অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৭

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৭
ইয়াসমিন খন্দকার

আরহা হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল মাশরাফির দিকে। অথচ মাশরাফির মাঝে কোন ভাবান্তর নেই। এরমাঝে জাঈদ রাজীব হাসানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ভালো আঙ্কেল, আপনি তো একজন পুলিশ অফিসার, হতে পারে মাশরাফিকে আপনি নিজের ছেলের চোখে দেখেন কিন্তু আমি জানি আপনি একজন সৎ মানুষ তাই এবার ওর শাস্তির নিশ্চয়তা আপনাকে দিতে হবে।”
রাজীব হাসান বলেন,”অবশ্যই। মাশরাফি যদি সত্যিই আমান খানের মৃত্যুর সাথে জড়িত থাকে তাহলে ওকে শাস্তি পেতে হবে। আমি নিজে ওকে গ্রেফতার করব।”
মিসেস রুমি বলে ওঠেন,”এসব তুমি কি বলছ? মাশরাফিকে আমি জন্ম দেইনি কিন্তু ছোটবেলা থেকে ওকে মানুষ করেছি। আমি জানবো না আমার ছেলে কেমন? তুমি নিজেও জানো ও এমন কিছু করতে পারে না তবুও এসব কথা কিভাবে বলছ? ”

আকাশ চেচিয়ে উঠে বলে,”কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা সেটা তো এই ভিডিওতেই পরিস্কার হয়ে গেছে। তারপরও কোন মুখে আপনারা এই খু*নিটার হয়ে কথা বলছেন?”
রিয়াশা আকাশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,”একদম চুপ। আমার ভাইয়া খু*নি নয়। আমিও দেখব, কে আমার ভাইয়াকে গ্রেফতার করতে আসে। আমি রুখে দাঁড়াবো তার পথ।”
সায়রা খান এমনিতেই নিজের স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন তার উপর চোখের সামনে এত কাহিনি দেখে তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। তিনি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,”আমার স্বামীর মৃত্যুর ন্যায়বিচার আমি চাই। কিন্তু আগে আমাদের সব সত্য ভালো ভাবে জানা দরকার। মাশরাফি কেন আমার স্বামীকে ইচ্ছাকৃত খু**ন করবে? ওর সাথে তো আমানের কোন শত্রুতা ছিল না।”
আরুশিও তার সাথে সহমত প্রকাশ করে বলেন,”হ্যাঁ, সেটাই তো৷ মাশরাফি কেন শুধু শুধু এমনটা করতে যাবে? এর পেছনে ওর তো কোন স্বার্থ নেই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আফিফা খান ও নির্ঝর খান ভীষণ দ্বিধায় ভুগছিলেন। মনে মনে ভীষণ আঘাত পেলেও তারা সেটা প্রকাশ করলো না। কিন্তু এরমাঝে আরহাম খান বলে উঠলেন,”আমি এখন এসব কিছু শুনতে চাই না। মাশরাফি ইচ্ছাকৃত করুক বা অনিচ্ছাকৃত কিন্তু ওর জন্য আমার ভাই মারা গেছে। তাই ওকে আমি কখনোই নিজের মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিতে পারব না। তাই আমি এই এনগেজমেন্ট ভেঙে দিচ্ছি। আর আমি ওর নামে থানায় মামলাও করব। তারপর বাকিটা আইনের উপর। যদি ওর অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে ও সেই অনুযায়ী শাস্তি পাবে।”
আরুশি বলেন,”তুমি এভাবে মাথা গরম করো না। ছোটরা সবাই রেগে আছে। আমাদেরই তো এখন পরিস্থিতি সামলাতে হবে, তাই না?”

আরহাম খান বলে ওঠেন,”তুমি কিভাবে এসব কথা বলছ আরুশি? আমার ভাই মারা গেছে, তার মৃত্যুকে আমরা সবাই একটা দূর্ঘটনা ভাবছিলাম অথচ এখন এসব সত্য সামনে আসছে। তারপরও তুমি আমায় বলছ শান্ত থাকত।”
“দেখো, মাশরাফি তো আমাদের ছেলের মতোই। কোন কিছু ঠিকভাবে না জেনে ওকে এভাবে ব্লেইম করা কি ঠিক?”
আরহাম চেচিয়ে বলে,”যদি মাশরাফির যায়গায় আমার জাঈদ বা আরহাও থাকত তবুও আমি একই কাজ করতাম। আমার ভাইয়ের খু*নি হোক সে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত তার সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখতাম না। বের করে দিতাম তাকে নিজের বাড়ি থেকে।”

কথাটা শুনেই আরহা আতকে ওঠে। সে বুঝতে পারে যে, তার বাবা যদি সত্যটা জানতে পারে তাহলে তাকেও ছাড় দিত না। কিন্তু তবুও আরহা সত্যটা বলতে পিছপা হতো না৷ কারণ সে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এভাবে মিথ্যা অপবাদে শাস্তি পেতে দেখতে পারবে না। কিন্তু আজ তার দেয়া কসম যে আরহাকে আটকে দিলো।
এরমাঝে আমিনা জাঈদকে বলে ওঠে,”তুমি কিছু একটা করো, আমার আব্বুর খু*নিকে আমি শাস্তি পেতে দেখতে চাই। নাহলে যে আমি শান্তি পাবো না।”

“তুমি চিন্তা করো না, আমিনা। এই মাশরাফিকে জেলের ভাত না খাওয়ালে আমার শান্তি নেই।”
জাঈদ এবার মাশরাফির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”যদি তোর মাঝে বিন্দুমাত্র লজ্জা অবশিষ্ট থাকে তাহলে এখনই এই মুহুর্তে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আমরা কেউ তোর চেহারাও দেখতে চাই না।”
মাশরাফি একপলক আরহার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায় খান ভিলা থেকে। আরহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,”তুমি কেন এভাবে আমায় কসম দিয়ে আটকে রাখলে? এতে করে আমার ভিতরের গিল্টনেস আরো বেশি বাড়ছে। আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না, কখনোই না।”

পরের দিন,
আরহা সকাল সকাল মাশরাফির সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল৷ গতকাল রাতে সে ভালো করে দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি। মাশরাফিকে কাল থেকে অনবরত ফোন করে চললেও মাশরাফি তার কোন ফোনকল রিসিভ করে নি। আরহা তাই আর অপেক্ষা করতে চায়না। সে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে বাড়ির বাইরে পা রাখতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে জাঈদ এসে তার পথ আটকে ধরে বলে,”কোথায় যাচ্ছ তুমি সিস?”
আরহা কোন কথা না বলে জাঈদকে পাশ কাটিয়ে যেতে চায় এমন সময় জাঈদ বলে,”নিশ্চয়ই ঐ খু*নিটার সাথে দেখা করতে যাচ্ছ তাই না?”

আরহা বলে ওঠে,”প্লিজ ব্রো, এভাবে বারবার ওকে খু*নি বলবে না। ও কোন খু**ন করে নি।”
“তাহলে কাল যা যা দেখলাম আমরা সবাই সব কি মিথ্যা ছিল?”
“সবসময় আমরা চোখে যা দেখি তা সত্য হয় না।”
“তাহলে সত্য কি সেটা বলো?”
“ব্রো প্লিজ আমায় যেতে দাও।”
“নাহ, আমি তোমায় যেতে দেব না।”
এমন সময় আরুশি এসে বলে,”জাঈদ ওকে যেতে দাও।”
“মাম্মা, তুমিও..”
“আমাকে যদি বিন্দুমাত্র সম্মান করো তাহলে আমার কথাটা শোনো, যেতে দাও ওকে।”
জাঈদ আর কিছু না বলে আরহার পথ ছেড়ে দেয়। আরহা নিজের মায়ের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রওনা দেয় মাশরাফিদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।

মাশরাফি ডাইনিং টেবিলে বসেছিল। কাল থেকে রাজীব হাসান তার সাথে কোন কথা বলে নি। ব্যাপারটা তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। যদিও মিসেস রুমি এবং রিয়াশা মাশরাফির পাশেই আছে। মিসেস রুমি মাশরাফির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি জানি, আমার ছেলে কাউকে খু*ন করতে পারে না। এটা একটা দূর্ঘটনা ছিল। তোর আব্বু হয়তো একটু রেগে আছে কিন্তু আমি জানি, উনিও মন থেকে এটাই মানেন।”
রিয়াশাও বলে,”হ্যাঁ, আমার ভাইয়া খু*নি হতে পারে না। গোটা দুনিয়ার মানুষ এসে সাক্ষী দিলেও আমি এটা বিশ্বাস করবো না।”

নিজের প্রতি তাদের এত বিশ্বাস দেখে মাশরাফি কিছুটা স্বস্তি পায়। এরমাঝে হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে ওঠে। রিয়াশা বলে,”এত সকালে কে এলো?”
মিসেস রুমি বলেন,”আমি গিয়ে দেখছি।”
মিসেস রুমি দরজা খুলেই আতকে ওঠেন। কারণ বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে। তিনি অবাক স্বরে বলেন,”আপনারা?”
“আমরা মাশরাফি হাসানকে গ্রেফতার করতে এসেছি। ওনার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে এবং শক্ত এভিডেন্সও আছে। যার দরুণ এরেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।”
বলেই তারা ভেতরে ঢুকে পড়ে। রিয়াশা পুলিশকে দেখেই নিজের ভাইকে আগলে দাঁড়িয়ে বলে,”খবরদার আর এক পাও সামনের দিকে এগোবেন না। আমি বেচে থাকতে আমার ভাইয়াকে গ্রেফতার করতে পারবেন না আপনারা।”
এমন সময় রাজীব হাসান চলে আসেন সেখানে। তাকে দেখেই রিয়াশা বলে ওঠে,”আব্বু দেখো না এনারা ভাইয়াকে গ্রেফতার করতে এসেছে। তুমি কিছু বলো এনাদের।”

“ওনাদেরকে ওনাদের কাজ করতে দাও রিয়াশা। তুমি সরে যাও। একজন আইনের রক্ষক হিসেবে আমিও চাই দোষী যেন শাস্তি পাক। সে যেই হোক না কেন..”
“আব্বু..!”

পুলিশ মাশরাফির হাতে হাতকড়া পরায়। এমন সময় আরহা সেখানে এসে বলে,”দাঁড়ান অফিসার এভাবে ওনাকে গ্রেফতার করবেন না। উনি আসল দোষী নয়।”
“তাহলে কে আসল দোষী?”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৬

আরহা এগিয়ে আসে। মাশরাফির সামনাসামনি দাঁড়ায়। মাশরাফি ধীর স্বরে বলে,”যদি তুমি সত্যটা সবাইকে বলো তাহলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেব।”
আরহা বলতে গিয়েও থেমে যায়,

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৮