অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭২

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭২
নুসাইবা ইভানা

নির্জন রাস্তা। দূরে দু’একটা কুকুরের ডাক, গলির বাতির নিভে আসা আলো, আর সেই নিস্তব্ধতায় জিয়ান নয়নাকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ।তালুকদার ম্যানশনে।
নয়না চুপচাপ জিয়ানের বক্ষে পরে রইলো৷ এখানেই যেনো নয়নার শান্তি নিহিত রয়েছে। জিয়ান নয়নাকে নিজের বক্ষে আগলে নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে হাঁটছে। আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে, শীলত হাওয়া বইছে৷
বাতাসে নয়নার কপালের চুলগুলো উড়ছে ৷ কপালের ছোট চুলগুলো ছড়িয়ে পরলো মুখজুড়ে। কি মায়াবী লাগছে নয়নাকে এক পলক তাকালো জিয়ান। হঠাৎ আকাশ কাঁপিয়ে ঝুম বৃষ্টি নামলো।
বৃষ্টি ফোঁটার প্রথম ছোঁয়া নয়নার গালে পড়তেই নয়না ধীরে,ধীরে চোখ মেলে তাকাল।চার চোখের মিলন ঘটলো৷

“তুমি ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলে?
“আমি যে ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করে রেখেছি সেটা তোমাকে কে বলল! আমি ভালোবাসা নিচ্ছিলাম চোখ বন্ধ করে।
নয়না চোখ বন্ধ করে, মাথা রাখল জিয়ানের বুকে। ফিসফিস করে বলল,চলো ভিজি আজ প্রেমের বৃষ্টিতে।
“তুমি জানো বৃষ্টি ঝড়ে পরার শব্দটা খুব মিষ্টি লাগে যখন তোমার হৃদয়ের বেসামাল হার্ট বিট শুনতে পাই।
ঝুম বৃষ্টিতে রাতের শেষ প্রহরে প্রেমের জোয়ারে ভাসছে কপোত-কপোতী । জিয়ান আলতো করে নয়নার কপালে চুমু দিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভিজে যাও , সমস্যা নেই। আমি তো আছি তোকে শুকনো রাখতে।
“নয়না হেসে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি না থাকলে এই রাত, এই বৃষ্টি, সব ফিকে লাগতো, ভুতুরে লাগতো চারপাশ। । এখন মনে হচ্ছে এইটুকু রাতেই সারাজীবন পার করে দেওয়া যায়।
নীরব রাস্তায় শুধু বৃষ্টির শব্দ, আর দুজন মানুষ। একজন ভালোবাসায় ভিজে যাচ্ছে আরেকজন ভালোবাসা সিক্ত হচ্ছে।

ঘুমন্ত শহর। আকাশের কোলে জেগে ওঠে অজস্র মেঘ, সাথে ঝড়ছে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। রাস্তাটা ফাঁকা। ল্যামপোস্টের আধো আলোর ছায়ায় চোখে চোখ পরছে একে অপরের৷ দু’জনের চোখে চোখে কথা আদান প্রদান হচ্ছে। যে কথা মুখে বলা যায় না।
জিয়ান নয়নাকে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে। পায়ের নিচে ভিজে যাচ্ছে রাস্তা, আর বুকের ভেতর ভিজে যাচ্ছে উষ্ণ অনুভূতি।
নয়না মাথাটা আরো গভীর ভাবে জিয়ানের বুকের মাঝে এলিয়ে দিলো ৷ শুনশান নিরবতা, কি দারুণ নিঃশব্দতা তবুও কি এক অদ্ভুত অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে দুজনের দেহ মন জুড়ে।
বৃষ্টি পানি নয়নার চুলে জমে ঠোঁটের কোণ বেঁয়ে বিন্দু বিন্দু ফোঁটা ঝরে পড়ছে।

জিয়ান নয়নাকে দাঁড় করিয়ে দিলো৷ নয়নার ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছে বৃষ্টির পানি৷ জিয়ানের শার্ট ভিজে লেপ্টে আছে শরীরে। নয়নাকে একটানে নিজের বাহুতে নিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে দেবো শুধু আমি। বলেই নয়নার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো৷ ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ফের নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে আসলো। দারোয়ান গেট খুলে দিতেই জিয়ান নয়নাকে নিয়ে সোজা নয়নার রুমে চলে গেলো৷ ভেজা শরীর, উষ্ণ মন, দুজনের ব্যাকুলতা যেনো হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৃষ্টি ঝমঝম করে পড়ছে জানালার কাঁচের ওপারে। জিয়ান আলতো হাতে দরজার লক করে দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে নয়নার দিকে৷ ফর্সা শরীরে লেপ্টে আছে ভেজা নীল শাড়ী।

“নয়না দু’কদম পিছিয়ে গেলো।
” জিয়ান নয়নাকে নিজের বাহুতে আগলে নিলো৷ নরম কন্ঠে বলল,বাটার মাশরুম তোমার ভেজা গায়ের গন্ধ নেশার মতো ঢুকে যাচ্ছে আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমি উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি।
চোখ বন্ধ করে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলো নয়না৷ তার মনে হচ্ছে কেউ তার হৃদপিণ্ড হাতুড়ি পেটা করছে৷ নয়নাে ঠোঁট ছুঁয়ে আছে জিয়ানের গলার কাছে। নয়না ঠান্ডায় কাঁপছে।
“জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
তুমি চোখ তুলে তাকাও জান, চোখে চোখ রাখো প্রেয়সী।
” নয়নার সাহস হচ্ছে না এই চোখে চোখ রাখতে। তবুও চোখ তুলে তাকালো। কি ছিলো ওই দৃষ্টিতে নয়নার জানা নেই! নয়নার কেমন নেশা ধরে গেলো। কারো চোখেও নেশা থাকে নয়নার জানা ছিলো না৷
“জিয়ান নয়নার থুতনিতে হাত রেখে তাকিয়ে রইলো,

ভেজা শাড়ি লেপ্টে আছে শরীর জুড়ে৷ চুলগুলো এলোমেলো, হয়ে ছড়িয়ে আছে৷ ঠোঁটগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে ঠান্ডায়, না কি জিয়ানের স্পর্শে?
“জিয়ান নয়নার কানে ফিসফিস করে বললো,
এত কাছে এসে থেমে যাও যায় বাটার মাশরুম?
“নয়না খামছে ধরলো জিয়ানের বুকের কাছের শার্ট৷শরীর কাঁপছে তার৷
“জিয়ান আরো গভীর ভাবে কাছে টেনে নেয় নয়নাকে। একে অপরের নিশ্বাস মিলিত হচ্ছে।
“নয়না চোখ বন্ধ করে নিলো।
হুট করেই জিয়ান নয়নার অধরে অধর মিলিয়ে দিলো৷
প্রথমে ধীরে। তারপর গভীর, লম্বা, শ্বাস চুরমার করে দেওয়া এক চুমু।
নয়না দু’হাতে খামচে ধরেছে জিয়ানের পিঠ।জিয়ান নয়নার কোমরে হাত রেখে আরো কাছে টেনে নিলো৷ নয়নার নরম, কাঁপা শরীরটা জিয়ানের বক্ষে মিশে গেলো।

বাহিরে ঝুম বৃষ্টি শব্দ, ভেতরে শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ।
ধীরে ধীরে জিয়ানের স্পর্শ গভীর হতে থাকলো, জিয়ান নয়নার গালে ঠোঁট রাখলো, তারপর গলায়
নয়না চোখ বন্ধ করে কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বললো,
“এইভাবেই ভিজে থাকতে চাই তোমার ছোঁয়ায়।
জিয়ান নেশালো কন্ঠে, বলল,
“বৃষ্টি বাইরে ঝড়ছে, আর তুমি শীতল করছো আমার হৃদয়? তুমি হৃদয়হরণী নাকি জাদুকর প্রেয়সী?
” নয়না উত্তর দিলো না। সেভাবেই মিশে রইলো জিয়ানের সাথে। জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে চলে আসলো৷ সরিয়ে দিলো ভেজা শাড়ী। বাহিরের ঝড়ের সাথে সাথে ভালোবাসার উষ্ণতায় ভেসে যেতো লাগলো দুজনে৷ এতো অপেক্ষা,যেনো এক নিমিষেই হারিয়ে গেছে জিয়ানের বক্ষে৷ ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিতে থাকলো একে অপরকে। “খানিকটা রাত আসুক জমতে থাকুক অপেক্ষা৷ তুমি এসে পূর্ণ করো শেষ রাতের ভালোবাসা”

সুন্দর একটা রাতের পরে, মিঠা, মিঠা রোদে জেগে উঠলো শহর৷ রাতের বৃষ্টি যেনো রোদের উজ্জ্বলতা আরো প্রখর করে তুলেছে। জানালার পর্দা ভেদ করে সে আলোর ঝলক খেলা করতে লাগলো নয়নার চোখমুখে।পিট পিট করে চোখ খুলে,নয়না নিজেকে জিয়ানের বক্ষে আবিস্কার করলো৷ রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেলো নয়নার মুখশ্রী। ঘুমন্ত জিয়ানের কপালো আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। এই মানুষটা এতো অদ্ভুত কেন! পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে শুধুমাত্র এই মানুষটাকে ঘিরে থাকতে ইচ্ছে করে কেন! নয়না মুখ ঢাকলো দু’হাতে৷ এতো দীর্ঘ অপেক্ষার পর এতো সুন্দর একটা রাত, যেনো সমস্ত মান অভিমান ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ভালোবাসার আদরে৷

“নয়না উঠে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলো৷ তখন বাজে বেলা বারোটা। নয়না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো৷
” জাহানারা বেগম বলল,ঘুম ভাঙ্গলো তোদের?রাতে জামাইকে কিছু খেতে দিয়েছিলি তো?
“নয়নার কান গরম হয়ে গেলো৷ কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,তুমি কি করে জানলে উনি এসেছে?
” সকালে যাওয়ার আগে দারোয়ান বলে গেছে৷ নাস্তা রেডি করছি জামাইকে নিয়ে আয়।
“নয়না এক দৌড়ে রুমে চলে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। কি লজ্জা কি লজ্জা।
” জিয়ান ততক্ষণে উঠে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছচ্ছিলো৷ এভাবে নয়নাকে আসতে দেখে বলে,কি হলো ডিয়ার বাটার মাশরুম? এ্যানি প্রবলেম?
“নয়না কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,বিগ প্রবলেম। আপনাকে কে বলেছিলো সারপ্রাইজ প্ল্যান করতে? আম্মু জেনে গেছে আপনি এসেছেন রাতে।

” জিয়ান নয়নার সামনে এসে বলে,তো!
“তো আবার কি! আম্মু আবার ওসব বুঝে যায়নি তো৷ আমি সবার সামনে কিভাবে মুখ দেখাবো? সব দোষ আপনার৷
” জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,আহাগো সোহাগি। স্বামীর আদর খেতে ভাল্লাগে। এখন আবার ড্রামা।
“সরেন একদম সহ্য হচ্ছে না আপনাকে৷
“সত্যি সরবো?
” একটু নড়ে দেখেন পা ভেঙে দেবো।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭১

“জিয়ান টুপ করে নয়নার কপালে চুমু দিয়ে বলে,একটু বেশিই উল্টোপাল্টা ভাবো তুমি৷আমার ড্রেস বের করে দাও। খু্ব খিতে পেয়েছে বৌ।
” নয়না জিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে,বলে ভালোবাসি আপনাকে মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।
“জিয়ান নয়নার নাক টেনে বলে, আহা আদুরে পিচ্চি বৌটা।
” নয়না কপাল কুচঁকে বলে,আমি মোটেও পিচ্চি না৷ কলেজে পড়ি হু।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৩