অবেলায় তুমি আমি পর্ব ২

অবেলায় তুমি আমি পর্ব ২
লেখিকা- খেয়া

আম্মু যা বলল তা শুনে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেলো।
ওরা নাকি এখন আমাকে ওদের বাড়ির বড় ছেলে আদ্রর বউ করতে চাই।
আমাকে কী ওদের পুতুল মনে হয়।আম্মু এসব কী হচ্ছে।
— শ্রীয়া,প্লিজ।আমি বুঝতে পারছি না ব্যাপারটা।আমি ওদের সাথে কথা বলব।
— তোমার যা খুশি কর। আমি আর নিতে পারছিনা এসব।

পরেরদিন ভার্সিটি শেষ করে রিক্সার জন্য দাড়িয়ে ছিলাম। তখনই একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাড়ালো।
গাড়িটা রুদ্রর ছিল।জানালার গ্লাস নামিয়ে আমাকে গাড়িতে উঠতে বলল।আমি না বলে দিলাম।
— লিসেন,শ্রীয়া।রাস্তার মধ্যে সিনক্রিয়েট করতে বাধ্য করোনা।
“আমিও কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠলাম।”
–আমরা কোথায় যাচ্ছি?
— অবিয়েসলি তোমার সাথে লং ড্রাইভে না।
— আপনি কি সোজা কথা বলতে পারেননা।
— না পারিনা।
–আচ্ছা,আদ্র কে হয় আপনার।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— আমার কাজিন আর বেস্টফ্রেন্ড। আচ্ছা তুমি ওর কথা কেন জিঙ্গেস করলে।
— আপনার সাথে যে আমার বিয়ে টা ক্যান্সেল হয়ে গেছে,জানেন।
— হুম।
— আপনার দাদী এবার আদ্রর সাথে আমার বিয়ে দিতে চান।
–What?
— আপনাদের আমাকে ঠিক কী মনে হয় বলুনতো।একজন রিজেক্ট করছেন তো আরেকজনের কাছে পাঠাচ্ছেন।
— শ্রীয়া,তোমার বিয়ে শুধুমাত্র আমার সাথে হবে।
— আমি আপনাকে বিয়ে করবনা।
— আদ্রকে বিয়ের কথাও ভুলে যাও।ছোটোবেলা থেকেই নিজেই সবচেয়ে সেরা জিনিসটা আমি সবার আগে ওর হাতে তুলে দিতাম।নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা ওকে দিয়ে দিতেও দুবার ভাবতাম না। কিন্তু তোমার ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করব না আমি।
— আমি কি আপনার নিজস্ব সম্পত্তি নাকি।
— অবিয়েসলি।

উনি আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
আমার মাথায় আপাতত একটাই চিন্তা।আমার জন্য না উনাদের মাঝে ঝামেলা হয়।

বিকেলে একটু বাইরে দিয়েছিলাম। এসো দেখি বাসায় অনেক লোক।
আমার মামারা এসেছে।তাদের দেখো আমার মুখে হাসি ফুটল।
— কিরে পিচ্চি কই গেছিলি।
কথাটা বলল আমার মামাতো ভাই ফারান। এই ছেলেরা আমার প্রতি বেশ দুর্বল।ও নিশ্চয় আমাকে সাহায্য করবে বিয়েটা ভাঙতে।

অবশেষে ফারান ভাইকে সব বললাম।আমার বিয়ের কথা শুনে ভাইয়া বেশ কষ্ট পেলো।
হঠাতই ফারান ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরল আর বলল–
— শ্রীয়া, প্লিজ তুই এই বিয়েটা করিস না।আমি যে তোকে ছাড়া বাচতে পারবনা।
” আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভাইয়া চলে গেলো।যা বাবা ভাবলাম কী আর হলো কী। আমার এখন অবশ্যই মাথায় পানি ঢালা উচিত।”

— কী ব্যাপার রুদ্র,সবাইকে এভাবে একসাথে ডাকার কারন কী?
— বাবা,তোমাদের সাথে আমার খুব জরুরী কথা আছে।
— কী কথা।
— আমি শ্রীয়াকে বিয়ে করতে চাই।
— এসব কী,রুদ্র,কালই তো বললে যে তুমি ওকে বিয়ে করতে চাও না।
— মা,সেটা বলেছিলাম কারন তখনও আমি ওকে দেখেছিলাম না।
— তার মানে ওকে দেখে তোর ভালো লেগেছে বলেই তুই ওকে বিয়ে করতে চাইছিস।
— হুম।
— তাহলে যদি বিয়ের পরে ওর আবার অন্য কাউকে ভালোলাগে তখন।
–দাদী!
— অনেক হয়েছে, যে যার কাজে যাও।
” দাদীর কথামতো সবাই চলে গেলো।”
— এখন কী করবি,ভাইয়া।
“রিদিতার কথার উত্তর মা দিয়েই রুদ্র বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
ওদিকে রুদ্রর কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে ওর দাদী।এ ছেলে যে বড্ড বউ পাগল হবে সেটা তিনি বুঝে গেছেন।”

আজ দুটো ক্লাস গ্যাপ আছে বলে ক্যান্টিনে বসে আছি।সাথে আছে আমার গুনধর বেস্টফ্রেন্ড রাহা।
কোথায় আমাকে শান্তনা দিবে না করে সব কথা শুনে ওর হাসি যেন থামছেনা।
— কী রে শ্রীয়া,আমার কপালে একটাও জোটেনা আর তোর এতগুলো।একটা ধারদে না বান্ধবী।বিশ্বাস কর কাশফুল দেখে এসেই ফেরত দিয়ে দিব।
— তবেরে–
“হঠাতই আমার ফোনটা বেজে উঠল।আননোন নাম্বার বলে প্রথমে ধরিনি।বারবার ফোন করায় বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরলাম।”
— শ্রীয়া!
— কে?
— তোমার হবু বর।
— সেটা আবার কে।
— রুদ্র।
— আপনি আমার নাম্বার কই থেকে পেলেন।
— সেটা তোমার না জানলেও চলবে।তোমার ঐ মামাতো ভাই কোন সাহসে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
— আপনি কী করে জানলেন?
— লিসেন শ্রীয়া,আমার প্রাইভেট প্রোপার্টিতে কেউ হাত লাগাক সেটা আমার মোটেও পছন্দ না। সো বি কেয়ারফুল।
— যা বাবা কেটে দিলো।যাইহোক আমারই ভালো।কিন্তু উনি কী আমার ওপর নজর রাখছে।
তখনই আম্মু ফোন করে বলল রুদ্রর দাদী নাকি আমার সাথে দেখা করতে চাই।উনি আাবার কী বলবেন।ধুর এত টেনশন নিয়ে বেচে থাকে যায় নাকি।

বিকেলবেলা–
আমি রুদ্রদের বাড়িতে ওর দাদীর সামনে বসে আছি।
হঠাতই উনি আমায় জিঙ্গেস করলেন আমি রুদ্র আর আদ্রর মধ্যে কাকে বিয়ে করতে চাই।
” যে আমি দুটো জামার পার্থক্য করতে হিমশিম খায় সে আমাকে নাকি এখন দুটো লোকের পার্থক্য করতে হবে।”
আমিও সরাসরি বলে দিলাম
–আমি রুদ্রকে যাই চিনি আদ্রকে তাও চিনি না।
— আমার নাতি কী দেখতে খারাপ।
— একদমই না।
— তাহলে কী তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
— না,না।আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই।
— তাইলে রুদ্রকে বিয়ে করতে না চাওয়ার কারন কী?
— উনি আমাকে এখনো সেদিনের জন্য সরি বলেননি।
— সরি! মানে।
— বলছি

ফ্ল্যাশব্যাক—-
আজ একটাও রিক্সা পাচ্ছি না কেন।ধুর, কত লেট হয়ে গেলো।
আরে, ঐতো একটা রিক্সা দেখা যাচ্ছে।
— এই, মামা,।
ধুর আমি এগিয়ে যায়।রাস্তা ফাকা দেখে একপ্রকার দৌড়েয় রিক্সার দিকে যাচ্ছিলাম।তখনই কোথা থেককে একটা গাড়ি আমার সামনে এসে বেশ জোরে ব্রেক কসল।আমিও ছিটকে পরে গেলাম।একটা পাথরে লেগে বেশ খানিকটা হাতও কেটে গেলো।
আমিও রাগে সেই পাথরটা ছুড়ে গাড়িটার একটা গ্লাস ভেঙে ফেললাম।
তখনই গাড়ি থেকে নেমে এলো একটা সুদর্শন পুরুষ।আমিও বসে বসে ক্রাশ নামক বাশ খাচ্ছিলাম।
তখন উনি আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন– উঠে এসো।

অবেলায় তুমি আমি পর্ব ১

— আমিও ঐ হাতটা ধরার লোভ সামলাতে না পেরে উঠে এলাম।
— তোমার হাতটা তো কেটে গেছে।চলো ব্যান্ডেজ করে দিই।
— লাগবেনা।আপনি গাড়ি দেখে চালাতে পারেন না।
— আসলে আমি খেয়াল করনি।তাছাড়াতুমি রাস্তায় দৌড়াচ্ছিলে কেন?
— আচ্ছা, সরি বলুন তাইলেই সব ঠিক।
— আমি কেন সরি বলব।দৌড়াচ্ছিলে তুমি,কাচ ভাঙলে তুমি আর সরি বলব আমি।
— অবশ্যই।
— লিসেন রুদ্র কখনো কাউকে সরি বলে না।
” উনার একটা ফোন আসায় উনি চলে গেলেন।
ফ্ল্যাশব্যাকশেষ।
— এগুলো তো আমি ভুলেই গেছিলাম।সেদিন উনাকে দেখেই আবার সব মনে পড়ে গেলো।
“হঠাতই কেউ হেসে উঠল। হয়ত রুদ্রর বোন হবে”
— এই রিদিত।রুদ্রকে ডেকে আন তো।
— আচ্ছা দাদী
” উনি আবার এখানে এসে কী করবে।”

— এই রুদ্র,কান ধর।
— মানে?
— কান ধরে ওকে সরি বল।
— তুমি একটা সরির জন্য এমন করলে।
আচ্ছা বাবা সরি।আর ফিউচারের জন্য একশটা সরি এডভ্যান্স।
আমি শুধু মুচকি হাসলাম।আমি কি এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাবো।কিন্তু ফারান ভাইয়া—

রুদ্র আমাকে বাসায় রেখে গেছে।লোকটা অবশ্য এতোটাও বোরিং না।ওর বাড়ির সবাই ও বেশ ভালো।বিশেষ করে ওর বোন।আমার কোনো ভাইবোন নেই তবুও রিদিতাকে নিজের বোনের মতোই লাগছিল।
হঠাতই আমার ফোনটা বেজে উঠল।মামি ফোন করছে,তাও এখন।
— হ্যালো,মামি
— শ্রীয়া,ফারান—
মামি আর কিছু বলতে পারল না। তবে কি ফারান ভাইয়ার কিছু হয়েছে—

অবেলায় তুমি আমি শেষ পর্ব