অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৪

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৪
ইয়াসমিন খন্দকার

নিঝুম মেঝেতে বসে আছে তার চোখ দুটো বন্ধ। সেই চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুপাত হয়ে চলেছে। অন্যদিকে বিছানায় বসে আছে আবরাজ। তার দৃষ্টি আনত। নিজের কাজে এখন তার বেশ আফসোস হচ্ছে। আবরাজ বুঝতে পারছে জেদের বশে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে। এভাবে নিঝুমের উপর জোর করে অধিকার বিস্তার করা উচিৎ হয়নি। এটা নিঝুমের অধিকার হরণ করেছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেমন পবিত্র তেমনি তাদের মিলনেও উভয় পক্ষের সম্মতির প্রয়োজন। আবরাজ ভাবল, নিঝুমের কাছে এবার এর জন্য ক্ষমা চাইবে। এই চিন্তা থেকে সে মেঝেতে নিঝুমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। অতঃপর অনুতাপের কন্ঠে বলল,”নিঝুম, আমি ভীষণ দুঃখিত। আমার উচিৎ হয়নি এভাবে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে..আমি স্বীকার করছি আমি ভুল করেছি। যাইহোক আমরা বিষয়টা নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নিতে পারি।”

নিঝুম এবার চোখ খুলে। তার চোখ একদম রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। রাগে ক্ষোভে সে আবরাজকে ধাক্কা দেয় যাতে আবরাজ পড়ে যায়। আবরাজ অবাক চোখে নিঝুমের দিকে তাকায়। নিঝুম গর্জে উঠে বলে,”ভুল! এটা আপনার ভুল। আপনি যা করেছেন তা কতটা জঘন্য আপনি জানেন? আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমায়..”
নিঝুম ডুকরে কেঁদে ওঠে। আবরাজ বলে,”প্লিজ, তুমি এভাবে কেঁদো না। বিষয়টাকে আর কঠিন করে তুলো না আমার জন্য।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিঝুম উঠে দাঁড়ায়। চোখের জল মুছে বলে,”অনেক সহ্য করেছি আমি আর না৷ একে তো আপনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন তার উপর আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। এটা হতে পারে যে, আপনি আমার স্বামী। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। তার থেকে বড় কথা, আমাদের সম্পর্ক তো আর ৪-৫ টা দম্পত্তির মতো নয়। আমাদের সম্পর্কটা কেমন সেটা আপনিও জানেন। তবু আপনি কিভাবে এত নীচ একটা কাজ করলেন?”
আবরাজ বলে,”আমি সবকিছু ঠিক করে দেব। আমি তোমার সাথে..তোমার সাথে সংসার করতে চাই নিঝুম। আমরা চাইলেই আমাদের সম্পর্কটা ঠিক করে নিতে পারি।”

“এত কিছুর পর আপনি কোন মুখে এসব কথা বলছেন? আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, আমার আত্মসম্মানকে আঘাত করে আপনি এহেন কথা বলতে পারেন না। আপনি আজ যা করলেন তার চরম মূল্য আপনাকে দিতে হবে৷ কি ভেবেছেন? এসব করে আমায় আটকে রাখবেন? পারবেন না। আমি এখনই এখান থেকে চলে যাব। আপনার সাথে আর এক সেকেন্ডও থাকার ইচ্ছা নেই আমার।”
বলে নিঝুম যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবরাজ তার পথ আটকে দাঁড়াল। বলে উঠল,”আমি তোমাকে কিছুতেই যেতে দেবো না।”
“আমার সামনে থেকে সরে দাড়ান। আমাকে আটকানোর আপনি কেউ নন।”
“নিঝুম!”

“চোখ রাঙাবেন না। আপনার এই চোখ রাঙানিতে আমি ভয় পাই না।”
আবরাজ নিঝুমকে শক্ত করে ধরে বলল,”আমাকে আরো খারাপ হতে বাধ্য করো না।”
“এর থেকে বেশি আর কত খারাপ হবেন আপনি? খারাপের আর কি বাকি রেখেছেন টা কি আপনি?”
“দেখতে চাও আমার আরো খারাপ রূপ? আমি চাইলে দেখাতেই পারি।”
নিঝুম বলে,”এভাবে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি আমার সাথে এত অন্যায় করতে পারেন না।”
“আমি কি পারি আর কি পারি না সেই ব্যাপারে তোমার কোন ধারণা নেই। ভুলে যেও না, তোমার পাসপোর্ট ভিসা সব আমার জিম্মায়। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন যায়গা পাবে না। আর যদি এরপরেও বেশি বাড়াবাড়ির চেষ্টা করো তো…”

“তো কি করবেন আপনি?”
“প্রয়োজনে তোমার পা ভেঙে বিছানায় ফেলে রাখবো। তবুও তোমায় আটকে রাখব নিজের কাছে।”
“ব্যস, ওটাই তো পারেন আপনি। আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমায় আঘাত দেয়া, এটাই আপনার কাজ। এসব করে নিজেকে পুরুষ বলে দাবি করছেন? আপনি কি ভেবেছেন আজ যেভাবে আমার উপর জোরজবরদস্তি করলেন তা আপনার পুরুষত্ব বাড়িয়েছে? না ভুল ভাবছেন আপনি। এটা প্রমাণ করেছে আপনি একজন কাপুরুষ, একজন রেপিস্ট!”

আবরাজ রেগে গিয়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। জোরে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নিঝুমের গালে। চিৎকার করে বলে ওঠে,”আমি কোন রেপিস্ট নই। আমি তোমার স্বামী।”
এটা যেন আগুনে ঘি ঢালার সমান ছিল। নিঝুম এটা মেনে নেয় না। সেও জোরে থাপ্পড় মারে আবরাজের গালে। আবরাজ চূড়ান্ত পর্যায়ের হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নিঝুমের দিকে। নিঝুম আবরাজের দিকে আঙুল তুলে বলে,”আমাকে এতোটাও দূর্বল ভাববেন না। আমায় আঘাত করলে তার বিপরীতে আঘাত করার ক্ষমতাও আমার আছে।”

নিঝুমের এই প্রতিক্রিয়া আবরাজকে ভীষণ রাগিয়ে দেয়। সে নিঝুমের সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে,”বেড়িয়ে যা আমার এপার্টমেন্ট থেকে। রাস্তায় গিয়ে পচে মর। আর নাহলে তোর ঐ নাগর ইমরানের কাছে যা। এটাই তো চাচ্ছিলি তুই তাই না? যা তোকে দিলাম সুযোগ। যা গিয়ে কত নষ্টামি করার কর।”
“মিস্টার আবরাজ!”
“চুপ। বেরিয়ে যা। এক্ষুনি বের হ।”
নিঝুম এহেন অপমান মেনে নিতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় আবরাজের এপার্টমেন্ট থেকে। নিঝুম বেরিয়ে যেতেই আবরাজ দরজা বন্ধ করে অন্ধকারে বসে থাকে ঘরের মাঝে। রাগে ফুসছিল সে।

এদিকে নিঝুম দৌড়াতে দৌড়াতে ইমরানের কফিশপে পৌঁছে যায়। ইমরান তখন ঐ কফিশপের মধ্যেই ছিল। নিঝুমকে আসতে দেখে সে বলে ওঠে,”নিঝুম, তোকে এমন লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে। তোকে কেন জানি ভীষণ অদ্ভুত লাগছে!”
আশেপাশে ভীড় দেখে নিঝুম কিছু বলে না৷ ইমরান সেটা খেয়াল করে বলে,”আমার সাথে ভেতরে চল। ভেতরে বসে প্রাইভেটলি কথা বলা যাবে।”
নিঝুম সায় জানায়। ইমরানের সাথে ভেতরে যায়। ইমরান নিঝুমকে পানি খেতে দেয়। নিঝুম সেই পানিটা খেয়ে নেয়। ইমরান জানতে চায়,”এবার আমাকে সবটা খুলে বল তো। কি হয়েছে? তুই হঠাৎ এই সময় আমার ক্যাফেতে এই অবস্থায় এলি কেন? তোকে তো খুব একটা ভালো লাগছে না। আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে তোর জন্য।”
নিঝুম নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,”সে অনেক ঘটনা। তোকে পরে সব খুলে বলব আমি। এখন তোর কাছে যদি কিছু সাহায্য চাই, তুই করবি তো?”

“অবশ্যই। আমি এখানে আছি কি করতে। তোর যা সাহায্য লাগবে তুই বল, আমি করার জন্য প্রস্তুত।”
“আমাকে এখানে কোথাও একটা মাথা গোজার ব্যবস্থা করে দিতে পারবি? আমার এখানে যাওয়ার কোন যায়গা নেই। আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব মিস্টার আবরাজ এর কাছে। নাহলে আমি দেশেই ফিরে যেতাম কিন্তু..”
“সেসব নিয়ে তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি কিছু না কিছু ব্যবস্থা ঠিক করে নেব। এখন আমায় বল, তোর সাথে আসলে ঘটেছে টা কি?”
নিঝুম দুচোখ বন্ধ করে নেয়। অতঃপর তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলে ইমরানকে। সব শুনে ইমরান চূড়ান্ত পর্যায়ের রাগান্বিত হয়৷ রাগে তার হাত-পা কাপছিল। সে বলে ওঠে,”ঐ জার্কটা তোর সাথে এসব করল আর তুই এভাবে মেনে নিলি..”

“মেনে নেই নি আমি৷ আমি প্রতিবাদ করেছি এসবের।”
“শুধু প্রতিবাদ যথেষ্ট নয় তোকে আরো বেশি কিছু করতে হবে।”
“মানে?”
“তুই আবরাজ খানের নামে কেইস ফাইল কর।”
“কেইস? কিন্তু কিভাবে? উনি তো আমার স্বামী হন।”
“ইংল্যান্ডে মেরিটাল রে**পও একটা বড় ক্রাইম এবং এর বিরুদ্ধেও কেইস ফাইল করা যায়। তুই শুধু আমার সাথে থানায় চল একবার। তারপর ঐ আবরাজ খানের জীবন কীভাবে হেল করতে হয় সেটা আমি দেখে নিচ্ছি। ও তোর সাথে যা অন্যায় করেছে তার ফল ওকে পেতেই হবে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৩

“কিন্তু এটা কি ঠিক হবে?”
“আলবাত হবে। তুই শুধু আমার সাথে থানায় চল। এর একটা বিহিত করতেই হবে।”
“আমাকে একটু ভাবার জন্য সময় দে। আমি দেখছি কি করা যায়।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৫