অন্তঃদহন পর্ব ৮

অন্তঃদহন পর্ব ৮
DRM Shohag

সন্ধ্যাকে চুপ দেখে আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– বাংলা বোঝো না? হাসতে বলেছি হাসো।
সন্ধ্যা শক্তি খাটিয়ে সোফা থেকে দাঁড়াতে চায়, কিন্তু তার ডান পা আকাশের বা পায়ের উপর পরে, আকাশ ভ্রু কুঁচকে মাথা নিচু করে সন্ধ্যার পায়ের দিকে তাকায়। এরপর সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দ্রুত আকাশের পায়ের উপর থেকে তার পা সরিয়ে নেয়। বেচারির মুখ কাঁদোকাঁদো হয়ে গিয়েছে। আকাশ আবার মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে সন্ধ্যার পায়ের দিকে তাকায়। মেয়েটির পরনে জামা আর প্লাজু। পায়ের গিরা থেকে প্লাজু উপরের দিকে উঠে যাওয়ায় আকাশের নজরে পড়ে সন্ধ্যার পায়ের নুপুর। সন্ধ্যার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে,

– এই নুপুর কোথায় পেয়েছ?
আকাশের হাত এখনো সন্ধ্যার গালে। সন্ধ্যা বোকাচোখে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। আকাশ সন্ধ্যার গাল ছেড়ে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
– মা দিয়েছে?
সন্ধ্যা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– তাহলে কে দিয়েছে? তোমার পরিচিত কেউ?
সন্ধ্যা এবার চোখের ইশারায় হ্যা বোঝায়। আকাশ সাথে সাথে প্রশ্ন করে,
– ছেলে না-কি মেয়ে?
সন্ধ্যা হাতের এক আঙুল দিয়ে প্রথমটা বোঝায়। আকাশ বুঝতে পারে ছেলে। সাথে সাথে রে’গে বলে,
– বে’য়া’দ’ব মেয়ে! পরপুরুষের জিনিস পায়ে পরে থাকতে তোমার ল’জ্জা করে না?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সন্ধ্যা হতভম্ব হয়ে যায়। আকাশ নিচু হয়ে সন্ধ্যার ডান পায়ের নুপুর ধরে জোরে টান দিলে ছিঁড়ে যায়। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। দ্রুত বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। আকাশের নজর সন্ধ্যার আরেক পায়ে। আকাশ বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ানোর আগেই সন্ধ্যা এগিয়ে এসে আকাশের হাত থেকে খন্ডিত নুপুর নিতে চায়। সামান্য ঝুঁকে দু’হাতে আকাশের হাতের মুষ্টি খুলতে চায়।

আকাশ শক্ত করে হাতের মুঠোয় সন্ধ্যার খন্ডিত পায়েল ধরে রাখলো। সন্ধ্যা দু’হাতে আকাশের হাতের মুঠো খুলতে চায়, কতগুলো খামচি-ও দিয়ে দিয়েছে। আকাশ শক্ত চোখে চেয়ে আছে সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা ব্যর্থ হয়ে আকাশের দিকে ভেজা চোখে তাকায়। সন্ধ্যার ভেজা চোখে চোখ পড়লে আকাশের দৃষ্টি শিথীল হয়। সন্ধ্যা দু’হাত জমা করে রিকুয়েস্ট করে, তার নুপুর দিয়ে দেয়ার জন্য। আকাশ তার মুঠো করা হাত শিথীল করে। সন্ধ্যা আকাশের হাত থেকে তার দ্বিখণ্ডিত নুপুর একপ্রকার ছিনিয়ে নেয়। এরপর উল্টো ঘুরে যেতে নিলে আকাশ দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার হাত টেনে ধরে। রাগান্বিত স্বরে বলে,

– কার জন্য কাঁদছ তুমি?
সন্ধ্যা হাত মোচড়ায়। আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– কে দিয়েছে এটা?
সন্ধ্যা অসহায় চোখে তাকালে আকাশ সন্ধ্যার হাত ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যা সোফার উপর আকাশের ফোন দেখতে পেয়ে এগিয়ে গিয়ে ফোনটি হাতে নেয়। এরপর ফোনটি আকাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বোঝায়, লক খুলে দিতে। আকাশ বুঝতে পেরে তার ফোনের লক খুলে দিল। সন্ধ্যা আকাশের ফোনে কিছু টাইপ করতে শুরু করে। প্রায় মিনিট তিনেক সময় নেয় সন্ধ্যা। এরপর ফোনটি আকাশের সামনে ধরলে আকাশ পড়তে শুরু করে।

– আমার ভাইয়া আমাকে রুপার পায়েল বানিয়ে দিয়েছেল, বুঝেছেন? আপনার প্রবলেম কি হ্যাঁ? আমার ভাইয়ের জিনিস ছিঁড়ে ফেললেন কেন? আপনার জিনিস তো নিই-নি আমি।
ভাইয়া কত ভালোবেসে বানিয়ে দিয়েছে জানেন? জানবেন কি করে, পারেন তো শুধু কারণ ছাড়া মানুষকে লোভী বলতে। যারা যেমন তারা অন্যকে তেমন-ই বলে। নিজে লোভী বলে-ই আমাকে লোভী বলেছিলেন। আপনি হলেন মেয়ে লোভী। মেয়ে দেখলেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন। লোভী কোথাকার!
লেখাগুলো পড়ে আকাশ বিস্ময় চোখে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা ঢোক গিলে আকাশের ফোন সোফার উপর ছুঁড়ে ফেলে দৌড় দিতে নিলে আকাশ সন্ধ্যার হাত টেনে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

– কি বললে?
সন্ধ্যা ডান হাত মুখে দিয়ে ইশারায় বোঝায়, আপনি বাংলা পড়তে পারেন না? মূর্খ না-কি!
আকাশ চোখ বড় বড় করে তাকায়। কি পরিমাণ বে’য়া’দ’ব মেয়ে ভাবা যায়? এতোদিন সে একে কত অবলা মেয়ে ভাবতো! সন্ধ্যার হাত আরও শক্ত করে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– ই’ডিয়ট, আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকাই না, বুঝতে পেরেছ?
সন্ধ্যা বিরক্ত হলো। তাকে দেখলেই তাকিয়ে থাকে আবার বলছে কারো দিকে তাকায় না। আকাশের হাত শিথীল হলে সন্ধ্যা তার ঘরের দিকে দ্রুত পায়ে চলে যায়। আকাশ বিরক্ত চোখে চেয়ে দেখল। সোফার উপর তার ফোন নিয়ে কাউকে কল করে। রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে চিৎকার করে বলে,

– আমার ডিভোর্স পেপার আসে না কেন? এদিকে এক বে’য়া’দ’ব মেয়ে আমার পাশে ঘুরঘুর করছে। একে নেয়া যাচ্ছে না। কোনো মাস টাস অপেক্ষা করতে পারবো না। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমার বাড়ি ডিভোর্স পেপার না আসে, তাহলে তোকে পিস পিস করে কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে আসব বলে রাখলাম।
ওপাশ থেকে অরুণ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আমাকে তোর কোন দিক থেকে উকিল মনে হচ্ছে? আমি হলাম কি সুন্দর হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।
আকাশ বিরক্ত হয়ে বলে,

– তুই কোত্থেকে এলি?
অরুণ হতাশ কণ্ঠে বলে,
– মাটির তল থেকে। সমস্যা কি তোর? বউটাকে মানছিস না কেন?
– কারণ ও বে’য়া’দ’ব।
অরুণ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– আদবওয়ালী হলে মানতি?
আকাশ বিরক্ত হয়। সামনে তাকালে দেখল সন্ধ্যা তার দিকে চেয়ে আছে। চোখ দু’টো ভেজা মনে হলো। আকাশ পাত্তা দিল না। এরকম বে’য়া’দ’ব মেয়েকে তার সহ্য হয় না। তার পিছে কত মেয়ে ঘুরঘুর করত, সে এভোয়েড করত। আর এই মেয়ে সরাসরি তাকে মেয়ে লোভী বানিয়ে দিল! সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে অরুণের উদ্দেশ্যে রে’গে বলে,
– ডিভোর্স পেপার ছাড়া আমার বাড়ির দরজা তোর জন্য বন্ধ।
অরুণ অসহায় কণ্ঠে বলে,

– আরে আমি তোর ডিভোর্স পেপার কই পাবো?
আকাশ শক্ত কণ্ঠে বলে,
– সেটা তুই জানিস।
বলেই খট করে কল কেটে দেয় আকাশ। এরপর বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। আকাশের চিৎকারে আসমানী নওয়ান এর ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে আসে। আকাশের বলা কথাগুলো শুনেছে। আসমানী নওয়ান চুপচাপ দেখল আকাশকে। শিমুর মা এগিয়ে এসে বলে,
– আকাশ তুমি সন্ধ্যাকে ডিভোর্স দিতে পারবে না।
আকাশ পিছু ফিরে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে বলে,

– কেন?
আকাশের খালা রে’গে বলে,
– আমি বলেছি তাই।
আকাশ গম্ভীর গলায় বলে,
– তুমি বলতে থাকো। আমি সময়মতো ডিভোর্স দিয়ে দিব।
কথাটা বলে উপরে উঠতে থাকে। দু’বোন হতাশ চোখে আকাশকে দেখল। শিমু মাথা চুলকায়। আকাশ ভাইয়া সন্ধ্যা ভাবিকে ডিভোর্স দিবে? ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে এসব কিছু জানতো না।
সন্ধ্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার ঘরের ভেতর গিয়ে দরজা ভিড়িয়ে দেয়। ডান হাতে দ্বিওখন্ডিত নুপুর দু’হাতের মাঝে মেলে ধরে। আকাশের কথাগুলো মনে পড়লে সন্ধ্যা নিজের উপর বিদ্রুপ হাসে। চোখজোড়া ভিজে ওঠে। ডিভোর্স তার ভাগ্যে লেখা আছে। এটা তো বিয়ের দিন রাতেই বুঝেছিল। তবুও কেন যেন খারাপ লাগে। একজনের সাথে বেঁধে গিয়ে-ও আবার আলাদা হয়ে যাওয়া! সন্ধ্যার বুক ভার হয়।

সৌম্য’র আদরমাখা ডাক কানে বাজে, বোনু? এই যে নুপুর টি। সৌম্য তাকে এনে দিয়েছিল।
সন্ধ্যা তখন ক্লাস এইটে পড়তো। গ্রামে তার এক বান্ধবী ছিল। পায়ে নুপুর ছিল দু’টি। সন্ধ্যার ভীষণ ভালো লাগে নুপুর। সে তার বান্ধবীর কাছে নুপুর জোড়া চাইলে সে সন্ধ্যাকে পরতে দিয়েছিল। সন্ধ্যা পায়ে নুপুর পরে সে-কি উচ্ছলতা। বেশ অনেকক্ষণ দৌড়ায়। এরপর তার বান্ধবীকে নুপুর জোড়া ফেরত দিতে আসলে দেখে একটি পায়ের নুপুর নেই। সন্ধ্যা ঢোক গিলে। তার বান্ধবী ব্যাপারটি বুঝতে পেরে সন্ধ্যাকে যা নয় তাই বলেছিল। তার মা নেই, বাবা থেকেও নেই, বাবা কেন তাকে দেখতে পারে না, আরও কত কথা! সন্ধ্যা অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিল। তখন-ই সেখানে তার ভাই সৌম্য এসে যখন কাহিনী জানলো তখন সৌম্য অনেকটা সময় নিয়ে খুঁজে খুঁজে সেই মেয়ের নুপুর এনে ফিরিয়ে দিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যার চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে বলেছিল,

– বোনু, একদিন তোকে ওর চেয়েও অনেক দামি নুপুর এনে দিব, দেখিস।
সৌম্য সত্য-ই এক বছরের মাথায় তার জন্য রূপার নুপুর এনেছিল। তার পায়ে নিজ হাতে পরিয়ে দিয়েছিল। সন্ধ্যা গল্পে শুনেছে, প্রেমিকেরা প্রেমিকাদের নুপুর পরিয়ে দেয়। কিন্তু তার ভাই বাইরে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তার জন্য যত্ন করে, ভালোবেসে এই নুপুর বানিয়ে এনেছিল।
সন্ধ্যাকে ডেকে বলেছিল,
– বোনু, তোর খুব পছন্দের একটি জিনিস এনেছি আজ।
সন্ধ্যা তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। সৌম্য ঘেমেনেয়ে একাকার হয়েছিল। সন্ধ্যা সৌম্য’কে ঠেলছিল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তারপর সব নিবে। সৌম্য শোনেনি। সে শার্টের হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে হাঁটু মুড়ে বসে সন্ধ্যার দু’পায়ে নুপুর পরিয়ে দিয়ে মাথা উঁচু করে বলেছিল,

– এবার হেঁটে দেখা তো বোনু।
সন্ধ্যা পায়জামা উঁচু করে নুপুর দু’টো দেখে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে ছিল সৌম্য’র দিকে। হাঁটু মুড়ে বসে মাথা নিচু ফুঁপিয়ে উঠেছিল। সৌম্য ব্য’থিত স্বরে বলেছিল,
– কাঁদছিস কেন বোনু?
সন্ধ্যা চোখ মুছে ইশারায় বুঝিয়েছিল,
– কারণ তুমি বেস্ট ভাইয়া।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। দু’হাতের মুঠোয় থাকা পায়েল ভিজে একাকার হয়। খুব মনে পড়ছে সৌম্য ভাইয়াকে। এই তো তার ভাইয়ের একটুখানি স্মৃতি। লোকটি কিভাবে ছিঁড়ে ফেলল। পা ছিলে গিয়েছে। সন্ধ্যা ওসব গায়ে মাখলো না। তার তো এই নুপুরটার জন্য দম আটকে কান্না আসছে।
লোকটি তার ভাইয়ের জিনিস ছিঁড়ে ফেলল, অথচ একটুও অনুতাপ নেই। উল্টে তাকে ডিভোর্স দিতে পারছে না বলে কত রা’গ!
ডিভোর্সের কথা ভেবে সন্ধ্যার নিঃশ্বাস ভারী হলো।

সৌম্য রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটছিল। মুখে মলিনতার ছোঁয়া। ইরার নিরবতা সৌম্য’র বুকে ছুরির ন্যায় আ’ঘা’ত করেছে। তার ইরাবতী অন্যকারো? কি করে মানবে সৌম্য? হঠাৎ-ই তার সামনে কারো স্থির দু’টো পা দেখে সৌম্য দাঁড়িয়ে যায়। মাথা উঁচু করলে ইরার বাবাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার। লোকটি সৌম্য’র কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
– তোমার সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। পাঁচমিনিট সময় দাও।

সৌম্য কি বলবে বুঝল না। সম্মতি না দিলেও না করতে পারলো না। ইশতিয়াক আহমেদ সৌম্যকে নিয়ে একটি ক্যাফেতে বসে। হালকা কিছু অর্ডার করে ভদ্রলোক। সৌম্য’র বদনে চিন্তার ভিড়। ইশতিয়াক আহমেদ সৌম্য’র দিকে চেয়ে ভাবনায় ব্যস্ত। কয়েকদিন আগে সৌম্য’র ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানতে পারে সন্ধ্যার কথা। প্রথমে আকাশ ইরাকে বিয়ে করতে রাজি ছিল। এরপর রাজি নয়। কারণ হিসেবে বুঝল সৌম্য’র বোন সন্ধ্যা। তখন থেকে তার মে’জা’জ পুরো বিগড়ে আছে। এক ভাই তার মেয়েকে দখল করে বসে আছে, আরেক বোন আকাশের জীবনে চলে এসেছে। দু’ভাইবোন তার প্ল্যান পুরো মাটি করে দিয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে আকাশ তার ডিভোর্সের সব ব্যবস্থা করছে। সময় লাগছে একটু। এজন্য কিছুটা শান্ত আছে সে। ভাবনা রেখে মৃদু হেসে বলেন,
– তো, কেমন আছো?

সৌম্য মৃদুস্বরে জানায়, ভালো। ইরার বাবাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলে ভদ্রলোক শব্দ করে হেসে ফেলে। সৌম্য ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সে হাসির কিছু বলেছে বলে তো মনে হয় না। ইরার বাবা হাসি থামিয়ে বলে,
– একটু বেশি ভালো আছি, তাই হাসি থামছে না বুঝলে?
সৌম্য বিরক্ত হলো, তবে কিছু বলল না। ইরার বাবা পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে সৌম্য’র দিকে তাক করলে সৌম্য বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। স্ক্রিনে সন্ধ্যার সেসব পিক যেসব তাকে প্রতিদিন নিয়ম করে পাঠানো হতো। সৌম্য’র গলা শুকিয়ে আসে। কাঁপা কণ্ঠে বলে,

– আমার বোনু কোথায়?
ইশতিয়াক আহমেদ টেবিলের উপর ফোন রেখে হাসে। সৌম্য হঠাৎ-ই রে’গে বলে,
– আপনি আমার বোনকে কোথায় রেখেছেন বলুন?
ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আমি তোমার বোনকে বিয়ে দিয়েছি না-কি! তোমার পরিবার বিয়ে দিয়েছে। আমার চেয়ে তো তাদের ভালো জানার কথা।

সৌম্য শান্ত হলো। ইরার বাবা ভুল কিছু তো বলেনি। অতঃপর বলে,
– আপনি আমাকে আমার বোনুর পিক ভিডিও পাঠাতেন তাই না?
ইশতিয়াক আহমেদ হেসে বলে,
– বুদ্ধিমান ছেলে।
সৌম্য বিচলিত কণ্ঠে বলে,
– আমার বোনু কোথায় আঙ্কেল? প্লিজ বলুন!
ইশতিয়াক আহমেদ হঠাৎ-ই মুখ গম্ভীর করে ফেলে। শক্ত গলায় বলে,
– আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবে।
সৌম্য কি বলবে বুঝল না। সে একটু আগেই ইরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু ইরার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ঢোক গিলে বলে,

– আমি বিবাহিত মেয়েদের পিছু নিই না আঙ্কেল।
ইশতিয়াক আহমেদের কপালে ভাঁজ পড়ে। সৌম্য আবার-ও অনুরোধের সুরে বলে,
– আঙ্কেল প্লিজ বলুন, আমার বোন টা কোথায়?
ভদ্রলোক হেসে বলে,
– বলবো বলবো। তার আগে আমার মেয়ের থেকে দূরে থেকে প্রুফ দাও। নিজে থেকে এভোয়েড করে প্রুফ দাও। এর বিপরীত টা করলে তোমার বোনের খোঁজ পাওয়া তো দূর, সে এই দুনিয়ায় আর বেঁচে থাকবে না। বুঝলে?
সৌম্য’র চোখেমুখে ভীতি। সে ইরার বাবাকে কয়েকবার দেখেছিল। উপর থেকে ভদ্রলোককে দেখে ভীষণ সাদাসিধে লাগে, অথচ ভেতরটা কত নোংরা হলে এই কথা বলতে পারে! তার বোনটা না বাঁচলে সে কি করে বাঁচবে? এই দুনিয়ায় ওই একটা বোন ছাড়া আর কেউ নেই যে তার। সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

– আমি আপনার সব কথা শুনবো আঙ্কেল। প্লিজ বলুন আমার বোনু কোথায়?
ইশতিয়াক আহমেদ হেসে বলে,
– এই শহর ছাড়তে হবে। বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে যেতে হবে। নয়তো তোমার বোনের লা’শ তোমাকে উপহার দিব। আমার আবার এরকম উপহার দিতে বেশ ভালো লাগে।
সৌম্য দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করল। ইচ্ছে করল এই লোকটার গলা কেটে একে লা’শ বানিয়ে দিতে৷ তার কলিজার টুকরো বোনের দিকে হাত বাড়ায়। কিন্তু সৌম্য তার সব রা’গ গিলে নিল। রা’গ দিয়ে সব হয় না। ক্ষমতা লাগে। যা সৌম্য’র নেই, কিন্তু তার সামনে বসা এই লোকটার ক্ষমতা অনেক সৌম্য জানে। ব্য’থিত স্বরে বলে,
– এই শহর ছেড়ে দিব আঙ্কেল, আপনাকে কথা দিচ্ছি। আপনি আমার বোনটা খোঁজ দিন শুধু।
ইশতিয়াক আহমেদ একটি চেক সৌম্য’র দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

– ১৫ লাখ টাকার চেক। এটা রাখো।
সৌম্য অবাক হয়ে বলে,
– আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবে, তার পারিশ্রমিক।
কথাটা শুনে সৌম্য রে’গে যায়। শক্ত কণ্ঠে বলে,
– আমি আপনার মেয়ের থেকে দূরে থাকব। এর বিনিময়ে এক পয়সা-ও লাগবে না।
ইরার বাবা হেসে বলে,
– শুুধু এইজন্য দিচ্ছি না। তোমার বোনকে পেতে চাইলে এই টাকা লাগবে। তোমাকে হেল্প করছি।
সৌম্য অবাক হয়ে বলে,

– কেন?
– গেলেই বুঝতে পারবে।
সৌম্যরে’গে বলে,
– কোনো টাকা লাগবে না। আমার বোনকে কিভাবে আনতে হবে, আমি সৌম্য শেখ তা জানি। আপনি শুধু ঠিকানা বলুন।
ইরার বাবা হেসে বলে,
– বেশ তেজ আছে তোমার। এমন ছেলেকে আমার ভালো লাগে। কিন্তু পকেট ফাঁকা হলে তখন তাদের গোণার সময় হয়না।
সৌম্য বিদ্রুপ হেসে বলে,

– আপনাদের মতো নিচু মনমানসিকতার মানুষ সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য এই সৌম্য শেখকে গুনুন, তা আমি চাই না। বরং গর্ব করি আপনাদের থেকে দূরে থাকতে পেরে।
ইরার বাবা রে’গে তাকায় সৌম্য’র দিকে। শক্ত করে বলে,
– তোমার বোনকে পাওয়ার শখ নেই না-কি?
সৌম্য নিজেকে শান্ত করে বলে,
– আমার বোনের খোঁজ দিন। আমি তো বললাম আপনার মেয়ের আশেপাশে যাবো না।
ইশতিয়াক আহমেদ দাঁড়িয়ে বলে,
– এক সপ্তাহ পর এই ক্যাফেতে একবার আসবে। সেদিন তোমার বোনের খোঁজ পাবে। এই কয়দিন প্রুফ দাও, আমার মেয়ের থেকে দূরত্ব রাখার। দেখি কতটা সফল হও। আমার মনমতো হলে তোমার বোনের খোঁজ পাবে, নয়তো লা’শ।

কথাটা বলে ১৫ লাখ টাকার চেক সৌম্য’র বুক পকেটে রেখে উল্টো ঘুরে যেতে নিলে সৌম্য ইশতিয়াক আহমেদ এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পকেট থেকে চেকটি বের করে ইশতিয়াক আহমেদ এর পকেটে ঢুকিয়ে হেসে বলে,
– আমি মধ্যবিত্ত হতে পারি, কিন্তু উচ্চবিত্ত, যেমন- আপনার মতো লোভী নই।
ইশতিয়াক আহমেদ রে’গে তাকায়। সৌম্য মৃদু হেসে বলে,
– বোনের জন্য এতোদিন অপেক্ষা করতে পেরেছি, আরও পারবো। আপনার মেয়ে আমার কাছে আসলে এভোয়েড এর উপর পিএইচডি করে ছেড়ে দিব। বিনিময়ে এক সপ্তাহ পর আমি আমার বোনের খোঁজ নিতে এখানে আসবো। আসছি। ভালো থাকবেন। আসসালামু-আলাইকুম।
কথাগুলো বলে সৌম্য জায়গাটি প্রস্থান করে। ইশতিয়াক আহমেদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।

গত দুই ঘণ্টা যাবৎ ইরা সৌম্য’র বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। সৌম্য’র ঘরে তালা দেয়া। কাউকে জিজ্ঞেস করলেও কেউ বলতে পারে না। ইরা রাস্তার পাশে এপাশ-ওপাশ পায়চারি করল, হাঁটাহাঁটি করল। আবার বসে বসে অপেক্ষা করল। নাহ সৌম্য’র কোনো খবর নেই।
ইরা সৌম্য’র জন্য রাত ১০ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। ফোনে কল দিয়েছে, বারবার ফোন বন্ধ পাচ্ছে। জায়গা টি ফাঁকা হতে শুরু করেছে। একা একটি মেয়ে আর কতক্ষণ এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে। কতজন বাঁকা চোখে তাকালো। ইরা তবুও দাঁড়িয়ে রইল। আরও ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করল। কিন্তু সৌম্য’র খোঁজ নেই। ইরা ঝাপসা চোখে রাস্তার অপর পাশের পুরনো বাড়িটার দিকে তাকায়। জায়গাটি একদম নির্জন হয়ে গিয়েছে। ইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখানে আর থাকা যাবে না। জায়গাটি একদম-ই সেভ নয়। জায়গায় জায়গায় ছেলেদের আড্ডা বসেছে এটুকু সময়ের মধ্যে-ই। ইরা শেষবার সৌম্য’র বাড়িটার দিকে দৃষ্টি রাখে। এরপর উল্টো পথ ধরে। এই শুনশান রাস্তাটি থেকে বের হতে হবে তার। পিছন থেকে পায়ের শব্দ পেয়ে ইরা একবার পিছু ফিরল। ঢুলতে ঢুলতে কয়েকজন তার দিকে আসছে। ইরা ভ’য় পেয়ে দৌড় দেয়। দৌড়াতে দৌড়াতে মেইন রাস্তায় এসে ওঠে। পিছনে তাকিয়ে কাউকে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

এগিয়ে গিয়ে একটি বিকাশের দোকানে গিয়ে একাউন্ট থেকে প্রায় ১০ হাজারের মতো টাকা উঠায়। এরপর আশেপাশে খুঁজে একটি হোটেল পেলে, একরাতের জন্য একটি রুম ভাড়া নেয়। উদ্দেশ্য কালকে সকাল সকাল আবার-ও সৌম্য’র খোঁঝে আসবে। হয়তো আজ কোনো পরিচিত বাড়িতে গিয়েছে।
তবুও চিন্তা হয়। তার বিয়ে হয়েছে ভেবে সৌম্য খুব ক’ষ্ট পাচ্ছে ইরা জানে। ইরা চাতক পাখির ন্যায় মেইন রাস্তার ধারে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল,, কিন্তু সৌম্য যে নেই। ঝাপসা চোখজোড়া মুছে ভেতরে চলে যায়।
.
.
ইশতিয়াক আহমেদ বাড়ি ফিরলে ইরার মন হতদন্ত হয়ে এসে বলে,
– আমার মেয়ে কোথায় বলুন? কি করেছেন ওকে? আপনার পছন্দের ছেলের সাথে বেরিয়ে গেল, আর ফিরল না কেন? রাত তো অনেক হলো।
ইশতিয়াক আহমেদ বিরক্ত হয়ে বলে,
– মেয়ের জন্য চিন্তা বাদ দিয়ে রিয়াদের জন্য চিন্তা কর। ঘাড়ে চাকু বসিয়ে দিয়েছে তোমার মেয়ে। বাঁচবে কি-না সন্দেহ। তোমার মেয়ে এতো তেজ কোথায় পেয়েছে?
ইরার মা সাধারণত তার স্বামীর মুখের উপর কথা বলেন না। ভীষণ শান্তশিষ্ট স্বভাবের সে। কিন্তু মেয়েটা তার উল্টো। আজ তিনি একেবারে চুপ না থেকে বলেন,

– আপনার তেজ আপনার মেয়ে পেয়েছে। এটা তো সবাই জানে।
বউ এর মুখে সঠিক জবাব পেয়ে ইশতিয়াক আহমেদ দাঁত কিড়মিড় করল।
ইরার মা মৃদুস্বরে বলে,
– ইরা কোথায়? ও বাড়ি আসবে না?
ইশতিয়াক আহমেদ গম্ভীর গলায় বলেন,
– আসবে। সপ্তাখানেক সময় গেলে এমনি আসবে।
– কিন্তু এখন ও কোথায়? এতোরাতে একা একটা মেয়ে কোথায় আছে?
– আছে হয়তো কোনো হোটেলে। একাউন্টে অলরেডি টাকা নেই। আমার মেয়ে তোমার মতো গাধা না-কি!
ইরার মা চুপ হয়ে গেল। মায়ের মন কি মানে? চিন্তা তো লেগে-ই থাকে।

রাত তখন ১২ টার কাছাকাছি। সন্ধ্যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তার ঘরের ভেতর ছটফট লাগছে। আজ অনেকদিন পর সে অনেক বেশি কেঁদেছে। যদিও বাইরে একটু ভ’য় ভ’য় লাগছে। তবুও বেরিয়েছে। আকাশদের বাড়ির থেকে বেরোলে বাড়ির বর্ডারের মাঝে বেশ বড়সড় একটি সুইমিংপুল আছে। সন্ধ্যা এগিয়ে গিয়ে সুইমিংপুলের পাশে বসে। মিটিমিটি আলো আসছে এদিকে। সন্ধ্যা মলিন মুখে টলটলে পানির দিকে চেয়ে আছে।
আকাশ বাগানে এসে ব্যবসার জন্য কলে কথা বলছিল খুব সিরিয়াস মুডে। উদাম শরীর। পরনে কালো রঙের ট্রাউজার। ডান হাত পকেটে ঢুকিয়ে বা হাতে ফোন কানে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল। হঠাৎ-ই পায়ের সাথে কিছুর ধাক্কা লাগে। আকাশ দ্রুত বাম দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালে দেখল সুইমিংপুলের মাঝের দিকে যেন কিছু ছটফট করছে। আকাশ দ্রুত কল কেটে ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে সেদিকে তাক করলে সন্ধ্যাকে সুইমিংপুলের মাঝে হাবুডুবু খেতে দেখে বিস্ময় চোখে তাকায়।

সন্ধ্যা দু’হাত তুলে বাঁচতে চায়। নিঃশব্দে হাত বাড়িয়ে বাঁচতে চায়। সৌম্য ভাইয়ার কথা মনে পড়লো, আকাশের কথা-ও মনে পড়লো। একজন খুব আপন, যে তার কাছে আসে না। আরেকজন নামে আপন, তবুও কেউ একজন বাঁচাতে আসেনা কেন তাকে?
আকাশ ফ্লাশ লাইট অফ করে সুইমিংপুলে নামতে যেতে চেয়ে-ও থেমে যায়। এই মেয়ে তাকে মেয়ে লোভী বলেছিল, ভাবা যায়! এর জন্য সে ঠিক করে কাজ-ই করতে পারেনি এতোক্ষণ। মানুষের হাসি ভালো লাগতেই পারে, তাই বলে তাকে পুরো নারী লোভী বানিয়ে দিবে? বিড়বিড় করল,
– বে’য়া’দ’ব মেয়ে।
এখন সে বাঁচাতে গেলে আবার বলবে, নারী দেহ লোভী। তার এসব শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। যা ইচ্ছা হোক এর। একা একাই বাঁচুক।

হঠাৎ-ই দৌড়ের শব্দ পেয়ে আকাশ ডানদিকে তাকালে দেখল অরুণ দৌড়ে আসছে আর বলছে,
– সুইটি ভ’য় পেও না। আমি এসে গেছি। এইতো এসে গেছি।
আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকালে দেখল মেয়েটি এখন-ও ছটফট করছে। আকাশ আবারও অরুণের দিকে তাকলো। যখন বুঝল অরুণ সন্ধ্যাকে বাঁচাতে যাচ্ছে, এরপর সে সন্ধ্যাকে ধরবে, ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না তার। মে’জা’জ টা চরম লেভেলের খারাপ হলো।
আবার সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল। হায় হায় মেয়েটি তো ম’রে যাবে। নিজেকেই দু’টো থা’প্প’ড় দিতে ইচ্ছে করল।

অন্তঃদহন পর্ব ৭

হাতের ফোন ছুঁড়ে ফেলে অরুণের দিকে একবার তাকালো। আশেপাশে কিছু খুঁজল। লাঠি জাতীয় কিছু পেয়ে অরুণের হাঁটু বরাবর ছুঁড়ে মারলে অরুণ থেমে যায়। আকাশ রে’গে বলে,
– যদি আর এক পা এসেছিস, তোর পা দু’টো কেটে মমি বানিয়ে রাখবো।
কথাটা বলেই সুইমিংপুলে ঝাপ দিয়ে দ্রুত সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে যায়। দু’হাতে সন্ধ্যাকে আগলে নিয়ে উঁচু করে ধরে। সন্ধ্যা আকাশকে ঢাল হিসেবে পেয়ে দু’হাতে আকাশকে আঁকড়ে ধরে। সমানে কাশতে থাকে। চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। একটু পর কাশি থামলে-ও সন্ধ্যা জোরে জোরে হাঁপায়। আকাশ সন্ধ্যার ডান গালে হাত রেখে মৃদুস্বরে বলে,
– ঠিক আছো?

অন্তঃদহন পর্ব ৯