অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৫

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৫
ইয়াসমিন খন্দকার

আরহা জাঈদের সাথে বাসায় ফিরে চুপচাপ রইল। জাঈদ আর এই বিষয় নিয়ে তাকে কিছু বলে নি৷ কারণ সে বোনকে অনেক বেশি ভালোবাসে। তখন তো মাশরাফির সাথে আরহাকে দেখে মাথা গরম হয়ে গেছিল তাই ওভাবে বলে ফেলেছে। নাহলে সে কখনো আরহার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে না৷ এখন নিজেই অনুতপ্ত সে।
এদিকে আরহাও নিজের রুমে এসে মন খারাপ করে বসে আছে। একটু পর রিয়াশার ম্যাসেজ এলো তার ফোনে। আরহা ফোনটা হাতে নিয়েই দেখল রিয়াশা লিখেছে,”যা বলেছিলাম, মনে রাখিস। কোনভাবে ব্যাপারটা ম্যানেজ কর।”

আরহা চিন্তায় পড়ে যায় যে সে কি করবে৷ এমন সময় হঠাৎ করে জাঈদ আরহার রুমের সামনে এসে দরজায় টোকা দিয়ে বলে,”সিস! আসবো?”
আরহা জাঈদের দিকে তাকিয়ে বলে,”ব্রো, তুমি? এসো।”
জাঈদ আরহার কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোর সাথে আমি অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি তাই না? আমাকে ক্ষমা করে দিস।”
“আরে না ব্রো। এভাবে কেন বলছ। আমি কিছু মনে করি নি। তুমি তো আমার বড় ভাই, তুমি চাইলে আমাকে বকতেই পারো৷ আমি জানি, তুমি যা করো আমার ভালোর জন্যই।”
স্বভাবচরিত শান্ত স্বরে কথাগুলো বলে আরহা। তবে তার চোখে একটা উদ্বিগ্নতা ছিল যা টের পেল জাঈদ৷ তাই তো জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে সিস? তোকে এমন লাগছে কেন? কোন বিষয় নিয়ে কি খুব চিন্তায় আছিস?”
আরহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”না, মানে ব্রো..সামনে তো আমাদের ফাস্ট ইয়ারের ইয়ার এক্সাম। তাই একটু টেনশন হচ্ছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এটা নিয়ে এত চিন্তার কি আছে? আমার বোন হলো ক্লাস টপার, ভবিষ্যতের ডাক্তার। তার আবার পড়াশোনা নিয়ে কিসের চিন্তা?”
“তবুও একটু চিন্তা হচ্ছে। আর মিম, রিয়াশা ওরাও চিন্তা করছে খুব। তাই ওরা বলছিল গ্রুপ স্টাডির কথা। এজন্য আজ বিকেলে আমাকে মিম ওর বাসায় যেতে বলেছে। আজ রাতে আমরা তিনজন একসাথে গ্রুপস্টাডি করব।”
জাঈদ বলে,”তুই মিম আর রিয়াশাকে এখানে আসতে বল।”
আরহা কিছুটা ভেবে বলে,”আসলে মিমের বাবা একটু বেশি রাগী তো..উনি মিমকে বাইরে আসতে দেবেন না। তাই আরকি..”
“ঠিক আছে, বিকেলে তৈরি হয়ে থাকিস। আমি তোকে মিমের বাসায় দিয়ে আসব।”
আকাশ আরহার রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল। মিমের নাম শুনেই সে ছুটে আরহার রুমে প্রবেশ করে বলে,”কি নিয়ে কথা হচ্ছে?”

জাঈদ হেসে বলে,”আরহা ওর বান্ধবী মিমের বাসাতে যাবে গ্রুপ স্টাডি কর‍তে। আমি ওকে বিকেলে রেখে আসব তাই বলছিলাম।”
মিমের নাম শুনতেই আকাশের বুকটা ধক করে ওঠে। তার স্মৃতিতে ভেসে আছে ভীষণ সুন্দরী, নম্র স্বভাবের এক মেয়ের প্রতিচ্ছবি। মেয়েটাকে ভীষণ ভালো লাগে তার। আরহার সাথে কয়েকবার এই বাসাতেও এসেছে। যতবার এসেছে আকাশ হা করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। আকাশ হঠাৎ বলে ওঠে,”আমিও যাই তোমাদের সাথে।”
“বেশ, যেও।”
আকাশ খুশি হয় ভীষণ।

আরুশি আরহার মিমের বাসাতে যাওয়ার কথা শুনে কিছুটা বিচলিত হয়। আরহা যাওয়ার সময় তাকে বলে,”সাবধানে থেকো আরহা। আজকালকার দিনকাল তো ভালো না।”
আরহা তার মাকে আশ্বাস দেয়। কিন্তু তার নিজের মনেও একটা সংকোচ ছিল যে রিয়াশার কথা শুনে সে কোন ভুল করছে কিনা। আমিনাও তখন সেখানে এসে দাঁড়ায়। জাঈদ আমিনার দিকে তাকাতেই আমিনা চোখ সরিয়ে নেয়। সে এখনো জাঈদের উপর রেগে আছে। এদিকে জাঈদ ভাবতে থাকে কিভাবে সে আমিনার এই রাগ কমাবে। এরমধ্যে আকাশ তাড়া দিয়ে বলে,”চলো যাই।”
আমিনা আরহাকে বলে,”সাবধানে থেকো আরহা। তুমি তো এভাবে বাইরে সেভাবে থাকো নি কখনো। তাই তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছে।”

“আচ্ছা আপি। তুমি চিন্তা করো না৷ আমি সাবধানে থাকার চেষ্টা করবো।”
এরপর জাঈদ ও আকাশ গিয়ে আরহাকে মিমের বাসাতে রেখে আসে। মিমের আম্মু তাদের আপ্যায়ন করে। মিম যথারীতি বিনয়ী ভঙ্গিতে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশ আজ সুযোগ বুঝে মিমের সাথে টুকটাক কথা বলে। আকাশের সাথে কথা বলার সময় মিম হাসছিল যা দেখে আকাশের চোখ জুড়িয়ে যায়। এরমধ্যে রিয়াশা বিরক্ত হয়ে আরহাকে বলে,”তোর এই আকাশ ব্রো মিমের সাথে এত গায়ে পড়ে কথা বলছে কেন? ব্যাপারটা তো সুবিধার লাগছে না।”
আরহা স্বাভাবিক স্বরে বলে,”কেন? বললে কি অসুবিধা?”

রিয়াশা বলে,”তুই বুঝছিস না? আমার তো মনে হয়, তোর আকাশ ব্রো মিমের সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে।”
“ছি! এসব কি ভাষা।”
“আহারে! সাধুমা এলেন। যাইহোক, আমার কি তাতে। আমি তো শুধু ভাবছি কখন আমার প্রিয় আরমান খানের সাক্ষাৎ পাবো। উফ, উনি যা সুদর্শন। ওনাকে স্ক্রিনে দেখলেই তো আমার মনটা গার্ডেন গার্ডেন হয়ে যায়। সামনাসামনি দেখলে না জানি কেমন প্রতিক্রিয়া হবে।”

রাতে সুযোগ বুঝে রিয়াশা, মিম ও আরহা কনসার্টের জন্য বেরিয়ে পড়ে। কনসার্ট মিমের বাসার কাছাকাছিই ছিল। মিম ও রিয়াশা দুজনেই ভীষণ এক্সাইটেড ছিল। রিয়াশার মতো না হলেও মিমও আরমান খানের ভক্ত। তাই সেও উদগ্রীব তাকে দেখার জন্য। তবে এত সবার মাঝে আরহা চুপচাপ ছিল। তার চোখেমুখে কোন উৎসাহ ছিল না ছিল কেবলই উদ্বিগ্নতা।
কনসার্টে উপস্থিত হয়ে হাজার হাজার লোকের ভীড় দেখে তার ভয়টা তো আরো বেড়ে গেল। বিশেষ করে যখন সে দেখল হাজার হাজার ছেলে আছে এখানে তখন তার ভয় তো একদম মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। আরহা রিয়াশাকে বলল,”আমাদের এখানে আসা কি ঠিক হলো? আমার কেন জানি ভীষণ ভয় লাগছে।”

“আরে এত দুশ্চিন্তার কি আছে। সব ঠিক য়ে যাবে। আমরা আছি তো। তুই আমার হাতটা ধরে থাক।”
একটু পরই মূল কনসার্ট শুরু হলো। মঞ্চে উঠলেন বিখ্যাত গায়ক আরমান খান৷ তাকে সামনাসামনি দেখে তো রিয়াশা পাগল হয়ে গেল। একটু পরই আরমান খান নিজের গান পরিবেশন করতে শুরু করল,
“তুমি না ডাকলে আসবোনা
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি চলে যাবার বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি,
তুমি না বাসলে আমি বাসি”
তার সুরে সুর মিলিয়ে আরহাও গানটা গাইতে থাকে।

এরপর আরো কিছু গান বললেন তিনি। তারপর এলো ফ্যান্স মিটিং এর পালা। এই সময় উপস্থিত সবাই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠল। সেখানে একপ্রকার ধাক্কাধাক্কি শুরু হলো৷ রিয়াশা ও মিম দুজনেই আরমান খানের সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব ছিল তাই তারা সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করল৷ আরহাও তাদের সাথে যেতে লাগলো কিন্তু হঠাৎ করে কারো ধাক্কার ফলে সে পেছনে পড়ে গেল এবং তাদের থেকে বিছিন্ন হয়ে গেল৷ এই ঘটনায় আরহা ঘাবড়ে গেল। সে দেখল কিছু মানুষ উল্টে পড়ে যাচ্ছে এবং তাদের উপর দিয়ে আরো অনেক মানুষ যাচ্ছে। যার ফলে পদপিষ্ট হয়ে এক মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। আরহা কিছু মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করল। এমনই একটা ছেলে পড়ে ছিল সেই ছেলেটির দুজন বন্ধুদের অনুরোধে আরহা তাকে সাহায্য করল। এরপর সেই দুজন বন্ধু আরহাকে বলল,”আমাদের বন্ধুকে একটু গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করুন। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৪

আরহা সরল মনেই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ালো। কিন্তু গাড়ির কাছে যেতেই তাদের আসল রূপ প্রকাশ্যে এলো। সেই স্থানটা কিছুটা অন্ধকার ও ফাকা হওয়ায় সুযোগ বুঝে তারা আরহাকে টেনে গাড়িতে নিয়ে গেল। আরহা যাতে চিৎকার করতে না পেরে তাই তারা আরহার মুখ চেপে ধরল। একটা ছেলে ভীষণ কুৎসিত ইঙ্গিত করে বলল,”মালটা তো সেই! আজ একে নিয়ে খুব মজা হবে!”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৬