অন্তঃদহন পর্ব ৯
DRM Shohag
সন্ধ্যা অবাক হয়ে আকাশের চিন্তিত মুখপানে দৃষ্টি রাখে। আকাশ সন্ধ্যার পুরো মুখে দৃষ্টি বুলায়। ওড়না মাথা থেকে কাঁধে স্থান পেয়েছে। এলোমেলো ভেজা চুল, মুখজুড়ে ছোট ছোট পানির কণা। ভেজা ঠোঁটজোড়ায় নজর পড়তেই আকাশ দ্রুত চোখ বুজে বিড়বিড় করে,
– বে’য়া’দ’ব মেয়ে। আমাকে বশ করতে চাইছে। একে বাঁচানো উচিৎ হয়নি।
সন্ধ্যা বে’য়া’দ’ব মেয়ে টুকু শুনতে পেয়েছে, বাকিটুকু শুনতে পায়নি। আকাশের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। আকাশ নিজেকে সামলে চোখ মেললে সন্ধ্যা স্বাভাবিক হয়। আকাশ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
– তুমি সাঁতার পারো না?
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। আকাশ এবার কণ্ঠে ঝাঁঝ নিয়ে বলে,
– আমাকে তোমার পা’গ’ল মনে হয়? গ্রামের মেয়ে হয়ে সাঁতার পারো না? এসব ফা’ল’তু কথা আমি বিশ্বাস করব? ছেলেদের কোলে ওঠার জন্য এই ফন্দী এঁটেছিলে তাই না? ছেলে লোভী বে’য়া’দ’ব মেয়ে একটা!
আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ভীষণ রা’গ হয় তার। আকাশ কিছু বোঝার আগেই সন্ধ্যা দু’হাতে গায়ের জোরে আকাশকে ধাক্কা দেয়। আকাশ ছিটকে দূরে সরে ঠাস করে পানিতে পড়ে যায়। সন্ধ্যার কোমর থেকে হাত আলগা হয়ে যায়। সন্ধ্যার আবারও অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়ার উপক্রম হয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আকাশ দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ডান হাতে মুখ মুছে ছটফট করা সন্ধ্যার দিকে তাকায়। আকাশের ইচ্ছে করল একে পানির মাঝে ঠেসে ধরতে। কি পরিমাণ বে’য়া’দ’ব হলে তাকে ধাক্কা দেয়, ভাবা যায়? আকাশ সুইমিংপুলের পাড়ে উঠে পা ঝুলিয়ে বসল। সে এখন সন্ধ্যার তামাশা দেখবে। তাকে ধাক্কা দেওয়া? সাহস কি মেয়ের! কয়েক সেকেন্ড পেরোতেই আকাশের মন মানলো না। দ্রুত নেমে গিয়ে সন্ধ্যাকে তার সাথে আগলে ধরে। সন্ধ্যা দ্রুত দু’হাতে আকাশের গলা জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে।
লোকটার উপর রা’গ হয়েছিল তাকে ওভাবে বলায়, কিন্তু না বুঝে হঠাৎ ধাক্কা দেয়ার পর বুঝেছে কতবড় ভুল করেছে, সে ভেবেছিল, লোকটি আর আসবে না। এবার সে পানিতে ডুবে মা’রা যাবে, তার ভাইয়াকে আর দেখা হবে না। কিন্তু আকাশ আবার-ও এসেছে দেখে মেয়েটির জানে পানি আসে। না চাইতেও চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পড়ে।
আকাশ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো মেয়ে এমন চিপকে থাকলে কেমন লাগে! আকাশ সন্ধ্যাকে সরিয়ে দিতে চাইলো, কিন্তু সন্ধ্যা সাপের ন্যায় পেঁচিয়ে ধরেছে আকাশকে। আকাশ বুঝল মেয়েটি ভ’য় পাচ্ছে। নিজেই তাকে ধাক্কা দিল, কি তেজ মেয়ের!
আকাশ রে’গে বলে,
– প্রবলেম কি তোমার? ধাক্কা দিলে কেন আমাকে?
সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। আকাশ বিরক্ত হয়। ভেজা গায়ে এমনভাবে ধরেছে এ মেয়ে। মে’জা’জ খারাপ হচ্ছে। সন্ধ্যার দু’হাত টেনে তার গলা থেকে ছাড়িয়ে নেয়। কিন্তু বা হাত সন্ধ্যার কোমরে রাখা। সন্ধ্যা ভ’য় পেয়ে আবারও আকাশকে ধরতে গেলে আকাশ ডান হাতে সন্ধ্যার গলা থেকে একটু নিচে হাত রেখে সন্ধ্যাকে থামিয়ে দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
– আর একবার আমার সাথে চিপকালে এই পানিতে চুবিয়ে মা’র’ব।
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে নেয়। অপমানে মুখখানি থমথমে হয়ে যায়। মেয়েটির শরীর কাঁপছে হালকা। আকাশ টের পেলেও নরম হলো না। উল্টে রে’গে বলে,
– আর একদিন যদি কোনো উল্টাপাল্টা কাজ করতে দেখেছি, তোমার খবর আছে। কোথায় পেয়েছ এতো সাহস? আকাশ নওয়ানকে মেয়ে লোভী বলো? আকাশ নওয়ানকে ধাক্কা দাও? আমার বয়স কত জানো?
সন্ধ্যাকে চুপ দেখে আকাশ আরও জোরে ধমক দেয় সন্ধ্যাকে।
– কি হলো কিছু বলছো না কেন?
সন্ধ্যা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। দু’দিকে মাথা নাড়ায়, অর্থাৎ সে জানেনা। আকাশ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– ২৯ পেরিয়ে কয়েকদিন পর ৩০ হবে। আর তুমি দুই ইঞ্চি লিলিপুট হয়ে আমাকে রা’গ দেখাও, বে’য়া’দ’ব মেয়ে।
২ ইঞ্চি কথাটা সন্ধ্যার পছন্দ হলো না। সে তো ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। কিন্তু শান্ত থাকলো, সে বেকায়দায় পড়েছে। আকাশ গলা ঝেড়ে বলে,
– তোমার থেকে ১১ বছরের বড় আমি, বুঝেছ?এরপর থেকে আমার সাথে যতবার দেখা হবে, আমাকে সালাম দিবে।
সন্ধ্যা বোকাচোখে তাকায়। আকাশ সন্ধ্যার দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে হাত দিয়ে দেখায় আর বলে,
– এভাবে ইশারা করে দিবে। নয়তো থা’প্প’ড় একটাও মাটিতে পড়বে না।
সন্ধ্যাকে এখনো চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারও ধমক দেয়,
– কি হলো, কিছু বলছো না কেন?
সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। দ্রুত ডানদিকে মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক উত্তর বোঝায়। আকাশ গম্ভীর গলায় বলে,
– গুড। আর অবাধ্য হলে সুইমিংপুল তো আছেই। মাথাটা খুব সুন্দর করে পানিতে ডুবিয়ে রাখবো মিনিট দশেক।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশের কথা বলার ধরণে মেয়েটা আরও বেশি ভ’য় পাচ্ছে।
আকাশ মনে মনে হাসলো। আচ্ছা জব্দ করেছে মেয়েটাকে। এবার শান্তি লাগছে। মেয়েটি তাকে উল্টাপাল্টা বলার পর থেকে মে’জা’জ খিটখিটে ছিল।
এরপর দু’হাতে সন্ধ্যার কোমর পেঁচিয়ে ধরে পাড়ে বসিয়ে দিল সন্ধ্যাকে। বাগান জুড়ে ছিটেফোঁটা আলো, যা সন্ধ্যার উপর এসে পড়ে।
আকাশ সন্ধ্যার দিকে তাকালে অটোমেটিক মুখ হা হয়ে যায়। এই মেয়ে এটা কি পরেছে?
সন্ধ্যা দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। দৌড় দিতে নিলে আকাশ সন্ধ্যার পা ধরে টান দেয়। সন্ধ্যা হুমড়ি খেয়ে পড়ে আকাশের উপর। চোখ বড় বড় হয়ে যায় মেয়েটির। আবার তাকে পানিতে ফেলল কেন?
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– সাদা, কালো সব-ই তো দেখিয়ে দিলে। আর কাকে দেখানোর জন্য যাচ্ছো?
আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যার চোখ আরও বড় হয়। কথার অর্থ বুঝতে পেরে ল’জ্জায় সন্ধ্যা চোখ খিঁচে নিল। সে সাদা জামা পরেছে। জামাটি ভীষণ পাতলা ছিল। সে তো আর জানতো না, সে পানিতে পরে যাবে। তাহলে জীবনে এই জামা পরতো না।
আকাশের ইচ্ছে করল একে সত্যি-ই পানিতে চুবিয়ে মা’র’তে।
রে’গে বলে,
– আচ্ছা বে’য়া’দ’ব তো তুমি! মানুষকে শরীর দেখিয়ে বেড়াও!
সন্ধ্যার কান্না পাচ্ছে। ভীষণ অপমানিতবোধ করছে সে। সুইমিংপুলের পাড়ে থাকায় সন্ধ্যা আকাশকে ঠেলে উপরে উঠতে চাইলো। কিন্তু আকাশ সন্ধ্যার কোমর শক্ত করে ধরে রাখলো। সন্ধ্যা ব্য’থা পায়, সাথে ভীষণ ল’জ্জা।
আকাশ বিরক্তির শ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকালে বামদিকে অরুণকে ফোনে কথা বলতে দেখে রে’গে যায়। এই বে’য়া’দ’ব এখনো যায়নি এখান থেকে? পাড়ের কাছে তখনকার মতো লাঠি জাতীয় একটি ডাল পেয়ে অরুণের দিকে ছুঁড়ে মা’রে। অরুণ পায়ে ব্য’থা পেয়ে উল্টো ঘুরলে আকাশ সন্ধ্যাকে তার পিছে দাঁড় করিয়ে রে’গে বলে,
– এই বে’য়া’দ’ব তুই যাসনি কেন এখান থেকে?
অরুণ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– কেন যাবো?
আকাশ চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
– যা এখান থেকে। নয়তো তোকে লাত্থি মে’রে বাংলাদেশের বাইরে বের করব।
অরুণ কল কেটে এগিয়ে আসে আর বলে,
– তুই তোর বউকে বাঁচাতে নেমে মে’রে ফেললি না-কি? কোথায় মেয়েটা?
সন্ধ্যা আকাশের পিছনের পিঠের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– মে’রে দিয়েছি। যা এবার।
অরুণ চোখ বড় বড় করে বলে,
– সত্যি মে’রে দিলি? মেয়েটার টিকিটি-ও দেখছি না যে।
আকাশ রেগেমেগে পাড়ে উঠে অরুণের দিকে তেড়ে গেলে অরুণ উল্টো ঘুরে দৌড়াতে দৌড়াতে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আরে আমি কি করলাম?
আকাশ ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
– তোর ক্যারেক্টার আজ ধুঁয়ে মুছে সাফ করব দাঁড়া।
অরুণ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যায়, দারোয়ান গেইটে দাঁড়িয়ে ছিল। অরুণকে দেখে অবাক হয়, বেশি অবাক হয় আকাশকে উদাম হয়ে ভেজা গায়ে এভাবে দেখে। অরুণ বাইরে বেরিয়ে গেলে আকাশ থেমে যায়। দারোয়ানের সামনে গিয়ে বলে,
– চাচা এক্ষুনি গেইট লাগান। খুলবেন না আজকে।
অরুণ ওপাশ থেকে বলে,
– কিহ! আমি কই থাকবো? তুই আমার সাথে ভিলেনগিরি করতে পারিস না!
আকাশ রে’গে বলে,
– সব পারি আমি। এমনিতেই ডিভোর্স পেপার আনিস নি, তবুও ঢুকতে দিয়েছি। এখন আর না।
অরুণ কোমরে হাত রেখে চোখমুখ কুঁচকে তাকালো। সে একদিনের মধ্যে কোন আসমান থেকে ডিভোর্স পেপার আনবে? শা’লা লজিকলেস কথা বলতেই এর দিন যায়।
আকাশ সত্যি সত্যি-ই গেইটে তালা দেয়া হলে চাবি নিয়ে চলে গেল। অরুণ কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
– শা’লা তোর জীবনে বিয়ে হবে না।
আকাশ পাত্তা দিল না। এটা বদদোয়া না আশীর্বাদ? সে তো বিয়ে করতে-ও চায় না।
অরুণের আকাশের ব্যাপারে মনে পড়তেই বলে,
– আমার সব গার্লফ্রেন্ড তোর নামে দলিল করে দিব, দেখিস!
আকাশ ততক্ষণে জায়গা প্রস্থান করেছে। অরুণ হাহুতাশ করতে লাগলো। দারোয়ান চাচা নিজেও অসহায় মুখ করে চেয়ে রইল। তার হাতে তো কিছু নেই।
সন্ধ্যা পুল থেকে উঠে দ্রুতপায়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ সামনে আকাশ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা দু’পা পিছিয়ে যায়। আকাশ তীক্ষ্ণ চোখে সন্ধ্যার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দৃষ্টি বুলায়। সন্ধ্যা সাদা জামার উপর সাদা ওড়না টেনে নিজেকে ঢাকতে চাইলো, কিন্তু সব তো ভেজা।
আকাশের দৃষ্টিতে মেয়েটি নুইয়ে পড়ে। এতো বাজে পরিস্থিতিতে এ জীবনে পড়েছে বলে মনে হয় না। আকাশের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আকাশ আবারও সন্ধ্যার সামনে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা ধাক্কা খেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। আকাশ নিজেই দু’পা পিছিয়ে যায়। আবার-ও সন্ধ্যার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দৃষ্টি বুলায়। বা হাত ট্রাউজারের পকেটে। ডান হাতের আঙুলগুলো চাপ দাঁড়িতে বুলিয়ে খুব সামান্য হাসে। অতঃপর নিজেকে সামলে গম্ভীর গলায় বলে,
– খারাপ লাগছে না! নাইস কম্বিনেশন!
সন্ধ্যার ইচ্ছে করল, মাটি ফাঁক হয়ে যাক, সে ভেতরে ঢুকে যাক। কি বে’হা’য়া লোক! আকাশ সন্ধ্যার দিকে এগোলে সন্ধ্যা এবার আকাশ বুঝে ওঠার আগেই পাশ কাটিয়ে এক দৌড় দেয়। আকাশ সাথে সাথে পিছু ফিরল। সন্ধ্যাকে ধরতে চাইলে ওড়না খুলে হাতে চলে আসে। সন্ধ্যা ভীত হয়। কিন্তু থামলো না। তার বোঝা হয়ে গেছে এই লোক চরম লেভেলের অ’স’ভ্য। আকাশ সন্ধ্যার ভেজা ওড়নার দিকে চেয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,,
– যাহ! কথা শেষ না করতে দিয়েই পালালো!
ভাবনার মাঝেই আকাশের বুকে চারটে ইটের টুকটো এসে লাগে। আকাশ সামনে তাকালে দেখল সন্ধ্যা এদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল, তাকে দেখেই আবার দৌড় দিয়েছে। আকাশ সন্ধ্যার ভেজা ওড়না ডান হাতে পেঁচায় আর দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– বে’য়া’দ’ব মেয়ে! তোমার খবর করব আমি, ওয়েট!
সন্ধ্যা জোরে জোরে দৌড়ায়। বে’হা’য়া লোক তাকে নিয়ে কি বাজে বাজে কথা বলছিল, সে চুপচাপ হজম করবে না-কি! তখন পানিতে ছিল বলে সব মেনেছিল। সন্ধ্যা এক দৌড়ে তার ঘরে এসে থামে। দ্রুত ঘরের দরজা আটকে হাঁপায়। এরপর তার একটি কালো জামা, পায়জামা, ওড়না নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। সব কালো পরবে সে। যেন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেও তার কিচ্ছু দেখতে না পায়৷
সৌম্য রাতে তার এক ফ্রেন্ড এর বাসায় ছিল। এরপর সকাল সকাল ঢাকার বাসে উঠে সিলেট চলে আসে। বাস থেকে মৌলভীবাজার নামে। পকেট থেকে ফোন বের করে ঘড়ি দেখল, দুপুর ৩ টা। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। পেটে ক্ষুধা। রাস্তার পাশে একটি দোকানে গিয়ে পাঁচ টাকার একটি রুটি সাথে একটি কলা কিনে। এরপর দোকানের সামনে বসার জায়গা পেয়ে একসাইডে বসে সৌম্য। রুটিতে এক কা’ম’ড় দিয়ে পাশে তাকালে দেখল একটি কু’কু’র চেয়ে আছে। সৌম্য কু’কু’র টির দিকে চেয়ে রুটির টুকরোটুকু চিবায়। রুটিতে দ্বিতীয় কা’ম’ড় দিতে গিয়ে কি যেন ভেবে তার মুখের সামনে থেকে সরিয়ে নেয় রুটি। এরপর কু’কু’র টির মুখের সামনে রুটি ধরলে কু’কু’র ছো মে’রে নেয় রুটি। সৌম্য হেসে ফেলল। হাতের কলাটি কু’কু’রের সামনে রেখে আবার-ও দোকান থেকে রুটি, কলা কিনে খেতে আরম্ভ করে। সৌম্য খেয়াল করল কু’কু’র টি তার পা ঘেঁষে বসে আরামসে খাচ্ছে। সৌম্য তার খাবার টুকু শেষ করে একটি হাফ লিটারের পানির বোতল কিনে, দোকানদারকে টাকা পরিশোধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সৌম্য’র ডান পাশে কু’কু’র টি হাঁটে।
হঠাৎ-ই সৌম্য’র বাম পাশে একটি মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– আসসালামু-আলাইকুম ভাইয়া!
সৌম্য ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকালো। সালাম এর উত্তর নিয়ে আবারও সামনে তাকায়। মেয়েটি মৃদু হেসে বলে,
– আপনি কোথা থেকে আসছেন?
সৌম্য গম্ভীর গলায় বলে,
– সালাম এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব, তাই দিয়েছি।
মেয়েটি বুঝল, সৌম্য তার সাথে কথা বলতে চায় না, এজন্য এভাবে বলছে। বিশ বছরের ফর্সা, গোলগাল মেয়েটি মৃদু হেসে বলে,
– আচ্ছা শুধু এটা বলুন, আপনি কু’কু’র টিকে আপনার মুখের খাবার দিয়ে দিলেন কেন?
সৌম্য কু’কু’রটির দিয়ে তাকিয়ে বলে,
– ও ক্ষুধার্ত ছিল।
– রাস্তায় তো আরও কত অভুক্ত কু’কু’র আছে। সবাইকে দিলেন না তো?
– সামর্থ্য থাকলে দিতাম।
মেয়েটি অবাক হয়ে একটু হাসলো। আবারও বলতে নেয়,
– আপনি…..
সৌম্য বিরক্ত কণ্ঠে বলে,
– আমি বিরক্ত হচ্ছি। আপনি আপনার রাস্তা দেখুন।
সৌম্য’র কথায় মেয়েটি দাঁড়িয়ে যায়। তার মনে আহামরি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয় না। তবে একটুখানি অপমানিতবোধ করেছে, এজন্য-ই দাঁড়িয়ে পড়েছে।
সৌম্য মেয়েটির দিকে একবার-ও তাকালো না। সে তার মতো এগিয়ে গিয়ে একটি সিএনজিতে উঠে পড়ে ‘ভানুগাছ’ গ্রামের উদ্দেশ্যে। প্রতিজনের ভাড়া ১০০ টাকা। সৌম্য সিএনজিতে উঠে বসলে দেখল কু’কু’রটি তার দিকে চেয়ে ঘেউঘেউ করছে। সৌম্য মৃদু হাসলো। সিএনজি ছেড়ে দিলে কু’কু’রটি পিছু পিছু দৌড়ায়। সৌম্য আয়নায় তাকিয়ে দেখল। সিএনজির স্পিড বাড়লে একসময় কু’কু’র টি মিলিয়ে গেল। সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
প্রায় ২ ঘণ্টা পর সৌম্য ভানুগাছ গ্রামে এসে পৌঁছায়। কিছু চকলেট, দু’টো চিপস্ কিনে তার কাঙ্ক্ষিত জায়গার উদ্দেশ্যে এগোয়। মিনিট দশ হাঁটলে একটি বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। বাড়িটি কাঠ ও বাঁশের তৈরী। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, ভেতর থেকে বেরিয়ে উঠানে এসে সৌম্যকে দেখে অবাক হয়। এগিয়ে এসে সৌম্য’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি হঠাৎ? এভাবে না বলে কয়ে আসলে যে? বলে আসবে না?
সৌম্য মৃদু হেসে সালাম দিয়ে বলল,
– এমনি-ই চলে এলাম।
ভদ্রলোক সৌম্যকে টেনে নিয়ে গিয়ে উঠানে পাতা চেয়ারে বসতে দিয়ে ডাকলেন,
– কই গো সিজান এর আম্মা, আসো দেখে যাও কে আসছে!
সৌম্য হেসে বলে,
– মামা ব্যস্ত হবেন না। সিজান কই?
বলতে বলতে পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা দৌড়ে এসে সৌম্য’র পা জাপ্টে ধরে বলে,
– বাইয়া তুমি আসচ?
সৌম্য সিজান কে কোলে নিয়ে হাতের চিপস দেয়, পকেট থেকে চকলেট বের করে হাতে দেয়। বাচ্চাটি খুশি হয়ে সৌম্য’র গলা জড়িয়ে ধরে। সৌম্য’র মামা বলেন,
– সন্ধ্যা কেমন আছে? ওকে আনলে না কেন?
সৌম্য’র মুখ মলিন হয়। মৃদুস্বরে বলে,
– ভালো আছে মামা। আনবো সময় করে। আমি কিছু কাজে এসেছি। এক সপ্তাহ’র মতো থাকবো। আপনার সাহায্য লাগবে।
সিজান এর বাবা সৌম্য’র কাঁধে হাত রেখে বলে,
– এক সপ্তাহ থাকলে আমি ধন্য হবো। কখনো তো এসে একদিন-ও থাকোনি। ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর তোমার সব কথা শুনবো।
সৌম্য মৃদু হাসলো। র’ক্তরে সম্পর্ক নেই এদের সাথে, অথচ কত আপন ভাবে তাদের।
ভেতর থেকে সৌম্য’র মামি এগিয়ে এসে বলে,
– কেমন আছো বাবা?
সৌম্য তার মামির সাথে টুকটাক কথা বললো। সিজানকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। সৌম্য’র মামা ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বললে সৌম্য ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়, মামার ডাকে আবার-ও পিছু ফিরে তাকায়। ভদ্রলোক তার মেয়েকে দেখিয়ে বলে,
– সৌম্য? এটা আমার বড় মেয়ে সৃজা। তুমি এর আগে আসলে ও কোনো না কোনো সময় বাড়ি থাকতো না। এবার দেখা হয়ে গেল।
সৌম্য মেয়েটির দিকে তাকায়। ঘণ্টা দুই আগে রাস্তায় যে মেয়েটির উপর বিরক্ত হয়েছিল সৌম্য, এটা সেই মেয়ে। যদিও মনে মনে একটু অবাক হয়েছে সৌম্য, তবে উপর থেকে স্বাভাবিক। কিন্তু মেয়েটি অবাক হয়ে বলে,
– বাবা, এই ছেলে-ই তোমার সেই বান্ধীর ছেলে সৌম্য?
সৃজার বাবা মৃদু হেসে বলে,
– হ্যাঁ মা।
সৃজা ভাবলো সৌম্য রাস্তায় ভালো করে কথা না বললেও এখন চিনতে পেরে ভালো করে কথা বলবে। কিন্তু না, সৌম্য সৌজন্যমূলক সৃজাকে সালাম দিয়ে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে-ই ভেতরে চলে গেল। সৃজা তব্দা খেয়ে চেয়ে রইল। বিড়বিড় করল,
– কি অ্যাটিটিউট মাইরি!
ইরা সারাদিন সৌম্য’র খোঁজ করে সন্ধ্যার পর পর বাসায় ফিরেছে। বাসায় ফেরার কারণ আছে। তার বাবা চুপ করে বসে থাকার মানুষ নয়। তাকে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে মানেই ঘাবলা আছে। অর্থাৎ ইরাকে বন্দী করার প্রয়োজন নেই। এজন্য-ই ইরা স্বাধীনভাবে আজ ঘুরে সৌম্য’কে খুঁজতে পেরেছে। কিন্তু সৌম্য’র টিকিটি-ও এই শহরে নেই। ইরা বাড়ির কলিংবেল বাজালে তার মা এসে দরজা খুলে দেয়। ইরাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
– কাল থেকে কোথায় ছিলি মা?
ইরা ভেতরে যেতে যেতে বলে,
– হোস্টেলে।
এরপর ডায়নিং এ দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডাকে,
– বাবা? বাবা? বাবা?
ইরার মা কিছু বলার আগে দরজা থেকে ইশতিয়াক আহমেদ এগিয়ে এসে বলে,
– এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে যে?
ইর তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
– সৌম্য কোথায়?
ইশতিয়াক আহমেদ মৃদু হেসে বলে,
– সেটা কে?
ইর চিল্লিয়ে বলে,
– একদম নাটক করবে না আমার সাথে। বলো সৌম্য কোথায়?
ইশতিয়াক আহমেদ বিরক্ত হয়। এতো শান্তশিষ্ট বউ বিয়ে করে কি হয়েছে। পেট থেকে বের হয়েছে এক ধানিলঙ্কা মেয়ে। উল্টে তিনি-ও রে’গে বলে,
– তুমি রিয়াদকে মে’রে’ছিলে? আজ ও ম’রে গেলে কি হতো?
ইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– ও এখনো ম’রেনি?
ইরার বাবা ইরার গালে থা’প্প’ড় মেরে দেয়। মেয়ের উদ্ধতস্বভাব নিতে পারেন না তিনি। ইরার মা দৌড়ে এসে ইরাকে আগলে নিয়ে ভেজা গলায় বলে,
– আপনি আমার মেয়েটাকে এভাবে মা’রেন কেন? ও বড় হয়েছে না?
ইরার বাবা রে’গে বলে,
– মা’র খাওয়ার মতো কাজ করলে মা’র খাবে৷ ও কোন সাহসে রিয়াদ এর গায়ে হাত দিয়েছে? মেয়েকে এসব কি শিক্ষা দিয়েছ?
ইরার চোখের কোণে পানি। মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
– ভাগ্যিস আমি তোমার মা, বাবা অথবা বড় ভাই বা বড় বোন নয়। নয়তো তোমার মতো অ’মানুষদের সিধে করার জন্য এই ইরা একাই যথেষ্ট। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমার মা আমায় বড়দের সম্মান করতে শিখিয়েছে তাই আজ মেয়ে হয়ে বাবাকে সঠিক শিক্ষা টা দিতে পারছি না।
কথাটা বলে তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
– যত রিয়াদকে আমার কাছে পাঠাবে সবগুলোর অবস্থা এরকম-ই হবে। আর আমার সৌম্যকে আমি ঠিক খুঁজে বের করব।
ইয়তিয়াক আহমেদ বোবা চোখে মেয়ের দিকে চেয়ে রইল। মেয়েটা এতো তেজ পায় কোথায় সে ভেবে পায় না।
আকাশ অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে। সিঁড়ির দিকে যেতে গিয়ে-ও পিছিয়ে আসলো। ডানদিকে ঘাড় বাঁকালে দেখল সন্ধ্যা এদিক ফিরে ঘুমিয়ে আছে। দরজাটা একদম খোলা। আকাশ মোড় ঘুরিয়ে এগিয়ে গেল। এইভাবে দরজা খুলে কে ঘুমায়! বিরক্ত হলো আকাশ।
ঘরের ভেতর প্রবেশ করে এগিয়ে গিয়ে সন্ধ্যার মাথার কাছে দাঁড়ায়।
সন্ধ্যার পরনে কালো জামা, মাথায় ওড়না টানা। ডান কাত হয়ে গুটিশুটি মে’রে ঘুমিয়ে আছে। আকাশ হাতঘড়িতে সময় দেখল। রাত ৮ টা। অসময়ে কেউ ঘুমায়! ঘুমিয়েছে তো ভালোই ভদ্রভাবে! বাইরে বেরোয় অভদ্রভাবে। সন্ধ্যার বাম হাত গালের নিচে রাখা। ডান হাত বিছানা থেকে খানিকটা ঝুলে আছে। হাতের মুঠোয় কিছু ধরে রাখা। আকাশ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করল, জিনিসটা কি! গতকালকের নুপুর বুঝতে পেরে আকাশের চোখেমুখে বিস্ময় ভর করে।
তার মনে পড়ল, সন্ধ্যা লিখে বলেছিল, এটা তার ভাই তাকে দিয়েছে। আকাশের আরেকটি কথা মনে পড়ে, আকাশ যখন কক্সবাজার ছিল, তখন সন্ধ্যা একটি কাগজে লিখেছিল তার ভাইকে ভালোবসে, এরপর সেই কাগজ দেয়ালে লাগিয়েছিল। আকাশ অবাক হয়, মেয়েটি তার ভাইকে একটু বেশি-ই ভালোবাসে হয়তো। কিন্তু এর ভাই এর কাছে আসে না কেন? প্রশ্নগুলো নিয়ে ঘাটলো না।
আকাশ সামান্য ঝুঁকে সন্ধ্যার হাতের মুঠো থেকে নুপুরটি নিতে চায়, কিন্তু সন্ধ্যার হাতের মুঠো বেশ শক্ত। আকাশ ভ্রু কোঁচকায়। এই মেয়ের প্রবলেম কি? ঘুমের ঘোরে-ও ঝাঁঝ দেখানো লাগবে? ইচ্ছে করছে ঠাস করে কানের গোড়ায় একটা থা’প্প’ড় মে’রে হাতের মুঠো খুলতে। বিরক্ত হয়ে নুপুরের দু’খন্ড ধরে জোরে টান দেয়। সন্ধ্যা ঘুমের ঘোরে চোখমুুখ কোঁচকায়। মুখাবয়বে ব্য’থাতুর চিহ্ন ফুটে ওঠে। আকাশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বিড়বিড়িয়ে বলে,
– বলেছিলাম, দেখা হলে সালাম দিবে। আর এ পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
সন্ধ্যা আবার-ও গুটিশুটি মে’রে ঘুমিয়ে গেল। আকাশ দ্বিখন্ডিত নুপুরটি প্যান্টের ডান পকেটে রেখে, ডান হাত পকেটে-ই ঢুকিয়ে রাখলো। বা হাতে ব্ল্যাক শার্টের দু’টো বোতাম খুলল। এটুকু সময়ে ঘেমে যাওয়ার কারণ বুঝলো না। ঘর থেকে বেরিয়ে, বা হাতে দরজা টেনে শব্দ করে লাগিয়ে দেয়। গায়ের যত শক্তি ছিল সব শক্তি যেন ঢেলে দিয়েছে। দরজা খুলে রাখার সব রা’গ এই দরজার উপর বোধয় ঝেড়ে দিল। অনেক জোরে শব্দ হয়েছে। সন্ধ্যা ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসে।
এদিকে আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে বলে,
– কিসের শব্দ হলো?
আকাশকে বাইরের দিকে যেতে দেখে বলে,
– কখন আসলে আবার কোথায় যাচ্ছো?
আকাশ মৃদুস্বরে বলে,
– কাজ আছে।
আসমানী নওয়ান আশেপাশে তাকালো। বুঝলো না কিসের শব্দ হলো। কিছু বুঝতে না পেরে তার ঘরে চলে যায়।
সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে আশেপাশে ভীত চোখে তাকায়। মূলত শব্দের উৎস খুঁজতে চাইছে মেয়েটা। গতকাল রাতে অসময়ে ভেজায় আজ সারাদিন মাথাটা ভার লাগছিল, তাই কখন ঘুমিয়েছিল, বুঝতেই পারেনি।
হঠাৎ মনে পড়ল নুপুরের কথা। বাম পা বাড়িয়ে দেখল নুপুর আছে, কিন্তু ডান পায়ের ছেঁড়া নুপুর তার হাতে ছিল, নেই কেন? সন্ধ্যা দ্রুত বিছানার উপর হাতায় পুরো বিছানা খোঁজে কোথাও পায় না। মেঝেতে নেমে চারপাশে খোঁজে। কোথাও পায় না। সন্ধ্যার চোখের কোণে পানি জমে। ভাইয়ার দেয়া নুপুর ছিঁড়ে গেল, তবুও সে সেটি নিয়ে-ই ছিল। সেটাও হারিয়ে গেল! সন্ধ্যা বিছানার উপর দু’হাত রেখে, তার উপর মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। সৌম্য ভাইয়া-ও হারিয়ে গেছে, তার দেয়া জিনিস-ও হারিয়ে যাচ্ছে!
আকাশ নুপুরটি একটি স্বর্ণকারের দোকানে নিয়ে যায়। ৩০ মিনিট এর মধ্যে যেন ঠিক করে দেয়া হয়, যা পেমেন্ট চাইবে, দেয়া হবে। কিন্তু দ্রুত দিতে হবে। দোকানওয়ালা আকাশের কথা মেনে তাদের কাজ করছে। আকাশ এক সাইডে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। হঠাৎ আনিকা এসে আকাশের হাত ধরে বলে,
– দোস্ত! তুই এখানে?
আকাশ আনিকাকে দেখল। কিন্তু তার হাত ধরায় মে’জা’জ খারাপ হলো। একে হাজারদিন বলা হয়েছে ঘেঁষবি না। কিন্তু এটা এর স্বভাব থেকে বের হয় না। আকাশ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– হাত ছাড়বি না-কি জুতার বারি খাবি?
আনিকা দ্রুত আকাশের হাত ছেড়ে বলে,
– ওহ, স্যরি স্যরি! মনে থাকে না আমার। এতো ঢং পারিস বাবা তুই! কয়দিন পর তো বউ হাত না ধরলে এর চেয়ে-ও বেশি চেতবি।
আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– বউ আর তুই এক না-কি? বউ আরও অনেককিছু ধরতে পারে। তুই আজাইরা কথা বাদ দিয়ে বিদায় হো।
আনিকা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– বুঝলাম না, তুই তো আমাদের বাতাস বাবু নয়। সত্যি করে বল, তুই আমার বন্ধুকে কোথায় লুকিয়ে রেখে এসেছিস? মনে হচ্ছে এটা কোনো প্রেমিক জ্বিন!
দোকানওয়ালা মেরামত করা নুপুরটি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিলে আকাশের আগে আনিকা ছো মে’রে নিয়ে নেয়। আকাশ রে’গে বলে,
– আনিকা দে।
আনিকা আকাশের দিকে চেয়ে বলে,
– তুই তো বউ মানিস না। তাহলে এটা কার? মনে হচ্ছে বউ মানছিস। স্বীকার কর, নয়তো পাবি না এটা।
আকাশ বিরক্ত হয়ে বলে,
– কবে বললাম বউ মানি? এসব আমার সাথে যায় না। মে’জা’জ খারাপ করাস না, নুপুর দে।
আনিকা কিছু বলতে গেলে তার মায়ের ডাকে আসছি বলে আকাশকে নুপুর দিয়ে বলে,
– বোনের বিয়ের শপিং-এ এসেছি। তাই বেঁচে গেলি। কয়েকদিন পর তোদের বাড়ি গিয়ে রহস্য উদ্ঘাটন করব, দাঁড়া।
আকাশ আনিকার কথা পাত্তা দিল না। নুপুরটি পকেটে রেখে বিল মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
আকাশ বাড়ি ফিরল। হাতঘড়িতে একবার সময় দেখল ৯টা ২০। আকাশ সন্ধ্যার ঘরের দিকে তাকালে দেখল আবার-ও দরজা পুরো খোলা। অরুণ সোফায় বসা। মে’জা’জ খারাপ হলো। এই মেয়ের প্রবলেম কি? দরজা হা করে রাখে কেন? মনে হচ্ছে একে একটা শিক্ষা দিতে হবে। বড় বড় পা ফেলে সন্ধ্যার ঘরে প্রবেশ করলে অবাক হয়, ঘরে তো কেউ নেই। বেলকনির জিরো লাইট জ্বলছে, কি যেন ভেবে আকাশ বেলকনির দিকে এগিয়ে গেল।
বাদিকে তাকালে দেখল সন্ধ্যা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসেছে। দু’হাঁটু ভাঁজ করে দু’হাতে দু’পা জড়িয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। থেকে থেকে শরীর কেঁপে উঠছে। আকাশ বুঝতে পারলো, মেয়েটি কাঁদছে। আকাশ সন্ধ্যার সামনে ডান হাঁটু একটু উঁচু রেখে বাম পা সামান্য নিচু করে রেখে বসে। সন্ধ্যার ফোঁপানোর আওয়াজ পায়। আকাশ তার ডান পকেট থেকে নুপুর বের করে ডান হাতে নুপুরটি সন্ধ্যার সামনে ঝুলিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– এটার জন্য কাঁদছ?
অন্তঃদহন পর্ব ৮
আকাশের গলা পেয়ে সন্ধ্যা সাথে সাথে মাথা উঁচু করে তাকায়। আকাশ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকালো। সন্ধ্যার চোখমুখ ভ’য়ং’ক’র লাল। কতক্ষণ যে কেঁদেছে আল্লাহ জানে আর সন্ধ্যা জানে। সন্ধ্যা আকাশের হাতে তার নুপুর দেখে অবাক হয়ে তাকায়। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়, তার দ্বিখণ্ডিত নুপুর জোড়া লাগনো দেখতে পেয়ে। সন্ধ্যা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ গম্ভীর চোখে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশ ধমকে বলে,
– কাঁদছিলে কেন ইডিয়ট?