অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৫

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৫
ইয়াসমিন খন্দকার

জাঈদ ও আমিনাকে একান্তে সময় কাটাতে দেয়ার জন্য বাকি সবাই বেরিয়ে গেল। জাঈদ আমিনার হাত আলতো করে ধরে বলল,”আজ আমি অনেক খুশি আমিনা৷ তুমি জানো না, তুমি আমাকে কতো বড় একটা খুশির খবর দিয়েছ।”
আমিনা লাজুক স্বরে বলে,”আমি নিজেও অনেক খুশি আমাদের সন্তানের আগমনের খবর পেয়ে।”
জাঈদ আবেগের সুরে বলল,”আমাদের সন্তান! আমি বাবা হবো! এটা কি সত্যি আমিনা? আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।”

আমিনা মুচকি হেসে বলল,”হ্যাঁ, সত্যি! আমাদের জীবনে নতুন একজন আসছে। আমি নিজেও এই অনুভূতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি।”
জাঈদ পরম ভালোবাসায় আমিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,”আমি জানি, আমার কাছে এটা কতটা আনন্দের। তোমাকে ধন্যবাদ, আমিনা, এই অসাধারণ উপহারের জন্য।”
আমিনা জাঈদের দিকে সরাসরি তাকাল। তার চোখে গভীর ভালোবাসা আর দৃঢ়তা। আমিনা আচমকা বলল,”জাঈদ, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।”
জাঈদ উৎসুক চোখে বলল,”বলো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি জানি, মাশরাফি ভাইয়ের প্রতি তোমার একটা ব্যক্তিগত রাগ আছে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিন্তু জাঈদ, আরহার খুশিটাই কি আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়? ও মাশরাফি ভাইকে ভালোবাসে, আর মাশরাফি ভাইও ওকে অসম্ভব ভালোবাসে। আমরা যদি ওনার আর আরহার এই সম্পর্কটা মেনে নিই, তাহলে কি আরহার ভবিষ্যৎটা আরও সুন্দর হবে না? মাশরাফি ভাই ভালো মানুষ, উনি আরহাকে সুখী রাখবে।”
জাঈদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। আমিনার কথায় যুক্তি ছিল। জাঈদের মাশরাফির উপর একটা ব্যক্তিগত আক্রোশ আছে কিন্তু মাশরাফি যে মানুষ হিসেবে ভালো এই কথা সেও মানে। তার উপর আরহার চোখে মাশরাফির জন্য ভালোবাসা সে নিজের চোখে দেখেছে। তার বোনের খুশিই তো তার কাছে সবচেয়ে বড়।

জাঈদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”তুমি ঠিক বলেছ আমিনা। আমি এতদিন নিজের ব্যক্তিগত রাগটাকে ওদের ভালোবাসার পথে আসতে দিয়েছি। কিন্তু এখন যখন আমাদের জীবনে নতুন সদস্য আসছে, আমি চাই না এই রাগ আমাদের পরিবারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক। আরহার খুশিই আমার কাছে সবার আগে। আমি মাশরাফিকে মেনে নেব, আমিনা। আরহার জন্য, আমাদের সন্তানের জন্য, এই পরিবারের সবার জন্য।”
আমিনার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। সে জাঈদের হাত আরও শক্ত করে ধরে বলল,”ধন্যবাদ জাঈদ। আমি জানতাম তুমি ঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। এই খুশির মুহূর্তে আমরা সবাই একসাথে আনন্দ করব, কোনো পুরোনো রাগ বা বিদ্বেষ নিয়ে নয়।”

কিছুক্ষণ পর, জাঈদ ও আমিনা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সবার চোখে-মুখে তখনও দুশ্চিন্তার ছাপ। তাদের দেখেই আরহাম এগিয়ে এসে বলল,”কি হলো রে জাঈদ? আমিনা কেমন আছে?”
জাঈদ একগাল হেসে বলল,”পাপা, আমিনা একদম ঠিক আছে। বরং বলতে গেলে আগের থেকে ভালো আছে। আমরা নিজেদের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে খুশি। এছাড়া আমার তোমাদের আরো একটা কথা বলার আছে, শুরুর দিকে আরহা ও মাশরাফির সম্পর্কটা নিয়ে আমার আপত্তি থাকলে এখন আর সেটা নেই। বরং এই সম্পর্কে যদি আমার সিস আরহা খুশি হয় সেটাই আমার কাছে অনেক।”
আরহা এবার এগিয়ে এসে জাঈদকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ধন্যবাদ ব্রো, আমাদের ব্যাপারটা বোঝার জন্য।”
জাঈদ নিজের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোমার সুখই আমার কাছে সব সিস। ধন্যবাদ দিতে হবে না।”
দুই ভাইবোনের মধ্যকার বরফ যেন গলল।

সায়রা খান মিষ্টির ব্যবস্থা করতে বললেন। সবাই একসাথে বসে নতুন অতিথির আগমন নিয়ে গল্প করতে লাগল। জাঈদ ও আমিনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল। তাদের চোখের তারায় নতুন স্বপ্নের দ্যুতি। এই মুহূর্তটা যেন তাদের জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল, যেখানে ভালোবাসা আর আনন্দের জয় হলো সব অপছন্দ আর অভিমানের ওপর। তারা অনুভব করল, তাদের এই সন্তান শুধু তাদের দুজনের নয়, গোটা পরিবারের নতুন আশার প্রতীক। মাশরাফি ও আরহার ভালোবাসার পাশে, এবার জাঈদ ও আমিনার জীবনেও নতুন প্রাণের সুর বেজে উঠল।

সময় এগিয়ে যেতে চললো নিজের আপন গতিতে। দেখতে দেখতে এক মাস পেরিয়ে গেল। আজকের দিনটি অনেক বেশি স্পেশাল ছিল। কারণ আজ ছিল আরহার ১৮ তম জন্মদিন। আজকের দিনটা এমনিতে তো বিশেষ ছিল তবে এই দিনটা আজ যেন আরো বিশেষ কারণ দুই পরিবার মিলে ঠিক করেছে আজকেই মাশরাফি ও আরহার এনগেজমেন্টটা সেরে ফেলবে। এই জন্য আরহা ভীষণ উত্তেজিত। মাশরাফির মনেও খুশির ঢেউ।

আরহা নিজ রুমে লাজুক হয়ে বসে আছে। তার পাশেই আছে রিয়াশা ও আমিনা। আমিনা যেহেতু এখন প্রেগন্যান্ট তাই সে চুপচাপ বিছানার এককোণে বসে আছে। রিয়াশা এনগেজমেন্টের সাজে সাজিয়ে দিচ্ছিল নিজের প্রিয় বান্ধবী তথা হবু ভাবিকে। আরহার জন্য খুব সুন্দর একটা নীল গাউন কেনা হয়েছে৷ এনগেজমেন্টের জন্য এটাই পড়বে সে। রিয়াশা আরহাকে সাজিয়ে দিতে দিতে বলল,”আমি তো কখনো ভাবতেও পারি নি আরহা, যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিনা আমার ভাবি হবে! ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং কিন্তু! আমি তো তোকে ভাবি হিসেবে পেয়ে ভীষণ খুশি।”
আরহা লাজুক হাসে। আমিনা আরহাকে দেখে বলে,”আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আরহা। মাশরাফি ভাই তো তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারবে না।”

আরহা লাজুক স্বরে বলে,”ধুর, কি যে বলো না তোমরা!”
এমন সময় আফিফা খান এসে বলেন,”কি গো? তোমাদের হলো? দেখি আমার নাতনীকে কেমন সাজিয়েছ! বাহ, কি চমৎকার লাগছে।”
আরহা আফিফা খানকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার জন্য দোয়া করো গ্র‍্যানি, আমি যেন সুখী হতে পারি।”
“আমার দোয়া সবসময় তোমার উপর থাকবে দিদিভাই।”

মাশরাফি একটা নীল রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে প্রস্তুত হয়ে নিয়েছে। তাকেও যথেষ্ট সুদর্শন লাগছে। তবুও বারবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিল মাশরাফি। সে চায় না আজকের দিনে তার মধ্যে বিন্দুমাত্র কোন কমতি থাকুক। মাশরাফি যখন নিজেকে আয়নায় দেখতে ব্যস্ত ছিল এমন সময় জাঈদ এসে তার সামনে দাঁড়ায়। তার মনে আগের মতো মাশরাফির প্রতি কোন রাগ বা ক্ষোভ কোন কিছু ছিল না। জাঈদ মাশরাফিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”আর দেখতে হবে না, তোকে যথেষ্ট ভালোই লাগছে।”
মাশরাফি হেসে বলে,”তুই যখন আমার প্রশংসা করছিস তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে ভালোই লাগছে!”
জাঈদ এবার খানিক গম্ভীর স্বরে বলে,”আমার বোনের একফোঁটা অশ্রুর কারণও যদি তুই হোস…তাহলে কিন্তু সেটাই তোর জীবনের শেষ দিন হবে। আমি নিজের বোনকে নিয়ে আসতে দুবার ভাবব না। ”
“এমন দিন আশা করি কখনোই আসবে না।”
“দেখা যাক।”

জাঈদ এবার এগিয়ে এলো। হঠাৎ করে তার ফোনে একটি কল এলো। ফোন কল আসতেই সে বললো,”কে?”
“আমি হোসেন, আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনাকে কিছু দেখানোর ছিল?”
“কি?”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৪

“আসলে আপনার চাচ্চু আমান খানের মাথায় যেদিন ফুলের টব পড়েছিল সেদিন আমি নিজের ড্রোন ওড়াচ্ছিলাম আপনাদের এলাকা দিয়ে। আমার ড্রোনে কিছু দৃশ্য ধরা পড়েছে। আমি ভাবলাম, পুলিশের সাথে আগে যোগাযোগ না করে আপনাদেরই আগে এটা দেখানো উচিত। কারণ এটা আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার।”
“ঠিক আছে, আপনি আপনার লোকেশন দিন৷ আমি আসছি।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৬