খুব স্বাভাবিকভাবে। কলম হাতে নিয়ে খাতায় দৃষ্টি দিলে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মেয়েটি কলমের একটি ফোঁটা-ও বসায়নি খাতায়। এমনিতেই কিচ্ছু ভালো লাগছে না। তার মধ্যে মেয়েটি তামাশা শুরু করেছে। সৌম্য শব্দ করে খাতা রেখে শিমুর দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
– তামাশা করতে এসেছি আমি? এ্যাই মেয়ে, পাঁচ মিনিটে যে ম্যাথ করা যায়, তুমি ২০ মিনিটে সেটা পারোনি? কি হলো কথা বলছো না কেন?
শিমু ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। সৌম্য’র কথাগুলো অনেক রূঢ় শোনায়। সৌম্য বিরক্তি নিয়ে নিজেই ম্যাথ করে দেয়। এরপর আরেকটি মার্ক করে বলে,

– পাঁচ মিনিটে এটা সমাধান করবে।
কথাটা বলে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। শিমু ঢোক গিলল। খাতা নিজের দিকে টেনে নিয়ে এক লাইন লেখে। এরপর সৌম্য’র দিকে চেয়ে ভ’য়ে ভ’য়ে বলে,
– স্যার আপনি নাস্তা খাবেন না?
সৌম্য সাথে সাথে শক্ত গলায় বলে,
– খাবো না।
শিমু আবারও ঢোক গিলল। এরপর মৃদুস্বরে বলে,
– আপনাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে। খেয়ে নিন।

সৌম্য শিমুকে কড়া ধমক দেয় একটা। শিমু ভ’য় পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। সৌম্য’কে এভাবে ক্লান্ত, মনমরা হয়ে দেখতে তার একটু-ও ভালো লাগে না। কিন্তু সৌম্য তো তার কথা শোনেনা। শিমুর চোখজোড়া ঝাপসা হয়। সৌম্য তার দিকে একবার-ও তাকায় না কেন? সে কত পরিপাটি হয়ে আসে, অথচ সৌম্য ফিরেও দেখে না। উল্টে ধমকায়। শিমুর তবুও ভালো লাগে সৌম্যকে। খুব ভালো লাগে।
আকাশ শিমুদের বাড়িতে এসেছে। গত দু’দিন আগে তার ব্যবসার কাজে কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় আকাশ এখন-ও ঢাকায় আছে।
সে তার খালা, আর খালাতো বোন শিমুর খোঁজ নিতে এসেছে। তার মা আসতে চেয়েছিল, শরীর একটু খারাপ লাগায় আগামীকাল আসতে চেয়েছে।
আকাশ তার খালার সাথে টুকটাক কথা বলে, এরপর কিছু ফলমূল, মিষ্টি তার খালার হাতে দেয়। এরপর ২০ হাজার টাকার একটা বান্ডিল তার খালার হাতে দেয়। আকাশ মাসে তিন থেকে চারবার আসে। আসলেই তার খালার হাতে একটা এমাউন্ট ধরিয়ে দেয়।
আকাশ তার খালার সাথে কথা বলা শেষে শিমুর ঘরে গিয়ে দেখল সৌম্য শিমুকে পড়াচ্ছে। আকাশ এগিয়ে এগিয়ে বলে,

– সৌম্য কি অবস্থা?
সৌম্য আকাশকে দেখে সালাম দেয়। আকাশ সালামের উত্তর নিয়ে শিমুর উদ্দেশ্যে বলে,
– পড়াশুনার কি অবস্থা?
শিমু মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
– ভালো ভাইয়া।
আকাশ কিটক্যাট এর একটা বড়সড় বক্স শিমুর কোলে ছুঁড়ে দেয়। শিমু অবাক হয়ে বলে,
– ভাইয়া এটা আমার জন্য?
আকাশ দু’হাত প্যান্টের পকেটে রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
– নাহ। তোর নানির মায়ের জন্য।
আকাশের কথায় শিমু ভোতামুখে তাকায়। সৌম্য মৃদু হাসলো। সন্ধ্যার কথা ভেবে সৌম্য’র মুখ মলিন হয়। আকাশ শিমুকে ছোটবোনের মতো করে খুব আদর করে, এটা সৌম্য গত একবছরে বুঝেছে। আকাশ আর সৌম্যকে দেখে তার সন্ধ্যা মায়াময় মুখটা ভেসে উঠল।

আকাশ ফোনে মগ্ন। সৌম্য’র ফোনে একটি নোটিফিকেশন আসে। সৌম্য সাধারণত তার ফোনের নোটিফিকেশন চেক করে না। কিন্তু গত দু’দিন ইরার খোঁজ না পেয়ে ছেলেটার হৃদয় ব্যাকুল, হয়তো সে নিজেকে ধরা দেয় না।
সৌম্য তার ফোন টেবিলের উপর থেকে নিয়ে চেক করলে দেখল অপরিচিত এক নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও এসেছে। সৌম্য ভ্রু কুঁচকে ভিডিওটি অপেন করে।
ফোনের স্ক্রিনে সন্ধ্যার মুখ ভেসে ওঠে। কয়েক সেকেন্ড পেরোতেই সন্ধ্যার গালে এক শক্তপোক্ত থা’প্প’ড় পড়ে। সন্ধ্যা হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।
এটুকু দেখে সৌম্য’র চোখজোড়া ঝাপসা হয়। ভিডিও পজ করে দেয়। যে থা’প্প’ড় দিয়েছে তাকে ভিডিওতে একটুও দেখা যাচ্ছে না।
সৌম্য কেন যেন শরীরে শক্তি পাচ্ছে না। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে ভিডিওটি আবারও অন করে। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, সন্ধ্যার কান্নামাখা মুখ। দেয়ালে হেলান দিয়ে নিঃশব্দে কান্নার দৃশ্য। এরপর সন্ধ্যা কাঁদতে কাঁদতে ওভাবেই ঘুমিয়ে যায়।

ভিডিওটি দেখে সৌম্য’র ডান চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গালে গড়িয়ে পড়ে। সৌম্য দ্রুত তার ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ছিটকে ফেলে। কতদিন পর তার বোনটার মুখ দেখল, তাও কতটা বিধ্বস্ত অবস্থায়। কান্নামাখা সন্ধ্যার মুখের দিকে চেয়ে সৌম্য পিকটির উপর ডান হাতের বুড়ো আঙুল রেখে বিড়বিড় করে,
– বোনু, আমার কলিজা!
এরপর আর এক সেকেন্ড-ও সময় নষ্ট না করে সৌম্য উঠে দাঁড়ায়। নিজেকে সামলে আকাশের উদ্দেশ্যে ভারী গলায় বলে,
– ভাইয়া আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।
আকাশ ফোন থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে সৌম্য’র দিকে তাকায়। আকাশকে চুপ দেখে সৌম্য আবার-ও বলে,
– ভাইয়া প্লিজ! আমি শিমুকে আরেকদিন ডাবল টাইম নিয়ে পড়িয়ে দিব।
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– ওকে। বাট, কোনো প্রবলেম হয়েছে?
সৌম্য ছোট করে বলে,
– না ভাইয়া। আসছি।
কথাটা বলে সৌম্য বড় বড় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শিমু আকাশকে দেখে ভ’য় ভ’য়ে মন দিয়ে ম্যাথ করছিল। হঠাৎ সৌম্য’র এভাবে চলে যাওয়ায় বেচারি মনমরা হয়ে চেয়ে থাকে।

পরদিন সকাল নয়টা নাগাদ আকাশ কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রেডি হয়ে নিচে নামে। অরুণ, সাইফুদ্দীন নওয়ান এর পাশে বসে নাস্তা করছে। বা হাত ফোনের স্ক্রিনে চলছে। আকাশ অরুণের সামনে বরাবর চেয়ার টেনে বসল। আসমানী নওয়ান আকাশের সামনে স্যান্ডউইচ রাখে। আকাশ ডান হাত একটু টানা দেয়, যাতে ব্লেজার এর হাতা সামান্য উপরদিকে ওঠে। এরপর খাওয়া স্টার্ট করে।
অরুণ আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলো। এরপর তার ডান পা আকাশের দিকে এগিয়ে নিয়ে আকাশের পায়ের উপর রাখে। আকাশ মাথা নিচু করে খাওয়ায় মনোযোগী ছিল, হঠাৎ-ই তার মুখ নাড়ানো থেমে যায়। মাথা উঁচু করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অরুণ বা হাতের আঙুলগুলো মেয়েদের মতো করে ঢং করে নাড়িয়ে বলে,
– হেই বাতাস বেইবি!

আকাশ অরুণকে দেখে চোখমুখ কোঁচকায়। সাইফুদ্দীন নওয়ান অরুণের দিকে তাকালে অরুণ স্বাভাবিক হয়ে মেকি হাসে।
আকাশ হঠাৎ-ই তার ডান পায়ের দু’আঙুল দিয়ে অরুণের বা পায়ের একটি আঙুল মুচড়ে ধরে। অরুণ চেঁচিয়ে ওঠে। সাইফুদ্দীন নওয়ান খাবার চিবোতে চিবোতে বলে,
– কি হয়েছে অরুণ?
অরুণ আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ মাথা নিচু করে মনোযোগ সহকারে খাচ্ছে, যেন আশেপাশে কি হচ্ছে সে কিছুই জানে না। অরুণ অসহায় মুখ করে বলে,
– আঙ্কেল তীব্র বাতাস আমাদের খুব ক’ষ্ট দেয় জানেন?
সাইফুদ্দীন নওয়ান অরুণের কথা বুঝলো না। অরুণ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আকাশ বাবু তুই কত ভালো! ছাড় ছাড়!
আকাশের বাবা ভ্রু কুঁচকে বলে,

– কি ছাড়বে?
অরুণ ঘাড় ঘুরিয়ে সাইফুদ্দীন নওয়ানের দিকে চেয়ে বলে,
– আঙ্কেল আপনার ছেলে আমার ই’জ্জ’ত ধরে টানছে।
সাইফুদ্দীন নওয়ান আকাশের দিকে তাকালে দেখল আকাশ মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। ভদ্রলোক অরুণের দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কিন্তু তোমাদের মাঝে তো অনেক ডিস্টেন্স!
সাইফুদ্দীন নওয়ান এর কথা শুনে অরুণ চোখ বড় বড় করে তাকায়। হায় হায়, ছেলে পায়ের আঙুল ছিঁড়লো বলে! আর বাবা সত্যি সত্যি তার ই’জ্জ’তের দিকে নজর দিচ্ছে।
সন্ধ্যা এক গ্লাস জুস নিয়ে আকাশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আসমানী নওয়ান রান্নাঘর থেকে আনতো, তিনি কিছু কাজ করছিলেন বলে সন্ধ্যা নিয়ে এসেছে। যদিও আসমানী নওয়ান সন্ধ্যাকে নিষেধ করেছে কিন্তু মেয়েটি জোর করেই এনেছে। মানুষটা তার কথা কত ভাবে! একটু-আধটু সাহায্যতো করাই যায়।
সন্ধ্যা আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে তো কথা বলতে পারে না। কিভাবে দিবে বুঝতে পারছে না।
অরুণের চোখ পড়ে সন্ধ্যার দিকে। আকাশ তার পা এখনো ছাড়েনি। বেচারা চোখমুখ কোঁচকানো অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বা হাত নেড়ে বলে,

– হাই সুইটি! কিছু বলবে?
হঠাৎ এভাবে কথা বলায় সন্ধ্যা ঝাঁকি দিয়ে টেবিলের অপর পাশে বসা অরুণের দিকে তাকায়। তখন-ই তার হাতের জুসের গ্লাসের সবটুকু জুস ঢেলে আকাশের প্যান্টের উপর পড়ে যায়। আকাশ ডানদিক ফিরতে নিয়েছিল, তার আগেই কোলের উপর ঠাণ্ডা কিছু অনুভব করায় মাথা নিচু করে দেখল তার কোল ভেজা। মাথা উঁচু করলে দেখে পাশে সন্ধ্যা দাঁড়ানো, যার হাতে জুসের গ্লাস। সন্ধ্যা এই অকাজ করেছে বুঝতে পেরেই ছেলেটা ভীষণ রে’গে যায়। খাওয়া ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা দু’পা পিছিয়ে যায়। ভীত চোখে তাকায় আকাশের দিকে।
আকাশ ভস্ম করে দেওয়া চোখে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার দিকে। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে ঠাটিয়ে কয়েকটা থা’প্প’ড় দিয়ে এরপর কিছু বলতে।রাগান্বিত স্বরে চিৎকার করে বলে,

– রাবিশ! মুখের বুলির সাথে সাথে চোখের পাওয়ার-ও নেই?
আকাশের চিৎকারে আসমানী নওয়ান দ্রুতপায়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। সাইফুদ্দীন নওয়ান ভ্রু কুঁচকে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। চোখেমুখে বিরক্তি।
অরুণ আকাশের উদ্দেশ্যে বলে,
– আকাশ মেয়েটি বুঝতে পারেনি হয়তো। বাদ দে।
আকাশ অরুণের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,
– এই মেয়েটা আমার পাশে এসেছে কেন? ওর সাহস কি করে হয় আমার পাশে দাঁড়ানোর?
আসমানী নওয়ান আকাশকে ধমকে ডাকে,
– আকাশ?
আকাশ রে’গে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে,

– তুমি এই মেয়েটাকে এই বাড়িতে এনেছ, তোমার কাছেই রাখো। মেয়েটা আমার পাশে কেন আসে? তুমি তোমার মেয়ের পরিচয়ে যতদিন ইচ্ছে এই বাড়িতে এই মেয়েকে রাখো। কিন্তু আমার সাথে ডিভোর্স হওয়ার আগে পর্যন্ত এই মেয়েকে যেন আমার আশেপাশে না দেখি। আকাশ নওয়ান এর লাইফে বউ নামে কোনো ফা’ল’তু টপিক থাকবে না। বুঝেছ?
কথাগুলো বলে আকাশ তার পাশে থাকা চেয়ারে একটা লাথি দেয় জোরেসোরে। চেয়ারটি কয়েকপা পিছনদিকে সরে যায়।
আকাশ আর কোনোদিকে তাকালো না। গটগট পায়ে এগিয়ে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
আসমানী নওয়ান নিরব চোখে ছেলের পানে চেয়ে রইল। অরুণ কান্নারত সন্ধ্যার দিকে একবার তাকায়। আরেকবার আকাশের দিকে তাকায়। সাইফুদ্দীন নওয়ান বিরক্ত চোখে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে।
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। সে একদিন এই সমাজে ডিভোর্সি হিসেবে পরিচিতি পাবে? বিয়ের আগে ওসব অ’ত্যা’চা’র-ই বোধয় ভালো ছিল। তার কপালে কি একটু সময়ের জন্য-ও আল্লাহ সুখ লেখেনি? সৌম্য’র বলা একটি কথা মনে পড়ল,
সৌম্য বলত,

– বোনু তুই আমার কাজের মাসি হয়ে থাকবি বুঝলি?
সন্ধ্যা মুখ ফুলিয়ে তার ভাইয়ের দিকে তাকালে সৌম্য তার মাথায় ডান হাত রেখে মৃদু হেসে বলত,
– আর সেই নামে কাজের মাসি আমার ঘরে বাস্তবে রাজকন্যা হয়ে থাকবে। টাকা দিয়ে নয়,, আদর, ভালোবাসা দিয়ে। চলবে বোনু?
সন্ধ্যা সৌম্য’র দিকে ঝাপসা চোখে চেয়ে হেসে ফেলত। ইশারায় বোঝাত,, শুধু চলবে না, দৌড়াবে।
কথাগুলো ভেবে সন্ধ্যার দলা পাকিয়ে কান্না আসলো। সন্ধ্যার তার ভাইয়ের কাছে অভিযোগ করতে ইচ্ছে করল,,
সৌম্য ভাইয়া, তোমার বোনুর আদর, ভালোবাসা কিছুই নেই। তুমি কোথায় সৌম্য ভাইয়া?
সন্ধ্যার মন বলে,

অন্তঃদহন পর্ব ৪

তার স্বামীর ভালোবাসা লাগবে না। সে তো আর ভগ্যবতী নয়। তার কপালে এসব নেই।
সে শুধু তার ভাইয়ের কাছে যেতে চায়। তার ভাইয়ের সাথে সে একবেলা খেয়ে বাঁচবে। সৌম্য ভাইয়া কেন আসেনা তাকে নিতে? আর কবে আসবে? সন্ধ্যা আর কত অপেক্ষা করবে?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।

অন্তঃদহন পর্ব ৬