অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ৭৭

অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ৭৭
তেজস্মিতা মুর্তজা

হামজার গাড়ি পুরান ঢাকার বাবু বাজার ব্রিজের ওপর একটি বালু টানা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে মুচড়ে গেল একপাশ। ট্রাকের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে যথেষ্ট কম ছিল। গাড়িটা তাই অনেক চেষ্টা করেও ব্রিজের নিচে পড়তে পারেনি। এতে উপস্থিত মৃত্যুও মন খারাপ করে ফিরে গেল হামজার কাছ থেকে।
কপালের ওপরে আড়াই ইঞ্চির মতো করোটি ফেটে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে এলো। আর শরীরের কোথায় কী লেগেছে তা অনুভব করার আগেই অন্ধকারে তলিয়ে গেল হামজার চেতনা। অস্ফূট স্বরে সে একবার উচ্চারণ করে–জয়!

মানুষ মৃত্যুর আগে তার আপনজনদেরকে ডাকে। হামজার কোনো আপনজন নেই। সে তার জন্মদাতা বা গর্ভধারিনীকে চেনে না। তার কোনো পরিচয় নেই। তার শুধু একটা জয় আছে। সে জয়কে ডেকে উঠল শেষবার। রিমির কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা খেয়াল আসার আগে তার চেতনা নিভে এলো।
ড্রাইভারের দুটো আঙুলের অর্ধেকটা কেটে পড়ে গেল। বাম পায়ের নিচের অংশের হাড় ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে। ওভাবেই মিনিট পনেরো মানুষের কল্পনা-জল্পনা, আতঙ্ক ও সমবেদনার মাঝে পড়ে রইল দুটো দেহ রাস্তার ওপর।
ধানমন্ডিতে হামজার লোকেরা খবর পেয়ে বাবুবাজার পৌঁছাতে ঘন্টাখানেক লাগল। ততক্ষণে হামজার কন্ডিশন ডাক্তারদের ভাষায়–ক্রিটিকেল। তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বেডে নেবার পর শরীর থেকে চুইয়ে পড়া রক্তে বেডসিট লাল হয়ে উঠল।
হাতের মুঠোয় ছিল দুটোয় রজনীগন্ধার গাজরা। হামজা ফুলের গাজরাদুটো কিনেছে আহসান মঞ্জিলের সামনে থেকে। সেগুলো মুচড়ে নেতিয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে হাতের মুঠোয় ধরা ছিল। হামজার দাড়ি-গোফের মুখটা চাপটি ধরা রক্তে জর্জরিত।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘন্টা দুয়েক পর প্রাথমিক ড্রেসিং ও কিছুটা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ডাক্তারেরা একটু চিন্তিত কণ্ঠে জানাতে চাইলেন, রোগীর শরীরে যা দেখা যাচ্ছে না আপাতত, তা ঘটিয়ে ফেলেছে বোধহয় এই এক্সিডেন্ট। আমরা আশা করব তা না হোক, তবে হবার সম্ভাবনা প্রবল থেকে গেল।
হামজার পান্টারেরা বুঝল না অত। জয়কে কল করে এই কথা বলবে কে, তা নিয়ে একটু আপত্তি সবার। জয় সহ্য করতে পারবে না। এরকম খবর দেয়াটা লজ্জারও। রাজত্ব তাদের, তবু কেন এ ধরণের অরাজকীয় ঘটনা ঘটবে? লজ্জাজনক বটে। এর ফল ভুগতে হবে অপরপক্ষকে।

বাঁশেরহাট ফেরার পথে জয়ের বুকের মাঝখানটায় একটা ছিদ্রক ব্যথার উদ্রেক হলো। চোখদুটো মুদে বাসের সিটের সাথে হেলান দিয়ে রইল। বোজা চোখের দৃষ্টির সামনে নিকশ অন্ধকার। সেই অন্ধকার জয়কে ডাকছে। বলছে, তার মাঝে বিলীন হয়ে যেতে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সে কতক্ষণ ওভাবে দম আঁটকে বাসের সিটের ওপর পড়ে ছিল জানা নেই।
যখন সে চলমান জগতে ফিরল, হৃদযন্ত্রের স্পন্দন স্বাভাবিক মাত্রা পেল তখন বাসের কন্টাক্টর তাকে এক নাগাড়ে ডাকছে। অর্থাৎ তাকে বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ ডাকা হচ্ছিল। বাস থেকে নেমে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও সে একবার দম আঁটকে বসে পড়ল রাস্তার কিনারে মাটির ওপর। হামজাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে যাবার পথে তার পায়ের গতি শ্লথ হচ্ছে। আবার একটা দ্বিধার টান। আরমিণের সেই ধিক্কার কানে বিছার মতোন দংশন করলে জয়ের চিত্ত দুই ভাগে বিভক্ত হলো, চিড়ে গেল।

-‘নিজের রক্তের সাথে বেইমানি করা জয় আমির, আমি আপনাকে ভয় পাই না।ʼ
জয় রাস্তার ওপর পাগলের মতো মাথার দু’পাশ চেপে ধরে গলাকাটা মুরগীর মতোন ছটফট করতে লাগল। আজ সে পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে হামজার কাছে যেতে পারছে না নাকি? কেন? দ্বিধার শিকলে পা বন্দি? কোন দ্বিধা? জিন্নাহকে যদি হামজা মেরে থাকে! জয়ের মনে হলো তার দেহটাকেও দুই ভাগ করে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। জান্তব আর্তনাদে গুঙরে উঠল ফুটপাতের ওপর পড়ে।
বাসের ভেতরে তো সে অজ্ঞান হয়নি, তাহলে এতদূর যাত্রা করল, গন্তব্যে এসে বাস থামল, তাকে ডাকা হলো, সে টের পেল না কেন? সে কোথায় ছিল? মৃত্যু এসেছিল? সে সবসময় দুটো সিট ভাড়া করে বাসে ওঠে। তার পাশের সিট খালি ছিল। মৃত্যু কি এসে আজ সেখানে বসেছিল তার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে? তাহলে সঙ্গে নিলো না কেন? আর কত ছলনা করবে সে জয়ের সঙ্গে?

বাড়ির সীমানায় ঢোকার আগেই সে অভ্যস্ত রূপে ফিরল। জয়কে দেখে ছেলেরা ওকে ঘিরে ধরে হুটোপাটা লাগিয়ে দিলো, ‘ভাই ভাই ভাই…ভাইʼ রব উঠে গেল। হামজা ভাই হাসপাতালে। কী ভয়াবহ খবর! তাদের রক্তে আগুন লেগে গেছে। কার এমন দুঃসাহস! রাজত্ব তাদের, সেখানে থোরাই তারা আর কারও সামান্য নাচাকুদাও করবে! আর তো স্বয়ং হামজা ভাইয়ের ওপর হামলা। রক্তের ওপর সেতু তৈরি করা হবে, সেতু।
জয় হাসল, “এত ক্ষেপছিস কেন তোরা? কঞ্চির খোঁচা খাইলে পরে চাপ্পরের কোপ লাগানো কমবেশি জায়েজ মনে হয়। ম্যালাদিন সব চুপচাপ ছিল, আমি ঠিক এনার্জি পাচ্ছিলাম না হাত গরম করার। আক্রমণ পাপ, প্রতিক্রিয়া বৈধ। ড্যাগ নামায়ে আন্। পিকনিক হবে আজ। ডিজে লাগা পাড়ার লোক যাতে ঘুমাইতে না পারে আর মিউজিক ছাড়া অন্য কোনো আওয়াজও না শোনে। শেষরাতে রওনা দেব ইলা-রাজধানী। জয় বাংলা!ʼʼ
ইশারায় রতনকে একটু একান্তে ডেকে বলল, “আমার ভাই বিরাদাররা লাস্ট কবে মাংস খাইছে রে!ʼʼ

-“ওই কুত্তাগুলা, ভাই?ʼʼ
-“কুত্তা কী রে শালা? মেহমান ক মেহমান।ʼʼ
জয় এক একে বোতাম আলগা করে গায়ের শার্টটা খুলে ফেলল। গরম লাগছে। খালি গায়ে শুধু তার লকেটওয়ালা চেইনটা বুকের ওপর পড়ে রইল। রতন খুব উৎসাহের সাথে জানায়, “আপনের কথামতোন ওগোরে দুই-তিনদিন পর খাওন দেই। আইজ চাইরদিন ভুখা শালারা! সামনে আস্ত হাতির বাচ্চা পাইলেও খাইয়ালাইবো।ʼʼ
-“সো স্যাড, রতন। হাতির বাচ্চা না, আস্ত একটা হাতি খাইয়ালাইবো–এই আশা ছিল আমার। তুই হতাশ করলি রে আমায়! এইজন্য পরের জন্মে তুই বান্দর হয়ে জন্মাবি। তোর পাছা হবে জবা ফুলের মতোন লাল টকটকে। ফুউউ!ʼʼ
রতন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। জয়ের ফুঁক কতটুকু কাজে লাগার মতো তা রতন জানে না। কিন্তু টেনশন হচ্ছে খুব। জয় ওয়ার্কশপের অফিসরুমে ঢুকল। দুটো ছেলেকে ডেকে নিয়ে হাজার পাঁচেক টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল, “প্যাকেট কয়েক মোমবাতি, চার্জার লাইট আর খাবার কিনে নিয়ে আমার বাপের গেরে যা।ʼʼ
রতন জিজ্ঞেস করে, “ভাবীরে রাইখা আইচেন, ভাই?ʼʼ
-“আম্মা ডাকবি, আম্মা। ভাবী শব্দডা ভালো না।ʼʼ

রতন আপত্তি করল, “ভাই ভাবী কেমনে আম্মা হয়? আপনে আমাগোর ভাই, ভাইয়ের বউ ভাবী লাগে ভাই।ʼʼ
জয় চোখ তুলে তাকায়, “তাইলে আমায় অহন থ্যাইক্কা আব্বা ডাকবি।ʼʼ
রতন শুকনো মুখে ঘাঁড় চুলকালো। জয় বলে দিলো, “বাড়ির বাইরেই থাকবি দুইজন। দুই চাইরডা শাবল, ছোরা হাতের কাছে রাখিস। ভেতরে ঢোকার কথা ভাবিস না। হারাম, বুঝেছিস?ʼʼ
জয় দ্রুত ওদেরকে বিদায় দেয়। বড়ঘরে যেতে হবে তাকে। বহুত কাজ এখন। ক্লান্ত শরীরে সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতে উঠতে একটা গান ধরল সে—
এক মুঠো স্বপ্ন চেয়ে হাত বাড়িয়েছিলাম
জীবন ছিল বড় বেরঙ, শুধু হারিয়েছিলাম,
আলোর দিশা হয়ে তুমি এলে, আমি……….
….কত রাত জাগা-কত দিন গোনা,
সেই নতুন ভোরের আশায়..

দরজা খুলে গেল হুড়মুড়িয়ে। একখানা নেভিব্লু রঙা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে রিমি। জয় দেখল খুঁটে খুঁটে রিমিকে। চোখদুটো গর্তের ভেতরে ঢুকে গেছে। কালো হয়ে দেবে গেছে অক্ষিকোটর। অথচ আজ রিমির যেন আগের সেই স্নিগ্ধ-সুন্দরী কমবয়সী রিমি হবার প্রচেষ্টা! এই মেয়েটার সাথে জয়ের সম্পর্ক জটিল। ইঁদুর-বিড়ালের মতো বা আরও কিছুটা অন্যরকম।
জয় কি ম্লান হাসবে আজ রিমিকে দেখে? না, তা জয়ের ঠোঁটে অতিরিক্ত বেমানান। রিমিকে সে যে খবর শোনাবে, তার আগে সে রিমিকে একটু চাঞ্চল্যপূর্ণ-জ্বালাতন করবে। তাই সে খোলা শার্টখানা ঘাঁড়ে বাঁধিয়ে দাঁত বের করে বেহায়ার মতো হেসে গান গাইল,
ভাবী আমার জানেরই জান, পরাণের পরাণ
ভাবীর মাইরে…কিইন্না দিমু সুপারী আর পান..
ভাবী স্কুলে যাইবো… থুক্কু থুক্কু। সরি। একশট্রিমলি সরি ভাবী।
রিমি কিন্তু একটুও হাসল না। নিস্তেজ গলায় বলল, “প্যান্ট টেনে তুলুন।ʼʼ

জয় চমকে উঠার ভান করে। দেখে তার প্যান্ট বিপদসীমার নিচে নেমে যাবার পথে। কিন্তু কোনো ব্যাপার না। জাঙ্গিয়া তো আছে। রিমি কী বোঝাতে চাইছে? তার স্বামীর জাঙ্গিয়া জয়ের পরনে, এটার খোঁটা দিলো?
জয় এর প্রতিবাদে কিছু বলার আগেই রিমি সেই একই রকম স্বরে বলল, “এমপি সাহেব এসেছেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে। যদিও আপনি জঙলি, অসভ্যতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন, তবু জানালাম। সম্মানিত মানুষ, এভাবে উনার সামনে গিয়ে না দাঁড়ালেই পারেন।ʼʼ
জয় ভ্রু কুঁচকে দুই সেকেন্ড রিমিকে দেখে হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে এনে ম্যাগাজিন খুলতে খুলতে রিমির কানের কাছে একটু ঝুঁকে বলল, “হাগতে গেলে কি অযু করে টয়লেটে ঢোকেন?ʼʼ
রিমি অসন্তুষ্টিতে চোখ বুজল। জয় ম্যাগাজিনে বুলেট ভরতে ভরতে ফিসফিস করে বলে, “শক্ত হয়ে দাঁড়ান। ভেতরে ঢোকার আগে আপনাকে একটা ক্যাঙ্গারু নিউজ দেব। যেটা শোনার পর আপনি ক্যাঙ্গারুর মতোন লাফাবেন। রেডি?ʼʼ

রিমি নিষ্প্রভ গলায় বলল, “আপনার ভাই আজকে দিনাজপুর ফিরছে না, তাই তো?ʼʼ
জয় স্থির চোখে তাকিয়ে শুকনো হাসে, “না আসতাছে তো না-ই। উল্টা হাসপাতালে শুয়ে আমার-আপনার অপেক্ষা করতাছে। তৈরি হন। মিটিং শেষে রওনা দেব। আপনার স্বামী খুব সেলফিশ লোক। আপনি বলে সংসার করতেছেন। আমি হলে জীবনেও করতাম না।ʼʼ
রিমি শরীরের ভর হারালো যেন। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জয় শিস বাজাতে বাজাতে পিস্তল ফের হোলস্টারে গুঁজে ভেতরে ঢুকে উচ্ছ্বাসিত স্বরে বলল, “আরেহ মামা! শান্তি বর্ষিত হোক আপনের উপরে-নিচে সবখানে। আপনার সাথে সাক্ষাৎ করব বলে আইজ কয়ডা দিন ঘুম হয় না। তাই রাতে ঘুমাই।ʼʼ
এমপি সাহেবসহ নয়জন লোক বসে আছে বসার ঘরে সোফায়। বিভিন্ন রকম নাশতা, শরবত ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়েছে। জয় গিয়ে একটা সোফায় বসে পড়ল ধুপ করে। খালি গা। চেইনটা ঝুলছে বুকের ওপর। রূপোর তৈরি J অক্ষরটি জ্বলজ্বল করছে লকেট হিসেবে।

রিমি নড়বড়ে পায়ে এসে দাঁড়াল। জয় শীতল চোখে তাকিয়ে আদেশের স্বরে বলল, “ভেতরে যান।ʼʼ
রিমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে যায় দ্রুত। শব্দ এখনও তার সাহস হয়নি জয় ও হামজার এই নজরকে অগ্রাহ্য করার। শব্দ করে দরজা আটকানোর শব্দ আসে রিমির কক্ষ থেকে।
জয় কানে আঙুল দিয়ে গা মেলে বসে হাসল, “সব ঠিকঠাক, মামা?ʼʼ
সেই মুহুর্তে কোয়েল কোত্থেকে যেন দৌড়ে এসে খামচে ধরল জয়কে, ফুঁপিয়ে উঠল, “কোতায় থাকো? কোতায় থাকো তুমি? আমি দিখি না কেনু তুমাকে? আমার চলকেত কে এনে দেবে? বাবা তো আতে না চলকেত নিয়ে। এবার আছলে আমি দেখাই কলবো না। মামাও আসসে না কয়দিন। আমি কী খাব? কাছছাথে খেলবো? এখানে কিন্তু আমি আল থাকব না। হুহুহ্!ʼʼ

জয় খামচি খেয়েও হাসছিল বলে কামড় দিলো হাতের ওপর কয়েকটা। তবু বেয়াদব জয়ের হাসি থামছে না দেখে বড় হাতিয়ার ব্যবহার করল। থুতু ছিটালো জয়ের গায়ে, “তুপ। হাসবি না, থয়তান জয়। ছুপ করে সোনো আমার কতা।ʼʼ
দু এক ফোঁটা থুতু পড়ল জয়ের গায়ে। জয় গাল চিপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে টেনে তুলে উরুর ওপর বসালো। হেসে দুই হাতের বাঁধনে জড়িয়ে নিলো। তখনও কোয়েলের দূর্বল আক্রমণ চলছে তার শরীরে। একসময় কোয়েল ক্লান্ত হয়ে কোলের ওপর ঘুরে বসে গলা জড়িয়ে চেপে ধরে জয়কে। ঘাড়ে দু-একটা ছোট ছোট কামড় বসায়। জয় পিঠে হাত বোলায়, আবার ঝুঁটি নেড়ে জ্বালাতন করে।
এমপি সাহেব প্রসঙ্গে এলেন। নিখুঁত চতুরতার সঙ্গে বললেন, “কামরুলকে মেরে দিলা। ওর বউ-বাচ্চা দুই বেলা এসে কেঁদেকেটে যাচ্ছে আমার কাছে। কী করলা কও তো!ʼʼ

জয় শুধুই হাসল মেঝের দিকে চেয়ে। এমপি শুনতে চাইছেন–জয় তার স্ত্রীকে বাঁচাতে তাঁর সামনেও নিজে খুনের দায় নেবে। তখন তিনি বলবেন, বাপ্পী ও রবিউল কিন্তু এখনও জীবিত… কী হয়েছে সব জানেন তিনি।
জয় সেই সুযোগ দেবার লোক নয়। সে কিচ্ছু বলল না, শুধু হাসল। এমপি জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছিল এমন? একটা তাজা প্রাণ। এমনে পার্টি চলে? কামরুলরে মাইরচিস ক্যান, তুই?ʼʼ
-“বাপ্পী আর রবিউল কয় নাই? ওদেরকে ছাড়লামই যাতে সবটা আপনাকে কইতে পারে ভালোমতোন।ʼʼ
এমপি সাহেব জয়ের জাঁদরেলপনায় ক্রূর নজরে দেখলেন একবার ওকে। নাটকীয়তা থেকে বেরিয়ে চারপাশে নজর বুলাতে বুলাতে ঠোঁটে একটু অন্যরকম হাসি টেনে বললেন, “তোর ঘরওয়ালির অনেক প্রশংসা করছে ওরা। তারেই দেখতে বাড়ি বয়ে আসা। কই সে? খুব দুঃসাহসী, শুনছি।ʼʼ
জয় কোয়েলের কচি হাতদুটোর সাথে খেলতে খেলতে নিঃশব্দে হাসে, “বাড়ির বউকে এভাবে দেখতে চাওয়া ঠিক না, মামা। ব্যাপারটা ভালো না।ʼʼ

এমপি সাহেব ঝুঁকে বসে নিচু আওয়াজে বললেন, “খারাপ কিছু কি করছি এখনও? একবার দেখতে চাইতাছি। মামা বইল্যা ডাকোস, মামারে বউ দেহাবি না?ʼʼ
-“না, মামা। আর বইলেন না কথাডা। এইসব কথা বারবার উচ্চারণ করা ঠিক না।ʼʼ
এমপি সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন, “দেহো কী কয়। এই চ্যাংরা! তুই বুজস না আমি তোরে কত্ত ভালোবাসি? নইলে এমনে আইসে ছোট চ্যাংরাগো মতো আবদার করতাম? আর আমি জানি তুইও আমারে ভালোবাসিস। ভালোবাসায় মানুষ জান কুরবানী দেয় রে জয়।ʼʼ
-“ভালোবাসায় জান কোরবানী নেয়ও, মামা।ʼʼ
-তুই কার কুরবানী নিবি? জান কুরবানী দেয়ার নিয়ম ভালোবাসায়। আর তো বউ!ʼʼ
-“ভালোবাসায় জান কোরবানী দেয়, বউ দেয় না।ʼʼ

-“ওরে ওরেএ, রাজনীতি জুয়া রে জয়, জুয়া। সব কিছু বাজী ধরতে হয়। আইজ তর বউরে দিবি না, আমি আমার চ্যাংরাগোরে গোর কী বুজাবো? ওরা তর বউরে চায়।ʼʼ
জয় বসা থেকে একটু উবু হয়ে হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে শব্দ করে মুজেল চেপে ধরে রি-লোড করে বলে, “কোন ভ্যাড়াচ্চু_দায় চায়? কার মরণের চুলকানি উঠছে, মামাহ্?ʼʼ
-“কয়জনরে মারবি তুই?ʼʼ
-“বউ চায় কয়জন?ʼʼ
হেসে মাথা দোলান এমপি, “জয় রাজনীতির সবচাইতে বড় নীতি হইলো গিয়া–দুনিয়ার সব জাহান্নামে যাক তবু দলের সাথে বেইমানী করা চলবো না।ʼʼ
-“রাজনীতির সবচাইতে বড় নীতি হইলো–নীতির খেলাপি।ʼʼ
-“জয়, দলের এক চ্যাংরা মরছে, তুই জয় না হইলে কী হইতো ক তো, আব্বা? তোর এই বাড়ি এতক্ষণ খাঁড়া থাকতো এমনে? তুই জিন্দা থাকতি? অথচ আমি তোর সাথে দেখা করতে আইচি। আলাপ-আলোচনা করে কী হয় করা যাবে।ʼʼ

জয় ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসে, “আমাকে আপানার দরকার, মামা। আপনি জানেন আমি কী। কিন্তু আমার আপনাকে দরকার নাই। অবশ্য কথা আলাদা–যদি কামরুল আমার চাইতে বেশি….ʼʼ
-“না না না। ও কথা মুখেও আনিস না, আব্বা…. তুই আমার…ʼʼ
-“আপনিও আর মুখে আইনেন না আপনার ওই কথা।ʼʼ
এমপি সাহেব মুচকি হাসলেন। তিনি কি জানতেন না জয়ের সাথে আলাপ করে কী হবে? সব জানা তার। তিনি মাথা দুলিয়ে হেসে জয়ের কাধ চাপড়ে সাব্বাসি জানিয়ে বললেন, “আমার বাঘের বাচ্চা, তুই জয়। আমার ছেলে তুই। তোর কথাই রইল, যাহ্। তুই যখন চাস না, আমি বউমারে কোনোদিন দেখতেও চাইব না। কিন্তু এখন যা বলব, তা যে তোরে করতে হইবো, আব্বা।ʼʼ
জয় হ্যাঁ-না কিচ্ছু বলল না। কোয়েল বোধহয় ঘুমিয়ে পড়বে অল্পক্ষণের মধ্যে। সে পরম স্নেহে কোয়েলের পিঠে হাত বুলাতে লাগল। দুটো চুমু খেল।
এমপি সাহেব শুধান, “কই থেকে আসতেছিস?ʼʼ

-“এক কাস্টমারের বাড়ি গেছিলাম মাল পৌঁছাইতে।ʼʼ
-“কোনদিক দিয়ে বাড়িত্ ঢুকলি?ʼʼ
-“ডানদিক।ʼʼ
এমপি সাহেব হাসলেন, “বামে তোর শশুড়বাড়ির লোক খাঁড়ায়ে আছে।ʼʼ
জয় চোখ তুলে তাকায়, হেসে ফেলে নিঃশব্দে।
-“ওদের সাথে যাইতে হবে তোর।ʼʼ
জয় সামান্য শব্দ করে হেসে উঠল। এমপি সাহেব একটু সিরিয়াস হলেন, “না, জয়। যাওয়া লাগবে। রেপুটেশন ইজ মোর ইম্পর্টেন্ট।ʼʼ

-“এক খুনে পুলিশ চলে আসছে? দিনকাল এত ভালো চলে আসছে? এক রাইতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা পাই গেছে দ্যাশে? এইবার আমার মতো পাপীর কি তাইলে রোজ গোয়ামারা যাবে, মামা?ʼʼ
-“তোর বিশ্বাস আমি তোরে এক কামরুলের খুনে জেলে যাইতে দেব? তাও তো খুন তুই করিস নাই।ʼʼ
জয় ভ্রু জড়ায়। এমপি বললেন, “তোর নামে এফআইআর হইছে। গ্রেফতারি পরওয়ানা জারী হইছে। ওরা অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছে।ʼʼ
-“তাইলে দূরে দাঁড় করায়ে রাখছেন ক্যান? ছিঃ! আমার আত্মীয় তারা। আমার বাড়ির কাছে এসে এভাবে বিনা আপ্যায়নে ফিরে যাবে না। এএএ রতন, কাওছার…. আমার মেহমান আসছে, ভিতরে ডাক…ʼʼ
-“ওরা আজ ফিরে যাবে না, জয়। তোকে সাথে নিয়েই যাবে। শোন আমার কথা একটু ঠান্ডা মাথায়।ʼʼ
জয় শান্তচিত্তে মাথা দোলায়, “ওদেরকে আসতে বলেন ভেতরে। চা-নাশতা করুক। পাটোয়ারী বাড়ি ওদের নিজেরই বাড়ি।ʼʼ

দু’পাশে মাথা নাড়েন এমপি, “এক রাত হইলেও সেলের ভেতরে থাকা লাগবে তোর। তোর মনে হয় আমি তোরে বেশিদিন ভেতরে থাকতে দেব? অন্তত একটা ফটো তোলা অবধি ভেতরে যাওয়া লাগবে।ʼʼ
-“এক সেকেন্ডও না। আমি রাজধানী যাব। বড়সাহেব হাসপাতালে। অলরেডি ঘন্টা ছয়েক অভার।ʼʼ
এমপি একটু হাসলেন, “আমি অপেক্ষা করতেছিলাম সংবাদটা তুই কখন দিবি আমারে। দিবিই কি না!ʼʼ
জয় সেসব অগ্রাহ্য করে রিমিকে ডাকল, “ভাবেইই? আপনে রেডি? মামা, আমি বড়ঘরে যাব। গেলে চলেন। মিনিট বিশেকের কাজ আছে।ʼʼ
-“এখন না, জয়। আগে ঘুরে আয়। তারপর সেসব তো তোরই করা লাগবে। এখন আর পাপের বোঝায় নতুন ভার চাপাস না।ʼʼ

জয় উঠে দাঁড়াল। এমপি সাহেব হাত চেপে ধরে বসান, “শোন, তোর রেপুটেশন নষ্ট হলে তুই শেষ। জোর করে তুই পাবলিককে হাতের আন্ডারে রাখতে পারবি ঠিকই, তবে বেশিদিন না। জনগণের ভেতরে বিদ্রোহের পোকা বেশি থাকে। রেপুটেশন ইজ দ্য পিলার অফ পলিটিক্স।ʼʼ
-“আমার রেপুটেশন নষ্ট হবার চান্স নাই, মামা। কারণ জয় আমিরের রেপুটেশন কোনোদিন ক্লিন ছিলই না। আপনে কইতে চাইতাছেন আমি সেলের পেছনে দাঁড়াব, শালা-সম্বন্ধিরা দাঁত বাইর করে আমার ফটো তুলবে। তা কাইল সকালে নিউজ-ফ্রন্টলাইন হবে– দিনাজপুরের একজন বিশিষ্ট ছাত্র সভাপতি হোগা মারা খাইছে। মামা পাগল হওয়া যাবে না, পাগল হলেই সমস্যা।ʼʼ
-“কার এত সাহস? আমি না চাইলে কেউ তোর ছবি ছাপাবে না। কোনো টিভি চ্যানেলে দেখানো তো দূর।ʼʼ
-“চলেন বড়ঘরে যাই। ঘুরে আসি একবার। ওসব প্যাঁচাল বাদ। খুব বেশি দরকার পড়লে সরাসরি ক্রস ফায়ার করতে বইলেন। বন্দিত্ব আমার পোষায় না। হোক সে এক রাত অথবা এক সেকেন্ড।ʼʼ
-“তুই জানিস কী হইছে? তুই যতটা সহজভাবে নিচ্ছিস ততখানি সহজ নাই ব্যাপার। বিরোধী দলের একজন সিআইডি অফিসার তুমার পেছনে পড়ে আছে। ভাব এবার। এবার ত্যাড়ামি করলে থাপ্পর মারব একটা কান বরাবর।ʼʼ

-“সে কে? একবার দেখা হলো না তো! একটা কোলাকুলি তো অন্তত করা দরকার। বাহাদুর অফিসার।ʼʼ
-“আমার হেফাজতে আছে। আমি কতক্ষণ ঠেকাবো তাকে? তুই রিসেন্ট নয়ডা মার্ডার কেইসের সাসপেক্ট আর কয়েকটার প্রমাণ সিআইডির হাতে। পাগলামি তুই করতেছিস।ʼʼ
-“আচ্ছা, জেলে যাওয়াটা খারাপ কিছু না। বড়সাহেবকে নিয়ে দিনাজপুর ফিরি, তারপর দুইদিন বনভজন করে আসব শশুরবাড়ি। কোনো সমস্যা নাই।ʼʼ
-“জয়, কথা বেশি বলা ভালো না। তোর দলের এক চ্যাংরা, কী জানি নাম? ওইডা তো পুলিশ কাস্টডিত্।ʼʼ
-“কবির।ʼʼ
-“আইজ রাইত্রে যাবি, কাল সন্ধ্যা হইতে না হইতে, চব্বিশ ঘন্টার আগে তুইসহ সেও খালাস। তারপর বড়ঘর সাফ করাও লাগবে। তোরে জেলে রাখলে আমার চলবে?ʼʼ
জয় চুপচাপ কোয়েলকে নিয়ে উঠে গিয়ে তুলির রুমের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এলো। রিমির দরজায় নক করলে রিমি দরজা খুলতে দেরি করে।

সে অপেক্ষা না করে নিজের রুমে ঢোকে। আলমারী খুলল। তার ও হামজার রুমের দুটো আলমারী দুটো কাস্টমাইজ সিস্টেমের। নিচের দিকে লকারের নিচে আলাদা আরেকটা সেকশন আছে। সেখানে অস্ত্র রাখার হোল্ডার ছাড়াও আরেকটা ইন্টেরিয়র আছে। সেখানে তার বেশ কিছু প্রিয় ছোট‌-বড় অস্ত্র রাখা থাকে। সেখান খুব আশ্চর্যজনকভাবে একদম অন্যরকম একটা জিনিস রাখা আছে। একটা সাদা-গোলাপি রঙা ওড়না। সে সেটাই আগে বের করে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। এরপর লকার খুলে তিন বান্ডেল টাকা বের করল। লাখ দেড়েক হবে। তার রুমে এতটুকুই আছে। এরপর নতুন একটা সিগারের প্যাকেট, দুটো ছোট ছোট ছোরা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিলো।
শেষে একটা নতুন শার্ট গায়ে দিয়ে রিমির কাছে গেল। রিমির চোখমুখ বদলে গেছে। এমনিতেই প্রাণ ছিল, এখন প্রেতাত্মার মতো নিথর লাগছে। জয় এক টুকরো শুকনো হেসে বলল, “ঘরে মাল আছে কত?ʼʼ
রিমি আলমারী খুলে দিয়ে সরে দাঁড়ায়। জয় আরও কয়েক বান্ডেল নিলো সেখান থেকে। রিমিকে বলল, “তুলিকে সাথে নিয়ে যাবেন আপনি।ʼʼ

রিমি আঁৎকে ওঠে, “আপনি সাথে যাবেন না?ʼʼ
জয় হেসে ফেলল, “বাপরে! এমন ভাব করছেন যেন আমার সঙ্গ আপনার জন খুব নিরাপদ, আরামদায়ক? ভুলবেন না, ভাবী-দেবর হিসেবে আমি-আপনি দুঃসম্পর্কের লোক। আমদের বনিবনা ভালো না।ʼʼ
রিমি ব্যাকুল স্বরে বলে, “রসিকতা করবেন না। গা জ্বলে আমার। আপনি সাথেই যাবেন। কী বানিজ্য পড়ে গেছে এমন? আপনি এখনই যাবেন। আমি…ʼʼ
-“না। আমি পরে আসব। আপনারা যাবেন…আমি ব্যবস্থা করে দিয়েই মরব। এইটাই তো ডিউটি জয়ের।ʼʼ
রিমির কি গলা ভেঙে এলো? সে কেমন যেন জয়ের কাছে নিজেকে ঢেলে দিলো আজ, “আপনার কতটা দেরি হবে? বেশি দেরি না হলে আমি অপেক্ষা করব। কার সাথে যাব আমরা আপনি ছাড়া?ʼʼ

-“আমি চিরকাল থাকব না আপনাদের সবাইকে টেনে নিয়ে বেড়ানোর জন্য। আমি ছাড়া চলতে শেখেন। উপকার আপনাদের। কোনো সমস্যা হবে না। বিশ্বস্ত লোক নিয়ে যাবে।ʼʼ
আকুতির মতো শোনায় রিমির স্বর, তা গলা থরথর করে কাঁপে, “আপনার ভাই আপনাকে না দেখলে আরও অসুস্থ হবে।ʼʼ

জয় অদ্ভুত হেসে বেরিয়ে যায়। রিমির কেমন একটা অস্থির লাগল। রিমি হু হু করে কেঁদে উঠল আবার। জয়কে তার চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে করে। বিয়ের পর সবচেয়ে বেশি লড়াই সে যে লোকটার সাথে করেছে, সেই লোকটা তার দ্বিতীয় ভরসাস্থল। তার স্বামী হাসপাতালে, জানা নেই কী হাল! রিমি এই চলতিপথে কী করে নিজেকে সামলাবে, যদি জয় আমির সাথে না থাকে, ধমকে চুপ না করায়!
কিন্তু জয়ের হাতে সময় নেই। তাকে প্রস্তুত দেখে এমপি সাহেব বড় প্রসন্ন হলেন। তার এক ইশারায় মিনিট কয়েকের মধ্যে বৃষ্টির মতো ঝমঝমিয়ে আইন কর্মকর্তারা এসে ভরে গেল পাটোয়ারী বাড়ির ড্রয়িং রুম।
এরা কোথায় ছিল এরকম জটলা বেঁধে? সে এতটাই আনমনে, ভাঙা চিত্তে ঘোড়াহাঁট থেকে ফিরেছে, তার চতুর চোখদুটো নিমজ্জিত ছিল তখন অন্য জগতে। এমনকি তার ছেলেরাও কিছু টের পায়নি। জয় কিছু বোঝে, একটু দ্বিধায় পড়ে, তারপর মাথা ঝুঁকিয়ে হাসে।

একজন হাতে হাতকড়া পরাতে লাগল, আরেকজন তল্লাশি শুরু করল। পিস্তল, ছোরাসহ বেশ কিছু অস্ত্র এক নিমেষে বেরিয়ে এলো। জয় সিগারের প্যাকেটটা নিতে দিলো না।এমপি সাহেব কপাল টিপলেন। একটুও ভয়ডর নেই কোথাও! জয় তার কাছে এক রত্ন বৈকি! তবু…
টাকা গুলো কর্মকর্তাদেরকে অবাক করল। জয় বলল, “ওইগুলা সাথে নেন। আপনাদের জন্যেই। তোহ্ফা, তোহ্ফা। পকেট গরম তো মন নরম। ঠিক না, স্যার?ʼʼ

অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ৭৬

ইন্সপেক্টর কটমট করে তাকায় এমপির দিকে। এমপি চোখের ইশারায় থামান। রিমি ও তুলি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রিমি অন্তত কখনও এ বাড়ির কাউকে পুলিশের হাতে যেতে দেখেনি। সে বুঝতে পারে না এসব কী হচ্ছে। তার স্বামী কি দূর্বল হয়ে পড়েছে? কী থেকে কী হচ্ছে, চলছে? রহস্যময় লাগে তার, সাথে ভয়াবহও।
ছেলেরা বাকহীন হয়ে চেয়ে রইল। হাত কিড়মিড় করছে কেউ কেউ। জয় ওদের পিঠ চাপড়ে বলল, “বড়ভাবী আম্মা আর আপাকে পুরান ঢাকা নিয়ে যা। আমি আসছি। মামা, একটা গাড়ি দ্যান ওদেরকে।ʼʼ
এমপি বাধ্য ছেলের মতোন তীব্র বেগে মাথা নাড়ে, “ওসব চিন্তা তোর ক্যান? ওসব আমার জিম্মা।ʼʼ

অবরুদ্ধ নিশীথ পর্ব ৭৭ (২)