অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ১৯

অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ১৯
তেজস্মিতা মুর্তজা

সন্ধ্যার আকাশে কুয়াশার আবরণ পরিবেশকে আরও গুমোট কোরে তুলেছিল। পলাশের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটল। আবার এগিয়ে এলো অন্তূর দিকে, “খুলবা নাকি টেনে খুলে ফেলব? আমি একটা কথা বলতেছি, ওইডার পিছনে সাহস দেখায়ে আবার চুপ কইরা আছো? ঠিক না।ʼʼ
হাত বাড়ায় পলাশ। অন্তূ সেদিন এই মুহুর্তে কেন যেন জয়ের দিকে তাকিয়েছিল একবার। তবে খেয়াল কোরে দেখলে তার চোখে অল্প আশা দেখতে পাওয়া যেত বোধহয়, যা সে জয়ের কাছে করেছে। কোনো যুক্তি নেই সেই আশার, তবুও অন্তূর বোধহয় সেই ভয়টা লাগেনা জয়কে, যেটা পলাশের জন্য তৈরি হয়েছে এই কিছুক্ষণে।
জয় আরাম কোরে বসে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিচ্ছে। তার সামনে কিছু ঘটছে, তেমন খেয়াল নেই তার মাঝে। নিজের এমন বোকা আশার কথা ভেবে তাচ্ছিল্য এলো অন্তূর নিজের ওপর।
জয়ের চোখে-মুখে তখন স্পষ্ট লালসা। তাকে একনজর নগ্ন অবস্থায় দেখার লালসা। তার অবশ্য রাগ হচ্ছে, অন্তূকে এত লোক দেখবে, যে চেহারাটা তার নিজের পছন্দ! কিন্তু বাঁধা দিলো না। এখন নেকাবটা খুলে ফেললে অন্তূর চেহারা দেখতে পাবে সে। দু’চোখে তার অধীর অপেক্ষা। চেহারা দেখার চাহিদাকে ছাপিয়ে পলাশকে ঠেকানোর ইচ্ছে বা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল না সে।

পলাশ অন্তূর বাহুটা জড়িয়ে ধরার সময় অন্তূর বুকের ওপরের ওড়নার প্রান্তটুকু পলাশের হাতের থাবায় এলো। অন্তূ হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলে পলাশ অন্তূর হাতটা খামচে ছুঁড়ে ফেলে পেছনের দিকে। সজোরে আঘাত হানে হাতটা গিয়ে পেছেনর খচখচে দেয়ালে। নিশ্চিত চামড়া ছিলে র-ক্ত বেরিয়ে এসেছে।
পলাশ অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে, “খোল শালি! ন্যাকামি মারাস?ʼʼ
একটানে খুলে নয় বরং ছিঁড়ে ফেলে অন্তূর চেহারার আবরণটা। অন্তূর গলা থেকে একটা সরু আহাজারী বেরিয়ে আসে। যেই আহাজারিতে চোখ তুলে তাকায় জয়। আর নজর ফেরায় না।
পলাশ ঝটকা খেয়ে অল্প সরে দাঁড়াল অন্তূকে ভালোভাবে দেখার জন্য। মেয়টার কান্না থেমে গেছে, চোখের পাপড়ি ভেজা, অথচ পানি গড়াচ্ছে না। মুখটা লাল হয়ে আছে। চিকন ঠোঁটের কিনারা মাঝেমাঝে উত্তেজনায় কেঁপে উঠছে। জয় ও অন্তূর এক দুর্বোধ্য দৃষ্টিবিনিময় হলো সেই মুহুর্তে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পলাশ হাসছে। তার হাসি কথা বলছে, বলছে—জীবনে প্রথম হয়ত বহুল আকাঙ্ক্ষার বস্তু সামনে দেখতে পেয়েছে চোখদুটো। সে অভিভূত, সে আসক্ত। নিঃশ্বাস জোরে জোরে পড়ছে পলাশের। আশপাশে কমপক্ষে দশ-পনেরোজন পুরুষ অন্তূকে গিলছিল। অন্তূ তাকিয়ে ছিল জয়ের দিকে।
কিন্তু জয় হুট কোরে নজর ফিরিয়ে বিয়ারে ক্যানটার পাশে রেখে ঘাঁড় ঘুরিয়ে হাঁ কোরে শ্বাস ফেলল। অন্তূর আর কান্না পাচ্ছে না। আব্বু বলতো, ছাগল যদি জবাই-ই হয়ে গেল, সেটাকে কাবাব করা হোক, ঝোল রেঁধে খাওয়া হোক, অথবা কিমা করা হোক ছাগলের কি আর কিছু যায় আসে?
পলাশ হেসে উঠল এবার শব্দ কোরে, “আরিব্বাস! তোমার বাপের ঘরে যে এরম একখান আইটেম আছে, জানলে কি আর বেঁচারা…ʼʼ

অন্তূর ভেতরে একটা তীব্র যন্ত্রণা শুরু হলো। সে আজ প্রদর্শনীর পণ্যের মতো এতগুলো পুরুষের মাঝে প্রদর্শিত হচ্ছে। আব্বু বিষয়টা সহ্য করতে পারবে?
নেকাবের একাংশ ছিঁড়ে পলাশের হাতে গেছিল, সেটা পলাশ ছুঁড়ে ফেলেছে। যে অংশটুকু অন্তূর গলায় পেঁচিয়ে ছিল, তা সে নিস্তেজ হাতে আস্তে কোরে খুলে ফেলে দিলো অন্তৃ। এখন শরীরে বোরকা, বুকের ওপর এক টুকরো ওড়না আছে। সকলে দেখছে তাকে।
অন্তূ প্রস্তুত হয় আমজাদ সাহেবকে যেকোনো হালে দেখতে। বুকে মুচড়ামুচড়ি শুরু করেছে, অন্তূ বাঁ হাতের তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল সজোরে চেপে ধরে বুকের মাঝখানটায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু অভিযোগ করল।

দু’জন দু’পাশে ধরে আমজাদ সাহেবকে নিয়ে ছাদের ঘরে প্রবেশ করল। সে জায়গাটি আলোকিত। তার পাশের অন্ধকারের ভেতর বসে আছে জয়।
অন্তূ কয়েক কদম পিছিয়ে ছাদের দেয়ালের সাথে ঠেকে দাঁড়াল। শরীরটা থরথর করে কাঁপছে আবার। অন্তূ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল মুখে হাত চেপে ধরে, কিন্তু আওয়াজ হলো না।
আমজাদ সাহেব থরথরে কাঁপা হাতটা বাড়াতে চায়, চোখে-মুখে আতঙ্ক, ডেকে ওঠেন অস্পষ্টস্বরে, “অন্তূ!ʼʼ
অন্তূ চোখ বুজে ফেলে। আমজাদ সাহেবের মুখটা থেতলানো প্রায়। শার্টের অধিকাংশ ছেঁড়া। হাতে কাচাকাচা দাগ। টলছেন উনি, চোখ খুলে রাখতে পারছিলেন না। ড্রাগ দেয়া হয়েছে বোধহয়। মেহেদি রঙানো দাড়িওয়ালা থুতনিতে গভীর থেতলানো ক্ষত। কী দিয়ে মেরেছে এরা?

অন্তূ দৌঁড়ে গেল আব্বুর দিকে। পলাশ মাঝে এসে দাঁড়াল। অন্তূর পুরো শরীরটা আন্দোলিত হয় একবার পলাশের দেহের দেহের ধাক্কায়, মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে গুটিয়ে গেল যেন একদম আগুনের তাপে পলিথিন যেমন কুঁচকে ঝলসে যায়, ঠিক তেমন। আমজাদ সাহেব কিছু বুঝলেন কিনা কে জানে? যতদূর সম্ভব কড়া ড্রাগ উনার শরীরে।
আমজাদ সাহেবের কোনোদিকে খেয়াল ছিল না। সে কেবল অবচেতন অথবা প্রায় অচেতন চোখে মেয়েকে দেখছিলেন। পলাশের হাতের বেষ্টনিতে গ-লা-কা-টা মুরগীর মতো ছটফট করছে অন্তূ। তার মাথা আলগা, বুকের ওড়না ঠিক নেই, মুখে পর্দা নেই।

সহ্য করতে না পেরে টলমলে মাথাটা নামিয়ে নিলেন। ভিখিরির মতো ভিক্ষা চেয়ে উঠলেন, “ও পলাশ! আব্বা আমার! আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও, আব্বা। ও বাচ্চা মানুষ। পাপ আমার ছেলে করেছে, আমি করেছি জন্ম দিয়ে। ও তো কিছু করে নাই আব্বা। তুমি কী করছো ওর সাথে? আমার মেয়ের পর্দা কই? ও ছোট মানুষ বাপ! ওরে ছাড়ো। তুমি আমাকে মারো, ও পলাশ! আমাকে মারো, দেখবে ঠিক অন্তিক আসবে। তুমি আমাকে আরও মারো, পলাশ। পলাশ শোনো, আমি আমার সব দিয়ে দেব। তুমি কত টাকা পাও, তার ডাবল ডাবল দেব। পলাশ..ʼʼ তার বলা কিছু শব্দ বোঝা গেল, কিছু আর্তনাদ অস্পষ্ট জমা হলো কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতির হাওয়ায় বোধহয়।

জয় একদৃষ্টে চেয়ে ছিল আমজাদ সাহেবের দিকে। ওর ভেতরটা রাগে নাকি হিংসায় অথবা জিদে জ্বলে উঠল। ও-ও মার খেয়েছে। কতবার কতভাবে মার খেয়েছে! শরীরে বিভিন্ন স্থানে বাঁশসুই গাঁথা হয়েছিল, তার ওপর লবন না দিয়ে পার্টির ছেলেরা বিট-লবনের গুড়ো ছিটাতো। খুব চিৎকার করেছে জয় বন্ধ ঘরে। কই কেউ তো বলেনি সেদিন, ‘বাপ! ছেলেটাকে ছেড়ে দাও? আর কষ্ট দিও না আমার জয়কে!ʼ ন্যাকামি যত্তসব! জয় কি বেঁচে নেই? সেসব আঘাতের দাগ এখনও আছে শরীরে। এখন ওর রাজ চলে পুরো দিনাজপুরসহ এই বাঁশের হাটে। ওর পিঠ বাঁকিয়ে হিপবোনের ওপরে কোমড় সংলগ্ন কশেরুকাতে টান ফেলা হতো, তা চিকিৎসা করতে পিঠে স্টেইনলেস রড ঢুকিয়ে কতদিন হাসপাতালের বেডে মরার মতো ফেলে রাখা হয়েছিল ওকে। ওর তো বাপ-মা কেউ আসেনি! বেশি পরিমাণ ড্রাগ দেয়ার ফলে কান-নাক এমনকি চোখের পানির সাথে রক্ত উঠে আসতো। তার জন্য এভাবে কেউ কাঁদেনি। শুধু হামজা প্রতিবেলা ঢাকা মেডিকেল কলেজ যাতায়াত করতো। তরু তখন ছোট প্রায়, সে থাকতো জয়ের পাশে।
এই অবস্থায় মেয়ের জন্য এত ছটফটানি বাপের? বাপেরা কি এমনই হয়? সব বাপ? তাইলে তার বাপ কেন তাকে ফেলে রেখে ওপারে চলে গেছে? ফেলে গেছে তাকে এই দুনিয়ায় নষ্টামি কোরে বেড়ানোর জন্য? ঢোক গিলল জয়। দুই ঢোক মদ গিললো। হিংসা হচ্ছে অন্তূর ওপর, ঘেন্না আসছে। ওই মেয়ে বহুতবার অপমান করেছে ওকে ভার্সিটিতে। আজ অন্তূও অপমান হয়েছে, বাঁচাতে যায়নি জয়। শোধ।

পলাশ অন্তূর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে হাসল, “কাকা! ডাক্তার, কসাই আর আমরা যদি মানুষের অনুরোধে গলি, তাইলে এসব পেশা ছেড়ে ট্রাস্ট এনজিও খুলতে হবে। যেখানে মানুষ-গরু সব ধরণের প্রাণির জান বাঁচানো হবে, তাদের সব ইচ্ছা পূরণ করা হবে। ডাক্তার প্রতিদিন হাজার রোগীর মৃত্যুর ঘোষনা দেয় হাতের পার্লস চেইক করে, তাদের মাঝে সব রোগীর আত্মীয়রাই চেঁচায়ে কাঁদে, সেখানে কোনো একজনের কাঁদা বিশেষ লাগার চান্স আছে? কসাইয়ের ক্ষেত্রেও তাই। সব গরুই ছটফটায়, উঠে পালাতে চায়, তাই বলে কি সে জবাই করে না? আমাদের কাহিনিও সেম। আপনার মাইয়াডারে ভাল্লাগছে। সুন্দরের কাছে সকলে কাবু, আমিও। মাইয়াডারে দেন, সব মাফ।ʼʼ
আমজাদ সাহেবের বোধশক্তি ড্রাগের প্রভাবে বিলুপ্ত প্রায়। পলাশ একটা চমৎকার প্রস্তাব দিলো, “কাকা! আমার অনেকগুলো হোটেল আছে, জানেন তো। অনেক মেয়েরা কাজ করে সেইখানে। মানে বুঝতে পারতেছেন, আমি কী বলছি? আপনাদের এত অভাব। আপনার মেয়ে ভালো আয় করবে।ʼʼ
আমজাদ সাহেব ঢলে পড়লেন মেঝের ওপর। ঢিপ করে আওয়াজ হলো, যখন তার মাথা ছাদের ওপর পড়ল।
পলাশ অন্তূর কাধে নিজের মাথাটা রাখে জোর কোরেই। কুকুর যেমন গন্ধ শোঁকে, ওভাবে নাক টেনে বিশ্রী আওয়াজ করে মুখ দিয়ে।

অন্তূর হাতের যেখানটায় পলাশ চেনে ধরেছিল, সেখানকার শিরাগুলো ফুলে উঠেছে, রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। অন্তূর এরই মাঝে নিজের ওপর তাচ্ছিল্য হয়। সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখে মানুষ, বাস্তবে তো আড়ালে ঘটে এসব, তাই মানুষ প্রাক্টিক্যালি দেখতে পায়না। আচ্ছা! আঁখির সাথে কী হয়েছিল? এরাই কি করেছিল সেসব? যারা এদের শিকার হয় তারা আর বেঁচে থাকে না মানুষকে তাদের ওপর হওয়া অত্যাচারের বর্ণনা করার জন্য! তাই মানুষ কঠিন সত্যিগুলোকে আজ সিনেমার দৃশ্যের নাম দেয়।
পলাশ হাত ছেড়ে একহাতে অন্তূর চুলগুলো মুঠো কোরে ধরে অপর হাতে অন্তূর কোমড়টা পেঁচিয়ে ধরল। নাকটা অন্তূর গলার সাথে ঘঁষল একবার খুব আরাম করে।
জয় উঠে দাঁড়ায় চট করে, “ছাড়েন, ভাই!ʼʼ
পলাশ শুনলো না। জয় মনোযোগ দিয়ে হাতের নখের কোণা কাঁমড়ে নখ কেটে বলল, “ছাড়েন, ছাড়েন। ছেড়ে দেন ওকে।ʼʼ

কথা শেষ কোরে চোখ তুলে তাকাল এবার। অন্তূ চোখ বুজে আছে। ঝরঝর কোরে পানি পড়ছে চোখ বেয়ে। ঘেন্নায় চেহারাটা কুঁচকে আছে। জয় ডেকে উঠল, “পলাশ ভাই!
পলাশ পেছন ফেরে, “হু!ʼʼ
-“ছাড়েন ওরে। আর দরকার নাই। এ-ই যথেষ্ট। আর না। ও বিরক্ত হচ্ছে মনে হয়।ʼʼ
পলাশ খুব তৃপ্তি কোরে হাসল, “চুপচাপ গিলে যা আপাতত, পরে ভাগ দেব।ʼʼ
জয় উঠে এগিয়ে গিয়ে শান্ত হাতটা পলাশের হাতের ওপর রাখে, “ভাই! ছাড়েন ওরে। ছাড়তে বলতেছি আমি।ʼʼ
উহ্য-লুকানো জিদ জয়ের স্বরে। পলাশও জিদ কোরে শক্ত কোরে চেপে ধরতে যায় জয়কে। ওর ছেলেরা পজিশন নিচ্ছে নিজেদের।

আচমকা জয় জানোয়ারের মতো গর্জে উঠল, “ছাড়! ছাড়তে বলতেছিনা? ছাড়!ʼʼ
পুরো রুফটপ কম্পিত হয় সেই স্বরে। একদম গুমোট হয়ে উঠল পরিবেশটা। ক্ষেঁপা মহিষের মতো শ্বাস ফেলল জয়।পলাশের হাতটা খামছে ধরে অন্তূর কোমড় থেকে সরিয়ে দেয় জয়। তার চেহারা দেখতে তখন মানুষের মতো লাগছিল না। জেদে বেসামাল। অন্তূর হাতটা তখনও পলাশের থাবায়। জয় পলাশের হাতের ওপর নখ গেঁথে দিয়ে দাঁতে দাঁত ঘষে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করল যেন, “ছেড়ে দেন পলাশ ভাই, জিদ উঠতেছে আমার।ʼʼ
পলাশ হেসে উঠল, “জয়, আমি জানি তুই ক্ষ্যাপা। তবে পাগল বা বোকা না। ও এখন আমার জিনিস। আমি কী তুই জানিস। কিন্তু এখন এইরকম বোকামি করতেছিস ক্যান ভাই? কার সাথে কী করতেছিস, হুশ আছে? একটা মা*গীরে ছাড়াইতে তুই …কেমনে কী জয়? আমার সাথে ..ʼʼ

জয় পলাশের হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বলল, “ব্যাপার সেইটা না, পলাশ ভাই। আপনি ওরে ধরেন, সমস্যা তো নাই। আপনার ইচ্ছে হইছে, আপনি ধরবেন । ধরবেন, এরপর যা মনে চায় করবেন। পারলে টেনে-টুনে ছিঁড়ে ফেলবেন। অ্যাবসিউলুটলি আই জাস্ট ফা-কিং ডোন্ট কেয়ার এবাউট দ্যাট। বাট, আপনি আমার কথা শুনবেন না? ভিত্রে কেমন জানি শুয়োর নাচতেছে, ভাই। মন চাচ্ছে সবগুলারে একদম ছেঁচে ফেলি! আপনার ইচ্ছে হইছে, আপনি ওরে ধরবেন। কিন্তু আমি যে বললাম, ছাড়েন। এই কথা মানার জন্য আপনার ওকে ছেড়ে দেয়ার ছিল। ওকে ধরাটা সমস্যা না। আমি যে বললাম, ছাড়েন, এইটা আপনি শুনতেছেন না, এইটা সমস্যা! একবার না, কয়েকবার কইছি ছাড়তে!ʼʼ
পলাশের লোকেরা ক্ষিপ্র পায়ে এগিয়ে আসে জয়ের দিকে। চারপাশে তখন ঘন অন্ধকারের কুয়াশারা ভিড় জমিয়েছে। জয় খিঁচে এক টান মেরে অন্তূকে ছাড়িয়ে নেয় পলাশের হাত থেকে। পলাশ অল্প ছিটকে পড়ল। জয় পেছনের শার্ট উঁচিয়ে হোলস্টার থেকে পিস্তল বের কোরে হাতে রাখতেই সকলে একটু পিছিয়ে গেল।
অন্তূ দৌঁড়ে গিয়ে বসে পড়ে আব্বুর পাশে। অল্প আলোতে দেখতে পায় আব্বুর কানসহ বিভিন্ন স্থানে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সিগারেট ঠেকিয়ে। ত্বক ঝলসে গেছে সেসব স্থানের। অন্তূর চোখের সামনে ভাসছে, যখন আব্বুর কানে জলন্ত সিগারেটের হল্কা চামড়া বিদীর্ণ করে ক্ষত তৈরি করছিল, তখন কেমন লেগেছিল আব্বুর! আর্তনাদ কোরে থামতে বলেছিল ওদের?

জয় পিস্তলের ব্যারেল টেনে বুলেট লোড কোরে নিলো। পলাশের চোখ মৃদু আলোতে জ্বলজ্বল কোরে উঠল। মুখে সেই প্যাচপ্যাচে হাসি। যা দেখতে ভীষণ ভয়ংকর লাগে। যেন সূর্যগ্রহণের রাত, তার ওপর পলাশের মৃদু আওয়াজের অমানুষিক হাসি রাতটাকে কলুষিত নাম দিচ্ছিল। পলাশ বলল, “জয়! আমি কিন্তু, পলাশ আজগর! আমার মাথা সব সময় ঠান্ডা, বাপ! একদম বরফের মতোন ঠান্ডা। আমার ইশারায় মানুষও ঠিক ওইভাবেই রক্ত জমাট বেঁধে মরে।ʼʼ
জয় হেসে ফেলল, পিস্তলের মুজেল দিয়ে গলা চুলকে বলল, “পরশুদিনের ভোটকেন্দ্রে আপনার মতো পলাশ আর মাজহারের মতো খা-ন-কির ছাওয়াল যদি দুই-হাজারও উপস্থিত থাকে। আমি জয়, আমি জয় আমির এক এক হাজারের মাঝে একেকশো কোরে লাশ বিছাবো। তাই দেখবেন বাকি নয়শোরা ওদের জানাজায় উপস্থিত হবে, গন্ডোগোল করার কেউ থাকবে না। সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ভোটে হামজা পাটোয়ারী পরশুদিন মেয়র নির্বাচিত হবে।ʼʼ
জয় পিছিয়ে এসে অন্তূর কাছে ঝুঁকলো, “আরমিণ! দ্রুত ওঠাও তোমার বাপকে। আমরা বের হবো জলদি। দ্রুত..ʼʼ
কথা শেষ হলো না। এক খাবলি থুতু এসে মুখে পড়ল জয়ের। অন্তূ বলে উঠল, “তোদের মতো জানোয়ারের বাচ্চাদের মাঝে কারও সাহায্য লাগব না আমার। তোর মতো জারজদের কারও বাপকে বা মেয়েকে বাঁচাতে হবে না।ʼʼ

অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ১৮

পলাশের সরু হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। সাথে লোকগুলোও হাসছে জয়ের অবস্থা দেখে। জয় আরও চমৎকার কোরে হাসল। অন্তূর ওড়না তুলে মুখের থুতুটুকু মুছে আরও সুন্দর কোরে হাসল, “তুমি আমায় থুতু দিলে, তোমাকেও লোকে থুতু দেবে, সত্যি বলছি। তবে সেসব ঋণ মিটমাট পরে হবে।ʼʼ এবার একটু আওয়াজ নিচু করল জয়, “কিন্তু এখন ওঠো, জলদি। হাজার হোক, আমি একা। পিস্তলেও যদ্দূর সম্ভব বড়জোর দুইটা বুলেট আছে। আমি ফাইটিং পারি না অত ভালো। ওঠো, দ্রুত ওঠো। আমি সাহায্য করবো তোমার বাপরে উঠাইতে?ʼʼ

অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ২০