অন্তঃদহন পর্ব ৫০

অন্তঃদহন পর্ব ৫০
DRM Shohag

সন্ধ্যার ফোঁপানো থামে না। আকাশ আবার-ও একই সুরে বলে,
– অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
সন্ধ্যা বা হাত তার বুকে দেয়। এখানে কত ব্য’থা ছিল! আকাশের এটুকু কথাতে এক মুহূর্তেই সব যেন উধাও হয়ে গেল।
আকাশ আবার-ও বলে,
– আমি সব ভুলে গিয়েছি বউ। তবে আমাকে পো’ড়া’তে আর কখনো কোনো ছেলের আশেপাশে যেও না। মনে থাকবে তো?
সন্ধ্যা ফোঁপানোর মাঝেই মাথা নেড়ে বোঝায়, তার মনে থাকবে। মেয়েটার অভ্যাস এখনো যায়নি। আকাশ মৃদু হাসল। অতঃপর বলে,

– আমার আস্ত কলিজা তুমি। কান্না অফ কর বউ। আমি ফিরছি।
সেই আগের মতো আকাশের সম্মোধনে সন্ধ্যার বুক প্রশান্তির আভায় ছেয়ে যায়। এই আকাশকে পেতে সে কতদিন কেঁদেছে! এইতো আজ পেয়েছে।
সন্ধ্যা নিজেকে সামলায়। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলার আগেই আকাশ দ্রুত বলে,
– এখন কথা বলো না। ফোনে আসল ভয়েস পাবো না। সামনে থেকে তোমার কণ্ঠ শুনতে চাই। আমার সন্ধ্যামালতীর মিষ্টি কণ্ঠ!
সন্ধ্যা মাথা নাড়ল। কান্নামাখা মুখে একটুখানি খুশির ঝিলিক দেখা যায়। যেন তুফান ঝড়ের পর জমিনের বুকে এক ফালি মিঠা রোদ আছড়ে পড়েছে।
আকাশ কল কেটে দিয়ে ল্যাপটপ থেকে সন্ধ্যার ফোনে ভিডিও কল দেয়। সাথে সাথে সন্ধ্যা রিসিভ করে। স্ক্রিনে আকাশের হাস্যজ্জ্বল মুখ ভেসে ওঠে। সন্ধ্যা আকাশকে দেখে মৃদু হাসল।
কিন্তু আকাশের হাসি মিলিয়ে যায়। সন্ধ্যা কতক্ষণ কেঁদেছে কে জানে! চোখমুখ অনেক ফুলে গিয়েছে। আকাশ অনুতপ্ত স্বরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– স্যরি!
সন্ধ্যা বা হাতে ভরে আসা চোখ মুছে নেয়। আবেগে বারবার তার চোখজোড়া ভিজে যাচ্ছে। আকাশ মন ভরে দেখে তার সন্ধ্যামালতীকে। এভাবে কাছ থেকে কতদিন পর দেখল তার সন্ধ্যামালতীকে! আকাশ মৃদুস্বরে বলে,
– আগামী পরশু বিকালের মধ্যে ফিরছি। এবার একটু মন খুলে হাসো বউ।
সন্ধ্যা অবাক হলো। আকাশ সত্যিই পরশুদিন তার সামনে থাকবে? সন্ধ্যার মুখে হাসি ফুটল। আকাশের আবদারে সে ইচ্ছে করেই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল। আকাশের দৃষ্টিতে মুগ্ধতার রেশ ছড়ায়। মৃদুস্বরে বলে,
– তুমি এতো সুন্দর সুন্দর কেন বউ?

সন্ধ্যার মুখে ল’জ্জার আভা। তবে আকাশের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল না। বরং লাজুক চোখে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।
আকাশের ভীষণ আফসোস হলো৷ সে কেন এতো দূরে এলো? এখন তো চাইলেই তার সন্ধ্যামালতীকে জড়িয়ে ধরতে পারছে না। পুরো একদিন জার্নি করার পর সন্ধ্যামালতীকে সামনে থেকে দেখতে পাবে। তারপর তার সন্ধ্যামালতীকে জড়িয়ে নিতে পারবে।
আকাশ ডিফানের উপর থেকে একটি কুশন নিয়ে দু’হাতে জড়িয়ে নেয়। এরপর সামনের দিকে একটু ঝুঁকে অসহায় কণ্ঠে বলে,

– আমি অনেক তৃষ্ণার্ত সন্ধ্যামালতী!
সন্ধ্যা ইশারায় বোঝায়, পানি খাওয়ার কথা।
আকাশ আফসোসের সুরে বলে,
– পানি খাওয়ার তৃষ্ণা পায়নি রে বোকা বউ। এটা আমার সন্ধ্যামালতীকে খাওয়ার তৃষ্ণা।
সন্ধ্যা বুঝতে পেরে ভীষণ ল’জ্জা পেয়ে যায়। মাথা নিচু করে চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশ কিছু একটা ভেবে মনে মনে হেসে আবার-ও বলে,
– কেঁদেকেটে তো সব ভিজিয়ে ফেলেছ। জামা চেঞ্জ কর।
সন্ধ্যা বিনাবাক্যে মেনে নিল আকাশের কথা। মাথা নেড়ে সাথে সাথে কল কেটে দেয়। এমনিতেই সে ল’জ্জা পাচ্ছে। আকাশের বলা কথার অজুহাতে সায় পেয়ে কল কাটলো।
এরপর আকাশের দেয়া মেসেজটি চেক করল যেখানে লেখা,

– সন্ধ্যার আকাশের নিচে বকুলতলায় এক শাড়িপরিহিতা স্নিগ্ধপরীর মিষ্টি কণ্ঠ শুনতে শুভ্র-পুরুষ, রাজকুমার রূপে ফিরছে তার রাজকুমারী সন্ধ্যামালতীর নীড়ে।
মেসেজটি পড়ে সন্ধ্যার ভেজা চোখজোড়ায় আরও খানিক অশ্রুকণা জমে। সাথে ঠোঁটের কোণে লেপ্টানো হাসি দীর্ঘ হয়।
সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে খুশির চোটে একটু নাচলো। হঠাৎ মনে পড়ল, এই ঘরে সিসি ক্যামেরা আছে। সাথে সাথে সন্ধ্যা থেমে যায়। আকাশ তাকে এভাবে দেখে নিয়েছে ভাবতেই ল’জ্জায় সন্ধ্যা চোখ খিঁচে নেয়।
তার পরনে যে ওড়না, যেটা একটু-আধটু ভিজেছে তবে চেঞ্জ করার প্রয়োজন নেই। আকাশ দেখবে বলে ইচ্ছে করে তাকে চেঞ্জ করতে বলেছে বুঝতে পেরে সন্ধ্যার ল’জ্জা আরও বাড়ে। সন্ধ্যা আর এই ঘরে থাকলোই না। এক দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
এপাশে আকাশ সন্ধ্যার নাচ দেখে হাসছিল। কিন্তু সন্ধ্যাকে চলে যেতে যেতে দেখে আকাশ মুখ অসহায় হয়ে যায়। বিড়বিড় করল,

– আরে যাহ! চলে গেল! কিছুই দেখতে পেলাম না! চালাক বউ কোথাকার!
তবে সন্ধ্যার মনোভাব বুঝতে পেরে আকাশ আবার-ও হেসে ফেলল। অরুণ ঘরে এসে আকাশকে একা একা হাসতে দেখে অবাক হলো। ব্যাপারটা কি হলো? কিছুক্ষণ আগেও তো এ বোম হয়ে ছিল। আর এখন হাসছে। হার্টের সাথে সাথে এর মাথাটাও গেল নাকি? অরুণ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– পা’গ’লের মতো হাসছিস কেন?
আকাশ মৃদু হেসে বলে,
– আমি বোধয় পা’গ’ল হয়ে যাব।
অরুণ তব্দা খেয়ে বলে,
– পা’গ’ল হয়ে যাবি না। পা’গ’ল অলরেডি হয়ে গিয়েছিস।
আকাশ পাত্তা দিল না অরুণের কথা। আবার-ও বলে,
– সন্ধ্যামালতী এতো সুন্দর কেন?

অরুণ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। কয়েক ঘণ্টা আগে সন্ধ্যার সাথে কথাই বলল না। আর এখন সন্ধ্যার গুণগান গাইছে। সব ঠিক হলো নাকি এ সত্যি সত্যি পা’গল হলো?
আকাশের শেষ কথায় অরুণ কপাল চাপড়ালো। ওর বউ সুন্দর কেন সে কিভাবে জানবে! মনে মনে হেসে বলে,
– তুই বললে তোর সন্ধ্যামালতীর সৌন্দর্যের রহস্য উদ্ঘাটন করব আমি। কি রে করব?
আকাশ রাগান্বিত স্বরে বলে,
– খু’ন করে ফেলব তোকে।
অরুণ ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। টি-শার্ট উঁচু করে বুকে দু’বার থুতু দিয়ে বিড়বিড় করে,
– তার মানে এ পা’গ’ল হয়নি। বাঁচা গেল!

সন্ধ্যা ইরার ঘরে এসেছে। তার ভাইয়া বাইরে গিয়েছে। ইরার সাথে টুকটাক কথা বলছিল সন্ধ্যা। ইরা খেয়াল করল, সন্ধ্যাকে ভীষণ প্রফুল্ল দেখাচ্ছে। তবে কিছু বলল না। মেয়েটাকে সবসময় মনমরা হয়ে দেখতে ভালো লাগেনা। এখন ভালো লাগছে।
রাত ১১ টায় সন্ধ্যা হঠাৎ গড়গড় করে বমি করে দেয় মেঝেতে। ইরা হতভম্ব হয়ে যায়। সন্ধ্যাকে ধরার আগেই সন্ধ্যা সেন্সলেস হয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।
সৌম্য মাত্র ঘরে প্রবেশ করেছিল। সন্ধ্যার এই অবস্থা দেখে দৌড়ে এসে সন্ধ্যার পাশে বসে। দু’হাতে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁপা কণ্ঠে ডাকে,
– বোনু?

সন্ধ্যাকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে সৌম্য। সাথে আসমানী নওয়ান, ইরা-ও আছে।
সৌম্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দু’দন্ড কোথাও বসেনি। বুকটা জ্ব’লছে খুব। লাস্ট সাতদিন তার বোনুর সাথে ঠিক করে কথা-ও বলেনি। সৌম্য’র ক’ষ্ট হচ্ছে। দু’হাতের মাঝে মুখ লুকিয়ে ভাঙা স্বরে বিড়বিড় করে,
– বোনু ঠিক হয়ে যা প্লিজ! আমি এবার থেকে তোর সাথে অনেক কথা বলব।
নিয়াজের ডাকে সৌম্য’র হুশ ফিরে। বিচলিত কণ্ঠে বলে,
– বোনুর কি হয়েছে ভাইয়া।
নিয়াজ উত্তর করে,
– সন্ধ্যার শরীর ভীষণ উইক। এজন্যই মূলত ও সেন্স হারিয়েছে। তবে ওকে চেকআপ করতে গিয়ে সাথে আরেকটি খবর পেয়েছি।
সৌম্য ঢোক গিলল। তার বোনুর কি হয়েছে? সে তার বোনুর উপর রা’গ করে কত ক’ষ্ট দিয়েছে! নিয়াজকে চুপ দেখে সৌম্য উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে,

– ভাইয়া বলুন না, আমার বোনুর কি হয়েছে?
নিয়াজ মৃদু হেসে বলে,
– তুমি মামা হতে যাচ্ছো সৌম্য। তোমার বোন কন্সিভ করেছে। দু-সপ্তাহ বয়স।
সৌম্য বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। কথাটা তাকে কেমন অনুভূতির জোয়ারে ভাসালো, নিজেই বুঝতে পারলো না। শুধু বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে রইল।
এগিয়ে এসে দাঁড়ানো ইরা, আসমানী নওয়ান দু’জনের অবস্থা-ও সেইম। নিয়াজ সৌম্য’র কাঁধ চাপড়ে বলে,
– আকাশ তো পালিয়ে বসে আছে। তুমি মিষ্টি খাওয়াতে কিপ্টামি কর না। ভেতরে যাও। সন্ধ্যা ওয়েট করছে।

সন্ধ্যা বেডের উপর মন খারাপ করে বসে আছে। সবকিছু তো ঠিকঠাক-ই ছিল। হঠাৎ তার কি হলো কে জানে। সৌম্যকে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করতে দেখে সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে তাকালো। পিছে আসমানী নওয়ান আর ইরা-ও আছে। সৌম্য এগিয়ে এসে সন্ধ্যার সামনে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা মলিন মুখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। সৌম্য ভাইয়া তো তার সাথে আর কথা বলে না। এখন তো সে অসুস্থ, এবারেও কি সৌম্য ভাইয়া তার সাথে কথা বলবে না? সন্ধ্যা নিরব সৌম্যকে দেখে অসহায় মুখে অভিযোগ করে,
– তুমি এখন-ও আমার সাথে কথা বলবেনা সৌম্য ভাইয়া?
সৌম্য সাথে সাথে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে। ভাঙা গলায় বলে,
– স্যরি বোনু!

সাতদিন পর ভাইকে আগের মতো পেয়ে সন্ধ্যা ফুঁপিয়ে উঠল। এই প্রথম সৌম্য ভাইয়া এতোদিন ইচ্ছে করে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল। সৌম্য’কে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে কান্নামাখা গলায় বলে,
– তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। আমি এই সাতদিনে অনেক ক’ষ্ট পেয়েছি।
সৌম্য সন্ধ্যার মাথায় দু’টো চুমু আঁকে। দু’হাতের আঁজলায় সন্ধ্যার মুখ নিয়ে ধরা গলায় বলে,
– তুই যে আমার শিক্ষাদিক্ষা সব ভুলে বসেছিলি, আমার ক’ষ্ট হয়নি?
সন্ধ্যার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। নাক টেনে বলে,
– এখন থেকে ভুলবনা। তুমি আমাকে আর মা’র’বে না বলে দিলাম।
সৌম্য একটু হাসল। সন্ধ্যার চোখের পানি মুছে দিয়ে অনুতপ্ত স্বরে বলে,
– অনেক ব্য’থা পেয়েছিলি?
সন্ধ্যা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে,

– হুমমমমম। ইরা আপু তোমাকে খাইয়ে খাইয়ে যে এতো শক্তিশালী বানিয়েছে, তুমি থা’প্প’ড় না মা’র’লে তো বুঝতেই পারতাম না।
সন্ধ্যার কথা শুনে সৌম্য তব্দা খেয়ে যায়। ইরা এগিয়ে এসে সৌম্য’র পাশে দাঁড়ায়। ডান হাত কোমরে রেখে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে মেকি রে’গে বলে,
– বড় ভাই-ভাবির সাথে মশকরা করছ সন্ধ্যা?
সন্ধ্যা দু’হাতে সৌম্য’র পেট জড়িয়ে, সেথায় মুখ ঠেকিয়ে মিটিমিটি হাসলো। সৌম্য, ইরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মৃদু হাসলো।
আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে বলে,

– আমারে ভুইলা গেছস জান্নাত? আমার ছেলের জন্যই তো তুই পোয়াতি হইলি। আমার প্রশংসা করবি না?
আসমানী নওয়ান এর কথা শুনে সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে তাকায়। ভদ্রমহিলার কথা তার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। আসমানী নওয়ানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। সৌম্য সন্ধ্যাকে ছেড়ে সন্ধ্যার পাশে বসলে আসমানী নওয়ান সন্ধ্যার সামনে এসে সন্ধ্যার গালে হাত দিয়ে বলে,
– তুই এতো বড় হইয়া গেছস জান্নাত?
সন্ধ্যা অবুঝ গলায় বলে,
– পোয়াতি মানে তো প্রেগন্যান্ট।
সন্ধ্যার কথা শুনে সবাই হাসল। সন্ধ্যা সবার দিকে তাকিয়ে দেখল, সবাই হাসছে। সন্ধ্যার মুখ থমথমে হয়ে যায়। সে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
সৌম্য বা হাত সন্ধ্যার মাথার উপর রাখে। মনে হচ্ছে, কয়েকদিন আগেই তার বোনুকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়েছে। মায়ের জন্য কেঁদেছে বলে, কতশত বানোয়াট গল্প বলে থামিয়েছে। তার সেই বাচ্চা বোনটা আজ নিজেই এক বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে। সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,

– তুই মা হবি বোনু। আমি মামা হবো।
কথাটা শুনে সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। সৌম্য’র কথা মস্তিষ্ক ধারণ করতে পেরে সন্ধ্যার পুরো শরীরে এক অদ্ভুদ শিহরণ বয়ে গেল। ডান হাত অটোমেটিক পেটে চলে যায়। এখানে কিছু আছে ভাবতেই পুরো শরীর কেঁপে ওঠে। চোখের কোণে জলকণা জমতে শুরু করল। কারণ তার অজানা।
সে মা হবে? একটা ছোট্ট বাচ্চা তার কোলে আসবে? আর সেই বাচ্চা তার আকাশের অংশ। সন্ধ্যার চোখ থেকে পানি গড়ায়। আসামনী নওয়ান সন্ধ্যার পাশে বসে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে নেয়। সন্ধ্যার পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
– আমি যে কত খুশি হইছি জান্নাত! আমার আকাশ আব্বা আর জান্নাত মায়ের কোলে এক পুতুল আসবো ভাবলে কি যে আনন্দ লাগতাছে!

সন্ধ্যা চোখ বুজে রইল। তার বুক ধুকধুক করছে। মা হওয়ার অনুভূতি এতো অদ্ভুর, এতে এতো শান্তি নিহিত সে একমিনিট আগেও জানতো না। আর এখন সে নিজে সেই শান্তি অনুভব করছে। আকাশ জানলে কতটা খুশি হবে, কেমন রিয়েকশন দিবে সন্ধ্যা ভাবতে পারে না। তীব্র আবেগ আর অনুভূতির সংমিশ্রণে মেয়েটার বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে জল গড়ায়।
সৌম্য ফোন বের করলে আকাশের নাম্বারে ফোন দিতে নেয় আর বলে,
– এবার হয়ত আকাশ ভাইয়া চলে আসবে।
সন্ধ্যা দ্রুত সোজা হয়ে বসে বলে,
– উনাকে বলো না।
সৌম্যসহ সকলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে সন্ধ্যা মৃদুস্বরে বলে,

– উনার সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি পরশুদিন আসবে বলেছে।
সকলে অবাক হলো। আকাশ সত্যিই সন্ধ্যার সাথে কথা বলেছে? ভালো লাগলো তাদের। তার মানে এদের মাঝে সব ঠিকঠাক। সৌম্য সন্ধ্যার মনোভাব বুঝল। তার বোনু নিজে এই খবর আকাশকে দিতে চায়। সৌম্য মৃদু হেসে বলে,
– আচ্ছা।
আসমানী নওয়ান সৌম্য আর ইরার দিকে চেয়ে বলে,

– আমার জান্নাত ছোট হইয়া মা হইয়া যাইতাছে? আর তোমরা কি করতাছ?
আসমানী নওয়ানের কথায় সৌম্য, ইরা দু’জনেই অস্বস্তিতে পড়ে যায়। সৌম্য ইরার দিকে তাকায়। ইরা মাথা নিচু করে নখ খুঁটছে। সৌম্য আসমানী নওয়ানকে ওষুধ আনার অজুহাত দেখিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
দু’মিনিটের মাথায় ইরার ফোনে একটি মেসেজ আসে। ইরা কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। করিডোরের দিকে সৌম্য’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইরা এগিয়ে এসে মৃদুস্বরে বলে,

– বাইরে আসতে বললি কেন?
সৌম্য ইরার দিকে ফিরে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
– টেনশন হচ্ছে।
ইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কেন?
সৌম্য বিরক্তির সুরে উত্তর দেয়,
– আমার বোনু তো কলেজের গন্ডি-ই পেরোয়নি। ও কত ছোট! অথচ তোর ভাইয়ের কাণ্ডজ্ঞান সব লোপ পেয়েছে।
ইরা থমথমে মুখে বলে,
– ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আকাশ ভাইয়া তোর-ও ভাই। তাছাড়া সবাই কি তোর মতো নিরামিষ? সে নাহয় বাদ দিলাম। এটলিস্ট বাবা হওয়ার ইচ্ছে যে মানুষের থাকে, তোর মধ্যে সে ইচ্ছেও নেই। এ্যাই তুই আদোও ছেলে…….
সৌম্য ধমকে ওঠে,

– ইরাবতী?
ইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। সৌম্য ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
– অসুস্থ ছিলি তুই। এখনও ওষুধ খেতে হয় তোকে। এই অবস্থায় প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে কি হবে?
ইরা ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় সৌম্য’র পানে। সৌম্য একটু হেসে বলে,
– আমাকে তুমি ডাকার অভ্যের করে নে। নয়তো আমার বাচ্চা তোর মুখে এসব তুই ডাক শুনলে ঝামেলা হবে।
ইরা সৌম্য’র কথার অর্থ বুঝতে পেরে ল’জ্জা পেল। সৌম্য মৃদু হাসলো।

ইরা কেবিনের ভেতর সন্ধ্যার কাছে গিয়েছে। সৌম্য এখনো করিডোরে দাঁড়ানো। পিছন থেকে রিহানের কণ্ঠ পেয়ে সৌম্য সাথে সাথে উল্টো ঘুরে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,
– কেমন আছিস?
রিহান একটু হাসল। অতঃপর ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– কংগ্রাচুলেশনস!
সৌম্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে রিহান বলে,
– শুনলাম মামা হবি।
সৌম্য বেশ কিছুকক্ষণ রিহানের দিকে চেয়ে রইল। এরপর বলে,
– তুই অনেক শুকিয়ে গিয়েছিস।
রিহান আবার-ও হাসল। সৌম্য বলে,
– বিয়ে করে নে।
রিহান মলিন মুখে তাকায়। মৃদুস্বরে বলে,
– অনেক চেষ্টা করছি।
– করছিস না কেন?
রিহান ঢোক গিলে বলে,

– তোর বোনের মতো কাউকে পেলাম না।
সৌম্য কিছু বলতে চায়৷ তার আগেই রিহান আবার-ও বলে,
– কোথায় যেন শুনেছিলাম, কাউকে ভালোবাসার জন্য এক সেকেন্ড-ই যথেষ্ট। অথচ সেই এক সেকেন্ডে ভালোবেসে ফেলা মানুষকে না-কি সারাজীবনেও ভুলে যাওয়া যায় না। কথাটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি আমি।
সৌম্য কি বলবে বুঝতে পারছে না। রিহান অসহায় কণ্ঠে বলে,
– বিশ্বাস কর, আমি বিবাহিত কারো দিকে নজর দিতে চাইনা। বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে ভাবতে চাইনা। কিন্তু আমি বরাবরই ব্যর্থ। আমার নিজেকে ক্যারেক্টারলেস লাগে সৌম্য। তুই আমাকে আগে কেন বলিস নি সন্ধ্যা বিবাহিত? আমার সুখ হারিয়ে গেছে। জানিস, নিয়াজ ভাইয়ার কাছে ‘সন্ধ্যা প্রেগন্যান্ট’ শুনে কতটা ক’ষ্ট হচ্ছে? আমি কি করব বল তো? সন্ধ্যা বিবাহিত। ওর পেটে আকাশ ভাইয়ার বাচ্চা থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমি কেন
এটা মেনে নিতে পারছি না? এটা কেমন অসুখ? এই অসুখ সাড়ানোর উপায় নেই সৌম্য?
কথাগুলো বলতে বলতে রিহানের গলা বেঁধে আসে।
সৌম্য অবাক হয়ে শুধু রিহানকে দেখে। হঠাৎ-ই রিহানকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে,

– স্যরি!
রিহান মলিন হাসল। সৌম্যকে সরিয়ে দিয়ে ভাঙা গলায় বলে,
– জানি এর ওষুধ একটাই। কিন্তু সেই ওষুধ আকাশ ভাইয়ার নামে লেখা। ভালো থাকিস। তোর বোনের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। আসছি।
কথাগুলো বলে রিহান সৌম্যকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার পথে শার্টের হাতা দিয়ে একবার চোখ মুছে।

নিউইয়র্কে সকাল ৬ টা বেজে ১০ মিনিট। আকাশ মোটামুটি সব গুছিয়ে নিয়েছে। সকাল ৮ টায় ফ্লাইট। সাথে অরুণ-ও যাবে।
আজ অনেকদিন আকাশ গায়ে সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা গ্যাভার্ডিন প্যান্ট জড়িয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি নিজের দিকে থাকলেও সে বোধয় নিজেকে দেখছে না। তার সন্ধ্যামালতীর পছন্দ নিজের গায়ে জড়িয়ে তার মনে হচ্ছে, তার সন্ধ্যামালতী তার সাথে জড়িয়ে আছে। আকাশ মৃদু হাসলো। এগিয়ে এসে একটি রঙিন কগজ আর কলম নিয়ে বসল। প্রায় ৩০ মিনিট সময় টানা লিখল। লেখা শেষে পুরো চিঠিতে আরেকবার চোখ বুলায়। সন্ধ্যাকে ভালোবাসার পর থেকে হাজারখানেক অনুভূতির সংমিশ্রণে কয়েকশ শব্দমালা দ্বারা একটি চিঠি সাজিয়েছে। শেষেরদিকটায় এসে চোখ আটকায়। মুখখানা মলিন হয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাগজটি ভাঁজ করে একটি খামে ভরে পাঞ্জাবির পকেটে রাখে।

এরপর আকাশ লাগেজসহ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সামনে অলিভিয়াকে দেখে আকাশের পা থেমে যায়। বিরক্ত চোখে তাকায়। অলিভিয়া আকাশের বিরক্তি খেয়াল করে। মৃদুস্বরে বলে,
– তোমার ওয়াইফ এর ব্যাপারে শুনতে চাই। আমাকে কি তার ব্যাপারে কিছু বলবে? মানে তুমি তাকে এতো ভালোবাসো কেন?
সন্ধ্যার কথা ভেবে আকাশের দৃষ্টি শীতল হয়। এবার আকাশ একটু হাসলো। ঘড়িতে সময় দেখে লাগেজ সাইডে রেখে কফি মেকারের দিকে যেতে যেতে বলে,
– বসো।
অলিভিয়া অবাক হলো। সে আজকেই প্রথম আকাশকে হাসতে দেখল। আকাশের ওয়াইফ এর কথা বলতেই আকাশ হাসল যেন। অলিভিয়া অবাকের রেশ নিয়ে সোফায় এসে বসে।
মিনিট পাঁচ পর আকাশ এক কাপ কফি নিয়ে এসে অলিভিয়ার সামনে বরাবর পায়ের উপর পা তুলে বসে। কফিতে একবার চুমুক দিয়ে বলে,

– বলো কি শুনতে চাও আমার সন্ধ্যামালতীর ব্যাপারে?
অলিভিয়া আকাশকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। নিজেকে সামলে বলে,
– তোমার বউ কি অনেক বেশি সুন্দর?
আকাশ মৃদু হেসে বলে,
– আমার চোখে সে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। তাকে ডিঙানোর ক্ষমতা কারো নেই।
অলিভিয়া অদ্ভুদভাবে তাকায়। তার মনে প্রশ্ন জাগে আকাশের ওয়াইফ ঠিক কতটা সুন্দর! অতঃপর বলে,
– সে তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে তবুও তাকেই কেন চাও? সে অনেক সুন্দর বলে? এটাকে তো সুন্দরীর পূজারী বলে।
অলিভিয়ার কথাটা শুনে আকাশ ঠোঁট এলিয়ে হাসল, তবে তা শব্দহীন। অতঃপর বলে,

-তাকে ভালোবাসি বলেই, সে আমার চোখে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। সে বিশ্ব-সুন্দরী হিসেবে এওয়ার্ড পাবে, যদি বিচারক হই আমি।
অলিভিয়া অদ্ভুদভাবে তাকায় আকাশের দিকে। বিভ্রান্ত হয়ে বলে,
– অ্যা’ম কনফিউজড! তোমার ওয়াইফ সুন্দর নাকি তোমার ভালোবাসা সুন্দর?
আকাশ হাসল। আরও দু’বার কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
– সন্ধ্যামালতীর ব্যক্তিগত আকাশের বুকে সন্ধ্যা নেমেছে। সময় থেমে গিয়েছে। এখানে আর কখনো রাত, ভোর, সকাল কিচ্ছু নামবে না। আকাশ সন্ধ্যার প্রেমের দহনে অনন্তকাল পুড়তে রাজি আছে।
এটুকু বলে থামে। বাকি কফিটুকু শেষ করে কাপ সামনে টি-টেবিলের উপর রেখে উঠে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় বলে,
– আই থিংক আর কিছু জানার ইচ্ছে নেই তোমার।
অলিভিয়া থম মেরে বসে আছে। এতোদিন আকাশের পরনে সব কালো রঙের ড্রেস দেখেছে। আজ সাদা দেখে অবাক হয়। অতঃপর ঢোক গিলে বলে,

– তোমার পছন্দের রঙ কি?
আকাশ ফোনে কিছু টাইপ করতে করতে ছোট করে উত্তর দেয়,
– শ্যামলা।
অলিভিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
– এই নামে কোনো রঙ আছে? আমি কখনো শুনিনি তো!
আকাশ দৃষ্টি ফোনে রেখেই মৃদু হেসে বলে,
– আছে। আমার সন্ধ্যামালতীর গায়ের রঙ। ভীষণ সুন্দর!
অলিভিয়া তব্দা খেয়ে যায়। সে আর কিছুই বলার মতো পায়না। আকাশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে মৃদুস্বরে বলে,

– তোমাকে সাদা পাঞ্জাবিতে ভীষণ সুন্দর লাগে!
আকাশ এবারও মাথা নিচু রেখেই মৃদু হেসে উত্তর করে,
-সন্ধ্যামালতীর পছন্দ। অসুন্দর লাগার চান্স নেই।
কথাটা বলে আকাশ পকেটে ফোন ভরে এগিয়ে গিয়ে লাগেজ হাতে নেয়। অরুণ রেডি হয়ে বেরিয়ে এসেছে। আকাশ অরুণকে আসতে বলে সে লাগেজ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
অলিভিয়া অবাক হয়ে শুধু দেখল আকাশকে। তার মানে এতোদিন কালো এমনি পরেছিল। আজ আকাশকে খুশি খুশিও লাগছে। হয়তো আকাশের ওয়াইফ এর সাথে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর এজন্য আকাশ তার ওয়াইফ এর পছন্দের কাপড় পরেছে, সাথে মুখে হাসি তো আছেই।
অরুণ অলিভিয়ার সামনে এসে একটা চুটকি বাজিয়ে বলে,

– তুমি আমার বাড়ি থাকতে চাও? আমার প্রবলেম নেই। তবে বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। আমি এসে তোমাকে পেমেন্ট দিয়ে দিব।
অলিভিয়া দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
– তুমি নিজের জন্য দু’টো টিকিট কাটো জানি। আমাকে একটা টিকিট ধার দিবে? আমি তোমাদের সাথে বাংলাদেশে যেতে চাই।
অরুণ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– কেন?
অলিভিয়া উদাস কণ্ঠে বলে,
– আকাশের ওয়াইফকে দেখতে। দেখি তো সে কত সুন্দর! তোমার বন্ধু তাকে এওয়ার্ড দিতে চায়।
অরুণ থমথমে মুখে তাকায়। সে কিছু বলার আগেই অলিভিয়া বলে,
– প্রমিস কোনো ঝামেলা করবান। আকাশের কথা শুনে মেয়েটিকে দেখতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ নিয়ে চলো!
অরুণ ছোট করে বলে,
– ঠিকআছে। ঝামেলা করলে খবর আছে।
অলিভিয়া জানায়, – সে ভদ্র হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশে এখন রাত ৮ টা। শিমু সন্ধ্যার ঘরে, বিছানার এক কোণায় বসে আছে। মুখখানা মলিন তার। সন্ধ্যার খুশির খবর শুনে হেসেছিল খুব। তবে আবার-ও মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। তার এসএসসি এক্সাম শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক হলো। এরপর সে বায়না করলে,, সৌম্য তাদের সবাইকে নিয়ে সৌম্য’র গ্রামের বাড়ি যায়। স্মৃতির পাতায় কিছু ভেসে ওঠে,
কয়েকদিন আগে,
গ্রামে গিয়ে শিমু খোলা জায়গা পেয়ে প্রজাপতির ন্যায় মুক্ত আকাশে উড়ছিল। কিন্তু তার পা থেমে যায় বায়ানকে একটি ক’বরস্থানের পাশে বসে থাকতে দেখে। শিমু অবাক হয়। সে অনেক ঘটনা না জানলেও এটা জানে ক’বরটি সকালের। সন্ধ্যা তাকে দেখিয়েছিল।

শিমু ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। তার চোখে আটকায়, ক’বরের উপর একটি তাজা বেলি ফুলের গাছ। যেটা বায়ান মাত্র লাগিয়েছে। বায়ানের হাতে মাটি লেগে। শিমু অবাকের উপর অবাক হয়। অবাকের মাত্রা সেখানেই থামেনি। বায়ান ক’বরের উপর৷ হাত রেখে ভাঙা স্বরে আওড়ায়,
– আমার ডিকশোনারিতে ভালোবাসার রঙ কেবলমাত্র সকাল। যে রঙ কখনো বদলাবে না। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও সকাল।
ওপারে আমার জন্য অপেক্ষা করবে সকাল? আমি দ্রুত তোমার কাছে ফিরতে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি একেবারে শূণ্য হয়ে গিয়েছি। তুমি কেন চলে

গেলে সকাল?
কথাগুলো বলতে বলতে বায়ানের চোখ থেকে কয়েকফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
বায়ানের কথাগুলো শুনে শিমু স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। বায়ান ভাবীর বোনকে ভালোবাসতো? কই সে তো জানতো না। শিমুর চোখজোড়া ভরে ওঠে। সে আর এক সেকেন্ড-ও সেখানে দাঁড়ায়নি। দৌড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল।

সেদিনের কথাগুলো ভেবে শিমু আজ-ও ফুঁপিয়ে উঠল।
সন্ধ্যা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে মাত্র। টেবিলের উপর তার ফোনের ভাইব্রেট-এ সন্ধ্যা ফোন হাতে নিল। নিয়াজের কল দেখে, রিসিভ করতে গিয়ে ফোঁপানোর আওয়াজ পেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। শিমুকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে সন্ধ্যা অবাক হয়। দ্রুত এগিয়ে এসে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে,
– কি হয়েছে শিমু? কাঁদছ কেন?
শিমু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,
– ভাবী তোমার বোন কি এতোই সুন্দর ছিল? আমি কি একটু-ও সুন্দর নই?
সন্ধ্যা বুঝল না, শিমু হঠাৎ সকালের সাথে নিজের তুলনা কেন করছে। শিমুর পাশে বসে বলে,
– এভাবে বলছ কেন? তুমি ভীষণ সুন্দর শিমু।
শিমু ভাঙা গলায় বলে,

– আমি তোমাকে বলেছিলাম না ভাবী, আমার পাঁচজন ক্রাশ ছিল। আসলে আমার শুধু তাদের চেহারা ভালো লাগতো। কিন্তু বায়ান ভাইয়া…বায়ান ভাইয়াকে ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগে না ভাবী। আর যখন জানলাম সে তোমার বোনকে ভালোবাসে। তাকে ভুলতেও পারেনা। তখন থেকে আমার খুব ক’ষ্ট হয়। বায়ান ভাইয়াকে একটু বলবে, তোমার বোনকে ভুলে গিয়ে আমাকে ভালোবাসতে? আমার নিঃশ্বাস নিতে ক’ষ্ট হয় বায়ান ভাইয়া অন্যকারো কথা ভাবলে।

কথাগুলো বলতে বলতে সন্ধ্যার বুকে পড়ে ফোঁপায় শিমু। সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শিমুর পানে। শিমু বায়ান ভাইয়ার প্রতি এতো সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে যে এভাবে কাঁদছে? সন্ধ্যা শিমুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
– তোমার ভাইয়া আসলে আমি উনার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলব শিমু। তুমি কান্না করনা।
শিমু শুনলো না। বাচ্চা মেয়েটার মনে ভীষণ ক’ষ্ট যে!

সন্ধ্যার হাত লেগে নিয়াজের কল রিসিভ হয়ে গিয়েছিল, যা সন্ধ্যা খেয়াল করেনি।
তবে এপাশে নিয়াজের কানে ফোন ছিল। সে শিমুর কান্না সাথে শিমুর বলা প্রতিটি কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। বুকের বা পাশটায় এক অদ্ভুদ চিনচিনে ব্য’থা হলো। কান থেকে ফোন সরিয়ে কল কেটে আস্তে করে ফোন রেখে দিল। এরপর রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে রেখে চোখ বুজল।
প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথায় নিয়াজের মা তার ঘরে আসে। ছেলেকে নিরব দেখে এগিয়ে এসে মৃদুস্বরে ডাকে,
– নিয়াজ?
নিয়াজ যেভাবে আছে, সেভাবেই উত্তর করে,
– বলো মা।
ভদ্রমহিলা বলেন,

– মেয়ে দেখতে যেতে চাইলে যে। আমাদের রেডি হতে বলে নিজেই রিল্যাক্স করছ?
নিয়াজ কিছু বলে না। ক্লাস ৮ এর মেয়েকে এক দেখায় ভালো লেগে যায় কারো? আর সেই ভালো লাগা এরকম পর্যায়ে যায় যে, সে একজন ম্যাচিউর ছেলে হয়ে সেই বাচ্চা মেয়েকে বিয়ের জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনে!
নিয়াজের সাথে তো এমনটাই হলো। আজ থেকে দু’বছর আগে ক্লাস ৮ এর বাচ্চা শিমুকে এক দেখায় তার ভালো লেগে গেল। প্রথম ছয়মাস নিজেকে বোঝাতে গেল, সম্ভব নয়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগলো। মেয়েটিকে বড় হতে দিল। সে ভেবেছিল, শিমু ভার্সিটি উঠলে আকাশকে প্রস্তাব দিবে। কিন্তু সে পারছে না। শিমুকে এখনি তুলে না আনলেও বিয়ে করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এজন্য বাবা-মাকে তার পছন্দের মেয়েকে আজ দেখাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কারণ তারা জানেনা শিমু-ই সেই মেয়ে।

সে জানে আগামীকাল আকাশ আসবে। শিমু কোথায় এটা সিইওর হওয়ার জন্য সে সৌম্য, আসমানী নওয়ানকে কল দিয়েছিল। তাদের না পেয়ে সন্ধ্যাকে কল দিয়ে সে পুরো সারপ্রাইজড হয়ে গেল।
নিয়াজের মা নিয়াজের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকে,
– নিয়াজ?
নিয়াজ ঢোক গিলে বলে,

– সব ক্যান্সেল মা। আমি বিয়ে করবনা।
ভদ্রমহিলা থমকানো দৃষ্টিতে তাকায়। অবাক হয়ে বলে,
– দু’বছর যাবৎ তার জন্য নিজের বয়স বাড়িয়ে এখন বলছ, সব ক্যান্সেল? ফা’জ’লামি করছ? আর কয়দিন পর বুড়ো হয়ে যাবে।
নিয়াজ চোখ মেলে তাকায়। চোখ দু’টো হালকা লাল। ভদ্রমহিলা ছেলের চোখমুখ দেখে বলে,
– কি হয়েছে তোমার?
নিয়াজ ভাঙা গলায় বলে,
– আমি তার জন্য অপেক্ষা করেছি, আর তারপর তাকে হালালভাবে চেয়েছি। কিন্তু আল্লাহ তার মনে আমার নাম লেখানোর সুযোগটাই দিল না। এর আগেই সে তার মনে অন্যের নাম লিখিয়ে ফেলেছে। এখন আমি কি করব মা? আমার যে ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে!

ঘড়ির কাটায় তখন বিকাল ৪ টা। আকাশ মাত্র বাড়িতে এসে পৌঁছেছে।
তার মা আসমানী নওয়ান, তার খালা, সৌম্য, ইরাকে দেখে আকাশের মুখে হাসি ফোটে। সর্বপ্রথম আকাশ তার মাকে জড়িয়ে ধরে। ভদ্রমহিলা এতোদিন পর নিজ ছেলেকে কাছে পেয়ে প্রায় কেঁদে দিয়েছে। আকাশ মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে। তারপর আকাশ সৌম্যকে জড়িয়ে ধরে। সৌম্য, ইরা দু’জনের সাথেই টুকটাক কথা বলে। অরুণ-ও সবার সাথে কথা বলে। অলিভিয়াকেও পরিচয় করিয়ে দেয়।
আকাশ এখানে আর থাকলো না। সে তার ঘরে চলে যায়।

আকাশ মূলত চট্টগ্রামে খুব সুন্দর একটি জায়গা কিনে সেখানে বাড়ি করেছে। যে বাড়িটি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে,, এর কারণ সে ওই বাড়িতেই তার সন্ধ্যামালতীর সাথে দেখা করতে চায়। আকাশ তার প্ল্যান অনুযায়ী সন্ধ্যাকে তার চট্টগ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে বলায়, বায়ান সন্ধ্যাকে নিয়ে গিয়েছে। আর সন্ধ্যার সাথে গিয়েছে শিমু।
আকাশ তার মাদের চট্টগ্রামের বাড়ি যেতে বলেছিল। তবে আসমানী নওয়ান নিষেধ করে। তিনি নিজেই আকাশ আর সন্ধ্যাকে এরকম একটা স্পেস দিতে চাইছিলেন। তার আগে আকাশ তাদের চট্টগ্রামের বাড়ির কথা বললে, তিনি খুশি হয়।

আকাশ দ্রুত শাওয়ার নিয়ে বের হয়। এরপর গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, প্যান্ট, হাতঘড়ি সবমিলিয়ে নিজেকে ভীষণ পরিপাটি করে আকাশ রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। আসমানী নওয়ান, সৌম্যকে বলে আকাশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আসমানী নওয়ান হালকা কিছু খেতে বললে, আকাশ উত্তর দেয়,
– সন্ধ্যামালতীকে না দেখা পর্যন্ত গলা দিয়ে খাবার নামবে না মা।

আকাশ আগে থেকেই হেলিকপ্টার বুকিং দিয়ে রেখেছিল। যেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ঘণ্টা একের ভিতর পৌঁছে যেতে পারে।
আকাশ হেলিকপ্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে অরুণ। আকাশকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরুণ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– যাবি না-কি তোর প্রক্সি দিতে আমি যাবো?
আকাশ রে’গে তাকায়। অরুণ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– যাবো না বাবা। কিন্তু তুই উঠছিস না কেন?
আকাশ ঢোক গিলল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ভারী গলায় বলে,
– সন্ধ্যামালতীর কণ্ঠ শুনতে পাবো ভাবলেই অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে! ওর কণ্ঠ অনেক সুন্দর তাই না অরুণ?
অরুণ ঠাট্টা করে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। আকাশের চোখের কোণে চিকচিক করা জলকণা তার চোখে পড়েছে। অরুণ আকাশকে যত দেখে তত অবাক হয়। মৃদু হেসে বলে,

– তুই অনেক নিখুঁতভাবে ভালোবাসতে পারিস।
আকাশ অরুণকে জড়িয়ে ধরে। অরুণ হাসল। আকাশ ঢোক গিলে বলে,
– আমার কিছু হলে, তোরা সবাই আমার সন্ধ্যামালতীকে দেখে রাখবি, মনে থাকবে?
অরুণ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– এসব বলছিস কেন?
আকাশ অরুণকে ছেড়ে ঝাপসা চোখজোড়া আড়াল করে বলে,

– জানিনা। মনটা ভীষণ অস্থির লাগছে।
অরুণ হেসে বলে,
– সন্ধ্যাকে দেখলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আকাশের হাতে ফোন। সন্ধ্যার নাম্বার থেকে আসা মেসেজে চোখ বুলায়। মাত্র এসেছে মেসেজটি।
– আপনি কখন আসবেন?
আকাশ মৃদু হেসে রিপ্লে করে,
– এইতো সোনা বউ আসছি। তুমি শাড়ি পরে ভীষণ সুন্দর করে সাজবে হু? আমি আমার সন্ধ্যামালতীকে আজ মন ভরে দেখব। আর চা খেয়ে গলা ঠিক কর। আমি কিন্তু আমার সন্ধ্যামালতীর ভয়েস সবসময় শুনতেই থাকবো। বুঝেছো আমার আস্ত কলিজা?
মেসেজটি সন্ধ্যার নাম্বারে পাঠিয়ে আকাশ অরুণকে বিদায় দিয়ে এগিয়ে এসে হেলিকপ্টারে উঠে পড়ে। ধীরে ধীরে হেলিকপ্টার উপরদিকে উঠতে থাকে। আকাশ চোখ বুজে রেখেছে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। বিড়বিড় করে,
– আমার জান, আমার সন্ধ্যামালতী। আমার ভালোবাসা, এই দেখ আমি ফিরছি তোমার নীড়ে।

আজ দুপুরের আগে আগে সন্ধ্যা, শিমু আর বায়ান চট্টগ্রামের এই বাড়ি এসে পৌঁছেছে। এরপর বায়ান তাদের তিনজনের জন্য খাবার কিনে এনেছিল। তারা তিনজনেই খেয়েছে। যদিও সন্ধ্যা ঠিক করে খেতে পারেনি। আকাশের সাথে দেখা হওয়ার এক্সাইটমেন্টে, সাথে আকাশের সাথে কথা বলার এক্সাইটমেন্টে।
চট্টগ্রামে আজ বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বিকেলের যে রোদ প্রকৃতিতে থাকে, সেই রোদটুকু-ও নেই। পরিবেশটা ভীষণ সুন্দর। সন্ধ্যা ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে। আকাশকে মেসেজ দিয়ে রিপ্লের আশায় চেয়ে ছিল। আকাশের দেয়া রিপ্লে মেসেজটি পড়ে সন্ধ্যা হাসে। সে আর আকাশকে কোনো রিপ্লে দিল না। অরুণের থেকে সন্ধ্যা শুনেছে, আকাশ ঢাকা থেকে এখানে দ্রুত আসার জন্য হেলিকপ্টার নিয়েছে। এজন্যই সন্ধ্যা আরও একঘণ্টা আগে ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

সন্ধ্যার পরনে সাদা শাড়ি। শাড়ির পাড় লাল। শাড়িটি সে নিজেই পরেছে বাঙালি স্টাইলে। সন্ধ্যা এসব তেমন পারেনা। তবে ইউটিউব দেখে দেখে যেটুকু পেরেছে পরেছে। একেবারে খারাপ হয়নি। সাথে হালকা সেজেছে। চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা করে একটু লিপস্টিক, কপালে একটি ছোট্ট কালো টিপ পরেছে। হাঁটর নিচ পর্যন্ত চুলগুলো ছেড়ে দেয়া। হাতে একটি আলতার কৌটা। যেটা সে আকাশের হাত থেকে পরিয়ে নিবে বলে হাতে ধরে রেখেছে। আলতার কৌটা ধরে রাখা হাতটি সন্ধ্যা তার পেটে দেয়। এইখানে একটি প্রাণ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। সন্ধ্যা হাসল। তার আর আকাশের অংশ। আকাশকে বললে আকাশের এক্সপ্রেশন কেমন হবে ভাবতেই সন্ধ্যার প্রশান্তিতে বুক ভরে যায়।
সন্ধ্যা ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে পেটে হাত রেখল বিড়বিড় করে,
– দ্রুত আসুন আকাশ। আমি অপেক্ষা করছি। আপনাকে কতশত ভারী খবর দেয়া যে বাকী!

অরুণ রাস্তার ধার দিয়ে একা একা হাঁটছে। মনটা বিষন্ন। বাংলাদেশ তার জন্য দুঃখের দেশ। এই দেশের মাটি তার থেকে সত্যিকারের সুখ কেড়ে নিয়েছে যে! ভাবনার মাঝেই চোখে পড়ে রাস্তার অপরপাশে অনামিকা এক ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণবন্ত এক মেয়ে। পাশের ছেলেটি হয়ত তার হাসবেন্ড। কত খুনশুটি দু’জনের। অরুণের দৃষ্টি ধীরে ধীরে ঝাপসা হতে শুরু করে।
বাম পাশ থেকে আনিকা ডাকে,
– অরুণ?

অরুণের ধ্যান ভাঙে। ডানদিকে ঘাড় ফিরিয়ে ঝাপসা চোখজোড়া স্বাভাবিক করে নিয়ে বামদিকে ফিরে তাকায়। আনিকাকে দেখে মৃদু হেসে বলে,
– অনেক ভালো আছি আমি। আমার মতো খারাপ মানুষের থেকে বেঁচে গিয়ে তোরা দুইবোন-ও খুব ভালো আছিস, আমি জানি। সারাজীবন এরমই ভালো থাক।
কথাটুকু বলে অরুণ আনিকাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। উল্টোপথে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়। আনিকা মলিন মুখে চেয়ে রইল। অরুণ শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছল। ভাঙা স্বরে বিড়বিড় করল,
– তুমি এতো স্বা’র্থপ’র কেন অনামিকা? অন্যের সুখ কে’ড়ে নিজের সুখ কুড়াও!

আকাশ বেরিয়ে যাওয়ার পর পর সৌম্য ইরাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছে। মূলত ঘুরতে বেরিয়েছে। আগামীকাল সৌম্য ইরাকে নিয়ে গ্রামে চলে যাবে। সৌম্য, ইরার হাত ধরে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটছে৷ দু’জনেই নিশ্চুপ। এভাবে নিরব থেকে প্রকৃতির সাথে একে-অপরকে অনুভব করে যেন আলাদা এক শান্তি পাচ্ছে। ইরা তার মাথাটা সৌম্য’র বাহুতে ঠেকিয়ে প্রশান্তির শ্বাস ফেলে বলে,
– আমি তোর সাথে অনেকদিন বাঁচতে চাই সৌম্য।

সৌম্য মৃদু হাসল। তবে কোনো কথা বলল না। ইরার চোখ সামনের দিকে পড়ে। চোখে কিছু আটকালো বোধয়। সাথে সাথে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কি করবে বুঝতে না পেরে গায়ের জোরে সৌম্যকে এক ধাক্কা দেয়। ইরা সরে যাওয়ার আগেই সামনের দিক থেকে একটি গু’লি ধেঁয়ে এসে ইরার একদম পেট বরাবর গেঁথে যায়।
ইরা সৌম্যকে ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে যেতে চেয়েছিল, তবে সেই সময়টুকু সে পায়নি।
এদিকে ইরার ধাক্কা খেয়ে সৌম্য রাস্তা থেকে ছিটকে কয়েক হাত দূরত্বে গিয়ে একদম উল্টে পড়েছে। গু’লির শব্দ সাথে ইরাকে পেট চেপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সৌম্য চিৎকার করে ডাকে,

– ইরাবতী????
সৌম্য দৌড় দিয়ে ইরার কাছে আসার আগেই ইরা ধপ করে উল্টে পড়ে যায়। চোখের পলকে কেউ এসে ইরার একদম মুখের উপর এসিড ঢেলে দিয়েই যেন হাওয়া হয়ে গেল।
ইরা এতোক্ষণ চুপ থাকলেও মুখের উপর এসিড পড়ায়, অ’সহ্য য’ন্ত্রণায় মেয়েটা ছটফটিয়ে চিৎকার করে ওঠে।
সৌম্য লোকটিকে ধরতে গেল না। দৌড়ে এসে ইরার পাশে বসে দু’হাতে ইরাকে আগলে নিয়ে বলে,
– ইরাবতী? তোর কি হলো বউ?

ইরার ছটফটানি দেখে সৌম্য’র শরীর অবশ হয়ে আসে। সৌম্য আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে পায়না। জায়গাটি ভীষণ নির্জন। সে খুঁজে খুঁজেই এখানে এসেছিল। ইরা তার কাছে আবদার করেছিল এরকম একটি জায়গায় আনার জন্য।
সৌম্য এক সেকেন্ড-ও সময় ন’ষ্ট না করে ইরাকে কোলে তুলে নিয়ে একপ্রকার দৌড়ে মেইন রোডের দিকে যায়।
গাছের আড়াল থেকে একটি লোক বেরিয়ে আসে। পুরো কালো পোষাকে মোড়ানো সে। মাথায় একটি কালো ক্যাপ। মুখে মাস্ক। চোখের মণি দু’টো একদম সাদা। যেন চোখে ছানি পড়েছে। অথচ সে স্পষ্ট দেখে।
লোকটির তীক্ষ দৃষ্টি সৌম্য, আর ইরার উপর। ডান হাতে মাথায় পরা ক্যাপটি একবার ঘোরালো। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বিড়বিড় করে,
– The game’s starting now.

কয়েক মিনিটের মাথায় সৌম্য মেইন রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। ইরার অবস্থা দেখে একটি সিএনজি নিজ থেকে এগিয়ে আসলে সৌম্য ইরাকে কোলে নিয়ে সিএনজিতে উঠে পড়ে। সিএনজিওয়ালা সিএনজি স্টার্ট দেয়।
ইরার ছটফটানি এখনো কমেনি। সৌম্য ইরাকে তার সাথে শ’ক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে ভাঙা গলায় বলে,
– ইরাবতী, তোর কিচ্ছু হবে না। আমি তোর কিচ্ছু হতে দিব না।
ইরার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। আদোআদো কণ্ঠে বলে,
– আ.আমি না থাকলেও তুই শ.শুধু আমাককেই ভালোবাসবি সৌম্য?

সৌম্য ডান হাত ইরার গালে দিলে, ইরার গালের চামড়া গলে তার হাতে আসে। সৌম্য’র বুক কেঁপে ওঠে। এ কি হলো তার ইরাবতীর? ছেলেটার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরা থেমে থেমে বলে,
– আমি তোর সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম। আল্লাহ দিল না! তুই শুধু আমার থাকিস সৌম্য।
সৌম্য আবার-ও শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাঙা গলায় বলে,
– তোর কিচ্ছু হবে না ইরাবতী। এসব বলিস না। আমার ক’ষ্ট হয়।
ততক্ষণে ইরা শরীর ছেড়ে দিয়েছে। বা হাত উঁচু থেকে ঠাস করে পড়ে গেল মনে হলো। সৌম্য বুঝতে পেরে ঢোক গিলল। ইরার মুখ তার সামনে এনে কান্নামাখা গলায় বলে,

– ইরাবতী কথা বল। যাস না আমায় রেখে। আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকবো বল তো? এ্যাই ইরাবতী? ইরাবতী? আমার ইরাপাখি, কথা বল বউ। এ্যাই বউ?
ইরার কোনো সাড়া না পেয়ে সৌম্য’র দুনিয়া কেঁপে ওঠে। ইরাকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে,
– মামা একটু দ্রুত গাড়ি চালাও না! আমার বউটা কথা বলছে না দেখ।
ভদ্রলোক গাড়ির গতি বাড়ায়।
সৌম্য ইরাকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে রেখে ভাঙা গলায় বলে,

– আমায় একা ফেলে যাস না ইরাবতী। তুই না আমার বাচ্চার মা হবি? আমি তোকে আর অপেক্ষা করাবো না বউ। তুই আমার বুকে ফিরে আয় ইরাবতী।
কথাগুলো বলতে বলতে সৌম্য’র চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। চোখ বুজে বিড়বিড় করে,
– আল্লাহ আমার ইরাবতীকে বাঁচিয়ে দাও আল্লাহ। আমি ওকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো বলো? ওকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ।

ধরনীর বুকে বিকেলের আমেজ ডুবে যাওয়ার পথে। বৃষ্টির পর কখনো কখনো পুরো আকাশ যেমন একদম কমলা হয়ে যায়। আজ তেমনটাই হয়েছে। সন্ধ্যা আকাশপানে চেয়ে হাসল। এরকম হলে তো রংধনু ওঠে। আজও উঠেছে নিশ্চয়ই। সন্ধ্যা চারপাশে ঘুরে ঘুরে রঙধনু খুঁজল। কিন্তু তার চোখে পড়ল না। সন্ধ্যা হতাশ হয়ে আবার-ও ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়ায়। তখন-ই তার ফোনে কল আসে। অরুণের ফোন পেয়ে সন্ধ্যা সাথে সাথে কল রিসিভ করে। অরুণ বলে,
– আর ঠিকঠিক দু’মিনিটের মাথায় আকাশের হেলিকপ্টার তোমার চোখে ধরা দিবে।
সন্ধ্যার বুক ধুকধুক করে। ঢোক গিলে অবাক কণ্ঠে বলে,
– আপনি কিভাবে জানেন ভাইয়া?
অরুণ হেসে বলে,

– এটা হেলিকপ্টার। একদম ঠিকঠিক টাইম-এই পৌঁছে যায়। বুঝেছ? এখন রাখছি। এক্ষুনি আকাশের দেখা পাবে।
বলেই অরুণ কল কেটে দেয়। সন্ধ্যা একবার আকাশের দিকে তাকায়। কিছু না দেখতে পেয়ে আবার-ও ফোনের দিকে তাকায়। তখনই হেলিকপ্টারের গুমগুম শব্দ কানে ভেসে আসে। সাথে সাথে সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে আকাশপানে তাকায়। তার থেকে কিছুটা দূরে হেলিকপ্টার। সন্ধ্যার বুকের ধুকপুকানি ক্রমে ক্রমে বাড়ে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ধীরে ধীরে সেই হাসি দীর্ঘ হয়। বিড়বিড় করে আওড়ায়,
– আকাশ?

হেলিকপ্টারটি একদম বাড়ির সামনে এসে কেমন যেন একজায়গায় স্থির হয়ে ঘুরতে থাকে। সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকে তাকায়৷ হঠাৎ চোখের পলকে হেলিকপ্টারটি অনেক উপর থেকে ধসে পড়ে।
ব্যাপারটি বুঝতে সন্ধ্যার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। বাড়ির সামনে রাস্তায় হেলিকপ্টারসহ আশেপাশে আরও কয়েকটি গাড়িসহ দাউদাউ করে আ’গুন জ্ব’লতে দেখে সন্ধ্যা স্তব্ধ হয়ে যায়। হাত থেকে ফোন আর আলতার বোতল ঠাস করে পড়ে যায়। মস্তিষ্কে ব্যাপারটি ধারণ করতে পেরে সন্ধ্যা সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে ডাকে,
– আকাশ???????????

সন্ধ্যা এখানে আর এক সেকেন্ড-ও দাঁড়ালো না। দৌড়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকতে। অনেকবার পড়তে পড়তে বেঁচেছে। সন্ধ্যার কোনোদিকে খেয়াল নেই। দু’চোখ ভেদ করে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
শিমু ঘরে বসে একটি বোলে আলতা গুলিয়েছে। সে কিছু বুঝতে পারছিল না। পায়ে দিতেও পারছিলনা। তাই সন্ধ্যার থেকে দিয়ে নেয়ার জন্য ছাদের দিকে যাচ্ছিল।
কিন্তু সন্ধ্যাকে এভাবে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসতে দেখে শিমু অবাক হয়। কিছু বলার আগেই সন্ধ্যা শিমুর সাথে ধাক্কা খায়। শিমুর হাত থেকে আলতার বোল উল্টে পড়ে। সন্ধ্যা তবুও থামলো না। এতোক্ষণে মেয়েটার কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে। শিমু পিছন থেকে অবাক হয়ে বলে,

– ভাবি কি হয়েছে?
সন্ধ্যা না থামলো, আর না কোনো উত্তর দিল। শিমুর ফেলে দেয়া আলতা গড়িয়ে সন্ধ্যার দু’পা মেখে গিয়েছে। শাড়ির আঁচল নামতে নামতে মেঝে ছুঁয়েছে, যা পিছনে হাওয়ার ন্যায় উড়ছে।
সন্ধ্যা দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ির বাইরে চলে গিয়েছে। হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে কি যেন বিড়বিড় করে। বাড়ির গেইট থেকে আরও অনেকখানি সামনে ফাঁকা। এরপর বাড়ির মেইন গেইট। সন্ধ্যা পায়ের গতি বাড়ায়। চোখের অশ্রুর বাঁধ ভেঙেছে।

বায়ান বাড়ির বাইরে বের হতে যাচ্ছিল। কিন্তু সন্ধ্যাকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে বায়ান ঢোক গিলল।
হেলিকপ্টার ধসে পড়লে এর ফলে যে আ”গুনের উত্তাপ সৃষ্টি হয়, তা তো কম নয়। বাইরে রাস্তায় থাকা কত মানুষ যে আহত, নিহত হয়েছে আল্লাহ জানে। সকলের চিৎকার, চেঁচামেচি তে চারপাশটা গমগম করছে।
বায়ান বুঝতে পারেনা, এসব কিভাবে হলো। আকাশের সাথে তার দু’ঘণ্টা আগেও কথা হয়েছিল। অথচ ঘণ্টার ব্যবধানে আকাশ এখন আ’গু’নে পু’ড়’ছে। বায়ানের চোখের কোণে অশ্রু।
আকাশের দেয়া শেষ মেসেজ তার মনে পড়ে,
– আমার অনুপস্থিতিতে আমার বউকে আগলে রাখবে বায়ান।
বায়ান দৌড় লাগালো। সন্ধ্যা গেইটের বাইরে বেরোলে ওই উত্তাপে বাঁচবে কি করে? আর সে তার স্যারকে দেয়া কথাই বা রাখবে কিভাবে?

সন্ধ্যার শরীর দুর্বল হয়ে আসে। তবে তার পায়ে গতি ধীরে ধীরে বাড়ে৷ তার যে আকাশের কাছে পৌঁছাতে হবে। ওখানে তার আকাশ আছে। সন্ধ্যা গেইট থেকে বের হতে নিলে বায়ান বামদিকে থেকে ঠেলে সাথে সাথে মেইন বড় গেইট সন্ধ্যার মুখের উপর বন্ধ করে দেয়। দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে সন্ধ্যা কয়েকহাত দূরত্বে গিয়ে ছিটকে পড়ে। সন্ধ্যা শব্দ করে কেঁদে দেয়। হাঁটুতে ভর দিয়ে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে গেইট ধরে ঝাঁকায় আর কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– কেউ এই গেট খুলে দাও।

আকাশ? আপনি আমাকে শাড়ি পরতে বলেছিলেন। এই দেখুন না, আমি আপনার জন্য শাড়ি পরে অপেক্ষা করছিলাম। আপনার জন্য আমি সেজেছি। আর আপনি আমার কাছে না এসে ফাঁকি দিয়ে কোথায় চলে যাচ্ছেন?
সন্ধ্যা কথাগুলো বলতে বলতে গেইটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদে। শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– আপনি শুনবেন না, আপনি বাবা হবেন? আপনি কিচ্ছু না শুনে কোথায় পালাচ্ছেন বলুন?
আকাশ???????
আমায় রেখে যাবেন না আকাশ। আপনার বুক আমার লাগবে আকাশ। ওহ আল্লাহ? আমার মাথা রাখার জায়গাটা তুমি কে’ড়ে নিও না আল্লাহ!

আকাশ ধসে পড়া হেলিকপ্টারেরে তলায় পিষে গিয়েছে কি-না! আ’গু’নের দাপটে তার শরীর হয়ত অ’ক্ষ’ত নেই। অবচেতন মনে ভীষণ-ই অস্পষ্টভাবে ঠোঁট নাড়িয়ে আওড়ায়,
– পারলাম না আমার সন্ধ্যামালতীর কণ্ঠ শুনে নিজের তৃষ্ণা মিটাতে! পারলাম না আমার সোনা বউটাকে একবার আমার বুকে ড়িয়ে নিতে! তবে কি এখানেই আমাদের পথচলার ইতি ঘটে গেল!
এটুকু বলা-ও শেষ। আকাশের শরীর একেবারে মাটির সাথে মিশে যাওয়া-ও শেষ। শেষবার লম্বা করে একটা শ্বাস নিয়ে বলতে চায়,

– সন্ধ্যামা……..
পুরোটা উচ্চারণ করতে পারলো না আকাশ। নিঃশ্বাস থেমে গেল কি!
শেষ সময়ে এসে সন্ধ্যার জন্য লেখা চিঠির একদম নিচের কয়েক লাইন আকাশে কানে বাজছিল।
– সোনা বউ? জানো? গতরাতে খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি। ভীষণ ভ’য় লাগছে। আল্লাহ আমার আগে তোমায় না নিক সন্ধ্যামালতী। আমার সন্ধ্যামালতীর ক’ব’র দেখার সাহস যে আমার নেই, একটুও নেই। যদি আল্লাহ এমন কিছু লিখে রাখে, তবে তা উল্টে দিয়ে,, আল্লাহ তোমার আগে আমার মরণ করুক। তার আগে আল্লাহ তোমার কাছে আমার অস্তিত্বের কিছু রাখুক। আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে কখনো ভুলে যেও না। নিয়ম করে দেখতে এসো।
আকাশের অনুমান করে লেখাগুলো কি তবে আজ স্বার্থক হয়েছে? আকাশ হারিয়ে গেল। তার আগে সন্ধ্যার পেটে তার একটি অংশ দিয়ে গেল, যা সন্ধ্যা চাইলেও কখনো ভুলতে পারবে না।

অন্তঃদহন পর্ব ৪৯

[১ম খন্ডের সমাপ্তি দিলাম। ২য় খন্ড কয়েকদিন পর থেকে শুরু করব ইনশাআল্লাহ। আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা হলো, ২য় খন্ডের নাম হবে #আমি_তার_সন্ধ্যামালতী
২য় খন্ড এখান থেকেই শুরু হবে। তবে সূচনা পর্ব হবে – ০১।
আর গল্পে নতুনত্ব পাবেন। দু’টো বাচ্চা থাকবে। কার বাচ্চা সেটা ২য় খন্ড পড়লে বোঝা যাবে।]

অন্তঃদহন পর্ব ৫১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here