অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৬

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৬
ইয়াসমিন খন্দকার

আরহা ভয়ে একদম গুটিয়ে গেছিল৷ তিনজন ছেলে মিলে তার উপর হামলে পড়েছিল৷ আরহা হাজার চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের করতে পারছিল না। তার চোখে জল চলে আসছিল। এরমধ্যে একটা ছেলে আরহার সালোয়ার কামিজে হাত দিয়ে সেটা টেনে ছেড়ার চেষ্টা করে এমন সময় হঠাৎ করে গাড়ির দরজাটা খুলে যায়।
সেই তিনজন ছেলের মধ্যে একজন চিৎকার করে বলে ওঠে,”আবে কে রে?”
রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে মাশরাফি৷ আরহাকে এই অবস্থায় দেখে সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না৷ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে হুংকার দিয়ে বলে উঠল,”তোদের যম!”

বলেই মাশরাফি একটা ছেলেকে টেনে বের করলো। তারপর উদাম পেটাতে লাগল৷ বাকি দুটো ছেলেও বাইরে বেরিয়ে এলো। মাশরাফি তাদেরকেও মেরে তক্তা বানাতে লাগল। পাশে পড়ে থাকা একটি রড হাতে তুলে নিয়ে সে মারতে মারতে ছেলেগুলোকে প্রায় মৃত্যুর মুখে পাঠিয়ে দিলো। এমন সময় সেখানে কিছু লোক জড়ো হলো। আরহাও বাইরে বেরিয়ে এলো। এতো মানুষ দেখে সে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। আরহা আকুল স্বরে বলে উঠল,”মাশরাফি ভাই, থামুন প্লিজ..”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরহার একটা কথাই যেন যথেষ্ট ছিল। মাশরাফি থেমে গেল৷ তার চোখ গেল আরহার দিকে। তার গালে আঁচড়ের দাগ। এই শয়তানগুলো তার বড় কোন ক্ষতি করতে না পারলেও নোংরা স্পর্শ করেছে৷ কথাটা ভাবতেই মাশরাফির রক্ত আবার গরম হয়ে গেল। তার ইচ্ছা করছিল ছেলেগুলোকে মেরে ফেলতে কিন্তু এখন তার আরহাকে সামলানো বেশি প্রয়োজন। তাই দ্রুত ছুটে গেল আরহার দিকে৷ নিজের পরণের জ্যাকেট খুলে আরহাকে পড়িয়ে দিলো। আরহা ফুপিয়ে উঠল। মাশরাফি হঠাৎ করে আরহাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”কোন চিন্তা করো না তুমি আরহা। আমি থাকতে তোমার কোন ক্ষতি হতে দেব না।”
এরকম সময় হঠাৎ করে রিয়াশা এবং মিম সেখানে ছুটে এলো। রিয়াশা এসেই ভয়ে ভয়ে বললো,”আরহা, কি হয়েছে তোর? তুই ঠিক আছিস তো?”

রিয়াশাকে দেখেই মাশরাফির রাগ আবার জেগে উঠল। সে আরহাকে আগলে নিয়ে রিয়াশার সামনে গেল। একপ্রকার হুংকার দিয়ে বললো,”বাড়িতে মিথ্যা বলে এভাবে কনসার্টে আসার সাহস হলো কিভাবে তোর?”
রিয়াশা আমতাআমতা করে বলে,”ভাইয়া আমি তো..”
রিয়াশা নিজের কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই মাশরাফি ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় রিয়াশার গালে। রিয়াশা গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে,”তুমি আমায় মারলে ভাইয়া?”

“বেশ করেছি মেরেছি। এত কেয়ারলেস কেন তুই? আজ তোর এই মিথ্যার জন্য কত বড় বিপদ হতে পারত তুই জানিস? ভাগ্যিস, এই কনসার্টে আমার একজন বন্ধুও এসেছিল৷ সে তোদেরকে দেখে আমায় ফোন করেছিল তাই আমি এখানে আসলাম। যদি আজ আমার আসতে আরো একটু দেরি হতো তাহলে এর ফল কি হতো তুই ভাবতে পারছিস? আজ হয়তো আরহার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেত…তারপর তুই পারতি নিজেকে ক্ষমা কর‍তে।”
রিয়াশা বলে,”আমি তো এতো কিছু ভাবি নি ভাইয়া..আমি তো শুধু আরমান খানের সাথে দেখা করার জন্য..”
বলেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আরহার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমাকে ক্ষমা করে দে আরহা। আজ আমার একটা ভুলের জন্য তোকে এত বড় একটা বিপদে পড়তে হলো।”
মাশরাফি রিয়াশাকে বলে,”চুপ, তোকে আর কোন নাটক করতে হবে। এখন তোমরা তিনজনই আমার সাথে চলো। আর একটা কথাও শুনতে চাই না আমি।”

তারা আর কোন কথা বাড়াল না। মিমকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে মাশরাফি আরহা ও রিয়াশাকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে গেল। রাজীব হাসান ও মিসেস রুমি দুজনেই উপস্থিত ছিলেন বাড়িতে। মাশরাফি তাদেরকে সব খুলে বলতেও তারাও অনেক বকাবকি করল রিয়াশাকে। রিয়াশাও নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভীষণ অনুশোচনা করল। মিসেস রুমি আরহাকে বুকে জড়িয়ে বললেন,”আজ যদি মাশরাফি সঠিক সময় না পৌঁছাত তাহলে যে কি হতো ভেবেই আমার বুকটা কেপে উঠছে। এত মিষ্টি মেয়েটার জীবন পুরো নষ্ট হয়ে যেত।”
রাজীব হাসান এগিয়ে এসে বলেন,”আমি আরু ও আরহামকে কল করে সব বলছি।”
আরহা বলে ওঠে,”প্লিজ, আঙ্কেল। মাম্মা, পাপাকে কিছু জানাবেন না প্লিজ। ওনারা সব জানলে ভীষণ রেগে যাবেন আর অনেক চিন্তাও করবেন।”

মাশরাফি রাগী স্বরে বলে,”সেটা তো তোমার রিয়াশার কথায় নেচে কনসার্টে যাবার আগে ভাবা উচিৎ ছিল আরহা। রিয়াশা নাহয় অবুঝ কিন্তু তোমাকে তো আমার যথেষ্ট বুঝদার মনে হয়েছিল৷ তাহলে এত বড় একটা বোকামি তুমি কিভাবে করলে? এভাবে অচেনা, অজানা মানুষদের সাহায্য করতেই বা কেন এগিয়ে গেলে? তোমার কি কোন আইডিয়া আছে যে আজ কত বড় বিপদ হতে পার‍ত।”
আরহা মাশরাফির দিকে তাকিয়ে বলে,”জ্বি, আমি সবটাই জানি৷ আজ আপনি না এলে হয়তো আমি..আমি আর এই দুনিয়াতেই থাকতাম না।”

আরহার এই কথা শুনে মাশরাফির বুক কেপে ওঠে। সে বলে,”চুপ..একদম এমন কথা বলবে না। তোমার কিছু হয়ে গেলে যে আমিও..”
কথাটা মুখ থেকে বের হবার আগেই নিজেকে সামলে নেয় মাশরাফি। কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়েই যেন তার না বলা কথাটা বুঝে নেয় আরহা।
রাজীব হাসান বলেন,”আচ্ছা, আরহা মা তুমি যাও আজকের রাতটা আমাদের বাসাতেই থাকো। কাল নিজের বাসায় যেও। আমি আরহাম আর আরুকে সবটা বুঝিয়ে বলব যেন তারা বেশি রাগারাগি না করে। আর জীবনে কখনো এমন কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিও না। আমি রিয়াশাকেও একই কথা বলছি, তোমাকেও তাই বললাম।”
“আচ্ছা, আঙ্কেল। ধন্যবাদ।”
বলেই আরহা একবার মাশরাফির দিকে তাকিয়ে ভেতরে যায়।

পরের দিন সকালে, মাশরাফি আরহাকে তার বাড়িতে দিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত হয়। আরহা ভীষণ ভয় পাচ্ছিল যে তার মা-বাবা কেমন প্রতিক্রিয়া করবে। মাশরাফি আরহার অবস্থা বুঝে তার কাধে হাত রেখে বলে,”কোন চিন্তা করো না, আমি আঙ্কেল, আন্টিকে যতটা সম্ভব বুঝাব।”
আরহার তো বেশি ভয় হচ্ছিল জাঈদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। মাশরাফি আরহাকে নিয়ে ব্র হতে যাবে এমন সময় জাঈদ ছুটে চলে আসে মাশরাফিদের বাড়িতে। এসেই সে আরহাকে টেনে বুকে জড়িয়ে বলে,”তুই ঠিক আছিস তো সিস? তোর কোন বড় ক্ষতি হয় নি তো?”
জাঈদের এমন হঠাৎ আগমনে আরহা অবাক হয়। আরহাম খান এবং আরুশিও এসেছেন।
আরহাম খান এসেই বলেন,”তুমি ঠিক আছ আরহা? রাজীব ভাইয়ের থেকে সব শুনে তো আমার আত্মা যেন প্রাণ থেকে বের হওয়ার জোগাড় ছিল। তাই সব কাজে ফেলে ছুটে এলাম।”
আরুশি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে,”তুমি কেন এত বোকামি করলে আরহা? আজ যদি বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেত। আমাদের মিথ্যা বলে এত বড় একটা..”

আরহাম খান এগিয়ে এসে মাশরাফির কাধে হাত রেখে বলে,”ধন্যবাদ বাবা মাশরাফি। তুমি যদি না থাকতে তাহলে হয়তো আমার মেয়েটাকে আমি আর কখনোই ফেরত পেতাম না।”
এমন সময় জাঈদ বলে ওঠে,”তুমি কেন ওকে ধন্যবাদ দিচ্ছ পাপা? ওর বোনের জন্যই তো আজ আমার সিস এত বড় বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল।”
এমন সময় রিয়াশাকে নিয়ে মিসেস রুমি এবং রাজীব হাসান সেখানে উপস্থিত হন। আরুশি বলে ওঠেন,”এভাবে কেন বলছ জাঈদ? মাশরাফি আমাদের কত বড় উপকার করেছে তা ভুলে যেও না।”

জাঈদ তেতে উঠে বলে,”উপকার? কিসের উপকার? ওর বোন রিয়াশার জন্যই তো আরহা কনসার্টে গেছিল নাহলে আমার সিস এমন মেয়েই নয়। আর আজ যদি আমার সিসের কিছু হতো তার জন্যেও দায়ী হতো রিয়াশা।”
রাজীব হাসান বলে ওঠেন,”আমি জানি, আমার মেয়ে ভুল করেছে এজন্য আমি ক্ষমা চাইছি।”
জাঈদ বলে ওঠে,”তুমি কেন ক্ষমা চাইছ ভালো আঙ্কেল? ক্ষমা তো রিয়াশার চাওয়া উচিৎ। ওর মতো উশৃঙখল মেয়ে আমি খুব কমই দেখেছি।”
রিয়াশা হাতজোড় করে বলে,”আমি ক্ষমাপ্রার্থী…”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৫

জাঈদ চেচিয়ে বলে,”আমার সিসের কিছু হয়ে গেলে তারপর এই ক্ষমার কি দাম থাকতো? এরপর থেকে তুমি আর আরহার সাথে মিশবে না। আরহা, চল আমার সাথে। আর কখনো তুই এই বাড়িতে আসবি না।”
বলেই আরহাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে জাঈদ।

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৭