অর্ধাঙ্গিনী দ্বিতীয় পরিচ্ছদ পর্ব ১৪

অর্ধাঙ্গিনী দ্বিতীয় পরিচ্ছদ পর্ব ১৪
নুসাইবা ইভানা

জিয়ান নয়নার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
“হাত ছাড়ুন।”
“তোমার হাত ছাড়ার জন্য ধরিনি।”
“দেখুন, এসব ফিল্মি ডায়লগে আমি আর গলবো না।”
“নয়না, তোমার মনে হচ্ছে এসব ফিল্মি ডায়লগ?”
“দেখুন, আমাকে মু’ক্তি দিন আপনি। আপনি আর আপনার ভালোবাসা—কোনোটাই আমি চাই না।”
“জান, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না!”

“বিশ্বাস! আপনার মুখে ‘বিশ্বাস’ শব্দ শুনে আ’ত্ম’হত্যা করেছে। এতক্ষণে তার দাফনও হয়ে গেছে।”
“বাটার মাশরুম, তুমি কীভাবে আমাকে এতটা ভুল বুঝতে পারো! আরেহ, আমি পইপই করে বলছি তো, এসব কিছুই আমি করিনি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে হত্যা করার আগে নিজেকে হত্যা করব।”
“হাত ছাড়ুন।” নয়না থানায় এসে কেস তুলে নিল।
অন্তর থানায় পৌঁছাতে-পৌঁছাতে ততক্ষণে জাহিন, জিয়ান—দুজনেই মুক্ত।
অন্তর নয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “ভাবি, এটা আপনি কী করলেন!”
“আমার যেটা ভালো মনে হয়েছে, সেটাই করলাম। যে আপনাকে মৃত দেখতে চেয়েছিল, তার চোখের সামনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই তার জন্য শাস্তি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভাবি, আপনি আসল কাহিনি কিছুই জানেন না। আপনার জন্য তীরে এসে তরী ডুবে গেল।”
“আমি আসল-নকল কিছুই জানতে চাই না, ভাইয়া। আমি এসব থেকে মুক্তি চাই।”
“ভাবি, আপনাকে জিয়ান ভাই হত্যা করার চেষ্টা করেনি।”
“আপনার কি আমাকে অন্ধ মনে হয়? নাকি নির্বোধ মনে হয়?
আমি নিজের চোখে দেখেছি। ধরে নিলাম, আমার দেখার ভুল। কিন্তু ওই শার্ট, ওই পারফিউমের স্মেল, ওই জুতো—এসবও কি ভুল?”

“ভুল না। তবে ভুল বোঝানোর সূক্ষ্ম কৌশল। জাহিনের প্রি-প্ল্যানড ছিল এসব। জিয়ান ভাইয়ের ব্যবহৃত শার্ট থেকে শুরু করে সবকিছু ও ব্যবহার করেছে। যাতে চট করে আপনি দুজনকে আলাদা না করতে পারেন।”
“কেন করবে এসব! মোটিভ লাগে তো কোনো একটা। আমার সঙ্গে কী শত্রুতা জাহিন ভাইয়ের?”
অন্তর সংক্ষেপে সবটা খুলে বলল।
নয়না স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছু সময় পর বলল, “আমি বাসায় যাব। পরে কথা হবে, ভাইয়া।”
নয়না গাড়িতে উঠে বসে বলে, “ড্রাইভার, বাসায় চলো।”
জিয়ান বলল, “কোন বাসায় যাব, জান?”
নয়না পাশের সিটে জিয়ানকে দেখে বলে, “আপনার সাহস হল কী করে এখানে আসার? কে আপনি?”

“আমি তোমার প্লেন ড্রাইভার।”
“আমি বিশ্বাস করি না।”
“আরেহ, ইয়ার, আসলেই আমি তোমার প্লেন ড্রাইভার।”
“গাড়ি থেকে নামুন।”
জিয়ান নয়নার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে এনে নয়নার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে, “আমার হৃদয়ের এই আকুলতা কি তুমি অনুভব করতে পারছ না, বাটার মাশরুম? তুমি কি আমার ব্যাকুলতায় ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছ না?”
নয়না শক্ত করে জিয়ানকে জড়িয়ে ধরল। নয়না অনুভব করতে লাগল তার প্লেন ড্রাইভারকে।
জিয়ান নয়নার মাথায় চুমু খেয়ে বলে, “অর্ধাঙ্গিনী, তুমি কি তোমার মানুষটাকে চিনতে পারলে?”
নয়না দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। জোরে-জোরে নিশ্বাস নিতে লাগল। নয়নার চোখের কোণে অশ্রু টলটল করছে।

জাহিন এসে বলে, “জান, আমার ওপর এখনো অভিমান করে আছো? তুমি কি এখনো জানো না, এসব কিছু জাহিনের কাজ? জাহিনের জন্য আমাকে কষ্ট দিচ্ছ কেন, জান?”
নয়না ঘুরে ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল জাহিনের গালে।
“এটা কী করলে!”
“যা আমার আরো আগেই করা উচিত ছিল। লজ্জা লাগে না আপনার? সম্পর্কে আমি আপনার বড় ভাইয়ের বউ। নিজের ভাবির দিকে কুদৃষ্টি দেওয়ার আগে আপনার চোখ দুটো নষ্ট কেন হলো না? এত জঘন্য মানুষ কী করে হতে পারে?”

“এসব কী বলছ, সুনয়না? আমি তোমার প্লেন ড্রাইভার—জিয়ান রেজা চৌধুরী।”
“চুপ, একদম চুপ! আর একটাও কথা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই না। সেদিন আমাকে বোকা বানাতে পেরেছিলেন। কারণ আপনি আমাকে ওইটুকু সময়ও দেননি, যাতে আমি অনুভব করতে পারি। আপনার জন্য আমি আমার প্রিয় মানুষটাকে ভুল বুঝে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। আপনাকে আমি ছাড়ব না।” বলেই আরো একটা চড় দিতে গেলেই জাহিন নয়নার হাত ধরে বলে, “তোর সাহস কী করে হয় জাহিন চৌধুরীর গায়ে হাত তোলার? জাহিন চৌধুরী চাইলে তোর মতো নয়নাকে পিষে ফেলতে পারে। নেহাতই ভালোবাসি বলে।”
জিয়ান এসে জাহিনের গালে কষিয়ে এক চড় দিয়ে বলে, “তুই আমার ভাই না হলে, তোর হাত আমি কেটে ফেলতাম। যে হাত দিয়ে আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করেছিস, সে হাত আমি গুড়িয়ে দিতাম।”

জাহিন জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার সঙ্গে সামান্য একটা মেয়ের জন্য শত্রুতা করতে এসো না। আমি যদি একবার ভুলে যাই তোমার সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক আছে, তাহলে এই পৃথিবীতে তোমার অস্তিত্ব থাকবে না।”
জিয়ান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জাহিনের দিকে। এই সেই ভাই, যার জন্য নিজের কত শত শখ বিসর্জন দিয়েছিল। এই সেই ভাই, যার প্রতিটি ইচ্ছা সে পূরণ করত। এই কি সেই ভাই, যার দোষ নিজের কাঁধে নিত সব সময়? জিয়ান হতাশ কণ্ঠে বলল, “আমার জাহিন কবে এত বড় হয়ে গেল! আর কবেই বা মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে উঠল?” জিয়ানের চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে।

অন্তরকে আসতে দেখেই জাহিন চলে গেল। হঠাৎ একটা বাইক এল, জাহিন মুহূর্তেই ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অন্তর বলল, “ভাইয়া, আপনি কষ্ট পাবেন না। কিছু মানুষ ভালোবাসার যোগ্য নয়।”
“আমার ভাই এটা! আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।”
“আরো অনেক কিছু মানতে হবে আপনাকে। জাহিনের কালো অতীত খুব শিগগিরই সবার সামনে আসবে।”
“মানে?”
“আজ রেস্ট করুন, অন্যদিন বলব।”
অন্তর চলে যেতেই জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে, “তোমাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন। প্লিজ, ছেড়ে যেও না।”
নয়না জিয়ানের চোখে চোখ রাখতেই জিয়ান নয়নাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।
নয়না মৃদু স্বরে বলল, “এটা রাস্তা।”
জিয়ান নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে বলে, “তাহলে বাসায় চলো। প্লিজ, মানা করবে না। আমাকে পেয়ে বসেছে একলা থাকার অসুখ। তুমি পাশে থেকে আমার অসুখ সারিয়ে দাও।”
নয়না চুপ করে রইল, কোনো উত্তর দিল না।

সায়না বলল, “তুমি কি শিওর আমরা লন্ডনে সেটেল্ড হব?”
“তুমি কি আমার সঙ্গে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকতে পারবে না?”
“দেখো, পারব না তা নয়। তুমি সঙ্গে থাকলে আমি যেকোনো স্থানে থাকতে প্রস্তুত। কিন্তু এভাবে কাউকে কিছু না বলে, চলো যাব—চোরের মতো?”
“কাকে বলব বলো? এই পৃথিবীতে আমার নিজের বলতে তুমি ছাড়া আর কে আছে? আমাকে ভালোবাসবে, আমাকে জানার অপেক্ষা করবে—এমন কে আছে আর বলো?”

“নাহিদ ভাইয়া। জিয়ান ভাইয়ার এই অবস্থায় তাকে একা ফেলে চলে যাবে?”
“জিয়ানের আর কিছু হবে না। সুনয়না যখন ফিরে এসেছে, তখন জিয়ানকে নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই।”
“ওই মেয়েকে কী করে এত ভরসা করো! গত শুনানিতে কী সাক্ষ্য দিল দেখলে না! আমার তো মনে হয় ওই মেয়েই নষ্টের গোড়া। চরিত্র খারাপ। কোনো ছেলের সঙ্গে ঢলাঢলি করে এসেছে—খোঁজ নিয়ে দেখো। এখন আসছে আমার ভাইকে ফাঁসাতে। চরিত্রহীন মেয়ে কোথাকার!”

“কারো ব্যাপারে না জেনে এত বাজে মন্তব্য করা ঠিক নয়, সায়না। চুপ করো। আর সুনয়না এমন মেয়ে নয়।”
“কেমন মেয়ে, আমার বোঝা হয়ে গেছে। পাহাড় থেকে পড়ে কেউ বেঁচে ফিরে? আষাঢ়ে গল্প বললেই মানুষ বিশ্বাস করবে? সব বাদ দাও—একটা মেয়ে মানুষ। তাও ওর রূপ-যৌবনে কোনো কমতি নেই। সেই মেয়ে এত মাস কোথায় ছিল? ওর বোনটা এক বে*শ্যা, আর এই মেয়ে আরেক।”

অর্ধাঙ্গিনী দ্বিতীয় পরিচ্ছদ পর্ব ১৩

পুরো কথা শেষ করার আগেই সায়নার গালে সপাটে একটা চড় পড়ল। অনিকেত চিৎকার করে বলল, “আর একটাও বাজে কথা বললে, তোমাকে আমি শেষ করে ফেলব। আমার বোনের সম্পর্কে এত বাজে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোমাকে?”

অর্ধাঙ্গিনী দ্বিতীয় পরিচ্ছদ পর্ব ১৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here